সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -২৮

পর্বঃ২৮
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)

নিজের বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে রাইদা ভাবছে কলিং বেল দিবে নাকি চলে যাবে। মনস্থির করে কলিং বেল এর সুইচ টিপ দেয়। মান্নান রাফায়েত দরজা খুলে রাইদাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। রাইদা জোর পূর্বক হেঁসে মান্নান রাফায়েতকে জড়িয়ে ধরে। মেয়েকে সকাল সকাল দেখে অনেক খুশি হয় মান্নান রাফায়েত।

ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে রাইদা।

‘কিছু খুঁজছিস? ‘,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

রাইদা জবাব দেওয়ার পূর্বে রান্নাঘরে থেকে রওশন আরার গলা ভেসে আসে।

‘কে এসেছে সকাল সকাল? তোমার মেয়ের জামাই আসছে নাকি আবার জ্বালাইতে? আমি এমন জমাই জীবনেও দেখি নাই যে বিনা দাওয়াতে শ্বশুড়বাড়িতে আসে। সাহস কত পোলার আইসা বলে শ্বাশুড়ি আমি আপনার একমাত্র মেয়ে জামাই। এ্যা তোর মতো পোলার কাছে আমার এতো সুন্দর মাইয়া আমি সজ্ঞানে জীবনেও বিয়ে দিতাম না।’,রওশন আর জোরে জোরে কথাগুলো বলতে থাকে।

রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রাইদা সব শুনে হাসতে থাকে।

‘মেয়ের জামাই জ্বালাতে আসে নায় আসছে তোমার বেয়াদব মেয়ে।’,রাইদা বলে।

রাইদার গলা পেয়ে চমকে উঠে রওশন আরা। সে ভেবেছিলো সায়ন এসেছে তাই সে এতক্ষণ শুনিয়ে শুনিয়ে এগুলো বলেছে যাতে সায়ন লজ্জা পায়।

‘তাই তো এমন মাইয়া থাকতে আবার জ্বালানোর মানুষ লাগে নাকি?’,রওশন আরা বলে।

‘তয় আপা যা ই কন রাইয়ের জামাইডা সুন্দর আছে। চক্ষু দুইডা রিত্তিকের লাহান।’,হুট করে মর্জিনা বলে।

‘চুপ নিজের কাজ কর আসছে আরেক পোলার সুনাম করতে। পোলার চরিত্র ভালো না হলে চোখ ধুইয়া কি পানি খাবো?’,রওশন আরা ধমক দিয়ে বলে।

‘আমার না এই জিনিসটা একদম পছন্দ না। তুমি পারতে সায়নের রাগের, জেদের কিংবা ওর মধ্যে থাকা অন্য খারাপ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলতে তা না করে ওর চরিত্র নিয়ে পরে আছো কেনো? ওর চরিত্র যথেষ্ট ভালো। আমি ওরে কাছ থেকে চিনি তাও আট বছর আগ থেকে আর তুমি তো ওরে দেখলামই সেদিন তাহলে কীভাবে ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলো?’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।

‘চরিত্র ভালো হলে তোরে নিয়ে ঝোপে যাইতো? ঐ পেলার ধান্দা ছিলো তোর সাথে প্রেমের নাটক করে সব হাসিল করবে কিন্তু গ্রামবাসী যে বিয়ে পড়াই দিবে বুঝে নায়। শোন এখনো সময় আছে তুই বললে আমি উকিলের সাথে কথা বলে ডির্ভোসের ব্যবস্থা করে দিবো। তোর জন্য এর থেকে ভালো ছেলে এনে দিবো।’, রওশন আরা রাইদার সামনে এসে বলে।

‘আমার সামনে এগুলা বলছো কিন্তু ভুলেও সায়নের সামনে বইলো না তাহলে তোমার বাসায় আগুন লাগায় দিবে। ওরে তো তুমি চিনো না তাই এসব বলতেছো।’, রাইদা রওশন আরাকে বলে।

