শুধু তুই ৩ পর্ব -২২

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana

“খাবারটা খেয়ে আমাকে ধন্য করুন
নিধির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে আদি। নিধি একটা ঢোক গিলে।
” কথা কানে যাচ্ছে না? ধমক দিয়ে বলে আদি। নিধি কিছু বলে না৷ চুপ করে থাকে।
“আমি না বুঝতে পারি না পৃথিবীতে যত পাগল আছে সব কেনো আমার ঘাড়ে এসেই চাপে। ঘাড়ে হাত দিয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে আদি।
নিধির রাগ হয়। নিধিকে পাগল বললো? এতো বড় সাহস? এর শোধ তো নিধি নেবেই। তবে এখন চুপ না থাকলে আবারও কান ধরবে। এমনিতেই কান ব্যাথা করছে। এখন আবার ধরলে কান আর থাকবে না। তাই নিধি নিরবতা পালন করছে।
” ফিরে এসে যেনো খাবারটা এখানে না দেখি।
আদি নিধির জন্য খাবার বেরে দিয়ে হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” যাক বাবা এবার শান্তি মতো খেতে পারবো। গোমড়ামুখোটা সামনে থাকলে মিষ্টি খাবারও তেঁতো তেঁতো লাগে।
নাক সিটকে বলে নিধি।
“তবে প্রশ্ন লাটসাহেবের এতো জ্বলছে কেনো? এতো কেয়ারিং হলো কেনো? তারপর মানে সামথিং সামথিং। এবার তোমাকে দেখাবো সোনা নিধি কি জিনিস। ভালোবাসবে না। এবার থেকে ছেলেদের সাথে বেশি বেশি কথা বলবো। তারপর দেখবো আমার গোমড়ামুখোটা কি করে?
টমের খাওয়া প্রায় শেষ। টমের পেট ভরে নি। তাই নিধির দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ বলে ওঠে। নিধি বুঝতে পেরে আরও কিছু খাবার দেয় টমকে। তারপর নিজে খেতে বসে। আজকের মেনুতে ছিলো রুি আর ডিম ভাজি। যা নিধি মোটামুটি পছন্দ। আর টমের জন্য কালকের বেঁচে যাওয়া বাসি ভাত আর সদ্য রান্না করা তরকারি।
নিধি তারাহুরো করে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। গোছল সেরে নীল একটা থ্রী পিছ পড়ে নেয়। চুলগুলো ভালো করে আচড়ে চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়।
টমকে বাসায় রেখে দরজা আটকে নিধি বেরিয়ে পড়ে অফিসে। কোচিং দুটোয়। অফিস শেষে কোচিং করে বাসায় ফিরবে।
আসার সময় শশুড় মশাই কিছু টাকা দিয়েছিলো নিধিকে। গেটের কাছে একটু দাঁড়াতেই রিক্সা পেয়ে যায়। সেই রিক্সায় করে অফিসে যায়।
ইয়া বড় অফিস। নিধি তো হা করে দেখছে।আশ্চর্য জনক বিষয় হলো অফিসের বাইরে একটা পাখিও নেই। দারোয়ান দুটো গেইটের কাছে লাঠি হাতে দাঁড়ানো। চার তালা বিল্ডিং এ কোনো সারাশব্দ নেই।
নিধি আস্তে আস্তে গেইটের কাছে যায়। দারোয়ান সামনে লাঠি দিয়ে বলে
“কি চায়?
” আমি এখানে চাকরি করি।
নিধির কথায় দারোয়ান একে আপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। ওদের কথাটা হজম হয় নি।
“আসলে আদিল চৌধুরী আমার বর। আমি নিধি চৌধুরী।
নিধি পরিচয় দিতেই দারোয়ান দুটো নরেচরে দাঁড়ায়। তাদের বস ফোন করে বলেছিলো আজকে অফিসের তার পুএবধু যাবে।
দারোয়ান লাঠি সরিয়ে নেয়। নিধি দাঁত কেলিয়ে ভেতরে ঢুকে।
সিঁড়ি বেয়ে চার তালার ওপরের ওঠে। ইয়া বড় একটা রুম। সেখানে সবার সামনেই কম্পিউটার। নিধি অবাক হয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কম্পিউটারের খটখট শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই।
নিধি একপা একপা করে এগিয়ে যাচ্ছে। পাক্কা বিশ মিনিট হাটার পরে একটা রুমে দেখতে পায়। যেখান থেকে একটু একটু কথার শব্দ আসছে।
” আল্লাহ এতো এতো বোবা মানুষের মধ্যে তাহলে দুইএকজন মানুষ আছে যারা কথা বলতে পারে। ভাবার বিষয় এতো বোবা মানুষ পেলো কই লাটসাহেব?
নিধি গালে হাত দিয়ে ভাবছে আর হাঁটছে।

