শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -১০+১১

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১০

মিহালের মায়ের ভাবনার মাঝেই মিহাল বলে উঠে,

মিহাল: আমার ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে না কারণ আমি সত্যি সব শর্ত ও ওয়াদা রাখবো। আজকে ডাক্টার বলেছে তূরের কোমা থেকে ফিরার চান্সেস বেশি।

কায়রা ফুঁসে উঠে বলে,
কায়রা: মানে কি ওই মেয়ের এই ভিত্তি হীন কথা রাখার জন্য কি তুই সারাজীবন একা থাকবি?

মিহাল: একা থাকবো কেনো আপু! তূর মারা যায়নি, সে এখনো জীবিত।

কায়রা: কোমাতে আছে তাইতো!!! কোমা থেকে কিন্তু মানুষ মারাও যায় এটা জানিস তো?

মিহাল: দেখো আপু আমি জানিনা তূর কোমা থেকে বেঁচে ফিরবে কি না! কিন্তু আমি আর অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।

কায়রা: দেখ মিহাল, তোরে দেবদাস হতে হবে না আর আমি হতে দিবো না। আমার চাচাতো ননদের তোরে পছন্দ। তার সাথে তোর বিয়ে দিবো আমি। তানজিনার সাথে তোর বিয়ের খবর শুনে মেয়েটা কান্না করছে অনেক!

মিহাল তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
মিহাল: তাহলে এখন তূরের সাথে বিয়ের কথাটা বলে আরেকটু ছ্যাকা দেও! তোমার বিয়ের সময় থেকে যেনো পিছেই লেগে আছে😒। কোন ক্লাসে পড়ে জানি তোমার ননদ?

কায়রা ভ্রু বাঁকা করে বলে,
কায়রা: ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হইছে।

মিহাল: তখন মাত্র জেএসসি দিছিলো মনে হয়! ঐটুকু মেয়ে পিছেই পরে ছিলো আঠার মতো। তোমার ওই ননদের জন্য তোমার শ্বশুর বাড়িতে যেতে পারতাম না। তুমি এখানে আসলেও এই মেয়ে সাথে আসতো। ভাগ্য ভালো কয়েকদিন বুঝানোর পর মেয়ে বুঝছে আর এখন যদি তুমি তারে আবার উসকাও তাহলে ওই মেয়েরে আমি পাবলিকলি ইনসাল্ট করবো।

একটু থেমে আবার বলে,
মিহাল: তূর আমাকে এতো বছর যাবত ভালোবাসে কিন্তু কোনোদিন আমাকে বিরক্ত করেনি বা পিছনে লেগে থাকেনি।

মিহালের কথায় কায়রা দমে না গিয়ে জবাব দেয়,
কায়রা: মেয়েটা তোকে ভালোবাসতো আর দেখ এখনো মেয়েটা ভালোবাসে। আমাকে জিঙ্গাসা করে তুই কেমন আছিস এগুলা।

মিহাল: কারণ তুমি তোমার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বলেছ তানজিনার সাথে আমার বনে না তাই সে তোমার মন জিতার চেষ্টা করছে। আর হ্যাঁ প্লিজ আমাকে বিয়ে নিয়ে তোমরা আর কিছু বলবে না। ওই মেয়েকে আমার কোনো আপডেট দিবে না দয়া করে।
এগুলো বলে মিহাল বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায়। মিহালের বাবা-মা ছেলে মেয়েদের কথার মাঝখানে কোন কথা বলেনি। নির্বাক দর্শক হয়ে সবটা দেখেছে শুধু।

কায়রা আশা না হারিয়ে তূরের বাসায় যেয়ে ওর পরিবারের সাথে কথা বলবে বলে ভাবলো এবং নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক তার স্বামী রিয়াদকে নিয়ে তূরের বাসায় বিকেলে যায়।

________
তূরের বাসার সবাই ওদের ভালে ভাবে আপ্যায়ন করে কিন্তু পুরোটা সময় কায়রা মুখভার করেছিল রিয়াদ সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললেও। একপর্যায়ে কায়রা বলে ফেলে,

কায়রা: আপনারা কি ভাবলেন ওদের বিয়ের ব্যাপারে?

তূরের বাবা কায়রায় কথা বুঝতে না পেরে বলে,
তূরের বাবা: বুঝলাম না তোমার কথা! কি ভাববো আমরা?

