শেষ প্রহর, পর্ব:৬+৭

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ০৬
জাহান আরা

৬ তলায় রিসিপশনে তোজাম্মেল সাহেব,নিশান,নিষাদের ছবি লাগানো বড় করে।রুমি এগিয়ে গিয়ে রিসিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করে এই ছবিগুলো কাদের।

রিসিপশনিস্ট জবাব দেয় হাসপাতালের মালিক ওনারা।
রুমি সবার নাম জেনে এলো।

চন্দ্র ঠোঁট কামড়ে বসে আছে,রুমির বাড়াবাড়ি চন্দ্রর সহ্য হচ্ছে না।আদিবের এই এক্সিডেন্টের কথা রুমি বেমালুম ভুলে গেলো,রুমি বসে বসে নিষাদের গুণকীর্তন করছে,নিষাদ কে দেখে মনেই হয় না কতো ধনী পরিবারের ছেলে নিষাদ,কি সুন্দর রুমির সন্ধানে ভার্সিটি তে চলে গেলো রুমি বিশ্লেষণ করে বলছে।

রুমির ফালতু বকবকানি মিরার ও সহ্য হলো না,এক দমক দিয়ে উঠে মিরা।
চন্দ্রর মাথা ধরে যায় রুমির বকবকানি শুনে,পরে আসবে বলে বের হয়ে যায়। টিউশনিতে কল দিয়ে বলে আজকে যেতে পারবে না।

বাসায় পৌঁছে সোজা রুমে চলে যায়। চেঞ্জ না করেই সোফায় দপ করে শুয়ে যায়।চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না।অনেক দিন মায়ের সাথে,অনিতার সাথে কথা হয় না।
অনিতার ফোন নেই,অনিতার সাথে কথা বলতে হলে মা’কে কল দিতে হবে কিন্তু মায়ের উপর কেমন অভিমান জমে গেছে,কেনো মা সুলতানার কথা তে এখানে বিয়ে দিয়ে দিলো,বলির পাঁঠা হতে হলো তাকে।
এই মিথ্যা সম্পর্ক কতো বয়ে বেড়াবে সে?

এই জীবন নরকের মতো লাগছে চন্দ্রর,এতো আরাম আয়েশ সে চায় নি,রোজ রোজ রাজকীয় খাবার ও চায় না,দুবেলা দুমুঠো কোনোমতে খেতে পারলেই তো খুশি ছিলো।

সেই আগের জীবন,ঘুম থেকে উঠে অনিতা চলে যেতো পড়াতে,মা ও চলে যেতো পড়াতে,চন্দ্র রান্নাবান্না করে রাখতো,মা অনিতা ফিরে এলে খেয়ে সবাই বের হতো কলেজ,ভার্সিটি আর স্কুলের জন্যে। ভার্সিটি শেষ করে চন্দ্র টিউশনি করতে যেতো,ফিরতে ১০ টা বেজে যেতো।

কি কষ্টের দিন ছিলো,তবু প্রতি শুক্রবার ছিলো ঈদের মতো আনন্দের,সপ্তাহে এই একদিন সবাই বাড়ি থাকতো,ছুটোছুটি নেই। আরাম করে ঘুমাতো দুবোন মিলে।
সপ্তাহের এই দিনটি মা চাইতো একটু ভালো কিছু রান্না করতে,অভাবের সংসারে ভালো খাবারের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা।

তবু তিনি চেষ্টা করতেন সেদিন অন্তত মেয়েদের জন্য কিছু রান্না করার।

আর এখন,প্রতিদিন মাছ,মাংস,ডিম হাজার আইটেম,সব আইটেম মুখে দেওয়া ও হয় না তবু রোজ রোজ রান্না হয়।
এই রাজকীয় খাবার চন্দ্রর মুখে রোচে না,খেতে বসলে মনে পড়ে ছোট বোনটা না জানি কি খেয়েছে,হয়তো মা আজকেও ডিম ভেজে রেখে দুই ভাগ করে রেখেছে দুই বেলা দুই টুকরো খাবে বলে অনিতা।

আচ্ছা বাবা কেনো এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো?
বাবা থাকলে তাদের জীবন বড় খালাদের মতো সুখের হতো।
জীবনের সব টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়ে যায় চন্দ্রর,কিছু স্মৃতি আছে এতোই ভয়ংকর যা কখনো কাউকে বলতে পারে নি চন্দ্র।
জীবনে কতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায় প্রতিটি মানুষের কে জানতে পারে সেটা!

