শুধু তুই ৩ পর্ব -২৩

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana

পাঁয়তাল্লিশ বার কান ধরে উঠবস করেছে এই পর্যন্ত নিধি। আদি একবারও তাকায় নি নিধির দিকে। চোয়াল শক্ত করে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি অনবরত কান ধরে উঠবস করছে আর সরি বলছে। আদির কাছে বেপারটা “জুতো মেরে গরু দান করার মতো লাগছে” বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে আদি। এতো বড় হ্মতি করে এখন নাটক করা হচ্ছে। বাচ্চা বাচ্চাদের মতো থাকবে। বড়দের মাঝে৷ কেনো আসবে? ইচ্ছে করছে নিধিকে ঠাটিয়ে চড় মারতে। কিন্তু এমনটা করবে না আদি। কোথাও একটা মেয়েটার প্রতি টান অনুভব করে। ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু আদি সেটা মানতে নারাজ। আদির মতো এইরকম স্টুপিট মেয়েকে আদির ভালো লাগতে পারে না। ভালো লাগার মতো কোনে গুনই নেই ওর মধ্যে।
আদি এবার চোখ তুলে নিধির দিকে তাকায়। নিধির নিষ্পাপ মুখটা দেখে আদি বকা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজেকে বকা দেয় আদি। এই ইডিয়েটটাকে না বকলে ও কখনোই মানুষ হবে না। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নেয়। টেবিলের দিকে তাকায়।
“আউট
টেবিলের ওপরের একটা কাগজ হাতে তুলে ধমক দিয়ে বলে।
নিধি ছিটকে দুই হাত পিছিয়ে যায়। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। মনে হলো ছোটমট একটা সাইকোন বয়ে গেলো রুমটাতে। পিনপিন নিরবতা বিরাজ করছে। নিধি তো শিওর ছিলো আজ নিধির কান দুটো থাকবে না। কিন্তু আদি জাস্ট একটা ধমক দিয়েই শান্ত হয়ে যাবে এটা নিধি স্বপ্নেও ভাবে নি। তাই বেশ সাহস সঞ্চয় করে নেয়।
” বববলাম তো সসসরি
থেমে থেমে মিয়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে নিধি।
আদি চোখ পাকিয়ে তাকায়। নিধি চুপ করে যায়। নিচের দিকে তাকিয়ে ফ্লোর দেখতে থাকে।
“লাস্ট বার বলছি গেট আউট। এই মুহুর্তে এখান থেকে না বের হলে আমি যে কি করবো নিজেও জানি না।
বেশ শান্ত গলায় বলে আদি। নিধির এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। সত্যিই নিধি একটু বেশি ছটফটে।
আদির কথায় চোখ দুটো টলমল করে ওঠে নিধির। কিন্তু আদি তো তেমন কিছু বলে নি। বা কানও মলে দেয় নি তাহলে কেনো নিধির চোখে পানি এলো? নিশঃব্দে বেড়িয়ে যেতে নেয়। দরজার খুলতে হাত বাড়াতেই দরজা খুলে যায়। নিধি ধপ করে দরজার দিকে তাকায়। ইভা আর জুঁই দাঁড়িয়ে আছে।
ইভা নিধির চোখে পানি দেখে বিচলিত হয়ে বলে
” নিধি কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
সাথে সাথে নিধি চোখের পানি লুকোনোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
ইভার কন্ঠ শুনে আদি তাকায় ওদের দিকে। তারপর নিজের কাজে মন দেয়। এখন সবাইকে বিরক্ত লাগছে আদির। কোম্পানির ইমপটেন্ট পেপার ছিলো এগুলো।

“কাঁদবে না? কাঁদতে তো হবেই। জুঁই ব্যঙ্গ করে বলতে বলতে রুমে ঢুকে পড়ে।
” আআমি আসছি
কোনোরকমে বলে নিধি তারাতাড়ি পা চালিয়ে চলে যায়। ইভাও রুমে যায়।
“এখন আবার বউকেও অফিসে নিয়ে আসা হচ্ছে? বাহহহহ ভালোই তো
আদির চেয়ারের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে জুঁই।
” জুঁই চুপ করবি তুই। ফালতু কথা বলা ছাড়া তোর কোনো কাজ নেই?
ইভা ধমক দিয়ে বলে।
“ইভা আমি আদির সাথে কথাবলছি। অন্যের কথার মাঝে নাক গলানোর স্বভাব তোর গেলো না। জুঁইয়ের কাঠকাঠ গলায় বলা কথাটা ইভাকে বড্ড আঘাত করে। অপমানিত হয়।
” ইভা কি জন্য এসেছিস এখানে? যার জন্যই আসিস চলে যা প্লিজ। আমি কথা বলার মুডে নেই। আর কথাটা তোকে একা বলি নি।
আদি টেবিলের দিকে নজর দিয়েই বলে।
জুঁই তেঁতে ওঠে। ওকে এতো বড় কথা বললো আদি?
“আম
জুঁই উচ্চ স্বরে কিছু বলতে যায় তার আগেই আদি ঠাস করে উঠে দাঁড়ায়।
” যাবি না তো তোরা? আমিই যাচ্ছি।
হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় আদি। জুঁই এবার অপমানিত হয়। ইভা আদির ভেজা কাগজ গুলো দেখেই বুঝতে পারে নিধির কান্নার কারণ। নিশ্চয় এই কাগজ ভেজার কারণটা নিধি।
ইভা কাগজ গুলো তুলে নিধি ফ্যানের নিচে মেলে দেয় শুকানোর জন্য।