কায়রা এবার একটু নড়েচড়ে বসে বলে,
কায়রা: দেখেন আঙ্কেল তূর এখন কোমাতে আছে কবে ফিরবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমার ভাই কি এখন সারাজীবন একা থাকবে নাকি?

কায়রার কথায় নীরা তাচ্ছিল্যভরা জবাব দেয়,
নীরা: কেন আপু মিহাল ভাই একা কেন থাকবে? তাঁর প্রথম বউ আছেনা! তানজিনা!

কায়রা মুখ ছোট করে জবাব দেয়,
কায়রা: ওরা ডিভোর্স এপ্লাই করেছে। কিন্তু ডিভোর্স কনফার্ম পরে করবে।

তূরের পুরো পরিবার অবাক হয়ে যায়। তূরের কাকি বলে,
তূরের কাকি: ডিভোর্স এপ্লাই করেছে মানে? ওদের বিয়ে হলো মাত্র পাঁচ মাস! এখনই ডিভোর্স তাহলে বিয়ে করেছিল কেন? আবার বলছো ডিভোর্স নাকি কনফার্ম পরে করবে তার মানে কি?

কায়রা বলে,
কায়রা: তানজিনা তখন বিয়ে করতে চায়নি, বাবা-মার কথায় বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। আমার সেটা জানতাম না। এখন তানজিনার নিজের মুখে বলেছে সেই বিয়েটা রাখতে চাচ্ছে না। কিন্তু সে ডিভোর্স কনফার্ম দেরি করে করবে নিজের সুবিধা মতো।

নীরা: মানে কি? এই মেয়ে ডিভোর্স চায় কিন্তু কনফার্ম দেরি করে করবে, আসলে সে চাই কি?

কায়রা: তা জানি না কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। আমি বলতে আসছি আপনাদের মেয়ের থেকে আমার ভাইকে শর্ত গুলো থেকে মুক্তি দিতে।

এবার পুরো পরিবারের ভ্রু কুঁচকে আসে। তাদের সবার অবস্থা বুঝে কায়রা বলে,
কায়রা: তূর তো মরেও যেতে পারে তাই বলছিলাম কি যদি আপনারা তূরের অসুস্থতার জন্য তার হয়ে শর্ত গুলো তুলে নিতেন!!

সবাইতো অবাক মানে, ‘শর্ত অনুযায়ি মিহাল তূরকে ডিভোর্স দিতে পারবেনা কিন্তু তূর যদি ডিভোর্স দেয় তাহলে সব শর্তগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।’

তূরের কাকা থমথমে মুখে বলে,
তূরের কাকা: আপনারা কি বলছেন ভেবে বলছেন তো? আপনারা কিন্তু ইনডাইরেক্টলি ডিভোর্সের কথাই বলছেন!

কায়রা এবার সরাসরি বলে,
কায়রা: হুম। আমরা ডিবোর্সের কথা বলছি। আমার ভাইয়েরও একটা ভবিষ্যৎ আছে তাই না!

তূরের কাকা আর কথা বাড়ালেন না। তূরের মা ওড়না মুখে নিয়ে নিশ্চুপে কান্না করছে। নীরা ফট করে বলে উঠে,

নীরা: আপনার ভাই তো সজ্ঞানে শর্তগুলো মেনে ওয়াদা করে বিয়ে করেছে। আপনাকে কে বলল যে আমার বোন মরে যাবে! আপনার ভাইকে কি এখন আপনারা দশ-বারোটা বিয়ে করাবেন! তানজি আপুর সাথে ডিবোর্স হলে আপনার ভাইয়েরও ‘ডিভোর্স পাওয়া’ ট্যাগ লেগে যাবে তার উপর যদি আমার বোনের সাথেও ডিভোর্স হয় তাহলে তো দুইটা ডিভোর্স পাওয়ার ট্যাগ। ওই অবস্থায় কোন মেয়ে আপনার ভাইকে বিয়ে করবে একটু বলবেন! যেখানে ছয় মাস না যেতেই সে দুই দুইটা ডিভোর্স প্রাপ্ত হবে।

কায়রা এবার নিজেও চিন্তিত হয়ে যায়। পরে ভাবে, তূরের সাথে বিয়ের খবর তো তার শ্বশুর বাড়ির কেউ জানে না! সবাই তো একটু আকটু জানে যে তানজিনার সাথে মিহালের সম্পর্কটা ঝুলে আছে।

