শ্যামাকন্যাতে আসক্ত পর্ব -০২

#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত

#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

অর্নর সাথে আহসান মঞ্জিলে আসতেই গাড়ি থামালো অর্ন। বড় গেটের ভিতরে দিয়ে প্রবেশ করার সময় থেকেই অনেক লোকজন দেখা যাচ্ছে। যারা বাড়িটাকে সুন্দর করে নববধূর মত করে সাজাতে ব্যস্ত।অর্ন খানের বিয়ে বরে কথা চারটে কথা নাকি।সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।চোখ তুলে দেখছে না কেউ। মেইন গেট ঢুকেই মাঝখানে প্রশস্ত পাকাপোক্ত রাস্তা।বিশাল বড় বাড়ি। বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে শুধু সবুজ ঘাসে আবৃত।বাড়িটাও অনেকটা রাজপ্রাসাদের মত। বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই আহসান মঞ্জিল। চারদিকে আভিজাত্যের ছোয়া লেগে আছে।বাড়ির একপাশে বাগানে সবুজ ঘাসে আবৃত স্থানে কাউচ রাখা আছে।সব কিছু সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো।পৃথা একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো কারন এই বাড়ির আনাচে কানাচে ওর জানা থাকা প্রয়োজন নাহলে ওর কাজে সফলতা পাওয়া কঠিন হবে।গেটের কাছে দুজন দাড়োয়ান আর বাড়ির ভিতরে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বেশ অনেকটা দুরত্ব আর এর মাঝে কালো পোশাকধারী লোকেদের রাখা হয়েছে সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য। এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ হবে না পৃথার পক্ষে। তবুও ওকে পালাতেই হবে।ওর পরিকল্পনা সফল না হলে সবাই প্রান হারাবে।দাদি, মা আর ভাইকে আগেই বলে দিয়েছে ওরা বেরিয়ে পড়লে যেনো ওরাও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।অর্নর নাগালের বাইরে।পৃথার মা প্রথমে মেয়ের এমন উক্তিতে রাজি হতে না চাইলেও পরবর্তীতে সবদিক বিবেচনা করে রাজি হয়ে যায়।আর যে কিছুই করার নেই কোন রাস্তাই নেই পালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাছাড়া ওনার ভরসা আছে তনয়ের উপর সে তার মেয়েকে সারাজীবন আগলে রাখবে।সে ভরসাতেই স্টেশনের উদ্দেশ্য পা বাড়ান।

—————————————-

বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমেই অর্ন পৃথার পাশের দরজাটি খুলে দিল।পৃথা একবার অর্নর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিনাবাক্যে গাড়ি থেকে নেমে এলো।দরজায় পা রাখতেই হুড়মুড় করে চলে এলেন অর্নর মা হাতে বরন ডালা।ছেলের সঙ্গে ছেলের হবু বউকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন তিনি।

— দাড়া দাড়া আগে বউকে বরন করে তো নিই।তারপর প্রবেশ করবি।

বলেই বরন করতে লাগলেন তিনি।মায়ের হাঁকডাকে কোন রিয়েকশন দেই নি সে।তার মুখে গম্ভীরতাই প্রকাশিত রয়েছে।সকল পরিস্থিতিতে একদম স্বাভাবিক থাকা যেন অর্নর জন্মগত বৈশিষ্ট্য। একদম চুপচাপ, জেদি, বদমেজাজি আর গম্ভীর স্বভাবের ছেলে সে।

পৃথার পিছনে চুপচাপ দাড়িয়ে নিজের মায়ের খুশিতে গদগদ হওয়া দেখছে সে।মাকে তার পুত্রবধুর জন্য এত ভালোবাসা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো তার।অর্নর ঠোঁটে মুচকি হাসি। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসছে সে।
পৃথাকে বরন শেষে দুহাতে জরিয়ে ধরলেন অর্নর মা।