অফিসের বাইরে বেরিয়ে নিধি শব্দ করে কেঁদে ফেলে। আদি যদি ওকে ভালোবাসতো তাহলে এমনভাবে বকতো না। সামান্য কয়েকটা কাগজই তো ভিজে গেছে।
দুপুরের কড়া রোদকে আড়াল করে দেয় এক ফালি ভেসে আসা মেঘ। একটু আগেই গা পড়ানো রোদ ছিলো আর এখনই মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ হচ্ছে। মারাক্তক গরম পড়েছে। যে কোনো মুহুর্তেই ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়বে। নিধি রাস্তার পাশ ধরে হেঁটে চলেছে। কান্নার জন্য চোখ লাল হয়ে আছে। বৃষ্টি আসবে বলে লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে যার যার বাসায় ফিরে যাচ্ছে। একটা রিক্সা বা ওটো কিছুই নেই রাস্তায়। বাসাটা খুব বেশি দুরে না হওয়াতে নিধি হেঁটেই যেতে পারবে। তাই বা বেশি আগ্রহ দিয়ে রিক্সা খুঁজে নি।

বাসার কাছাকাছি আসতেই তুমুল বেগে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নিধিকে ভিজিয়ে একাকার করে দেয়। হাতের ব্যাগ দিয়ে বৃষ্টি আড়াল করার চেষ্টা করতে করতে দৌড় দেয় নিধ। তবুও ভিজে একাকার হয়ে যায়।

বাড়িতে এসে দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে টম বলে ডাক দেয়। এক দৌড়ে টম নিধির কাছে চলে আসে। ঘেউ ঘেউ করে নিধিকে কিছুটা বলে যাচ্ছে। হয়ত বলছে এতো দেরি করে আসলো কেনো?
“সরি বাবু। আর কখনো তোমাকে রেখে যাবো না। নিধি টমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। টম শান্ত হয়ে যায়্ নিধি মিষ্টি করে হেসে রুমে চলে যায়। ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে গোছল শেষ করে। জামাকাপড় চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখতে পায় নিজের জামা না এনে আদির সাদা শার্ট নিয়ে এসেছে। নিজের মাথায় একটা চাটি মারে নিধি। এই অবস্থায় বাইরে বের হওয়া যাবে না। আর বের হলেই বা কি কেউ তো নেই। তবুও নিধি আদির শার্টটা পড়ে নেয়। একদম নিধির হাঁটুর একটু ওপর পর্যন্ত পড়েছে শার্টটা। নায়িকাদের মতো।
নিধি আয়নায় নিজেকে একপলক দেখে। চুল গুলো টাওয়াল দিয়ে পেঁচিয়ে ছিলো নিধি চুল গুলো ছেড়ে দেয়। ভেজা জামাকাপড় এক হাতে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হয় নিধি।
আদি নিধির পেছন পেছন ই চলে আসে। সারা রাস্তা নিধিকে ফলো করতে করতে আসে।
নিধি ওয়াশরুমে ঢুকেছে বলে রুমেই ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে থ্রি কোয়াটার প্যান্ড আর হাতা কাটা গেঞ্জি পড়ে নেয়।
নিধিকে এভাবে বেরতে দেখে আদি দাঁড়িয়ে যায়। একদম অন্যরকম লাগছে নিধিকে। কোনো ফিল্মের হিরোইনদের থেকে কম নয়। খুব করে আদিকে নিধির দিকে টানছে।
আদি এক পা এক পা করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়।
নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আদি। নিধি আদিকে দেখে চমকে ওঠে। বিশেষ করে আদির চোখ দেখে। নিধি আদির লাল চোখ দেখেছে কিন্তু এইরকম চোখ আজকে দেখলো। কিছু একটা তো আছেই আদির চোখে।
“আপনি কখন আসলেন?
নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে নিধি।
আদি নিধির কথার উওর দেয় না। নিধির খুব কাছে দাঁড়িয়ে নিধিকে চেয়ার সাথে মিশিয়ে নেয়। এক হাত নিধির কোমরে রাখে। নিধির বুক ধিপধিপ করছে।
আরেকহাত নিধির গালে রাখে।
” আআপনার কিছু হয়েছে?
নিধি থেমে থেমে জিজ্ঞেস করে। আদির এরকম বিহেব মেনে নিতে পারছে না৷। কই আগে তো আদি এমটা করে নি।
“হিসসসসসসসসসসসস
নিধির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে আদি।
কোনো কথা না।
ফিসফিস করে বলে।
আদির কন্ঠ শুনে নিধি আরেকদরফা চমকে ওঠে। বুকের টিপটিপ আওয়াজটা বাড়তে থাকে। এটা কেমন ভয়েজ? এরকম কন্ঠে বুকের ভেতরট এমন করে কেনো? নিধি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here