সবটাই_তুমিময় পর্ব ৬+৭

#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৬

-আপনার ঠিক কি চাই মিস্টার অঙ্কুর?

শক্ত গলায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেও উত্তরের জন্য একদমই প্রস্তুত নই আমি।তবুও অঙ্কুরকে প্রশ্নতাক করতে সব দ্বিধা,ভয়,ঘৃনা,আক্রোশ একপাশে ঠেলে সোজা রুমেই ঢুকে পরেছি তার।এসে দেখি উনি বেডে স্বাভাবিকভাবে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে ব্যস্ত।এতোক্ষন আমার আসাটা নিয়ে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন।প্রশ্নটা শুনে কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলেন উনি।অন্যদিক ফিরে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিয়ে বললেন,

-আমার কি চাই তা তো আপনার অজানা নয় মিস অদ্রি।আমি তো আগেই বলেছি,আই ওয়ান্ট আ বেবি ফ্রম ইউ।আপনার কাছে বেবি চাই আমার।শুধু এটুকোই।

আবারো সেই একই কথা!দাতে দাত চেপে রাগ সংযত করে শেষবারের মতো শান্ত করলাম নিজেকে।তাকে বোঝাবো।ভুল করছেন উনি।বললাম,

-শুধু এটুকোই?আপনার কাছে এসব এটুকো মনে হয়?আমি….

এবার উনিই ফুসে উঠে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।চেচিয়ে বললেন,

-আপনি কি?আপনি কি মিস অদ্রি?সেরোগেশনে রাজি ছিলেন না,এখন জানলাম তার জন্য ফিজিক্যালি ফিট নন আপনি।কিন্তু আমার বেবি চাই!এট এনি কস্ট!বিয়ের আগে বাচ্চার মা হয়ে অপমানিত হতে হবে না আপনাকে।তাই বিয়ে করেই…..

-তারমানে শুধু‌ বেবির জন্য আমাকে‌ বিয়ে করতে চাইছেন আপনি?

উনি আবারো অন্যদিক ফিরলেন।হাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষন।গিয়ে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-চুপ করে থাকবেন না!আন্সার মি!শুধুমাত্র বেবির জন্যই কি আপনি….

-হ্যাঁ।শুধুমাত্র বেবির জন্যই আপনাকে বিয়ে করবো আমি।

কথাটা শুনে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলা রক্তপ্রবাহ আটকে গেলো আবারো।দুপা পিছিয়ে গেলাম।এই লোকটার প্রতি ঘৃনাটা চরমে পৌছেছে আমার।রাগে,ঘৃনায় চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।অঙ্কুর আমাকে কাদতে দেখে একটু ব্যস্ত হয়ে পরলেন।এগিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন,হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম ওনাকে।উনি বললেন,

-মিস অদ্রি,বিয়েটা হবেই।তবে আপনার মত ছাড়া…..

-জাস্ট শাট আপ!কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি আর আপনার!কান খুলে শুনে রাখুন মিস্টার অঙ্কুর!এই বাসায় বন্দি থেকে পচে মারা পরবো,তবুও আপনার মতো জঘন্য মানুষের জঘন্য কথায় রাজি হবো না!কোনো বিয়ে হবে না!কোনো বাচ্চাও হবে না!শুনেছেন?আর হ্যাঁ,জোর করবেন কি না,সেটা আপনি ভালো জানেন।কিন্তু যদি জোর করতে আসেন,আই সোয়ার,নিজেকে শেষ করে দেবো আমি।কথাগুলো মনে রাখবেন!

-আপনার কাছে দ্বিতীয়বার মৃত্যুর কথা শুনতে চাইনা মিস অদ্রি!

-বলবো না!বাট ট্রাস্ট মি,আমার কথা না মানলে কাজে করে ফেলবো!দ্বিতীয়বার ভাববো না!

বেরিয়ে আসছিলাম রুম থেকে।অঙ্কুর বলে উঠলেন,

-সন্ধ্যায় প্রদীপ সরকার এ বাসায় আসছে।তার থেকে নিজেকে ঠিক কোথায়,কিভাবে লুকোবেন সেটা এখনই ভেবে রাখুন।নইলে তার চোখে পরলে যে আপনার মৃত্যু সুনিশ্চিত,এ বিষয়ে আপনি অবশ্যই নিশ্চিত।তাইনা মিস অদ্রি?

প্রদীপ সরকারের নাম শুনে রাগে হাত মুঠো হয়ে আসলো আবারো।পেছন ফিরে বললাম,

-আজ তবে প্রদীপ সরকারের হাতেই অদ্রি মারা যাবে!তাতে অন্তত এই জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবো!আপাতত নিজের মৃত্যুকামনাই করছি!

