সে দিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -০২+৩

গল্পঃ #সে_দিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ ঈশিতা ইশা
পর্বঃ০২
(কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

‘কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো?’,সায়ন আবারো প্রশ্ন করে।

‘নানুর সাথে পাশের বাড়ি গিয়েছে কার নাকি বিয়ে সেই খবর নিতে।’, ভাবনা থেকে বেরিয়ে উত্তর দেয় রাইদা।

‘নানু? সেটা কে?’,সায়ন প্রশ্ন করে।

‘যার বাসায় দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর স্ত্রী।’,বিরক্ত মুখে জবাব দেয় রাইদা।

‘ওহ। তোমার বোনের নাম কি? কখন আসবে ও?’

‘মারিয়া। বিকালে গিয়েছে নানুর সাথে ফিরবে।পেয়েছেন আপনার উত্তর? এখন বের হন এখান থেকে।’,আঙ্গুল দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বলে রাইদা।

‘তোমার মধ্যে দেখছি একদম ভদ্রতার ছিটেফোঁটা নেই।দেখে তো মনে হয় পড়ুয়া মেয়ে তুমি অথচ মেহমানের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় শিখোনি এখনো।বিয়ে দিলে তো এতোদিনে ফুটবল টিমের মা হয়ে যেতে।’

‘ভদ্র মেহমানের সাথে ভদ্র আচরণ করি আর অভদ্র, গায়েপড়া, বিনা দাওয়াতে আসা মেহমানের সাথে অভদ্র আচরণ করি।’

‘মেয়ে মানুষ কিছু পারুক আর না পারুক কথার প্যাঁচ ভালোই দিতে জানে।’

‘আর আপনারা পারেন অপরিচিত মেয়েকে তুমি বলতে তাও অনুমতি ছাড়া।’

সায়ন ডান হাতের দুই আঙ্গুল কপালে ঘষে কিছু চিন্তা করে বলে,’আচ্ছা তোমার আম্মুর নাম কি?’

‘এই না মারিয়াকে খুঁজতেছিলেন এখন আবার আমার আম্মুর নাম জানতে চাচ্ছেন কেনো?’

সায়নের প্রশ্নের মধ্যেই উঠান থেকে আরাফের কন্ঠ ভেসে আসে।

‘সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবা।’, কথাটা বলে সায়ন রাইদার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

সায়ন যেতেই রাইদা দরজা বন্ধ করে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে রাকিবের দিকে এগিয়ে যায়।

‘তোদের চক্করে আজকে তো ভালো ভাবেই ফেঁসে যেতাম।’

‘মোগো কি দোষ আপা?এই লোক এতো প্রশ্ন কইরা মাথা খাইবো জানতো কেডা?’, রাকিব জবাব দেয়।

‘ঐ বাড়িতে আবার উল্টাপাল্টা কিছু বলে দিসনি তো?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘একদম না আপা। আরেকজন ভাই আছিলো ওনার লগে উনি তো মোরে পাঁচশ ট্যাকার লোভ ও দেখাইছে। মুই তো মুখে তালা মাইরা থুইছিলাম একটা কথাও মুখ থেইক্কা বাইর হইতে দেই নাই।এই রাকিবরে কিনা এতো সস্তা না।’,হাত নাড়িয়ে অঙ্গ ভঙ্গি করে কথাগুলো বলে রাকিব।

‘পাঁচশ না হাজার ট্যাকার নোট দেহাইলে রাকিবরে কিনতে পারতো।’, মনি ফোঁড়ন কেটে বলে।

মনির কথা শুনে হেঁসে দেয় রাইদা।
‘মাত্র যে এলো ছেলেটা কে রে?’,রাকিবকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘চেয়ারম্যানের নাতি।’

রাইদা ভাবতে থাকে এরপর আবার প্রশ্ন করে,’ বর্তমানের চেয়ারম্যান না মহিউদ্দিন চাচা? ওনার এতো বড় নাতি?আমি তো শুনেছিলাম তার ছেলে মেয়েরা অবিবাহিত।’

রাকিব উত্তর দিতে নিলেই উঠানে কারো শব্দ পাওয়া যায়। রাকিব দরজা খুলতে নিলে রাইদা তাঁকে আঁটকে অপেক্ষা করতে বলে। কিছুক্ষণ বাদে শব্দটা বন্ধ হয় অন্ধকারে ভেসে আসে ঝি ঝি পোকার ডাক। রাইদা বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নোটপ্যাডে কিছু লিখতে থাকে।।

রাত এগারোটার দিকে আলেয়া বেগম নাতনিকে নিয়ে বাসায় ফিরেন। গল্প করতে করতে কখন যে এতো বেজে গেছে টের পাননি। মারিয়া নাচতে নাচতে উঠানের দিকে যাচ্ছিলো, উঠানে গিয়ে একটা চিৎকার দেয়।

‘ও মা গো,ও খালা গো বাঁচাও মোরে।মোর হাড্ডি-গুড্ডি ভাইঙ্গা গেলো রে।এহন মুই কুতকুত খেলুম কেমনে এই ভাঙ্গা হাড্ডি লইয়া?’,কান্নার ঢং করে বিলাপ করতে থাকে মারিয়া।

মারিয়ার চিৎকার শুনে রাইদা ঘরের দরজা খুলে টর্চ নিয়ে বের হয়। বের হয়ে দেখে মারিয়া উঠানে চিৎপটাং হয়ে পরে আছে।

আলেয়া বেগম মারিয়ার পিছন পিছন আসছিলো হুট করে নাতনির চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে সে ও পরে যায়। রাইদা সদর দরজার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।

‘বেস হয়েছে। আরো কর বদমাইশি।’,হাসতে হাসতে বলে রাইদা।

‘দেখলা নানী আপা তোমারেও ভ্যাংগাইলো।’,মারিয়া আলেয়া বেগমকে খোঁচা মেরে বলে।

‘চুপ থাক বদমাইশ ছেমড়ি তোর চিক্কুর হুইন্না দৌড় দিয়া আইয়া এহন মুই পরলাম। ও মা গো মোর মাজাডা শ্যাষ এক্কেরে।’,আলেয়া বেগম কোমরে হাত দিয়ে বলে।

নানীর এই অবস্থা দেখে হাসি থামিয়ে দেয় রাইদা।

‘তুই চিৎকার না দিলে নানুর এ অবস্থা হতো না। তোর ঠ্যাং যদি না ভাঙে আমি ভেঙে দিবো।’,রাইদা মারিয়ার দিকে টর্চ তাক করে বলে।

‘ব্যথা পাইলাম মুই এহন দোষও মোর! হায় খোদা দেহো এই অবলা শিশুটারে সবাই খালি বকে।’,মারিয়া দু হাত তুলে বলে।