চন্দ্র বাসায় চলে এসেছে শুনে নিষাদ ও আসে।চন্দ্র শুয়ে আছে সোফায় নিষাদকে দেখে উঠে বসে চন্দ্র।

চন্দ্রকে শাড়ি পরা দেখে নি নিষাদ ভালো করে বিয়ের রাতে,আজ এই নরমাল সাজে চন্দ্রকে দেখে নিষাদের বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা হতে থাকে।

খোলা চুল উড়ছে,কালো শাড়ির উপর দিয়ে চন্দ্রর নাভি দেখা যাচ্ছে,কি গভীর,এই নাভির দিকে তাকিয়েই নিষাদের নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে।
ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে দিতে,কিন্তু সামনে বাঁধা,এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের মাঝে,কিন্তু মনের আগুন তো কোনো বাঁধা মানছে না।
চন্দ্র কেনো সোফায় ঘুমোয়?
সোফার একটা ব্যবস্থা করতে হবে,মনে মনে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিষাদ।

“তোমার ধাঁধার উত্তর পেয়েছি কিন্তু আমি”

“বলুন তবে”

“৩৬+৩৬+১৮+৯+আমি=১০০”

“হ্যাঁ হয়েছে”

“এবার তোমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে বলো,আমার ভালোবাসা তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে দেখি তোমাদের সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিতে পারি কি-না”

“আমাদের সম্পর্ক মানে?” চন্দ্র অবাক হয়।

“তুমি না বললে তোমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসো,সম্পর্ক আছে?”

“ওটা তো বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি সেটা বলেছি”

নিষাদ হকচকিয়ে যায় চন্দ্রর কথা শুনে। “তু তু তুমি তো কাল বলো নি বন্ধু হিসেবে ভালোবাসো”

“প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসি সেটা ও তো বলি নি”

নিষাদ এবার পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলছে এই মেয়ে!!
তবে যে সে আদিবকে মেরে এলো!!
কাল রাতেই তো চন্দ্র ফোনে বলেছিলো বিয়ের টেনশন তুই ছাড় আমি সামলে নিবো,তারপর আরো কি যেনো?
ওহ,টাকা পয়সা থাকলেই মন পাওয়া যায় না।

নিষাদের মাথায় প্যাচ লেগে যায়। এই মেয়ে এতো ধোঁয়াশায় রাখছে কেনো তাকে,সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারে না।

যেচে পড়ে নিষাদ আবার জিজ্ঞেস করে।

“যদি আরেকটা ধাঁধার উত্তর দিতে পারেন তবে বলবো”

নিষাদ হাল ছেড়ে দেয়।অসম্ভব এই মেয়েকে কাছে পাওয়া,কে জানে হয়তো ভীষণ উত্তেজক মুহূর্তে ও এই মেয়ে বলে বসবে আগে ধাঁধার উত্তর দিন তবে আদর করতে দিবো।

নিরাশ ভঙ্গিতে নিষাদ জিজ্ঞেস করে,”কি ধাঁধা বলো?”

” কোনো ক্লাসে যতোজন শিক্ষার্থী আছে তারা তত পয়সা করে চাঁদা দেওয়ায় ৩৬ টাকা উঠলো,ক্লাসে কতোজন শিক্ষার্থী আছে? ”

নিষাদ ধাঁধা শুনে রুম থেকে বের হয়ে যায়। চন্দ্রর থেকে কোনো কথা বের করার আশা নিষাদ ছেড়ে দেয়।
বাগানে হাটতে হাটতে চিন্তা করে কি হতে পারে।
মাথা কুলোচ্ছে না নিষাদের।

কৌশিক,ময়ূখসহ সবাইকে গ্রুপ কল দেয় আবার।১০ মিনিটের মধ্যে ধাঁধার উত্তর চাই বলে ফোন কেটে দেয়।
বাগানের এই মাথা থেকে ওই মাথা চষে ফেলেছে নিষাদ ভাবতে ভাবতে কিছুতেই মাথায় কিছু আসছে না।

হঠাৎ নিষাদের মনে পড়ে মাত্র ২ দিনে চন্দ্রকে সে কি রকম ভালোবেসে ফেলেছে। চন্দ্রর সাথে কথা বলার জন্য ধাঁধার মতো সামান্য বিষয় নিয়েও সে মাথা ঘামাচ্ছে।
বৌ বুঝি এটাকেই বলে!
মনে মনে সুলতানা কে ধন্যবাদ দেয়।

৭ মিনিটের মাথায় ময়ূখ কল দেয়,ধাঁধার উত্তর জানতে পেরেছে তাদের স্কুলের গণিতের স্যারের থেকে।বেচারাকে স্যার এখন বসিয়ে অংক শিখাচ্ছে,ফোনে ময়ূখ নিষাদকে হাজার কথা শুনিয়ে দেয়।
হাসতে হাসতে নিষাদ ফোন রাখে।

রুমে গিয়ে দেখে চন্দ্র এখনো সেভাবে বসে আছে।

“ধাঁধার উত্তর পেয়েছি”

“বলুন”

“৬০ পয়সা করে চাঁদা দেয় ৬০ জন শিক্ষার্থী।”

“আপনার তো ব্রেইন খুব ভালো দেখছি”

“এবার বলো”

“আসলে সমস্যা হচ্ছে মিরাকে নিয়ে,সেই এসএসসির আগে থেকে আদিব আর মিরার প্রেম,মিরার বাবা হুট করে মিরার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মিরা আদিবের কথা বলেছে,উনি বলেছে আদিব এখনো স্টুডেন্ট,মিরাকে বিয়ে করতে হলে ওকে অবশ্যই একটা চাকরি পেয়ে দেখাতে হবে ওনাকে,যেখানে মাস্টার্স কমপ্লিট করে মানুষ বেকার ঘুরে আপনার মতো,সেখানে ওতো এখনো অনার্স শেষ করতে পারে নি,কিভাবে কি হবে,সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম”

“আমি বেকার ঘুরি বলে তোমার ধারণা?”

