সবটাই_তুমিময় পর্ব ১২+১৩

#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১২

-প্লিজ অদ্রি।কল কেটো না।প্লিজ?এতোরাতে তোমার মনিমা ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো।ডোরবেল বাজিয়ে ডিস্টার্ব করতে চাইনা তাকে।তুমি শুধু ব্যালকনির দরজাটা খোলো।জাস্ট দু মিনিট নেবো।টু মিনিটস্!আই প্রমিস!প্লিজ?প্লিজ অদ্রি?

ফোনটা কানে নিয়ে শ্বাস আটকে দাড়িয়ে রইলাম।এভাবে আমার বারান্দার দরজা খুলতে বলছেন কেনো অঙ্কুর?তবে কি উনি এসেছেন?কেনো?এমন অসহায়ের মতোই বা করছেন কেনো উনি?এতো আকুতি কিসের ওনার?

-অদ্রি প্লিজ!প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর!প্লিজ!আমি….

-খুলছি।

কোনো ভনিতা না করেই এটুক বলে ফোন ছেড়ে ব্যালকনির দরজা খুললাম।ভালো লাগছিলো না তার নাটকীয় কথা শুনতে।দরজা খুলে কিঞ্চিত হতবাক না হয়ে পারলাম না।একদম এলোমেলোভাবে অঙ্কুর দরজায় দাড়িয়ে।সত্যিই এসেছেন উনি।চুল,শার্টের হাত,বোতাম সব অগোছালো।দরজা খোলা পেতেই হাসি ফুটলো তার মুখে।ভেতরে ঢুকেই জাপটে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে আমার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলেন উনি।তার হৃদস্পন্দনের আওয়াজ এতোটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি যেনো বুকের ভেতরটাতে মিশিয়ে নিয়েছেন আমাকে।খুব বেশিক্ষন সময় না নিয়ে ছেড়ে দিয়ে দুগাল ধরে বললেন,

-বলেছি দু মিনিট সময় নেবো।ইটস্ ওয়ান এন্ড হাফ।বাকি ত্রিশ সেকেন্ডস্ শুধু দেখবো তোমাকে।

বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম তারদিক।ঠোটে তৃপ্তির হাসি তার।ভ্রুর পাশের তিলটায় চোখ আটকে গেলো আমার।উনি এগিয়ে আমার কপালে ঠোট ছোয়ালেন।চমকে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।হাতে থাকা ঘড়িটা বিপ শব্দ করতেই আমাকে ছেড়ে বারান্দার দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন অঙ্কুর।তার এ হেন কাজে আটকে ছিলাম অনেকক্ষন।ধুকতে ধুকতে বিছানায় এসে বসলাম অনেকটা সময় পর।কি ঘটেছে তা মস্তিষ্ক স্পষ্টভাবে জানান দিতেই টুপ করে দুফোটা নোনাজল বেরিয়ে এলো।

উনি বলেছিলেন,জোর করবেন না আমাকে।তা বলে এভাবে এতোরাতে বারান্দা টপকে দেখা করতে এসে কি বোঝাতে চান উনি?আমাকে মিস করছিলেন?উনি আমার প্রতি দুর্বল?যাতে আমিও তার প্রতি,তার স্পর্শে দুর্বল হয়ে পরি?তারপর যেনো তার কথায় সম্মত হই?এতোটা ঘৃন্য পরিকল্পনা তার?

নাক টেনে হাতের পিঠে চোখের পানি মুছে ফেললাম।যদি তাই হয়ে থাকে,তবে আপনাকে আমিও বোঝাবো অঙ্কুর,আপনি সার্থক।আপনার সব চেষ্টা সার্থক।আমিও দেখবো,আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি আমি।স্বীকার করে নেবো আপনার স্বামীত্ব।যা আপনি চাইছেন তাই হবে।জোর করতে হবে না আপনাকে।কিন্তু পরিশেষে?পরিশেষে সবটার দাম দিতে হবে আপনাকে অঙ্কুর।আমার সবটা শেষ করে দিয়ে হলেও আপনাকে আমি এক্সপোজ করবো মিস্টার এএসএ!করবোই!

.

সকালে এলোমেলোভাবে আমার রুমেই খুজে পেলাম নিজেকে।চটজলদি উঠে আগে মনিমাকে ঘুমন্ত দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।ফ্রেশ হয়ে মনিমাকেও ডেকে দিয়েছি।ডোরবেল বাজতেই খুলে দিলাম দরজা।তানহা সকাল সকাল খাবার প্যাক করে গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।সোজা ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বললো,

-আন্নু?ভার্সিটি যাবি তো?

-হুম।কিন্তু আগে তুই এটা বল এইসব খাবারদাবার…..

-আমি আনবোই!জানিস তো এটা তুই আন্নু!তবুও এটা নিয়ে আরেকটা কথা বলবি তো বেরিয়ে যাবো!

হতাশার শ্বাসত্যাগ করলাম।মনিমা এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,

-তান্নু?আজ বিকেলে আর খাবার আনিস না তুই।আমি তো ঠিকাছি।কিচেনে যেতে পারবো।

-হ্যাঁ।যাবে তো কিচেনে।তবে আরো দুটো দিন পর!