অঙ্কুর ঝড়ের বেগে এসে ওড়না ধরে টান লাগালেন আমার।ওড়না ধরে রাখতে গিয়ে দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকেছে আমার।ওড়নার একপ্রান্ত অঙ্কুরের হাতে,আরেকপ্রান্ত কোনোমতে গায়ে জরিয়ে নিলাম।নিজেকে সামলে উঠে মাথা তোলার আগেই উনি দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে একদম কাছে এসে দাড়ালেন আমার।পুরো চেহারাটাই লাল হয়ে গেছে তার।পাশে হাত,নিচ দিয়ে বেরোবো,হাত নিচে ঠেলে দিলেন উনি।জামা খামচে ধরে চেচিয়ে বললাম,

-গেট আউট অফ মি!

-আপনাকে এতো সহজে তো মরতে দিতে পারি না মিস অদ্রি।আপনাকে মরতে দেবো বলে তো সেদিন বাচাই নি।মরতে দেবো বলে তো আমার পুরো লাইফটাকে উল্টেপাল্টে দেইনি আমি।মরতে দেবো বলে তো এতোকিছু করছি না আমি।আপনি‌ মারা গেলে এগুলোর হিসেব দেবে কে?আমার সব ক্ষতগুলোর হিসেব কে দেবে?না!মরতে তো আপনাকে দেবোই না!সবটা সুদে আসলে উশুল করেই দম নেবে এএসএ!মাইন্ড ইট!

উনি ওড়না ধরেই টানতে টানতে রুমের বাইরে‌ নিয়ে আসলেন আমাকে।নিজের মতো করে আমিও ওড়না ছাড়ানোর চেষ্টায় ছিলাম।লাভ হয়নি।করিডরের শেষ প্রান্তে একটা বড়সড় রুমে এনে ছেড়ে‌ দিলেন ওড়নাটা।বললেন,

-প্রদীপ সরকার চলে না যাওয়া অবদি এখানেই থাকবেন আপনি!

এটুক বলেই দরজা লক করে বেরিয়ে গেলেন অঙ্কুর।সিক্রেট ইনফর্মার কাজটতে জড়ানো নিয়ে আজ প্রথমবার আফসোস হচ্ছে আমার।মারা গেলেও এ আফসোসটা করতাম না।কিন্তু মৃত্যুর চেয়ে আরো ভয়ানক শাস্তি পেতে হচ্ছে আমাকে।আরো ভয়ানক কিছু ভেবে রেখেছেন অঙ্কুর!

.

গত ছ মাসে অদ্রি ছদ্মনামে অনেকগুলো পেপারওয়ার্ক করেছি।রিস্কি ছিলো,তবে রিস্কি মনে করিনি।এই একমাত্র প্যাশনের বাইরে আর কিছুই‌ ভাবতে পারতাম না।জব ইন্টারভিউ,কোচিং,ভার্সিটির নানা ট্রিপের কথা মনিমাকে বলে বেরোতাম বাসা থেকে।পাঁচদিন আগেও বেরিয়েছিলাম।কিন্তু এবারের রিপোর্টটা একটু বেশিই চ্যালেন্জিং ছিলো।সমাজসেবকরুপী কুখ্যাত জুয়ারু প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রমানের খোজে ছিলাম এবার আমি।উনি বরাবরই মুল নিশানা ছিলেন আমার।দীপক তালুকদারের থেকে পাওয়া হিন্টস্ গুলো কাজে লাগিয়ে,আরো বেশ কয়েকসপ্তাহ টানা ফলো করার পর প্রদীপ সরকারের পরবর্তী আড্ডার খবর পেয়ে যাই।জানতে পারি একটা নাইট ক্লাবে পরবর্তী ডিল করার কথা তার।

ক্লাবের এক ওয়েট্রেসকে টাকা খাইয়ে ওর‌ শিফটটা আমিই নিয়ে নেই সেদিন।ছদ্মবেশে পৌছে যাই ক্লাবে।কিন্তু সেখানে গিয়ে যা‌ দেখেছিলাম,সেটা বড়সড় শক ছিলো আমার জন্য।প্রদীপ সরকারের সাথে এএসএ!ওই কুৎসিত লোকটার সাথে এএসএ’কে দেখে থমকে গিয়েছিলাম।তার থেকেও বেশি বিস্মিত হয়েছিলাম এটা শুনে,পুরো দেশ যার উপর এতোটা ভরসা করে,সেই এএসএ প্রদীপ সরকারের কাছে টাকার বিনিময়ে ম্যাচ হারার ডিল করতে এসেছেন।মানুষ টাকার জন্য ঠিক কতটা নিচে নামতে পারে তার এক বাস্তব উদাহরন!প্রদীপ সরকার বললো,

-শোনো এএসএ,আপকামিং আন্তর্জাতিক ম্যাচে সমস্ত গ্যামব্লাররা তোমার দলের জয়ের উপর টাকা বাজি রাখতে যাচ্ছে।সে টাকাগুলো জিততে হলে ওই ম্যাচে হারতে হবে তোমার দলকে।এজন্য‌ যা এমাউন্ট চাই তোমার,পেয়ে যাবে!ডিলে রাজি থাকলে বলো,আমি….