“ধারণা কেনো হবে,আমি তো জানি আপনি যে বেকার,সেই কবে থেকেই তো আপনাদের বাড়িতে আছি,কখনো তো কোনো কাজ করতে দেখালাম না আপনাকে,তো কি বলবো?”

নিষাদ চন্দ্রর কথা শুনে থমকে যায়,চন্দ্রর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে না-কি!
চন্দ্র কি জানে না তাদের কতোবড় বিজনেস?
হাসপাতাল,হোটেল,গার্মেন্টস,হাউজিং,বাস,ট্রাক,ট্রাভেল,শিপিং বিজনেস,কি নেই তাদের?

“তুমি আমাকে বেকার বলছো?
তুমি জানো আমি যে আমাদের সব কোম্পানির এমডি?”

“না-তো,কিভাবে জানবো?
কখনো তো দেখি নি কোনো কাজে আপনাকে,আমার তো ধারণা আপনাকে অফিসের পিয়নের চাকরি ও দিবে না কেউ”

নিষাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কি বলছে এই মেয়ে?
” আমি চাইলে এখনই অফিসে যেতে পারি,কি ভেবেছো তুমি আমাকে?
নিষাদ চৌধুরী কে তুমি কি ফেলনা মনে করো?”

“মনে করবো কেনো,আমি তো জানি আপনি ফেলনা ই”

নিষাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই মেয়ে তাকে কি-না বলে সে বেকার,মাস্টার্স পাস করে বেকার ঘুরছে?
রাগে মাথার রগ দপদপ করছে নিষাদের।

“ওয়েল,জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মাই ডিয়ার ওয়াইফ,আমি আগামীকাল থেকেই অফিস করবো,দেখিয়ে দিবো তোমায়,মাইন্ড ইট”

গজগজ করতে করতে নিষাদ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
চন্দ্র মুচকি মুচকি হাসতে লাগে নিষাদের রাগ দেখে।আপার খুব ইচ্ছে ছিলো নিষাদ ব্যবসায় দেখাশোনা করুক,কিন্তু সে ওসব মাথায় ও নেয় নি।
রাগের মাথায় যদি দায়িত্ব নেয় তবে তো ভালোই।

ধানমন্ডি লেকে বসে আছে নিষাদ।আদিবের সাথে যে অন্যায় করে ফেলেছে তার জন্য কিভাবে মাফ চাইবে তাই ভাবছে। না জেনে না বুঝে ছেলেটার এতো ক্ষতি করলো সে!

হাসপাতালের দিকে রওনা হয় নিষাদ।৬ তলায় গিয়ে দেখে কেবিনের বাহিরে বিমর্ষ হয়ে বসে আছে একটি মেয়ে।এই মেয়েটি মিরা নিষাদ বুঝতে পারে।
এগিয়ে গিয়ে মিরার পাশে বসে।

নিষাদ কে দেখে মিরা অবাক হয়ে যায়।

“হাই,আমি নিষাদ”

“হ্যালো”

“ভুল না করলে তুমি মিরা,রাইট?”

“কিভাবে জানলেন আমার নাম?”

“তোমার ফ্রেন্ডের থেকে”

“রুমির থেকে?”

“রুমি কে?”

“কেনো,যাকে আপনি ভালোবাসেন,যার জন্য গতকাল আমাদের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সে-ই তো রুমি”

নিষাদ হাহাহা করে হেসে উঠে। যেনো এতো মজার জোকস ও জীবনেও শোনেনি।
কোনোমতে হাসি থামিয়ে মিরাকে বলে,”আমি তো ভার্সিটিতে গিয়েছি আমার স্ত্রী কে দেখতে,ও ব্রেকফাস্ট করে যায় নি,তাই মা খাবার পাঠিয়েছিলো।”

মিরা এবার অবাক হয়।

“তোমার বান্ধবী চন্দ্র,সি ইজ মাই বেটারহাফ”

মিরা অবাকের সপ্তমে পৌঁছে যায় এই কথা শুনে। এই ছেলেটা চন্দ্রর হাজবেন্ড,অথচ চন্দ্র ওদের কে দেখালো না।

“আমি এসেছি ক্ষমা চাইতে,সেই সাথে ক্ষতিপূরন দিতে”

“কিসের ক্ষমা?”

