সাইকো_লাভার পর্বঃ২১

সাইকো_লাভার পর্বঃ২১
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম

আশরাফ চৌধুরী আর আদিকে একটা জঙ্গলের ভিতরে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।তাদের সামনেই বসে আছে সাথী আর সেই ছেলেটি।তাদের মুখে রহস্যময় হাসি।

আশরাফঃ কী চাইছো তোমরা,,,আমাদের এভাবে আঁটকে রেখেছো কেন?(রেগে চিৎকার করে)

সাথীঃ প্রতিশোধ নিতে,,,তোর মেয়ে বউকে যেভাবে উপরে পাঠিয়েছি ঠিক সেভাবেই তোর পুরো পরিবারকে উপরে পাঠিয়ে প্রতিশোধ নিব,,,তখন না হয় পুরো পরিবার নিয়ে পিকনিক করিস।(বলেই অট্টহাসিতে মেতে উঠল)

আশরাফঃ তততার মানে তোমরাই খুন করেছো।(কাঁপা কাঁপা গলায়)

সাথীঃ হে হে আমিই খুন করেছি তোর মেয়ে বউকে,,,আমাকে আমার পরিবার থেকে আলাদা করে তরা কী ভেবেছিস তদের পরিবার নিয়ে তদের আমি সুখে থাকতে দিব।

আদিঃ তুমি তোমার কর্মের ফল পেয়েছো,,,তোমার কর্ম ফলই তোমাকে একা করে দিয়েছে।

সাথীঃ একদম চুপ কোন কথা বলবি না,,,তুই আমার পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিস,,,তোর জন্য আজও চৌধুরীরা বেঁচে আছে,,,সায়ানকে ঐদিন তোর জন্য মারতে পারি নি,,,তুই সেদিন না আসলে সায়ানকে সেদিনি মেরে দিতাম,,,কিন্তু তুই এসে বাঁচিয়ে নিলি তার জন্য আগে তকে শেষ করতে চেয়েছি,,,কিন্তু তুই তোর ভাগ্যের জোরে আর ঐ দিয়ার জন্য এখনও বেঁচে আছিস।কিন্তু আর না তকে আজই শেষ করে দিব।

আদিঃ মোর ভয়ংকরী রানী থাকিতে তুমি মোদের কিচ্ছু করিতে পারিবে না গো পাতি।(ব্যাঙ্গ করে)

সাথীঃ কোথায় তোর সেই ভয়ংকরী রানী,,,ডাক তোর রানীকে আজ তোদের সব কটাকে একসাথে মেরে আমার প্রতিশোধ নিবো।(দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বলল)

ছেলেটি এবার মুখ খুলল,,,

ছেলেটিঃ তুমি দিয়ার কোন ক্ষতি করবে না কথা দিয়েছো,,,দিয়াকে তুমি আমার হাতে তুলে দিবে বলেছো।

সাথীঃ যা দিয়ে দিলাম তোরে তোর দিয়াকে।(কথাটা বলেই বাঁকা হেঁসে বন্ধুক ঘুরাতে লাগল)

ছেলেটি এবার আদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,

ছেলেটিঃ দিয়া কোথায়?

আদিঃ হা হা হা,,,দিয়া আমার পকেটে আছে দেখে যা।(মজা করে)

সাথীঃ তোর সাহস আছে বলতে হবে,,,মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও তুই মজা করছিস।

আদিঃ সেটা সময়ই বলে দিবে,,,,চাচা শ্বশুর মিয়া আপনাকে পুরা হিরোর মত লাগছে,,,আরেকটা বিয়ে করানো যাবে।(হেসে)

আশরাফঃ আদি তুমি এমন একটা সময়েও মজা করছো।

ছেলেটিঃ মরার ভয়ে পাগল হয়ে গেছে তাই এমন করছে।

আশরাফঃ তোমাদের শত্রুতা ত চৌধুরীদের সাথে,,,আমাকে তোমরা মেরে ফেলো কিন্তু আদিকে ছেড়ে দেও প্লিজ।এই ছেলেটা আমার জন্য কম কষ্ট পায় নি,,,শুধু মাত্র আমার ভুল বুঝার জন্য।(মাথা নিচু করে অনুরোধ করে)

সাথীঃ এখন এত দরদ উতলে পড়ছে কেন আশরাফ চৌধুরী?এতদিন ত নিজের মেয়ে,বউ খুনের দায়ে আদিকে খুন করতে চেয়েছো,,,এখন এত দরদ উতলে পড়ছে কেন?(বসা থেকে উঠে একটা চেয়ারে লাথি দিয়ে)