‘উঠান না শুকনো ছিলো তাহলে এখন ভেজা কেনো?’, রাইদা চিন্তিত হয়ে বলে।

‘এইডার জবার তো নাই মোর কাছে বইন। এহন মোরে তুলো এখান থেইক্কা। মাজাডা যন্ত্রণা করতাছে মেলা।’

রাইদা বাম হাতে টর্চ নিয়ে ডান হাত দিয়ে আলেয়া বেগমকে তুলে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। মারিয়াও তাঁদের সাথে আসে হাত পা ধুতে।

‘নানু একটা টিউবওয়েল লাগালে তোমার কত কষ্ট কমে যায় অথচ তুমি কথা শুনো না আমার।’,আলেয়া বেগমের হাত পায়ে মগ দিয়ে পানি ঢালতে ঢালতে বলে রাইদা।

‘তোর নানা মারা গেছে পরে সব উলট পালট হইয়া গেছে বইন। পোলাডি তো আগেই সব ভাগাভাগি কইরা নিছে এহন অপেক্ষা করে কহন মুই চোখ বুজুম আর এই ভিটায় কবজা করবে।’, হাত পা ধুতে ধুতে উত্তর দেয় আলেয়া বেগম।

‘আমি দেখি যতদিন আছি টিউবওয়েলের একটা ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।’,রাইদা বলে।

‘নানী খালা কবে আইবো?’, মারিয়া জিজ্ঞেস করে।

‘কালকে আসবে কল দিয়েছিলো।’, রাইদা উত্তর দেয়।

‘কালকে কিন্তু হাটখালা বইবো তুমি কথা দিছো নিয়া যাবা মোরে।’

রাইদা দু পা এগিয়ে এসে মারিয়ার কান ধরে বলে,’স্কুল কয় দিন ফাঁকি দিছিস সেই খবর আছে? কালকে স্কুলে যাবি তারপর বিকালে বাজারে নিবো এর আগে না।’

‘কান ছাড়ো কথা দিলাম যামু স্কুলে। তুমি আইছো সেই খুশিতে একটু বন্ধ দিলাম মোর লগে এমন করো কেন আপা।’,কান ডলতে ডলতে উত্তর দেয় মারিয়া।

‘বইন মোরে ধর তো নেইলে পইড়া যামু ঘরে যাইতে যাইতে। মাজাডা মনে হয় ভাইঙ্গাই গেলোরে।’, কথাটা বলে আলেয়া বেগম রাইদার দিকে হাত বাড়ায়।
টর্চ মারিয়ার হাতে দিয়ে নানীকে ধরে ঘরে নিয়ে যায় রাইদা।

‘মারিয়া পড়তে বস। দুদিন পর এসএসসি এখনো পড়ার নাম গন্ধ নেই।’, আলেয়া বেগমকে বিছানায় বসিয়ে বলে রাইদা।

‘বিদ্যুৎ নাই তো আপা কেমনে পড়ুম। বিদ্যুৎ আহুক আগে।’

‘খাপ্পড় মেরে তোর ষোলো গুষ্ঠির নাম ভুলাই দিবো পড়তে বস জলদি।’,রাইদার হুঙ্কারে ভয়ে জলদি বই নিয়ে পড়তে বসে মারিয়া।

আলেয়া বেগম বিছানায় বসে মিটমিট করে হাসতে থাকে মারিয়ার অবস্থা দেখে। রাইদা তরকারি গুলো বের করে সিলিন্ডারের চুলায় গরম করতে থাকে।

‘আপা খিদা লাগছে অনেক। খাইয়া পড়তে বসি?’,মারিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে।

‘গতকালকে যেই পড়া দিয়েছিলাম সেগুলো মুখস্থ দিবি তারপর খাবার পাবি এর আগে না।’,মারিয়াকে রাইদা খুন্তি দেখিয়ে বলে।

মন খারাপ করে মারিয়া পড়তে থাকে।

ভাত তরকারি গরম করে রাইদা বারতে থাকে প্লেটে। মারিয়াকেও ডেকে খেতে বসায়। খাওয়া শেষ হলে আলেয়া বেগম শুয়ে পরে আর টেবিলে গিয়ে মারিয়া পড়তে বসে। ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ, ক্যামেরা বের করে রাইদা নিজের কাজে লেগে যায়।

‘তোর হয়েছে কি আমায় বলতো। রাকিব ছেলেটাকে আমি দিয়ে আসতে যেতে চাইলাম তুই তখন কিছু বললি না যখনই ও বললো মাস্টার বাড়ি যাবে তখন তুই বেঁকে বসলি তোর নাকি হাঁটতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের সাথে যাবি। এরপর মাঝ রাস্তায় বললি ফোন ভুলে গেছিস আমায় ফেরত পাঠিয়ে দিলি ফোন আনতে,ফোন নিয়ে গিয়ে দেখি তুই ও নাই রাকিবও নাই। আশে পাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করে মাস্টার বাড়ি গেলাম কিন্তু তুই আমায় ধরে আমার ফেরত নিয়ে আসলি। পুরো ঘটনা টা একটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবি প্লিজ?’, আরাফ সন্দিহান হয়ে কথাগুলো বলছিলো সায়নকে।

‘আজব এখানে ঘটনা কই পাইলি তুই? তোর কথার মধ্যেই উত্তর আছে খুঁজে দেখ। ফোন ভুলে গেছি সেটা তুই নিয়ে যেতে লেট হচ্ছিলো তাই ওরে আমি দিয়ে আসছি সিম্পল। শুধু শুধু জল ঘোলা করছিস।’, সায়ন কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

‘আরে আরাফ তুই একটু বেশিই ভাবছিস। সায়নকে তো চিনিসই ও হুটহাট কতকিছু করে বসে ঐইসব নিয়ে মাথা ঘামাস না। চল বাহিরে গিয়ে মুরব্বিদের আলাপ করে আসি।’, আরাফের কাঁধে হাত দিয়ে বলে রুবেল।

আরাফ কোনো উত্তর না দিয়ে রুবেলের সাথে বের হয় উঠানের দিকে যাওয়ার জন্য। উঠানে গিয়ে দেখলেন মহিউদ্দিন চাচা বসে আছেন একা। আরাফ আর রুবেলকে দেখে ইশারায় তার পাশে বসতে বললেন।

