শেষ প্রহর, পর্ব:৪+৫

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ০৪
জাহান আরা

টিউশন শেষ করে চন্দ্র রাত ৯ টায় বাসায় ফেরে,ততক্ষণে নাসিমা বেগমের জ্ঞান হারাবার জোগাড়,নতুন বৌ সেই দুপুরে বেরিয়েছে এখন কতো রাত হয়েছে অথচ বৌ বাড়ি ফেরে নি।
নিষাদের কয়েক দফা গালাগালি শোনা শেষ চন্দ্রর মোবাইল নাম্বার না রাখার অপরাধে।
নিষাদ ও বুঝতে পারে চন্দ্রর মোবাইল নাম্বার রাখা উচিৎ ছিলো তার কিন্তু যা হয়ে গেছে তা নিয়ে এতো রাগারাগি করার কি আছে নিষাদ বুঝতে পারছে না।

চন্দ্রকে দেখে নাসিমা বেগমের ধড়ে প্রাণ এলো।তাৎক্ষণিক টেবিলে খাবার দিতে বললেন মাজেদা কে।
চন্দ্র হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে আসে।নিষাদ রকিং চেয়ারে সেই যে বসেছে সন্ধ্যায় আর কোনো উঠাউঠি নেই তার।
নাসিমা বেগম কয়েকবার ডেকেছে খেতে আসার জন্য কিন্তু নিষাদ আসে নি তার মাথা ধরেছে বলে।
চন্দ্র সারাদিন না খেয়ে ছিলো,টিউশনিতে নাশতা দেয় সেটা চন্দ্র খেতে আরে না তার ভীষণ অস্বস্তি হয়।

গোগ্রাসে গিলছে চন্দ্র,নাসিমা বেগম আগ্রহ নিয়ে দেখছেন চন্দ্রকে।ভীষণ অবাক হচ্ছেন তিনি যতোবারই চন্দ্রকে দেখেন তার মনে হয় যেনো চন্দ্র না তার সামনে বসে আছে সুলতানা। যেনো সুলতানার কার্বনকপি এই মেয়ে।

আচ্ছা চন্দ্র কি সুলতানার মতো বিচক্ষণ হবে??

তা হলে নাসিমা বেগমের কোনো আফসোস থাকবে না,অবশ্য সুলতানার উপর তার বিশ্বাস আছে,তাই এটুকু নিশ্চিত তিনি চন্দ্র মোটেও খারাপ মেয়ে হবে না।

নাসিমা বেগমের ঠান্ডা লেগেছে,খাবার টেবিলেই তিনি কেশে উঠলেন।

খাবার সময় হাঁচি-কাশি এসব তোজাম্মেল চৌধুরীর পছন্দ না,তিনি শীতল দৃষ্টিতে নাসিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
স্বামীর মনোভাব বুঝতে পেরে নাসিমা বেগম খাবার না শেষ করেই উঠে গেলেন।খুব অভিমান হলো তার,এতোদিনের সংসারে আজও তোজাম্মেল সাহেব তার ভালো খারাপ সব কিছু কে আপন করে নিতে পারলেন না,এটাই তার বড় কষ্ট।

সামান্য কাশি-ই তো দিয়েছেন,তার ইচ্ছে করছে তোজাম্মেল সাহেব কে গিয়ে বলেন, “একটু কাশি দিয়েছি খাবার টেবিলে বসে,হেগে তো দিই নি,এরকম করে তাকানোর তো কিছু নেই তাতে”

মাঝেমাঝে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে তার স্বামীর মুখের উপর,কিন্তু সাহসের অভাবে বলেন না।তবে তার খুব ইচ্ছে একদিন তিনি যা ইচ্ছে তা বলবেন,বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন।গুলশানে তার নামে যে বাড়িটি আছে তাতে গিয়ে পড়ে থাকবেন একা একা,চাইলে চন্দ্রকে ও নিয়ে যেতে পারেন যদি চন্দ্রকে তার খুব বেশি পছন্দ হয়,সুলতানা থাকলে অবশ্য চোখ বন্ধ করে নিয়ে যেতেন
তিনি।

একটা কাঁচের বাটিতে করে রসুন তেল গরম করে চন্দ্র নাসিমা বেগমের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

“মা,আসি?”

