শুভ্রনীড়,পর্ব:৫

#শুভ্রনীড়
#পর্ব০৫
#Shamu_Choudhury

পরেরদিন সকাল বেলা শ্রাবণ শুভ্রাদের রুমে এসে সামিহাকে ডাকতে থাকে।
ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেয়, দরজার সামনে শ্রাবণ কে দেখতে পেয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে,

__কি হয়েছে টা কি? এত সকালে কি চাই?
আমার শান্তিও দেখি আপনার সহ্য হয়না

(এসব শুনে শ্রাবণ ভ্রু কুচকায়, এও দেখি শুভ্রার থেকে কম না। যখন যে পারে কথা শুনিয়ে দেয় সে সামিহাকে বলল,,)

__বউ কি সালোয়ার কামিজ এ বিয়ে করবে? তার তো কিছু কেনাকাটা করা লাগবে। আপনি এখন শপিংমলে যাবেন তাও একা গিয়ে যা যা কেনার কিনে আনবেন। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিন।
এই বে শ্রাবণ সেখান থেকে চলে যায়।

_অন্যদিকে সামিহা শুভ্রা কে জাগায় সব খুলে বলে৷ ইউভীর কিসের এত তাড়া তারা বুঝে উঠেনা, শুভ্রা আর ইউভীর বিয়ের জন্য শপিং করতে সামিহা কে যেতে বলছে শুনে সেও সামিহাকে তাড়া দেয়। সেও চায় যত তাড়াতাড়ি হোক ইউভীকে নিজের চোখে দেখতে তারও যে তর সইতেছেনা৷ কি কি লাগবে সবকিছুর একটা নোটে লিখে দেয় তার পর তাকে পাঠিয়ে দেয়, এত কিছু দেখে হা তার আর সামিহার জন্য তেমন কিছু না সব ইউভীর জন্য এ কেমন মেয়ে বাবাহ। সামিহা ভাবতে থাকে তার সাথে ইউভীর বিয়ে হলে কত ভাল হত। ইউভী তার সাথে এমন টা কখনোই করতে পারেনা। সাথে সাথে তার মনে হিংসা জেগে উঠে তার চোখ রাগে লাল হয়ে যায়। শুভ্রার থেকে তার কম কিসে,সে কোনভাবেই এই বিয়ে হতে দিবেনা। এই বলে সে শপিংমলে না গিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়)

_____
অন্যদিকে সামিহা একা একা নিজের রুমে বসে আছে। ঠিক বসে না একবার শুয়ে, একবার বসে,একবার বেলকুনির গাছ গুলোতে যত্ন সহকারে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, তো একবার বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করতেছে। তাকে হাসতে দেখে আমান ও হেসে ফেলে, এর মাঝে শ্রাবণ এসে বলে

_আর কতক্ষণ সিসিটিভি ফুটেজ দেখবি? নিচেই তো আছে, যা দেখা করে আয়

__সে তো ইউভীর জন্য অপেক্ষা করতেছে আমার জন্য না৷ তার কাছে যেতে হলে ইউভী সেজে যেতে হবে।

__কিন্তু তুই আর ইউভীর তো আলাদা। তোদের চেহারার তো মিল নেই। কিভাবে কি করবি?আর এত সকালে সামিহাকে কেন শপিংমলে পাঠালি?? সব খুলে বল তো।

_আমান মুচকি হেসে বলল, আমি শুভ্রাকে বিয়ে করব,ইউভী সেজেই শুভ্রা সেই ছোট বেলায় ইউভীকে দেখেছে তার সবকিছু মনে নেই। তাহলে? চিন্তা করিস না আর তাছাড়া তুই ছাড়া আমার কারো উপর বিশ্বাস নাই। যার জন্য সামিহাকেও আমি পাঠিয়ে দিলাম। তোকে যে কাল রাতে কাবিনের কাগজ আনতে বলেছিলাম এনেছিস?

__শ্রাবণ বলল হ্যাঁ এনেছি। এইটা দিয়ে এখন কি করবি?

_তোকে বুঝালেও বুঝিস না। শুভ্রার কাছে গিয়ে কাবিন নামাতে স্বাক্ষর করে নিয়ে আয়। এখন তো সামিহাও নেই। কারো ভয় নেই। তুই যা।
(আমানের কথা মত শুভ্রার রুমে গিয়ে সর্ব জোরে কাগজ ঠাস করে রাখে। শুভ্রা বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল।হঠাৎ এই রকম শব্দে ভয়ে পিছনে তাকায় তাকিয়ে শ্রাবণ কে দেখে চোখ ছোট করে তাকায় আর ভাবে এই ছেলে এমন কেন? আমান কাছে যায় গিয়ে বলে যে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করে দাও)

__এইটা কেমন কথা বলেন? হুট করে এসে বলতেছেন স্বাক্ষর চাই। এইটা বিয়ে কোন খেলা নয়,(শুভ্রা তার হাত থেকে কাগজ নিয়ে দেখে কারো স্বাক্ষর নাই, সে আবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে)

