সখি ভালোবাসা কারে কয় পর্ব -১০

#গল্প
#সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব-৯
কানিজ ফাতেমা

খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নিজের লাগেজগুলো আর একবার খুলে দেখে নিলাম প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়েছি কি না? এর মধ্যে আম্মু আমার ঘরের দরজায় এসে নিধি বলে ডাকতেই এসে দরজা খুলে দিলাম। আম্মু ভিতরে এসেই বলল- “বড়চাচাদের বাড়িতে সবার নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে। তোর বড়চাচা গতরাতে বড়খালুকে ফোন দিয়ে বলেছেন- মিথিলারাও আজই ঢাকাতে যাবে তারপর ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে।আর যেহেতু তুইও আজই যেতে চেয়েছিস তাই আজ সকালে সবাই একসাথে বড়চাচাদের বাড়িতে নাস্তা শেষে একসাথেই রওনা করবে।
আর তোর বড়খালু সে কথা শুনে মিথিলা আর শোয়েবকে তোদের সাথেই যাবার কথা বলেছেন।”
“তাই তোর বাবা আমাকে সকাল সকাল মিথিলাদের বাড়িতে যেতে বললেন। তুই তোর সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে নিস মা। আমি একটু পরেই আসছি”-বলে আম্মু দরজার সামনে থেকে চলে গেলে আমি নিঃশব্দে বিছানায় এসে বসে পড়লাম। সবকিছু কেমন অন্যরকম লাগছে, নিজেদের বাড়ি তবুও কেমন যেন দুই দিনেই নিজেকে বাইরের কেউ মনে হচ্ছে ভেবে কিছুই ভালো লাগছে না আমার।

এদিকে দেখতে দেখতে সকাল নয়টা বেজে গেলো।এর মধ্যে নির্ঝর ভাইয়ার চিৎকার শুনতে পেলাম কাকে যেন বলছে বড়খালুদের প্রিমিও কার গাড়ির সাথে একটা মাইক্রবাসও ভাড়া করেছে।একে একে সব লাগেজ উঠাতে বলল কেউ একজনকে। আমার বাইরে বেরিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো না। এর মধ্যে বাসার সবাই রেডি হয়ে মিথিলা আপুদের বাসায় যাওয়ার সময় বড়খালামনি আমাকে ডাকতে আসলে বললাম -“আমি যাবো না খালামনি।”
আমার না শুনে বড়খালামনি বলল -“তাহলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পড় আমরা মিথিলাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। বাইরে যে গরম পড়েছে সকাল সকাল রওনা দিতে হবে”- বলে বড় খালামনি দরজার সামনে থেকে চলে গেলো আর আমি বাসায় একাই থেকে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কলাপাতা রঙের সুতির থ্রিপিসটা পরে তৈরী হয়ে ছিলাম যেনো ডাকলেই চলে যেতে পারি।

এর মধ্যে হঠাৎ শুভ হুট করে ঘরে ঢুকতেই কেমন যেন চমকে উঠলাম আমি। যদিও শুভ আমার চোখে দোষী তারপরও নিজেকেও কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে এই ভেবে বিয়ের দিন কেনো এভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারিনি যে আমি এক্ষুণি কাউকে বিয়ে করতে চাই না। তখন সাহস দেখালে আজ হয়তে শুভকেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। কিন্তু এখন এসব ভেবে কোনো লাভ নেই। যে কারণেই বিয়েটা হোক তার ফল এখন দুজনকেই ভোগ করতে হবে।
যাই হোক, শুভ ঘরে ঢুকেই সামনে রাখা লাগেজ দুটি দেখিয়ে বলল এই দুটি কি গাড়িতে ওঠাতে হবে?
খুব শান্তভাবে বললাম -হুম।

শুভ দুই হাতে লাগেজ দুটি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েই বলল- “আজ রাতটা হয়তো তোমাকে আমাদের বাসায় গিয়ে থাকতে হবে। কারণ মিথিলা আপুরাও আজ আমাদের বাসাতে গিয়ে থাকবে কাল সকালে কক্সবাজার যাবে।”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ শুভর দিকে তাকিয়ে দেখলাম চেহারাটা কেমন থমথমে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে। এক পলকে কেমন মায়া লাগলো পর মুহুর্তেই মনে হলো “মন খারাপ থাকুক আমার কি? আমারও কি কম খারাপ লাগছে। এই একটা সিদ্ধান্তের জন্য বাবা-মা, ভাইয়া সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে। কিন্তু আমার তো কোনো দোষ ছিল না, সব কিছুর জন্য শুভ নিজেই দায়ী”- বসে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই শুভ সামনে থেকে চলে গেলে বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা কলাপাতা রঙের জরজেটের ওড়নাটা মাথায় দিয়ে হাত ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে দেখে নিলাম সব ঠিক আছে কি না।