-কিন্তু আমি এখন ঠিকাছি তো!

-তবুও যাবে না তুমি কিচেনে!

-ওভাবে বলিস না তান্নু।কতোদিন আন্নুকে রান্না করে খাওয়াই না!আমার ভালো লাগছে না এমন!

তানহা আমার দিকে তাকালো।আমি মাথা নেড়ে বোঝালাম মনিমার কথা মেনে নিতে।ও গাল ফুলিয়ে বললো,

-আচ্ছা বেশ!রেধে খাইয়ো তোমার আন্নুকে!তান্নু তো ভাসমান,ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না!

মনিমা উঠে ওর থুতনি ধরে বললো,

-ওমা।তুই অভিমানও করতে পারিস?আচ্ছা!তাহলে অভিমান ভাঙানোর জন্য স্পেশাল ম্যাকারনি খাওয়াবো।চলবে?

তানহা খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো মনিমাকে।উৎফুল্লভাবে বললো,

-আরেহ্!দৌড়াবে বস!

হাসিখুশিভাবে ব্রেকফাস্ট শেষ করে ভার্সিটির জন্য তানহার গাড়িতেই বেরোলাম।গাড়ি থেকে নেমে দেখি আস্থা গাদা ফুলের মালা হাতে গেইটে দাড়িয়ে।কপাল কুচকে এগোলাম ওর দিকে।ও দাত কেলিয়ে মালাটা আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো,

-ওয়েলকাম বেব!

-এসব কি আস্থা?

-ইয়ে আন্নু?এএসএকে….

অঙ্কুরের নাম শুনতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার।মালাটা খুলে ফেলতে যাবো আস্থা আটকে দিলো।তারপর সেই সুর তুলেই বললো,

-আরে আরে,করছিস কি?আ’ম জোওওওওকিং!এতোদিন পর ভার্সিটি আসলি,এজন্যই মালা পরিয়েছি ইয়ার!তাছাড়া এমন করছি যেনো মালার বিনিময়ে তোর বরকেই চেয়ে বসবো!

তানহা বললো,

-চাইতেও পারিস।চারদিন হলো সিঙ্গেল কিনা!

-ঠিক বলেছিস।জাস্ট পারছি না ইয়ার!এমন মনে হচ্ছে যেনো এই হাইফাই লুকেও কয় জন্ম ধরে মুরগী পটছে না!মানে এইটা সহ্য হয়?

-মুরগীকে মানুষ ভাবতে শেষ,তাহলেই পটবে।ইনফ্যাক্ট মাথায় করে রাখবে।

-অ!আচ্চা!তারপর???

এবার আমিই তানহাকে ধমকে বললাম,

-স্টপ ইট তান্নু!ভেতরে চল!

-আমাকে কেনো বলছিস?শুরু তো করলো পাস্তা!

আস্থা বললো,

-ও কি বলবে রে আমাকে?ও মরছে ওর মরমে!বেচারী বিয়ে করে বাসর ছেড়ে মাতৃসেবায় নিয়োজিত।আয় হায়,বাসরটা কি বারবার আসে?

কিছুটা জোরেই বলে উঠলাম,

-এইসব বিয়ে বাসর নিয়ে কথা বলার হলে বল তোরা।আমি আসছি।বাসায় যাবো!

আস্থা একটু অবাক হয়ে তাকালো।ওকে চিনি বলে ওর কথায় রিয়্যাক্টগুলোও মজার ছলেই দেই আমরা।কিন্তু আজকে‌ হয়তো বেশিই বলে ফেললাম।গলা নামিয়ে আবারো বললাম,

-আস্থা,আমি….

-চল ভেতরে!

ও ভেতরে পা‌ বাড়ালো।হাত টেনে ধরে জরিয়ে ধরলাম ওকে।দোষটা তো ওকে দেওয়া চলে না।এক বান্ধবীর স্বাভাবিক নিয়মে বিয়ে হলে বাকি বান্ধবীরা স্বাভাবিকভাবে লেগপুল করতে আসবেই।কিন্তু আমার তো না বিয়েটা স্বাভাবিক ছিলো,না বর নামক লোকটা।তাহলে তোর এই ব্যবহার কি করে মানবো আমি আস্থা?কি করে?তাই ওমন ব্যবহার করে ফেলেছি।আস্তেধীরে বললাম,

-মনিমার অসুস্থ্যতার জন্য কি বলছি,কি করছি কিছুই মাথায় ঢুকছে না আস্থা।আ’ম সরি।মাফ করে দে!

-তাহলে বল আমার এই সেমিস্টারের সব এসাইনমেন্ট তুই লিখে দিবি?

ওকে ছেড়ে চোখ বড়বড় করে তাকালাম ওর দিকে।আস্থা হেসে দিয়ে বললো,

-আ’ম জোওওওকিং!