‘কি শুরু করলা তুমি সকাল সকাল? মেয়েটা আসছে খেতে দিবা তা না করে ওর সংসার ভাঙার পিছনে আদা-জল খেয়ে লাগছো। তুই এদিকে আয় মা আর মর্জিনা মেয়েকে নাশতা দাও জলদি।’,মান্নান রাফায়েত এসে রাইদাকে নিয়ে খাবারের টেবিলে যায়।

মর্জিনা এসে নাশতা দেয় রাইদা খেতে শুরু করে। পাশে বসে মান্নান রাফায়েত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘শুনলাম তোরা নাকি ফ্ল্যাটে আলাদা উঠেছিস? তা তোর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি তোদের এখনো মানেনি? এখনই এই অবস্থা আর তো দিন পড়েই আছে।’,রওশন আরা এসে জিজ্ঞেস করে।

‘তোমার মেয়ে এখন শ্বশুড়বাড়িতে যেতে চাচ্ছে না আর জামাই চায় আমরা মেয়েকে ওর হাতে তুলে দেই এভাবে সে রাইদার অসম্মতি এবং আমাদের অনুমতি ছাড়া মেয়েকে নিবে না। তুমি এখনো ছেলেটারে খারাপ কেনো ভাবো আমি বুঝি না। আমার কাছে মনে হলো রাইদার জন্য এতো ভালো ছেলে আমরা কখনোই আনতে পারতাম না।’,মান্নান রাফায়েত কথাগুলো বলে।
রওশন আরা ভেংচি দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।

‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে রুমে চলো।’,রাইদা বলে মান্নান রাফায়েতকে।

‘হ্যা চল কিন্তু আগে খেয়ে নে।’

রাইদা খেয়ে নিজের রুমে যায় পিছন পিছন মান্নান রাফায়েত আসে। দরজা লাগিয়ে দেয় রাইদা।

‘আমি এখন কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি। সায়নকে আমার পছন্দ না, বিয়েটা যেভাবে হয়েছে তাতে তো জীবনেও আমি লোকটাকে মানতে পারবো না। আমি তো ভেবে রেখেছিলাম তিন মাস পার হলেই ডির্ভোসের জন্য আপিল করবো কিন্তু গতরাতে লোকটা যেভাবে এসে আমায় অনুরোধ করলো সম্পর্ক না ভাঙার জন্য সেই ঘটনা আমি মাথা থেকে বের করতে পারছি না। খালি মনে হচ্ছে সম্পর্কটা ভাঙা ঠিক হবে।না আবার মনে হচ্ছে আমি তো এই লোককে পছন্দ করি না। আমাকে বলো প্লিজ কি করবো এখন।’,রাইদা মন খারাপ করে সব বলে মান্নান রাফায়েতকে।

‘মন যা চায় সেটাই করা উচিত। এসব সিদ্ধান্ত মস্তিস্ক না মন থেকে নিতে হয়। এতোদিন তো ইগনোর করেছিস তাই জানিস না ছেলেটা আসলে মানুষ হিসেবে কেমন। তুই ছেলেটার সাথে সময় কাটা আরেকটু, ওর কল রিসিভ কর, মেসেজের রিপ্লাই কর এরপর দেখ ওর মধ্যে কি কি ভালো এবং খারাপ গুন পাস। ওর কোন বিষয়টা ভালো লাগে কিংবা খারাপ লাগে নোট করে ফেলবি। তখনো যদি ওরে অপছন্দ করিস তাহলে আমাকে এসে বলবি তোর সিদ্ধান্ত আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।’

মান্নান রাফায়েতের বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনে রাইদা।

‘এইটুকু তো করাই যায়। ‘,রাইদা হাসিমুখে বলে।

‘মনে রাখবি সম্পর্ক ভাঙা যত সহজ তার থেকে বহুগুণ কঠিন ভালোবাসার সম্পর্ক পড়া। তোর মা আর আমি দুই মেরুর মানুষ, আমাদের মধ্যে কত ঝগড়া কত ঝামেলা হয় তারপরও কেউ কাউকে ছাড়িনি। ‘, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে মান্নান রাফায়েত।