হঠাৎ করে কিছু একটার সাথে বেঁধে নিধি পড়ে যায়। একদম ফ্লোরে বসে পড়ে।
“কোন কানা রে?
নিধি চেঁচিয়ে বলে লোকটার দিকে তাকায়। সাথে সাথে নিধির মুখ হা হয়ে যায়।
নিধির সামনে ইয়া বড় একটা হাতি। হাতি বলতে হাতির মতো একটা মানুষ। যেমন লম্বা তেমন মোটা। মাথায় বড়বড় চুল আবার বড়বড় দাঁড়ি।সেলোয়ার পড়েছে আবার শার্ট পড়েছে। মারাক্তক কালো হওয়াতে চোখের নিচে কাজলের মতো দেখাচ্ছে।
নিধি এর সাথে বেঁধে পড়ে গেছে। লোকটা দানবের মতো চোখ করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।
নিধি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়।
” হাতি থুক্কু মহিষের মতো দেখতে কেনো আপনি?
নিধি গালে হাত দিয়ে বলে।
নিধি এগিয়ে গিয়ে সালোয়ার ধরে দেখছে এটা সত্যিই সেলোয়ার কি না?
“নাহহহ এটা তো সালোয়ারই। আমিও তো এমনটাই পড়েছি। কিন্তু কথা হলো সেলোয়ারের সাথে শার্ট কেনো পড়েছে। তাও আবার শার্টের সব গুলো বোতাম আটে নি🤣
এবার নিধি লোকটার দাঁড়িতে হাত দিতে গিয়েও নাগাল পায় না।
” হু আর ইউ?
লোকটা ব্রাজিলের ভাষায় বলে।
“ছাতার মাথা আপনার কথা তো বুঝতেই পারছি না। যাই হোক নাম কি আপনার? আপনি ছেলে না মেয়ে?
বেশ খানিকটা জোরে বলে নিধি।
” তুমি কি বলছো বুঝতে পারছি না। লোকটা ব্রাজিলের ভাষায় বলে।
নিধি কিছু একটা ভেবে বলে।
“আপনার নাম হাতি। একদম হাতির মতো দেখতে আপনি।
বলেই নিধি হেসে ফেলে। লোকটা ভ্রু কুচকে তাকায়।
” এটা চিড়িয়াখানা না। এটা হলো আমার বরের অফিস। আপনি এখানে এসেছেন কেনো? উগান্ডা যাওয়ার টিকিট বিক্রি করতে? এখানে কেউ উগান্ডা যাবে না। তবে একজন যেতে পারে। সে হলো আদিল চৌধুরী। আমাদের রাগী বস। অবশ্য উনার উগান্ডা যাওয়াই উচিৎ। উনি হয়ত দেখতে হাতির মতো না। বাঘের মতো।
নিধি জোরে কথায় সবাই দাঁড়িয়ে। নিধির কথা শুনে সবাই চোখ বড়বড় করে তাকায় নিধির দিকে।
“শুনুন তাকে নিয়ে যান। আর আপনি সালোয়ারের সাথে জামা পড়তে হয়। শার্ট না।
একটু নিচু হন।
নিধি লোকটাকে ইশারায় নিচু হতে বলে। লোকটা হতবুদ্ধি হয়ে মাথা নিচু করে।
নিধি লোকটার দাঁড়ি ধরে জোরে টান মারে। লোকটা চেঁচিয়ে ওঠে। নিধি ভয় পেয়ে যায়। দাঁড়ি ছেড়ে দেয়।
” সরি সরি আমি আসলে ভেবেছিলাম আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের থেকে লুকোনো জন্য আপনি অর্ধেক ছেলে অর্ধেক মেয়ে সেজে আছেন। তাই দাঁড়ি তোলার চেষ্টা করছিলাম। সরি
” কি হচ্ছে এখানে?
আদির বাঘের মতো গর্জনে নিধি চমকে এক লাফে লোকটার পেছনে চলে যায়।
সবাই বসে পড়ে কাজে মন দেয়।
লোকটা আদির দিকে এগিয়ে যায় কিছু বলতে বলতে।
“নিধি তুই আজ শেষ।
নিধি নিজের কান দুটো আড়াল করে বিরবির করে বলে।

