সূর্যস্নান পর্ব ৪+৫

#সূর্যস্নান
#পর্ব_০৪
#Nishat_Tasnim_Nishi

—“আপনি বলুন শর্ত কী?”

কথাটা গম্ভীর হয়ে বললাম আমি।

–“বেশি কিছু না আজকে সারাদিন আমার চাই।ব্যাস এটুকু!!”

আমি বিস্ফোরিত হয়ে বললাম,,

–“কীহ?”

উনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন,,

–“এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো? আমি বলতে চাইতেছি আজকে সারাদিন আমার সাথে থাকতে।আমি তোমার সাথে সিলেট শহর ঘুরতে চাই। তুমি যদি শর্তে রাজি থাকো তাহলে আমি তোমার আর নিদ্রের ব্যবস্থা করে দিবো..!!রাজি?”

–“শর্তে রাজি না হয়ে উপায় আছে?বলেন কোথায় ঘুরতে চান?আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না সন্ধ্যার আগেই বাড়ী যেতে চাই..!!”

উনি অন্যদিকে ফিরে বললেন,,

–“চিন্তা করো না।আমি তোমাকে ঠিক সসময় পৌঁছে দিবো!”

আমি কিছু বললাম না আবার ফোন নিয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করতে লাগলাম। এ একটা কাজ করতে যে সময় কখন চলে যায় বুঝতেই পারি না। আশেপাশে গাড়ীর হর্ণের আওয়াজ পেয়ে আমি বাহিরের দিকে তাকালাম,ওমা তাকিয়ে দেখি গাড়ী আর গাড়ী। হঠাৎ মনের মধ্যে কৌতুহল জাগলো উনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমি বাহিরের দিকে দৃষ্টি রেখেই উনাকে বললাম,,

–“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

–“এখন জাফলং যাচ্ছি।”

–“কীহ?এত দ্রুত চলে এসেছি।এখানে আসতে তো দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। ”

উনি এক হাত দিয়ে মোবাইল টা আমার সামনে রেখে বললেন,,”টাইম দেখো!”

টাইম দেখে আমি সত্যিই অবাক দুইঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। এই ফোনের ভেতর ঢুকলে দিন-দুনিয়ার খবর থাকে না আমার, আজকে আবার সেটার প্রমান পেলাম।

–“এটা কোন রাস্তা না মানে এর আগে তো অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।”

–“হুম এর আগে মামার বাজার রাস্তা দিয়ে এসেছো। এখন আমরা গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্টে যাচ্ছি। এ রাস্তাটা এখন অধিক জনপ্রিয়।”

আমি ছোট্ট শব্দ করে বললাম,,”ওহ..!!”

বহু পথ-ঘাট পেরিয়ে পৌঁছালাম জাফলং এর মায়াবতী ঝরনার পাশে। এ জায়গা টা এত সুন্দর বলার বাহিরে,,কী সুন্দর পাহাড় বেয়ে স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে পড়ছে! সবগুলা পানি নিচে এসে জমা হচ্ছে। ঝরনার দিকে একপলক তাকাতেই দেখলাম,,বিশাল সবুজ লতা-পাতা ঘেরা পাহাড় বেয়ে রাশি রাশি জল কালো কালো পাথর গুলোর মাঝ দিয়ে বয়ে আসছে। এ জায়গা টা সবচেয়ে সুন্দর লাগে। আমি ধীর পায়ে হেটে পাহাড়ের পাশে দাড়িয়ে আলতো হাতে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানিগুলো ছুঁয়ে দিলাম। সাথে সাথে পানির ছিটকা এসে গায়ে পড়লো। আমি সরে আসতেই আয়ান এসে আমার পাশে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন “কী হলো সরে গেলে যে?”