এর মধ্যে বড়চাচার বাড়ি থেকে বড় খালামনি ও আম্মু ফিরে এসে সবকিছু গাড়িতে তোলা হয়েছে কিনা দেখতে আমার ঘরে এসেই বড়খালামনি আমায় দেখে হেসে বলল- “এই নাজমা আমার ছেলের নতুন বৌয়ের কান্ড দেখেছিস? কোথায় নতুন বৌ শাড়ি গহনা পরে সেজেগুজে তৈরী হবে, দেখ কি পরেছে” বলে হেসে আম্মুকে ডাকতেই, আম্মু ঘরে এসে কিছুটা ভয় জড়ানো হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- “শাড়ি পরিসনি কেনো নিধি? তাড়াতাড়ি চল ওদিকে সবাই রেডি হয়ে গেছে। নতুন মেরুন বেনারসিটা কোথায় রেখেছিস তাড়াতাড়ি বের কর পরিয়ে দেই” – আমাকে কথাগুলে বলেই বড় খালামনির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল -“আমারও ভুল হয়ে গেছে বড় আপা। মিথিলাদের বাড়ি গিয়ে বসে আছি, মনেও নেই যে নিধি একা এসব ভারি শাড়ি পরতে পারবে না। মীরাকে পাঠিয়ে দিলেও পারতাম“- কথাগুলো বলতে বলতে দ্রুত কাঠের আলমিরাটা খুলে মেরুন বেনারসিটা বের করলো আম্মু। শাড়িটা অনেক আগে কোনো এক ঈদে বাবা কিনে এনেছিল আমার জন্য কখনো পরা হয়নি।

বড় খালামনি হেসে বলল “দেখেছিস নিধি তোর আম্মু মেয়ে বিয়ে দিয়ে আমাকে কেমন বেয়ান ভাবতে শুরু করেছে। কত হিসাব করে কথা বলছে।”
বড়খালামনির কথা শুনে আম্মু খুব সমীহ করে হেসে বলল-“বেয়ানই তো, আমার একটামাত্র মেয়ের শাশুড়ি তুমি। বড়আপা বলো আর বেয়াইন বলো এখন তুমিই সব। আমার মেয়েকে তোমার কাছে কাছে রেখো বড় আপা”-বলেই কেঁদে ফললো আম্মু।
“এই নাজমা তুই কি পাগল হয়ে গেলি? আমি আগে নিধির বড়খালামনি তারপর শাশুড়ি বুঝতে পেরেছিস? এবার চোখ মুছ তো পাগলি”-বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে আম্মুর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল- “দেখি তুই আমাকে দেখতে দে বলে আলমিরার সামনে দাঁড়িয়ে একটা লাল রঙের সাথে জড়ির পাড়ওয়ালা জামদানি বের করে বলল -“দেখতো নিধি এই জামদানিটা পরলে কি জার্নি করতে কষ্ট হবে তোর?”

“না না বড়আপা, নতুন বৌ লাল রঙেই বেশি মানাবে, এই শাড়িটাই দাও আমি তাড়াতাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি”-বলে বড়খালামনির হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে ম্যাচিং ব্লাউজ পেটিকোট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল -“যা তো নিধি তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরে আয়, আমি আমার ঘর থেকে আসছি”- বলে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো আম্মু।
বড়খালামনি বিরক্তি দেখিয়ে বলল -“তোর মা কাজ করতে করতেই একদিন শেষ হয়ে যাবে দেখবি, একটুও বিশ্রাম নেয় না । কদিন এসে একবারও দেখলাম না একটু বসে বিশ্রাম নিল। যাক, যা করে করুক আয় তো নিধি আমিই তোকে শাড়িটা পরিয়ে দিই” -বলে আমাকে শাড়িটা পরতে সাহায্য করতে লাগলো।
আম্মু কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আমার ঘরে ফিরে এলো একটা কালো চামড়ার ব্যাগ হাতে নিয়ে।এসেই হাসি মুখে বলল -“বড়আপা এই ব্যাগটা ধরো।”
“কি আছে ব্যাগের মধ্যে নাজমা?”- বড় খালামনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো?
চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here