— আয় মা ভেতরে আয় বলেই হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো মিসেস খান।তারপর ছেলের হবু বউকে সোফায় বসিয়ে দিলেন।একহাত থুতনিতে ধরে চুমু খেলেন পৃথার কপালে।

পৃথা পুরোটা সময় নির্বাক হয়েছিল। না আচে মুখে হাসি আর না আছে কোন কথা। মুখটা একবারে মলিন হয়ে আছে।হবে নাই বা কেন এমন একটা মানুষকে কেই বা চায় স্বামী হিসেবে গ্রহন করতে যে তাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে জোর করে বিয়ে করতে চাইছে।পৃথার এমন আচরনই স্বাভাবিক। অর্নর মা সেটা জানেন তবুও কি করবে কিছুই করার নেই। কখনো কখনো আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে ভুল মনে হয় একসময় সেটাই আমাদের জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত হয়ে দাড়ায়।অনেক সময় ভুলের মাঝেই সুখ লুকিয়ে থাকে।কিন্তু আমরা তা বুঝি না। আল্লাহ হলেন উত্তম পরিকল্পনাকারী। তার বান্দারের জন্য তিনি উত্তম পরিকল্পনাই করেন।যার যেটা প্রাপ্য তাকে সেটাই দেন ভেদ ভাও করেন না।সেটা আমাদের কাছে সটিক মনে না হলেও একসময় সেটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি হয়ে দাড়ায়।

বরন শেষে পৃথাকে নিয়ে আসতেই অর্ন কিছু না বলেই উপরে চলে যায়।

— আমি জানি মা আমার ছেলে যা করছে তা একদম ঠিক করছে না।এভাবে তোর সাথে জোর করছে তোকে ওর কাছে রাখার জন্য। কিন্তু বিশ্বাস কর মা আমার ছেলে যতটা খারাপ দেখায় ও কিন্তু ততটা খারাপ না। ওর মাঝেও একটা মন আছে একটা হৃদয় আছে যে হৃদয়ে তোর জন্য অসীম ভালোবাসা আছে।আমি জানি ও তোকে ঠিক কতটা ভলোববাসে তুই শুধু ওকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর দেখবি ঠকবি না। সারাজীবন ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে তোকে। কখনো কোন আঁচ আসতে দিবে না তোর উপর।আগলে রাখবে তোকে সব বিপদ আপদ থেকে।আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবাসা দিস মা।আমার ছেলেটা তোর বিরহে দিনদিন পাথর হয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেটা একটু গম্ভীর ঠিকই কিন্তু দেখিস যখন তুই ওকে বুঝবি তখন তুই খুব সুখী হবি।আমি দোয়া করি তোরা সারাজীবন সুখী হ।

পৃথার দুহাত আকড়ে ধরে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলেন মিসেস খান।পৃথা নিরব শ্রোতার ভুমিকা পালন করলেও তার কথা গুলো যে পৃথার একদমই ভালো লাগেনি তা বেশ বুঝতে পারছেন মিসেস খান।ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললেন তিনি।

— আমি জানি তুই একদিন ঠিক আমার ছেলেকে ভালোবাসবি ওকে বুঝবি।সে দিনটা একদিন ঠিক আসবে।শুধু একটু চেষ্টা করিস আর কিছুই বলবো না।ভালোবাসদে না পারলেও পাশে থাকিস।তাতেই আমার ছেলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ হবে।তুই জানিস না আমার ছেলের ভালোবাসা কতটা গভীর।

এবার আর পারলো না পৃথা তাই মুখ খুললো,

— এ জীবনে আপনার ছেলেকে কোনদিন ভালোবাসবো না আমি।ও ভালোবাসার যোগ্য না। কারও কাছ থেকে ভালোবাসা জোর করে আদায় করা যায় না।আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে ছিনিয়ে এনেছে সে। কি বোঝে সে ভালোবাসার।আমি তার কাছে শুধুই একটা জেদ যেটা সে পুরন করতে চাইছে।আর কিছুই না আর যেটাকে আপনারা ভালোবাসা বলে আমার সাথে অন্যায় করছেন।