‘বাড়িতে মানুষ ভর্তি থাকলে কত ভালো লাগে। সবাই সম্পত্তির ভাগ চায় কিন্তু কেউ এসে থাকতে চায় না। ছোট থেকে নিজ হাতে ভাইবোন দুইটারে মানুষ করছি। আব্বা লেখাপড়ার বিরুদ্ধে ছিলো অথচ আমি তার বিরুদ্ধে গিয়া ভাইবোন দুইটারে শহরে পড়াইছি। আম্মা বাঁইচ্চা থাকতে ওঁরা আসতো বাড়িটা পুরা জমজমাট থাকতো। ঐ মেইন রাস্তা থেকে চেয়ারম্যান বাড়ির মানুষের হাসির শব্দ পাওয়া যেতো। যেই আম্মা মারা গেলো বোনটাও আসা কমায় দিলো। ভাইটা যা একটু আসতো খালি সম্পত্তি ভাগ করার কথা বলতো।আব্বা অসুস্থ হইয়া বিছানায় পরার পর আমি চেয়ারম্যান হলাম তখন ছোট ভাই আমারে লোভী বইলা অপবাদ দিলো। সম্পত্তির লোভে নাকি আমি চেয়ারে বসছি। বলো বাপ যাদের জন্য করলাম চুরি এরা এখন আমারে বানায় দিলো চোর।’,কথাগুলো বলতে গিয়ে চেয়ারম্যানের চোখ ভিজে গেলো।

‘সায়নের মা এখন আর আসে না?’, রুবেল প্রশ্ন করে।

‘অনেক বছর আগে সামান্য এক কারণ নিয়ে রাগ করে চলে যায় এরপর আর আসেনি। সায়নও এতো বছর পর এইবারই আসলো।’,মহিউদ্দিন জবাব দেয়।

‘আন্টি কেনো রাগ করেছিলো?’,রুবেল প্রশ্নটা করে।

‘আরে তেমন কিছু না ছোট খাটো বিষয়।’, কথাটা বলে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে মহিউদ্দিন।

‘বাড়িতে কে কে আছে এখন? আসলে সবার সাথে পরিচিত হতে পারিনি।’,আরাফ সংকোচ নিয়েই প্রশ্নটা করে।

চেয়ারম্যান হেঁসেই উত্তর দেয়, ‘পোলা মাইয়া আমার তিনটা। বড় পোলাটা পটুয়াখালীর এক হোস্টেলে থেকে কলেজে পড়ে। মেজ মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে আর ছোট মেয়েটা মাত্র সেভেনে পড়ে। তোমাদের মামি, আব্বা,আমি আর দুই মাইয়া সারা বাড়িতে থাকতাম। বাড়ি ফাঁকা থাকে সেইজন্য তোমার মামির ছোট ভাই বোন দুইটারে নিয়ে আসছি। তোমার মামির ভাইটা আমার সাথেই থাকে সব দেখাশোনা করে। তাঁর বইনটা মহিলা মাদ্রাসায় পড়ে।’

‘এই শুনতাছেন? পোলাপান গুলারে খাওয়ান লাগবো না? গপ্প করলেই কি পেট ভরবো নাকি? পোলাপান গুলারে নিয়ে ভিতরে আহেন খাওন বাড়তেছি।’,মহিউদ্দিন এর স্ত্রী এসে কথা গুলা বলে আবার বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

‘চলো ভিতরে বাকি কথা পরে বলবো আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করি। গিন্নি খাবারের সময় দেরি করা একদম পছন্দ করে না।সায়ন কোথায়? অনেকক্ষণ ওরে দেখতেছি না যে।’

‘মামা আপনি ভিতরে যান আমরা ওরে ডেকে আনতেছি।’, আরাফ কথাটা বলে।

‘আচ্ছা জলদি আসো।’, কথাটা বলে মহিউদ্দিন উঠে ঘরের দিকে যায়।

‘লোকটা গ্রামে থাকে বুঝাই যায় না। একদম স্পষ্ট শুদ্ধ উচ্চারণ করে।’, রুবেল আরাফকে বলে।

‘ঠিক বলেছিস তবে চেয়ারম্যান বাড়ির সদস্যরা সায়নকে দেখে একটু অন্য রকম ব্যবহার করছে।’,আরাফ বলে।

‘হয়তো অনেক বছর পর পেয়েছে সেই জন্য। ‘

‘হতেও পারে আবার অন্য ঘটনাও থাকতে পারে। চল সায়নকে ডেকে আনি।কিন্তু ও কোথায় আছে?’

‘কোথাও বসে নিশ্চয়ই সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।’

আরাফ আর রুবেল হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পিছনের দিকের একটা ছোট পুকুরের সামনে আসে। পুকুরের ঘাটে একটা মানুষের অবয়ব দেখে দু’জন সেখানেই যায়। কাছে গিয়ে দেখে সায়নি সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।

‘বলছিলাম না ব্যাটা সিগারেট খাচ্ছে কোথাও বসে দেখ আমার কথাই সত্য।’,হাসতে হাসতে বলে রুবেল।

‘তোরা এখানে কি দরকারে? সিগারেট খাবি?’,সায়ন পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।

‘দে ভাই একটা টান দেই।’,রুবেল সায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে।

‘খবরদার রুবেল মাইর খাবি এখন সিগারেটে টান দিলে। খেতে ডাকতেছে আমাদের চল জলদি। সায়ন আয় জলদি মামি খাবার বেরে বসে আছে।’,আরাফ ব্যস্ত গলায় বলে।

‘তোরা যা আমার খিদে নেই।’, কথাটা বলে সায়ন সিগারেটে টান দেয়।

‘দেখ ত্যাড়ামি করিস না চল।’, সায়নকে টেনে আরাফ বসা থেকে তোলে।

‘আচ্ছা যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি না হলে সিগারেটের গন্ধ আসবে।’

‘আচ্ছা জলদি আয়।’,কথাটা বলে আরাফ রুবেলকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

‘তুমি কি আমায় আর দেখা দিবে না? কতবছর হয়ে গেলো আজও তোমায় খুঁজি। এখানের আসার পর মনে হচ্ছে একবার যদি তোমার দেখা পেতাম তাহলে এবার আর হারাতে দিতাম না, দরকার হলে জোর করে বেঁধে নিজের কাছে রেখে দিবো।’, পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

ফোনটা বের করে গ্যালারিতে গিয়ে একটা ছবি বের করে। ছবিটা অস্পষ্ট হলেও সায়নের কাছে ছবিটা অনেক মূল্যবান। ছবিটাতে একটা চুমু খেয়ে ফোনটা পকেটে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

কাঠের বিশাল ডাইনিং টেবিল ভর্তি করে একের পর এক খাবারের পদ এনে রাখছেন মনিরা বেগম। ননদের ছেলে এত বছর পর এসেছে সেই খুশিতে অনেক রান্না বান্না করেছেন। সায়ন এসে দেখলো মামা আরাফ আর রুবেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কিছু বলছেন। শ্রেয়া ফোন টিপছে আর যামিনী সায়নের মামাতো বোনের সাথে কথা বলছে। মহিউদ্দিনের শালা এখনো বাড়ি ফেরেনি আর তার শালি মনিরা বেগমকে সাহায্য করছে রান্না ঘরে।