রাইদা বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

‘এখন কি ক্লাসে যাবি?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

‘ভালো কথা মনে করছো এখন বের না হলে আমি লেট হয়ে যাবো। আর শুনো তোমার বউ যাতে আমাদের মধ্যে বলা কথাগুলো না জানে। উনি এমনিতেই সায়নকে পছন্দ করে না সেটাকে হাতিয়ার বানিয়ে একটু কয়দিন জ্বালাবো।’,দুষ্টু হাসি দিয়ে রাইদা বলে।

‘সেটা তোরা মা মেয়ে যা ইচ্ছা কর আমার বিষয় না। কিন্তু বাসায় ফিরবি কবে? আমি তো তোরে চিনি জামাইকে যে ঘরে ঢুকতে দিবি না এটা আমার জানা, কি দরকার কষ্ট করে একা থাকার? খাওয়াদাওয়া ও তো কষ্ট হচ্ছে তোর।’,মান্নান রাফায়েত মেয়েকে কথাগুলো বলে।

‘তোমার বউ গিয়ে আমায় আনবে তারপর আসবো।’
দরজা খুলে রুম থেকে বের হয় রাইদা। বসার ঘরে মুখ ভার করে বসে আছে রওশন আরা।

রওশন আরাকে ক্ষেপাতে ফোন লক করে কথা বলার ঢং করে রাইদা।

‘আহারে মেয়ে জামাই আসেনি তাই শ্বাশুড়ি মন খারাপ করেছি। তুমি একটু সময় করে আসলে কি হতো? দেখো শ্বাশুড়ির মনটা খারাপ করে দিলা এটা কি ঠিক বলো? এমন যদি করো তাহলে শ্বাশুড়ির হাতের রান্না আর তোমার কপালে জুটবে না।’, রওশন আরাকে শুনিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে রাইদা।

রাইদার কথা শুনে রওশন আরা অবাক চোখে তাকায়।

‘কার সাথে ফোনে কথা বলছিস?’,রওশন আরা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘কার সাথে আবার তোমার মেয়ে জামাইয়ের সাথে। তুমি কথা বলবা নাও।’,রওশন আরার প্রশ্ন শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে সাধে রাইদা।

রওশন আরা বিরবির করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়। রওশন আরা যেতেই রাইদা হাসতে থাকে,পিছনে দাঁড়িয়ে মান্নান রাফায়েত এসব দেখে হেঁসে দেয়।
মান্নান রাফায়েতকে বিদায় দিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় রাইদা।

..

ভার্সিটির মাঠে বসে বাপ্পি,ফাহিম,অর্ক,রুহি,পায়েল আড্ডা দিচ্ছিলো। রাইদা এসে ধপ করে অর্কের পাশে বসে।

‘গরমে শেষ আমি তার উপর রিকশাওয়ালা মামার সাথে ভাড়া নিয়ে করলাম ঝগড়া। পানি দে কেউ তৃষ্ণায় মরে যাচ্ছি।’,অর্কের কাঁধে মাথা দিয়ে বলে রাইদা।

রুহি ব্যাগ থেকে পানি বের করে রাইদার দিকে এগিয়ে দেয়। বোতলটা নিয়ে এক চুমকে অনেকটা পানি পান করে রাইদা।

‘তোরে তো কইছিলাম আমার বাইকে করে তোরে ভার্সিটি নিয়া আসুম আর বাসায় ফেরত দিয়া আসুম তার বদলে রিকশাওয়ালাকে যা টাকা দ্যাস সেই টাকার অর্ধেক আমারে দিবি।তুই তো আবার অন্য লেভেলের বাইকে উঠতে পারোস না।’,বাপ্পি বলে।

‘যখন নতুন নতুন বাইক কিনি রাই তো উঠতেই চাচ্ছিলো না আমি ভাবলাম আমার বাইকে বসতে রাই কমফোর্ট ফিল করছে না তাই রাগ করছিলাম। জোর করে ওরে বাইকে বসাইছিলাম বেচারি আমার মন রাখতে বসছিলো এরপর বাইক স্টার্ট দেওয়ার দুই মিনিট পর দেখি রাই আমার বাহু খামচে রক্ত বের করে দিছে। ঐ দিনের পর থেকে কানে ধরছি ওরে জীবনেও বাইকে উঠতে বলুম না।’,হাসতে হাসতে অর্ক বলে।