ছোট একটা বাক্য,দুটো শব্দ,অথচ শুনেই নাসিমা বেগমের মনে হতে লাগলো কতো মধুর বাক্য এটি,তাৎক্ষণিক তার চন্দ্রকে বেশ পছন্দ হয়ে গেলো,এবং সাথেসাথে সিদ্ধান্ত নিলেন কোনো জড়তা ছাড়া এরকম সহজ সাবলীলভাবে তাকে মা বলে ডাকার জন্য তিনি তার নামে যেসব সম্পত্তি আছে সব চন্দ্রকে দিয়ে যাবেন।

“আসো”

চন্দ্র এসে বাটি থেকে তেল নিয়ে নাসিমা বেগমের হাতে পায়ে,বুকে তেল মালিশ করতে লাগলো,এমনভাবে সব করছে যেনো নাসিমা বেগমকে চন্দ্র অনেক যুগ ধরে চেনে,যেনো অনেক দিনের বৌ শাশুড়ীর সম্পর্ক তাদের।

তেল মালিশ করায় নাসিমা বেগমের খুব শান্তি লাগলো।চন্দ্র উঠে গিয়ে নাসিমা বেগমের জন্য দুধ পাউরুটি নিয়ে আসে।চন্দ্রর এরকম আন্তরিকতায় নাসিমা বেগম মুগ্ধ হয়ে যান,তিনি যে খাবার খান নি সেটা তার বৌ খেয়াল করেছেন।এটাই তার আনন্দের কারণ।

নিজের মেয়ে নেই বলে সবসময় চাইতেন বৌ হয়ে যারা আসবে তারা যেনো মেয়ে হয় তার,তিনি কখনো শাশুড়ীসুলভ আচরণ করবেন না।

প্যারাসিটামল নেয়ার জন্য নিষাদ মায়ের রুমে আসে,দরজার সামনে এসে দেখতে পায় মা বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছেন,চন্দ্র গ্লাসে রুটি ভিজিয়ে ভিজিয়ে মা’য়ের মুখে দিচ্ছে।

এমন কোনো আহামরি দৃশ্য না তবু বিষয় টা নিষাদের মনে গভীর দাগ ফেলে,মুহূর্তেই মনে হয় সুস্মিতা কি এভাবে মায়ের যত্ন নিতে পারতো?

মনে হয় না তার।চুপচাপ চলে এলো রুমে নিষাদ,কেনো যেনো মাথাব্যথা ও সেরে গেলো তার তখন।
পেটের মধ্যে ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এখন,খেতে যাওয়া ঠিক হবে কি-না নিষাদ ভেবে পাচ্ছে না।নিষাদ ক্ষিধে সহ্য করতে পারে না কখনো।
পেটের ভিতর ইদুর দৌড়াচ্ছে আবার খেতে গেলে এখন চন্দ্রকে বেড়ে দিতে হবে।মাজেদা খালা শুয়ে পড়েছে তাকে এখন বোম মেরেও উঠানো যাবে না।

তার এক কথা,”শইল্যের মইধ্যে শান্তি আহে যহন রাইতে বিছানায় পিট ঠেহাই,লাখ টাকা দিলেও আমারে কেউ একবার গিয়ে শুইলে আনতে পারবেন না,কেউ আমারে ডিস্টাব দিলে আমি তখনই চাকরি নট কইরা সোজা গেরামের দিকে হাটা শুরু করমু,ছোট মুখে এইডা আমার বড় কথা। ”

মাজেদা খালার ছোট মুখের বড় কথা শোনার ভয়ে হোক আর অন্য যেকোনো মানবিক কারণে হোক,তিনি ঘুমালে কেউ আর তাকে জাগায় না,খালার মাথাব্যথার সমস্যা আছে,ঘুম ভাঙালে তার মাথাব্যথা শুরু হয় এটা বাড়ির প্রত্যেকেই জানে।

অন্য যারা আছে কাজ করার তারা অন্য কাজ করে,ডাইনিং টেবিলে শুধু মাজেদা খালা আসে।

নিষাদ পড়েছে বিপাকে,চন্দ্রকে সে বলতে পারবে না খাবারের কথা নিজ মুখে,আবার না খেয়েও পারছে না।

মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো নিষাদের।

চন্দ্র রুমে ঢুকে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে। কোনো কথা না বলে টেবিলের উপর খাবার প্লেট রেখে বই নিয়ে বসে যায়।

নিষাদ ঝাপিয়ে পড়ে খাবারের উপর। খাচ্ছে আর চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে দেখছে চন্দ্র তাকে খেয়াল করে কি-না। আশ্চর্য হচ্ছে নিষাদ এই ভেবে যে চন্দ্র একবারের জন্যও বই থেকে মুখ তোলে নি,যেনো পুরো পৃথিবীতে চন্দ্র একা বেঁচে আছে তাই আশেপাশে কে আছে না আছে তা দেখার দরকার নেই তার।

খাবার খেয়ে নিষাদ শুয়ে পড়ে। মাঝরাতে নিষাদের ঘুম ভেঙে যায় কান্নার শব্দে,বিছানায় উঠে বসে নিষাদ মোবাইল দেখে,রাত দুটোর বেশী বাজছে,এতো রাতে কে কাঁদছে তার রুমে নারী কণ্ঠে?