কায়রার ভাবনার মাঝেই নীরা বলে উঠে,
নীরা: আপনি ভাবছেন হয়তো আমার বোনের সাথে আপনার ভাইয়ের বিয়ের খবরটা কেউ জানে না তার জন্য আপনারা পার পেয়ে যাবেন কিন্তু ডিভোর্স হলে আমরা ঠিকই বিয়ের খবরটা সবার সাথে শেয়ার করব। আর শুধু শেয়ারই করবোনা ডিভোর্স হওয়ার কারণটাও বলব যে আমার বোন অসুস্থ তাই আপনারা জোর করে ডিভোর্স নিচ্ছেন।

নীরার কথা শুনে কায়রা রেগে কিছু বলবে কিন্তু রিয়াদ বাধা দেয়।
রিয়াদ: দেখেন আপনারা কায়রার কথায় কিছু মনে করবেন না। আসলে সে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত কারণ মিহাল নিজেও বলে দিয়েছে সে তূর ছাড়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। মিহাল তূরকে করা ওয়াদা পালন করবে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।

রিয়াদের কথায় সবাই স্বস্তি পেলেও মনের মধ্যে শংকা রয়ে যায়, ‘ যদি মিহালের মন পাল্টে যায় আবার!’

নীরা কিছুটা সন্দেহের সুরে বলে,
নীরা: আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনারা পাত্রীও সিলেক্ট করে ফেলেছেন!!!

নীরার কথায় রিয়াদের মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে যায়। কি বলবে সে? কায়রা তো ভেবে নিয়েছে রিয়াদের চাচাতো বোনের সাথে মিহালের বিয়ে দিবে জোর করে। রিয়াদ আর কথা না বাড়িয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কায়রাকে নিয়ে চলে আসে।

রাস্তায় রিয়াদ কায়রাকে বুঝায়,
রিয়াদ: দেখো কায়রা যেখানে তোমার ভাই রাজি না সেখানে তুমি কিছু বলো না সেটাই ভালো। তূরের পরিবার কিন্তু ঠিক বলেছে। যেখানে তূর শর্তগুলো মিহালকে দিয়েছে ও ওয়াদা করিয়েছে তখন কিন্তু মিহাল বিনাবাক্যে সবগুলো মেনে নিয়েছে এটা জানা সত্ত্বেও তূর অসুস্থ বাঁচবে কিনা কোন নিশ্চয়তা নেই।

কায়রা: তখনতো তানজিনার সাথে বিয়েটা আছে এটা ভেবে নিয়েছে।

রিয়াদ মলিন হেঁসে বলে,
রিয়াদ: না কায়রা তুমি তো জানোনা। মিহাল সেদিন তানজিনার সাথে কথা বলেছে। হ্যাঁ, মিহাল তানজিনাকে বলেনি সে বিয়ে করবে বা এসব কথা! কিন্তু তানজিনার সাথে কথাবাত্রা গুলো শুনেই মিহাল তূরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাহলে মিহাল তূরকে বিয়ে করত না! নিজের ভাইকে এটুকু তো চিনো যে জেদী হলেও আবেগে বিবেক হারাবেনা। শুধু তানজিনার সেদিনের কথা না বিয়ের পর থেকে করা প্রতিটা ব্যবহার সব চিন্তা করেই কারো ভালোবাসার মর্যাদা দিতে চেয়েছে।

এরপর রিয়াদ ঐদিন মিহালের সাথে হওয়া কথাগুলো কায়রাকে বলে। সব শুনে কায়রা তো অবাক সেতো ভেবেছিলো তার ভাই একটা অসুস্থ মেয়ের মন রাখার জন্য বিয়ে করেছে।

রিয়াদ কথাগুলো বলার পরে বলে,
রিয়াদ: দয়া করে মিহালের আবার বিয়ে দিবে এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।

এরপর একটু শক্ত কন্ঠে বলে,
রিয়াদ: আমার বোন বা আমার ফ্যামিলির কাউকে মিহালের দ্বিতীয় বিয়ে প্রথম বিয়ের ডিভোর্স এগুলো কিছু জানাবে না। আমার বোনকে আর এসবের মাঝে টানবেনা ওর বয়স কম ওর জন্য আমরা ভালো ছেলে পাবো পরে।