আমি মন খারাপ করে বললাম,,”জামা-কাপড় আনি নি তো..ভিজে গেলে কী পরবো?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,” আমি আসার সময় সব নিয়ে এসেছি।তোমার আম্মু প্যাক করে দিয়েছেন।”

মুহূর্তেই খুশিতে মন টা ভরে উঠলো।আমি সত্যি বলে লাফিয়ে পানিতে নেমে গেলাম। উনি বলতে লাগলেন আরে আস্তে, পিছলে পড়ে যাবে তো। পড়বো না বলে আমি পাথরের উপর দাড়ালাম। পায়ের হাটু পর্যন্ত ভিজে গেছি, তবুও আমি এক পা এক পা করে সবগুলো জায়গায় হাটতেছি। ছোট ছোট পাথরগুলোর উপর হাটতেই কেমন যেন শিরশিরে অনূভুতি হচ্ছে। পানির উপর দিয়ে আমার ফর্সা পা ভেসে উঠছে। হঠাৎ দেখলাম উনিও আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছেন। সূর্যের আলো সরাসরি আমাদের উপর পড়ছে সাথে পানির বালিগুলোও চিকচিক করছে। অনেক্ষণ হাটাহাটির পর আমরা দুজনেই উপরে উঠে আসলাম,চারপাশে কত কাপল রা হাত ধরে হাটাহাটি করছে আর উনি তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে গিলছেন। ব্যাপার টা অনেক্ষণ থেকেই খেয়াল করছি, কেনো যেনো মনে হলো উনার বোধ হয় ইচ্ছে করছে আমার হাত ধরে হাটতে। আমি বিষয়টা বুঝেও না বুঝার ভান করে সেখান থেকে উঠে আসলাম। উপরে এসেই বড় একটা পাথরের উপর বসলাম, অনুভব করলাম সূর্যের তীক্ষ্ণ আলো আমার উপর পড়ছে। আমি পা দুটো রোদের দিকে মেলে বসেছি যাতে শুকিয়ে যায়। কিছুর আওয়াজ পেয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম আয়ান আমার ছবি তুলছে। আমি তাকাতেই উনি আমতা আমতা করে বললো,,

—“না মানে সূর্যের ঝলমলে আলো তোমার উপর পড়ছিলো আর তুমি সেই আলো গায়ে মাখছিলে সেটা দেখে আমার একটা ছবি ক্যামেরায় বন্দি করার ইচ্ছা হলো তাই করেছি।”

আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম,,

–“এত মানে মানে করছেন কেনো ভাইয়া।আমাকে বললেই তো আমি সুন্দর পোজ দিতাম তাহলে তো আরো সুন্দর পিক আসতো।তাছাড়া এটাকে না সূর্যস্নান বলে,অর্থাৎ সূর্যের আলোয় গোসল করা।”

আমার কথা শুনে উনার মুখের অসহায় ভাব টা উবে গেলো আর উনি হাস্যউজ্জল চেহারায় বললেন,,

—“আমি কিন্তু এর আগেও তোমাকে সূর্যস্নান করতে দেখেছি!”

উনার কথা শুনে আমার কপালে চিন্তার ভাব ফুটে উঠলো।আমি কপাল কুচকে বললাম,,

–“মানে?”

উনি থতমত খেয়ে বললেন,,

–“আরে আমি মজা করে বলেছি। ”

আমি বললাম,,”ওহ,আচ্ছা।” এরপর আমরা আরো অনেক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম। ওহ আবার তামাবিলে গিয়ে ইন্ডিয়ার বোর্ডার ও দেখেছি,এখানে যেতে পার্সপোর্ট লাগে।সবচেয়ে অবাক করার বিষয় উনি আমার পার্সপোর্টও নিয়ে এসেছেন।আমি আর বিষয়গুলো নিয়ে এত গাটাগাটি করলাম না নিজের মতো সবকিছু উপভোগ করলাম। চা বাগানেও কিছু সোনালী মুহূর্ত উপভোগ করলাম। পাহাড়ীদের সাথে আমরা দুজনে চা পাতাও তুলেছিলাম। আমি অবশ্য কয়েক টা মুহূর্তের ছবি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলাম। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। অনেক টা ক্লান্তি নিয়ে যখন সিড়ি দিয়ে উঠে ঘরে যাচ্ছিলাম তখন আয়ান পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি পিছনে ফিরে বললাম,,

—“কিছু বলবেন?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,

—“না কিছু বলবো না। ভালো থেকে, তোমাদের জন্য শুভকামনা রইলো!”