‘শ*য়*তা*ন ছেলে ঐদিন আরেকটু হলে আমি অজ্ঞান হয়ে যেতাম।’,অর্ককে কিল দিয়ে বলো রাইদা।

‘তোর এই সমস্যা ছোট থেকে নাকি সিঙ্গেল থাকতে থাকতে এই অবস্থা? ‘,দাঁত কেলিয়ে প্রশ্ন করে বাপ্পি।

‘ধ্যাত কি সব উল্টা পাল্টা বলিস। ছোট বেলায় বাইকে উঠেছিলাম সেইবার এতো ভয় পেয়েছিলাম তখনো জানতাম না আমার সমস্যার কথা। আরেকবার যখন উঠি দেখি একই সমস্যা এমনকি সাইকেলে উঠলেও ভয় লাগে। এরপর থেকে সাইকেল,বাইকে উঠা বন্ধ করে দিয়েছি, আস্তে আস্তে রিসার্চ করে বুঝলাম আমার মোশান সিকনেস আছে যার কারণে বাইকে উঠলে আমার অস্বস্তি, ভয় কাজ করে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘কই থেকে আসলি?’,পায়েল প্রশ্ন করে রাইদাকে।

‘বাসায় গিয়েছিলাম একটু বাবার সাথে দেখা করতে। তোরা আমার উপর এখনো রাগ করে আছিস?’
রাইদার প্রশ্ন শুনে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেঁসে দেয়।

‘হাসছিস কেনো? এই অর্ক বল।’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।

‘রাগ করে থাকলে এখন তুই এখানে আমাদের পাইতি না।’,বাপ্পি হাসতে হাসতে বলে।

‘অর্ক গত রাতে কল দিয়ে আমাদের সব বিস্তারিত বলেছে তখন আমরা বুঝলাম তোর এতে দোষ নেই।’,পায়েল জবাব দেয়

‘তোকে সায়ন কি বলেছে?’,অর্ককে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘সেটা তোর জানতে হবেনা, যদি জানতে ইচ্ছে করে তাহলে তোর বরকে জিজ্ঞেস কর।’,অর্ক দায়সারা উত্তর দেয়।

‘ক্লাসের সময় হলে গেছে চল না হলে দেরি হয়ে যাবে।’,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে রুহি।

সকলের বসা থেকে উঠে ক্লাসের দিকে হাঁটা দেয়।

ক্লসে গিয়ে বসলেই কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার আসে। ক্লাসে বারবার রাইদা অন্যমনষ্ক হয়ে যায়।
ফোন বের করে বারবার চেক করছে আর ব্যাগে রেখে দিচ্ছে বিষয়টা পাশে বসা রুহির চোখ এড়ায়নি।

‘তুই ঠিক আছিস? ফোনে বারবার কি দেখছিস?’,ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে রুহি।

‘হ্যা ঠিক আছি কিন্তু ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘দাঁড়া একটু পর অর্ককে বলে তোকে বের করার ব্যবস্থা করতে বলছি।’,রুহি আবারো ফিসফিস করে বলে।

‘বলতে হবে না ক্লাস কর।’
রাইদার কথা শুনে রুহি আর কিছু না বলে ক্লাস করায় মন দেয়।
ক্লাস শেষ করে মাথা ব্যথ্যার অজুহাতে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায় রাইদা।

ফ্ল্যাটে গিয়ে রাইদা দেখে দরজা ভেতর থেকে লাগানো।
কয়েকবার নক করার পর দরজা খুলে যায়, দরজা খুলেছে সায়ন।

‘আপনি ফ্ল্যাটের ভেতরে কীভাবে গেলেন?’,রাইদা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

