শ্রাবণের ধারা পর্ব -১০

#শ্রাবণের_ধারা ~(১০ পর্ব)~

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম ~

~দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনে বুঝার চেষ্টা করছি। কন্ঠস্বর চেনা চেনা লাগছে কিন্তু তাও বুঝতে পারছি না ভিতরে কারা রয়েছে। আবার কান পাতলাম সবটা শুনার জন্য।

— কিন্তু কালকে সব সাবধানে করতে হবে। কারো ক্ষ’তি যেন না হয়।

— চিন্তা করিস না। কারো ক্ষ’তি হবে না।

— আজকে একবার যেতে হবে বুঝলি।

— কখন?

— এই তো কিছুক্ষণ পরেই বের হবো। তোকে ফোন দিলে গেটের সামনে চলে আসিস।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপরেই পায়ের আওয়াজ পেলাম, ওরা হয় তো বাইরে আসছে। তাড়াতাড়ি করে দরজা থেকে দূরে সরে সামনে হাঁটা শুরু করলাম। এরমধ্যেই দরজা খুলে দুইজন বাইরে এলো আর সাথে সাথেই শুনতে পেলাম,

— ধারা…….??

নিজের নামটা শুনেই ঠা’স কর দাঁড়িয়ে গেলাম। আজকে আমি শেষ কিন্তু গলার আওয়াজটা এতো পরিচিত লাগছে কেন? ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে তাকালাম। তাকিয়েই দেখি আবির আর রাদিফ দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। রাদিফ একটু স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলো,

— ধারা তুমি এখানে কি করছো?

— আসলে রাদিফ আমি তো..

— আমাদের কথা শুনতে এসেছিলে। (আবির)

— এই এই কি বলতে চাচ্ছো? কে তোমাদের কথা শুনতে এসেছে? আমি লাইব্রেরীর ওইদিকে যাচ্ছিলাম তখন খালি কথাবার্তার শব্দ পেয়েছে।

— আর দাঁড়িয়ে পড়েছো সব শুনতে তাই না? (আবির)

— আবির থাক বাদ দে। (রাদিফ)

— তুই যা এখন। আমি একটু পরে আসছি। (আবির)

রাদিফ একবার আবিরের দিকে তাকালো আবার আমার দিকে তাকালো। তারপর আর কিছুই বললো না চুপচাপ চলে গেল। আমিও সুযোগ বুঝে যেতে নিলাম তখনই আবির পিছন থেকে হাত ধরে নিল।

— পালাচ্ছো কেন? কিছু যখন করনি তাহলে পালানোর কি দরকার?

— আমি আমার কাজে যাচ্ছি। তুমি হাতটা ছাড়ো।

— আর যদি না ছাড়ি?

— আবির আমার কাজ আছে, যেতে দাও আমাকে।

— কি শুনতে পেরেছো?

— কি শুনবো?

আবির সাথে সাথে হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। আবার দূরত্ব কমে গেল সেদিনের মতো। আবিরের চোখগুলো কেমন যেন দেখাচ্ছে। আবির গলার স্বর আগের তুলনায় ভারি করে বললো,

— তুমি কতটুকু শুনেছো আর কি কি শুনেছো আমি জানি না। কিন্তু এই কথাগুলো যেন বাইরে না যায়, বুঝতে পেরেছো?

— আমি.. আমি..

— আমি আমি করা বন্ধ করো। কথাগুলো নিজের মধ্যে রাখতে পারলেই হবে। তোমার উপর বিশ্বাস আছে আমার আশা করি তুমি সেই বিশ্বাস ভাঙবে না।

আমিও মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক বার্তা দিলাম। কারণ মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। আবির আমাকে ছেড়ে দিল তারপর বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করলো। আমি এখনও ওইখানেই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি, আবির আবার ঘুরে তাকালো আর বললো,

— কালকে খুব বেশি দরকার না থাকলে ভার্সিটিতে এসো না বুঝেছো?

— কেন?