ওর হাসিটা দেখেই সব খারাপ লাগা শেষ হয়ে গেলো।আবারো জরিয়ে ধরলাম ওকে।তানহাও পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।আস্থা‌ বললো,

-আজকে কোনো হাগ ডে না!ছাড় আমাকে!লজ্জা তোদের নেই,আমার আছে তো!

ওকে ছেড়ে চুল টেনে দিয়ে তিনজন একসাথে হাসিখুশিভাবে ভেতরে ঢুকলাম।তিহান আসেনি ভার্সিটিতে।ক্লাস শেষে তানহার গাড়ি করে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম আঙ্কেলকে দেখতে।ওর পরিবারে ওর বাবা,মা আর একটা নাইনে পড়ুয়া,ওরই মতো ব্রিলিয়ান্ট ছোটবোন।আঙ্কেল স্কুলমাস্টার ছিলেন।তার পেনশন আর তিহানের টিউশনির টাকায় ওদের সংসার চলে।বাকিসব স্বাভাবিক থাকলেও,আমরা যতোক্ষন ছিলাম,পুরোটা সময় চুপচাপ ঠোটে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে বসে ছিলো তিহান।তবে যে কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে,শুধু ঠোটের ওই হাসিটা নয়,তারসাথে ওর জল ভরা চোখটাও দেখেছি।

_____________

দুদিন হয়ে গেলো।তিহান এ দুদিনে ভার্সিটি আসে নি।তানহা নিজের বাসা থেকে গাড়ি নিয়েই আসে।আর আমি রিকশা করে।তবে সবসময় মনে হতো কেউ পিছু করছে আমার।খুজেছি তাকে।কিন্তু প্রতিবারই সেটা মনোভ্রম প্রমানিত হয়েছে।দুক্লাস শেষে মাঠেই বসে ছিলাম তানহা,আমি আর আস্থা।অনেকক্ষন যাবত তিনজনের নিরবতা বলে দিচ্ছে মনটা কারোরই ভালো নেই।একসময় আস্থা বলে উঠলো,

-ওই গর্দভটা পড়াশোনা বাদ দিলো নাকি?

তানহা বললো,

-ওর মতো একবার রেজাল্ট করে তারপর ওকে গর্দভ বলতে আসিস।

-ওয়াহ্!রাব নে বানা দি জোডি!ও গর্দভ,আর তুইও প্রমান করে দিলি,তুই ওই গর্দভের গাধী!আমি কি ওর রেজাল্টের জন্য ওকে গর্দভ বলি?ওর কাজকর্মের জন্য ওকে গর্দভ বলি।গাধা একটা!জল তো ঘোলা করে খাবেই!আর সেই জলে তুইও ডুবছিস!

-থামবি তুই?

-হ্যাঁ হ্যাঁ।থামছি।ভুলেই গেছিলাম,তোর তো আবার ওর বিরুদ্ধে কিছু সয় না!আই ওয়াজ জোওওওকিং!এবার ঠিকাছে?

এরমধ্যে তিহান এসে আস্থা তানহার মাঝে কিছুটা পিছনে বসলো।ঘামে ভিজে থাকা কপালটা বৃদ্ধাঙ্গুলে মুছতে লাগলো ও।ও বরাবরই আমার আর আস্থার পিছনে বসতো।তানহা কতোবার বলেছে আমাকে,তিহান নাকি ওভাবে পিছনে বসে নিরবে শুধু আমার চুল দেখে দেখে আড্ডার সময় পার করে দিতো।আজ তানহার পিছনে বসেছে বলে শত মন খারাপের ভীড়েও মন ভালো হয়ে গেলো আমার।হাসিমুখে বললাম,

-আঙ্কেল কেমন আছে তিহান?

না তাকিয়ে ওর হাতের একটা ফাইল খুলে দেখতে দেখতে বললো,

-আগের চেয়ে বেটার।

তানহা বললো,

-এ দুইদিন ভার্সিটি আসলি না যে?

-কাজ ছিলো।

আস্থা বললো,

-আজ এলি তো এলি গর্দভের মতো দুপুরে দু ক্লাস পরে কেনো?

-ক্লাস করবো না।একটা ইন্টারভিউ আছে।ওখানেই যাবো।

সবাই আবারো চুপচাপ হয়ে গেলো।তিহান ফাইল দেখতে দেখতে বললো,

-তা সদ্য বিবাহিত মিসেস আরিয়ান সার্ফরাজ অঙ্কুর তার আলিশান শশুড়বাড়ি ছেড়ে এখনো মনিমার বাসায় কেনো?

ভ্রুকুচকে তাকালাম ওর দিকে।কথাটা বলেও কোনোদিক পাত্তা নেই ওর।বললাম,

-মনিমা অসুস্থ্য।তাই উনিই বলেছেন মনিমার কাছে থাকতে।

-ও।বুঝলাম।তা আমাদেরকে কেনো মানা করলো তোদের বিয়ের বিষয়টা পাব্লিক না করতে?

তানহা বললো,

-একই কারন।এখন সবাই জানলে প্রেস মিডিয়ার চাপে আন্নুকে নিয়ে যেতে হবে তাকে তাইনা?