আদি লোকটাকে কিছু বলে বিদায় করে নিধির সামনে এসে দাঁড়ায়।
নিধি নিজের কাছে আদির অস্তিত্ব টের পেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে।
” আমি আসলে হয়েছে কি বুঝতে
নিধি কাঁদতে কাঁদতে বলে।
আদি দাঁত কটমট করে নিধির হাত টা ধরে নিজের কেবিনে নিয়ে যায়।
“এখানে কি চাই?
কেবিনে এনে নিধির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে।
” আসলে
“জাস্ট সাট আপ। আসলে নকলে বাদ দিয়ে ক্লিয়ারলি বলো।
গর্জে উঠে নিধির একটা বাহু চেপে ধরে বলে আদি। নিধি ভয়ে সিঁটিয়ে যায়।
” উনি আমার ক্লাইন্ড ছিলো।
নিধি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আদির দিকে তাকায়।
“আমি তো জানতাম না। আসলে উনি সালোয়ারের সাথে শার্ট পড়েছে। আবার চুল দাঁড়ি দুটোই রেখেছে তাই তো কনফিউজড হয়ে গেছিলাম।
নাক টেনে বলে নিধি।
” ইডিয়েট
আদি চেয়ারে বসে পড়ে।
“এখানে কাজ করে এসেছি আমি। কি বলবে বলো আমি চলে যাও।
আদি কলম ঘোরাতে ঘোরাতে বলে।
” আপনার অফিসে এতো বোবা মানুষ কোথা থেকে পেয়েছেন?
“কিহহহহহ
“হুমমম দেখলাম সবাই খালি তাকিয়ে থাকে আর কাজ করে। বোবারাই তো এমনটা করে।
চোখের সব টুকু পানি মুছে আদির পাশে দাঁড়িয়ে বলে।
” আমার অফিসে কথা বলা নিশেষ। এখানে কাজ করতে হলে চুপ থাকতে শিখতে হবে। এটাই নিয়ম তাই সবাই চুপ।
নিধি হা করে আদির কথা শুনলো।
“এখানে আমার কাজ করা হবে না। আমি তো চুপ করে থাকতেই পারবো না। আমি বরং ভালোই ভালোই কেটে পড়ি
” আআমি আসছি
নিধি তারাহুরো করে যেতে গিয়ে আদির ফাইল ফেলে দেয়। আদির রাগ এবার আকাশ ছুঁয়েছে। নিধি কেবলাকান্তর মতো তাকিয়ে আছে৷ কি হয়ে গেলো বুঝতে পেরে মুখটা কাঁদো কাঁদো করে ফেলে।
“তোমাকে তো আমি
আদি উঠে এসে নিধির সামনে দাঁড়ায়।
” মারবেন মারেন। পিঠে মারেন হাতে মারেন কিন্তু কান ধইরেন না। কান উঠে গেলে আমার বিয়ে হবে না। বেবি হবে না। বরের সাথে রোমাঞ্চ করা হবে না। বর রোমান্টিক কথা বললে শুনতে পাবো না।
“জাস্ট সাট আপ
রুম কাঁপানো ধমক দিয়ে বলে আদি। নিধি সিটকে কয়েক হাত দুরে সরে যায়। টেবিলের ওপর ছিলো পানির গ্লাস। নিধির হাত লেগে পুরো গ্লাসের পানিটা টেবিলের ওপরে থাকা কাগজ পাতির ওপর পড়ে।
নিধি এক নজর পেছনে টেবিলের দিকে তাকায়।
” আমাকে মারুন। কান ধরুন। কিন্তু মার্ডার কইরেন না। বড় সাধ আমার বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখবো। বরের সাথে হানিমুন করবো।
নিধি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে।
“তোমাকে হানিমুন আমি এখনই করাবো। আর বাচ্চাকাচ্চা শখটা এখনই মিটিয়ে দেবো। কাম অন বেবি

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here