কায়রা আর কোনো কথা বলেনি। রিয়াদের কথাগুলো শুনে আবার মিহালের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে যায়।

________
এদিকে মিহাল স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাসায় ফিরার সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বেখেয়ালিতে চলন্ত বাইকের সাথে ধাক্কা খায় কিন্তু ভাগ্য কিছুটা ভাল ছিল যে বাইক তার উপর দিয়ে যায়নি। বাইকের ধাক্কায় মিহাল অনেকটা রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১১

রাত আটটা বেজে গেছে এখনো মিহাল না বাসায় আসছে না ফোন রিসিভ করছে! সবাই চিন্তায় পরে গেছে। কায়রা ভাবছে, সকালের কথাগুলোর জন্য হয়তো মিহাল রাগ করে আছে তাই বাসায় আসছে না। সেতো মিহালের কথা চিন্তা করে কথাগুলো বলেছে। আবার ভাবে, নাহ মিহালকে আর কিছু বলবে না বিয়ে নিয়ে। কয়েকদিন পর তো চলে যাবে এরপর মিহালের যা ইচ্ছা তা করবে।

সাড়ে আটটার দিকে সাইফ মিহালকে ধরে ধরে নিয়ে আসে। হাসপাতালে নেওয়ার পর মিহালের বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করতে বলে ডাক্তার। মিহাল বাড়ির কাউকে টেনশন দিতে না চেয়ে বন্ধু সাইফকে ফোন করে।
মিহালের ডান হাত ও বাম পায়ে ব্যথা পেয়েছে ডান হাত ভেঙে গেছে প্লাস্টার করে দিয়েছে আর বাম পা গোড়ালির নিচে হাঁরে একটু ফেটে গেছে তাই সেখানেও প্লাস্টার করে দিয়েছে।

মিহালকে এই অবস্থায় দেখে ওর মা অস্থির হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই মিলে মিহালকে দেখাশোনা করছে।

________
লিরা রাতে তূরের বোন নীরাকে ফোন দিয়ে বলে তূরের মোবাইলে মেইল চেক করতে আমেরিকার কোন ইউনিভার্সিটি থেকে মেইল এসেছে তা দেখতে। কিন্তু নীরার কাছে তূরের মোবাইলের পাসওয়ার্ড নেই তাই সে খুলতে পারে না। লিরার কথায় নীরা ওর বাবা মাকে জানাই ওর বাবা-মা বলে কাল সকালে হসপিটালে যেয়ে তূরের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে মোবাইল খুলতে হবে।

সকাল সকাল নীরা হসপিটালে তূরের কেবিনে যায় সেখানে গিয়ে ডাক্তার ইফতিকে দেখে মনিটর করছে তূরের কন্ডিশন।
নীরা আস্তে আস্তে ভিতরে যায়,
নীরা: হ্যালো ডাক্তার!
ইফতি: হ্যালো মিস নীরা!
নীরা: বাহ, আপনি তো আমার নাম মনে রেখেছেন!

নীরার কথায় ইফতি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হাসে। এরপর আবার তূরের কন্ডিশন চেক করতে করতে বলে,
ইফতি: আপনার সাথে এই তিন মাসে কম করে হলেও দশ-বারো বার দেখা হয়েছে, তাই নাম মনে রাখা কোনো ফ্যাক্ট না।

ইফতির কথায় নীরা মুচকি হেসে বলে,
নীরা: ডাক্তার আমি কি আমার বোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে পারবো?

নীরার কথায় একটু একটু সন্দেহ সূচক দৃষ্টিতে তাকায়। ইফতির এভাবে তাকানো দেখে নীরা হেসে ফেলে।
নীরা: রিলেক্স আমি কিছু চুরি করবো না শুধু মেইল চেক করব ওর ফোন থেকে। ওর বন্ধুদের আমেরিকায় তিনটা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করতে চাওয়ার অ্যাপ্লিকেশন একসেপ্ট করার ইনভিটেশন এসেছে। এখন ওর কোনটাতে এসেছে সেটা একটু দেখার জন্য ওর ফোনের লক খুলতে হবে।

ইফতি: ওয়াও দ্যাট’স গ্রেট!