তিহান তাকালো তানহার দিকে।আর কিছু বললো না।ফাইলে মনোযোগ দিলো ও।আস্থা বললো,

-তিহান?একটা হেল্প করবি?

তিহান চুপ।আস্থার হেল্প করা মানে ঠিক কি তা জানে ও।এসব কথার জন্যই ওকে পছন্দ করে না ও।আস্থা আবারো বললো,

-কিরে?বলনা!করবি হেল্প?তোর এই মিস ওয়ার্ল্ড বান্ধবীটা আর কতোদিন সিঙ্গেল থাকবে বল?

…..

-কিরে?কি বললাম তোকে?দেখনা!আমার জন্য একটা ছেলে দেখনা!প্রেম করায়া দে না ভাই!তোর নজরে আছে কোনো ছেলে?

তিহান ফাইল থেকে চোখ তুলে বললো,

-আছে।আমার নজরে আছে একজন।

তিনজনই অবাক হলাম।এসবে থাকার মতো ছেলে ও নয় আমরা জানি তা।তাহলে এ কথা বললো কেনো?আস্থা চকচকে চোখে উৎসাহ নিয়ে বললো,

-কে ভাই?অতপর আমার আবারো প্রেম হবে?আমিও রিলেশনে যাবো?আবার আমার মুড সু…..

-আমার নজরে এএসএ আছে আস্থা।আন্নুর সাথে ওর বিয়েটা হয়ে গেছে।ও যতোবড় ক্রিকেটারই হোক না কেনো,আন্নুর চোখের জলের কারন ও হলে,আমি ওকে ছাড়বো না!কোনোভাবেই না!

পুরো কথাটা আমার দিকে তাকিয়েই বললো ও।তানহার দিকে তাকালাম।ঘাস ছিড়তে ছিড়তে অদ্ভুতভাবে হাসছে ও।রাগে উঠে দাড়িয়ে গেলাম আমি।জোরেসোরে বললাম,

-স্টে ইন ইওর লিমিটস্ তিহান!উনি আমার বর হন!

-জানি।বারবার বলে মনে করাতে হবে না।তবে এটাই মানতে কষ্ট হচ্ছে,তোদের লাভ ম্যারেজ।আর তবুও এএসএ তোকে দুরে রাখছে,বিয়ের বিষয়টা পাব্লিক করাতে চাইছে না।

-আমি কাকে ভালোবাসবো,কাকে ভালোবেসে বিয়ে করবো,বিয়ের বিষয়টা কখন পাব্লিক করবো,কাকে বলবো,কাকে বলবো না সেসব নিতান্তই আমার ব্যাপার তিহান!নিতান্তই আমার আর আমার বরের ব্যাপার!সেটা নিয়ে তোর বলার কোনো অধিকার নেই।আর অঙ্কুরকে নিয়ে কোনো কথা তো নয়ই।তুই আমার বন্ধু!শুধুই বন্ধু!তাই নিজের সীমার মধ্যে থেকে কথা বল!

তিহানও উঠে দাড়ালো।বললো,

-আমি আগেও বলেছি,আজও বলছি।তোর সুখের সময় তুই না চাইলে আমি কখনোই সামিল হতে আসবো না।কিন্তু বন্ধু হিসেবেই তোর প্রতিটা খারাপ সময়ে আমি তোর পাশেই থাকবো।তোর সে খারাপ সময়গুলোর কারন যে হবে,তাকে আমি ক্ষমা করবো না!আর এটাতে কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে।তুইও না!

লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেলো ও।মাথা ধরে আবারো ঘাসের উপর বসে পরলাম।তানহা কাধে হাত রাখলো আমার।আস্থা বললো,

-এ কাকে ভালোবেসেছিস তুই তান্নু?ওর নাকি অনেক আত্মসম্মান?তাহলে আন্নুর মানা করা সত্ত্বেও কেনো ওর বিষয়ে এতোটা মাথা ঘামাচ্ছে ও?হোয়াই?আমিও তো আন্নুর ফ্রেন্ড!আমি যখন এএসএ’র বিষয়টা পজিটিভলি নিতে পারছি,ও কেনো পারছে না বলতো?এএসএ আর আন্নুর বিয়েটা মানতে পারছে না,কষ্ট হচ্ছে ওর,এসব কেনো বারবার বোঝাচ্ছে ও?এখন আত্মসম্মানে লাগছে না ওর?