এএসএ টেবিলে রাখা পেপারওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,

-ডিল করবো বলেই এখানে আসা।এএসএ’র টিম ওইদিন ম্যাচ হারবে।আমি কনফার্ম করছি আপনাকে।আপনি এটা ভাবুন,টাকাটা কিভাবে পে করবেন?

-তারআগে এটা তো শিওর হই,তুমি আমার জন্যই খেলছো!

-পরশু ক্লাবের যে ম্যাচটা হবে,তাতে এএসএ জিরো রানে আউট হবে।এটা এনাফ?নাকি….

-স্পোর্টলাইফে এ অবদি জিরো রানে আউট হওনি তুমি এএসএ!

-এবার থেকে হবো।

প্রদীপ সরকারের ঠোটে সন্তুষ্টির হাসি।বললো,

-গ্রেট!ডিল কনফার্মড্!

-তবে একটা কথা ক্লিয়ার হলাম না এএসএ!তোমার বাবা এতোবড় ব্যবসায়ী,এতো টাকাপয়সা তার,তোমারও ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইনকাম অনেক।তবুও তুমি কেনো আমার সাথে ডিল করতে রাজি হয়ে গেলে?

পেপারওয়েট ছেড়ে এএসএ তারদিক তাকালেন।উঠে দাড়িয়ে কোটটা টেনে ঠিক করে বললেন,

-মানুষকে বাইরে থেকে দেখে বিচার করা উচিত না।আমি বরাবরই স্বার্থপর একটা মানুষ মিস্টার সরকার!স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজই করি না আমি।আর এটাও খুব ভালোভাবেই জানি,টাকাই পৃথিবীতে সব।সেটা বাবারই থাকুক,বা আমার।লাইফলিড করতে গেলে,আজ হোক বা কাল,টাকা কম পরবেই।তাই,টাকাকেই প্রায়োরিটি দেই সবসময়।আর যেখানে একটা ম্যাচ হেরে আমি দশটা ম্যাচ জেতার সমপরিমান টাকা পাচ্ছি,কেনো বেকার খাটুনি খাটবো বলুন তো?

বারের এককোনে বসে আলোচনা চলছিলো তাদের।লুকিয়ে সবটা শুনছিলাম।ক্যামেরায় দুটো ছবি ক্লিক করে‌ও নিয়েছি চুপিচুপি।কথা শেষে পাশের এক লোকের হাতে থাকা কয়েকটা ফাইলের মধ্য থেকে এএসএ’কে একটা ফাইল এগিয়ে দিলো প্রদীপ সরকার।উনি ফাইলটায় চোখ বুলিয়ে সাইন করতে লাগলেন।সাইন করা শেষে হাত মেলালেন দুজনে।ফাইলগুলো একটা ব্রিফকেসে রাখলেন প্রদীপ সরকার।

ফাইলগুলো যে তার কুকর্মের প্রমান,সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।তাছাড়া এএসএ’র এই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রমানটাও আছে ওতে।তার ক্লাবের পরিচালককে সবটা দেখাবো আমি।এই লোক ইচ্ছে করেই পরের ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে হারতে চলেছে।নিজেও খারাপ খেলবে আর তার টিমকেও মিসলিড করবে হারার জন্য।তাই খেলার ফ্লো ঠিক রাখতে তাকেই ক্লাব থেকে বের করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।এজন্য ওই ফাইলগুলোই আগে জোগার করতে হবে আমাকে।যাতে প্রমান করতে পারি এই লোকটা একটা ঠকবাজ!ফ্রড!

ওরা কথা বলছিলো তখনও।ক্লাবে বাকিসব নিজেদের মতো নাচ আর ড্রিংক করতে ব্যস্ত।আস্তেধীরে ক্লাবের এককোনে থাকা ফায়ার সেন্সরের কাছে গিয়ে লাইটার ধরলাম।সাথেসাথে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো।হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো সবাই।ভীড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে দরজার সামনেই দাড়ালাম।ফায়ার এলার্ম শুনে ক্লাবের ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।টর্চের আলোতে দেখলাম ভীড়ের মধ্যে এএসএ ও বেরিয়ে গেলেন।প্রদীপ সরকার যেইনা বেরোতে যাবেন,ইচ্ছে করেই ধাক্কা লাগিয়ে দিলাম তাকে।লোকটা হুড়মুড়িয়ে পরে গেলো।ব্রিফকেসটা একদম দুরে গিয়ে পরেছে।

-সরি স্যার!সরি সরি!এক্সট্রেমলি সরি!সরি স্….

-স্টপ ইউর ননসেন্স!ব্রিফকেসটা কোথায়?জলদি আনো!

অন্য আরেকটা ব্রিফকেস তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,

-এ্ এইতো!এইতো আপনার ব্রিফকেস স্যার!আ্ আগুন!