তারপরেই নিষাদের মনে পড়ে সে বিয়ে করেছে,তার বৌ আছে।ড্রিম লাইটের হালকা আলোতে দেখতে পায় চন্দ্র জায়নামাজে সিজদাহ্ তে গিয়ে অঝোরে কাঁদছে।

এই প্রথম বার নিষাদের মন খারাপ হয় চন্দ্রর জন্য,কিসের এতো কষ্ট এই মেয়ের!

বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে চন্দ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ায় নিষাদ।চন্দ্র তার বাবার কথা বলে কাঁদছে। বাবার যেনো জান্নাত নসিব হয় তা বলে কাঁদছে চন্দ্র।বাবার পরে মায়ের জন্য দোয়া করছে,চন্দ্রর কান্নার শব্দ নিষাদকে ছুঁয়ে যায়।
মায়ের পরে ছোটবোনের জন্য কাঁদছে চন্দ্র,বোনের পরে সুলতানার জন্য,তার পরে নিজের শ্বশুর শাশুড়ীর জন্য দোয়া করছে কেঁদে কেঁদে।
হঠাৎ করেই নিষাদের মনে লোভ জাগে,তার অবচেতন মন ও চায় চন্দ্র একবার তার জন্য দোয়া করুক।

তারপরেই শুনতে পায় নিষাদ চন্দ্র তার জন্য দোয়া করছে,আল্লাহ কে বলছে যাতে নিষাদের মনশান্ত করে দেয় আল্লাহ,নিষাদের মনের ইচ্ছে যেনো আল্লাহ পূর্ণ করে দেয়,নিষাদ মনেপ্রাণে যাকে চায় আল্লাহ যেনো নিষাদের ভাগ্যে তাকে মিলিয়ে দেয়।

নিষাদ মুগ্ধ হয়ে শুনছে মেয়েটা কি সুন্দর করে আল্লাহর কাছে আরজ করছে,”আল্লাহ ছোট বেলা থেকে হারাতে হারাতে বড় হয়েছি,বাবাকে হারিয়েছি খুব ছোট বেলায়,বাবার পরে বড় ভাইকে হারিয়েছি,তারপর হারিয়েছি জীবনের সব সুখ,আরেকটু বড় হতেই হারিয়েছি বাবার ভিটেমাটি,হারিয়েছি জীবনের সব স্বপ্ন,হারাতে হারাতে এই পর্যন্ত এসে থেমেছি।
এবার না হয় নিজের স্বামী কে হারাবো,তাতে আমার আফসোস থাকবে না আল্লাহ,উনি খুশি থাকবেন এটাই অনেক,আমার সাথে উনি খুশি না আল্লাহ,নারীর জীবনে বিয়ে একবার,আমিও তাই কবুল বলার সাথে সাথে মেনে নিয়েছি উনি আমার স্বামী,আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক,তবুও আমি চাই তিনি যাতে খুশি থাকেন,তার বদলে যদি আমাকে তার জীবন থেকে সরে যেতে হয় আমি তাই করবো………”

নিষাদের আর শুনার শক্তি হলো না। আবার পা টিপে টিপে বিছানায় চলে গেলো নিষাদ।বুঝতে পারছে তার সামনে একটাই রাস্তা আছে,চন্দ্র কে ভালোবাসা।
কিন্তু ভালোবাসা কি এতোই সোজা!
চাইলেই হয়ে যায়?

উফফ,বুকটা কেমন ভারী ভারী লাগছে নিষাদের।এরকম জটিল পরিস্থিতি জীবনে আসবে সেটা নিষাদ কখনো ভাবতে পারে নি।

চন্দ্র তাহাজ্জুদ শেষ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,সারারাত পড়তে হয়েছে,তারপর নামাজ পড়েছে।
নিষাদ বিছানায় উঠে বসে চন্দ্রর দিকে তাকায়,কি মায়াবী লাগছে চন্দ্রকে!
আজ কেনো হঠাৎ এতো মায়াবী লাগে,নাকি ড্রিম লাইটের নীল আলো তাকে কোনো ঘোরে নিয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা বৌ হলে কি এরকম হয় মেয়েরা??
সুস্মিতা কি কখনো এরকম দোয়া করতো তার জন্য?