“চলো কেবিনে গিয়ে বলি”

আদিব জেগে ছিলো,মিরাকে দেখে আদিবের দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। এতোক্ষন মিরাকে কেউ ভিতরে আসতে দিচ্ছিলো না,অথচ এখন কেউ কিছু বলে নি।উপরন্তু একটা সোফা দিয়ে গেছে দুজন ওয়ার্ড বয় এসে।

নিষাদ মিরাকে বসতে বলে নিজেও বসে।
তারপর দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আসলে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,এরজন্য হয়তো শাস্তি পাওয়া উচিৎ আমার।আমি ক্ষমা চাচ্ছি তাই তোমাদের কাছে।”

“কি করেছেন আপনি? ”

“তোমার ভালোবাসার মানুষ কে আমিই মার খাইয়েছি। গতকাল চন্দ্রকে ওর কাঁধে মাথা রাখতে দেখে আসলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারপর রাতে আদিব চন্দ্রর সাথে এক রিকশায় যায়,আবার রাতে দুজন ফোনে কথা বলে যা আমার সহ্য হয় না। চন্দ্র আমার স্ত্রী,অথচ আজ পর্যন্ত চন্দ্র আমার সাথে কথা বলে না।
অন্য ছেলের সাথে ওর এরকম কথা তাই আমার সহ্য হয় নি।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে চন্দ্রর থেকে সব জানার পর ভীষণ লজ্জিত আমি,বিশ্বাস করো ভাই,আমি যদি জানতাম আগে তবে এরকমটা করতাম না।”

আদিব হেসে ফেলে,মিরার চোখ জলে ছলছল করে।

“ভাইয়া,আমাকে মেরেছেন তাতে আমার যে ব্যথা ছিলো,চন্দ্রর প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে সেই ব্যথা আমার নিমিষেই মুছে গেছে”

“চন্দ্রর থেকে জানতে পেরেছি তোমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে,আমি যদি তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করি ভাই হিসেবে তুমি কি রাখবে ভাই,আমার ভুল শোধরাবার একটা সুযোগ আমি চাই,প্লিজ বলো রাখবে?”

নিষাদের কাতর চাহনির দিকে তাকিয়ে মিরা আদিব দুজনেই অবাক,এই ছেলেটাই দুদিন আগে চন্দ্রকে অপছন্দ করতো,অথচ আজ কি পাগল সে!!!

“বলুন ভাইয়া”

“তোমাকে যে আঘাত করেছি তা হয়তো মুছে দিতে পারবো না,তবু আমি যদি আমাদের কোম্পানি তে তোমাকে জব অফার করি তুমি কি রাজী হবে??
তুমি হ্যাঁ বললে আমি আগামীকাল ই তোমায় এপয়েন্টমেন্ট লেটার,দুমাসের এডভান্স দিয়ে দিবো।সেই সাথে কোম্পানি থেকে তোমার জন্য একটা ফ্ল্যাট আর গাড়ি থাকবে,আমাকে এই ক্ষুদ্র উপকারটুকু করতে দিবে?”

মুহূর্তের জন্য মিরা আদিব দুজনেই বোবা হয়ে যায় যেনো।মিরা খুশীতে চিৎকার করে উঠে। এভাবে স্বপ্ন পূরণ হবে ভাবতেই পারে নি তারা কেউ।

“আপনি বুঝতে পারছেন না ভাইয়া আপনি আমার কি উপকার করেছেন,একটা চাকরির অভাবে আমি আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলতে চলেছিলাম,আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমি জানি না”

“ধন্যবাদ দিতে হবে না,তবু একটু ফেভার চাই”

“কি বলুন”

“চন্দ্র যাতে না জানে তোমার এই অবস্থা আমি করেছি অথবা এই জব আমি দিয়েছি,তোমাদের সাথে আমার কোনোরকম কথা বা দেখা হয়েছে এটা যেনো না জানে চন্দ্র”

“ঠিক আছে ভাইয়া,চির কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে আমি আর মিরা”

নিষাদ চলে যায় উঠে।

মিরা আদিবের হাত শক্ত করে ধরে কাঁদছে অঝোরে। সুখের কান্না তার এটা।জিতে যাওয়ার কান্না।

চন্দ্র রান্নাঘরে উঁকি দেয়,বিয়ের পর থেকে একবার ও রান্নাঘরে যায় নি।মাজেদা খালা কাটাকুটি করছে,নাসিমা বেগম রাতের রান্না করছেন।

চন্দ্রকে দেখে নাসিমা বেগম খুশি হয়ে যায়। কালাম কে ডেকে বলে চেয়ার দিয়ে যেতে।কালাম চেয়ার দিয়ে যাওয়ার পর চন্দ্রকে চেয়ারে বসিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়
দুপুরে চন্দ্র খায় নি সেটা তিনি ভোলেন নি।

শাশুড়ী মায়ের এই আদরে চন্দ্রর চোখের কোণ ভিজে উঠে ।
এই বাড়ি থেকে চলে গেলে এই মানুষ টাকে চন্দ্রর ভীষণ মনে পড়বে।