–“থ্যাংকইউ সো মাচ ভাইয়া। আপনি যদি রাজি না হতেন তাহলে হয়তো,, ”

আমাকে শেষ করতে না দিয়ে উনি বললেন,,

–“ইট’স ওকে,আমি বুঝি..!!”

আমি চুপ করে গেলাম। আবারও এক সিড়ি পার হতেই উনি ডাক দিলেন,আমি মিষ্টি সুরে বললাম,,”জ্বি..!!”

উনি এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন। উনাকে উশখুশ করতে দেখে আমি বললাম,,”কিছু বলবেন?”

উনি মুখ ছোট করে বললেন,,

—“না মানে,কিছু দেওয়ার ছিলো। তুমি না চাইলে থাক।”

আমি কৌতুহল নিয়ে বললাম,,,

—“কী?”

উনি আমার কাছে এসে একটা ছোট ব্যাগ দিয়ে বললেন,,

—“একচুয়েলী, এটা আমি তোমার জন্য এনেছিলাম,অনেক আগে। তোমার পছদ হবে কী না জানি না তবে রাখলে খুশি হতাম। পরার দরকার নেই, শেষ আবদার হিসেবেই না হয় রাখো..!! ”

–“এখানে কী আছে?”

—“বাসায় গিয়ে দেখো,এখন নয় প্লিজ।”

আমি আচ্ছা বলে চলে আসলাম। বাসায় আসতেই মায়ের হাজারও প্রশ্ন শুরু হয়ে গেলো। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,”মা,আমি খুব ক্লান্ত,পরে বলবো..!!” বাবাকে ঘরে দেখলাম না হয়তো ডিউটিতে আছেন, রুমে এসেই ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। এক ঘুমে পুরো রাত চলে গিয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে ঢুলতে ঢুলতে ড্রয়িং এ গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে বসলেন,বাবা অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন,,

—“দোলন..!!”

আমি মাত্র ব্রেড মুখে দিচ্ছিলাম বাবার ডাক শুনে আর মুখে দিলাম না, সাথে সাথে প্লেটে রেখে দিয়ে বললাম,,”জ্বি, বাবা..!!”

বাবা পানির গ্লাসে জগ থেকে পানু ঢালতে ঢালতে বললেন,,

—“কাল তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?”

আমি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম,আমি তো কী না কী ভেবেছিলাম। আমি সবকিছু বলতেই বাবা গম্ভীর সুরে বললেন,,

—“আর কোথাও কারো সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই..!!”

আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আম্মু বলে উঠলেন,,

—“এসব কী ধরনের কথা?কারো সাথে মানে ও নিজের হবু জামাইয়ের সাথেই তো গিয়েছে।তুমি আবার এসব কী বলছো!”
#সূর্যস্নান
#পর্ব_০৫
#Nishat_Tasnim_Nishi

মায়ের কথা শেষ হতেই বাবা বললেন,,”ওই ছেলে আমার মেয়ের জামাই হবে না,বুঝেছো?”

