শুধু তুই ৩ পর্ব -২১

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana

সকাল সকাল নিধি টমকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে। এখানকার রাস্তা ঘাট দেখায় হয় নি। তাছাড়াও ওই ফুলের বাগানটা ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে টা নিধি দমিয়ে রাখতে পারছে না।
টমের গলায় বেল্ট বেধেছে। খুব সকাল হওয়াতে রাস্তা ঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। সকালের ফুরফুরে হাওয়ায় নিধির মনটা নেচে নেচে উঠছে। শিশিরে ঘাস ভিজে গেছে। নিধি জুতো খুলে ঘাসের ওপর দাঁড়ায়। একটু নিচু হয়ে ঘাস গুলো ছুঁয়ে দেয়।
বাসা থেকে বেশ খানিকটা দুরে চলে এসেছে ওরা। নির্জন জায়গা। দুইধারে সারি সারি কাঠ গাছ আর মাঝখানে রাস্তা। টম রাস্তার পাশে বসে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।
নিধি জুতো পড়ে নেয়। এতোখনে খেয়াল হলো কতো দুর চলে এসেছে। রাস্তা ঘাট কিছুই তেমন চেনে না। হারিয়ে গেলে আর বাড়ি ফেরা হবে না বাবা মাকে দেখাও হবে না। কেউ জানতেও পারবে না নিধি কোথায় হারিয়ে গেছে। আদি তো খুঁজবেও না।
“টম তারাতাড়ি চল
নিধি টমের বেল্ট ধরে হাঁটা শুরু করে।
” ওই বাড়ির ছাঁদে থেকে ফুল ছিড়বো। আবার আজকে আমি অফিসে যাবো সাথে কোচিং এ। খাবো গোছল করবো ড্রেস পড়বো। কতো কাজ আমার তা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে কতো দুর চলে এসেছি।
নিধি হাঁটতে হাঁটতে বলে।
হঠাৎ করে একটা গাড়ি ব্রেক করে নিধির সামনে। ভয় পেয়ে যায় নিধি। সাথে নিধির জুতোটাও ছিঁড়ে যায়।
টম ঘেউ ঘেউ করে গাড়ির দরজার দিকে যায়। নিধি বুকে থু থু নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে কোমরে হাত দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেবে ডাইভারকে।
গাড়ির ভেতর থেকে বের হয় লম্বা চওড়া সুদর্শন যুবক। যার গালে চাপ দাঁড়ি নেই। গোফ আর থুতনিতে কিছু দাঁড়ি। এমনিতেই লোকটা নিধিকে ভয় দেখিয়েছে তারপর চাপ দাঁড়ি নেই। নিধির রাগটা দ্বীগুন বেড়ে যায়। ছেলেদের চাপ দাঁড়ি কেনো থাকবে না?
সরি সরি সরি ভেরি সরি। আসলে আপনি এমন ভাবে হাঁটছিলেন আবার হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসলেন। আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। ভেরি সরি।
ছেলেটা এক হাত দিয়ে কান ধরে মিষ্টি করে হেসে বলে।
নিধি কিছু বলার জন্য হা করেছিলো। ছেলেটার কথা শুনে মুখটা বুজে নেয়। দোষটা যে নিধির সেটা নিধি বুঝতে পেরে চুপসে যায়। রাগটাও চলে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
“সরি বললাম তো। আমারও দোষ আছে আমি একটু তারাহুরো করেই ডাইভ করছিলাম। একটু সাবধান থাকা উচিৎ ছিলো আমার। এতোগুলো সরি।
ছেলেটার কথা শুনে ভালো লাগে নিধির। দোষ না করেও কেমন নিজের দোষ স্বীকার করছে।
ছেলেটা নিধির পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” ওপপপপস আমার জন্য আপনার জুতো ছিঁড়ে গেলো। আমি না একটা কুম্ভকর্ণ।
নিধি মিষ্টি করে হেসে ফেলে।
“ইটস ওকে। আপনার দোষ নেই। ভুলটা আমারই।
রিনরিনিয়ে বলে নিধি।
” দোষটা যারই হোক। আপনি এভাবে বাসায় যাবেন কিভাবে?
“পবলেম নেই আমার বাসাটা সামনেই।
” প্লিজ আমি পৌঁছে দেই। জুতো ছিঁড়ে দেওয়ার জন্য বলছি। প্লিজ। না কিন্তু করবেন না
নিধি আমতা আমতা করছে। অচেনা ছেলের গাড়িতে উঠবে। যদি নামিয়ে না দেয়? যদি বাচ্চা ধরা হয়? যদি নিয়ে যায়?
“কি ভাবছেন? আমি বাচ্চা ধরা না। আমি খুব ভালো। ভালো একটা জব করি। এখন অফিসেই যাচ্ছিলাম। আসলে আমাদের বস খুব রাগী। লেট হলেই বকা দেয়। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই তো এভাবে ডাইভ করছিলাম।
ছেলেটার কথা শুনে নিধি হালকা হাসে। আবার ভাবে বুঝলো কি করে নিধি এসবই ভাবছিলো?
অনিচ্ছা স্বতেও নিধি টমকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। টমকে কোলের মধ্যে বসিয়েছে। ছেলেটা গাড়িতে উঠে ছিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে প্রশ্ন করে।
” আপনার নামটা জানতে পারি? না আসলে এতো কথা বললাম। যেভাবেই হোক আপনার মুখটা চিনে ফেললাম। এবার নামটা জানলে ভালো হতো। বাই এনি চান্স যদি কখনো রাস্তায় বা কোথাও দেখা হয়ে যায়। তখন তো জুতো ছিঁড়ে ফেলছিলাম এটা বলে ডাকতে পারবো না। তাই নামটা জানলে নাম ধরে ডাকতে পারতাম
তাছাড়াও আপনার জুতোটাতো ফেরত দিতে হবে। তাই না?
নিধি হাকরে কথা গুলো শুনছে। নিধি এতোদিন জানতো নিধিই সর্বোচ্চ কথা বলতে পারে। এবার দেখছে এই লোকটা নিধিকেও ছাপিয়ে যাবো।
“ইয়ে মিস বলেন?
গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে বলে।
” নিধিরা নিধি। আপনার?
“সৌরভ
” সৌরভ গাঙ্গুলি?
নিধি হেসে বলে।
“সৌরভ খান। আপনার নামটা কিন্তু জোশ। ভালো লাগছে।
” একটু পরে বলবেন আপনি জোশ ভালো লাগছে।
“এক্সজেকলি, আপনিও জোশ
দাঁত কেলিয়ে বলে সৌরভ।
নিধি কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকায়।
” সরি সরি মজা করলাম।
“ভালো
নিধি মুখ ঘুরিয়ে বসে। এই লোকটা বদের হাড্ডি। গোমড়ামুখো নিরামিষ বরের থেকেও বিরক্তিকর।
” গাড়ি থামান গাড়ি থামান নামবো
নিধি চেঁচিয়ে বলে ওঠে। সৌরভ হকচকিয়ে গাড়ি থামিয়ে ফেলে।
“কি হলো?
বেশ ভয় পেয়ে বলে।
” আমার বাড়ি এসে গেছে। দাঁত কেলিয়ে ছিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলে নিধি।
সৌরভ মন খারাপ করে বলে
“ওহহহ
” বাই।
ধন্যবাদ দেবো না। জুতো ছিঁড়ে ফেলছেন আপনি আমার। শোধবোধ।
বলে নিধি টমের বেল্ট ধরে টানতে টানতে চলে যায়।

