সূর্যস্নান পর্ব ২+৩

#সূর্যস্নান
#পর্ব_২
#Nishat_Tasnim_Nishi

উনি ইতস্ত করে বললেন,,

—-“নূপুর তোমার হাত টা দেও।”

আমি কিঞ্চিৎ চমকে নিদ্র ভাইয়া থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম। আমি চুপ করে দাড়িয়ে রয়েছি,এটা দেখে আরুশি আমার হাত টা টেনে উনার সামনে ধরে বললো,,”এত লজ্জা পেলে হবে?”

উনি আমাকে পরে দিলেন, এরপর আম্মুর জোরাজুরিতে আমিও চোখ বন্ধ করে পরিয়ে দিলাম। ব্যাস হয়ে গেলো আংটি বদল। রাত আট টার পর পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে ঘরে আসলাম। রাগে ফোসফোস করতে করতে জামা-কাপড় বদলে নিলাম। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা আম্মুর রুমে চলে আসলাম,আমাকে দেখে আম্মু হাসি মুখে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই আমি চেঁচিয়ে বললাম,,

—“একদম খুশি হবে না। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেসস করে এত বড় সিদ্ধান্ত কেনো নিলে?আমার কথার কী কোনো দাম নেই তোমাদের কাছে?”

আম্মু মুখ টা মলিন করে বললেন,,,”কেনো,তুই খুশি হোস নয়?আমরা কী তোর খারাপ চাইবো নাকি?”

—“আমি কি বলেছি, আমার খুশির কথা চিন্ত করতে?সবসময় কেনো তোমাদের সিদ্ধান্ত আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দাও।”

–“তোর বাবা উনাদের কথা দিয়েছে।”

—“কিন্তু কেনো?আমাকে না জিজ্ঞেস করে কেনো কথা দিবে?”

—“ছেলে তো ভালো,ওর পরিবারও তো ভালো।তুই তো চিনিস উনাদের,আর সবচেয়ে বড় কথা তুই আমাদের সামনে থাকবি।”

–“বাট লাইফ তো আমার, একবারও কি উচিত ছিলো না আমাকে জিজ্ঞেস করার?সবকিছুই তোমাদের মতো করেছি,আজ পর্যন্ত যা করতে বলেছো সেটাই করেছি।আমি কমার্স পড়তে চাইছি,তোমরা সাইন্স নিয়ে পড়তে বলেছো,তোমাদের কথামতো সাইন্স নিয়েছি, রিয়ার সাথে মিশতে বারন করেছো,বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়া স্বত্বেও আমি মিশা বাদ দিয়ে দিয়েছি,ড্রয়িং করতে বারন করেছো,বাদ দিয়ে দিয়েছি,ফুল বাগান করতে বারন করেছো আমি সেটাও বাদ দিয়ে দিয়েছি।এখানে যেতে না বলেছো,ওখানে যেতে না বলেছো,,আমি যাই নি। নানুবাড়ী,দাদাবাড়ীর কথা জিজ্ঞেস করতে বারন করেছো,আমি আর করি নি। সবসময় এটা করো,ওটা করো,, সব করেছি।সবসময় তোমরা যেটা বলেছো সেটা মেনেছি, আসলে আমারই দোষ প্রথম থেকে যদি না মানতাম তাহলে আমাকে আজ না বলে বিয়ের কথা ঠিক করতে পারতে না।”

আমার কথা শুনে মা চুপ করে রইলেন , কী বলবেন কারন উনি জানেন আমি যা বলতেছি তার সবকিছু সঠিক। মা এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত দিতে চাইতে আমি সরে গেলাম। মা ঠোঁট চেপে বললেন,,

–“আমি জানি, ছোটবেলা থেকে তোর উপর সব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কী করবো বল ভয় যদি তুই ভুল পথে চলে যাস, তাই।আয়ান খুব ভালো ছেলে,রাজি হয়ে যা। ”

আমি রাগি চোখে মায়ের দিকে তাকালাম। “নিকুচি করি তোমার ওই ভালো ছেলের। বলে আমি ঠাস করে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম,পিছন থেকে মা চেঁচিয়ে বললো,,”কই যাস এত রাতে?”