‘চাবি দিয়ে লক খুলে ঢুকেছি সিম্পল।’,সায়ন জবাব দেয়।

দরজা লাগিয়ে শোবার ঘরে চলে যায় রাইদা। সায়নও পিছন পিছন যায়।

‘কিন্তু চাবি তো আমাকে দিয়েছেন তাহলে আপনার কাছে চাবি এলো কোথা থেকে?’,পিছনে ঘুরে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘রি তুমি অনেক বেশি প্রশ্ন করো। এতো প্রশ্ন করলে তো মাথা ব্যথ্যা করবে। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে খাবার নিয়ে আসো আমার খুব খিদে পেয়েছে।’,সায়ন বলে।

‘কিন্তু আমি তো রান্না করতে পারি না ভেবেছিলাম বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসবো।’,আমতা আমতা করে রাইদা জবাব দেয়।

‘রান্নাঘরে গিয়ে দেখো খাবার রেডি আছে।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘরে দুটো বড়বড় টিফিন বাটি দেখতে পায়। বাটিগুলো খুলে দেখে ভাত,চিংড়ি মাছ ভুনা, শাক ভাজি,কয়েক রকম ভর্তা সাথে গরুর মাংস রয়েছে।

সায়ন এসে দেয়ালরে হেলান দিয়ে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ায়।

‘এতো খাবার কে রান্না করে পাঠিয়েছে? আর এগুলো তো সব আমার পছন্দের খাবার। ‘,রাইদা অবাক হয়ে সায়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।

‘এগুলো তোমার শ্বাশুড়ি রান্না করে তোমার বরকে দিয়ে তোমার জন্য পাঠিয়েছে আর আমার শ্বশুড়ের কাছ থেকে শুনেছি তোমার কি কি পছন্দ সেগুলোই মা রান্না করেছে। পেয়েছো তোমার উত্তর এখন ফ্রেশ হয়ে আমায় খেতে দাও।’

সায়নের কাছ থেকে উত্তর পেয়ে রাইদা কি জবাব দিবে খুঁজে পায় না তবে সে খাবারগুলো পেয়ে খুশি হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয় না সায়নের।

‘আপনি বসুন আমি গোসল করে আসছি।’,কথাটা বলে গোসল করতে চলে যায় রাইদা।

রাইদার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সায়ন মুচকি হাসে।
রাইদা গোসল সেরে বের হয়ে রান্নাঘর থেকে খাবারের বাটিগুলো আর প্লেট এনে টি-টেবিলের উপর রাখে।

‘রি দাঁড়াও।’,সায়নের গলা পেয়ে রাইদা পিছনে ঘুরে।

রাইদার মাথার টাওয়াল খুলে চুলগুলো ভালো করে মুছতে থাকে সায়ন। রাইদা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এর আগে কখনোই কেউ এভাবে তার মাথা মুছে দেয়নি।

‘এভাবে ভেজা চুলে টাওয়াল দিয়ে ঘুরলে ঠান্ডা লেগে মাথা ব্যথ্যা করবে। গোসল করে এভাবে টাওয়াল পেঁচিয়ে রাখবা না মাথা মুছে ফেলবা।’,রাইদার মাথা মুছে বলে সায়ন।

সায়নের কথা শুনে মুখ তুলে সায়নের দিকে তাকায় রাইদা। সায়ন আলতো হেঁসে রাইদার ডান গালে নিজের ডান হাত রাখে। সায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে ঘোরে হারিয়ে যায় রাইদা। সায়নের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো কেনো তাকিয়ে ছিলো মনে নেই। রাইদার ঘোর ভাঙে সায়নের ফোনের রিংটোনের শব্দে।

ঘোর ভাঙতেই সায়নের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায় রাইদা। সায়ন প্রচন্ড বিরক্ত হয় এই মূহুর্তে ফোনে কল আসায়।

সোফায় বসে রাইদা প্লেটে খাবার বাড়তে থাকে। কল রিসিভ করে সায়ন কথা বলতে শুরু করে।

‘হ্যা বল কি অবস্থা তোর?’,ফোন কানে সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘আমার অবস্থা তো ভালো আশা করি রাইকে পেয়ে তুই ও ভালো আছিস।’,ফোনের অপরপাশ থেকে যামিনী বলে।

