সে দিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -০১

‘ধরছি ধরছি এবার পালাবি কেমনে?’, কথাটা বলে মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে থাকে।

মেয়েটা বাম হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে একটা হাতকে আর ডান হাত দিয়ে নিজের চোখের বাঁধন খুলছে উদ্দেশ্য কাকে ধরেছে সেটা দেখার।

‘তোরা সবগুলো মিলে মোরে কানা বানিয়ে নিজেরা মাছির মতো ঘুরঘুর করছিলি তাও ধরে ফেলছি, মোর সাথে কানামাছি খেলায় জেতা ইয়ামপসিবল।’, কথাটা শেষ করতে করতে চোখের বাঁধন খুলে ফেলে মেয়েটা।
বাঁধন খুলে ঝাপ্সা চোখে দেখে তাঁর সামনে কালো শার্ট পরিহিত কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ডোলে ঘাড় তুলে দেখতে পায় সামনে এক পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।
‘এই মেয়ে হাতটা ছাড়ো আর কতক্ষণ ধরে রাখবা?’, ছেলেটা বিরক্তিকর মুখে বললো।

মেয়েটা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ছেলেটার হাত ধরে রেখেছে। তাৎক্ষণিক ঝটকা মেরে হাতটা ছেড়ে দিলো ছেলেটার। ছেলেটা তাঁর ডান হাত সামনে নিয়ে দেখলো মেয়েটার নখের আঁচড় সেখানে বসে গেছে আর ছোপ ছোপ রক্ত বের হচ্ছে আঁচড়ের স্হান থেকে। হাত থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে থাকা রমণীর দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পরখ করছে। ঘটি হাতার ব্লাউজের সাথে ফুলের ছাপার সুতি শাড়ি পড়েছে পা থেকে খানিকটা উঁচু করে। বাড়ির মুরব্বিদের মতো কুঁচি ছাড়া পেঁচিয়ে শাড়িটা পড়েছে। আঁচলটা কোমরে গুঁজে রাখা। চুল গুলো খোঁপা করা সেখানে পুঁতি লাগানো কাঠি গুঁজে রাখা আর পায়ে এক জোড়া নুপুর। ফর্সা খালি পায়ে নুপুর গুলো বেশ লাগছে। পা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো কপালে ছোট একটা কালো টিপ দেওয়া ব্যস এতেই মেয়েটাকে পাক্কা উঠতি কিশোরী লাগছে। ছেলেটার ধ্যান ভাঙে একটা মেয়ের চিল্লানীর শব্দে।
‘এই মেয়ে চোখে দেখো না? মাঝ রাস্তায় কানামাছি খেলে কেউ? ডিজগাস্টিং গেঁয়ো ভূত।’,ছেলেটার পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো।

‘আহা শ্রেয়া কানামাছি খেললে কেউ চোখে কীভাবে দেখবে?চোখ তো বাঁধা থাকে।’, শ্রেয়ার পাশ থেকে বলে আরেকটা ছেলে।

‘এই রুবেল চুপ একদম কথায় বাম হাত দিবি না। আমি আগেই বলেছিলাম এই অজপাড়াগাঁ গ্রামটিতে আসার দরকার নেই। সায়ন চল আমরা ঢাকা ব্যাক করি।’, শ্রেয়া এসে সায়নের ডান বাহু ধরে বললো।

‘শ্রেয়া বাচ্চা একটা মেয়েকে এইসব বলছিস কেনো?মেয়েটা ইচ্ছে করে তো কিছু করেনি।’,রুবেল বলে।

‘শুনেন আপা কানা আমি না আপনে। আমি কানা হইলে আমনের মতে চোক্ষে খা*লে*দা জি*য়া*র কালা চশমা লাগাইতাম। পাক্কা খা*লে*দা জি*য়া*র ছুডু বইন লাগতাছে আমনেরে।’

মেয়েটার কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকে। সায়ন মাথা তুলে আরেকবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে।

‘বলেছিলাম চুপ করতে শুনলিনা এখন বুঝ ঠ্যালা।’, হাসতে হাসতে বলে রুবেল।

শ্রেয়া মেয়েটার কথায় রেগে সায়নের বাহু ছেড়ে মেয়েটার সামনে এসে বলে,’এই মেয়ে কি বললা তুমি? হাও ডেয়ার ইউ? এতো সাহস আসে কো থেকে? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরাই গেঁয়ো ভূত একটা।’

‘শাড়ি পড়লে যদি মাইনষে মোরে গেঁয়ো কয় তাতে মোর কিচ্ছু যায় আহে না বুঝচ্ছেন খালাম্মা?’

‘খালাম্মা? হোয়াট ইউ মিন বায় খালাম্মা? চিনো আমায় কে আমি?’