ব্যাস এটুকু বলেই থেমে গেল পৃথা।রাগ লাগছে তার ভিষন রাগ।বয়সে বড়দের সাথে সে এভাবে কখনো কথা বলে না তবে আজ সে না বলে থাকতেও পারলো না।কারন যেই মানুষটার সম্পর্কে তাকে বলা হচ্ছিল তাকে সে শুধুই ঘৃনা করে, করেছে আর করবে।সেটা কোন দিন পরিবর্তন হয়ে ভালোবাসার রুপ নিবে না তা ভালো করেই জানে পৃথা।

অর্নর মা আর কথা বাড়ালেন না।শুধু মলিন হাসলেন মেয়েটাকে বোঝাতে পারলো না।বাচ্চা মেয়েতো তাই বুজতে পারছে না।সময় হলে ঠিকই বুঝবে তখন বড় আঘাত পাবে।কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ছলনা সেটা বুঝলে মনটা ভেঙে যাবে মেয়েটির। খুব কষ্ট পাবে আঘাত পাবে সামলাতে পারবে তো কিন্তু এ ছাড়াও উপায় নেই।সত্যিটা না জানলে সারাজীবন ঠকে যাবে তার চেয়ে সত্যিটা জেনে দুঃখ পেয়ে কষ্ট পেয়ে নিজেকে সামলে নতিন করে জীবন শুলু করবে।আর সে তো তার ছেলেকে জানে সে কখনো ওকে একা ছাড়বে না।সারাজীবন বুকে আগলে রাখবে।পৃথার ভুল ধারনা ভাঙবে একদিন তা তার বিশ্বাস। উহু মুধু বিশ্বাস নয় দৃঢ় বিশ্বাস। তার ছেলের ভালোবাসা হারবে না হারতে পারে না।অর্ন তার ছেলে সে কখনো ভুল করেনি, করবে না এটা সে জানে তাই এবার তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তৃপ্তির হাসি প্রাপ্তির হাসি জোর করে হলেও ছেলেটা তার ভালোবাসা হারাবে না।তার ভালোবাসার গভীরত্ব মর্মাথ বুঝাতে সক্ষম সে।একটু দেরি হলেও সে পারবে।

তিনি এবার পৃথাকে নিয়ে একটা রুমে চলে গেলেন।সেখানে পৃথাকে বসিয়ে দিলেন।তারজন্য নানা রকম খাবার আনা হয়েছে।পৃথাকে খেতে বললেন মিসেস অর্না।কারন সাজ শুরু হলে সময় লাগবে তাই এখন ওর কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত।বিশাল বড় একটা রুম।বেলকনিতে পুরোটা কাচের আস্তরনে ঢাকা।বাইরের আলো এসে পড়ছে।কিছুক্ষন পর একজন মেকাপ আর্টিস্ট এলো রুমে।পৃথার জন্য বিছানার উপর অর্নর পছন্দ করা শাড়ি আর জুয়েলারি রাখা হয়েছে।মেকাপ আর্টিস্ট কে বলে দিয়েছে অর্ন পৃথাকে যেনো কোন ভারি সাজ না দেওয়া হয়।হালকা সাজে তার প্রেয়সীকে অপরুপা লাগে।উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নে লাল বেনারসি সাথে চুড়ি আর খোলা চুলে রজনীগন্ধার গাজরা,চোখে কাজল আর লাল রঙা লিপস্টিক এতেই তার প্রিয়াকে কোন হুরের চেয়ে কম মনে হয় না।তার মায়া ভরা আখিতে বারবার হারায় অর্ন।আজ তার প্রিয়াকে সে লাল টুকটুকে বউয়ের সাজে দেখবে।অর্ন জানে যে কি হতে চলেছে তাও সে প্রতিক্রিয়াহীন।কারন সে জানে যে দিনশেষে ফলাফল তার অধীনেই থাকবে।

লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে পৃথা ঘরে কেউ নেই।পালানোর পরিকল্পনা করছে সে।কিভাবে কি করবে তাই ভাবতে ব্যস্ত ছিল সে এতক্ষণ আর মেকাপ আর্টিস্ট তার কাজ করেছে।এতক্ষণে ওরা পৌছে গেছে এখন ওর এখান থেকে বেরিয়ে তনযের কাছে যাওয়ার অপেক্ষা তারপর আর এই অর্ন নামের অভিশাপটা ওর জীবনে থাকবে না।সবাই বাইরে বড় করে আয়োজন না করলেও পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে মানুষজনও তেমন একটা নেই।শুধু কতগুলো গার্ড আর বাড়ির কাজের লোক। অর্নর ইচ্ছেতেই সবটা হচ্ছে এতবড় একজন মন্ত্রীর ছেলের এভাবে মেনে নেওয়া কারও পক্ষে মানা সম্ভব না।তবে যেখানে অর্ন কান এসব চায় না সেখানে কারও কিছু বলার থাকে না।তাই অর্নব খানও কিছু বলেন নি।ছেলের ইচ্ছেি তার ইচ্ছে একটা মাত্র ছেলে তার মেয়ে তো সে দূর দেশে স্বামী সন্তান নিয়ে আছে তবে ভাইয়ের বিয়ের কথা শুনে শ্রীঘই ফিরবে জানিয়েছে।

————————————-

সবার৷ অগোচরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে ও কিন্তু আশ্চর্য করা বিষয় এটা যে ওর এতে কোন সমস্যাি হয় নি প্রথম আসার সময় যতটা কঠিন মনে হয়েছিল এখন তেমনটা না।খুব সহজেই বেরিয়ে এসেছে সে।রাস্তা দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে যেন যতদ্রুত সম্ভব তনয়ের কাছে পৌছুতে পারে সে।তার ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে গেছে পৃথা।অপেক্ষা তনয়ের খানিকক্ষণ পর তার দেখা মিললো দৌড়ে গেল তার কাছে।গিয়েি দুহাত ধরে বললো,

–চলো তনয় আর দেরি করা উচিত হবে না। আমাদের যাওয়া উচিত।

বলেই পৃথা তনয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে।তনয় টায় দাড়িয়ে পৃথার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে সে নিজে পৃথার হাত দরে চলতে শুরু করলো।তাও উল্টোপথে পৃথা অবাক হচ্ছে বেশ।তাদের তো এই রাস্তা আর পথ থেকে পালাতে হবে তাহলে একানে কেন যাচ্ছে তনয়।সে একসময় জিজ্ঞেস করলো ভয়ার্ত কন্ঠে।বললো,

— তনয় তুমি কোথায় যাচ্ছো।আমাদেররটারাতে হবে।এখাসন থেকে আর তুমি সেই পথেই ঠিরে যাচ্ছো কেন? পাগল হয়ে গেছ।

তনয় কিছু না বলে ওর হাত টেনে হেটেই যাচ্ছে
আবছা আলোতে।আবারো পা থামালো পৃথা বললো,

— কি হলো তনয় কিছু বলছো না কেন?

— আমরা গন্তব্যের দিকেই চলছি।গেলেই বুঝতে পারবা।কথা না বলে চলো আমার সাথে বিশ্বাস আছে তো।

–হুম আছে।আজ হটাৎ কেন জিজ্ঞেস করছো? তুমি তো জানো কতটা বিশ্বাস করি আমি তোমাকে।

— হুম জানি। তাই বলছি চলো।

বলতে বলতে ওরা অন্ধকার একটা জায়গায় এসে থামলো। আর তনয় মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বললো,