বাবার আকস্মিক কথা শুনে আমি আর মা দুজনেই বিষ্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।মা আর আমি দুজনেই বারবার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে কেনো এ কথা বলেছে,কিন্তু বাবা এ প্রশ্ন টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন,শুধু এ কথাই বললেন ওর থেকে ভালো ছেলের সাথে আমার মেয়ের দিবো। শেষ বাবা কথা শেষ করেই চলে গেলেন,আমি আর মা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম কিন্তুু কোনো উত্তর খুজে পেলাম না। মা কিছু না বুঝলে আমি আন্দাজ করতে পেরেছি যে আয়ান ভাইয়া নিশ্চই কিছু করেছে, যার কারনে বাবা এমন বলেছে। একবার ভাবলাম আয়ান ভাইয়াকে গিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আসবো পরে ভাবলাম না উনার মনে আমার প্রতি আর কোনো ফিলিংস তৈরী করতে চাই না,আমি আর উনার সামনে যাবো না। মনে মনে ভাবলাম,আমি খুব স্বার্থপর,!আবার পরক্ষণেই ভাবলাম ভালোবাসার জন্য স্বার্থপর না হলে পাওয়া যায় না। দুপুরের কিছুক্ষন আগে নিদ্রদের ঘরে যাই,সদর দরজা টা খোলাই ছিলো।আমি সোজা ঢুকতেই দেখলাম নিদ্র সোফায় বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আমি কৌতুহল নিয়ে চুপিচুপি গিয়ে উনার পিছনে দাড়ালাম। উনার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এবার আমি হেসে দিলাম। উনি ফানি ভিডিও দেখতেছেন। হঠাৎ আমার হাসির আওয়াজ পেয়ে উনি আমার দিকে তাকালেন।

—“তুমি এখানে?”
আমি আয়েশ করে সোফায় বসে বললাম,,
—“তো,কোনখানে থাকবো?”
উনি বিরক্তি নেয় উঠে যেতে নিলেই আমি হাত টান দিয়ে বসিয়ে দিলাম।উনি রেগে আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তার আগেই আমি আন্টি ভাবি বলে সবাইকে ডাকতে লাগলাম।

—“কী করছো?সবাইকে কেনো ডাকছো?”
উনার কথার মধ্যেই সবাই যে যার রুম থেকে বের হয়ে আসলেন। সবাই কেমন করে যেনো আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমিও সোজা গিয়ে আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,”আন্টি,আমি আপনার পুত্র বধূ হতে চাই। আপনি আজকেই আমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবেন। বুঝেছেন?”
কথাগুলো শুনতেই সবাই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো। আমি জানি এ মুহূর্তে সবাই হয়তো ভাবছে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। পাশ থেকেই নিদ্র বলে উঠলো,”তুমি কী পাগল হয়ে গিয়েছো?ছিঃ তোমার কী একটু লজ্জা করছে না এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলতে..!!”
আমি দাত বের করে হেসে বললাম,,”আপনাকে ভালোবাসার পর সব লজ্জা বেচে দিয়েছি।” এ কথা শুনে ভাবী আর নিদ্রের বাবা হেসে দিলেন,বাকিরা কোনো আওয়াজ করলেন না উনারা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার সরাসরি কথা শুনে আন্টি বললেন,,”এসব কী বলছো নূপুর,তোমার পরশু বিয়ে ঠিক হ,,”

—“আজকে সে বিয়ে ভেঙ্গেও গিয়েছে।”

তখন সবাই একসাথে বললো,,”মানে?”

—“মানে হলো,আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি আপনার ছেলেও আমাকে ভালোবাসে। মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হিসেবে আয়ান ভাইয়া চলে এসেছিলো।”

—“কী বলতেছো আগা-মাথা কিছুই বুঝতেছি না।”

