শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব ৯

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে
#পার্ট_৯
#Writer_Liza_moni

বুঝলে প্রিয়,,
তোমাকে আমার অনেক কিছু বলা বাকি। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে সেই অব্যক্ত কথা গুলো বের হচ্ছে না। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে ভিজে ও আমার মনের আগুন নিভাতে পারছি না। আমি কী করে থাকবো ?বলে দাও?

দীপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো কথা গুলো হিতৈষী। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে দুই জন।প্রায় ঘন্টা খানেক হবে বৃষ্টিতে ভিজছে তারা। মনের মধ্যে বিন্দু মাত্র শান্তি নেই।

দীপ্ত হিতৈষীর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,,,
আর কত বৃষ্টিতে ভিজবা?
জ্বর আসবে যে।

হিতৈষী কাটকাট গলায় বললো,,
আসুক।

পাগলামি করে না হিতৈষী।চলো তোমাকে তোমার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।

না। আমি এখন বাড়িতে যাবো না।

তুমি এখন মাইর খাবা কিন্তু।

হিতৈষী দীপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,
হুম মারো না।মেরে আমাকে শেষ করে ফেলো। আমি তো এমনিতেই মরে যাচ্ছি।
.
.
এই দিকে বৃষ্টির জন্য ক্যান্টিন থেকে বের হতে পারছে না, আয়রা,প্রান্ত আর রাহুল।

বলদ মার্কা পোলামান।
এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে কেউ ঘুরতে আসে?
বিরক্ত হয়ে বললো রাহুল।

আয়রা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।আর বাইরের বৃষ্টি দেখছে।

প্রান্তর কোনো ভাবান্তর নেই।সেই মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে।যেনো বহু বছর ধরে সে মোবাইল ধরে ও দেখে নাই।

রাহুল ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,,এই তোমাদের আর আজকে ঘুরা ঘুরি হবে না।সেই কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে। থামার নাম নেই।

এই আয়রা শুনো ,,এমন বৃষ্টির দিনে কেউ ঘুরতে আসে? বৃষ্টির দিন চলে গেলে আসিও। এখন তো বাড়ি ফিরতে হবে।

আয়রা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,,
আমি কিছু বলিনি।আসতে ও চাইনি। আম্মুই তো প্রান্ত ভাইয়ার সাথে আসতে বললো।

প্রান্ত ভাইয়া মানে?

আয়রার হুঁশ আসলো।প্রান্ত কে ভাইয়া বলে ফেলছে সে।
না আসলে উনাকে বিয়ের আগে ভাইয়া ডাকতাম তো তাই মুখ ফসকে ভাইয়া বেরিয়ে গেল।

প্রান্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে বাইরে চলে গেল। আয়রা রাহুল ও গেল পেছন পেছন।

বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়েছে। আয়রা বাইরে এসে প্রান ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। ভেজা মাটির গন্ধ এক অদ্ভুত ভালো লাগে আয়রার।

আর্মিদের ক্যান্টিনের পাশে লাগানো রন্ধন ফুল গুলো কে খুব তরতাজা লাগছে। আয়রা ড্যাব ড্যাব করে সেই ফুল গুলো দেখছে।থোকা থোকা ফুল গুলো বেশ সুন্দর লাগছে আয়রার কাছে।হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ও মন চাইছে।

রাহুল আর প্রান্ত পেছনে তাকিয়ে দেখে আয়রা ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

এই আয়রা।আসো। বৃষ্টি আসবে আবার।

রাহুলের কথায় আয়রা মুচকি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।

রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াল ওরা।প্রান্ত আর আয়রাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো রাহুল।
.
.
বৃষ্টি থেমেছে।চলো বাড়িতে পৌঁছে দি তোমাকে।

হিতৈষী শান্ত চোখে তাকালো দীপ্তর দিকে।আজ চলে গেলে আর কখনো তাদের দেখা হবে না।এমনটাই মনে হচ্ছে হিতৈষীর। কেমন কুঁ গাইছে মনটা।

দীপ্তর মোটর সাইকেল নিয়েই এসে ছিল। এক ভাই তার কাছ থেকে আবার নিয়ে যায়। দীপ্ত পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে মোবাইল ভিজে শেষ।পানি ঢুকে গেছে।

ওহ শিট। তোমার মোবাইল একটু দাও তো হিতৈষী।

হিতৈষীর কাছে ব্যাগ থাকায় ব্যাগ ভিজলে ও মোবাইল ভিজেনি। হিতৈষী চুপচাপ ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দীপ্তর হাতে দিল।

দীপ্ত বাড়িতে ফোন করে বললো,,ওর বাইকটা যেনো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের ওখানে অপেক্ষা করছে সে।

হিতৈষীর গা কাঁপছে ঠান্ডায়। কিছুক্ষণ পর পর হাঁচি দিচ্ছে সে। দীপ্ত হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে বললো,,যাও ভিজো আরো বেশি করে। বলেছিলাম না আমি ঠান্ডা লাগবে।

ঠান্ডা লাগলে আর কিই বা হবে?মরে তো আর যাবো না। মনের যে যন্ত্রনা হচ্ছে তার থেকে জ্বর টর কিছুই বেশি না।

হিতৈষীর কন্ঠে অভিমান। অভিমান করেই বা কি হবে? দীপ্তর জীবন থেকে তো তাকে যেতেই হবে।
.
.
এই যে মিস্টার,,

কী হইছে?আর এই যে শুনছেন,এই যে মিস্টার,,এই সব বলে কেন ডাকছো আমাকে তুমি পিচ্চি?

তো কী আপনাকে নাম ধরে ডাকবো?