নিষাদ উঁকি দিয়ে দেখে চন্দ্র কিচেনে বসে আছে। নিষাদ উপরে চলে যায়।হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোফার নিচের অংশ ভেঙে ফেলে যাতে চন্দ্র শোয়া মাত্র বা বসা মাত্র ভেঙে নিচে পড়ে যায়।

নিষাদের বিকেলে কফি খাওয়ার অভ্যাস,চন্দ্র এক মগ কফি নিয়ে উপরে উঠে। নিষাদ চন্দ্রকে আসতে দেখে বিছানায় গিয়ে নিরীহ ভাব নিয়ে বসে পড়ে।

কফির মগ টেবিলের উপর রেখে চন্দ্র সোফার দিকে এগিয়ে যায়,নিষাদ অপেক্ষা করছে কখন চন্দ্র সোফায় বসবে,চন্দ্র এগিয়ে গিয়ে সোফার সামনে দাঁড়ায়।

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ ০৭
জাহান আরা

নিষাদ অপেক্ষা করছে চন্দ্র এখন সোফায় বসবে,তখনই চন্দ্রর ফোন বেজে উঠলো,ফোন হাতে নিয়ে চন্দ্র বারান্দায় চলে গেলো।

নিষাদের মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো।এতো অপেক্ষার ফল কে নষ্ট করে দিলো কল দিয়ে?
রাগের মাথায় কফি না খেয়ে শুয়ে রইলো।

সুলতানা কল দিয়েছে,সুলতানা চলে গেছে দিন দুয়েক হলো অথচ চন্দ্রর মনে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে সুলতানা বাড়ি নেই,কেমন একা একা লাগছে।

সুলতানার কণ্ঠস্বর কানে যেতেই চন্দ্রর গলায় কথা আটকে গেলো,অজস্র কান্না এসে ভীড় করলো।
সুলতানার কথা এরকম শোনাচ্ছে কেনো?
কি হয়েছে তার?

৩০ সেকেন্ড কথা বলেই সুলতানা ফোন রেখে দিলো,এই ৩০ সেকেন্ড যেনো চন্দ্রর জীবন ওলট-পালট করে দিলো।সুলতানা কান্না জড়ানো কন্ঠে শুধু এটুকুই বলেছে,”তোদের ছেড়ে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হয় চন্দ্র,আর পারছি না তোদের ছেড়ে থাকতে,আর কতো থাকবো,কালই আসছি”

এতো কাঁদছে কেনো উনি?
কি হয়েছে?
মাতৃত্বকালীন সময় টা কি এমনই?
মুড সুইং কি খুব বেশি হয় সেসময়?

চন্দ্র বুঝতে পারছে না।তার হঠাৎ করেই আরো বেশী মন খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চা তার ভীষণ ভালো লাগে,নিজে কি কখনো মা হতে পারবে?
নিষাদের সাথের এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে কবে মুক্তি পাবে তা-ই জানা নেই তার।তার ওপর নিজের লেখাপড়া,অনিতা কে বিয়ে দেওয়া,তারপর নিজে বিয়ে করা,ভীষণ লম্বা এক জার্নি!

অথচ চন্দ্রর মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে যদি তারও বিয়ে হয়ে যেতো,ছোট একটা চাকরি করতো জামাই,হোক সেটা কোনো অফিসের পিওন।দুই রুমের একটা বাসায় থাকতো,চন্দ্র নিজে বাজারে যেতো,বাজার করতো,রান্না করতো,দুপুরে লাঞ্চ নিয়ে তার অফিসে দিয়ে আসতো।
অফিস থেকে ফেরার সময় মাঝেমাঝে ফুটপাত থেকে সে চন্দ্রর জন্য একমুঠ কাঁচের চুড়ি নিয়ে আসতো,কখনো নিয়ে আসতো একটা বেলী ফুলের মালা।
চন্দ্রর ভীষণ আনন্দ হতো তখন,খুশিতে চন্দ্র কেঁদে দিতো তাকে ধরে।
শুক্রবারে দুজন মিলে বের হতো,একটা পার্কে বসে আকাশ দেখতো।
ফুটপাত থেকে ফেরার সময় দুজনে চিতুই পিঠা খেতো।২ বছরের মাথায় একটা সন্তান আসতো,চন্দ্র সেই সন্তানের জন্য রাত জেগে নকশীকাঁথা বানাতো।

কেনো জীবন এতো কঠিন হলো?
সেই ছোট সুন্দর সুখী জীবন সে কখনো পাবে না।
চন্দ্র আর ভাবতে পারছে না,মাথাধরা আবার ফিরে এসেছে।

বাহিরে অন্ধকার হয়ে আসছে,আজানের সময় হয়ে গেছে। চন্দ্র ওয়াশরুমে ঢুকে যায়,নিষাদ ও উঠে যায় মসজিদের দিকে।

নামাজ শেষ করে চন্দ্র পড়তে বসে,নিষাদ এসে বিছানায় পিঠ লাগায়,শুয়ে শুয়ে নিষাদ চন্দ্রকে দেখছে।এই মেয়েটা তার বৌ,ভাবতেই নিষাদ রোমাঞ্চিত হয়।আবার মনে হয় যেনো সে স্বপ্ন দেখছে,স্বপ্ন ভাঙলেই দেখবে শুন্য রুম।