—“সিনথিয়া ভাবীরর কাছে।”

–“যা,,,মেয়েটা যদি তোকে বুঝাতে পারে।ওর থেকে কিছু শিখ, শাশুড়ি যেভাবে বলে ওভাবে করে।”

আমি মায়ের কথা শুনেও না শুনার মতো চলে আসলাম উপরে। দরজায় কলিং বেল চাপতেই সিনথিয়া ভাবী এসে দরজা খুলে দিলেন।উনি আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তার আগেই আমি উনাকে পাশ কাটিয়ে নিদ্র ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকতেই দেখলাম উনি জামা খুলতেছেন, আমি ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম।আমাকে দেখে উনি হকচকিয়ে গেলেন দ্রুত অর্ধেক খোলা জামা আবার পরে নিলেন।

–“কারো রুমে ঢুকার পূর্বে নক করে ঢুকতে হয়, এটুকু মেনার্স নেই?”

মেজাজ এমনিতেই চরম খারাপ তার উপর উনার মেনার্সের কথা শুনে আরো খারাপ হয়ে গেলো। আমি রেগে উনার মুখোমুখি হয়ে বললাম,,

–“না,জানি না।”

উনি ভ্রু কুচকে আমার উপর থেকে নিচ চোখ বুলালেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,,,

–“কী হয়েছে?এত রেগে আছিস ক্যান?তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন তো তোর লজ্জা পেয়ে লজ্জাবতী(এক ধরনের গাছ,যাদের একটু স্পর্শ করলে নুয়ে যায়) গাছের মতো হওয়া উচিত।তা না করে উল্টো তুই ঝাঁঝ লবঙ্গ হয়ে আছিস।কাহিনী কি বল তো?”

আমি কটমট করে উনার দিকে তাকালাম,ইচ্ছা করতেছে দুই গালে ঠাটিয়ে দুইটা চড় দেই।বেয়াদপ ছেলে!

–“কী হলে কী বিরবির করতেছিস?আর তুই এত রাতে আমার রুমে,আবার দরজা লাগিয়েছিস কেনো?মানুষ দেখলে উল্টা বুঝবে তো!”

–“মানুষ উল্টা বুঝতেছে অথচ,আপনি বুঝতে পারতেছেন না।”

উনি কপাল কুচকে বললেন,,

–“মানে?”

আমি হুট করে উনার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে বললাম,,

—“আপনি কি একটুও বুঝেন না?”

—“কী বুঝবো?”

আমি চোখ সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।বুঝলাম উনি এভাবে বুঝবেন না।

উনার হাত ধরে টেনে উনার রুমের ব্যালকনিতে নিয়ে আসলাম। কোনো ভনিতা না করে সরাসরি বললাম,,

–“আমি আপনাকে ভালেবাসি।আমি জানি আপনি এটা বুঝেন,কিন্তু বুঝেও না বুঝার ভান কেনো করছেন সেটা জানি না। আমি কি জানতে পারি কেনো এমন করছেন?”

আমার কথা শুনে উনি এক ঝটকায় হাত টা সরিয়ে ফেললেন। আমাকে ঝাড়ি মেরে বললেন,,

—“কী বলছিস এসব আবোল-তাবোল?মাতা ঠিক আছে তো?”

–“আমার মাথাও ঠিক আছে, আমিও ঠিক আছি।আমি সুস্থ মষ্তিষ্কে বলতেছি, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

–“তুই কী পাগল?আজকে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আজকেই এসব আবোল-তাবোল বলতেছিস। তুই যে এঙ্গেইজড সেটা জানিস?”

–“জানি,সব জানি।আর এটাও জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

–“বারবার এক কথা কেনো বলছিস,আমি কী তোকে ভালোবাসি?”