আগুন শুনেই একদৌড়ে‌ বেরিয়ে গেলো লোকটা।ক্লাবের বাকিসবের সাথে আমিও বেরিয়ে আসলাম।সবটাই ঠিক সেভাবেই হয়েছিলো,যেভাবে আমি প্লান করেছিলাম।ব্রিফকেসটা নিয়ে স্কুটি স্টার্ট দিয়ে অনেকটাই দুর অবদি চলেও আসি।কিন্তু হুট করেই দুটো গাড়ি এসে সামনে দাড়িয়ে যায় আমার।কোনোমতে স্কুটি থামিয়ে নেমে দাড়ালাম।সামনের গাড়িদুটোর একটা থেকে প্রদীপ সরকার আর ওর দলবল বেরিয়ে এলো।প্রদীপ সরকার বললো,

-এই মেয়েটাই ছিলো!ওর কাছেই আছে ব্রিফকেসটা!

দশ বারোজন মিলে ঘিরে ধরলো আমাকে।দম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।ভেবেছিলাম সবটা আমার পরিকল্পনামতোই হয়েছে।কিন্তু না,আজ ধরা পরে গেছি।কোনো রক্ষে নেই আর।হয়তো এটাই ছিলো নিয়তিতে।স্কুটিতে রাখা ক্যামেরা,ব্রিফকেসটা যথেষ্ট ছিলো আমার মৃত্যুর কারন হিসেবে।ছোটাছুটির চেষ্টাটাও করিনি।জানতাম লাভ হবে না।প্রদীপ সরকারের ইশারায় এক লোক এগোলো আমার দিকে।বললো,

-স্যার!মেয়েটাকে তো ওই ক্লাবে কোনোদিন দেখিনি!ও পুলিশের কোনো গুপ্তচর হবে নিশ্চিত!

প্রদীপ সরকার তেড়ে এলো আমার দিকে। বললো,

-কে তুমি?

….

-এই মেয়ে?কথা‌ বলো!কে তুমি?কি ভেবেছিলে তুমি?আমার আড্ডায় ঢুকে,আমাকেই বোকা বানিয়ে,আমার বিরুদ্ধেই প্রমান জোগার করে নিয়ে চলে যাবে আর আমি টেরও পাবো না?এতোটা সাহস তোমার?

….

-চুপ করে আছো কেনো?জবাব নেই?

…..

-এতো সময় নেই আমার!একটা প্রশ্নের জবাব দাও।তুমি কে?

…..

-এমনি এমনি জিজ্ঞাসা করছি না তোমার নাম!কাল নিউজে তোমার মৃত্যুসংবাদ কি নামে টেলিকাস্ট হবে বলো?ডেডবডি তো কেউ খুজে পাবে না!আইডেন্টিফিকেশনও সম্ভব হবে না!তাই….

চোখ তুলে তাকালাম।কোনোরুপ সংকোচ ছাড়াই বলে দিলাম,

-অদ্রি।

সবাই খানিকটা বিস্ময়ে তাকালো।একটু থেমে থেকে প্রদীপ সরকার বললো,

-ওওও!আই সি!তুমিই অদ্রি?ফ্রম ভোরের বাংলা?অনেক শুনেছি তোমার নাম।এভাবে দেখা হবে ভাবিনি!বাট আই ওয়ান্ট টু মেক মেমোরেবল দিস মিটিং!ইউনিক ডেথ দেবো তোমাকে অদ্রি!এটুকো বয়সে এতোবেশি সাহসিকতা!তার পুরষ্কার আরো অনন্য হওয়া উচিত!এমন ভয়ংকর মৃত্যু হবে তোমার,সাংবাদিকতা পেশাকে ভুলে যাবে এদেশের মানুষ!আই উইল মেক শিওর দ্যাট অদ্রি!

চোখ‌ বন্ধ করে রইলাম।মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করলাম নিজেকে।কিন্তু মনিমাকে শেষবারের মতো দেখতে পারবো না ভেবে চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো শুধু।এরমধ্যেই কেউ বলে উঠলো,

-কেউ ছোবে না ওকে!

চোখ মেললাম আমি।ল্যাম্পপোস্ট,স্কুটি আর গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখলাম এএসএ আমার সামনেই দাড়িয়ে।তারমানে কথাটা উনিই বলেছেন।উনি আবারো বললেন,

-একে আমার হাতে ছেড়ে দিন মিস্টার সরকার!আমি দেখে নেবো একে!

উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে তারদিক তাকিয়ে।একবারের জন্য ভেবেছিলাম হয়তো বাচাবেন বলে ওমনটা বললেন উনি।কিন্তু না,উনি তো বললেন আমাকে দেখে নেবেন।আবারো চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।একটু সময় নিয়ে প্রদীপ সরকার বললো,

-তুমি?এসবের অভ্যেস নেই তোমার এএসএ!