চন্দ্র কবে তার সাথে এক বিছানায় থাকবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না নিষাদ।হাত বাড়ালেই চন্দ্রকে ছুঁতে পারবে সে,নড়াচড়া করলেই চন্দ্রর স্পর্শ পাবে।

সেই দিনের জন্য আর কতো অপেক্ষা করবে নিষাদ বুঝতে পারছে না।

চন্দ্রর মাথাব্যথা ভীষণ বেড়ে গেছে,বই গুছিয়ে রেখে সোফায় উঠে শুতে যায়।শুয়েই ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
প্রথম অবস্থায় চন্দ্র নিজেই হতভম্ব হয়ে যায় পড়ে যাওয়ায়,তারপর চিৎকার করে উঠে। মাঝখান ভেঙে চন্দ্র নিচে পড়ে গেছে।

চন্দ্রর এই অবস্থা দেখে নিষাদ হাহাহা করে হেসে উঠে,নিচ থেকে নাসিমা বেগমের চিৎকার শোনা যায়,তিনি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছেন চন্দ্রর চিৎকার শুনে।
নিষাদ গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় চন্দ্রর দিকে টেনে তোলার জন্য,চন্দ্র হাত ধরে টান দিতেই নিষাদ ইচ্ছে করেই নিজের শরীর ছেড়ে দেয়,ধুম করে চন্দ্রর উপর গিয়ে পড়ে।

নাসিমা বেগম রুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পায় ছেলে-বৌ সোফার উপর একসাথে। দরজা লাগায় নি কেনো,এটা বলে মৃদু ধমক দিয়েই তিনি দরজা ভেজিয়ে রেখে চলে যান।
নিষাদের অস্থিরতা বেড়ে যায়,চন্দ্রর শরীরের ঘ্রাণ,চন্দ্রর চুলের ঘ্রাণ,সবকিছু নিষাদকে আচ্ছন্ন করে তোলে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিষাদ চন্দ্র কে।

চন্দ্র হতভম্ব হয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলে যেনো কিছুসময়ের জন্য,নাসিমা বেগম এসে ওদেরকে এক সাথে দেখে গেছে,উনি কি ভাবছেন ওদের এখন,উনি যা ভাবছেন তেমন তো কিছু না।
নিষাদ আচ্ছনের মতো হয়ে যায়,চন্দ্রর কথা কানে যেতেই তড়াক করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর চন্দ্রকে টেনে তোলে।

কালাম কে ডেকে সোফা নিয়ে যেতে বলে।কালাম এসে সোফা নিয়ে যায়।নিষাদের কেমন যেনো আনন্দ আনুভব হচ্ছে,আজ থেকে তারা এক বিছানায় ঘুমাবে,নিষাদ একসাইটিং হয়ে যায়।
চন্দ্র মাথায় বাম লাগিয়ে নিচে চলে যায়। দুকাপ চা নিয়ে আসে।
নিষাদকে এক কাপ দিয়ে নিজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক কাপ খায়।ভালো সোফাটা হঠাৎ করে ভেঙে গেলো কেনো চন্দ্র বুঝতে পারছে না।
বিকেলেও তো ঠিক ছিলো সোফা,এই কিছু সময়ের মধ্যে কি এমন হয়ে গেলো যে সে শুতেই ভেঙে নিচে পড়লো?

চা শেষ করে রুমে যায় চন্দ্র।ফ্লোরের এক কোণে পড়ে থাকা হাতুড়ি দেখে চন্দ্রর সন্দেহ জাগে।
তবে কি নিষাদ এরকমটা করেছে সোফা ভেঙে?
কিন্তু কেনো?
আমি সোফায় ঘুমাই বলে?
তবে কি নিষাদ চায় আমি ওর সাথে বিছানায় ঘুমাই?
না,এটা তো সে চাইবে না,তবে?
তবে কি সে এটা চায় যে আমি ফ্লোরে ঘুমাই?
সবকিছু বিবেচনা করে চন্দ্রর ধারণা হলো নিষাদ এটাই চায় যে চন্দ্র ফ্লোরে ঘুমায়।

চন্দ্রকে এরকম একদৃষ্টিতে হাতুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিষাদ টের পায় চন্দ্র বুঝে গেছে সোফা ভাঙার বিষয়।
গুটিগুটি পায়ে চন্দ্র এগিয়ে যায় নিষাদের দিকে।

“আমি সোফাতে শুই এটা আপনার সহ্য হয় না,না?”