–“কেনো বাসেন না,কী নেই আমার মধ্যে?আমার দিকে তাকান, দেখুন আমি কত সুন্দর।”

কথাটা বলে আমি গা থেকে ওড়না টা সরিয়ে ফেলাম। সাথে সাথে উনি অন্য দিকে ফিরে গেলেন,প্রচন্ড রেগে দাত চেপে বললেন,,

—“দিনদিন কী বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছিস।ওড়না খুলেছিস ক্যান,শরীর দেখাতে চাস।চল তাহলে তোকে পতিতালয়ে দিয়ে আসি।”

আমি সাথে সাথে ওড়না গায়ে দিয়ে দিলাম। রাগে দুঃখে কান্না চলে এসেছে।

–“তো কী করবো?আপনি তো আমার দিকে তাকান ই না।আমি কি এত খারাপ,আমাকে কেনো ভালেবাসা যায় না।আপনি কেনো আমার ফিলিংস বুঝেন না।”

বলেই কেঁদে দিলাম।উনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার সামনে এসে বসলেন। থুতনিতে হাত দিয়ে আমার মুখ উপরে তুললেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

–“কে বলেছো তুই খারাপ। আমি তোর ফিলিংস বুঝতে পারতেছি, দেখ তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আয়ান কিন্তুু খুব ভালো ছেলে,জানিস যখন জেনেছে তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন থেকে ও কোনো মেয়ের সাথে দরকার ছাড়া কথা বলতো না।জানিস,ওর স্বপ্নের ঢাবিতে ভর্তি না হয়ে তোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছে।ত,,”

উনার কথার মাজেখানেই আমি গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

–“আমার জন্য মানে?আর আমি তো শুনেছি উনি ঢাবির বুয়েটে পড়েন আর আপনি বলছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেছে?”

–“গাধা নাকি,ঢাবিতে কি বুয়েট আছে?দুটোই আলাদা,বুঝেছিস।আর তোর জন্য মানে হলো,তুই যে একবার ইঞ্জিনিয়ারেরর উপর ক্রাশ খেয়ে সেটা পুরো এলাকা বলে বেড়িয়েছিস সেটা শুনেই আয়ান ঢাবিতে পড়ার ইচ্ছা বাদ দিয়েছে। সত্যি বল তো,তুই কখনো ওর কথা জানতে চেয়েছিস?”

–“না,চাই নি।কেনো জানতে চাইবো?আপনার সম্পর্কে জানি এটাই আমার জন্য এনাফ।আপনি বলুন,আমাকে ভালোবাসবেন কী না?”

–“আমি এত সময় কী বুঝাচ্ছি,তুই কী বুঝতেছোস না?”

–“আপনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ আমি এ রুম থেকে যাবো না।”

বলেই আমি সোজা গিয়ে উনার বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।আমার এমন কান্ডে উনি হতবাক হয়ে তাকয়িে রইলেন। উনি আমার হাত ধরে টেনে বারবার উঠতে বললেন,,আমি একদম রোবটের মতো শুয়ে রইলাম। আজকে পণ করেছি উনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ নড়বো না। উনি খুব ভালো করেই জানেন আমি একদম ঘ্যাড় ত্যাড়া। উনি রাগারাগি করে কোনো ফলাফল না দেখে, চুপ করে গেলেন। উনি কিছুক্ষন পুরো ঘরময় হাটাহাটি করলেন,দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি খুব টেনশনে আছেন। একটুপর আমার পাশে এসে আমাকে নরম সুরে ডাকলেন,,”দোলন,এই দোলন!”

আমি কোনো জবাব দিলাম না।চুপচাপ শুয়ে রইলাম।উনি এবার অসহায় কন্ঠে বললেন,,

–“দেখো,কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।প্লিজ চলে যাও।আমার কিন্তু কিছু হবে না, সবাই তোর চরিএে আঙ্গুল তুলবে।”

–“তুললে তুলবে,,আপনার কী?”

–“প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর।মা আর ভাবী কী মনে করবে বল তো।আচ্ছা,আমি তোর কথা ভেবে দেখবো, এখন চলে যা। প্লিজ,আমি তোর পায়ে পড়ি..!!”