__আমি বাসায় যাবো। আপনাদের কাছে থাকার ইচ্ছা নেই আমার। কার সাথে বিয়ে হবে না হবে কিছুই বলতেছেন না। ইউভী কোথায়? ওই আসলে আমি স্বাক্ষর করব তার আগে না।

__শ্রাবণ করুণ কন্ঠে বলে উঠে,
দেখুন এখন আপনার খুব বিপদ। তুমি আমার বোনের মত, আমার বোন নেই বলতে গেলে তুমিই আমার বোন। কোন ভাই তার বোনের ক্ষতি চাইবেনা সাথে ইউভীও চাইনা। তাই সে আমাকে পাঠিয়েছে। সে তোমার জন্য তার বাসায় অপেক্ষা করবে,রাতে একা তোমাকে সেখানে রেখে আসবো। সামিহাও যাবেনা।
কারণ আমিও চাইনা আমার বোন টার কোন ক্ষতি হোক। এই বলে সে শুভ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। শুভ্রার ভাই বলতে ইউভী ছিল তাকে পাশে পায়নি কোনদিন হয়ত এইটাই ভাই বোনের ভালবাসা। সে শ্রাবণের হাত থেকে কাগজ নিয়ে স্বাক্ষর করে দেয়। শ্রাবণ চলে যেতে চাইলে সে থামিয়ে বলে,

_তোমার বোন টা আজ চলে যাবে ভাইয়া একবার আদর করবেনা??

(শ্রাবণ চেয়ে দেখে শুভ্রার চোখে পানি টলমল করছে,তারও তো বোন নেই সে নিজেকে আটকাতে পারেনা,জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে আর বলে)

__আজ থেকে তুই ই আমার বোন, আমার আর কাউকে লাগবেনা। (শুভ্রার গালে হাত দিয়ে বলে শোন শুভ্রা তোর সাথে যার বিয়ে হবে সে অনেক ভালো।তার কোন তুলনা হয়না। তাকে কোনদিন ভুল বুঝিস না। আমরা যা করতেছি তোর ভালোর জন্য কারণ তোর বাবা। উনি আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। তোর অনেক কিছু জানার আছে। কিন্তু আমরা সব জানিনা। সব জানলে তোকে সব বলে দিবো ৷ আমরা সবাই রহস্যের বেড়াজালে বন্দি। জানিনা পরে কি হবে। আমি সবসময় তোর সাথে থাকব।(শ্রাবণ তার পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে তাকে দিয়ে বলে এইটা রাখ কাজে লাগবে এই বলে সে চলে যেতে লাগলে শুভ্রা বলে,,,)

_তোমার ফোন আমাকে যে দিয়ে যাচ্ছ? তোমার হাজারটা গফ ফোন করলে কি বলব তাদের? তারা মেনে নিবে তো??(এই বলে সে ফিক করে হেসে দেয়)

শ্রাবণ বলে,,,
__তোর ভাই সিংগেল মরবে রেএএএ তোর কোন ভাবি নাই। একটা ভাবি খুজতে পারিস কিছু বলবনা।

(এই বলে শ্রাবণ হাসতে হাসতে চলে যায় আর ভাবে ছোট থেকে সে ভাবত তার বাবা মা বেঁচে থাকলে তার পরির মত একটা কিউট বোন থাকতো। সে বোনের অভাব পূরণ করার জন্য আমান কে মাঝে মাঝে মেয়ে সাজিয়ে আদর করত। এতে আমান কিছু বলতোনা কারণ শ্রাবণ তাকে সন্ধ্যা বেলায় ঘুরতে নিয়ে যেত যার বদলে সে নিজেকে মেয়ে সাজতেও বাধাঁ দিত না। আজ তার বোন পেয়েছে। অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের চেয়ে অন্য সম্পর্ক গুলোতে বেশী ভালবাসা পাওয়া যায়। যা সে আমান আর শুভ্রার থেকে পেয়েছে। এই ভাবতে ভাবতে সে আমানের কাছে গেলো। আমান সিসিটিভি ফুটেজ এ সব দেখতেছিল। সে শ্রাবণ কে দেখে বলে উঠল,,,

__কি রে ভাই, খুব খুশিতে আছিস হুম? ভাবি বানাতে গিয়ে বোন বানিয়ে আনলি। তাহলে আমাকে সন্মান দিয়ে কথা বলবি না হলে তোর বোনের খবর আছে।(এই বলে সে দাত কামড়ে হেসে উঠে)

_শ্রাবণ তার পিঠে চাপড় মেরে বলে জানি তো এখন আপনার চামচামি করা লাগবে। দূর হো আমার বোনের জন্য ছেলের অভাব নাই। কিন্তু আমি তোকে বেছে নিলাম কারণ তোর নাকে দরি দিয়ে ঘুরাব। নে এবার তোর পালা
(এই বলে সে তার দিকে কাবিননামা এগিয়ে দেয়। অবশেষে তাদের বিয়ে হয়ে যায়। সন্ধ্যায় তারা বের হবে আমানের প্রিয় বাসাতে যার নাম ”শুভ্রনীড়”। সে শুভ্রার নামেই নাম রাখে। নাম টা তার খুব বেশি পছন্দের। কেননা, শুভ্রার নাম টা সেই রেখেছিল ছোটবেলায়।)