ভাইয়া। শুধুই ভাইয়া বলে ডাকবা।

এ্যাঁহ আইছে।ক্রাশ রে নাকি আমি ভাইয়া বলে ডেকে সব পানিতে ডুবাবো। ভাইয়া বলে ডাকার জন্য কি রাহুলের সামনে জামাইয়ের পরিচয় দিছি?
বিড়বিড় করে বললো আয়রা।

কী বিড়বিড় করো,,?
বলতে না বলতে আয়রা গিয়ে পড়লো প্রান্তর ঘাড়ের উপর।গাড়ি মোড় নিচ্ছিলো তখন। আয়রার ঠোঁট গুলো প্রান্তর ঘাড় ছুঁয়ে দেয়।

থমকে যায় প্রান্ত। কেমন জানি অসস্থি লাগছে আয়রার। বাসের ড্রাইবার কে ইচ্ছে মতো মনে মনে ঝাড়লো আয়রা।

প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বললো সরি।

প্রান্ত সাদাসিধে ভাবে বললো কেনো?

তখন এর জন্য।বাস মোড় নিচ্ছিলো,,,তাই,,,, ভুলে,,,সরি,,,

কেন কিছু হয়েছিল নাকি?
ভ্রু কুঁচকে বললো প্রান্ত।

আয়রা আর কথা বাড়ালো না। চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।
ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে।উফফফ,,,,

প্রান্ত মনে মনে শয়তানি হাসলো।
.
.
দীপ্ত আর হিতৈষী কে এক সাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে দীপ্তর ছোট ভাই দীপু বললো,,
মা যদি জানতে পারে তুমি হিতৈষী দিদির সাথে আছো,, তাহলে কি হবে জানো দাদা?

দীপ্ত দীপুর কাছ থেকে বাইকের চাবি নিয়ে দীপুর পিঠ চাপড়ে বললো,, তুই না বললেই হলো।আজ আমাদের শেষ দেখা।এর পর আর আমাদের এক সাথে কখনো দেখবি না।

দীপু আর কিছু বললো না।আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,, দীপ্ত আর হিতৈষীর মনে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

দীপ্ত মোটর সাইকেলে বসে স্টার্ট দিয়ে হিতৈষীর দিকে তাকালো।
আসো।

হিতৈষী গিয়ে বসলো। দীপ্ত বাইক চালিয়ে যাবার সময় দীপুর উদ্দেশ্যে বললো,,,
এত সময় ধরে যা দেখেছিস সব ভুলে গিয়ে বাড়ি যা।
.
.
আঁকা বাকা পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালাচ্ছে দীপ্ত। হিতৈষী দীপ্তর কাঁধে হাত রেখে বসে আছে।

আমাদের কি সত্যি দেখা হবে না আর?

জানি না হিতৈষী। সৃষ্টিকর্তা যদি চান তাহলে হয়তো হবে।

আবারও বৃষ্টি পড়া শুরু করে দিল।
কী অদ্ভুত আজকের দিন। কেমন জানি।

আমি তো বিয়ে করে নিবো। মায়ের জন্য। তুমি বিয়ে করবে কবে?

মন থেকে যে দিন তুমি মুছে যাবে।

দীপ্তর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।প্রিয় মানুষটার মন থেকে মুছে যাবে সে,,
মোড় ঘুরতে গেলেই বাইকটা এক্সিডেন্ট হয়। হিতৈষী বাইক থেকে ছিটকে একটা পাথরের উপর গিয়ে পড়ে। মাথাটা পাথরের উপর পড়তেই রক্তে ভিজে যায় চার দিক। দীপ্তর গায়ের উপর বাইক পড়ে। অনেক কষ্টে বাইকের নিচ থেকে শরীরটাকে বের করে হিতৈষীর কাছে এগিয়ে যায়। বৃষ্টিতে রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে জমা পানি গুলো রক্ত মিশে কেমন জানি হয়ে গেছে।

হিতৈষী ঘোর লাগা চোখে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো।দীপ্তর অবস্থা ও খুব একটা ভালো না। হিতৈষীর প্রান পাখি সেই জায়গায় উড়ে যায়। দীপ্ত হিতৈষীর পাশে এসে জ্ঞান হারায়। বৃষ্টি পড়ছে খুব।ভীজছে আবারো একসাথে দীপ্ত আর হিতৈষী। তফাৎ হলো হিতৈষীর প্রানহীন দেহ ভীজছে আর দীপ্তর জ্ঞানহীন দেহ।
.
.
হঠাৎ করে আয়রার মায়ের বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো। কেমন জানি লাগছে তার।মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। খারাপ কিছু।

তিনি কাঁপা হাতে মোবাইল নিয়ে আয়রার বাবাকে কল করলেন।তার সাথে কথা বলে জানলেন তিনি ঠিক আছে। তারপর আয়রার কাছে কল করলেন,,,

আয়রা জানালো তারা গাড়িতে।ফিরে আসছে। একদম ঠিক আছে।

হিতৈষী কোথায়?ও ঠিক আছে তো?

আয়রার ও কেমন জানি লাগছে।মাকে শান্তনা দিতে বললো,,
হ্যাঁ আপু ঠিক আছে। আমরা আসছি।

আয়রা কল কেটে দিয়ে হিতৈষীকে ফোন করলো। না অনেক বার ফোন করার পর ও হিতৈষী ফোন রিসিভ করে নাই। আয়রার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। হিতৈষী ঠিক আছে তো?মনটা কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে।

আয়রার কথা শুনে ও শান্তি লাগছে না আয়রার মায়ের। আয়জার মৃত্যুর পর হিতৈষীকে আয়জার মত করে ভালোবাসেন তারা। মেয়ে টা ঠিক আছে তো?

চলবে,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here