নিষাদের মনে পড়ে গতবছর রমজানের ঈদের পর নিষাদ সুস্মিতা কে জিজ্ঞেস করেছিলো কদরের রাতে আল্লাহর কাছে কি দোয়া করেছে,সুস্মিতা হাই তুলতে তুলতে বলেছিলো,ঘুমিয়ে কূল পাই নি,নামাজ ও পড়ি নি।
আর এসব আমি কখনো পালন করি নি।

নিষাদের ভাবনারা ভোতা হয়ে আসছে,কেউ যেনো ভিতর থেকে চিৎকার করে বলছে,চন্দ্র তোমার,চন্দ্রকে আপন করে নাও।

আচ্ছা,আপন করে নেওয়া কি এতোই সোজা?
সুস্মিতাকে এতো ভালোবাসার পর কিভাবে সে পারবে চন্দ্র কে ভালোবাসতে?
চন্দ্রকে আস্তে আস্তে ভালো লাগছে,কিন্তু ভালো লাগা আর ভালোবাসা তো আলাদা বিষয়,মাথা ব্যথাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

ঘুম ভাঙে কুরআন তিলাওয়াত শুনে,চোখ মেলে নিষাদ দেখতে পায় চন্দ্র কুরআন তিলাওয়াত করছে,নিষাদ অভিভূত হয়ে যায়। শেষ কবে কুরআন তিলাওয়াত করেছে তা তার মনে নেই।
শুনতে শুনতে আবার ঘুমিয়ে যায় নিষাদ।

১০ টায় আবার ঘুম ভাঙে,দেখে চন্দ্র ঘরে নেই।ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় নিষাদ।নাশতা করে আবার বের হয় নিষাদ সুস্মিতা কে খুঁজতে।
সুস্মিতা কে আর কোথাও না খুঁজে সোজা সুস্মিতার বাসায় চলে যায় নিষাদ।
দারোয়ান নিষাদ কে চিনে আগে থেকে তাই আর বাঁধা দেয় নি নিষাদকে।
সুস্মিতা বাসায় আছে বলে জানায় দারোয়ান।

ভিতরে প্রবেশ করে নিষাদ ড্র‍য়িং রুমে বসে,চারদিকে তাকায় ড্রয়িংরুমের। কতো চেনা এই বাসা,অথচ আজ অচেনা লাগছে।
সুস্মিতা কে না পেয়ে নিষাদ উপরে যায় সুস্মিতার রুমের দিকে। সুস্মিতার রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই অস্ফুটে চিৎকারের শব্দ পায় নিষাদ।
ভেজানো দরজায় হাত লাগাতেই দরজা খুলে যায়। দুটো নগ্ন শরীর বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে। মেতে উঠেছে আদিম খেলায়,নিষাদের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে যায় মুহূর্তে,সুস্মিতা কে এভাবে দেখবে কারো সাথে তা নিষাদের ধারণা তে ছিলো না।
নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিষাদের।ধীর পায়ে নেমে আসে নিষাদ।
হেরে গেছে সে আজ,পুরোপুরি হেরে গেছে।
যে ক্ষীণ আশা মনে ছিলো সুস্মিতা কে পাবার,সব শেষ আজকে।
বার বার সেই ভয়ংকর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে,নিষাদ ড্রাইভ করছে,কোনোদিকে খেয়াল নেই।

স্টার্ট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে গাড়িতে।ভীষণ ক্লান্ত মনে হচ্ছে নিজেকে।

ক্লাস শেষ করে বসে আছে মাঠে নিশি,রুমি,মিরা,আদিব,চন্দ্র।চন্দ্রর মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে,মনে হচ্ছে যেনো কতোদিন মা’কে দেখে না।খুব ইচ্ছে করছে বাসায় যেতে,কিন্তু উপায় নেই,সুলতানা যাবার সময় বলে গেছে চন্দ্র সুলতানা না বলা পর্যন্ত নিজেদের বাসায় যেতে পারবে না।শায়লা বেগমের ইচ্ছে হলে তিনি আসবেন মেয়েকে দেখতে,অনিতা আসবে যখন খুশি তখন,চন্দ্রর যাওয়া যাবে না।

নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে চন্দ্রর।আদিব তাকিয়ে আছে চন্দ্রর দিকে। চন্দ্রর মন খারাপ বুঝতে বাকি থাকে না তার,মিরা কে ইশারা দিয়ে দেখায় আদিব।
সবাই আড্ডা দিচ্ছে অথচ চন্দ্র অন্যমনস্ক হয়ে আছে।

মিরা উঠে গিয়ে চন্দ্রর কাঁধে হাত রাখে,ঝরঝর করে কেঁদে দেয় চন্দ্র মিরাকে ধরে।
কারো কিছু বলার নেই,কি বলে সান্ত্বনা দিবে তারা চন্দ্রকে।