রাইদা খেতে ব্যস্ত সেদিকে তাকায় সায়ন যামিনীর কথা শুনে।

‘হুট করে কল দিলি কোনো প্রয়োজন? ‘,সায়ন যামিনীকে প্রশ্ন করে।

‘তোকে প্রয়োজন না রাইকে প্রয়োজন। রাইকে নিয়ে বিকালে শপিং মলে চলে আসবি আমি বিয়ের শপিং করতে যাবো।’,যামিনী উত্তর দেয়।

‘তোর বিয়ের শপিং করবি ও গিয়ে কি করবে? তাছাড়া ওরে আমি কই পাবো এখন?’,সায়ন না বোঝার ভান করে বলে।

‘সেটা আমি জানি না। তুই রাইকে নিয়ে বিকালে আসবি এটাই আমার শেষ কথা এখন কল রাখছি।’

কথাগুলো বলে যামিনী কল কেটে দেয়।
ফোন রেখে সায়নও খেতে বসে। রাইদার খাওয়া আগে শেষ হলে সে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের প্লেটটা ধুয়ে রেখে চলে আসে আবারো বসার ঘরে।

‘আচ্ছা এই ফ্ল্যাটে কলিংবেল নেই কেনো? অন্য ফ্ল্যাটে তো দেখলাম আছে। কেউ ভালো করে দরজা নক না করলে শোনা যায় না কলিং বেল থাকলে সুবিধা হতো।’,সায়নকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘এই ফ্ল্যাটের মালিক এখানে নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করে তাই কলিং বেল লাগায়নি তাছাড়া তাকে এখানে খুঁজতে কেউ আসবে না। এটা তার একা থাকার জায়গা।’,খেতে খেতে সায়ন জবাব দেয়।

রাইদা আর কোনো প্রশ্ন করে না। সায়নের খাওয়া শেষ হলে খাবারের বাটি গুলো নিয়ে ফ্লিজে রেখে দেয় রাতে খাবে সেই চিন্তা করে। হাত ধুয়ে সায়ন বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।

রান্নাঘর থেকে রুমে এসে রাইদা দেখে সায়ন বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ফোন হাতে নিয়ে বিছানার এক পাশে বসে রাইদা।

‘রি! কি শ্যাম্পু ব্যাবহার করো তুমি? ঘ্রাণটা মারাত্মক সুন্দর। ‘
সায়নের এমন প্রশ্নে রাইদা ঘাড় ঘুরিয়ে সায়নের দিকে তাকায়।

‘কেনো আপনি ও সেই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চান?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

রাইদার প্রশ্ন শুনে বালিশ থেকে মুখ তুলে সায়ন হাসে। সায়নের হাসি দেখে রাইদা মুখ সরিয়ে ফেলে।

‘বিকালে আমরা বের হবো রেডি হয়ে থেকো। আর এখন আমি ঘুমাবো একদম বিরক্ত করবা না গতরাতে ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুম দরকার।’,কথাটা বলে বালিশে মুখ গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করে সায়ন।

‘আমি আপনার সাথে কেনো বের হবো? আমি বের হবো না।’

‘ঠিক আছে যামিনীকে বলে দিচ্ছি তার আদরের ছোট বোন তার সাথে দেখা করতে চায় না।’

‘যামিনী আপু দেখা করতে চেয়েছে? তাহলে যাবো আমি।’

‘যাবে না বলেছো যখন তোমাকে নিবো না। এখন বিরক্ত না করে ঘুমাতে দাও আমায়।’

সায়নের কথা শুনে মুখটা কালো করে ফেলে রাইদা। মিনিট দশেক পর সায়ন ঘুমিয়ে যায়। বিছানায় বসা রাইদার ও ঘুম আসে কিন্তু ঘুমকে বাঁধা দিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর নিজের অনিচ্ছায় সায়নের পাশে ঘুমিয়ে যায় রাইদা।
..