–“আগে সবাই বসুন আমি বলতেছি..!!”এরপর আমি উনাদের পুরো কাহিনী বর্নণা করলাম। নিদ্র তো মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,”ও মাই গড ওটা প্ল্যান ছিলো।” আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। উনাদের ফ্যামিলির কেউ রাজি হচ্ছেন না,আমি বারবার বলেও কোনো ফল দেখলাম না। উল্টো সবাই মিলে আমাকে বুঝাতে লাগলেন, এবার আমি কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখে আন্টির মন গলে গেলো, উনি বললেন,,”আমি নিজে তোর বাবার কাছে যাবো।” আন্টির কথার বাধ সাজলেন নিদ্র।উনি দপাদপ পা ফেলে রুমে চলে গেলেন,যেতে যেতে বললেন, উনি কিছুতেই আমাকে বিয়ে করবে না। আমিও নাছড়বান্দা, উনার পিছুপিছু উনার রুমে চলে গেলাম। উনাকে গিয়ে অনেক বুঝালাম,উনি শুধু একটা কথাই বললেন,,আমি নাকি পস্তাবো। শেষমেষ উপায়ন্তর না দেখে বললাম,” লাস্টবার জিজ্ঞেস করলাম,আপনার উত্তর যদি না হয় তাহলে আমি আমার লাইফের লাস্ট দিন করে দিবো।” উনি বিষয়টা সিরিয়াসলি নেন নি , হালকাভাবে নিয়ে বললেন,,”যা ইচ্ছা করো।” আমার ভেতর জেদ চেপে বসলো ঠুস করে উনার টেবিলে রাখা ছুরি টা নিয়ে হাতের উপর এক টান বসিয়ে দিলাম,সাথে সাথে সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লো। উনি আতকে উঠে আমার হাত থেকে ছুরি সরিয়ে নিলেন,আমি তাকাতেই ঠাস করে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলেন। আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে তাকাতেই বললেন,,”একদম ন্যাকামি করবি না। বেয়াদপ,জুতার বারি দিয়ে শিক্ষা দিতে মন চাইতেছে। তুই কি নিজেরে কী বিশ্বপ্রেমিক মনে করোস,যে হাত পা কাটা দেখলে আমি পাগল প্রেমিকের মতো পাগলামি করুম।”
আমি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালাম,উনি দ্রুত ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করলেন। ব্যান্ডেজ করার পর আমাকে নরম গলায় বললেন,,”মানুষ যাহা চায় তাহা পায় না,যাহা পায় তাহা চায় না। কেউ বাচতে চায়, কেউ বাচতে চায় না।অথচ যে যেটা চাইছে সে সেটা পারছে না। যখন বুঝবি তোর সময় নেই, তুই আর বাঁচতে পারবি না তখন মনের ভেতরের বেঁচে থাকার আকুলতা অনুভব করিস। জীবন টা কী ছেলেখেলা?যে যখন যা ইচ্ছা তাই করবি,তোর কাছে তোর ইচ্ছে-আবদারই বড় হয়ে গেলো আর বাকিরা কিছুই না। ভালোবাসা কাউকে মরতে দেয় না,ভালোবাসলে মানুষ বাঁচতে শিখে। ভালোবাসার মানুষ পাশে না থাকলে কেউ মরতে শিখে না বরং ভালোবাসার মানুষের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে শিখে।আমি কি আদৌ তোর ভালেবাসা নাকি জেদ?”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম,জবাব দিলাম না। শেষ কথাটা শুনে বললাম,,”আপনি আমার ভালোবাসা,জেদ নয়।”

–“আমি কীভাবে সেটা মানবো?”
—“কী করলে মানবেন?”
উনি জবাব দিলেন না,বক্স টা নিয়ে ড্রয়ারে রাখতে গেলেন। আমি আবারো জিজ্ঞেস করতেই বললেন,,”আজকে যেটা করেছো আর কখনও সেটা করার সাহস দেখিও না।”

আমি চুপ করে রইলাম। উনি এসে আমার হাত মুঠোয় নিয়ে বললেন,,”প্রমিস কর, তুই কোনোদিন আর এমন করবি না,আমি যদি নাও থাকি তাহলেও এ কাজ টা করবি না।পরিস্থিতি মেনে নিবি।”

—“আমি আপনাকে ছুয়ে প্রমিস করবো,সবকিছু ছুয়ে প্রমিস করবো যদি আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি থাকেন।”