আদি খাবার রেডি করেও যখন টমের কোনো সারাশব্দ পায় না তখন বুঝতে পারে বাসায় নেই। নিধির রুমে গিয়ে দেখে রুমটা ফাঁকা।
“কোথায় গেলো?
ভাবতে ভাবতে খাবার টেবিলে সাজিয়ে নেয়। গোছল করে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে এসেই দেখে নিধি আর টম এখনো আসে নি। তাই দরজা খুলে বাড়ির গেটের কাছে যায়। দেখার জন্য রাস্তায় গেছে কি না?
কিন্তু গেটের কাছে যেতেই দেখতে পায় নিধি একটা ছেলের গাড়ি থেকে নামছে। ছেলেটাকে দেখতে পায় না। কিন্তু নামার পরে নিধি হাত নারিয়ে বাই বলে এটা দেখে ফেলে।

নিধি গেটের কাছে আসতেই আদিকে দেখতে পায়। বুকে হাত গুঁজে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।
নিধি আদিকে দেখে ঘাবড়ে যায়। এই বুঝি বকা দেয়। বা কান ধরে। নিধি টমের বেল্ট ছেড়ে দুই হাত দিয়ে কান লুকিয়ে ফেলে।
” আআআসললে আআমি
নিধি থেমে থেমে বলতে যায়।
“যা খুশি করো। আই ডোন্ট কেয়ার।
একরাশ অভিমান নিয়ে আদি টমের বেল্ট ধরে হনহনিয়ে চলে যায়। আদি চলে যেতেই নিধি কান থেকে হাত সরিয়ে নেয়। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়।
” আল্লাহ বাঁচাইছে।
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি এসে নিধির কান ধরে। নিধি আহহহহ বলে আদির দিকে তাকায়।
“খুব বার বেরেছে তোমার? বয়ফ্রেন্ডের গাড়ি করে আমার বাড়িতে আসা হচ্ছে? কি ভেবেছিলে আমি কিছুই বলবো না? থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে দেবো।
মারাক্তক রেগে বলে আদি।
নিধি ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয়।
” লাগছে
ব্যাথায় মিয়িয়ে যাওয়ার কন্ঠে বলে নিধি।
“লাগুক। কে ছেলেটা? আমার বাড়িতে থাকলে এসব চলবে না। স্টুপিট একটা। বলো কে ও?
” বলবো কেনো?
নিধি ত্যারা ভাবে বলে।
আদি দমে যায়। নিধির কান ছেড়ে দেয়। কান ছাড়া পেতেই নিধি কানে হাত দেয়।
“বলবা কেনো? ভেতরে চলো
আদি নিধির হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়।
” আজ কপালে দুঃখ আছে আমার। নিধি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে নিধি।
বাড়িতে ঢুকে। দরজা লাগিয়ে আদি চেয়ার টেনে বসে। ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা ছুঁই ছুঁই। সাড়ে নয়টায় মিটিং আছে।
নিধি দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে নিধি মনে মনে ভয়টা কমিয়ে নিয়েছে। কেনো ভয় পাবে?

আদি ফস করে শ্বাস নিয়ে খেতে বসে যায়। নিধিকে খাওয়ার জন্য বলে না। টমকে মাছ দিয়ে ভাত মাখিয়ে টমের থালাতে দিয়ে আদি খাওয়ায় মন দেয়।
নিধি আদিকে ভেংচি কেটে রুমে যেতে নেয়। আর তখনই

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here