নিষাদ চন্দ্রর ভার্সিটিতে এসে এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যায়। চন্দ্র কাঁদছে কেনো?
বুকের ভিতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠে নিষাদের,কার জন্য কাঁদছে চন্দ্র। তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখে গতকালের সেই ছেলেটা উঠে গিয়ে চন্দ্রর পাশে বসে,চন্দ্রর মাথা নিজের কাঁধের উপর টেনে নিয়ে চন্দ্রর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।

ভীষণ রাগ উঠে নিষাদের,চন্দ্র তার বৌ,অন্য কোনো ছেলে কেনো তাকে স্পর্শ করবে?
না থাকুক তাদের মধ্যে ভালোবাসা তবু তো স্বামী স্ত্রী তারা।

নাসিমা বেগম খাবার পাঠিয়েছে চন্দ্রর জন্য,সকালে তাড়াহুড়ো করে চন্দ্র না খেয়ে চলে এসেছে,মেয়েটা রাতে বাসায় ফিরবে,সারাদিন না খেয়ে থাকবে সেটা তার পছন্দ হয় না।
খাবার দিতে এসে নিষাদ এই দৃশ্য দেখতে পায়।
হঠাৎ করেই নিষাদের মনে হয়,সুস্মিতার এরকম অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে যে কষ্ট পেয়েছে তার চাইতে হাজার গুণ বেশী কষ্ট পাচ্ছে এখন।

নিশির চোখ যায় নিষাদের দিকে,নিষাদকে দেখেই নিশি চমকে উঠে। গতকালের সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা।

রুমি কে ইশারা করে দেখাতেই রুমি চুল ঠিক করতে থাকে।
আদিব কে ডেকে বলে রুমি,”আদিব্বা দেখ ওই ছেলে আমার খোঁজে এখানে ও চলে এসেছে ইশশ আমি তো ফিদা হয়ে গেছি,কি সুন্দর লাগছে আমার ক্রাশ কে। সাদা পাঞ্জাবী তে পুরো তামিল হিরোর মতো লাগছে রে আদিব্বা”

চন্দ্র চোখ তুলে তাকায় আদিবের কাঁধ থেকে মাথা তুলে,হাতে একটা টিফিন বক্স নিয়ে নিষাদ দাঁড়িয়ে আছে। চন্দ্র এক পলক দেখে আবার মাথা রাখলো আদিবের কাঁধে।

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ ০৫
জাহান আরা

চন্দ্রর ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পর থেকে নিষাদের মাথার ভিতর দাউদাউ করে জ্বলছে। এই মেয়েটা এতো বহুরূপী!
নামাজের সিজদাহ্ তে তার যে রূপ দেখেছিলো সেটা কি তাহলে নকল রূপ ছিলো?
চন্দ্রর সাহস হলো কিভাবে তার সামনে ওই ছেলের কাঁধে মাথা রাখার নিষাদ ভেবে পাচ্ছে না।

চন্দ্র বাসায় ফেরার সময় হয়ে এসেছে,নিষাদ গিয়ে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করে।
আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে,মেঘের গুমগুম শব্দ হচ্ছে।হালকা বাতাস দিচ্ছে,নিষাদের ইচ্ছে ছিলো এমনিই কোনো এক মূহুর্তে খোলা বারান্দায় নিজের অর্ধাঙ্গিনীর সাথে দাঁড়িয়ে চা খাবে,দুষ্ট বাতাস এসে তার অবাধ্য চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিবে মুখ ঢেকে দিবে,নিষাদ চুল কানে গুজিয়ে দেওয়ার বাহানায় ছুঁয়ে দিবে তাকে।শিউরে উঠবে সে নিষাদের আকস্মিক স্পর্শ পেয়ে।

হেসে ফেলে নিষাদ,জীবনে বউকে নিয়ে কতো পরিকল্পনা তার ছিলো অথচ কি হলো!
তার বউ মাথা রাখে অন্যকারো কাঁধে তারই সামনে।

আচ্ছা আমি যে চন্দ্রর এই কাজের জন্য এতো রেগে আছি আমি নিজেও তো চন্দ্রকে কম কথা শুনাই নি গতকাল দুপুরে।আমিও তো বলেছি চন্দ্র ছেলেদের সাথে মিশলেও আমি কিছু বলবো না,চন্দ্র আমার কেউ না।

তবে আমার এতো রেগে যাওয়ার কি আছে!
আমি নিজেই তো অপরাধী,চন্দ্রর ভুলের শাস্তি যদি পেতে হয় তবে আমাকে ও পেতে হবে।

আবার মনে পড়ে,আমি তো আজ থেকে সুস্মিতা কে ভুলে গেছি,মন থেকে কোনো ফিলিংস নেই আমার সুস্মিতার জন্য তবে কেনো চন্দ্র অন্যকারো হবে?

দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে ভুগতে গেটের ভিতর পা বাড়ায়। টুংটাং শব্দ করে বাহিরে একটা রিকশা এসে থামে,নিষাদ পেছন ফিরে তাকায়।
চন্দ্র নেমে আসছে রিকশা থেকে,সেই ছেলেটা রিকশায় বসে আছে।
চন্দ্র আদিবকে বায় জানিয়ে,রাতে কথা হবে বলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে নিষাদ সামনে দাঁড়িয়ে আছে,চন্দ্রর কোনো ভাবান্তর হয় না নিষাদকে দেখে,যেনো সেখানে নিষাদ না,দাঁড়িয়ে আছে একটা কারেন্টের খাম্বা যার এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কথা,এমন ভাব করে ভিতরে চলে যায় চন্দ্র।
নিষাদ চন্দ্রর এই ব্যবহারে হকচকিয়ে যায়,চন্দ্র একটুও বিব্রত হলো না নিষাদ তাকে আর ছেলেটা কে দেখেছে একই রিকশায় তার পরে-ও?
তবে কি চন্দ্র নিষাদ কে কিছুই মনে করে না?
এতোটাই ফেলনা হয়ে গেছে নিষাদ?

মাথা ঠান্ডা করে ভিতরে প্রবেশ করে,চন্দ্রকে এই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হবে।
বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারি করে নিষাদ ভিতরে যায়।চন্দ্রর খাওয়া দাওয়া শেষ,মাজেদা খালা সব তুলে ফেলছে।

নিষাদ সিদ্ধান্ত নেয় আজ সে নিজ মুখে চন্দ্রকে বলবে খাবারের কথা।
রুমের দরজা ভেজানো,নিষাদ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই ৪০০ বোল্টের শক খায়,চন্দ্র ড্রেস চেঞ্জ করছে,ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে পিছন থেকে।
নিষাদ তাকিয়ে থাকে আজ আর চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না।
কেনো চোখ সরাবে,চন্দ্র তার স্ত্রী,তার পূর্ণ অধিকার আছে চন্দ্রর উপর। নিষাদের কেমন যেনো অস্থির লাগছে,মনের ভিতর জেগে উঠেছে অন্যরকম অনুভূতি,কি এই অনুভূতি,কেনো হচ্ছে এরকম,পুরো শরীর কাঁপছে,ইচ্ছে করছে একছুটে গিয়ে চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে পিষে ফেলতে। নিজেকে কেমন তৃষ্ণার্ত মনে হচ্ছে,যেনো কতো জনম ধরে পানি খেতে পাচ্ছে না,এই তৃষ্ণা কিসের?
নিষাদ বুঝতে পারে।

ভিতরে এসে দেখে টেবিলে খাবার এনে রাখা আছে,একটা ফ্লাস্ক ও আছে সাথে,নিষাদের জন্য চা রাখা আছে নিষাদ বুঝতে পারে।

চন্দ্র বইখাতা নিয়ে বসে গেছে ফ্লোরে,নিষাদের মনে পড়ে তখনই একটা পড়ার টেবিল দরকার চন্দ্রর জন্য। বাড়িতে স্টাডিরুম আছে,তারা সবাই সেখানে পড়তো।

নিষাদ খাবার খেয়ে উঠে চা ঢেলে নেয়,চন্দ্রর সাথে কথা বলার অযুহাত খুঁজছে সে।
গড়িমসি করে বলেই ফেললো,”তোমার সাথে যে ছেলেটা এসেছিলো কি নাম তার?”

“আদিব”

“তোমার সাথে কি সম্পর্ক?ভালোবাসার?”

“হু”

চন্দ্রর এই সহজ স্বীকারোক্তি নিষাদের বুকের ভিতরের আগুন শতগুণ বাড়িয়ে দেয়।

“ঠিক করে উত্তর দাও,হু-হা করবে না”

চন্দ্রর ফোন বেজে উঠে ততক্ষণে।নিষাদ স্পষ্ট দেখতে পায় আদিব লিখা ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে। ফোনের স্ক্রিনটা যদিও ফেটে গেছে অনেকটা।

“আপনাকে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করি,যেদিন সঠিক উত্তর দিতে পারেন সেদিন আমি আদিব সম্পর্কে খুলে বলবো”

নিষাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আসছে যতো,আসবে ততো,তার অর্ধেক,তার অর্ধেক,আপনাকে নিয়ে একশ করি”

ফোন হাতে নিয়ে চন্দ্র বারান্দায় চলে গেলো। নিষাদ বসে বসে ভাবছে আসছে যতো,আসবে ততো,কে আসছে?
আজব কথাবার্তা!