— এসে গেছি। এটাই তোমার গন্তব্য।

বলেই কুটিল হাসি দিল তনয়।পৃথা এই হাসির মানে বুঝলো না।সে অবাক হয়েছে ভিষন আজ তনয়কে একটু অন্য রকম।লাগছে তার কিছুটা বদলে গেছে সে।আধার কাটিয়ে রাস্তার মৃদু লাইটের আলোতে ওদের মুখোমুখি এসে সামনে এসে দাড়ালো অর্ন।পৃথা অর্নকে দেখেই ঘাবড়ে গেল।ওর পরনে একটা লাল শেরওয়ানি।। বুঝাই যাচ্ছে পৃথার সাথে ম্যাচ করেই পরেছে।চুলগুলো জেল দিয়ে পেছনে সরট করা থাকলেও কিছু অবাধ্য চুল কপালে এসে পড়ছে।শেরওয়ানির দুটো বোতাম খোলা।পুরোই বরের গেটাপে আছে সে।মুখটাও আগের মত গম্ভীর স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয় নি সব নরমাল।তার পালিয়ে আসার পর অর্নকে এতটা নরমাল মানতে পারছে না পৃথা।মনে হচ্ছে সে সব জানতো যে কি হতে চলেছে নয়তো সবটাই তার সাজানো। কোন ভাবান্তর নেই তার চেহারায়।মনে ভয় ঝেকে গেছে।যদি অর্ন তনয়ের কোন ক্ষতি করে।ও শক্ত করে ধরলো তনয়ের হাত।কিন্তু তনয়ের হাত আলগা হয়ে আসছে।সে ধরেনি পৃথাকে জানে এমনটা করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তাকে যতটুকুর অনুমতি দেয়া আছে সে শুধু ততটুকুই করতে পারবে।এর বেশি করলে প্রান হারাবে তাই সে সেটা করলো না।এবার পৃথার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে তনয় সামনে থাকা অর্নকে কুটিল হেসে বলে উঠল,

–বস তোমার জিনিস তুমি নিয়ে যাও আমারটা আমি পেয়ে গেছি।আর হ্যা খুব যত্ন কর খুকুমনির তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে তার প্রাপ্য শাস্তি পাওনা সে আজই পাওনা মিটিয়ে নিই।

বলেই হেলেদুলে সিটি বাজাতে বাজাতে হাসতে হাসতে চলে গেল।আর মনে মনে পৃথাকে থেংকস দিচ্ছে সবটা ওর জন্যই তো হলো।পৃথার ওর খেলার গুটি ছিল। যে তার জন্য সোনার ডিম পারা রাজহংসী।প্রয়োজন শেষ তাই তাকেও তার প্রয়োজন নেই।তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়েছে অর্ন।তাও অনেকটা পরিমানে এখন আর এই গুটিকে দিয়ে কাজ নেই তার।

তনয়ের হাত ছাড়িয়ে নেওয়াতে বিস্মিত হলো পৃথা।এমন একটা বিপদে তার হাত কেনো ছেড়ে দিচ্ছে তনয় বুঝতে পারছে না সে।তাই সে বিষ্মিত তনয়ের এহেন কান্ডে।বিষ্ময় কাটিয়ে উঠার আগেই তনয়ের মুখের বানী শুনে সে তব্দা মেরে গেল।থম মেরে দাড়িয়ে রইলো কোন প্রতিক্রিয়া করছে না সে।যেন জমে গেছে কোন জড় বস্তু সে।তার মাঝে প্রান অবশিষ্ট নেই আর থাকবেই বা কি করে। সে তো এটা মানতেই পারছে না।তনয় এভাবে মাঝরাস্তায় বিপদের মুকে রেখে চলে গেল।নাহ বিপদের মুখে রেখে পালায়নি সে বিপদের হাতে সে নিজে তুলে দিয়েছে।

তনয়ের যাওয়ার পানে অবাক বিষ্ময়কর চাহনিতে চেয়ে আছে পৃথা তা৷ বিশ্বাস করতে মানতে কষ্ট হচ্ছে। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে সে।এর মাঝেই অর্ন পৃথার একদম কাছে এসে বললো,