-করে নেবো!ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচ ডিল করতে আসলাম,সেখানে কেউ বাধা হয়ে দাড়াবে,আই ওন্ট টলারেট দ্যাট মিস্টার সরকার!এর ভবিষ্যৎ আমি ডিসাইড করতে চাই!

-কিন্তু….

-আই ওয়ান্ট হার!এন্ড আই মিন ইট!

-ওকে ওকে।এতো জোর করছো যখন,নিয়ে যাও!তবে হ্যাঁ,এটা অবশ্যই নিশ্চিত করবে ওর মুখ যেনো বন্ধ থাকে।নইলে আমার সাথে সাথে কিন্তু তোমারও এতোবছরে তৈরী করা নাম ধুলোয় মিশে যাবে এএসএ!

উনি বাকা হেসে বললেন,

-এএসএ জানে,ওর কি করনীয়।এনিওয়েজ,আসছি!

এটুক বলেই উনি সোজা এসে হাত ধরলেন আমার।তাদের সম্পুর্ন কথোপকথনের সময়ও উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।আমাকে নিয়ে চলে আসতে গিয়ে আবারো কি মনে করে থেমে গেলেন উনি।পেছন ফিরে বললেন,

-ও হ্যাঁ!টাকাটা যেনো আমার একাউন্টে আজই ট্রান্সফার হয়ে যায়!পরশু ম্যাচে এএসএ জিরো বলে আউট হচ্ছে!এন্ড ইটস্ ফাইনাল!

-অবশ্যই!

উনি আমার হাত ধরে হাটা লাগালেন।পিছন ফিরে দেখলাম একজন আমার স্কুটির দিকে এগোচ্ছে।ব্রিফকেসটা নেবে বলে হয়তো।একটুপরেই বিকট শব্দ!বিস্ফোরন হয়েছে খানিকটা দুরে।আবছা হয়ে আসতে লাগলো চারপাশ।শেষ অবদি শুধু চোখে পরলো আমার স্কুটিটা জ্বলছে।তারপর আর কিছুই মনে নেই।

জ্ঞান ফেরার পর এএসএ’র বাসায় পাই নিজেকে।যে মানুষটা এভাবে টাকার জন্য ম্যাচ ডিল করেছে,ভেবেছিলাম তার সত্যিটা জেনে ফেলায় আমাকে মেরে ফেলবেন উনিও।হয়তো ওদের দেওয়া মৃত্যুর চেয়ে আরো ভয়ানক মৃত্যু হবে আমার।কিন্তু না!উনি তো মারেন নি আমাকে!মারবেনও না।তবে হ্যাঁ,তার থেকেও ভয়ংকরভাবে রেখে নরকযন্ত্রনায় বাচিয়ে রাখতে চাইছেন উনি আমাকে।আমাকে ছেড়ে দিলেও তার সত্যিটা কেউ জানতো না।জানাতে পারতাম না আমি।কোনো প্রমানই তো নেই আমার কাছে!তবুও শাস্তি দিচ্ছেন উনি আমাকে।শুধু এজন্য,তার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সত্যিটা আমি জানি বলে!শুধু এজন্যই তো?
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৭

সারারাত বৃষ্টি ছিলো।সকালেও অনেকক্ষন বৃষ্টি হয়েছে।থেমেছে খুব বেশিক্ষন হয় নি।তবুও ঝলকানো রোদ উকি দিচ্ছে এখনই।গাছপালার ভিজে পাতার সবুজ রঙ আর আকাশের নীলচাদোয়া মন ভরিয়ে দেয় যেনো।ঠান্ডা শিরশিরে বাতাস বইছে।পরিবেশটা উপভোগ করার মতোই।কিন্তু তবুও ভালো লাগছে না,বিষাক্ত লাগছে।এ ঘরটাও অঙ্কুরের ঘরের মতো বড়সড়,গোছানো।ব্যালকনি আছে।তাই ব্যালকনিতেই এসে মেঝেতে বসেছি।

-আপনাকে এমন চুপচাপ মানায় না মিস পর্বতশৃঙ্গ।

অঙ্কুরের গলা।না শোনার মতো করেই বসে রইলাম।পাশে ট্রাউজার পরা ব্যক্তিটির পা চোখে পরলো।উনি বললেন,

-প্রদীপ সরকার কনফার্ম হতে এসেছিলো,আপনার সাথে ঠিক কি হয়েছে।

…..

-আমার নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচের ডেট ফিক্স হয়েছে।

….

-আচ্ছা মিস অদ্রি?ধরুন আমার আর প্রদীপ সরকারের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ডিল করার সে ফাইলটা দিয়ে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম আমি।আপনি ইনস্ট্যান্টলি নিউজ করবেন সেটা নিয়ে তাইনা?

একপলক তাকালাম তারদিকে।উনি মৃদ্যু হেসে বললেন,

-কিছু তো বলুন?

