সুখতারার খোঁজে পর্ব -০২+৩

#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
#পর্ব_৩

কবিতা উত্তেজিত! তার চোখদুটি কেমন সন্দিহান চোখে তাকিয়ে তারা আর অভ্রের দিকে। বেশ খুটিয়ে দেখছে দুজনকে। অভ্র এগিয়ে আসে কবিতার সামনে। একবার ফিরে তারাকে দেখেই হো হো করে হেঁসে ওঠে। যেন বিরাট হাসির কান্ড ঘটেছে কিয়ৎক্ষন আগে। কবিতার সন্দেহ কমে অবাক চাউনির আবির্ভাব। অভ্রের হঠাৎ হাসির কারন অদ্ভুত লাগছে। অভ্র খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে কবিতাকে,

-আরে,কবিতা এসো। দেখ, আমার শালীকা কিছুই আনেনি আমাদের রিসিপশনে। জানো জানপাখি? সে এক্কেবারে খালিহাতে এসেছে। তাই ওকে ধরেছিলাম। বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে তো একগাদা কালো গোলাপ নিয়ে এসেছিলো। আর এখন দেখ,কিছুই আনেনি। তাই একটু শাষাচ্ছিলাম।

এতক্ষনে সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে কবিতা। তারার রাগ হচ্ছে খুব। কত সহজেই মিথ্যে বানিয়ে বলতে পারে লোকটা। তারার নাক ছিটকে আসে। অভ্রকে পাশ কাটিয়ে তারার কাছে যায় কবিতা। হেঁসে তারাকে সামনে দাড়া করায়। কাধে হাত রেখে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,

-অভ্র! আমার বন্ধুবীকে কালো গোলাপ আনতে আমিই বলেছিলাম। তুমি কি মনে করেছো তারা কৃপন? ওর মতো আর কাউকেই আমি পাইনা। মাই বেস্টি!

অভ্র কথা ঘোরাতে পেরে সস্তি পায়। বলে ওঠে,

-আমিও না জানপাখি?

‘জানপাখি’ শব্দটা অতি চেনা তারার। তাদের কথার মাঝে এমন ‘জানপাখি’ শব্দটাও খুব ব্যাবহার করতো অভ্র। তবে তা নিতান্তই ঠুঙ্ক ডাক ছিলো! মিথ্যে ডাক! কবিতা হেঁসে বলে,

-উফফ! তুমিও না..আর তারা,তোকে না কাল বললাম তুই দুপুরের দিকে আসবি! দেখ গেস্টরা চলে এসেছে আর আমি সাজতেই পারিনি এখনো।চল সাজাবি চল..

অভ্র ভ্রুযুগল কুঁচকে বলে,

-এসব কি বলছো? ও সাজাতে পারে নাকি? ওয়েট, আমি এক্ষুনি পার্লারের লোক ডাকছি। যাকে তাকে সাজাতে বলছো যে?!

কথাটায় তারা হাসে। অভ্র কিছুটা অবাক হয়। তার কথার প্রতিত্তরে যে তারা হাসিটা দেখাবে ভাবেনি অভ্র। সে মনে করেছিলো হয়তো চোখের পানি লুকাতে ব্যাস্ত হবে তারা। কিন্তু সেটা না ঘটায় বেশ অখুশি অভ্র। তারা হেসেঁই কবিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-তোর জন্য স্পেশাল কিছু এনেছি কবি। আর সাজার জন্য যখন অভ্র ভাইয়া পার্লার থেকে থাকতে চাইছে ডাকুক। তোকে খুব সুন্দর লাগবে।

-কিন্তু ও যে বলছে তুই কিছুই আনিসনি?

-ভাইয়া আজকাল একটু বেশিই সয়তানি করছে। আজ নয়, পরে বলবো সবটা তোকে।

অভ্র চেয়াল খিচে ধরে। মেয়েটা স্মাটনেস দেখাচ্ছে, তাও অভ্রকে? রাগ দমিয়ে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে এসে বলে অভ্র,

-দুলাভাই! তুমি বরং দুলাভাই ডাকো তারা। আর শালিকাতো ঠিকিই বলেছে কবিতা, ওয়েট আমি পার্ল…

-তোমরা থাম প্লিজ!

