শুধু তুই ৩ পর্ব -১৭+১৮

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana

বাসায় এসে নিধি বোরকা না খুলেই শুয়ে পড়ে। আদিও বেশ ক্লান্ত। এতোটা জার্ন তারওপর আবার বাসে। টারটিখানি কথা না।
“হেই ইডিয়েট চেঞ্জ করে ঘুমাও
আদি ধমক দিয়ে বলে। নিধির কান ওবদি আদির ধমক পৌছায় না। আদি নিধির লাগেজটা একপাশে রেখে দেয়। নিজের লাগেজ খুলে শার্ট আর টাউজার বের করে ফ্রেশ হতে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে নিধিকে টেনে তুলে। নিধি বসে বসেও ঘুমচ্ছে।
” ওই উঠো। চোখ খুলো
আদি কিছুটা জোরে বলে।
নিধি পিটপিট করে চোখ খুলে। আবার শুয়ে পড়তে যায়। আদি থামিয়ে দেয়। নিধি বিরক্ত হয়ে তাকায় আদির দিকে।
“পবলেম কি আপনার? তেঁতে উঠে বলে নিধি।
” চেঞ্জ করে কিছু খেয়ে ঘুমাও। শান্ত গলায় বলে আদি।
“ধুরররর
সারাক্ষণ মা বাবার মতো খেকখেক করে। তুই বর তুই আদর করবি ভালোবাসা দিবি ভালোবাসা নিবি
তুই কেন সারাক্ষণ খেকখেক করবি। বেশ রেগে বলে নিধি।
আপনাআপনি আদির ভ্রু কুচকে যায়। কপালে দুটো ভাজ ফেলে নিধির দিকে তাকায়।
” এই যা এবার থাপ্পড় খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যা নিধি।
নিধি চোখ মুখ খিঁচে বিরবির করে বলে।
“যাও
আদি খুকখুক করে কেঁশে বলে। আদির এরকম কথা শুনে নিধি চোখ খুলে। এক গাল হাসি দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।

আদি নুডলস রান্না করে। নিধি একদম গোছল করে বের হয়। ঢিলেঢালা টিশার্ট আর প্লাজু। ভেজা চুল গুলো মুছছে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে ভেজা কাপড়চোপড়। আদি নুডলস হাতে বসে ছিলো। নিধির বের হওয়া দেখে নিধির দিকে।
গভীর চোখে আদি নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না ভেবে আদি চোখ সরিয়ে নেয়।
” এখানে তুমি ছাড়াও একজন পুরুষ মানুষ থাকে। এটা মাথায় রেখে ড্রেস পড়বা।
গম্ভীর সুরে বলে আদি।
নিধি আদির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়।
“আমি এইসবই পড়বো। পুরুষ মানুষের আমাকে দেখতে অসুবিধা হলে বলে দিক চলে যাবো। তেজী গলায় বলে নিধি।
” ইডিয়েট
গোমড়ামুখো
নিধি দাঁত কটমট করতে করতে জামাকাপড় বেলকনির গ্রিলের সাথে মেলে দিয়ে আসে। আদির পাশে বেশ দুরত্ব রেখে বলে। নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে টামচে পেচিয়ে মুখে পুরতে গিয়ে কিছু একটা ভাবে তারপর বাটিটা বিছানার মাঝখানে রেখে ফোন খুঁজে কয়েকটা পিক তুলে। তারপর খাওয়া শুরু করে।
আদি পুরোটা দেখছিলো। মুখে নুডলস পুরে নেয়।
“তুমি সব কিছু ফেসবুকে পোষ্ট কেনো করো? এতে তোমার কি লাভ হয়? চিবতে চিবতে বলে আদি।
” ভালো লাগে। আমি মনে করি যা ভালো লাগে যা মন চায় তাই করা উচিৎ।
“স্টুপিট একটা।
আদি চোখ পাকিয়ে বলে।
নিধি তারাতাড়ি খাওয়াটা শেষ করে বাটি রেখে শুয়ে পড়ে।
” তোমার কিন্তু আমার কাছে পড়ার কথা ছিলো। আদি নিজের বাটিটা টেবিলে রেখে বলে।
“আজ এনার্জি নেই। কাল পড়বো। নিধি কোম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে বলে।
” সবে তো বিকেল। এখন একটু পড়ো।
নিধি আর কিছু বলে না। ঘুমের ভাব ধরে থাকে। এখন ওর পড়তে ইচ্ছে করছে না।
আদি নিজে অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

