শ্রাবণের ধারা পর্ব -০৭

#শ্রাবণের_ধারা (৭ম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~আমি চমকে গেলাম অন্য কিছু দেখে। মুখ ফ’স’কে জিনিয়ার সামনেই বলে উঠলাম,

— একি আবিরও নীল পড়ে এসেছে?

জিনিয়া আড় চোখে আমার দিকে তাকালো তারপর আশেপাশে কি যেন খুঁজতে লাগল। আমি জিজ্ঞাসু সুরে বললাম,

— কি রে কি খুঁজছিস?

— তুই যা বললি তার প্রমাণ খুঁজছি।

— মানে?

— আবিরকে খুঁজছি আবার কি?

এর মাঝেই আবির আর রাদিফ আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। রাদিফকে যথেষ্ট হাসিখুশি লাগলেও আবির সেই বাংলার পাঁচের মুখ নিয়ে পকেটে এক হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ ঘুম থেকে উঠিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওর দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে ছিলাম তখন জিনিয়া বলে উঠলো,

— হ্যালো হ্যালো আমাকে আপনারা চিনবেন না তবে আমি তোমাদের চিনি।

— বাহ্ একবার তুমি আবার আপনি ভালোই তো। (রাদিফ)

— না মানে ওই আর কি। (জিনিয়া)

— তো আপনার পরিচয়টা? (রাদিফ)

— আমি জিনিয়া আর একই সাথে ধারার বেস্ট ফ্রেন্ড। (জিনিয়া)

— ওহ্ আচ্ছা এইবার বুঝলাম। (রাদিফ)

— তো আজকের অনুষ্ঠানে তোমরা কিছু করবে না? (ধারা)

— কিছু করা কি বেশি জরুরি? চুপচাপ বসে থাকলেই তো হয়। (আবির)

— “নিজে তো কিছু করবে না আরেকজনকেও করতে দিবে।” কথাটা খুব আস্তে বললাম তারপরেও মনে হলো আবিরের কানে গেছে আর আবির আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। এর মধ্যেই রাদিফ বললো,

— ওয়েল ধারা তোমাকে কিন্তু আজকে সুন্দর লাগছে।

— থ্যাংক ইয়ু। (ধারা)

— মনে হচ্ছে পুরো আকাশ জরিয়ে এসেছে। এখানে এতো সুন্দর কি পেলি তুই? (আবির)

— নিজে কি হ্যা? তুমিও তো হালকা নীল পরেছো, তুমি তো আমাকে ক’পি করেছো!!! (ধারা)

— আমার খেয়ে দেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। তোমাকে ক*পি করার এতো সময় নেই আমার কাছে। (আবির)

— আহা তোরা ঝ’গ’ড়া করছিস কেন? আজকে কি আমরা এই করতে এসেছি না কি? (রাদিফ)

— হ্যা সেটাই তো! রাদিফ ঠিকই বলেছেন। আমরা আজকে আনন্দ করতে এসেছি এর মাঝে মুড ন’ষ্ট না করাই ভালো। (জিনিয়া)

— “তাই তো দুনিয়ার কাজ রেখে এখানে বসে বসে বিনোদন নাও তুমি।” রাদিফকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেল আবির। রাদিফ ওর পিছনে যাওয়ার আগে বলে গেল,

— তোমরা চিন্তা করো না। আজকে ওকে দিয়ে কিছু একটা করিয়ে ছাড়বো।

এরপরে রাদিফও দৌড় দিল আবিরের পিছনে। অদ্ভুত মানুষ বটে দুটোই! খেয়াল করলাম জিনিয়া এখনো হা করে ওদের যাওয়ার পানেই চেয়ে আছে। ওকে ধীরে একটা ধা’ক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— কি দেখছিস ওইভাবে?

— রাদিফ কে।

— কি?

— না মানে ওরা কোন দিকে গেল সেটাই।

— আসলেই তাই?

— আসলে দোস্ত একটা কথা বলবো?

— বলে ফেল।

— রাদিফকে কালো পাঞ্জাবিতে না দারুন লাগছে। ওকে দেখে না মনের মধ্যে টিড়িং বিড়িং করছে।

— পছন্দ হয়েছে না কি?

— বাদ দে। অনুষ্ঠানের ওইদিকে যাই চল।

আমিও মুচকি হাসি দিয়ে হাঁটা ধরলাম সেদিকে। সুন্দর একটা পরিবেশ আর আবহাওয়ার মধ্যে একটা ঠান্ডা ভাব। ওরা অনুষ্ঠান শুরু করে দিয়েছে। সবাই এক এক করে গান গাইছে, যে যার ইচ্ছা মতো কিছু পরিবেশন করছে।

এদিকে ঠান্ডা হাওয়ায় একটু কাঁপুনি উঠলাম। হঠাৎ হাতের সামনে কেউ কফি নিয়ে এলো। মুখ তুলে তাকাতেই দেখলাম রাদিফ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিলো, আমিও হালকা হাসলাম। রাদিফ আমার হাতে একটা কফি ধরিয়ে দিতে দিতে বললো,

— বেশি ঠান্ডা লাগছে না কি?

— না মানে খুব বেশি না।

— হুম শীত তার আগাম বার্তা দিচ্ছে। এরমধ্যে আবার ঠান্ডা লেগে যায় কতজনের তাই একটু সাবধানে থেকো।

— কফির জন্য ধন্যবাদ।

— আমাকে কেন বলছো? ধন্যবাদ তো অন্য কারো পাওয়ার কথা।

— কার?