অভ্র পকেট থেকে ফোন বের করতে গিয়েও থেমে যায়। কবিতার দিকে তাকিয়ে গালটা একটু টেনে বলে অভ্রকে,

-তুমি জানোনা, তারা কত্ত সুন্দর করে সাজাতে পারে।ইনফ্যাক্ট বিয়েতে তো আমাকে তারাই সাজিয়েছে। আর জানো? তুমি না আমার বিয়েতে সারপ্রাইজ ছিলে। আমিতো তারাকে বুঝতেই দেইনি আমার বর কে।

অভ্র যেন খুশিতে গদগদ কথাটা শুনে। কিন্তু তারা থমকে! এই সারপ্রাইজটা খুব বিকট ছিলো তার জন্য। তারা কবিতাকে নিয়ে যায়। অভ্র বুকে হাত গুজে অস্ফুটস্বরে মিনমিনিয়ে বলে,

-উফফ!কবিতারই বান্ধবী হতে হলো তারাকে? সুন্দর লাগছিলো মেয়েটাকে আজ!.

৪.
ফরসা গড়নের কবিতাকে লাল টকটকে লেহেঙ্গায় সাজিয়েছে তারা। শরীর ভর্তি গহনা কবিতার। আয়নায় তারা কবিতাকে দেখে মুচকি হাসে। ব্যাগ থেকে একটি ছোট্ট বাক্স বের করে কবিতাকে বলে তারা,

-এই নে!

কবিতা সেদিক পানে তাকিয়ে একটি ছোট্ট বাক্স দেখতেই এক ঝটকায় বক্সটা তারার থেকে নিয়ে নেয়। মুখে অনন্দ কবিতার,

-এতে কি আছে?

-খুলে দেখ!

কবিতা ঝটপট বাক্সের উপরের প্যাকেটটা খুলে ফেলে। আংটি! একদিন সপিংমলে যে আংটিটা কবিতা মাত্র বাড়তি পঞ্চাশ টাকার জন্য কিনতে পারেনি, সেই আংটিটাই তারা নিয়ে এসেছে। দামটা একটু বেশিই ছিলো। তাই কেনা হয়নি কবিতার। কবিতা এক চিলতে হাসে। আনন্দিত কন্ঠে বলে,

-ত্ তোর মনে আছে? দে…তুই নিজ হাতে পড়িয়ে দে!

তারা বা হাতের একটি আঙুলে পড়িয়ে দেয় কবিতার।মুখে হাসি রেখে বলে,

-বাহ্! সুন্দর।

কবিতা লাজুক দৃষ্টি নিয়ে মাথা নত করে। এরপর তারাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে। পুরো গার্ডেনটা আলো দিয়ে আলোপুরি করানো হয়েছে। লাল,সবুজ,হলুদ কত কত আলো! সেই আলোর মাঝে কবিতাকে নিয়ে হেটে আসে তারা।

কমলা কালারের শেরোয়ানি পড়েছে অভ্র! বন্ধুদের সাথে বাইরে দাড়িয়ে সে। বেশ কয়েকজন বন্ধু এসেছে অভ্রের। কোলাহল বাড়েছে আগের থেকে। লোকসংখ্যা দু’শোতে পৌঁছেছে ইতিমধ্যে। কবিতা হেঁটে এসে দাড়ায় অভ্রের সামনে। অভ্র দেখতেই বিমোহিত হয়ে তাকায়। কিন্তু কবিতার দিকে নয়, তার স্ত্রীর পাশে তারার দিকে। অভ্রের অদ্ভুত লাগছে সাজাগোজ না করা মেয়েটার মুখে কেমন মায়া! তারা সেখানে দাড়ায় না। কোন রকমে কবিতাকে ছেড়েই সরে যায় গার্ডেনের এক কোনে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায় সেদিকে। কবিতা তুড়ি মেরে অভ্রের দৃষ্টি সরিয়ে বলে,

-কেমন লাগছে আমায়?