‘মামা নানা কোথায়?’, সায়ন প্রশ্ন করে মহিউদ্দিনকে।

‘আব্বায় আরো আগে খাইয়া শুইয়া পরছে।অসুস্থ মানুষ রাইত জাইগ্গা লাভ কি তাই জলদি খাওয়াইয়া ওনারে ঘুমাইতে পাডাই দেই।’,মহিউদ্দিনের স্ত্রী মনিরা বেগম জবাব দেয়।

সায়নের বোধহয় বিষয়টা পছন্দ হলো না তারপরও চুপ করে রইলো।আরাফ কিছু বলতে নিলে রুবেল হাত চেপে বাঁধা দেয়।

‘সায়ন তোর বোন দু’টোকে চিনেছিস? এই যে আমার বাম পাশে বসা তোর সেই ছোট বোন সানজিদা।’, মহিউদ্দিন হাত দিয়ে
যামিনীর পাশে বসা মেয়েটাকে দেখিয়ে দেয়।

‘এটা আমাদের সেই ছোট পুচকি?’, সায়ন হেঁসে সানজিদার উদ্দেশ্যে বলে।

‘ভাই একদম আমায় পুচকি বলবেনা বড় হয়ে গেছি আমি।’,সানজিদা রাগ দেখিয়ে বলে।

‘কোন ক্লাসে পড়িস?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘ক্লাস টেন এ এইবার।’,সানজিদা জবাব দেয়।

‘বাহ্! অনেক বড় হয়ে গেছো।’, আরাফ হেঁসে বলে।

আরাফের কথা শুনে সানজিদা মাথা নিচু করে ফেলে।

‘আর এই যে ঘরের ছোট রাজকন্যা শিমু।’, মহিউদ্দিন তাঁর ছোট মেয়েকে ডেকে এনে বলে।

‘এদিকে আয় বস আমার পাশে।’, সায়ন শিমুকে বলে।
শিমু গিয়ে মনিরা বেগমের পিছনে লুকায়।

‘বহুত কথা হয়েছে খাবার বেরে দিতাছি খাও আগে।’,কথাটা বলে মহিউদ্দিনের স্ত্রী মনিরা বেগম খাবার দিতে থাকে সবাইকে।

হাসি তামাশায় রাতের খাবার সকলে একত্রে খেলো।

রুবেল আর আরাফকে নিচ তলার ডান পাশে একটা রুমে থাকতে দিয়েছে। সায়ন কারো সাথে রুম শেয়ার করতে পারে না তাই তাঁকে পাশের রুমটা দিয়েছে। শ্রেয়া, যামিনীকে উপরে সানজিদার পাশের রুমে শুয়েছে।

নামাজ পড়ে রেডি হয়ে হাঁটতে বেড়িয়েছে মেয়েটা। এইসময় ভোরের বাতাস এতো ভালো লাগে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির উল্টো দিকে চলে এসেছে। মোড় ঘুরে আবার বাড়ির দিকে ফিরছে সে।

‘আপনি সেই মেয়েটা না?’

মেয়েটা পাশে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে সাদা পাঞ্জাবি গায়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে তাঁর লেগে আছে হাসি।

‘আপনাকে আমি কি চিনি?’

‘আরে গতকালকে বিকালে আপনার সঙ্গে দেখা হলো মেইন রাস্তার ধারে।আমি আরাফ…’

আর কিছু বলতে নিলেই মেয়েটা থামিয়ে বলে,’ হুম মনে পড়ছে এখন। কিছু কইবেন মশাই?’

‘ইয়ে মানে আপনার নামটা কি?’

‘নাম কমু যদি ঐ যে গাছটা দেখতেছেন সেখান থেইকা আমারে আম পাইড়া দেন।’, হাতের ইশারায় সামনে থাকা বিরাট একটা আম গাছ দেখায় মেয়েটা।

আরাফ গাছের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।
‘সহজ কিছু দেন আসলে আমি গাছে উঠতে পারিনা।’

‘তেইলে নামও জানা লাগবে না।’,কথাটা বলেই মেয়েটা সামনে হাঁটা দেয়।

‘আরে দাঁড়ান আমি চেষ্টা করছি।’,কথাটা বলে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে গাছে উঠার চেষ্টা করে আরাফ। মিনিট দশের চেষ্টা করে আরাফ গাছে উঠতে পারেনি।
মেয়েটা আরাফের পিছনে দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে। আরাফ লজ্জায় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

‘বুঝছি পারবেন না। গেলাম আমি।’

‘এই না দাঁড়ান না আমি আরেকবার চেষ্টা করি।’

‘লাগবে না গেলাম আমি।’, কথাটা বলে মেয়েটা হাঁটতে থাকে।

‘তাহলে আপনার নামটা?’

‘আম পেরে আনলে বলুম।’
আরাফ অসহায়ের মতো গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। সকালে মসজিদে মহিউদ্দিনের শালা রফিকের সঙ্গে নামাজ পড়তে গিয়েছিলো ফেরার পথে রফিক বাজারে চলে গেলে আরাফ একাই চেয়ারম্যান বাড়ির দিকে রওনা হয়। দূর থেকে কামিজ পড়া মেয়েটাকে দেখে চেনা চেনা লাগে তাই মেয়েটার কাছে আসে। আর এসেই দেখে এইটা সেই গতকালকে বিকালে দেখা মেয়েটা।

রাইদা উঠানে বসে হাঁস গুলোকে খাবার দিচ্ছিলো তখন বাড়ির সামনের রাস্তায় চোখ গেলে দেখে সায়ন তাদের বাড়ির দিকে আসছে। রাইদা হাঁসের খাবার গুলো ওখানেই ফেলে রুমে দৌড় দেয়। সায়ন উঠানে কাউকে দেখতে না পেয়ে উঠানে পায়চারি করতে থাকে। দরজায় বাড়ি দিবে নাকি সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছে সে। পাশে তাকিয়ে দেখে হাঁসগুলো খাবারের বাটি রেখে গামলা থেকে খাবলাখাবলি করে খাবার খাচ্ছে। একটা পিঁড়ি খাবারের গামলার সামনে দেখে মনে হচ্ছে কেউ এখানে বসে ছিলো।

‘কাউরে খুঁজতাছো?’, আলেয়া বেগম শাকের ঝুরি নিচে রেখে প্রশ্ন করে।

সায়ন ইতস্তত করে বলে,’আসলে আমি মাস্টার নানাকে দেখতে এসেছি।’

আলেয়া বেগম মুখ কালো করে বলে,’সে তো মারা গেছে আইজ পাঁচ বছর হইবো।’

সায়ন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো।

‘তা তোমারে তো চিনলাম না? কে তুমি?’