আসরের আজানে রাইদার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখে সায়ন বিপরীতে ঘুরে ঘুমাচ্ছে আর সে সায়নের পিঠে হাত দিয়ে রেখেছে। শোয়া থেকে উঠে রাইদা হাত মুখ ধুতে যায়। হাত মুখ ধুয়ে জামা পাল্টে বাথরুম থেকে বের হয়। রাইদা বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় সায়নকে দেখতে পায় না। বারান্দায় উঁকি দিলে দেখে সায়ন ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।
চুল আঁচড়ে রাইদা আলমারির আয়নার সামনে দাঁড়ায়ে সাজতে থাকে। ততক্ষণে সায়নও হাতমুখ ধুয়ে নিজের টি-শার্ট খুলে আলমারি থেকে শার্ট বের করে গায়ে দেয়। আঁড়চোখে সায়নের দিকে তাকায় রাইদা। কালো শার্ট গায়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কি যেনো দেখছে সায়ন। মুখ তুলে সায়ন তাকাতেই রাইদা চোখ সরিয়ে ফেলে।

দু’জনে বেরিয়ে যায় শপিং মলের উদ্দেশ্যে। মলে গেলে যামিনী, শ্রেয়া আর যামিনীর কাজিনদের সাথে রাইদার দেখা হয়। যামিনী ঘুরে ঘুরে নিজের বিয়ের কেনাকাটা করতে থাকে। সায়ন নিজের পছন্দ মতো রাইদার জন্য বেশ কিছু কেনাকাটা করে যাতে যামিনীর বিয়েতে এগুলো রাইদা পরতে পারে। রাইদা সায়নের কেনা শাড়ী গয়না রেখে আবার আলাদা করে নিজের টাকায় কেনাকাটা করে।

রাত নেমে এলে সায়ন রাইদাকে নিয়ে শপিং মল থেকে বেরিয়ে যায় বাসার উদ্দেশ্যে যদিও যামিনীর কেনাকাটা তখনও শেষ হয়নি।
রাইদা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে প্রবেশ করে পিছনে সায়ন আসে শপিং ব্যাগ হাতে। বিছানার উপর শপিং ব্যাগগুলো রেখে পকেটে থেকে অনবরত ভাইব্রেট হওয়া ফোনটা বের করে। ফোনের স্কিনে সেভ করা নামটা দেখে সায়ন একবার রাইদার দিকে তাকায়,রাইদা নিজের মেকআপ তোলায় ব্যস্ত। কলটা রিসিভ করে সায়ন বসার রুমে গিয়ে কথা বলতে থাকে।

‘রি আমি বের হচ্ছি দরজা লাগিয়ে দাও। রাত হয়ে গেছে এখন আর বাহিরে যেয়ো না। রাতের খাবার তো আছে হয়ে যাবে না তোমার?’,শোবার ঘরে এসে সায়ন রাইদাকে প্রশ্ন করে।

‘কোথায় যাচ্ছেন? রাতে কি আবার আসবেন?’,সায়নের দিকে ফিরে রাইদা উল্টো প্রশ্ন করে।

রাইদার প্রশ্ন শুনে সায়ন অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়।

‘তুমি কি এই মাত্র জিজ্ঞেস করলে আমি কখন ফিরবো? তুমি চাও আমি এখানে রাতে ফিরি?’

সায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইদা বুঝে যায় সে মুখ ফসকে এমন কিছু জিজ্ঞেস করেছে যেটা তার জিজ্ঞেস করা উচিত হয়নি। জিভে কামড় নিয়ে রাইদা নিজের মাথায় নিজে থাপ্পড় দেয়।
রাইদার বেকামি বুঝতে পেরে সায়ন এসে আলমারির সামনে দাঁড়ানো রাইদাকে কোলে তুলে ফেলে।

‘বউ আমার জন্য চিন্তা করেছে এখন তে আমি তৃতীয় বিশ্ব যু*দ্ধ হলেও এখান থেকে এক পা ও নড়বো না।’, দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে সায়ন।

সায়নের কথা শুনে রাইদা রাগ করার বদলে হাসতে থাকে। সায়নও বুঝতে পারে না রাইদার এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ।


চলবে..

(কমেন্টে আপনাদের মন্তব্য আশা করছি। গল্পটা কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here