অভ্র ঠোঁট টেনে হাসে। বলে,

-খুব ভালো লাগছে।

কবিতার এতটুকু প্রশংসা মটেই ভালো লাগেনি। কিন্তু অভ্রের চোখদুটি খুজছে তারাকে। নিমেষেই কই গেলো মেয়েটা? একে একে কবিতা,অভ্রকে ঘেরাও করে রিলেটিভরা।

এক কোনে দাড়িয়ে তারা। এখানে থাকতে তার মোটেও ভালো লাগছে না। তার একবার কবিতাকে বলে আসা উচিত ছিলো সে চলে যাবে। কিন্তু ওই অভ্রের জন্যই তো চলে এলো। হয়তো আবারো অপমান করতে লেগে পড়তো! নয়তো মিথ্যে বানিয়ে বলতো! তারা এদিক সেদিক তাকিয়ে পাশের বেঞ্চটায় বসে পড়ে।

-হেই সুন্দরী!

কথাটা কর্নকুহরে আসতেই পেছনে ফিরে তাকায় তারা। সামনে একটি সুদর্ষন ছেলে দাড়িয়ে। টাই, কোর্ট, প্যান্ট পড়া ছেলেটার বয়স খুব বেশি নয়। তারা সৌজন্যে দেখাতে হাসে। ছেলেটা সামনে এসে বলে,

-আপনার নাম কি?

-তারা।

ছেলেটি অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,

-স্টাআআর? তারাহ্! ওয়াও, তা আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

‘ওও এটাকে তাহলে কথা বলা বলে না? ন্যাকামো হচ্ছে?’ মনে মনে বিরবির করে। এবারে মুখ ফুটে বললো,

-বলুন না কি বলবেন।

-প্রথমত, তোমায় তুমি করে বলতে পারি?

তারা না চাইতেও হেসে বলে,

-হু বলুন না। কি বলবেন!

-আমি নজিবুল। অভ্রের বন্ধু। আপনাকে দূর থেকে দেখছিলাম, একা একা বসে আছেন। কি করেন একলা এখানে?

-কিছুই না। আর কিছু?

-না মানে..আসলে..

তারা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-তোতলাচ্ছেন কেন? যা বলতে এসেছেন ঝটপট বলেফেলুন।

-মানে..বলছিলাম,আমরা বন্ধু হতে পারি?

তারা কিছু বলবে তার আগেই অভ্র তারার এক হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,

-এই মে, তোর সমস্যা কোথায়? যখন দেখি যার তার সাথে নষ্টি ফষ্টি করে বেরাচ্ছিস! কি সমস্যা তোর? একটা পর একটা আছেই, তাইনা?

উপস্থিত সবাই অভ্রের চিৎকারে স্তব্ধ! নিরবতা ছেয়ে যায় এটুকুনিই কথাতেই। ভির ঠেলে ছুটে আসে কবিতা! দুজনের মাঝখানে দাড়িয়ে অবাক হয়ে দাড়ায় কবিতা। হঠাৎ কি হলো বোধগম্য হচ্ছে না কবিতার। নেমে আসে পাড়া প্রতিবেশীর গুনগুনে আওয়াজ! তারা চেয়াল শক্ত করে নেয়। অভ্র বলছেই,

-এখন আমার ফ্রেন্ডকেও ফাঁসাচ্ছিস? একটা পাইনি তো কি হয়েছে দেশে ছেলের…

অভ্রের কথা শেষ হওয়ার আগেই কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় অভ্রকে। মাথা হেলে চেয়াল শক্ত করে ফের উঠে দাড়ায় অভ্র! তারা চেঁচিয়ে বলে,

-কোন সাহসে এতগুলো বাজে কথা বলছেন আমায়? আমি কার সাথে থাকবো কার সাথে থাকবো না সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার! এতে আপনার কি অভ্রনীল অলীভ চৌধুরী? কোন সাহসে স্পর্শ করছেন আমায় ওই নোংরা হাতে?

গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো তারা। অনেক সহ্য করেছে! আর নয়! অভ্রের মুখ মুহুর্তে লাল আভায় রঙিন হয়। আশেপাশের সবার মাঝে নিঘুম,নিশ্চুপ সাথে নীরবতা! অপলক ভাবে তাকিয়ে সবাই। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবটা! অভ্র একপা একপা করে এগিয়ে যায় তারার দিকে। তারা ভয়ে পেছোয় না! কেন ভয় পাবে? অভ্রের খুব বাজে অভ্যাস রেগে গেলেই গাল টিপে ধরা। অভ্র হাতদুটো এগিয়ে দুহাতে গাল টিপে ধরতেই ছিটকে সরিয়ে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয় তারা! ভিতু তারা আর নিজের মধ্যে নেই। কোথাও তার সাহস জাগছে আজ! অভ্রের চোখ ছলছল করে ওঠে। তারা আরেক দফা চেঁচায়,

-কথায় কথায় গালে হাত দেয়া বন্ধ করুন অভ্র। আপনার অসভ্যতার পরিচয় দিতে বাধ্য করবেন না! আমি আর স্পেয়ার করবো না!
#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ৪

কেটে গেছে চারদিন। সেদিনের পর তারা নিজেকে খুব একা মনে করে। একাকিত্বটা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। কারন, তার বেস্টফ্রেন্ড তাকে ভুল বুঝছে! শতাধিক ফোন দেওয়ার পরও ফোন রিসিভ করেনি কবিতা! সেদিন অভ্রের নোংরামি গুলো কারো চোখে পড়েনি। তার অশ্লীল কথা, অসভ্যতা কেউ দেখেইনি! হয়তো দেখেও না দেখার ভান ধরেছিলো সবাই। অনেকেই অনেক কটু কথা বলে গালিগালাজ করেছে তারাকে! অথচ, অপরাধী আড়ালে হেসেছে! কবিতা সেদিন প্রতিবাদ করলেও কাল থেকে কবিতা কথা বলছে না। ফোনটাও রিসিভ করছে না! অভ্র কি ভুল বুঝালো কবিতাকে? আবারো মিথ্যের বেসাতি খুব করে ডোকালো?

দুদীন আগে..

তারা ঘরে এপাশ থেকে ওপাশ হাটাহাটি করছে! যে কবিতা তাকে দু মিনিট পরপর ফোন করতো সেদিনের পর থেকে আর কথা হয়নি কবিতার সাথে। তারা তৃতীয় বারের মত ফোন দিতেই কবিতা ফোন রিসিভ করে। তারাকে বলতে না দিয়েই কবিতা রেগে উত্তর দেয়,

-এত ফোন করার কি আছে? তুই তো জানিস, এখন আমি বিবাহিত তারা। আমার একটা সংসার আছে! সেখানে তুই কেন এত ডিস্টার্ব করছিস?

কথাগুলো করাঘাত করে বুকে তারার। যেন বুকের এপিট ওপিট ছ্যাত করে কেউ ছুড়ি বসিয়ে দিলো। তারা শুকনো ডোক গিলে আনমনেই বলে ওঠে,

-কবিহ্!

-উফফ!তারা যা বলবি স্পষ্ট স্বরে বল। আমার অনেক কাজ আছে।

-তুই আমার উপর রেগে কবি?

কথাটার পর কিছুক্ষণ নিরবতা কাটে। তারপর কবিতা বলে,

-রাগ করার কি আছে?

-দেখ আমি….

ফোনের ওপাড়ে বিরক্তির শ্বাস ছেড়ে বলে কবিতা,

-অনেক হলোতো তারা! আমি রাখছি।

-প্লিজ কবি দাড়া, এতটুকু শুধু বল তুই কি রেগে আছিস?

কবিতা চুপ! কবিতার এমন নিস্তব্ধতা তারার বুক ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। তারা অনুনয়ের স্বরে ফের বলে,

-কবি চুপ কেন তুই?

-তুই কেন অভ্রের ওই বন্ধু..কি যেন নাম.. নজিবুল! ওর সাথে তোর কি?