আমি চুপ করে কিছুক্ষন ভাবলাম। এরপর চট করে বললাম,,

–“যদি আমাকে চুমু দেন তাহলে যাবো।”

আমার কথা শেষ হতেই উনি আতকে উঠলেন,কিছুটা জোরেই বললেন,,

–“নাআআ..!!”

আমি আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে বললাম,,

–“আচ্ছা, তাহলে আমিও যাচ্ছি না।”

উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,,

–“এসব কী ধরনের কথা।”

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,,

–“এহহ,কী ধরনের কথা।মনে হয় এর আগে আপনি দেন নি।”

উনি আমতা আমতা করে বললেন,,

–“ওটা তো এক্সিডেন্টলি হয়ে গিয়েছিলো।”

আমি জবাব দিলাম না।কারন আমি নিজেও জানি ওটা একটা এক্সিডেন্ট। কাহিনী টা বলি কয়েক মাস আগের কথা।সেদিন আমি শিউলি আন্টি অর্থাৎ নিদ্র ভাইয়ার মা উনার কাছে এসেছিলাম শাড়ী পড়তে। কারন এর পরের দিন স্কুলের ফাংশনে শাড়ী পরে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো আমাদের পঞ্চ বান্ধবীর। আম্মুকে অনেকবার বললাম,কিন্তু সেদিন কাজের জন্য উনি আর শিখাতে পারেন নি। তাই বাধ্য হয়ে শিউলি আন্টির কাছে এসেছি,উনি আমাকে উনার রেগুলার পড়ার কাপড় দিয়ে শিখিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আদ্র ভাইয়া রুম থেকে আন্টিকে চা দেওয়ার কথা বললেন।আন্টি আমাকে পড়তে বলে চা বানাতে চলে গেলেন। আমি কোনোরকম কাপড় টা পড়ে,মাথায় আচল দিয়ে গোমটা দিলাম।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছিলাম তখন হুট করে নিদ্র ভাইয়া “মা মা,আমি সিলেক্ট হয়েছি,” বলে রুমে প্রবেশ করেই পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে দিয়েছিলেন। আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।তৎক্ষনাৎ দূরে সরে বললে,,”সরি, সরি আমি ভেবেছিলাম আম্মু।” আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ জামার উপর থেকে কাপড় টা খুলে ওড়না নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আন্টি,,

.
#সূর্যস্নান
#পর্ব_৩
#Nishat_Tasnim_Nishi

“সরি, সরি আমি ভেবেছিলাম আম্মু।” আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ জামার উপর থেকে কাপড় টা খুলে ওড়না নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আন্টি এসে উনাকে বললেন,,”কী হয়েছে?আমি কেনো চলে যাচ্ছি?”উনি কিছু না বলে চলে গেলেন। সেদিন ই এই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। কিছুক্ষন পর উনি বললেন,,”তুমি বুঝতেছো না কেনো যা বলতেছো তা সম্ভব নয়। আমরা কি কাপল নাকি যে এসব করবো। ” আমি উনার কথায় কান না দিয়ে চুপ করে রইলাম।এরপর উনি ধীরে এসে আমার মাথার কাছে বসলেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় আমাকে অনেক্ষন লেকচার দিলেন। শেষমেষ উনি বললেন,,”তুমি যদি তোমার ফ্যামিলিকে আমাদের বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারো তাহলে, আমি নিদ্র কথা দিচ্ছি তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।”

আমি চট করে উঠে বললাম,,”সত্যি?”
উনি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,,”হুম..!!” অবশেষে উনাকে প্রমিস করিয়ে দম নিলাম।তারপর চুপচাপ দরজা খুলে ঘরে চলে আসলাম। বাহির হতেই দেখলাম আন্টি আর ভাবী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনাদের পাত্তা না দিয়ে চলে আসলাম। ঘরে আসতেই মায়ের হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। কোনোরকম জবাব না দিয়ে রুমে চলে আসলাম,মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরতেছে কীভাবে রাজি করাবো। পুরো রাত টেনশনে ঘুমাতে পারলাম না।সকালে মা এসে ডাকতেই বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললাম।

–“কী হয়েছে মা,এত সকাল সকাল কেনো বিরক্ত করতেছো?”