সন্ধ্যা হয়ে যায়, সামিহা ফিরে না। শুভ্রাকে চিন্তিত দেখে শ্রাবণ বলে তাকে আরেক কাজে অনেক দূরে নাকি পাঠিয়েছে। সে আর শ্রাবণ যাবে ইউভীর(আমানের) বাসাতে। শুভ্রাকে সাদা রঙ এর এক শাড়ি দেয় এইটা নাকি ইউভী তার জন্য পাঠিয়েছে সে নিয়ে নেয়। সাদা রং এর শাড়িতে আনকমন পার্ল আর জরি সুতার খুব সুক্ষ্ম কাজ। যা শাড়িটিকে অসাধারণ ফুটিয়ে তুলেছে। শাড়ির কাজ গুলো দেখে মনে হচ্ছে শাড়ি টা খুব ভারী হবে,কিন্তু শাড়িটা অনেক সফট আর হাল্কা। তার সাথে ব্লাউজ টাতেও খুব নিপুণ ভাবে কাজ করা,সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, সাদা পার্লের চুরি, আরোও অনেক কিছু যা শুভ্রার মন কাড়লো। সে তৈরি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে, আজ নিজেকে আয়নায় দেখে সে চিনতেই পারেনা। সে ভাবে কিছু মিসিং, পরে খেয়াল করে দেখে সে কাজল পরেনি সব মেয়েকে নাকি কাজল পরলে মায়াবি লাগে। সে ভাবে তাকেও কি মায়াবিনী মনে হচ্ছে?? এই সব ভেবে নিজের অজান্তেই হেসে উঠে। নিচ থেকে শ্রাবণের ডাক পরলে সে নিচে এসে দেখে শ্রাবণ তার জন্য অপেক্ষা করতেছে,শুভ্রাকে দেখে শ্রাবণ বলে উঠে,,
_মাশাল্লাহ,,, মনে হচ্ছে সাদা পরি। এত কিউট তুই। কারোও নজর না লাগুক।
দেখিস জামাই যেন পাগল না হয়ে যায়।

_শুভ্রা হেসে বলে, ভাইয়ায়ায়া এইসব কি বলিস। বিয়ের পর তুই যাতে বউ পাগল হস সেই জন্য আমার মত ভাবি খুজি কি বল??

শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে,,

_তা খুজিস। তবে তুই এখন আমার আমানত। চল তোকে তোর জায়গায় রেখে আসি। সময় বেশি নেই। তোর জামাই তো সেই সকালে বের হয়ে গেছে।

(এই বলে দুজন বেড়িয়ে পরে। প্রায় আট ঘন্টা পর তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। শ্রাবণ তাকিয়ে দেখে শুভ্রা ঘুমিয়ে গেছে। সে মনে মনে ভাবে তার বোনটা এত কিউট কেন, ওর ভাগ্য না ভাল হলে আমানের মত ছেলেকে পায়?? কোন ছেলে যে একটা মেয়ে কে এত ভালবাসতে পারে তা সে আমান কে না দেখলে কখনো বুঝতোনা। এইগুলা ভেবে সে হেসে উঠে। একটু পর সে শুভ্রা কে ডেকে দেয়, আর আমান কে বলে তারা আসছে। শুভ্রা উঠে দেখে সবদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। এত অন্ধকারে সে ভয় পেয়ে যায়। একটা বাল্ব অন্তত রাখা উচিত ছিল। কি ভুতুড়ে বাড়ি। শুভ্রা ভয় পাচ্ছে দেখে শ্রাবণ বলে উঠল আরে আয় কিছু হবেনা। ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে শুভ্রাকে তার রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিল। সে ভয়ে ভয়ে রুমের দরজা খুলে বিস্মিত হয়ে যায় সে দেখে________

____
অন্য দিকে ইউভী তার গুপ্তচরের ফোনে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু তাকে ফোনে পাচ্ছেনা। রাগে তার শরীর রি-রি করতেছে। তার মনে হচ্ছে সে তাকে সামনে ফেলে কুপিয়ে মেরে ফেলতো। পাষাণ হৃদয় পাষাণ ভাবনা আসাই স্বাভাবিক।

___আরেকদিকে সামিহা ভাবতেছে আজ সে যায়নি বিধায় বিয়ে হয়নি।তাকে হয়ত সবাই খুজতেছে কারণ সে সকালে শপিংমলের উদ্দেশ্য নিয়ে বের হলেও সেখানে না গিয়ে অনেক দূরে চলে আসে। সে জানেনা তার গাড়িতে ট্র‍্যাকার লাগানো আছে। শ্রাবণ সামিহার অবস্থানস্থল আমান কে জানায়। আমান মুচকি হেসে বলে কিছু হলেও তোমার রহস্য জেনে গেছি সামিহা_____

চলবে????

(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি। নামাজ কায়েম করুন ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here