তানহা শান্তভাবে বললো,

-ওর পয়েন্ট অফ ভিউ তোর থেকে আলাদা আস্থা।তুই ওর কথাটা বুঝিসনি।ও বিয়েটা মানছে,বিয়ের অস্বাভাবিকতা নয়।কোনোভাবেই আন্নুর এতোটুকো কষ্ট দেখতে চায়না ও।কারনটা এএসএ হলেও একচুল ছাড় দেবে না ও,এটাই বুঝিয়ে গেলো।ওর আন্নুর হাসিমুখ চাই!আন্নুকে খুশি দেখতে চায় ও!যেকোনো জায়গায়,যেকোনোভাবে!
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৩

দিনগুলো স্বাভাবিকভাবেই যাচ্ছে।আমি,মনিমা,তানহা,আস্থা,বাসা,ভার্সিটি।কিন্তু স্বাভাবিক মানতে পারছি না আমি।সবসময় মনে হয় কেউ চোখে চোখে রাখছে আমাকে।ফলো করছে।কিন্তু কাউকেই কোথাও পাইনি।মনমরা হয়েই আর পাঁচটা সকালের মতো ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বাসার বাইরে পা রাখতেই হা হয়ে গেলাম একপ্রকার।তানহা স্কুটিতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে।ওর স্কুটি নেই,গাড়িতে চলাফেরা করে ও।তাহলে আজ স্কুটি কেনো?একছুটে এগিয়ে গিয়ে স্কুটি টাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

-তুই স্কুটি কিনেছিস?

-হুম।কেমন হয়েছে বলতো?

-ফার্স্টক্লাস!কবে কিনেছিস?

-কয়েকদিন আগেই।একদম শিখে তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বলিনি।

-ওয়াও ইয়ার!এই?তুই না গাড়ি করে…..

-ধুরু!স্কুটি এনেছি,কি না ড্রাইভে যাবো!আর ও পরে আছে ওর কিউ এন্ড এ পর্ব নিয়ে!চল ওঠ তাড়াতাড়ি!বেরোবো আমরা!

-বেরোবো মানে?ভার্সিটি যাবি না?

-না!আজ ঘুরবো শুধু!

-আস্থা,তিহান?ওরা….

-আস্থা ভার্সিটিতে যাবে না আজ।আর তিহানেরও ইন্টারভিউ আছে।গেলেও এক ক্লাস করেই বেরিয়ে‌ যাবে!চল ওঠ!

আমি খুশি হয়ে পেছনে বসতে যাচ্ছিলাম।তানহা টেনে সামনে বসিয়ে দিলো আমাকে।একটু অবাক হয়ে তাকাতেই একটা অসম্ভব সুন্দর হাসি দিলো ও।সেদিন স্কুটিটায় ওভাবে আগুন লেগে নষ্ট করে দিলো ওরা।তারপর থেকেই খুব মিস‌ করছিলাম।কিন্তু আবারো স্কুটি কেনার সামর্থ্য আমার নেই।আর একারনেই তানহা কিনেছে স্কুটি,আমি জানি।কান্না পাচ্ছিলো,কিন্তু কাদলে ওর রনচন্ডী রুপ দেখতে হবে।তাই আটকালাম নিজেকে।সামনে বসতেই তানহা বলে উঠলো,

-আন্নু?এতোদিন পর স্কুটি চালাচ্ছিস।লেটস্ হ্যাভ আ ফুলস্পিড লং ড্রাইভ?হোয়াট সে?

অবাক চোখে তাকালাম ওর দিকে।ও বরাবরই আমার স্পিড নিয়ে রাগারাগি করতো।আর আজ?আমার মন ভালো করার জন্য ফুলস্পিড লংড্রাইভের কথা বলছে।কি করে ওর চেষ্টাগুলোকে বিফলে যেতে দেই?হাসিমুখে বললাম,

-যাবি বলছিস?আগে তো ভয় পেতি আমার স্কুটিতে যেতে।আজ ফুলস্পিডের কথা বলছিস যে?

-হুম।বললাম।তবে আজ সামহাউ তুই ভয় পাচ্ছিস না তো?

-ইউ নো আন্নু’স ডেয়ার!

এটুক বলেই বাকা হেসে স্পিড বাড়িয়ে স্কুটি ছুটালাম।পেছন থেকে তানহা এমনভাবে ধরেছে যেনো উল্টে পরে যাবে ও।চেচাচ্ছেও।ওর এমন ভীতুর ডিমের মতো অবস্থা দেখে আরো মজা লাগছে।চেচিয়ে উঠে আরো জোরে চালাতে লাগলাম স্কুটিটা।হেলমেটটা খুলে ফেলেছি।বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়তে শুরু করলো।আর ওই মুক্ত বাতাসে আমি শ্বাস নিতে লাগলাম প্রানভরে।

অনেকটা পথ চলে এসেছি আমরা।মেইনরোড ছেড়ে কিছুটা শুনশান রাস্তাই এটা।স্কুটি থামিয়ে রাস্তার ধারে বসে পরলাম দুজন।সামনে একটা শালবন।যতোদুর চোখ যায় শুধু শালগাছ আর শালগাছ।দু একটা গাড়ির হর্নের শব্দের সাথে অনুভব করতে লাগলাম বাতাসের শো শো শব্দ।বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে।বাসায় ফেরার জন্য উঠে আসতে যাবো,দুটো বাইক আমাদের একদম সামনে এসে দাড়ালো।চারজন ওরা।আমি আর তানহা একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললাম,

-আজব তো!পথ আটকে দিয়েছেন কেনো?