‘আমি সায়ন। মহিউদ্দিন চেয়ারম্যানের ভাইগ্না।’

আলেয়া বেগম মনে করার চেষ্টা করে সায়নের পরিচয়।

‘রিনার ছেলে আমি।’

সায়নের কথা শুনে আলেয়া বেগম সায়নের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,’তোমারে তো চেনাই যায় না কত বড় হইয়া গেছো। বসো এই যে চেয়ারে।’

রাইদা দরজা লাগিয়ে দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে কিন্তু সে তাঁর নানীর কিছু কথা শুনতে পাচ্ছে তবে সায়নের কোনো কথা শুনতে পাচ্ছে না। হাঁসের খাবারের কুড়া হাতে লেগে আছে সে হাত ধোয়ার সময় পায়নি। গন্ধে বাম হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে আছে। এই সায়ন আপদ না গেলে সে বের হবে না।ছেলেটাকে তার মোটেও সুবিধার মনে হয় না।

‘না নানু বসবো না যাচ্ছিলাম এদিক দিয়ে তাই ভাবলাম আপনাদের খবর নিয়ে যাই। বাড়িতে আপনি একা থাকেন?’, সায়ন প্রশ্ন করে।

‘ছোড পোলার বউ থাকে আইসা। গতাকালকে বাপের বাড়ি গেছে ওর বাপে নাকি অসুস্থ সেইজন্য। বাড়িতে এখন মাইয়ার ঘরের নাতনী দুইটা আছে।’

আলেয়া বেগমের সাথে আরো কিছু টুকিটাকি কথা বলে সায়ন বিদায় নিয়ে বাজারের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। মুখে তাঁর লেগে আছে লম্বা হাসি। সে ভাবতে পারেনি এতো জলদি কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা পেয়ে যাবে।
পর্বঃ০৩
গল্পঃ #সে_দিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ ঈশিতা ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

সকালে গোসল সেরে স্কুলে গিয়েছিলো তাই স্কুল থেকে এসেই মারিয়া দুপুরের খাবার না খেয়েই সাজতে বসেছে। সাজুগুজু তাঁর ভীষণ পছন্দ।রাইদার সাজের জিনিস পেয়ে ইচ্ছে মতো সাজছে।

রাইদা বসার ঘরে পায়চারী করছে আর বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে। সকালে হুট করে সায়ন কেনো এসেছিলো সেটা এখনো নানুর কাছ থেকে জানা হয় নি। নানু দুপুরের রান্না সেরে গোসল করে এখন নামাজ পড়ছে। নানুর নামাজ শেষ হলেই এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। রাইদা কাছে মোটেও সায়ন নামক ছেলেটাকে সুবিধার লাগছে না। বারবার মনে হচ্ছে ধূসর রঙের চোখ গুলোকে কোথাও দেখেছে।

ঘড়িতে পৌঁনে তিনটা বাজে আলেয়া বেগম নামাজ সেরে কাঠের ছোট টেবিলটাতে খাবার বাড়ছে।

‘রাই – মারু হোয়ালে খাইতে আয় অনেক বেলা হইয়া গেছে আর দেরি করলে হাটখোলা যাইতে দেরি হইয়া যাইবো।’

আলেয়া বেগমের ডাক শুনে রাইদা বসার ঘর থেকে রান্না ঘরের দিকে যায়। রান্না ঘরের পাশেই টিনের পাটিশন দিয়ে ছোট একটা রুমের মতো করা হয়েছে সেটাই খাবার ঘর।

‘মারু জলদি আয় খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’, কথাটা বলে রাইদা খেতে বসে।

‘সকালে কে আসছিলো নানু?’,রাইদা আলেয়া বেগমকে প্রশ্ন করে।

‘কহন? কার কথা কস?’,আলেয়া বেগম জিজ্ঞেস করে।

‘আরে একটা ছেলেকে দেখলাম যে কে সে?’

‘তুই কেমনে দেখলি? তুই না ঘরে ছিলি?’, আলেয়া বেগম সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

রাইদা ধরা পরা চোরের মতো কথা গিলে বলে,’জলদি ভাত দাও খুদা লাগছে অনেক।’

রাইদাকে খাবার বেরে দিয়ে আলেয়া বেগম খেতে বসে। এর মধ্যে মারিয়া সেখানে আসে। মারিয়াকে দেখে আলেয়া বেগমের কাশি উঠে যায়। রাইদা খাবার রেখে আলেয়া বেগমকে পানি খাইয়ে দেয়। মারিয়া স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খেতে বসে।

‘এমন সং সাজছিস কেন? ডরাই গেছিলাম। এই ছেমড়িডার লইগ্গা কবে জানি মুই স্টক করি।’

‘নানী ঐইডা স্টক না স্ট্রোক। ‘, কথাটা বলে মিটমিট করে হাসতে থাকে মারিয়া।

রাইদা মারিয়াকে ধমক মেরে ওর দিকে তাকিয়ে সাজ দেখে হেঁসে দেয়। মারিয়া রাইদার একটা শর্ট টপস পড়েছে সাথে সেলোয়ার। আইশ্যাডো দিয়ে চোখ গুলো রংধনুর মতো করে রেখেছে সাথে লাল লিপস্টিক। মাথায় দিয়েছে রাইদার বেবি ক্লিপ। দুই হাত ভর্তি চুড়ি।

‘তোর এই সাজ দেখলে যে কেউ স্ট্রোক করবে রে মারু।’, হাসতে হাসতে বলে রাইদা।

‘মেলা সুন্দর লাগতাছে তাই না? ঐদিন যে সাজায় দিছিলা তেমনে সাজবার চাইলাম কিন্তু পারতাছি না এমনেই মনে হইলো আমারে বেশ সুন্দর লাগে।’, লজ্জা পেয়ে বলে মারিয়া।

‘খাওয়া শেষ কর আমি তোকে সাজিয়ে দিবো চিন্তা করিস না।’, রাইদা বলে।

‘ছেমড়ি ঢংঙ্গে বাঁচে না। যতই সাজস না কেন রাইয়ের মতো হইবার পারবি না।’

নানীর কথায় মারিয়া ভেংচি কাটে।

‘নানু কি যে বলো না। ঐদিন ওর সাজের পর আমি নিজেই ওকে চিনতে পারিনি। অনেক সুন্দর লাগছিলো।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘আরেকটু মাছের চচ্চড়ি নাও। ভালো মন্দ তোমারে খাওয়াইতে পারতাছি না। কত বছর পর আইছো তুমি। তোমার নানা বাইচ্চা থাকলে ব্যাগ ভইরা ভইরা বাজার সদায় আনতো রে বইন। এহন আমি যা পারতাছি তোমারে খাওয়াইতাছি তাও আমার কইল্জা ভরে না বইন।’,কথাটা বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছেন আলেয়া বেগম।