–“একটু ওর দুপুর হবে আর তুই বলতেছিস সকাল। তাড়াতাড়ি উঠ আয়ান এসেছে।”

আমি দ্রুত উঠে বসে বললাম,,
–“কী কিন্তু কেনো এসেছে?”

মা বিছানা ঠিক করতে করতে বললেন যে উনি নাকি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে এসেছেন।আমি জিদ দেখিয়ে বললাম যে একদিন না হগেই ঘুরতে নিয়ে যেতে এসেছো এসব কী ধরনের কথা।

–“বেশি কথা না বলে রেডী হয়ে আয়,তোর বাবা বলেছে। বুঝেছিস?”কথাটা বলেই মা রুম থেকে চলে গেলেন।আর আমি চাপা রাগে ক্ষেপে পড়লাম। মাঝে মাঝে খুব রাগ লাগে বাবার উপর,মনে হয় আমাকে ভালোইবাসেন না। বিছানায় বসে বসে অনেক্ষণ ভাবলাম যে কীভাবে নিদ্রর কথা বলবো। তখনই চট করে বুদ্ধি আসলো যে আয়ানকে দিয়েই ব্যবস্থা করবো। কীভাবে করবে সেটা ওর ব্যাপার! বাসা থেকে খুশি মনেই আয়ানের সাথে বের হয়েছি,আমাকে খুশি দেখে সবাই কিছুটা চমকে গিয়েছিলো।আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না।

প্রায় মিনিট বিশেক আগে বের হয়েছি ঘর থেকে।গাড়ীতে বসে আছি দুজনেই কারো মুখে কোনো কথা নেই। উনি গম্ভীর হয়ে বসে আছেন আর আমি বিরক্তি নিয়ে।কেনো যেনো উনাকে আমার পছন্দ নয়। আমি নিজেও জানি না। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছেন আর আমি উনার পাশের সিটে বসে ফেসবুকিং করছি। উনি আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকালেন,নিরবতা ভেঙ্গে উনিই বললেন,,

–“জিজ্ঞেস করবে না কোথায় যাচ্ছি!”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,

—“প্রয়োজনবোধ করি নি।”

এরপর আবার নিরবতা,উনি কেমন রিয়েক্ট করেছে সেটা খেয়াল করি নি কারন আমার পুরো মনোযোগ ফোনের স্ক্রিনের উপর ভেসে উটা নিদ্রের মুখে। আমি নিজেও জানি না কেনো এত ভালোবাসি উনাকে। উনার সবকিছুই আমার ভালো লাগে,উনি যখন হাসেন তখন মনে হয় মুক্ত ঝরে। হঠাৎ নিদ্রের বলা কথা মনে পড়লো। আমি দ্রুত ফোন টা ব্যাগে রেখে দিলাম। উনাকে কীভাবে বলবো সেটা নিয়ে ইতস্ত করতে লাগলাম।আমাকে উশখুশ করতে দেখে উনি এক হাত দিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দিলেন,আমি তাকাতেই বললেন,,

–“পানি টা খেয়ে একদমে বলে ফেলো যা বলতে চাও!”

আমি চমকে উঠলাম,উনি কীভাবে বুঝলেন আমি কিছু বলতে চাই!

–“আমি অনেক কিছুই বুঝি যা তুমি বুঝো না।তাই এত ফর্মালিটি না করে সোজাসুজি বলো যে কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাও না!”