ওরা জবাবহীন।দুটো বাইক ছেড়ে হেলমেট পরা চারজন লোক নেমে আসলো।চারজনই হেলমেট খুলে আমাদের দিকে এগোতে লাগলো।একজন আমাকে দেখিয়ে বললো,

-দেখেছিস?এএসএ মারে নি এই মেয়েকে।বসকে জানা এক্ষুনি!আমার স্পষ্ট মনে আছে,ওই ছিলো সেদিন ক্লাবে।ওয়েট্রেস সেজে ওই গেছিলো ওইদিন!

গলা শুকিয়ে আসলো আমার।ভুলেই গিয়েছিলাম ওরা সেদিন দেখে নিয়েছিলো আমাকে।এভাবে হেলমেট খুলে ঘোরাটা একদমই উচিত হয়নি।কিন্তু এর ফল ভোগ করতেই হবে।আস্তেকরে বললাম,

-তান্নু স্কুটিতে ওঠ!জলদি!

আমি উঠে বসলাম স্কুটিতে।তানহা বসতে যাবে,একজন একটানে ওকে রাস্তায় ছুড়ে ফেললো।মাথা সোজা পিচঢালা রাস্তায় গিয়ে পরেছে ওর।কপালটা কেটে গেছে।আহ্ শব্দে কপাল ধরলো ও।

-তান্নু!

চেচিয়ে উঠলাম।ও কপালটা ধরে কোনোমতে উঠে বসার চেষ্টা করছিলো।আমি এগোতে যেতেই একজন পথ আগলে দিয়ে বললো,

-এজন্যই বলে,অতিবাড় বাড়তে নেই!অবশ্য অতিবাড় বেড়েও বেশ অনেকদিনই বেচে আছো তুমি!

-হেল্প!কেউ ব্….

-কেউ আসবে না মিস রিপোর্টার!ভালো জায়গাতেই ঘুরতে,সরি,মরতে এসেছো।তোমাকে টুকরো টুকরো করে কেটে রেখে দেবো এখানেই।কেউ কিছ্ছুটি বলবে না আমাদের বিরুদ্ধে!তোমাকে মেরে জেলে গেলেও প্রদীপ সরকার তার ক্ষমতা দিয়ে ঠিক ছাড়িয়ে আনবে আমাদের।

লোকটার কথা শেষ হতেই তানহা উঠে দাড়ালো।আমাকে ইশারা করলো একপাশ দিয়ে দৌড় লাগানোর জন্য।ধাক্কা মেরে লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে দুজনে মিলে ছুট লাগালাম।ওরাও পিছু নিয়েছে।রাস্তা থেকে নেমে শালবনে ঢুকে পরেছি আমরা।শালবনের মাঝ দিয়ে কাচা রাস্তায় দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি।অনেকটা সময় পর দেখলাম ওরা পিছনে নেই।একটু দাড়িয়ে শ্বাস নিলাম দুজনে।তানহার কপালে অনেকটাই কেটে গেছে।কিন্তু এখানে কেউ আসার বা থাকার সম্ভবনাই নেই।সাহায্য চাইবো কিভাবে?আচমকাই আবারো বাইকের শব্দ!কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাইকদুটো হাজির।আমাদের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বিশ্রিভাবে হাসতে লাগলো ওরা।বললাম,

-দ্ দেখুন,আমাকে মারার হলে মেরে ফেলুন।কিন্তু তান্নুকে যেতে দিন।ও তো কিছু করেনি!

বাইক থামিয়ে চারজনই নামলো।একজন এগিয়ে এসে বললো,

-তাতে কি খুকি?ও যে তোমার সঙ্গী না তার কি প্রমান আছে?

-না!ও কিছু জানেনা!ও কিছুই করেনি!

-শোনো মেয়ে,তোমাকে এএসএ ছেড়ে দিয়েছে,কিন্তু প্রদীপ সরকার ছাড়বে না।বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছো তুমি!তোমার বোঝা উচিত ছিলো,ওই ক্লাব প্রদীপ সরকারের!

লোকটা হাত বাড়াতে যাচ্ছিলো আমার দিকে।হাত মুঠো করে মার লাগাতে উদ্যত হচ্ছিলাম আমিও।আত্মরক্ষার চেষ্টাটুক করতে ক্ষতি নেই কোনো।আমার জন্য অন্তত তান্নুর কিছু হতে দেবো না আমি।এরমাঝেই কেউ তার হাত আটকে দিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো,

-তোদেরকে প্রদীপ সরকারের চেনা এএসএ ছেড়ে দিতো,কিন্তু অঙ্কুর ছাড়বে না!ট্রাস্ট মি!অনেকটা বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছিস তোরা!তোদের বোঝা উচিত ছিলো,অদ্রি অঙ্কুরের!ও আমার!

এতোটা জোরে চিৎকার করেছে লোকটা যে কেপে উঠলাম।কিন্তু পাশে তাকিয়ে অঙ্কুরকে দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছি আমি।পাশেই আরো দুটো গাড়ি এ‌সে থামলো।সেটা থেকে আটদশজন লোক নেমে আসলো।ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম একটা।কথা শেষ করেই অঙ্কুর নাক বরাবর ঘুষি লাগালেন ওই লোকটার।সে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো।বাকি তিনজন এগোতে গেলেই ওদের চারপাশ থেকে আরো আটদশ জন ঘিরে ধরলো।ওদের চারজনকেই ধরে রেখেছে সবাই মিলে।অঙ্কুর রক্তচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে।চেচিয়ে বললেন,

-তানহাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠো রাইট নাও!