…..

-আপনার মনিমা আপনাকে খুব ভালোবাসে তাইনা?

….

-আপনিও ওনাকে খুব ভালোবাসেন তাইনা মিস অদ্রি?

…..

অঙ্কুর এবার আঙুল দিয়ে একদিকে দেখিয়ে উৎফুল্লভাবে বললেন,

-রংধনু উঠেছে!দেখুন মিস অদ্রি!

তাকালাম সেদিক।সত্যিই রংধনু উঠেছে।অঙ্কুর তাচ্ছিল্যে হেসে বললেন,

-ওই বিশাল আকাশটাও কখনো কখনো নিকষ কালোতে ঢেকে যায় ঠিকই,কিন্তু বৃষ্টির পর ওর নীল রঙ,আর রংধনুর সাতরঙ সে মেঘের অাধারকে ভুলিয়ে দিয়ে যায়!আমার জীবন তো তার চেয়ে কতো ছোট।এতে স্বাভাবিকভাবে কিছু রঙের জোগান দেওয়াটা কি এতোটাই কঠিন ছিলো উপরওয়ালার জন্য?খুব ভুল কিছু হয়ে যেতো,কিছু রঙ আমার জীবনটাতে এটে দিলে?নাকি আমার এটুক চাওয়াটাই এতো অভাবের কারন?

কথাগুলোতে আটকে রইলাম।উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকালেন।মোচড় দিয়ে উঠলো ভেতরটা।অঙ্কুরের এই রুপ আমার অজানা,অচেনা!একটু সময় ওভাবে তাকিয়ে থেকে পরপরই চোয়াল শক্ত করে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি রুম থেকে।নিজের মতো আবারো বসে থেকে অশ্রুবিসর্জন দিতে লাগলাম নিরবে।

.

মাঝখানে আরো দুদিন কেটে গেছে।লক্ষ্য করলাম এ ঘরটাতে তেমন আসেন না অঙ্কুর।তাই দরজা খোলা থাকা সত্ত্বেও আমিও আর বেরোই নি।যতটা দুরে থাকা‌ যায় তার থেকে!প্রদীপ সরকারের আগমন নিয়ে কোনো কিছুই জানি না।প্রথম দুদিনের মতো গার্ডসরা এসে খাবার দিয়ে চলে যেতো।আবার নিয়ে যেতো।

-আহানিতা?

নিস্প্রান দৃষ্টিতে দরজায় তাকালাম।রোহান ভাইয়া এসেছেন।মুখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি আরো এগিয়ে এসে বললেন,

-এ কি হাল বানিয়েছো তুমি নিজের?

…..

-এমন কেনো করছো আহানিতা?

…..

উনি সামনে এসে বসলেন আমার।বললেন,

-কেনো দুজনে এভাবে একে অপরকে কষ্ট দিচ্ছো আহানিতা?বলতে পারো,এতে কার ঠিক কি লাভ হচ্ছে?

ভাষাহীনভাবেই তাকালাম তারদিকে।একে অপরকে কষ্ট?অঙ্কুর কষ্টপাচ্ছেন?ওহ্!ওনার তো বেবি চাই,সেটা না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন।রোহান ভাইয়া বললেন,

-অঙ্কুরকে কাল সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না আহানিতা।

একটু বিস্ময়ে তাকালাম।কাল সকালেই শেষবার কথা হয়েছিলো ওনার সাথে আমার।কোথায় গেলেন উনি?এজন্যই আসেন নি এ রুমে?তাতে অবশষ্ক আমার কিছুই না।বললাম,

-এখানে,তার বাসায় বসে,তাকে অবশ্যই আমি কিডন্যাপ করি নি।

-না।তা করো নি।কিন্তু তুমি ওর মনে দুর্বলতা গুজে দিয়েছো আহানিতা।আর এই দুর্বলতাই ওর নিখোজ হওয়ার কারন!

-এএসএ?আর দুর্বলতা?

-না।তুমি।আর অঙ্কুরের দুর্বলতা।

-প্লিজ ভাইয়া,একা থাকতে দিন আমাকে।চলে যান এখান থেকে।

-কেনো?একা কেনো থাকবে?তোমরা তো দুজনে একাকীত্ব ডিসার্ভ করো না!অঙ্কুরকে একটু বুঝ্….

-ওনাকে নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি ভাইয়া!প্লিজ!আপনাকে ভাইয়া ডেকেছি।নাইবা পারলেন আমাকে মুক্তি দিতে,অঙ্কুরের বিরুদ্ধে বলতে,তা বলে আমার শুনতে চাওয়া না চাওয়ার মতকে এটুকো সম্মান দিন?