উনার এমন ঠান্ডা আর স্বাভাবিক কথাবার্তা আমার অবাকের রেশ আরেক ধাপ বেড়ে গেলো। উনি কীভাবে বুঝলেন, আমার ভাবনা-চিন্তার মাঝেই উনি আবারো বললেন,,”চিন্তা পরে করতে পারবে আগে বলো কেনো চাও না।” আমি আর কোনো কিছু না ভেবে সরাসরি বললাম যে আমি নিদ্রকে ভালোবাসি আর নিদ্রকেই বিয়ে করতে চাই।উনি সাথেসাথে গাড়ী থামিয়ে দিলেন,আমার দিকে একপলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন নিদ্রকে কী আমাকে ভালোবাসে? আমি বললাম জানি না তবে উনি বলেছেন আমি যদি আমার পরিবারকে রাজি করাতে পারি তাহলে উনি বিয়ে করবেন। আয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন,কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো উনার নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো। উনি পকেট থেকে ফোনটা বের করলেন, এরপর কাউকে ফোন করে বললেন,,”এখনই নিদ্রকে ফোন দিবি আর আমাকে কানেক্ট রাখবি, ওকে শুধু জিজ্ঞেস করবি নূপুর এর ব্যাপারে ওর ফিলিংস কেমন!” ও পাশে কী বললো কিছু শুনলাম না।তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফোনের স্পীকারে নিদ্রের আওয়াজ ভেসে উঠলো। আমি কান খাড়া করে উনাদের কথাবার্তা শুনার প্রস্তুতি নিলাম। একটুপর নিদ্রকে ওই ছেলেটি প্রশ্ন করলো,,”দোস্ত, সত্য কথা বলবি,চারতলার নূপুরেরর ব্যাপারে তোর ফিলিংস কী রে?”

নিদ্র একদম রেগে বললো,,”বুঝি না সবাই শুধু নূপুর নূপুর কেনো করছে?বাসার সবাইও নূপুর নূপুর করছে।ওদের হাজার প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি।”

নিদ্রের কথা শুনে আমি আড়চোখে আয়ানের দিকে তাকালাম,উনার মুখের তেমন কেনো পরিবর্তন দেখলাম না। ছেলেটি আবার বললো,,

—“দোস্ত রেগে যাচ্ছিস কেনো?কী হয়েছে বল।”

নিদ্র এবার নরম গলায় বললো,,

—“এত বছর থেকে যে ফিলিংস লুকিয়ে আসছি তা সবার সামনে চলে আসছে, আমি কী করবো বল।”

ছেলেটি চুপ করে রইলো। নিদ্র আবার নিজে নিজেই বলতে লাগলো,,

—“আমার না খুব কান্না পাচ্ছে। তোরা তো সবাই জানিস নূপুরেরর প্রতি আয়নের ফিলিংস কেমন!কিন্তুু কখনও আমার ফিলিংস জেনেছিস?আমি না নূপুরকে খুব ভালোবাসি রে,কিন্তুু ওকে কখনও বলি নি। নূপুর আমাকে আরো অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে,আমি সেটা বুঝতাম কিন্তুু কখনও প্রশ্রয় দিতাম না ওর ফিলিংসকে। কেনো করতাম জানিস? কারন আমি কোনোভাবেই নিজের বন্ধুকে ধোকা দিতে পারবো না। নূপুর যখন আমার ঘরে আসতো তখন অযথাই ওকে বিরক্ত করতাম,ওকে রাগিয়ে দিতাম এই কারনে যে ও আমার উপর অভিমান করুক।কিন্তু হতো উল্টো ও আমার প্রতি আরো বেশি ঝুঁকে পড়তো।কাল রাতে ও এসে অনেক পাগলামি করেছে,কোনো রকম ওকে সামলিয়ে বাসায় পাঠিয়েছি। আমার পুরো পরিবার আমাকে সন্দেহ করেছে,সবাই মিলে গোল মিটিং এ বসে আমাকে হাজার প্রশ্ন করেছে, আমি কোনো রকম উনাদের জবাব দিয়েছি। বাসায় পাঠানোর সময় ওকে বলেছি যে ওর ফ্যামিলি যদি রাজি থাকে তাহলে আমি ওকে বিয়ে করবো,আমি জানি ও কখন ভয়ে ওর বাবাকে বলতে পারবে না।আর ওর বাবা যদি রাজিও হয়ে যায় তাহলে আমি উনার সামনে অন্য মেয়েকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করে উনার মনে ভুল ধারনা প্রবেশ করিয়ে দিবো।আমি চাই ও আয়ানকেই বিয়ে,, ”