তাড়াতাড়ি তানহাকে নিয়ে তার দেখানো গাড়িতে উঠলাম।একজন দরজা খুলে দাড়িয়ে ছিলো।সেই আবার লক করে দিলো দরজাটা।সাথেসাথে গাড়ির জানালায় অঙ্কুর গলা টিপে ধরলেন কাউকে।দেখলাম এটা ওই লোকটাই যে আমার দিকে এগিয়েছিলো।অঙ্কুর দাতে দাত চেপে বললেন,

-ইচ্ছে তো করছে এভাবেই তোর গলায় হাতটাকে রেখে তোর ভয়েজটাকে চিরতরে সাইলেন্ট মোডে পাঠিয়ে দেই।কিন্তু আফসোস!আমার হাতে সময় কম।

-ত্ তুমি মারোনি ক্ কেনো ওকে এএসএ?ব্ বি…বিশ্বাস ঘ্ ঘাতকতা করেছো তুমি প্রদীপ সরকারের সাথে।ভ্ ভুল ক্ করছো তুমি এএসএ!

-বেশিই জেনে গেলি মনে হচ্ছে!ডোন্ট ওয়ারি!তোদের চারটারই মুখ বন্ধ করার দায়িত্ব আমার।দেখা হচ্ছে,খুব শীঘ্রই।চল যা!

ঝারা মেরে ছেড়ে দিলেন উনি লোকটাকে।ওনার সাথে থাকা লোকগুলো টেনেটুনে চারজনকেই ধরে গাড়িতে তুলতে লাগলো।অঙ্কুর ড্রাইভিং সিটে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন চুপচাপ।তানহাকে জাপটে জরিয়ে ধরে রয়েছি।ওউ শক্ত করেই ধরে রেখেছে আমাকে।ভয়টা এখনো কাটেনি দুজনের কারোরই।

অঙ্কুর সোজা হসপিটালের সামনে গাড়ি থামালেন।কোনোদিক না তাকিয়ে তানহাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকতেই একজন নার্স এসে তানহাকে ধরে নিয়ে গেলো।আমিও যাচ্ছিলাম পিছন পিছন,কিন্তু ডক্টর বললেন ওয়েট করতে।ওরা রুমে ঢুকতেই হেচকা এক টানে কেউ পাশের রুমে এনে আমার দুহাত দেয়ালে চেপে ধরলো।এটা অঙ্কুর।দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার।চোখ বন্ধ করেই গায়ের জোর খাটাতে লাগলাম।অঙ্কুর দাতে দাত চেপে বললেন,

-এই গায়ের জোর নিয়েই এতো সাহস তোমার অদ্রি?

…..

-আন্সার মি!এটুকোই গায়ের জোর তোমার?আজ তবে তোমার গায়ের সবটুকো জোর দেখবো আমি!শো মি!হাত ছাড়িয়ে দেখাও অদ্রি!ডু ইট!

…..

-তোমাকে বলেছিলাম মুখ ঢেকে বেরোতে!তারপরও কেনো হেলমেট খুলে ঘুরছিলে তুমি?হোয়াই?

……

-আমি প্রশ্ন করেছি তোমাকে!আন্সার ইট!কি না করেছি আমি তোমার এই রিপোর্টার অদ্রি পরিচয় ঢাকতে!দীপক তালুকদারকে নিয়ে তোমার লেখা রিপোর্ট ভোরের বাংলার এমডির থেকে নিয়ে টিভি চ্যানেলে পাব্লিশ করিয়েছি।এমডিকে বলে ওই চাকরিই তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছি।গত কয়েকদিনে মুখ না ঢেকেই বাসা টু ভার্সিটি রিকশায় যাতায়াত করেছো।কিছু না বলে সবটা সময় আড়ালে থেকে শুধু চোখে চোখে রেখেছি তোমাকে।আজ ভার্সিটি না গিয়ে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে গেলে?হেলমেট খুলে?তোমার একটাবারও মনে পরলো না,প্রদীপ সরকার আর ওর লোকেরা তোমাকে দেখে নিয়েছিলো?একটা বারও মনে হলো না ঠিক কার লেজে পা দিয়েছিলে তুমি?একটাবারও মনে হলো না ওরা দ্বিতীয়বার দেখলে জানে মেরে দেবে তোমাকে?সে ইট অদ্রি!চুপ করে থেকো না!জবাব দাও!