-কেনো?কেনো অঙ্কুরের সবটা শুনতে চাও‌ না তুমি?শুধুমাত্র ওর বাইরেরটা দিয়ে কেনো ওকে যাচাই করছো আহানিতা?যে ছেলেটা কাউকে নিজের জীবনে জড়াতে চায়না কোনোদিন,কাউকে ভালোবাসার কথা ভাবতেও পারে না,আজ সেই ছেলেটা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে আহানিতা।এসবের কারন জানো আহানিতা?কারন ও তোমাকে….

-কারন উনি আমাকে শাস্তি দিতে চান!

-না!শাস্তি নয়!ও তো তোমাকে….

ধরাম শব্দে দরজা খুলে গেলো।চমকে উঠে চশমা ঠেলে তাকালাম দরজায়।অঙ্কুর এসেছেন।ঘৃনাটা বরাদ্দ ছিলো তার।কিন্তু তার চেহারার অবস্থা দেখে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।উশকোখুশকো চুল,চোখ লাল হয়ে কোঠরে বসে যাওয়া টাইপ।ওনার সাথেই আরেকজন বয়স্ক লোকও এসেছেন।অঙ্কুর এগোলেন।একপলক রোহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে,একটা কাগজ এনে আমার সামনে ছুড়ে মেরে শান্ত গলায় বললেন,

-সাইন ইট!

বিন্দুমাত্র‌ গুরুত্ব না দিয়ে অন্যদিকে তাকালাম আবারো।উনি আবারো বললেন,

-সময় নষ্ট করবেন না মিস অদ্রি!সাইন ইট!

চুপচাপ বসেই‌ রপলাম।হুট করে আমার ওড়না হাতে পেচিয়ে ধরলেন অঙ্কুর।টান পরতেই উঠে দাড়ালাম।কিছু বলার আগেই চশমাটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলেন উনি।বললেন,

-সাইনটা করুন!আপনাকে আপনার মনিমার কাছে দিয়ে আসবো!

মনিমার কাছে নিয়ে যাবে শুনেই চোখ চকচক করে উঠলো আমার।পরক্ষনে কাগজে সাইন করার শর্ত মাথায় আসতেই সবটুকো খুশি নুইয়ে গেলো।বললাম,

-কিসের কাগজ ওটা?

-আমাদের বিয়ের!

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম তার দিকে।তারমানে এবারের শর্ত মনিমার কাছে যেতে চাইলে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে হবে আমাকে।করবো না।বললাম,

-আগেই বলেছি,পচে মরবো এ বাসায়,তবুও কোনো বিয়ে হবে না!করবো না আপনাকে বিয়ে!

-সাইনটা করুন মিস অদ্রি!ডোন্ট ওয়েস্ট টাইম!

-করবো না বললাম তো!

-আপনি আপনার মনিমার কাছে যেতে চান না?

-চাই।তবে আপনাকে বিয়ে করে নয়!

-দেখুন!আপনাকে যেতে হলে আমার শর্ত মেনেই যেতে হবে!

-যাবো না,তবুও আপনার শর্তে রাজি হবো না!

উনি হাত মুঠো করেই দাড়িয়ে ছিলেন এতোক্ষন।জোরে শ্বাস নিয়ে এদিকওদিক হেটে আঙুল কপালে স্লাইড করালেন।তারপর একদম আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন,

-মিসেস আফরা খানম হসপিটালাইজড্ মিস অদ্রি!গতকাল সকালে হার্ট এটাক করেছেন উনি!

পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো আমার।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।পেছোতে পেছোতে বললাম,

-ন্ না,ম্ মনিমা…

-আপনাকে না দেখতে পেয়ে ওনার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।সাইনটা করুন!নিয়ে যাবো আপনাকে তার কাছে।

একটু থামলাম।মনিমার অসুস্থ্য হওয়ার খবরটা মিথ্যে হতে পারে।যদি এটা বলে উনি আমাকে ঠকিয়ে….একটা শুকনো ঢোক গিলে কোনোমতে বললাম,

-ব্ বিশ্বাস করি না আপনাকে।কিছুই হয় নি মনিমার।

অঙ্কুর আবারো কপাল ধরে এদিক ওদিক তাকালেন।তারপর কি একটা ভেবে মোবাইল বের করে সামনে ধরলেন আমার।কান্নার বেগ বাড়লো।সত্যিই মনিমা হসপিটালের বেডে শুয়ে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক।রাগে হিতাহিত বোধ হারিয়ে ওনার কলার ধরে চেচিয়ে বললাম,

-মনিমা দুইদিন হলো হসপিটালাইজড্!আর আপনি আজ বলছেন আমাকে?

উনি শান্তভাবে বললেন,

-আমি ওনার কাছেই ছিলাম।কাল থেকে উনি ইমপ্রুভই করছিলেন।ভালো রেসপন্স পাচ্ছিলো ডক্টররা।আজ হঠাৎ….

কলার ছেড়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে একছুট লাগালাম বাইরের দিকে।দরজায় কাছে যেতেই অঙ্কুর পথ আগলে দাড়ালেন।বললেন,

-এভাবে যেতে পারেন না আপনি!