-আমি চিনি না ওই লোকটাকে! তোকে অভ্র ভুল বুঝাচ্ছে কবিতা। আমায় বিশ্বাস কর একটি বারের জন্য।

-ব্যাস তারা। সেদিন অভ্র তোর ভাই হিসেবে তোকে শাষন করতে গিয়েছিলো। আর তুই?…আমি আর কথা বলতে পারছি না। রাখ তুই।

কবিতা ফোন কেটে দেয়। তারার সে রাতেও হয়না ঘুম!

_____

বুক চিড়ে দূর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তারার। গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। তারার কোন কিছুতেই মন বসছে না! খেতে গেলেও গলায় বাধছে!

-মা! তারা,তোরা কই? কি রে?

মেঝে থেকে উঠে চোখ মুছে বেড়িয়ে আসে তারা। বাইরে আসতেই নিজের বড় আব্বুকে দেখে হতবাক হয়। হাতে মিষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে উনি। তারা নিজেকে কড়া করে নেয়। এই লোকটা শুধু নিজের সার্থটাকেই সবসময় গুরুত্ব দেয়। অভ্রকে এখানে আনার কারনটা যে নিজের সার্থ ছাড়া কিছু নয় জানে তারা। তারাকে দেখেই এগিয়ে আসেন এখতেয়ার আহমেদ। মিষ্টি প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলেন,

-নে মা! এগুলো ঘরে রেখে আয়। তোর মা ঘুমোচ্ছে নাকি?

তারা চোখ বুজে একটা শ্বাস নিয়ে বলে,

-কি বলবে আমাকেই বলো চাচা। মা’কে কেউ অযথা বিরক্ত করবে এটা আমি মানতে পারবো না।

কথাগুলোয় যে উনি অখুশি তা দেখে বোঝায় যায়। কিন্তু তবুও টেনেটুনে হাসছেন এখতেয়ার। বলেন,

-আগে মিষ্টিটা নিবি তো..?

-প্রয়োজন নেই চাচা। আপনি বলেন কেন এসেছেন?

-বিয়ে! তোর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে তারা। বিরাট বড়লোক বাড়ির থেকে।

আর দমে থাকতে পারেনা তারা। চেঁচিয়ে বলে,

-কত কত? এতদিনে আমরা মরলাম না বাঁচলাম এতে তো তোমার কিছু যেতে আসতে দেখিনি? আমার বিয়েতে তোমার কি স্বার্থ চাচা? এই জমিটুকু? এর জন্য এত তাড়া আমার বিয়ের? নিজের ভাবিকে আগে দেখাশোনা করতে এসো। একটু ভালোবাসো! মহিলাটি শান্তিতে মরতে পারবে। আমি জানি, এখন হয়তো বলবে আমার সময় নেই তারা! রাখ তোমার সময়, তনয়া, তূর তো তোমারি ছেলে-মেয়ে! কখনো তাদের বলেছো যা তো তোদের চাচীকে একটি বার দেখে আয়। কিছু প্রয়োজন কি না জেনে আয়! একটি মেয়ে আর কতদিক সামলাবে! বরং এ বাড়ির আশেপাশেও আসতে দাওনা! চলে যান চাচা, অত লোভ ভালো নয়!

এখতেয়ার আহমেদ ভেজা বেড়ালের মত প্যাকেট হাতে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে তারা। এইতো তার ভালোবাসা! আদেক্ষেতা! আজকাল লোকটা জোর করতেও ভয় পায়।

_______
ফোনের দিকে এক চোখে তাকিয়ে কবিতা! তার চেনা তারা কয়েক মুহুর্তে পালটে গেছে! হাতটি উঁচু করে আংটিকে দেখে কবিতা! কবিতার কান্না আসছে। তারার সাথে যা করলো তা কি ঠিক হলো? এতোটা কঠোরতা না দেখালেও চলতো!