বিস্ময়ে চোখ মেললাম আমি।তারমানে এমডি স্যারকে উনিই মানা করেছেন?উনিই সবটা করছেন যাতে এই অদ্রি নামটা জার্নালিজম থেকে মুছে যায়?অঙ্কুরের নাকচোখ রক্তবর্ন হয়ে আছে একদম।চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে রয়েছেন যেনো উনি।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই বললাম,

-মরলে মরতাম!তাতে আপনার কি?আমাকে বাচিয়ে কেনো আনলেন?সেদিনই বা কেনো বাচিয়েছিলেন?আপনার জন্য বেচে থেকেও প্রতিমুহুর্তে মরতে হচ্ছে আমাকে।মরতে দিন না আমাকে!কেনো বাচাচ্ছেন?কেনো করছেন এমন?কেনো?মরে যেতে দিন আমাকে!

অঙ্কুর আমার একহাত ছেড়ে ঘাড়ের চুল মুঠো করে নিলেন।আরেকহাত পিছনে কোমড়ে আটকে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালেন।চোখ বন্ধ করে নিলাম আবারো।ছাড়া পেয়েছে যে হাত সে হাতে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।অঙ্কুর অন্যহাত আরেকটু মুচড়ে ধরে আরো শক্তিতে কাছে টেনে নিলেন আমাকে।চুলগুলোও বেশ অনেকটাই জোরে মুঠো করেছেন উনি।ব্যথায় একটু কুকড়ে উঠতেই উনি কাতরভাবে বললেন,

-মরার কথা আর কোনোদিন বলবে না তুমি অদ্রি!প্লিজ!

আরেকটু ব্যথাতুর শব্দ বেরোলো মুখ দিয়ে।কান্নাও করে দিয়েছি।অঙ্কুর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে দাড়ালেন।মাথার চুলগুলো উল্টে ধরে আমার দিকে ঝুকে ব্যস্তভাবে বললেন,

-লেগেছে তোমার?অদ্রি?আ’ম…আ’ম সরি।রাগটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে….কেনো বারবার মরার কথা বলো তুমি?কেনো?এই কথাটা আমি শুনতে পারি না।তবুও বারবার কেনো বলো এসব?

-আমি মরলে আপনার কি?

অঙ্কুর থেমে গেলেন।ওনার কথায় বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে আমি ছাড়া যেনো উনি অসহায়।তাই তার সব খারাপ ব্যবহারকে একপাশে রেখে,মস্তিষ্ককে পাত্তা না দিয়ে মনের প্রশ্নটা মুখেই এনে ফেলেছি।উনি মাথা নিচু করে হাত মুঠো করে রইলেন।এবার আমি একপা এগিয়ে বললাম,

-চুপ করে থাকবেন না অঙ্কুর।আমার উত্তর চাই!

……

-বলুন অঙ্কুর,আমি মরলে আপনার কি?কেনো বাচাচ্ছেন আমাকে প্রদীপ সরকারের হাত থেকে?কেনো চান না আমি সিক্রেট রিপোর্টার হিসেবে চাকরিটা করি?কেনো অদ্রির আসল পরিচয় জেনেও চুপ আপনি?কেনো বলে দিচ্ছেন না সবাইকে?কেনো আমার সেইফটি নিয়ে এতোটা সেন্সিটিভ আপনি?কেনো অঙ্কুর?কেনো?

…….

-আপনি এভাবে চুপ থাকলে আমি নিজেকে আঘাত করবো অঙ্কুর!

-কারন তোমাকে আমার বাচ্চার মা হতে হবে।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার বেবি…..

ওনার মাটিতে দৃষ্টি স্থির করা শান্ত জবাব।পাশে রাখা তাকটার উপরের ছোট ফুলের টবটা ঠেলে ফেলে দিলাম আমি।চেচিয়ে বললাম,

-বেবি বেবি বেবি!এছাড়া কিছুই জানেন না আপনি অঙ্কুর!আপনার আর কিছু আশা করাও বেকার!আপনি খুব খারাপ একটা লোক অঙ্কুর!অত্যন্ত নিচ মনের মানুষ!কে বলেছে মা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন আপনি?আপনি সত্যিই মানুষ হননি মা ছাড়া!অমানুষ হয়েছেন আপনি!অমানুষ!আপনি তো মায়ের ভালোবাসা ডিসার্ভই করেন না!কারো ভালোবাসাই ডিসার্ভ করেন না আপনি!কারোর না!

কথাগুলো বলে কাদতে লাগলাম আমি।অঙ্কুর তার ডানহাত আমার দিকে বাড়ালেন।হাত দিয়ে ঝারা মেরে সরিয়ে দিলাম।উনি চোখভরা পানি নিয়ে নিশব্দে এক অদ্ভুত হাসি হেসে বললেন,

-আজ যা বললে,কয়েকটা দিন পর এর উল্টোটাই বলবে তুমি অদ্রি।এটা আমার বিশ্বাস।আর জানোতো?অঙ্কুর নিজে হারলেও ওর বিশ্বাস কোনোদিন হারেনি।বরাবরের মতোই আমার বিশ্বাস জিতে যাবে।দেখে নিও অদ্রি।দেখে নিও!আর সেদিন সে সব ভালোবাসা আমার জন্য হবে,যা আমি ডিসার্ভ করি!সবটা!

#চলবে….
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here