— এবার পায়ে হেটে গাড়ি অবধি যাবে নাকি তুলে নিয়ে যাবো।

বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো অর্ন।সে তো জানতো এমনটাই হবে পৃথার সাথে। আর পৃথার রিজেকশনটাও এমনি হবে।বুকের ভিতর যে তার জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে সেটাও জানে সে।কিন্তু কোন বিশ্বাস ঘাতক আর প্রতারকের জন্য তার হবু বউয়ের বুকে ভালোবাসা থাক এটা সে চায়।তাই সে চায় সেই ভালোবাসা ঘৃনার আগুনে জ্বলে পুড়ে খাগ হয়ে উড়ে যাক মিলিয়ে যাক অন্ধকারে।

পৃথার সারাশব্দ নেই সে একইভাবে তাকিয়ে আছে তনয়ের যাওয়ার পানে।মানুষ যখন খুব বড় আঘাত প্রায় তখন তারা ভাবহীন ভাষাহীন প্রানহীন জড় বস্তু হয়ে যায়।পৃথারও এখন একই অবস্থা। অর্ন বুঝলো যে তার হবু বউ তার কোলে চেপেই শ্বশুর বাড়ি যেতে চাইছে।তাই কানের কাছে গিয়ে বললো,

— চলো বউ সবাই অপেক্ষা করছে।

বলেই একমুহূর্তে ও ব্যয় না করে কোলে তুলে নিল পৃথাকে।পৃথা প্রতিক্রিয়া হীন।যেন একটা পাথরের মুর্তি সে।

কিছুসময় পর বাড়িতে পৌছে গেল অর্ন।গাড়ি থেকে নেমে পৃথাকে আবারো কোলে তুলে নিল সে এনে সোফায় বসিডে দিল।পৃথার ভাইযের বয়স তেরো বছর। সে এসে বসলো পৃথার পাশে । ভাইকে দেখে মাথা তুলে তাকালো পৃথা সামনেই মা আর দাদি ওর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে।চেহারাটা কেমন মলিন হয়ে আছে।পৃথা ভেবেছিল হয়তো ওদের জন্যই তনয় ওকে অর্নর হাতে তুলে দিয়েছে ওদের জীবন বাঁচাতে স্বাভাবিক হলো সে খানিকটা।তনয় তাকে ঠকায়নি সে পৃথার পরিবারকে বাচাতে তার ভালোবাসা স্রেক্রিফাইজ করেছে তাহলে পৃথা কেন পারবে না সে তো তার পরিবারে জন্য তো জীবনটাও দিতে পারে।ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত ছিল। কাজী সাহেব ওদের বিয়ে পড়ালো কবুল বলার সময় গলাটা আটকে আসছিলো পৃথার।খুব কষ্টে মুখ দিয়ে এই তিন শব্দ বের করলো সে।জুড়ে গেল আজকের পর তার জীবন এই পশু রুপি মানুষটার সাথে।

বিয়ে পড়ানোর পরে একটা গরে নিয়ে বসানো হলো পৃথাকে।তার মা কাছে এলো মার কোলে মাথা রেখে চিৎকার করে কাদলো পৃথা।মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।আর বললো,

— ভুল মানুষটিকে বেছে নিয়েছিলাম আমরা তোর জন্য। ঠকিয়েছে সে তোকে ভুলে যা ওকে এতদম কাদবি না ওর জন্য।

–কি বলছো এসব মা তনয় আমাকে ঠকায়নি।ও তো তোমাদের বাঁচাতে এসব কিছু করেছে।তোমাদের থেকে আমাদের আমাদের কাছে আর আপন কিছুই নেই মা।

কান্না ভেজা গলায় কথাগুলো বললো পৃথা।ওর মার রাগে মুখটা লাল হয়ে যাচ্ছে আবার কান্না ও পাচ্ছে। মেয়েটা কতটা ভালোবাসে ওকে আর বিশ্বাস ঘাতকটা এভাব৷ ঠকালো ওদের।রাগে রি রি করছে তার শরীর পৃথাকে সত্যিটা জানাতে হবে।ওকে এভাবর ঠকতে দিবে না সে।দাঁত কিড়মিড় করে তিনি যা বললেন তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল পৃথা……

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here