‘আরে নানী কত বছর পর তোমার হাতের রান্না খাচ্ছি এটাই আমার জন্য অনেক। ছুটি শেষ হলে আমাকে ফিরতে হবে আবার এটা ভেবেই কান্না আসে।’,মন খারাপ করে বলে রাইদা।

‘আমি যখন আরো বড় হমু তোমারে দেখতে ঢাকা যামু সাথে কইরা তোমার পছন্দের ঝুরি ভাজা আর গোপাল দাদার দোকানের রসগোল্লা নিমু।’

মারিয়ার কথা শুনে হেঁসে দেয় রাইদা।

‘বহুত গপ্প হইছে জলদি খা নেইলে তগো দেরি হইবো হাটখোলা যাইতে।’, আলেয়া বেগম দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে।

মারিয়া আর রাইদা টুকিটাকি গল্প করতে করতে দুপুরের খাওয়া শেষ করে।

খাওয়া শেষ করে দুই বোন রুমে এসে রেডি হতে শুরু করে।
‘কোন জামাটা পড়বি বল।’,রাইদা লাগেজ খুলে বলে।

‘তুমি কি রঙের জামা পড়বা সেই রঙের জামা পড়ুম।’ মারিয়া খুশি হয়ে জবাব দেয়।

‘দাঁড়া খুঁজে দেখি।’,কথাটা বলে লাগেজ খুলে রাইদা।

নিজের জন্য কালো রঙের জর্জেটের থ্রি-পিস বের করে। মারিয়া রাইদার দেখাদেখি সুতির কালোর রঙের থ্রি-পিস পড়ে।
মারিয়াকে আইলাইন, ব্লাশ আর সাথে নুড লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয় রাইদা। যদিও মারিয়া লাল লিপস্টিক দিতে চাইছিলো রাইদা তাঁকে বুঝায় লাল লিপস্টিক জামার সাথে মানাবে না পরে বাধ্য হয়ে রাইদার দেওয়া লিপস্টিক লাগিয়ে নেয় ঠোঁটে। রাইদা ভাবলো যেহেতু বাজারে যাবে সাজের প্রয়োজন নেই নুড লিপস্টিক দিলেই হবে। একদম পিংকিস নুড লিপস্টিক দিয়ে কপালে একটা কালো টিপ পরে নেয়।কানে এক জোড়া ঝুমকা। গ্রামে এসে একটু ভদ্র ভাবেই চলতে চাচ্ছে সে যাতে পাড়া প্রতিবেশী কানাঘুষা না করে এমনিতে সে তাঁর সাধারণ জীবন খুবই ব্যাতীক্রম ভাবে পরিচালনা করে।

চেয়ারম্যান বাড়ির সবাই দুপুরে খেয়ে যার যার রুমে রেস্ট নিচ্ছিলো।
সায়ন শুয়ে ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছে। রুবেল খেয়ে ভাতঘুম দিয়েছে।
আরাফ রুমে ঢুকেই বলে,’ আমরা কি ভাই খেয়ে ঘুমিয়ে ছুটি কাটাইতে আসছি নাকি? দ্বিতীয় দিন আজকে অথচ এখনো গ্রামটা ঘুরতে পারলাম না।’

সায়ন ফোন থেকে মুখ তুলে বলে, ‘সব তো ঘুমাচ্ছে এখন বের হওয়া তো সম্ভব না।’

‘রুবেল বাদে সব সজাগ। শ্রেয়া আর যামিনী জেগে আছে ঘুমাচ্ছে না মাত্র দেখে আসলাম।’,চেয়ারে বসে বলে আরাফ।

‘চল তাহলে ঘুরে আসি।’,ফোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় সায়ন।

আরাফ উঠে বিছানার কাছে গিয়ে রুবেলকে অনেকক্ষণ ডাকে। রুবেল জেগে থাকা সত্বেও না শুনার ভান করে শুয়ে থাকে। আরাফ ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে রুবেলকে ফেলে দেয়।

‘গেলো রে আমার হাড্ডি সব ভাইঙ্গা গেলো রে।’, মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কান্নার ভঙ্গিতে বলতে থাকে রুবেল।

‘জলদি রেডি হ বের হবো গ্রাম ঘুরতে। সায়ন চল শ্রেয়া আর যামিনীকে ডাকি।’, আরাফ বলে।

‘আরাফের বাচ্চা তরে আমি ছাড়ুম না। ও রে বাবারে শেষ আমি ব্যাথায়।’

‘দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বাহির হবি না হলে তরে আমি আস্ত রাখবো না।’, কথাটা বলে আরাফ সায়নকে নিয়ে বের হয়।

শ্রেয়া আর যামিনী কিছু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো তখনই আরাফ দরজায় নক করে।

‘খোলা আছে দরজা।’, যামিনী উত্তর দেয়।

‘জলদি রেডি হয়ে বাহিরে আয় গ্রাম দেখতে বের হবো আমরা।’,দরজা দিয়ে রুমে উঁকি মেরে বলে আরাফ।

‘সায়ন কই? ওরে কতক্ষণ ধরে মেসেজ দিচ্ছি রিপ্লাই করে না কেনো?’,শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে।

‘বাহিরে আয় ওরে পাবি।’,কথাটা বলে আরাফ দরজা লাগিয়ে দেয়।
হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলো আরাফ তখন কারো গানের গলা পেয়ে কৌতুহল হয়ে সেই দিকে উঁকি মারে কিন্তু মানুষটাকে দেখতে তো পায় না উল্টো কারো সাথে বারি খায়। ঘাড় সোজা করে আরাফ বাম হাত দিয়ে মাথা ডলতে থাকে। চোখ খুলে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করে।

‘আপনার লাগছে অনেক?’,সানজিদা জিজ্ঞেস করে।

‘আরে না আমি আসলে দুঃখিত। আপনি ঠিক আছেন?’, ইতস্তত করে সানজিদাকে জবাব দেয় আরাফ।

‘আপনে এখানে? কাউরে খুঁজতাছিলেন? ‘,সানজিদা জিজ্ঞেস করে।

‘শ্রেয়া আর যামিনীকে ডাকতে এসেছিলাম গ্রামটা ঘুরে দেখবো সেইজন্য। নামার সময় কারো গানের গলা পেয়ে একটু দেখতে এসেছিলাম তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটলো।’,আরাফ মাথা ঘষতে ঘষতে জবাব দেয়।