— এতো প্রশ্ন পছন্দ না আমার। যা বলেছি তা শুনবা।

এই বলে হনহন করে চলে গেল। যাহ? আমাকে কিছু বলতেও দিল না। কালকে খুব বেশি দরকার না থাকলে যে আসতে মানা করলো, কালকে তো কতো গুলো জরুরি ক্লাস আছে। ওইগুলো তো মিস দেয়া যাবে না। আর কালকে এমন কি আছে? না কালকে আসতেই হচ্ছে।

——————

কানে হেডফোন দিয়ে চুপচাপ বসে আছি বারান্দায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে বরাবরই ভালো লাগে। আশেপাশের চিন্তা বাদ দিয়ে আনমনে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। মনের কথাগুলো মনে মনেই বলে যাচ্ছি। এর মধ্যেই আম্মু কখন এসেছে খেয়াল করিনি। আম্মু এসে আমার কাঁধে হাত রাখলে আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম। আম্মু একটু তাড়া দিয়ে বললো,

— উঠো উঠো তূর্য এসেছে।

— কি!? তূর্য কি করতে এসেছে এখন?

— এসব কোন ধরণের কথা?

— আমি কোথাও যাচ্ছি না ওর সাথে তুমিই কথা বলো।

— আহা ছেলেটা শুধু একটু দেখা করতে এসেছে। তুই এমন করছিস কেন?

— আমি দেখা করতে চাই না তাই।

— দেখ ছেলেটার সাথে একদম অদ্ভুত ব্যবহার করবি না। আমি ওকে ভিতরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

— আম্মু না…. আম্মু…….

কিছু বলবো তার আগেই তূর্য এসে হাজির হলো। ঘরে প্রবেশ করেই অদ্ভুত এক হাসি দিল আর ওকে দেখেই র’ক্ত গরম হয়ে গেল আমার। এই ছেলেটা আজকাল আরো বেশি সহ্য হচ্ছে না আমার। জীবনটাকে ধ্বংস করার জন্য ও একাই যথেষ্ট একদম। তূর্য ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি নিজের স্থান থেকে নড়লাম না পর্যন্ত, ওকে কে ভয় পায় হ্যা?

— কিছু বলবো?

— তোমার কথা কেউ শুনতে চায় না বুঝেছো?

— সারাক্ষণ এমন খিটখিট না করলেও তো পারো ধারা।

— তুমি আমাকে বাধ্য করো এমন করতে, তোমাকে আমার সহ্য হয় না। আবার কেন এসেছো এখানে?

— নিজের হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে।

— বউ? তোমার স্বপ্নে বুঝেছো। তোমার ওইদিনের বলা কথায় আমি মোটেও ভয় পায়নি। তুমি যে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য বাড়িয়ে চাড়িয়ে কথাগুলো বলেছো আমি ভালো মতোই বুঝতে পেরেছি।

— বাহ্ তোমার বুদ্ধি আছে ভালো। তবে আজকে আমি ভয় দেখাতে আসি নাই। অন্য কিছু বলতে এসেছি।

— কি বলবে?

— বিয়ের বিষয়টা আপাতত স্থগিত করতে এসেছি।

— কি? মানে??

— আপাতত এই বিয়ে নিয়ে আলোচনা বন্ধ করতে এসেছি। বাবা আজকাল কেমন টেনশনে থাকে আর আমাকে বিজনেসের হাল ধরতে বলেছে এখনি। বাবার অদ্ভুত ব্যবহারের কারণও বুঝতে পারছি না। তোমাকে এখন বিয়ের বিষয়ে চাপ নিতে হবে না। আমি এই দিক সামাল দিয়ে বিয়ের ব্যাপারটা দেখবো।

— বিয়ের চিন্তা বাদ দিলেই তোমার জন্য ভালো হবে তূর্য। তুমি বরং নিজের জীবন নিয়ে ভাবো আর আমাকে নিজের মতো করে বাঁচতে দাও।

— নিজের জীবন নিয়েই ভাবছি আমি আর তুমি তারই অংশ। তোমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ যখন নেই তখন খালি খালি কষ্ট করবো না। তখর মানে এই না যে তুমি ছাড় পেয়ে যাবে। এই বিয়ে তো হবেই বুঝলে?