ইফতির কথায় নীরা মলিন হেসে বলে,
নীরা: কিন্তু ও তো কোমাতে আছে। এতো ভালো ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েও কি লাভ হবে! কবে কোমা থেকে ফিরবে আর ইউনিভার্সিটি অথরিটি কি ওর জন্য সিট খালি রাখবে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।

ব্যথিত কন্ঠে ইফতি বলে,
ইফতি: চিন্তা করবেন না উনি জলদি সুস্থ হয়ে যাবেন। কোন ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে সেটা জানার পরে ওই ইউনিভার্সিটিকে যেদিন ফ্লাইট সেদিন মেইল করে রিকোয়েস্ট করবেন যাতে উনার এডমিশনটা ক্যানসেল না করে এবং ওনার বর্তমান অবস্থাটা বলবেন।

অতঃপর নীরা তূরের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে মোবাইলের মেইল দেখে।
তূর ” সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি” এবং “ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিসকো” তে চান্স পেয়েছে। তূরের কাছে দুইটা ইউনিভার্সিটি থেকে মেইল ইনভিটেশন দেখে ইফতি বলে,
ইফতি: কংগ্রাচুলেশন। আমার মনে হয় উনার জন্য “সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি” টা ভালো হবে। এটা ক্লিনিক্যাল সেক্টরের জন্য ও গবেষণার জন্য খুবই ভালো।

নীরা সায় জানিয়ে ইফতির সাথে আরও টুকটাক নরমাল কথা বলে তূরের বর্তমান অবস্থা জেনে নেয়। এরপর নীরা ডাক্তার ইফতির থেকে বিদায় নিয়ে লিরা ও তূরের অন্য বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যায়। তূরের বন্ধুদের সাথে মিহালের বন্ধুরাও আছে কিন্তু মিহাল অ্যাক্সিডেন্টের কারণে আসেনি কিন্তু নিজের পছন্দের ইউনিভার্সিটির কথাটা বলে দিয়েছে।

_____
নাদিয়া, তাওহিদ ও আসফি “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া” তে চান্স পেয়েছে এবং নাদিয়ার হাসবেন্ড শাফকাত সেখান থেকেই পিএইচডি করতে এপ্লাই করেছে। আসফি আবার “সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি” তেও চান্স পেয়েছে আর তাওহীদ “ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিসকো” তেও চান্স পেয়েছে কিন্তু দুই বন্ধু ডিসাইড করে নিয়েছে যে “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া” তে এডমিশন নেবে।

জারিন ও ফাইজা শুধুমাত্র ” ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিস্কো” তে চান্স পেয়েছে ঠিক সেরকম তাইজুলও। জারিন ” ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিস্কো” তে চান্স পাওয়ায় রণকও সেখানে ভর্তি হবে, “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া”তে চান্স পাওয়ার পরেও।
রণক জারিনকে একা ছাড়তে রাজি না। রণকের এখন মনে হচ্ছে তূরের ডিসিশনটা বেস্ট ছিল, তার আর জারিনের রিলেশনশিপ টা করিয়ে দেওয়াটা।

বাকি সবাই রাফি, ইনায়া, লিরা, তূর, মিহাল, রিজভী, অর্ক সবাই “সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি” ও “ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিস্কো” তে যৌথভাবে ইনভিটেশন পেয়েছে। সবাই ঠিক করল তারা “সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি” তে ভর্তি হবে।

যে তিনটা ইউনিভার্সিটিতে ওরা সবাই চান্স পেয়েছে সবগুলো ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে অবস্থিত। দুইটা সানফ্রান্সিসকো শহরে আর “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া” সানফ্রান্সিকোর বাহিরে।

_______
তানজিনা এখন ভালো আছে। মিহালের থেকে ডিভোর্স পেপারে সাইন নিয়ে সে নিজেও সাইন করে রেখে দিয়েছে এখন সুযোগ খুঁজছে কিভাবে বাড়ির সবাইকে বলবে। তানজিনা তার ভাবি সাথিকে সব কিছু বলেছে। সাথিও তানজিনাকে একটু দেরি করে সবাইকে জানানোর কথা বলেছে।
তানজিনার মা মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করে মিহালের কথা তখন তানজিনা কথা কাটিয়ে দেয় কিছু না কিছু বলে।