না আবার মনোযোগ দেয় কিন্তু মাথায় কিছু ঢুকছে না নিষাদের।
বারান্দায় চন্দ্র কথা বলছে,টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসছে নিষাদের কানে।

“আরে বিয়ের টেনশন তুই ছাড়,আমি ম্যানেজ করে নিবো,তুই তোর যেটা করা দরকার সেটা কর”

————–

“এতোই সোজা নাকি কারো মন পাওয়া,যেই মনে তুই আছিস সেই মন অন্যকেউ পাবে এতো সহজে?”

—————

“দূর,এটা কোনো কথা হলো,অনেক টাকাপয়সা থাকলেই কি মানুষের মন পেয়ে যায় না-কি, টাকাপয়সা তো ফকিরের ও আছে,ভালোবাসা না থাকলে টাকাপয়সা তে কি এসে যায়”

নিষাদ আর শুনতে পারছে না,নিষাদ বুঝে যায় কি হচ্ছে। নিষাদের ফোন বেজে উঠে, ভাইয়ের কল।
কল রিসিভ করে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিষাদ।ফিরে আসে গম্ভীর হয়ে,ভাবীর কন্ডিশন ভালো না।

কথা শেষ করে ভিতরে এসে দেখে চন্দ্র এখনো কথা বলছে,হাসাহাসি শোনা যাচ্ছে। নিষাদ কানে বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে পড়ে। আদিবের বিষয় টা মাথায় থাকে,ধাঁধার উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ঘুমিয়ে যায়।

ঘুম ভাঙে চন্দ্রর কান্নায়,নিষাদের আজ আর শুনতে ভালো লাগে না,সব নকল,সব মানুষ নকল এই দুনিয়ায়।
বুকের ভিতর কি ভীষণ অভিমান জমে তা কেউ বুঝতে পারে না।

চন্দ্র ফজরের নামাজের পর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।নিষাদ ও নামাজ পড়তে উঠে যায়।

নামাজ পড়ে এসে ওয়ারড্রব থেকে নতুন একটা ফোন বের করে চন্দ্রর সিমকার্ড খুলে তাতে লাগিয়ে দেয়।চন্দ্রর পুরোনো ফোনটা রেখে দেয় লুকিয়ে নিজের কাছে।

“বাসর রাতে স্ত্রীকে গিফট দেওয়ার প্রচলন আছে আমাদের সমাজে,সে রাতে দিতে পারলাম না আজকে দিলাম,পুরোনো ফোনটা ফেলে দিয়েছি,সিম কার্ড লাগিয়ে দিয়েছি,ব্যবহার করলে খুশি হবো”

চিরকুট লিখে ফোনের সাথে লাগিয়ে রেখে দেয় ফোন যেখানে ছিলো।তারপর বের হয়ে যায় বাসা থেকে সকালেই।

চন্দ্র ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে টাইম দেখে,ফোন হাতে নিতেই চমকে উঠে।তার ফোনের উপরের গ্লাস ফেটে চৌচির ছিলো এটা এতো স্মুথ লাগছে কেনো?

শোয়া থেকে উঠে বসে যায় চন্দ্র।চোখ কচলে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা তার ফোন না,একটা আইফোন। সাথে একটা চিরকুট।
চিরকুট পড়ে বুঝতে পারে নিষাদের কাজ এটা।কিন্তু তাকে কেনো দিচ্ছে,সে-তো তার স্ত্রী না,নিষাদ তো তাকে মানে না স্ত্রী হিসেবে।

সাড়ে আটটা বেজে গেছে,১০ টায় ক্লাস।চন্দ্র উঠে ব্রাশ হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল শেষ করে দৌড়ে বের হয়ে আসে,আজকে প্ল্যান করেছে সবাই কালো শাড়ী পরবে তারা,আদিব কালো পাঞ্জাবী।
বিয়েতে অনেক শাড়ী পেয়েছে সব ওয়ারড্রবে রাখা,চন্দ্র খুঁজতে খুঁজতে জর্জেটের মধ্যে হালকা কাজ করা একটা শাড়ি পেয়ে যায়।

তাড়াতাড়ি পরে,চোখে কাজল দিয়ে বের হয়ে যায়। ভেজা চুল হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেয়।বের হয়ে যায় না খেয়েই।
ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখে আদিব ছাড়া সবাই হাজির।তাকিয়ে আছে সবাই চন্দ্রর দিকে,কালো শাড়ি,খোলা চুল,চোখে কাজল,চন্দ্রকে মনে হচ্ছে যেনো অপ্সরা।
চন্দ্র কাছে আসতেই নিশি প্রথম বলে উঠে,”তোর বর আজকে তোকে দেখেছে চন্দ্র এভাবে?”

“না তো,কেনো?”