— ওই তো একজনের। যাক এসব বাদ দাও।

— ভালো কথা মনে পড়েছে, গতকাল তোমার কাজ দেখে আসলেই বিস্মিত হলাম। আরেকটু হলেই ঝা’মেলা বেড়ে যেতো আর আগেই কি সুন্দর সবটা সামলে নিলে।

— আমি?

— হ্যা তুমি।

— আরে আমি তো খালি মাধ্যম ছিলাম। আসল ঝা’মে’লা তো আবির ঠিক করেছে।

— বুঝলাম না?

— আবির আমাকে বলে দিয়েছিল যে এইভাবে এইভাবে সমাধান করতে। আমি খালি সেগুলো ফলো করেছি আর কিছু না।

— ওহ্ আচ্ছা।

— আবিরকে এখনো চিনে উঠতে পারোনি। এখনো চেনা বাকি আছে দেখছি কিন্তু এতো না চেনাই ভালো আমার যা মনে হয় আর কি।

— ঠিক বুঝলাম না?

— তেমন কিছু না আমি একটু ওই দিকটায় যাই তোমার সাথে পরে কথা হবে।

এরপরেই রাদিফ প্রস্থান নিলো। আবারও সেই কথার ফাঁ’দে পড়ে গেলাম। এই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার স্বভাব তো দেখি দুই বন্ধুরই আছে। দুইজনেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কি যে বলে সব মাথার উপর দিয়ে যায়।

——————

— তো জনগণ এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করবেন আমার অতি কাছের বন্ধু আবির। (রাদিফ)

রাদিফের বলা বাক্যে সামনে তাকালাম। সবাই গোল হয়ে ঘিরে বসে আছি। আবিরকে ডাকার পর সে সবার মাঝে এসে বসলো। সবার চোখ ওর দিকে, আমি খেয়াল করলাম আবির একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। নিজেকে প্রস্তুত করছে তবে এই ব্যক্তি যে গানও গাইতে পারে এইটা তো জানতাম না।

আবির গলা ছেড়ে গাওয়া শুরু করলো,

“”তুমি আমার নওতো সুখ
তুমি সুখের বেদনা,

সব স্বপ্নের রং হয় না তো
বেদনার মতো নয় রঙা,

জীবনের সব কথা নয়
আমি জীবনটাকেই বলতে চাই,

হয়তো দু’বাক্য নয়
সে তো ভালোবাসার কাব্য কয়,

আমি কবি নই
তবু কাব্যের ভাষায় বলবো আজ।।~~

তুমি বললে আজ দু’জনে
নীল রঙা বৃষ্টিতে ভিজবো,

রোদেলা দুপুরে একসাথে
নতুন সুরে গান গাইবো,

শেষ বিকেলের ছায়ায় নীল
আকাশের বুকে আমি
লাল রঙা স্বপ্ন আঁকব।।””

অতঃপর আবির তার গান শেষ করলো। আমি এখনও আবিরের দিকে তাকিয়ে আছি, এর মাঝেই আবিরও আমার দিকে তাকালো। এবার আর দৃষ্টি সরাতে পারলাম না। সবার হাতে তালির আওয়াজে হুশ এলো। আবিরের পরিবেশনায় সবাই মুগ্ধ। ছেলেটার গানের গলা আসলেই ভালো। আজকে আবারো দেখলাম আবির মুখে হালকা হাঁসি। যাক বাবা একটু হলেও স্বাভাবিক আচরণ করছে।

—————

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি, রাতের আকাশ উপভোগ করতে উপরে চলে এসেছি। শরৎ তো প্রায় শেষ হতে চললো আর শীত তার জায়গা দখল করতে আসছে। এই শরতের আকাশ আর কবে পাবো কে জানে আর আগেই এর দৃশ্য উপভোগ করে নেয়া ভালো। আজকের দিনটাও বেশ ভালো কেটেছে, সারাটা বিকেল নিজের মতো কাটিয়েছি সবার সাথে।

আনমনে চারপাশটা উপভোগ করছি। এমন সময়ে পিছন থেকে ডাক এলো,

— আমাকে ভুলে গেলে না কি ভালোবাসা?

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে ততক্ষণাৎ ঘুরে তাকালাম আমি আর তাকিয়ে দেখি তূর্য দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে কেমন বাঁকা হাসি দিল তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,

— আমাকে দেখি তোমার মনেই পড়ে না। ব্যাপার কি? নতুন কাউকে পেয়ে গেলে এতো তাড়াতাড়ি?

— তু.. তুমি এখানে কি করছো? তুমি এখানে কিভাবে এলে?

— তোমার জন্য তো আমি সব জায়গায় যেতে পারি জানো না? এতো ভালোবাসি তোমায় এইটুকু যদি না পারি কিভাবে হবে বলো?

— মানে কি এসবের? তুমি.. তুমি এখানে কেন এসেছো?

— তোমাকে নিজের করে নিতে এসেছি বুঝেছো?

— মানে কি এগুলার?

দুই পা পিছিয়ে গেলাম। তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলেছে। কি করবো মাথা কাজ করছে না। তূর্যকে পাশ কাটিয়ে এক দৌড়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় এসেই দেখি………………

চলবে………………….^-^

[ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছি। তারপরে চেষ্টা করবো প্রতিদিন গল্প দেয়ার। পর্ব ছোট হওয়ায় জন্যও ক্ষমাপ্রার্থী। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকে পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন। লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here