— আমি যদি তোমার এই আরেকটা অতি সুন্দর চরিত্র সম্পর্কে আমার বাবা মাকে বলে দেই তখন কি করবে?

— বলবে? বলতেই পারো। তূর্য ভয় পাওয়ার বান্দা না, তুমি ভালো মতোই চেনো আমাকে। তোমাকে তো নিজের করেই ছাড়বো প্রিয়তমা।

কথাগুলো শেষ করেই তূর্য ঘর থেকে বের হয়ে যেতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। আমার দিকে ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে লাগল,

— আবির নামের ছেলেটার থেকে দূরে থাকো।

— ওকে দিয়ে তোমার কি কাজ?

— আমার কাজ তোমাকে দিয়ে আর ওই ছেলে আমার কাজে বাধা দিচ্ছে। ওইদিন বীরপুরুষ সেজেছিল বলে প্রতিবার সেই সুযোগ পাবে না ওকে বলে দিও। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। ওর থেকে দূরে থাকলে তোমার জন্যও ভালো আর ওর জন্যও ভালো। তোমার আশেপাশে থাকি না তার মানে এই না যে কোনো খবর আমার কাছে নেই। আমার কথাগুলো মাথায় নিবে আশা করি, আসছি।

ঘরের থেকে বেরিয়ে গেল তূর্য। কিছুক্ষণ পর দরজা বন্ধ হওয়ার বুঝলাম তূর্য চলে গেছে। তারপরেই আম্মু ঘরে এলো,

— কি রে? তূর্য কি বলে গেল?

— কিছু না।

— এমন কি বললো যে আমাকে বলতে পারছিস না?

— আম্মু এমন বিশেষ কিছু না। তাই এমন করার কিছু নেই। বিয়ের আলোচনা আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে কারণ তৌফিক আংকেলের বিজনেস জয়েন করবে।

— ভালোই তো বাবাকে কি সুন্দর সাহায্য করছে।

— ভালো না তো ছাই…

— কিছু বললি?

— না তো।

———————

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে… ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে মনের আনন্দে গান গাইছে জিনিয়া আর আমি ওর সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছি। একটু রিল্যাক্স লাগছে এখন, বিয়ে নিয়ে অন্তত কিছুদিন তো কথা শুনতে হবে না। এমনিতেও এই বিয়ে করবো না ওমনিতেও করবো না।

— ধারা এই ধারা

— হ্যা বল।

— আজকের দিনটা একদম সেই।

— তুই এতো খুশি কেন?

— খুশির বিষয় দেখেই তো এতো খুশি।

— বিষয়টা কি?

— আমাকে আজ পর্যন্ত কাজিন দের সাথে একা কোথাও যেতে দেই নি জানিস তো। এইবার বললাম ভার্সিটি লাইফ তো শেষের দিকে তো এইবার আমাকে যেতে দাও।

— তারপর??

— তারপর আর কি রাজি হয়ে গেছে!!!

— আসলেই?

— আর নয় তো কি? আমার যে কি খুশি লাগছে কি বলবো তোকে। এইবার ওদের সাথে একটা ট্যুর দিয়েই ছাড়বো।

— ভালোই তো আর কি লাগে তোর।

— সেটাই রে।

নাচতে নাচতে ক্লাসে চলে এলাম দুজনেই। আজকে আবির আর রাদিফ আসেনি। বুঝলাম না ব্যাপারটা, দুজনে যে তলে তলে কি করছো আল্লাহ ভালো জানেন। গতকাল যেভাবে সিরিয়াস মুডে আলোচনা করছিল মনে তো হচ্ছিলো আজকে কি না কি আছে এমন।

চলবে…………………^-^

[লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here