‘বেশি লাগছে? বরফ আইন্না দিমু?’, ব্যস্ত গলায় বলে সানজিদা।

‘গান কে গাইছিলো?’,আরাফ জিজ্ঞেস করে।

‘আমি।’, মাথা নিচু করে সানজিদা জবাব দেয়।

‘বাহ্ অনেক সুন্দর গান গাইতে পারেন তো আপনি।’,আরাফ হেঁসে বলে।
সানজিদা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। এর মধ্যে মনিরা বেগম সানজিদাকে ডাকতে থাকে। দৌড়ে সেখান থেকে পালায় সানজিদা। মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথার স্হানটা পরখ করে আরাফ বসার ঘরের দিকে যায়।

আরাফ বসার ঘরে গিয়ে দেখে মহিউদ্দিনের সাথে সায়ন আর রুবেল আড্ডা দিচ্ছে সাথে মহিউদ্দিনের বড় ছেলে জাহিদও আছে। আজকে সকালেই হোস্টেল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে সায়নদের সাথে বেড়াতে।

‘আরে আরাফ কই আছিলা? তোমাকেই খুঁজতেছিলাম।’, মহিউদ্দিন হেঁসে জিজ্ঞেস করে।

‘এই তো মামা রুমে ছিলাম।’,আরাফ জোর করে হাসি দিয়ে বলে।

‘তোমরা নাকি গ্রাম দেখতে বের হতে চাচ্ছো?’,মহিউদ্দিন জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা মামা। আজকে সজলও আছে।’,সায়ন জবাব দেয়।

‘যাও তোমরা আমার কোনো সমস্যা নেই।’, মহিউদ্দিন জবাব দেয়।

‘শিমু আর সানজিদাকেও নিয়ে নেই সাথে? ওরা একা বাসায় মন খরাপ করবে।’,আরাফ বলে।

‘মামা না করো না পোলাপান মানুষ চলুক আমাদের সাথে।’, সায়ন বলে।

‘ঠিক আছে যাও কিন্তু সাবধানে। ‘,মহিউদ্দিন কথাটা বলে শিমুকে ডেকে বলে রেডি হয়ে আসতে।

শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে বসার ঘরে রুবেল আসে।
‘কিন্তু যাবোটা কই?’, রুবেল জিজ্ঞেস করে।

‘আজকে বাজারে হাঁট বসছে তোমরা চাইলে ঘুরতে যেতে পারো। অনেক রকম জিনিসপত্র বিক্রি হয় হাঁটে। ‘, জাহিদ জবাব দেয়।

‘যেহেতু বিকেল হয়ে গেছে হাঁটে যাওয়াই যায়।’, আরাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে।

‘আমরা রেডি চল বের হই।’, যামিনী বলে।

‘দাঁড়া বাকিরা আসুক।’,আরাফ জবাব দেয়।

‘সবাই তো আছি আর কে?’, যামিনী এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

আসলেই দেখতে পাবি। মিনিট দশেক পর শিমু আর সানজিদা আসে। আরাফ সানজিদার দিকে তাকালে দেখে আগে দেখেই সানজিদা তাকিয়ে আছে আরাফ সানজিদাকে সৌজন্যমূলক একটা হাসি উপহার দেয়।
বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ সকলে মিলে চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হয় উদ্দেশ্য বাজারের হাঁট।

প্রতি বৃহস্পতিবার বাজারে হাঁট বসে। আশে পাশের গ্রাম থেকে অনেক বিক্রেতা আসে বিভিন্ন রকম জিনিসপত্র বিক্রি করতে। খাবার থেকে শুরু করে সকল ধরনের জিনিস বিক্রেতারা নিয়ে আসে বিক্রি করতে। বিক্রেতাদের পাশাপাশি শত-শত ক্রেতা ও আসে এই বাজারের বিশাল হাঁটে।

রাইদা, মারিয়া, রাকিব, মনি এসেছে হাঁটে। মারিয়া যেটাই দেখছে কেনার জন্য বায়না করছে। রাইয়া ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিচ্ছে মারিয়াকে। ক্যামেরা বের করে কিছু ভিডিও করে নিয়েছে রাইদা।

‘এই রাকিব ভালো দেখে দুটো দেশি মোরগ খোঁজ। ‘,রাইদা রাকিবকে বলে।

‘আরে আপা এখনই খুইজ্জা দিতাছি। আমি থাকতে আপনার কোনো চিন্তাই নেই। ‘,রাকিব নিজের বুকে হাত দিয়ে বলে।

‘আপা ঐদিকে নারিকেল বেচতেছে চলেন দেখি।’,মনি রাইদার বাহু ধরে বলে।

‘চল কিছু নারিকেল কিনে নেই। নানুকে বলবো পিঠা বানাতে।’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘আপা আমি রাকিবের লগে মোরগ কিনবার যাই? ও একা দাম করলে ঠইগ্গা যাইবো।’,মারিয়া হাসিমুখে বলে।

‘বাজারের মধ্যে তামাশা করলে চটকানা লাগাবো তোকে।’, রাইদা মারিয়ার দিকে ইশারা করে বলে।

‘না আপা আমি ভদ্র মাইয়ার মতন থাকুম সত্যি। ‘, মারিয়া নিজের ডান গালে হাত দিয়ে বলে।

রাইদা মারিয়ার মাথায় ঘোমটা দিয়ে তারপর যেতে অনুমতি দেয়। মারিয়া খুশি হয়ে রাকিবের সাথে মুরগী কিনতে যায়।

‘হাঁটতে হাঁটতে আমি শেষ।’, ক্লান্ত ভঙ্গিতে কথাটা বলে মাঝ রাস্তায় বসে পরে শ্রেয়া।

‘আরে চলে আসছি ঐ যে বাজার।’, জাহিদ উত্তর দেয়।

‘আমিও আর পারতেছি না হাঁটতে। পা ব্যথা করতেছে।’,যামিনী বলে।

‘খুরুম পড়লে হাঁটবি কেমনে? এইটা কি শহর নাকি যে দশ ইঞ্চি খুরুম পড়ে আরামসে হাঁটতে পারবি।”, রুবেল বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়।

‘অশিক্ষিত আমার হিলকে খুরুম বললে তোরে এই হিল দিয়ে পিটাবো।’,রেগে জবাব দেয় শ্রেয়া।

‘তোরা আয় আস্তে ধীরে আমরা এগুতে থাকি।’,সায়ন বলে।

‘সায়ন আমাকে রেখে চলে যাবি?’, কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে শ্রেয়া।

‘তুই আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি তোর জন্য অপেক্ষা করবো? রুবেল তুই ওদের নিয়ে আয় আমরা গেলাম।’,কথাটা বলে সায়ন হাঁটা শুরু করে।