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়ান ফোনটা কেটে দিলো। এতক্ষন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, উনার ফোন কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঘোর ভেঙ্গে গেলো। আমি উনাকে কিছু বলতে যাবো তারে আগেই উনি ফোনটা সিটের উপর জোরে ফেলে দিয়ে আমার হাত থেকে পানির বোতল কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলেন। এরপর নাকে,মুখে পানির ছিটে দিলেন।উনাকে অস্থির দেখপ আমি আর কিছু বললাম না। আমি দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরের দিকে তাক করলাম। মনটা কেমন উৎফুল্ল হয়ে গেলো,নিদ্র আমাকে ভালোবাসেন। ইচ্ছে করছে এক ছুটে নিদ্রের কাছে চলে যেতে,ওকে ছুঁয়ে দিতে। আমার ভাবনা-চিন্তার মাঝেই আয়ান আমাকে কোমল কন্ঠে ডাক দিলেন, ‘নূপুর’ বলে। আমি হালকা কাত হয়ে উনার দিকে তাকালাম,উনার দৃষ্টি দেখে মনে হলো উনি আমাকে কিছু বলতে চান।উনি কিছু বলবেন তার আগেই আমি কান্নামাখা কন্ঠে বললাম,,

–“দেখেছেন নিদ্র ভাইয়া কী বলেছে?আপনি প্লিজ আমার আব্বুকে বলেন যে আপনি আমায় বিয়ে করতে চান না।প্লিজ ভাইয়া, আপনার সামনে হাত জোড় করছি প্লিজ।”

আমার আকুতি-মিনতি উনার কান পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে কী না জানি না। তবে এটুকু জানি উনি যদি না মানেন তাহলে আমি উল্টা-পাল্টা কিছু করে ফেলবো। উনি কোনোকথা না বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে চলে গেলেন। উনি বের হতেই আমি কেঁদে দিলাম,কোনোরকম নিজেকে সামলিয়ে শক্ত করলাম। কিছুক্ষন পর উনি ফিরে এসে গাড়ী স্টার্ট করলেন,আমি উনার দিকে আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি জবাবের জন্য।

অনেক্ষন পর উনি সামনের দিকে তাকিয়ে আমাকে বললেন,,

–“চিন্তা করো না, তুমি যা চাইছো আমি সেটার ব্যবস্থা করে দিবো।”

উনার কথা শুনে আমি বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলাম,উচ্ছাসিত কন্ঠে বললাম,,”সত্যি!”

উনি কেমন করে যেনো আমার দিকে তাকালেন, আমি মাথা নিচু করতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন।আমি অপরাধীর মতো দৃষ্টি নিচের দিকে রাখলাম।উনি জোরপূর্বক হেসে আমাকে বললেন,,

–“হুম,সত্যি।তবে একটা শর্ত আছে।”

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,,

—“আমি আপনার সব শর্তে রাজি।”

উনি সিরিয়াস ভাবে বললেন,,

—“ভেবে বলছো তো?”

বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো,আবার এক অজানা ভয় হতে লাগলো।উনি কী চাইবেন এটা ভেবেই অস্থির হয়ে উঠলাম।এরপর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে উনার দিকে তাকালাম।

উনি এবার হেসে দিলেন,হাসিমুখেই বললেন,,

—“রিলেক্স, আমি তেমন কিছু চাইবো না।
তোমার কপালে ঘাম বেয়ে পড়ছে।এত ভয় পেয়েছো নাকি?”

আমি কপালে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। উনি টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন,,”মুছে ফেলো।” আমি ছোঁ মেরে টিস্যু নিয়ে ঘাম মুছে ফেললাম।

.

চলবে?
চলবে?

.

(বিদ্র:এরপর থেকে ইনশাল্লাহ প্রতিদিন রাত নয়টার পর গল্প দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here