উনি চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলেন,নিজের মনে মনে হিসেব মিলিয়ে আমাকে বললেন,,
—“হুম।”
—“হুম কী সুন্দর করে বলেন!”
—“যাই হোক, তুই কথা দিয়েছিস। কখনও আবার প্রমিস ভুলে যাস না।”
আমি সম্মতি দিয়ে বললাম,,”কখনো না।”
আমার কথা শেষ হতেই উনি মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,
—“আমার ভীষণ মাথা ব্যাথ্যা করছে,তুই প্লিজ এখন যা।”

—“২৪ ঘন্টা মাথায় টুপি দিয়ে রাখলে ব্যাথা করবে না তো কী করবে?এতটাও তো শীত পড়ছে না তাহলে সবসময় এই টুপি টা দিয়ে কান, মাথা ঢেকে রাখেন কেনো?”

—“এখন যা প্লিজ..!!”

—“না,আমি আপনার সিল্কি চুল দেখবো, লাস্ট কবে দেখেছিলাম মনেই নেই।”

উনি না না বলে মাথায় হাত দিলেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম। উনি কোনোরকম অস্ফুটসুরে উনার মা কে ডাকলেন,আন্টি আসতেই উনি ইশারায় আমাকে বের করে দিতে বললেন। আন্টি আমাকে বললেন,,”নিদ্রর সাথেই তোমার বিয়ে দিবো,প্লিজ তুমি এখন চলে যাও। ” আমি অবাক হয়ে বের হয়ে আসলাম। কাহিনী কী, কিছুই বুঝলাম না।

পরের দিন রুমে থেকে বের হচ্ছিলাম তখন দেখলাম,, বাবা মাকে ডেকে নিয়ে বললেন যে নিদ্রর পরিবার থেকে আমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে একমাস পর উনারা বিয়ে করাতে চায়। আমি না করে দিয়েছি, কারন আমি জানি আমার মেয়ের মনের অবস্থা কেমন,কালকেই বিয়ে ভেঙ্গেছে আর আজকেই আমি আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক করবো, মেয়েটার কেমন লাগবে ভাবতে পারো? আমার মাও তাল মিলিয়ে বললেন,,”হ্যা,ঠিক বলেছো।পরে বলবে ও আমাদের বোঝা হয়ে গিয়েছে।”

উনাদের কথোপকথন শুনে আমি থ বনে গেলাম। কী হলো? এখন উনাদের কীভবাে বুঝাবো যে আমি নিদ্রকে বিয়ে করতে চাই। ছিঃ শরমের ও তো একটা ব্যাপার আছে। দুপুরে খাবার টেবিলে একসাথে খাবার খাচ্ছিলাম সবাই,তখন হুট করে মা বললো,,

—“নিদ্রকে তোর কেমন লাগে?”

আমি কিছু বলবো তার আগেই বাবা বললেন,,

—“আহা,দোলনের মা আমি বারন করেছি না। ”

মা কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললেন,,”ওহ,”

আমি তখন তাড়াহুড়ো করে বললাম,,
—“আমাদের উপরতলার নিদ্রের কথা বলছো,,আমার না উনাকে বেশ লাগে।”

মা তাকাতেই আমি লজ্জা পাওয়ার ভান করে উঠে আসলাম, যাতে বুঝে লজ্জা পেয়েছি।কিন্তুু হলো উল্টো বাবা মাকে ধমক দিয়ে বললো,,

—“দিলে তো মেয়েটার মুড নষ্ট করে। রেগে হয়তো চলে গেছে..!!”

এবার আমার রাগ লাগলো,রেগে চেঁচিয়ে বললাম,,

—“আমার নিদ্রকে পছন্দ।”

বাবা আমাকে শান্ত করার ভঙ্গিতে বললেন,,

—” রেগে যেও না, মা। তোমার মা আসলে এমনিতেই বলেছে।”
আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনাদের দিকে তাকালাম।

.

চলবে?

(বিদ্রঃনয়টায় আরেক পর্ব দেওয়া হবে।)
.

চলবে?

.

(বিদ্র:সরি,লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম,তাই লেইট।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here