চন্দ্রর এই সোজা প্রশ্নে নিষাদ খুব খুশি হয়,নিষাদ যে চায় চন্দ্র বিছানায় ঘুমাক সেটা চন্দ্র বুঝতে পেরেছে ভেবে নিষাদ ও হেসে উত্তর দেয়,”না সহ্য হয় না”

“ঠিক আছে,আমি ফ্লোরেই ঘুমাবো,আপনি যখন চান আমি ফ্লোরে থাকি,তবে তাই করবো,আমি যদি শুরুতে বুঝতাম যে আপনার রুমের কোনো আসবাবপত্রে আমার স্পর্শ লাগুক সেটা আপনি চান না,তবে বিশ্বাস করুন আমি প্রথম দিন থেকেই ফ্লোরে শুতাম,আপনি কথাটা আমাকে মুখে বলে দিতে পারতেন,তার জন্য ভালো সোফা ভেঙে বুঝিয়ে দেওয়ার তো কোনো দরকার ছিলো না।”

চন্দ্রর এই অভিযোগ নিষাদকে মূক করে দেয়,সে কি চেয়েছিলো আর চন্দ্র কি ভাবলো?
হতভম্ব নিষাদ বলতে পারে না আর,সে যে চায় চন্দ্র তার সাথে বিছানায় ঘুমাক।
চন্দ্র এই নিষ্ঠুর অভিযোগ কিভাবে করতে পারলো তাকে?
সে কি এতোই অমানবিক?
আজ পর্যন্ত কি চন্দ্রকে একটা ও খারাপ কথা বলেছে সে?
কেনো চন্দ্রর এরকম ভুল ধারণা তাকে নিয়ে তবে?

নিষাদের ভীষণ কষ্ট হয়। চন্দ্র ফ্লোরে ঘুমাবে নিষাদ কিভাবে সেটা সহ্য করবে?
অভিমান,অভিযোগ,বুকের ভিতরের হাহাকার সব মিলিয়ে নিষাদ কে এতো পীড়া দেয় নিষাদ বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে হাসপাতালে চলে যায়। ৬ তলায় গিয়ে দেখে একজন মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে আদিবের কেবিনে।

“আসসালামু আলাইকুম”

মহিলা নিষাদের দিকে তাকিয়ে তারপর সালামের জবাব দেয়, “ওয়ালাইকুম সালাম”

“নিষাদ ভাইয়া,উনি আমার বড় আপা আসমা আর আপা,উনিই নিষাদ ভাইয়া,যিনি আমাকে চাকরি দিয়েছেন।”

আসমা বসা থেকে উঠে যায় আদিবের কথা শুনে,নিষাদ আদিবকে চাকরি দিয়েছে শুনে।নিষাদ বসতে বলে নিজেও বসে,তারপর নিজের করা অপরাধের জন্য আবার মাফ চায় আসমার কাছে।
আসমা হেসে দেয় নিষাদের কথা শুনে। তারপরে বলে,”তোমার বৌ তো ভাই ভারী ভাগ্যবতী এরকম পাগল বর কয়জনে পায়?”

নিষাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসমার কথা শুনে।নিষাদের এই দীর্ঘশ্বাস আসমার চেনা,নিজের জীবন পার করে এসেছে ১৫ বছর ধরে এই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফেলে,একটা মানুষের বুকের ভিতর কি পরিমাণ কষ্ট থাকলে সেই মানুষ টা এভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তা আসমার জানা আছে”

“কিসের এতো কষ্ট ভাই,আমাকে বলো না হয় বোন ভেবে”

অচেনা অজানা একটা মানুষের এরকম আপন হয়ে বলা কথা নিষাদ কে আরো কষ্ট দেয়,নিজের একজন বড় বোনের অভাব তখনই বুঝতে পারে নিষাদ।
ঝরঝর করে কেঁদে দেয় নিষাদ,চন্দ্রর আজকের কথা নিষাদ কিছুতেই নিতে পারছিলো না।

একমুহূর্তে আসমাকে ভীষণ আপন মনে হলো,গড়গড় করে জীবনের সব বলে দিলো সুস্মিতা থেকে চন্দ্র পর্যন্ত।

আসমা অবাক হয় সব শুনে,এতো বড়লোক একটা ছেলে তার মতো দুপয়সার রাঁধুনির কাছে কান্না করছে,এতো নিরহংকার একটা ছেলেকে ও মেয়েরা কষ্ট দিতে পারে!

আসমা খুঁজে পায় না কিছু।কেউ ভালোবেসে নিরবে সব ছেড়ে দেয় সেটার বড় প্রমাণ নিষাদ,প্রচুর প্রেম মানুষকে কিভাবে বদলে দেয় আসমা তা জানে,খুব ভালো করে জানে।

নিষাদকে সান্ত্বনা দেয়ার কিছু আসমার নেই।

আদিব নিজেও যে কখন কেঁদে ফেলেছে তা নিজেই বুঝতে পারে নি।আদিব প্রথমে কথা বলে উঠে,”জানেন ভাইয়া,আমার আপার ভাগ্য ও আপনার মতো,আজ ১৫ বছর দুলাভাই আপাকে ছেড়ে থাকছে,বিয়ের ১ বছরের মাথায় যে দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে গেছে আর আসে নি আপার কাছে,অথচ আপা,তার অপেক্ষায় এখনো বসে আছে যে একসময় তিনি ফিরবেন,নিজের জীবন নষ্ট করছেন এতো দিন ধরে অথচ দুলাভাই একটা বার খবর নেয় নি আজও”

নিষাদ মুহূর্তে নিজের কষ্টের কথা ভুলে যায়,আসমার দিকে তাকায়। আসমার দুচোখ জলে টলমল।১৫ বছর ধরে একজন মানুষ সব সহ্য করে আসছে আর সে কি-না এই দুই দিনেই যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মতো হয়ে গেছে!