কবিতার ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে অভ্র। আয়নার সামনে টাই ঠিক করতে করতে একবার আড়চোখে কবিতার দিকে তাকায়। বিষন্ন মুখ কবিতার। সেদিনের পর অভ্র তাকে নানাভাবে বুঝিয়েছে সবটা দোষ তারার। নজিবুল কিছু বলার সুযোগ পায়নি। তারাকে অপমান করার সময়ও তাকে আটকে রেখেছিলো অভ্র! মেয়েটাকে এত কষ্ট দিতে তার কি যে এক আনন্দ হয়, পৈশাচিক আনন্দ!

টাই না খুলেই অভ্র কবিতার সামনে গিয়ে বলে,

-কি হয়েছে কবিতা? কোন কারনে তুমি চিন্তিত?

-আমি কাল থেকে কলেজে যেতে চাই!

হাতের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো কবিতা। কথাটায় অভ্র ফিক করে হেঁসে দেয়। বলে,

-তো যাবে। আর তোমার তো পরিক্ষাও তাইনা?

-হুম।

-মনে রেখো তোমায় যেন তারার সাথে না দেখি! মেয়েটা প্রথম থেকেই কেমন সুবিধাবাদি।

কবিতার এসব কথা সহ্য হচ্ছে না। একমাত্র তারার জন্যই তার কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত! নয়তো এইচএসসি দেয়ার পর সে পড়তেই চায়নি। কলেজ, পড়াশোনা কোন কালেই পছন্দ নয় কবিতার, ছিলোও না! এতদিন তারা না থাকলে হয়তো অনেক আগেই পরাশোনা বন্ধ করে দিত কবিতা।

-এই যে কবিতা ম্যাম!

অভ্রে কন্ঠে ধ্যান ভাঙে কবিতার। বলেই চলে যাওয়ার জন্য ফিরে অভ্র। পেছন থেকে কবিতা হাত ধরে ফেলে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায় কবিতার দিকে। কবিতা উঠে টাই’টায় হাত দিতেই সরে যায় অভ্র। কবিতার ভ্রুযুগোল নেমে আসে। অভ্র সরে নিজে আয়নার সামনে গিয়ে টাই খুলে। তাজ্জব হয়ে যায় কবিতা। বিয়ের চারদিন হতে চললো অভ্র তাকে স্পর্শ করেনি! আর আজ যখন কবিতা তার টাই’টা খুলতে গেলো তখন সে সরে গেলো?

________

বিকেল হয়ে আসছে। ৩.৪৭ বাজে! তারার যেন খেয়ালই নেই এখন তার কচিং এ যাওয়ার সময়। মায়ের কাছে বসে আছে তারা। অসুস্থতা বাড়ছে লতিফার। তারা খেয়াল করে আগের মতন মা আর তাকে ডাকে না! খাইয়ে দিয়ে যেভাবে সুইয়ে দেয় তেমনিই থাকে। পাশ ফিরে শোয়ার সামর্থ্য নেই লতিফার। হঠাৎ পাশের টেবিলে ফোন বেজে উঠতেই একটু নড়েচড়ে বসে তারা। নামস্হানে ‘রাহুল’ লেখাটি জ্বলজ্বল করছে। মানুষটা অদ্ভুত! প্রতিদিন এ সময়ে ফোন করা তার যেন অভ্যাস হয়ে উঠেছে! তারা আনমনেই হেসে ফেলে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাড় থেকে রাহুলের আওয়াজ,

-আসলামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুম আসলাম ভাইয়া।

-তুমি আজও আসবে না?

-ওহ্। আমি আসছি!

-রাখো তাহলে।

তারা ফোন কেটে দেয়। মায়ের কপালে গাঢ় চুম্বন করে নিজ রুমে চলে আসে। একটি সালোয়ার কামিজ পড়ে রেডি হয়ে হয়ে নেয়। মা’কে আরেকবার বলে বেড়িয়ে পড়ে।

হাইওয়েতে..

বিকেলে রিকশা পেতে তেমন দাড়াতে হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা রিকশা পেয়ে যায়। রিকশায় উঠতেই তাড়া দেয় তারা। কিন্তু রিকসা চালাতে পারেনা রিকসাওয়ালা। কারন,রিকসার ঠিক সামনেই নজিবুল দাড়িয়ে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here