আশরাফঃ আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি,,,আদি আমার মেয়ে,বউকে খুন করে নি,,,খুন করেছো তোমরা,,,আর সেই খুনের দায় আদির গাড়ে চাপিয়েছেও তোমরা,,,ষড়যন্ত্র করে আদিকে ফাঁসিয়েছো তোমরা যাতে আদিকে আমরা ভুল বুঝি আর দিয়ার থেকে দূরে সরিয়ে দেই।(কেঁদে)

ছেলেটিঃ হে সেটাই বড় ভুল করেছি,,,আদিকে ওদের সাথেই উপরে পাঠানোর দরকার ছিল আমার,,,তবে এতদিনে দিয়া আমার হত,শুধুমাত্র আমার ভুলের জন্য দিয়াকে আজ এই আদি বিয়ে করে নিয়েছে।ভেবেছিলাম আদিকে দিয়া ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে,,,আর আমি তখন দিয়াকে আপন করে নিব,,,আদিকে পুলিশ ধরেও নিয়ে যায় কিন্তু আদির বাবা টাকার জোড়ে আদিকে ছাড়িয়ে আনে,,,তারপরও ভেবেছিলাম দিয়া আদিকে অবিশ্বাস করে দূরে রাখবে,,,কিন্তু দিয়া আদিকে এতই বিশ্বাস করত যে ঐ রায়ানকে দিয়ে খবর নেয় আর আদিকে নির্দোষ প্রমান করে,,,তখন আদিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছি কিন্তু আদি মিথ্যা খুনের দায়ে এরেস্ট হয়ে ডিপ্রেশনে ছিল যে বাড়ি থেকেই বের হচ্ছিল না,,,তাই আদিকে মারার সুযোগও পাচ্ছিলাম না,,,তাই দিয়া প্রমান নিয়ে আদির কাছে পৌঁছানোর আগেই দিয়াকে Blackmail করি,,,আর দিয়া সেটা মেনেই আদিকে অবিশ্বাস করার নাটক করে আদির থেকে দূরে থাকে কিন্তু আবার এই আদি এসে সব শেষ করে দেয়।(রেগে চিৎকার করে)

আদিঃ এত সোজা না আমার থেকে দিয়াকে আলাদা করা ওকে,,,দিয়া আমার ছিল,আমার আছে,আমারই থাকবে।আগে জানলে তকে মেরে পুঁতে দিতাম,,,আমার দিয়ার দিকে তোর নজর আছে জানলে তোর চোখ দুটোই উপড়ে ফেলতাম।(রেগে চিৎকার করে)

আশরাফঃ এত ষড়যন্ত্র করেছো তোমরা,,,তোমাদের কাউকে ছাড়ব না আমি,,,তোমরা আমার মেয়ের সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছো,,,খুন করে ফেলব।(রেগে উত্তেজিত হয়ে হাতের বাঁধন ছাড়া পাওয়ার জন্য)

আদিঃ আহ চাচা শ্বশুর মিয়া আপনি শান্ত হন,,,অর মৃত্যু আমার হাতেই লিখা আছে।

আশরাফঃ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও আদি,,,আমি খুব বড় ভুল করেছি।

আদিঃ আহহ্ চাচা শ্বশুর মিয়া এসব বাদ দেন ত,,,আমি ত অপেক্ষা করছি আমার বউটার জন্য,,,এখনও এন্ট্রি নিচ্ছে না কেন?

সাথীঃ তদের এসব মেলোড্রামা দেখার সময় আমার হাতে নেই,,,এখনই তদের মেরে উপরে পাঠিয়ে দিব।(বন্ধুক তাক করে)

ছেলেটিঃ তুমি ওদের মারবে না,,,আমি এখনও দিয়াকে পাই নি,,,আমার হাতে দিয়াকে তুলে দিবে তারপর তুমি ওদের সাথে যা করার করো।(সাথীকে থামিয়ে)