ডাক্তার আরিফ তার বাবা-মাকে তানজিনার কথা বলেছে, তার বাবা-মা তানজিনার ছবি দেখে ও তানজিনার কাজের প্রতি ডেডিকেশন দেখে খুব খুশি হয়। আরিফের মা বলে যে একদিন হসপিটালে তানজিনার রোগী সেজে যাবে তখন তানজিনার সাথে টুকটাক কথা বলবে সে রোগী সেজে।
আর ডাক্তার আরিফের বাবা তো একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তাই সে ” সরোয়ার্দি হসপিটাল”
এ ডাক্তার হিসেবে যেয়ে দেখতে পারবে।

_______
আরিফের কাছে ইফতির ফোন আসে কিছুদিন পর। তখন আরিফ রসিকতার সুরে বলে,
আরিফ: কি ব্যাপার মিস্টার দেবদাস! কি খবর!

ইফতি আরিফের কথায় কান না দিয়ে বলে,
ইফতি: আরে রাখ তোর দেবদাস! আগে বলতো কাউকে প্রথম দেখায় ভালো লাগা আর কাউকে আস্তে আস্তে একটু একটু করে ভাল লাগা কোনটা বেশি স্ট্যাবল?

ইফতির কথায় আরিফের ভ্রু কুঁচকে আসে আর সন্দেহের ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
আরিফ: ব্যাপারটা কি রে? তুই হঠাৎ করে এগুলো জানতে চাইছিস কেন? আবার কি কাউকে ভালো লেগেছে?

ইফতি একটু লাজুক সুরে বলে,
ইফতি: আসলে হ্যাঁ! আমার পেশেন্ট “তূরফা নূর তাথৈ” এর মেজো বোন নীরাকে আমার ভালো লেগেছে একটু একটু করে।

আরিফ সন্দিহান সুরে বলে,
আরিফ: তাথৈ কে?
ইফতি: ওই যে তোকে যার কথা বলেছিলাম। আমি আসার আগের দিন তার বিয়ে হয়ে গেছে, সে এখন কোমাতে আছে।

আরিফ অবাক হবার ভান করে বলে,
আরিফ: প্রথমে তোর বড় বোনকে ভালো লাগলো, পড়ে বড় বোন বিবাহিত জেনে এখন মেজ বোন কে ভালো লাগলো! তোর কি এখন দুই বোনকেই ভালো লাগে নাকি😵?

আরিফের কথা শুনে ইফতি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তাই জলদি করে বলে,
ইফতি: না! না! মিস তাথৈ বিবাহিত জানার পর আমার ভালোলাগার ফিলিংস আমি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছি। আর মিস নীরাকে ভালোলাগা শুরু হয় মিস তাথৈ কোমাতে যাবার প্রায় একমাস পর। সেদিন নীরা কোন ফ্যামিলি মেম্বারদের ছাড়া একা এসেছিল, নীরা তার বড় বোনের কেবিনে গিয়ে বড় বোনের পাশে বসে কান্না করছিল। তার কান্নার মাঝেই আমি কেবিনের দরজা খুলে মিস তাথৈ এর চেকআপের জন্য যাই তখন নীরা কান্নারত অবস্থায় দেখে আমার খুব মায়া লাগে। এরপর থেকে যখন দেখা হয় তার সাথে টুকটাক কথা হয় আর আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে।

ইফতির এই মহান বক্তব্যের পরে আরিফ সুন্দর জিজ্ঞাসা করে,
আরিফ: দুই বোনকে একসাথে দেখলে কি তোর দ্বিধান্বিত লাগেনা?
ইফতি: না লাগে না! মিস নীরাকে ভালো লাগে আর মিস তাথৈকে নরমাল পেশেন্ট এর মত লাগে।

আরিফ খুশি হয় ইফতির কথায়, এটলিস্ট তার ফ্রেন্ড মুভঅন করতে পেরেছে।
আরিফ: কংগ্রাচুলেশন! তো মিস নীরাকে বলেছিস?
ইফতি লাজুক হেসে কিছু বলেনা। তাই আরিফ আবার বলে,
আরিফ: বলে দে। মিস তাথৈ এর অবস্থা কি এখন আগের মতোই নাকি ইমপ্রুভ হয়েছে?
ইফতি: হুম বলে দেবো। মিস তাথৈ এর অবস্থা আগে থেকে ইম্প্রুভ হয়েছে যেকোনো সময় ওনার জ্ঞান ফিরতে পারে।

এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পরে তারা ফোন রেখে দেয়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here