রাত নয়টার দিকে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। জোরে জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। পৃথিবীতে নিধিই একমাত্র মেয়ে যে বিদ্যুৎ চমকানো, তেলাপোকা এইসবে ভয় পায় না।
জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় নিধি। দুইতালা ছোট একটা বাড়ি। দুই তালায় মোট চারটা বাসা। নিচে দুইটা ওপরে দুইটা। নিধি ওপরের রুমটায় আছে। জানালা খুলে দিতে জোরে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে। নিধি দুই কানে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। ভয় পেয়ে না। মা বলেছে বিদুৎ চমকানোর আলোটা চোখে পড়লে চোখের হ্মতি হয় তাই। শব্দ চলে গেলে নিধি তাকায়। পাশের বাসার ছাঁদে নানানরকমের ফুলগাছ। ফুলগাছে নানারকমের ফুলও ফুটে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা ফুলগাছে আর ফুলকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মারাক্তক সুন্দর লাগছে।
নিধি অনমনে হেসে ফেলে।
জানালা দিয়ে হাত বারিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। বৃষ্টির ফোঁটা হাতে এসে পড়ছে নিধি।
“ওখানে কি করছো তুমি?
আদির কন্ঠ পেয়ে নিধি চট করে হাত ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।
” কিছু না
হাতটা পেছনে লুকিয়ে বলে নিধি।
“এসো পড়তে বসো। দায়িত্ব নিয়ে ফেলছি এবার তুমি ফেল করলে আমার নাক কাটা যাবে।
নিধি ভেংচি কেটে বই নিয়ে বিছানায় বসে। আদি নিধির পাশে বসে।
” বই বের করো।

একঘন্টা নিধিকে পড়ায় আদি। এই এক ঘন্টায় বৃষ্টি একটুও কমে নি। আপন গতিতে নেমেই যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিদুৎ চমকানো তো আছেই। বেশ শীত করছে।
“আপনার গাছের সব গুলো আম এই ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে।
নিধি হিসাববিজ্ঞান অংক করছিলো। তারমধ্যে বলে ওঠে।
আদি শান্ত চাহনিতে নিধির দিকে তাকায়।
” আমি বাড়ি থাকলে সকাল বেলা লঙ্কা গুড়ো আর লবন দিয়ে কতো মজা করে আম গুলো খেতে পারতাম। ইসসসসস
এখন আম গুলো কে খাবে?
কলম মুখে দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে নিধি।
“খাওয়ার মানুষ অনেক আছে। তুমি পড়ো। ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে আদি।
“” গোমড়ামুখো কোথাকার।
বিরবির করে বলে নিধি।
আরও কিছুখন পড়ানোর পরে আদি বলে আজ আর পড়তে হবে না। এতে নিধি বেশ খুশি হয়। মুখের ওপর পড়বো না বলার সাহস নিধির নেই। ফ্রী তে ধমক খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই বলতে পারছিলো না এখন আদি চলে যাওয়ার পরে জগ পেতে বৃষ্টির পানি ধরবে।
এক গাল হেসে নিধি বই বন্ধ করে গুছিয়ে ফেলে।
আদি
“বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে একা থাকতে পারবা?
আদি জিজ্ঞেস করে।
” একদম পারবো। আমি ছোট খাটো জিনিসে ভয় পায় না।
সাহস দেখিয়ে বলে নিধি। আদি এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আদি যেতেই নিধি লাফিয়ে ওঠে। শীলা বৃষ্টি হচ্ছে। এবার নিধি পাথম কুরাবে।
কিচেন থেকে জগ এনে আবার জানালা খুলে হাত বারিয়ে জগ ধরে রাখে। ঝন ঝন করে জগের মধ্যে বৃষ্টির পানি আর পাথর পড়ছে। নিধির খুশি আর দেখে কে।
জগ ভরে গেলে হাত ভারি হয়ে আসে। খুব সাবধানে জগটা রুমে নিয়ে আসে। একটা পাতিলে জগের পানি ঢেলে সেখান থেকে পাথর গুলো আলাদা করে নেয়। পরে পাতিলের পানি ফেলে দেয়। সেই পাথরের পিক তুলে ফেসবুকে আপ দেয়। এসব করতে করতে বৃষ্টি থেমে যায়।
আদি রুমে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হঠাৎ চিটাগং চলে আসার কারণটা অফিস না। অন্য কারনে ওরা এখানে চলে এসেছে। কারণটা আদি আর আদির বাবা ছাড়া কেউ জানে না।
ফোনের ডাটা অন ছিলো আদির। একটা নোটিফিকেশন আসে। আগ্রহ নিয়ে নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে দেখে নিধি পাথর ফেসবুকে পোষ্ট করেছে।
“এই মেয়েটা আস্ত একটা বাঁদর। মাএ কাল জ্বর সারছে আবার আজকেই জ্বর আসবে। একে আমার সাথে এনেই আমি ভুল করেছি। একবার সব গুলো পাথর ওকে আমি খাওয়াবো।
আদি চোয়াল শক্ত করে নিধির রুমে যায়। নিধি পাঘর গুলো বোতলে ভরে টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসে পড়ছিলো।
” আমার না সব সময় ইচ্ছে করে থাপ্পড় দিয়ে তোমার গালটা লাল করে রাখি।
আদির কথা শুনে নিধি দুই গালে হাত দেয়।
“আমার না এলার্জি আছে। আপনি আমাকে থাপ্পড় মারলে কি হবে জানেন? আপনি ঠিক যতটা জোরে থাপ্পড় মারবেন তারথেকেও বেশি আমার গালটা ফুলে যাবে। কারণ আমার এলার্জি আছে। নিধি অসহায় ফেস করে বলে।
” এই তুমি কি আমাকে পাগল করে ছাড়বে? কোমরে হাত দিয়ে বলে আদি।
“আমি কি করলাম?
ঠোঁট উল্টে বলে নিধি।
” বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো? এখন তোমার জ্বর হবে আর আমার সেবা করতে হবে। বিরক্ত হয়ে বলে আদি।
“জ্বর হবে না। কারণ আমি ঔষুধ খেয়েই বৃষ্টির পানিতে হাত দিছিলাম।
একটু হেসে বলে নিধি।
” উদ্ধার করে দিয়েছেন আমাকে। ইডিয়েট
নিধি ঠোঁট বাঁকায়।
“ভেংচি দিলা কেন? আদি ধমক দিয়ে বলে।
” ধমক দেই নি তো। চুমু দিছি। নিধি আবারও ঠোঁট বাঁকা করে বলে।
“পাগল হয়ে যাবো আমি
বলে আদি চলে যায়।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” এই পোলাডার মুখে কেউ একটু মিষ্টি ভরে দে না। আর কতোকাল এর এই তেঁতো তেঁতো কথা শুনবো? কবে এসে মিষ্টি করে বলবে “এই ফাল্গুনী পূর্নিমা রাতে চল হারিয়ে যায়” কবে? কবে? কবে? কবে আমরা হানিমুনে যাবে? কবে বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখবো? কেউ আল্লাহ দয়া করেন❤️
নিধি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বলে।
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৮
#Tanisha Sultana

ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে কেউই সয্য করতে পারে না। নিধিও তার ব্যতিক্রম নয়। তারও ভেতরটা জ্বলে পুরে যাচ্ছে। তবে নিধি নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। অল্প বয়সের ভালোবাসাটা ভয়ংকর হয়। তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ম্যাচুয়িটি জিনিসটা তাদের মধ্যে থাকে না। তাদের মন যা বলে সেটাই করে। যেমন নিধি আদির ধমক খেয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলে। আসলে ভালো লাগাটাকেই ভালোবাসা বলে ধার্য করে। আদিকে বিয়েও করে ফেলে।
কিন্তু এখন নিধি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করবে। নিজেকে নিয়ে ভাববে। যে থাকার সে এমনিতেও থেকে যাবে আর যে যাওয়ার তাকে হাজার চেষ্টা করেও আটকে রাখা যায় না। আদি যদি নিধির হয় তো দিন শেষে নিধিরই থাকবে।
নিধি আলতো হাসে। বইটা বন্ধ করে রেলিঙ ওপর রাখে
রেলিং এ হাত ঠেকিয়ে গালে হাত দেয়। মুখটা গম্ভীর করে এক মনে তাকিয়ে আছে আদি আর জুঁইয়ের দিকে।
নিধি সকাল সকাল ছাঁদে চলে এসেছিলো। এই বাড়ির ছাঁদটা বেশ সুন্দর। পুরো ছাঁদ জুড়ে নানারকমের ফুল গাছ। নানান ধরনের ফুল। বৃষ্টি হওয়াতে ফুল গাছ গুলোকে নতুন লাগছে। সকালে ফুরফুরে বাতাস নিধির দারুণ লাগে।
সারা রাত বৃষ্টি হওয়াতে পরিবেশটাকে মারাক্তক লাগছে।
আদি রান্না করছিলো। আদি কখনোই নিধির সাহায্য নেবে না তাই নিধি ছাঁদে চলে এসেছে।
খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো নিধি। হঠাৎ চোখ পড়ে নিচে। আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে জুঁই নামের মেয়েটা। খুব স্পষ্ট ভাবে দুজনকেই দেখা যাচ্ছে।
জুঁই কেঁদে কেঁদে কিছু বলছে আদিকে। আদি হাত ভাজ করে শুনছে। কখনো কখনো জুঁই আদির গায়ে ধলে পড়ছে। আদি সরিয়ে দিচ্ছে। হয়ত দুজনের মান অভিমানের পালা শেষ করছে।
নিধি গালে হাত দিয়ে এই দৃশ্য দেখছে।