সাথী কিছু না বলে রেগে সেখান থেকে চলে যায় আর তার পিছন পিছন ছেলেটাও চলে যায়।

🍁২ ঘন্টা আগে🍁

আদি আর দিয়া হসপিটালের নিচের একটা রেস্টুরেন্টেই বসে আছে যেখানে আদি দিয়াকে নিয়ে এসেছিল খাবার জন্য,,,খাবার জন্য বললে ভুল হবে রায়ানের থেকে দূরে রাখার জন্য নিয়ে এসেছে,,,তখন আদির একটা ফোন আসে সেটা রিসিভ করে কিন্তু নেট সমস্যার কারনে কথা বুঝতে পারছিল না তাই বাইরে যায় ফোন রিসিভ করতে।আদির কথা বলা শেষ হলে যখন ভিতরে আসবে তখন সেখানে আশরাফ আসে আর আদির হাত ধরে বলে,,,

আশরাফঃ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও আদি,,,আমি এতদিন তোমাকে ভুল বুঝে এত খারাপ আচরন করেছি,,দিয়ার থেকে তোমাকে দূরে রেখেছি,,,প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও।(নরম গলায়)

আদি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে কিছুই বলছে না,,,যে মানুষটা এতদিন আদিকে শয্যই করতে পারত না সে আজ হঠাৎ করে আদির কাছে ক্ষমা চাইছে আদি কিছুই বুঝতে পারছে না।আদি কিছু বলছে না বলে আশরাফ আবার বলে উঠল,,

আশরাফঃ আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছো যে আমি তোমার কাছে আজ হঠাৎ ক্ষমা চাইছি কেন?আজ যখন রায়হান আমাকে জানাল যে দিয়া বিশ্বাস করে তুমি খুনী নও,,,তখন আমার কাছে থাকা ছবিগুলো চেক করি যে ছবিগুলো আমাকে কেউ পার্সেল করে পাঠিয়েছিল,,,তনয়া আর আমার স্ত্রীর খুনের পরে,,,সেখানে একটা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুমি আমার স্ত্রী আর মেয়ে তোমার সাথে গাড়িতে করে যাচ্ছে।আরেকটা ছবি যেখানে তোমার হাতে গান আর তোমার সামনে আমার স্ত্রী আর মেয়ে পড়ে আছে তোমাদের সেই পুরনো ফ্যাক্টরিতে।তখন ছবিগুলো এক পলক দেখেই আমার মনে হয়েছে তুমিই খুনী,,,একবারও মনে হয় নি ছবিগুলো ইডিট করা,,,তখন আমি তোমার উপর বিশ্বাস করতে পারি নি দিয়ার মত,,,আর সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।আজ আমি ছবিগুলো ভালো করে দেখি এবং আমার এক বন্ধুকে ছবিগুলো দেই জানতে ছবিগুলো আসল না নকল,,,তারপর অয় আমাকে জানায় ছবিগুলো ইডিট করা।আমার এই ভুলের জন্য তোমার সাথে কত খারাপ আচরন করেছি,,,প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।(কথাগুলো বলতে গিয়ে আশরাফের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে)

আদি আশরাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,,

আদিঃ চাচা শ্বশুর মিয়া আপনার জায়গায় থাকলে যে কেউ একই কাজ করত,,,আর আপনি আমার বাবার মত ত দয়াকরে ক্ষমা চাইবেন না।

আশরাফ আর কিছু বলবে তার আগেই তাদেরকে কয়েকজন কালো পোষাক ধারী লোকজন গান নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে,,,আর তাদেরকে এখানে নিয়ে আসে।

🍁বর্তমান🍁

আদি মনের সুখে গান গাইছে,,আর তার পাশেই আশরাফ চৌধুরী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,,,আর ভাবছে এই ছেলেটা এত কুল মুডে আছে কীভাবে?

আশরাফঃ আদি তুমি এমন শান্ত আছো কীভাবে?

আদিঃ আমার মনে অনেক খুশী,,,আমার ভয়ংকরী রানী আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে,,,আর হিরোর মত ওপস সরি হিরোইন এর মত উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।

বলেই আদি আবার গান গাইতে লাগল,,,আর আশরাফের সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেছে কিছুই বুঝতে পারে নি তাই সে আর কিছু না বলে চুপ করে আছে।

#চলবে…

(গতকাল আমার উকিল নানা মারা গেছে তাই গল্প দিতে পারি নি😥)

(গল্পের রহস্য ভেদ করে দিয়েছি,,,আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্টে জানাবেন,,,আমি ক্লিয়ার করে দিব,,,আর যারা যারা বলেছেন ছেলেটি রায়ান তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা,,,কালকের পর্বে ক্লিয়ার করে দিব ছেলেটি কে?আর আপনারা যদি এখন বুঝতে পারেন ছেলেটি কে তবে সেটা জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here