“বিশ্বাস কর চন্দ্র,তোকে আজকে দেখলে ওই বেটার মাথা হ্যাঙ করবে,কিসের মডেল ফডেল,বেটা তোর প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাবে”

“হইছে অনেক মজা করা,আদিব্বা আসে না কেনো,কল দিয়ে দেখ মিরা”

মুখে বিষন্ন ভাব মিরার,আদিব কে ফোন দেয়।ওপাশ থেকে কিছু শুনেই মিরার বিষন্ন চেহারা বদলে ভয়ার্ত হয়ে যায়। ঠাস করে বসে পড়ে মিরা সেখানে।

নিশি,রুমি,চন্দ্র মিরাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছে।

“আদিব কে কারা যেনো খুব মেরেছে,আদিব এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে”

মিরার কথা শুনে ৩ জনেই চমকে উঠে,রুমি পিচ পিচ করে কান্না শুরু করে।

“কোন হাসপাতালে আছে আদিব?”

“যারা মেরেছে তারাই না-কি হাসপাতালে নিয়ে গেছে,দ্যা কেয়ার হাসপাতালে আছে”

“উফফ,গরু মেরে জুতো দান করে গেছে শালারা”

ক্লাস রেখে চারজন রওনা দেয় হাসপাতালের দিকে,দ্যা কেয়ারে পৌঁছাতে ওদের ৪৫ মিনিট সময় লাগে,মিরা ছুটে যায় রিসিপশনে,আদিবের কথা জিজ্ঞেস করতেই শুনে আদিব ৬ তলায় ভিআইপি কেবিনে আছে,লিফটে উঠে ৬ তলায় পৌছায়। আদিবের মাথায় ব্যান্ডেজ,হাত পা সব ছিলে গেছে।

আদিবকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে,ঘুমিয়ে আছে আদিব।
ওদেরকে বলা হলো রিসিপশনে গিয়ে অপেক্ষা করতে,ক্লান্ত,বিধ্বস্ত ৪ জন রিসিপশনে গিয়ে বসে।রিসিপশনিস্টের পেছেনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে নিশি চমকে উঠে,নিশি রুমি কে দেখায়,রুমি চন্দ্রকে দেখায়,চন্দ্র নিজেও চমকে উঠে দেখে।

নিষাদ চন্দ্রর বলা ধাঁধা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে,কিছুতেই বের করতে পারছে না।মেজাজ খারাপ হয়ে যায় নিষাদের,একটা সোজা কথা সোজা ভাবে বললেই তো হতো,এতো ধাঁধা কিসের আবার!

রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে,নিষাদ এখনো ভাবছে।

“গুরু,বৌয়ের কথা এখন একটু ভাবা বন্ধ করে আমাদের সাথে কথা বল”

“বিয়ে করবে না করবে না করে,এখন বিয়ে করার পর আমাদের সাথে আড্ডা তে ও মন দেয় না।”

সবাই হাসাহাসি করতে থাকে।সবার হাসি থামার পর কৌশিক জিজ্ঞেস করে,”তুই কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত নিষাদ,আরে কি আছে চিন্তার বাকি বল,আমরা সলভ করে দিবো,আমরা আছি তো ইয়ার”

নিষাদ কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বললো,আমাকে একটা ধাঁধার উত্তর দে,এই ধাঁধার উত্তর না পেলে আমি ঘুমাতে পারবো না,স্বস্তি পাবো না।

“ধাঁধা কি বৌদি দিয়েছে বস?” ময়ুখের প্রশ্ন।

” হু ”

সবাই আবার একচোট হেসে উঠে।

“এইজন্যই তো বন্ধু আমার উদাস হয়ে আছে,ভাবী নিশ্চয় বলেছে ধাঁধার উত্তর না দিতে পারলে বিছানায় জায়গা দিবে না”

সবার হাসাহাসি শুনে নিষাদের কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

“আচ্ছা,ধাঁধা কি বল?”

”আসছে যতো,আসবে ততো,তার অর্ধেক,তার অর্ধেক,আপনাকে নিয়ে একশ করি”

সবাই ভ্রু কুঁচকে একে অন্যের দিকে তাকায়।কেউ বুঝতে পারছে না ধাঁধার মানে।

“বৌদি কোন বিষয় নিয়ে পড়ে রে নিষাদ? ম্যাথ নাকি?”
ময়ুখ জিজ্ঞেস করে।

“ফিন্যান্স”

“হু এইজন্যই এসব অংক টংকের ধাঁধা জিজ্ঞেস করে। ”

কৌশিকের মুখ হাসিহাসি হয়ে যায়।

“দোস্ত,পাইছি ধাঁধার উত্তর ”

চলবে……???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here