শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব ১

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Liza_moni

সাদা রঙের ড্রেস পরে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও কী আপনার বিবেককে বাঁধছে না মিস চাশমিস? আপনি কি নিজেকে বলিউডের নায়িকা মনে করেন? নিজের শরীরের ভাঁজ দেখিয়ে ফেমাস হতে চান?

কারো রাগী স্বরে বলা কথাটা শুনে পেছনে ফিরে তাকায় আয়রা।
অচেনা একটা ছেলে। পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে অন্য হাতে ছাতা ধরে আছে। কাঁধে ব্যাগ।টি শার্টের গলার কাছে কালো রঙের সান গ্লাস আটকানো। সাদা টি শার্টের উপরে কালো জ্যাকেট। ঠোঁট গুলো গোলাপি।আয়রা ছেলে টাকে দেখে ভয়ানক একটা বাঁশ খেলো। মানে যাকে বলে ক্রাশ।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে এগিয়ে এলো।
আপনি তো হাই লেভেলের অসভ্য মেয়ে। কানে কথা যায় না?
ছেলেদের কে ইমপ্রেস করার জন্য এই ভাবে রাস্তায় সেটাও কিনা আবার পাবলিক প্লেসে,,, সাদা জামা পড়ে ভীজছেন?

আয়রা ছেলে টাকে দেখে ক্রাশ খাইলেও এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য ছেলে এই ছেলে। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে।

“শ্রাবণের দিন।যখন তখন বৃষ্টি পড়ছে। এই আকাশ থম মেরে আছে তো এই ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি পড়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরছিল আয়রা।পরনে তার সাদা রঙের কলেজ ড্রেস। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে বাড়িতে ফিরছিল। তখন আকাশে ঘন কালো মেঘ থাকলে ও বৃষ্টি পড়েনি।
কলেজ ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তার গলিতে ঢুকার পর আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি আসে।
ছাতা নিতে একদম ভুলে গিয়েছিল আয়রা। চার পাশের দোকান পাটে মানুষের কলোহল। বৃষ্টির জন্য সবাই দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।সব পুরুষ।এই বৃষ্টির দিনে কোনো মেয়ে বা মহিলাকে চোখে না পড়ায় আয়রা আর দোকানের ভেতরে গেলো না। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে লাগলো।”
.
.
আপনার ছাতা কোথায়?

আয়রা শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল আনি নাই। ভুলে গেছিলাম আনতে।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে এগিয়ে এলো।৫ সেকেন্ড আয়রার দিকে তাকিয়ে থাকার পর ঠাসসস করে এক চড় বসিয়ে দিল আয়রার গালে।

আয়রা তাজ্জব বনে গেল।গালটা পুরো জ্বলে যাচ্ছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। হতভম্ব হয়ে আয়রা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা আয়রার সাইড ব্যাগের ভেতর থেকে উঁকি দেওয়া ছাতার মাথাটা ধরে বের করে আয়রার দিকে ধরলো।
ছাতাটা দেখে আয়রা বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকালো।

তার স্পষ্ট মনে আছে সে ছাতা নিতে ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু এই ছাতা ব্যাগের ভেতর আসলো কখন?

ছেলেটা আয়রার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,
আপনাকে চড়টা মেরেছি কারন আমার মিথ্যা কথা একদম সহ্য হয় না।আর এটা আপনার প্রাপ্য ছিল।
ভুলে যাবেন না আপনি একজন মেয়ে।

ছেলেটা চার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারো আয়রার দিকে তাকালো। তারপর বললো,,
চার দিকে একটু তাকিয়ে দেখেন,, বিশেষ করে ঐ ছেলে গুলোর দিকে। ওরা আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আপনি একবার আপনার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো আপনার নিজের নিজেকে এই ভাবে দেখতে ইচ্ছে করবে নাকি?

আয়রা কিছু বললো না। অপমান বোধ হচ্ছে ভীষণ। দোকানের সব মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনো ঝুম বৃষ্টি পড়ছে।

ছেলেটা নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আয়রার হাতে দিয়ে বললো,, পড়ুন এটা।
আপনার নিজের দোষে আপনি এই সব ছেলের চোখ দ্বারা ধর্ষণ হচ্ছেন।

ধর্ষণ শব্দ টা কানে যেতেই আয়রার কলিজা কেঁপে উঠলো। তার থেকে ও বেশী রাগ হলো ছেলেটার উপর।
এই শব্দ টা একদম সহ্য হয় না আয়রার। ভীষণ কষ্ট হয় ওর।

ছেলেটা চোখে সান গ্লাস লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে আয়রার উদ্দেশ্য বললো,,
জ্যাকেটা ফেলে দেওয়ার চিন্তা ও করবেন না।গায়ে জড়িয়ে নিন।
ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আয়রা হাতের জ্যাকেটের দিকে তাকালো।
নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আয়রা থ হয়ে গেল। সাদা জামাটা প্রায় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।
সব অসস্থি এসে ঘেরাও করে আয়রাকে।

জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে বাড়ির পথে হাটা শুরু করে। সারাটা সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মাথায় ঘুরপাক খায় তার।
.
.
বাড়ির গেটের সামনে এসে মা আছে নাকি দেখতে বাড়ির মেইন দরজার দিকে উঁকি দেয়। মায়ের সামনে কখনো এই অবস্থায় যাওয়া যাবে না। তাহলে থাপড়াবে শুধু।

গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাড়ির দরজার দিকে উঁকি দিতেই আয়রার চোখ চড়কগাছ। সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

আয়রা নিজের বুকে থু থু দিয়ে চোখ ডলে ভালো করে দেখলো না সত্যি সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।

এই লোকটা আমাদের বাড়িতে কেন আসছে? আল্লাহ জানে,,,

আয়রা আবারো উঁকি দিয়ে দেখে,, তার মা ছেলেটার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।যেনো কত পরিচিত।

তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলে আয়রা ও গেটের ভেতরে ঢুকে মেইন দরজার দিকে এগিয়ে যায়।ড্রইং রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ছেলেটা সোফায় বসে আছে। হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে।মা নেই কোথাও।

আয়রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কলেজের কেটেস গুলো খুলে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো,,
আপনি আমাদের বাড়িতে কী করেন?