বিয়ের পরে কোনো মেয়েই নিজের স্বামীকে ছাড়তে চায় না। নিজের আচলে বেঁধে রাখতে চায়৷ কিন্তু নিধি অন্য কথা ভাবছে। নিধি বড় হয়ে গেলে আদিকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। আদি জুঁইকে পেয়ে যাবে।
এসব ভেবে নিধির চোখের কোনো এক চিলতে পানি এসে জমে। নিধি বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে নেয়।
“কাঁদবো না। দুর্বলদের মানুষ আঘাত করে। আমি দেখিয়ে দেবো আমিও পারি। ওনাকে বিয়ে করে আমি যে ভুল করেছি সেটা এবার সুধরে নেবো। আদি আমার কাছে আর পাঁচটা মানুষের মতো। ওনার প্রতি আমার কোনো ফিলিং নেই।
অভিমানে বলে নিধি।

আদি রান্না করছিলো। তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে জুঁই নামটা দেখে বেশ অবাক হয় আদি। কেনোনা তিন বছরে জুঁই কখনো আদিকে কল করে নি। তিন বছর আগে প্রতিদিন চারপাঁচবার করে কল করতো।
হঠাৎ ফোন দেওয়ার কারণ আদি বুঝতে পারে না। কেনো জানি কল রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। তাই আর ফোনটা রিসিভ করে না। নিধি বলে কয়েকবার ডাকে। কিন্তু নিধির কোনো সারাশব্দ নেই।
” ইডিয়েট একটা। কখনো পাওয়া যায় না। বিরক্ত নিয়ে বলে আদি।
হাতের মুঠো ফোনটাতে মেসেজ আসে। আদি আবার ফোনের স্কিনে তাকায়। জুঁই মেসেজ দিয়েছে।
“আমি তোমার বাড়ির নিচে। প্লিজ একবার বাইরে আসো। প্লিজ ”
আদির মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে ও যাবে। জুঁইকে কড়া করে কথা শুনিয়ে দেবে।
এসব ভেবে যায় আদি।

বেশ কড়া রোদ উঠেছে। এখন আর রোদে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। নিধি এক হাতে বই আরেক হাতে মোরা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা। নিধি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“কোথায় গেছিলে?
রান্না ঘর থেকে আদি বলে ওঠে।
” ছাঁদে
আস্তে করে উওর দিয়ে রুমে চলে যায়। আদি বেশ অবাক হয়। মেয়েটার হলো কি? শরীর খারাপ না কি?
টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিধির রুমে যায়। মুখের ওপর বই দিয়ে শুয়ে আছে নিধি।
“শরীর খারাপ?
আদি নিধির মুখের ওপর থেকে বই সরিয়ে নেয়। নিধি চোখ খুলে না।
” নাহহহ খিধে পেয়েছে।
নিধি বলে।
“খাবার রেডি আসো।
” আপনি খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।
“এই তো বললা খিধে পেয়েছে?
নিধি কিছু বলে না।
” পবলেম কি তোমার? আমি বেরবো। কাজ আছে।
“তো আমি কি বেঁধে রেখেছি? তেঁতে উঠে বলে নিধি। উঠে বসে পরে।
আদি ভ্রু কুচকে তাকায়। হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না।
” খেতে এসো। আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
“আম
নিধি বলতে গেলে আদি থামিয়ে বলে
” বেশি কথা পছন্দ না।
বলেই আদি নিধির কোমল হাতটা মুঠো করে ধরে হাঁটা শুরু করে। ইচ্ছে না থাকলেও নিধির আদির পিছু পিছু যেতে হয়।
টেবিলে নিধিকে বসিয়ে আদি খাবার বেড়ে দেয়।
“আমি বাসায় থাকবো না। তোমার একা একা লাগবে। তাই টমকে আনার ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গী পেয়ে যাবা।
আদি নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে বলে।
নিধি উওর না দিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে। আদি ভ্রু কুচকে নিধির দিকে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে। এর মতিগতি কিছুই আদি বুঝতে পারলো না।