‘আরে আমাকে ফাঁসাস কেন ভাই? একটু মায়া দয়া নাই তোর?’, রুবেল সায়নকে বলে।

‘ভাই আপনে যান আমি ওনাদের নিয়ে আসতেছি।’,জাহিদ এসে রুবেলকে বলে।

‘থ্যাংকু ভাই তুমি আমার আসল ভাই থুক্কু বন্ধু। ‘, কথাটা বলে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে সায়নদের পিছন পিছন দৌড় দেয় রুবেল।

‘কিরে জাহিদকে ফাঁসাইয়া আসলি।’, রুবেলকে বলে আরাফ।

‘হ রে ভাই শ্রেয়ার পাল্লায় পরলে আর আসা লাগতো না আমার।’,রুবেল হাসি দেয় কথাটা বলে।

বাজারে ঢুকে সকলের চোখ বড় হয়ে যায়।
‘এতকাল নানী-দাদীর কাছে গল্প শুনতাম আজকে গ্রামের হাঁট দেখেও নিতাছি। এত মানুষ!’,রুবেল অবাক হয়ে বলে।

‘আসে পাশের গ্রামের থেইকা ক্রেতা বিক্রেতা আইছে তাই এত মানুষ। ‘, সানজিদা জবাব দেয়।

সায়ন,আরাফ,রুবেল,সানজিদা,শিমু ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখছিলো। এর মধ্যেই সায়ন অনেক কিছু কিনে ফেলেছে জাহিদ এখনো শ্রেয়া, যামিনীকে নিয়ে আসেনি তাই রুবেল সেগুলে বহন করছে। সায়নের ফোনে কল আসলে সায়ন রিসিভ করে কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে কথা স্পষ্ট শুনতে না পেরে সেখান থেকে সরে একটু সাইডে গিয়ে কথা বলতে থাকে। তখন মানুষের ধাক্কা থেকে বাঁচতে পিছনে ঘুরতে নিলে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।

‘এই আপনে চোক্ষে দেখেন না? খাম্বার মতো লম্বু হইছেন চোক্ষু দুইডা কি বাসায় থুইয়া আইছেন?’

‘এই মেয়ে কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় বাবা – মা শেখায়নি? অভদ্র পোলাপান।’,কানে ফোন রেখে জবাব দেয় সায়ন।

মেয়েটা কথাগুলো জামায় পরা আইসক্রিম ঝারতে ঝারতে বলছিলো কিন্তু যখন সায়ন কথা গুলো বলে তখন সে অবাক চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতো সুন্দর পুরুষ সে কখনোই দেখেনি। সামনে থাকা পুরুষটাকে তার রাজপুত্র মনে হচ্ছে। মেয়েটার ধ্যান ভাঙে সায়নের তুরিতে।

‘এই মেয়ে কানে শুনতে পাও না তুমি? যতোসব। ‘,কথাটা বলে সায়নে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে যায়।

ভ্যাংচি মেরে স্থান ত্যাগ করে মেয়েটা।

রাকিব কিছুদূর গিয়ে মারিয়াকে পাশে না পেয়ে পিছনে তাকায় তখন দেখে মারিয়া একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে মারিয়াকে টেনে রাইদার কাছে নিয়ে যায়।

আরাফ অনেকক্ষণ সায়নকে না দেখতে পেয়ে বাকিদের সেখানেই রেখে সামনে এগুতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা চুড়ির দোকান চোখে পরে। মধ্য বয়স্ক এক মহিলা হরেক রকম চুড়ি সাজিয়ে বসে আছে। আরাফের চোখ আঁটকায় চুড়ির দোকানের সামনে বসা সেই তরুনীর দিকে যার মাথায় আধ ঘোমটা দেওয়া। কালো রঙের রেশমি চুড়ি গুলো দোকানি মহিলা একে একে মেয়েটার হাতে পরাচ্ছে আর মেয়েটা মহিলাকে কিছু বলছে আর হাসছে।

‘ইশ! চুড়িগুলোর কি ভাগ্য তোমায় ছুঁয়েছে মায়াবিনী।’,কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে ফেলে আরাফ।

‘তোমার জামাই তোমারে পাইলে খুশিতে পাগল হইয়া যাইবো।’,দোকানি মহিলা বলে।

‘কেমনে বুঝলেন খালা?’,মেয়েটা হাসি দিয়ে বলে।

‘চান্দের লাহান বউ পাইলে যেই কোনো ব্যাডার মাথা খারাপ হইয়া যায়।’

দোকানি মহিলার কথায় সকলে উচ্চ স্বরে হেঁসে দেয়।

‘আপনে তো আমার থেইকাও এখনো সুন্দ্রী। দেইখেন আবার অন্য কাউরে পাগল কইরেন না।’, দোকানিকে চোখ মেরে বলে মেয়েটা।

দোকানি মহিলা লজ্জা পেয়ে নিজের ঘোমটা ঠিক করে।

মেয়েটা হাসতে হাসতে দা*ম পরিশোধ করে স্হান ত্যাগ করে।

ধাক্কা খেয়ে আরাফ চোখ খুলে।

‘মাঝ রাস্তায় ঘুমাস কেন?’,রুবেল এসে আরাফকে ধাক্কা মেরে বলে।

‘আরে ঘুমাই না।’,কথাটা বলে চুড়ির দোকানের দিকে তাকালে দেখে মেয়েটি নেই।আরাফ সাথে সাথে মানুষের ভীড় ঠেলে গিয়ে আশেপাশে খুঁজে মেয়েটাকে পায় না। মন খারাপ করে চুড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘কি মামা কিছু লাগবো? মামির জন্য চুড়ি কিনে নেন খুবি হইবো অনেক।’

চুড়ির দোকানের মহিলার কথা শুনে আরাফ হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,’একটু আগে যে মেয়েটা চুড়ি নিলো ওকে চিনেন?’

মহিলা মাথা চুলকে জবাব দেয়,’কার কথা কইতাছেন মামা? অনেকেই চুড়ি নিলো।’

‘কালো জামা পড়া। কালো রঙের চুড়ি কিনেছে। আপনি পরিয়ে দিলেন।’

‘ওহ্ ঐ মাইয়াডা! ওনারে প্রেথমবার দেখলাম। চিনি না নামও জানি না।তয় মাইয়াডা অনেক ভালা যা মনে হইলো।’

‘মেয়েটার হাতের মাপে এই রঙের চুড়িগুলো দেন।সাথে এই চুড়িগুলোও দিয়েন।’,কতগুলো চুড়ি দেখিয়ে বলে আরাফ।

দোকানী কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে লেগে পরে। মন খারাপ করে আরাফ অনেকগুলো চুড়ি কিনে পিছনের দিকে হাঁটা দেয়।

(চলবে..)

(কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো।)

(চলবে..)

(কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগলো পর্বটা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here