ছেলেটা চোখ উপরে তুলে আয়রা দেখে অবাক হলো। আপনি কি করেন এখানে?

আজব তো মশাই। আমার বাড়িতে আমি থাকবো না তো কি আপনি থাকবেন?

রান্না ঘর থেকে আয়রার মা আসতে আসতে বললো,, আয়রা এসেছিস?

মাকে এদিকে আসতে দেখে আয়রা দিল নিজের রুমে দৌড়। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। জোর বাঁচা বেঁচে গেছি।
এখন যদি দেখতো আমার গায়ে কোনো ছেলের জ্যাকেট নির্ঘাত উরা ধুরা থাপড়াইতো।

.
ছেলেটা সোফায় বসে আয়রার চলে যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তার বোধগম্য হলো না আয়রা কেন দৌড় দিল।

আয়রার মা এক কাপ কফি নিয়ে এসে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ বলে কফিটা হাতে নিলো।

আয়রার মা বলে উঠলো,,
তোমার মায়ের সাথে আমার সকালে কথা হয়েছিল।বলে ছিল তোমার ব্যাপারে। আমি তোমার জন্য আমাদের উপরের তলায় ঘর খালি করে দিয়েছি।যদি ও আমি আর তোমার আঙ্কেল কোনো ব্যাচেলার ছেলে কে বাড়ি ভাড়া দিই না। তোমার মা যেহেতু আমার কলেজ ফ্রেন্ড তাই অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে তোমার আঙ্কেল কে রাজি করিয়েছি।

ছেলেটা প্রতি উত্তরে হাসলো। তার পর বললো,, আমি বান্দরবান আছি মাত্র দুই মাস। খুব একটা প্রয়োজন ছিল বিধায় আমি এখানে আসছি। দুই মাস পর কাজ শেষে চলে যাবো।

তোমার নামটাই তো জানা হলো না।কী নাম তোমার?

আদনান প্রান্ত।

বাহ্ সুন্দর নাম। আচ্ছা তুমি কিছুক্ষণ এখানে বসো আমি চুলার উপর থেকে তরকারি নামিয়ে তোমাকে উপরের রুম দেখিয়ে দিবো।
বলেই আয়রার মা চলে গেলেন রান্নাঘরে।

প্রান্ত সোফায় পা ভাঁজ করে বসে মোবাইল নিয়ে মায়ের নাম্বারে কল দিলো,,,

মা আমি বাড়ি খুঁজে পেয়েছি।

আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস। রাত করে আবার বাড়ি ফিরিস না। পাহাড়ি এলাকা।ওটা তোর ফেনী শহর না।আর অন্যের বাড়িতে থাকবি দুই মাস তো একটু সাবধানে থাকিস। তোর ঘুরা ঘুরি শেষ হলে আসার জন্য যেন বলতে না হয়।

প্রান্ত হাসলো মায়ের কথায়।
চিন্তা কইরো না। তোমার সব কথা শুনে চলবো।
.
.
আয়রা রুমে গিয়ে কাভার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।

ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ডান গালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো। লাল হয়ে আছে এখনো।কী জোরে চড় মেরেছে এই লোক।খবিস পোলা। তোর কোনো দিন ও বিয়ে হবে না দেখিস।
.
.
পর পর চার বার কলিং বেল বেজে উঠলো। কাউকে আসতে না দেখে প্রান্ত গিয়ে দরজা খুলে দিল। সামনে তাকাতেই নিজের কয়েকটা হার্ট বিট মিস করলো প্রান্ত।

“কালো রঙের মসলিন শাড়ি পরা , দুই হাত ভর্তি কালো রঙের কাঁচের চুড়ির ঝন ঝন শব্দ। কপালে একটা কালো টিপ। চোখে গাঢ় কাজল। কোমর অবধি ছড়িয়ে পড়া সিল্কি চুল। কানের মধ্যে কালো পাথরের ঝুমকা। কানের উপরে চুলের মধ্যে গুঁজে রাখা ভেজা কালো গোলাপ। পাতলা গোলাপী ঠোঁট জোড়ায় বিন্দু বিন্দু পানি। মেয়েটা ছাতার পানি ঝাড়ছে।”

হলদেটে ফর্সা গায়ের রং মেয়েটার। মুখের মধ্যে পাহাড়ি কন্যাদের মত আমার।হয় তো পাহাড়ি এলাকায় থাকে বলে।

প্রান্ত কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,
আপনি কে? আগে কখনো দেখেনি তো আপনাকে?

প্রান্ত সোফায় এসে বসলো আবার। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।

আয়রার মা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলেন,,,
ও আমাদের বাড়ির দুই মাসের ভাড়াটিয়া।

চলবে,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here