আদিবের কেবিনের বারান্দায় শুয়েই রাত কাটিয়ে দেয়,আসমার,নার্স,ডাক্তার,সবার হাজার বলা সত্ত্বেও কোনো কেবিনে শোয় নি।

কি এক অভিমান বাসা বাঁধে নিষাদের মাঝে,চন্দ্র যতোদিন বিছানায় ঘুমাবে না নিজেও ততদিন বিছানায় ঘুমাবে না বলে ঠিক করে নেয়।
আসমার জন্য এই কেবিনেই আরেকটা বেডের ব্যবস্থা করে দেয় নিষাদ।

আসমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,এই ছেলেটা একটা মেয়ের জন্য কেমন পাগলামি করছে অথচ মেয়েটা তাকে বিন্দু মাত্র ভালোবাসে না,ভালোবাসা এতো অদ্ভুত কেনো!

চন্দ্র রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। নিষাদ বাসায় আসছে না কেনো বুঝতে পারছে না।চন্দ্র ফ্লোরে শুতে পারে না,তার ঠান্ডা লেগে যায়,ছোট বেলা থেকেই এরকম তার,অতচ আজকে কেমন নির্বিকার হয়ে শুয়ে আছে।
মনের আঘাতের কাছে শরীরের ব্যথা হার মেনে যায়।তিনতলা পুরো খালি,সবাই দোতলায়,সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে,মাজেদা খালা শুধু বাড়িতে থাকে।
পুরো তিনতলা জনশূন্য হয়ে আছে,যেনো খাঁখাঁ করছে।
চন্দ্রর ভীষণ ভয় করছে হঠাৎ করেই।

জানালার গ্লাস দিয়ে বাহিরে তাকায়,গা ছমছম করছে চন্দ্রর,নিষাদ ছিলো বলে এতোদিন ভয় টের পায় নি,কিন্তু আজকে থাকতে পারছে না।

শোয়া থেকে উঠে বসে যায় চন্দ্র,রুমের সব বাতি জ্বালিয়ে দেয়।উহু,ভয় দূর হচ্ছে না।
রুমের বাহিরে যেনো কারো হাটার শব্দ পাচ্ছে,ওইতো শোনা যায় কে পা টেনে টেনে যাচ্ছে।
যেনো একবার দরজাতে কড়া ও নাড়ছে কেউ।

অস্ফুটস্বরে কেউ যেনো একবার চন্দ্র বলে ডেকে উঠেছে,চন্দ্রর শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে,মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছে একদমে,ভয় কিছুটা কমে কিন্তু পুরোপুরি যায় না,বাহির থেকে এখনো সেই পা টেনে চলার শব্দ আসছে।

চন্দ্রর হঠাৎ মনে পড়ে নিজের অতীতের এক ভয়ংকর স্মৃতির কথা,মনে হয় সে-ই এসেছে আজও।চন্দ্রকে একা পেয়েছে সে সেদিনের মতো।

চন্দ্রর কলিজা শুকিয়ে আসছে ভয়ে,দ্রুত ফোন হাতে নেয়,নিষাদ কে কল দিতে হবে,নিষাদের নাম্বারে ডায়াল করে,রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না নিষাদ।
চ্ন্দ্র শুনতে পায় বাহিরে কেউ ম্যাচ জ্বালাচ্ছে,চন্দ্র জানে এখন সে সিগারেট খাবে,তারপর চুমুক দিয়ে চা খাবে, তারপর আবার চন্দ্রকে ডাকবে।দরজা খুলতে বলবে।

আজকে আর সে সুযোগ দিবে না,আবার কল দেয় চন্দ্র নিষাদ কে। চন্দ্রর দম বন্ধ হয়ে আসছে,এই সাউন্ডপ্রুফ রুম থেকে চিৎকার করলে নিচে কেউ শুনবে না,দরজা খুলে বাহিরে বের হলে তার সামনে পড়তে হবে,চন্দ্র কিছুতেই এটা পারবে না।

ফোনের শব্দে নিষাদ জেগে গেলো সবেমাত্র চোখ লেগে এসেছে,অচেনা নাম্বার দেখে রিসিভ করে না।
দ্বিতীয় বার ও কল এসেছে নিষাদ তাও রিসিভ করছে না।রাত্রি সাড়ে এগারোটার বেশী বাজে,এখন কল রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না নিষাদের।

আবার কল বেজে উঠে,বিরক্ত হয়ে নিষাদ ফোন সাইলেন্ট করে রাখে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার।

চলবে….???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here