-আপনি মানুষ?একজন মুমুর্ষ রোগী,আমার মনিমা,উনি….উনি হসপিটালে,আর আপনি….

অঙ্কুর কোনো গুরুত্ব দেননি আমার কথাকে।কথা শেষ করলেও উনি বুঝতেন না জানি।রোহান ভাইয়ার দিকে এগিয়ে বললাম,

-ভাইয়া?আজ তো কিছু বলুন?

উনি করুনভাবে তাকালেন আমার দিকে।চলে আসতে যাচ্ছিলাম।অঙ্কুর আবারো পথ আটকে দিয়ে বললেন,

-আমি আপনাকে নিয়ে কোনো কমপ্রোমাইজ করতে চাইনা মিস অদ্রি।পেপারটাতে সাইন করুন,আমি নিজে আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো।

-আপনি এই মুহুর্তেও…..

-প্রতিটা মুহুর্তেই এএসএ স্বার্থপর!

-যদি সাইন না করি?

-আপনাকে না দেখে আপনার মনিমার সবরকমের অবস্থার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।

আর কোনো উপায় আছে?কোনো পথ খোলা আছে আমার জন্য?মনিমা ছাড়া কেউ নেই‌ আমার।তার কিছু হয়ে গেলে….না!আমাকে না পেয়ে আরো অসুস্থ্য হয়ে পরবে মনিমা।জোরে একটা শ্বাস নিলাম।চোখের পানিও মুছলাম,কিন্তু আবারো ভিজে উঠলো গাল।কাগজটা তুলে শক্ত হাতে সাইন করে দিলাম ওতে।চশমাটা ছাড়া আর চোখের জলে আরো ঝাপসা হয়ে থাকা চোখে রেজিস্ট্রি পেপারের ম্যারেজ সার্টিফিকেট কথাটা জ্বলজ্বল করছিলো যেনো।পাথরের মতো এগিয়ে গিয়ে অঙ্কুরের সামনে ধরে বললাম,

-বলেছিলেন জোর করবেন না।এভাবে বাধ্য করবেন এমনটা ভাবিনি।এই নিন।সাইন করে দিয়েছি।

অঙ্কুর কাগজটা নিয়ে নিজেও সাইন করলেন।ওনার সাথে আসা বয়স্ক লোকটিকে ইশারা করতেই উনি ইসলামিক নিয়মে বিয়ের জন্য কবুল বলতে বলেন আমাকে।অঙ্কুর এসে মাথায় ওড়না টেনে দিলেন আমার।অনুভূতিহীন যন্ত্রের মতো লাগছিলো নিজেকে।যার নিজের কোনো কথা নেই,নিজের কোনো আবেগ নেই।অঙ্কুর বললেন,

-তাড়াতাড়ি কবুলটা বলুন মিস অদ্রি!আপনার মনিমা….

চোখ বন্ধ করে একশ্বাসে তিনবার কবুল বলে দিলাম।অঙ্কুর নিজেও বললেন।বিয়ে!বিয়েটা হয়েই গেলো।দুটো মানুষের নয়,দুটো মনেরও নয়।একজনের জেদের কাছে অন্যজনের আত্মসম্মান হেরে যাওয়ার।অঙ্কুরের শর্তের সাথে আমার দুর্বলতার।নায়েব কাকা,কাজী,রোহান ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ বলে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।অঙ্কুর চুপ করে অন্যদিক তাকিয়ে।ওনার সামনে হাতজোর করে দাড়িয়ে শান্তভাবে বললাম,

-আপনি যা চেয়েছিলেন,তাই করেছি মিস্টার অঙ্কুর।বিয়েটা হয়ে গেছে।এবার প্লিজ,আমাকে মনিমার কাছে নিয়ে চলুন।প্লিজ!

উনি তাকালেন আমার দিকে।হাত নামিয়ে দিলেন আমার।তারপর দুহাতে আমার দুগাল স্পর্শ করলেন উনি।হাত মুঠো করে সংযত করলাম নিজেকে ওই স্পর্শে।আলতোভাবে আমার কপালে ঠোট ছুইয়ে অঙ্কুর ধীর গলায় বললেন,

-সরি।

…..

-তুমি আমার বউ অদ্রি!ইউ আর মাই ওয়াইফ!

আমার হাত ধরেই উনি বেরিয়ে এলেন বাসা থেকে।ওই স্পর্শকে বাধা দেওয়ার,অস্বীকার করার আর কোনো উপায় নেই আমার।দাতে দাত চেপে সহ্য করে তার সাথে বেরিয়ে এলাম।আমাকে ফ্রন্টসিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন উনি।অবাধ্য চোখের জল ঝড়তেই থাকলো অনবরত।

#চলবে….
#চলবে….

[ গল্পটা কাল্পনিক।অনুগ্রহ করে কেউ বাস্তবের সাথে মেলাতে যাবেন না।ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here