খাওয়া শেষে নিধি হাত ধুয়ে রুমে চলে যায়। আদি থালা বাসন ধুয়ে রুমে যায়। গোছল সেরে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিধির রুমের সামনে আসে।
নিধি ঘুমিয়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। আদি নিধিকে ঠিক ভাবে শুয়িয়ে দিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দেয়। গলা ওবদি চাদর টেনে চলে যায়।

কলিং বেলের শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। চোখ ডলে দরজা খুলে দেয়। আদির এক ফ্রেন্ড টমকে নিয়ে এসেছে। নিধি টমকে ভেতরে নিয়ে নেয় ওনাকেও আসতে বলে। উনি তারা আছে বলে চলে যায়।
ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে টমকে খেতে দেয় নিধি। তারপর গোছল করতে যায়। গোছল সেরে ভেজা জামাকাপড় রোদে মেলে দিয়ে আস।
একা একা খেতে নিধির ভালো লাগে না। তাই না খেয়ে আদির রুমে এসে বসে। আদির রুমে টিভি আছে। টিভি দেখলে হয়ত সময় কাটবে। এই বাড়িতে একা একা দম বন্ধ হয়ে আসছে নিধির। এখানে আরও কিছুদিন থাকলে নিধিও আদির মতো গোমড়ামুখো হয়ে যাবে।

ফ্লোরে বসে পড়ে নিধি। পাশেই টম বসে। চ্যানাল পাল্টাতে পাল্টাতে একটাতে চোখ আটকে যায়। হিন্দি মুভি হচ্ছে। নিধি কখনো হিন্দি মুভি দেখে নি। বাংলা মুভিও খুব কম দেখে। আসলে টিভির প্রতি ওর তেমন কোনো লোভ নেই। তবে মুভিটা ভালো লাগে নিধি। রিমোট খাটে রেখে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে।
মুভির এক পর্যায়ে হিরো হিরোইনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নায়িকার দুইগালে হাত দিয়ে মুখটা এগিয়ে নেয়। নিধি একবার টমের দিকে তাকায়। তারপর আবার টিভির দিকে তাকায়। আর তখনই ঠাস করে টিভি বন্ধ হয়ে যায়।
নিধি রেগে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে আদি।
“টিভি কেনো বন্ধ করলেন? লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে নিধি
” বাচ্চাদের এইসব মুভি দেখতে নেয়। তুমি মটুপাতলু টম এন্ড জেরি এসব দেখো।
বেশ গম্ভীর সুরে বলে
নিধি গাল ফুলায়।
“আপনি টিভিটা আমার রুমে দিয়ে আসেন। একা একা বোরিং লাগে আমার। টিভি দেখলে সময় কাটে।
নিধি যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আদি হাত ধরে।
” তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
নিধির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। এই বুঝি আদি বলবে আমি তোমাকে ডিভোর্স দেয়ে দেবো।
“ববলুন
মাথা নিচু করে থেমে থেমে বলে নিধি।
আদি নিধিকে খাটে বসায়। নিজেও নিধির পাশে বসে। টম এসে আদির পায়ের কাছে বসে।
” আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনবে।
“আমি সব কিছুই মন দিয়ে শুনি।
” বেশি পাকামো করবা না। বিরক্ত লাগে। ইডিয়েট
“তো আসেন কেনো ইডিয়েটের সাথে কথা বলতে? আমি তো যায় না আপনার সাথে কথা বলতে।
তেঁতে উঠে বলে নিধি।
“রাগীও না আমাকে। অনেক কষ্টে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তোমার সামনে বসে আছি।
” থাকতে বলি নি তো।
“আদি নিধিকে খাটে ফেলে দেয়। নিধির পেটের ওপর বালিশ দিয়ে তাতে উঠে বসে। নিধির হাত দুটো মুঠো করে ধরে আছে। নিধি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আদি নিধির দিকে ঝুঁকে
” বলছিলাম না রাগীও না
নিধির মুখের একদম কাছে মুখ নিয়ে বলে আদি।
“একদম মুখে মুখে কথা বলবা না। আমি কথা বললে চুপচাপ আমার কথা শুনবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
নিধি চোখ খুলতে পারছে না। হার্ট বিট উঠানামা করছে। বুক ধুকবুক করছে।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here