‘এই মনি দেখ খালাম্মা নিজের নাম ভুইল্লা গেছে আহারে। যা বাদাম লইয়া আয় বাদাম খাওয়াই তেইলে ব্রেন কাজ করবে খালাম্মার।’

‘শ্রেয়া থাম এবার।এই যামিনী শ্রেয়াকে গাড়ির কাছে নিয়ে যা।’, শ্রেয়া কিছু বলতে নিতে আরেকটা ছেলে এসে ওকে থামিয়ে গাড়ির কাছে যেয়ে শান্ত হতে বলে।
সায়ন একটু দূরে গিয়ে কাউকে কল দিয়ে কথা বলতে থাকে।

‘এই মিষ্টি আপা চলো মোরা এখন আস্তে কইরা কাইটা পড়ি এহেনতে।’ মেয়েটার কানে কানে ফিসফিস করে মনি কথাটা বলে।

‘চুপ কর মনি আগে তামশা দেইখা লই। শোন আমি এদের সাথে কথা বলুম বাকি সবগুলা চুপ মাইরা থাকবি কোনো কথা বলবি না।’

মনি মেয়েটার কথায় বিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ায়। মেয়েটা দেখলো সায়ন নামক ছেলেটার সাথে আরো দুটি ছেলে রয়েছে তার মধ্যে রুবেল নামক ছেলেটাও আছে আর অপর ছেলেটির নাম অজানা। শ্রেয়ার সাথে একটা মেয়েও রয়েছে, মেয়েটা শ্রেয়াকে কি জানি বলছে আর শ্রেয়া আয়না বের করে নিজের মেক-আপ ঠিক করায় ব্যস্ত হয়ে যায়।
মেয়েটা সব পর্যবেক্ষণ করে যা বুঝলো,এই বাঁদরের দল শহর থেকে এখানে ঘুরতে এসেছে। কোনো কারণে গাড়ি থেকে নেমে ওঁদের কানামাছি খেলার মধ্যে ঢুকে সায়ন নামক ছেলেটা তখনই সে ভুল করে সায়নের হাত ধরে ফেলেছিলো বোধহয়।

নাম না জানা ছেলেটা এগিয়ে এসে মুখে ছোট একটা হাসি রেখে বললো,’মিস আপনি কি আমাদের চেয়ারম্যান বাড়িটা কোন দিকে বলতে পারবেন? আসলে আমরা প্রথম বার এখানে এসেছি তাই কিছু চিনি না।’

মেয়েটা কিছু একটা ভেবে বললে,’ আইচ্ছা।’
পিছনে ঘুরে নিজের সাঙ্গ পাঙ্গদের মধ্যে একটা ছেলেকে ডেকে কানে ফিসফিস করে কিছু বললো মেয়েটা তারপর ঘুরে বলে,’ ও হইলো রাকিব। আপনাগো চেয়ারম্যান বাড়িতে পৌঁছায় দিবে। ‘

‘আসলে আমাদের গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে সেইজন্য গাড়িটা মেইন রোডে রেখেছি। এখানে কি কোনো মেকানিক পাওয়া যাবে?’,ডান হাত দিয়ে মেইন রোডে থাকা মাইক্রো কে ইশারায় দেখায় ছেলেটা।
মেয়েটি দূর থেকে একটা সাদা মাইক্রো এর অবয়ব দেখে।

‘হাটখোলায় গেলে পাইবেন তয় সেইটা দূর এইখান থাইকা।’

‘হাটখোলা কি?’

‘বাজার।’, কথাটা বলে মেয়েটা পিছনে ঘুরে হাঁটা দেয়।

‘আমি আরাফ ইসলাম। আপনার নামটা?’

‘নাম দিয়া কাম কি? নাম লাগে না। ‘
মেয়েটা হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দেয় আর তাঁর পিছন পিছন চারটা মেয়ে আর দু’টো ছেলে ও যেতে থাকে।

আরাফ মাথা চুলকে বিরবির করে বলে,’ নামটাই তো দরকার মিস মায়াবী। ‘

‘মামা বললো যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বাড়ি চিনিয়ে দিবে।’,সায়ন আরাফের পাশে এসে বলে।

‘কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না এই পিচ্চি ছেলেটা নাম রাকিব ও আমাদের নিয়ে যাবে।’, আরাফ রাকিবের হাত ধরে বলে।

শাড়ি পরিহিত মেয়েটার যাওয়ার পানে সায়ন একবার তাকিয়ে রাকিবের দিকে তাকায়।

‘গাড়ির টায়ার মনে হয় আমাদেরই পাল্টাতে হবে মেকানিক পাবো বলে মনে হয় না।গাড়িটা থাক পরে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।বাকিদের ডাক দে হেঁটেই যেতে হবে বাকি পথ ।’,সায়ন বলে।

‘ওকে চল, তাহলে যাওয়া যাক। বাকিদের ডেকে আনছি আমি।’,কথাটা বললে আরাফ রাকিবের হাত ধরে গাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।

চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে সবার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। অর্ধেক রাস্তা হেঁটে আসার পর রাকিব জানায় বাকি রাস্তাটা কাঁচা তাই তাদের খুব সাবধানে যেতে হবে। ১০মিনিট হাঁটার পর ওরা দেখতে পায় বিশাল এক সাঁকো যেটা পার হতে গিয়ে শ্রেয়া এবং জামিনীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। হাই হিল পড়ে শ্রেয়া সাঁকো পার হতে গিয়ে নর্দমায় পড়ে যায় ফলাফল পঁচা পানি দিয়ে আধা গোসল হয়ে যায়। রুবেল হাসতে হাসতে শ্রেয়াকে নর্দমা থেকে উঠায়। সায়ন গম্ভীরমুখে শ্রেয়াকে দু’চারটা ঝাড়ি মারে।
চেয়ারম্যান বাড়িতে যখন সকলে প্রবেশ করে বাড়ির সকল মুরব্বিদের দৃষ্টি শ্রেয়ার দিকে যায়। শ্রেয়াকে দেখে সবাই নাকে হাত দেয়।
মহিউদ্দিন একটা মেয়েকে ডাক দিয়ে বলে শ্রেয়াকে গোসল খানায় নিয়ে যেতে। মেয়েটা নাকে ওড়না চেপে শ্রেয়াকে গোসল খানার দিকে নিয়ে যায়। শ্রেয়া যামিনীকেও ডেকে নিয়ে যায় সাথে।

সায়ন মহিউদ্দিনকে দেখে জড়িয়ে ধরে।।
‘ কত বছর পর দেখতেছি ভাইগ্নাকে। মামা বাড়িকে তো ভুলেই গেছো। মামাদের থেকে কি চাচারা বেশি আদর করে নাকি যে মামাদের খোঁজ খবরই নাও না?’

সায়ন হেঁসে বলে,’ কই না তো ভুলিনি। এই যে আসলাম তোমাদের দেখতে।’

‘আসসালামু আলাইকুম মামা। আমি সায়নের বন্ধু আরাফ।’

‘আর আমি রুবেল।’

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। সায়নের বন্ধু মানে তোমরা আমারও ভাইগ্না। চলো ভিতরে বাকি কথা সেখানেই হবে। এই পিচ্চি ছেলেটা কে?’

‘ ওর নাম রাকিব ও আমাদের নিয়ে এসেছে রাস্তা চিনিয়ে।’, আরাফ জবাব দেয়।

‘ও আচ্ছা ওকে ও নিয়ে আসো ভিতরে।’, কথাটা বলে মহিউদ্দিন সায়নকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। পিছন পিছন রুবেলও যায়।

রাকিব যেতে নিলে আরাফ ওকে টেনে ধরে।
‘তোমার ঐ আপু টার নাম কি?’,আরাফের প্রশ্ন।

‘কওন যাইবো না নিষেধ আছে।’,মাথা চুলকে জবাব দেয় রাকিব।

‘বললে তুমি যা চাও তাই দিবো।’

‘লাগতো না আমার কিচ্ছু।’

‘আচ্ছা ৫০০টাকা দিবো এবার বলো।’

‘ছি ছি আপনে আমাকে লোভ দেখান? লোভ করা মহাপাপ আপা বলছে।’, কথাটা বলে রাকিব আরাফের হাত ছেড়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

আরাফ হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। এর মধ্যে শ্রেয়ার চিৎকার কানে আসলে দৌড়ে সেদিকে গিয়ে দেখে শ্রেয়া কাঁদায় বসে কাঁদছে।

‘কিরে কি হলো?’,আরাফ যামিনীকে জিজ্ঞেস করে।

‘চাপ কল আর টিনের বেড়া দেওয়া গোসলঘরে শ্রেয়া গোসল করতে চাইছিলো না ও চাচ্ছিলো ভালো বাথরুম সেইজন্য রেগে সেখান থেকে বের হতে নিলে পা পিছলে কাঁদায় পড়ে যায়। ‘

‘শোন শ্রেয়া এটা গ্রাম আর এখানে শহরের মতো সব পাবি না তাই সিন ক্রিয়েট করিস না। বেড়াতে আসছি আমরা একটু ভদ্র ভাবে ক’দিন থাক।”
শ্রেয়া কিছু বলতে নিলেই আরাফ স্হান ত্যাগ করে।

আরাফ বাড়ির ভিতরে এসে দেখলো লোকে গিজগিজ করছে। চেয়ারম্যানের ভাইগ্না আসছে সেটা দেখতে এখনই আসে পাশের মহিলারা ভিড় করেছে। সায়নের নানা সামনের রুমে একটা চৌকিতে আধশোয়া অবস্থায় খোস গল্পে মেতে উঠেছেন তাঁর সামনে থাকা চেয়ারে বসা দু’টো লোকের সাথে। সায়নের থেকে যতটুকু শুনেছে সায়নের মামারা দুই ভাই আর সায়নের মা তাঁদের একমাত্র বোন। দুই ভাইয়ের মধ্যে যত ঝামেলাই থাকুক সায়নের মা কে তাঁরা খুব ভালোবাসে। সায়নের নানা অসুস্থ হওয়ার পর বড় মামা নির্বাচন ছাড়াই চেয়ারম্যানের আসনে বসেন। এই টুকুই সায়নের কাছ থেকে শুনেছে আরাফ। সায়নের নানার বাড়িটা আগের দিনের জমিদারদের মতো বিশাল। প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে বসার রুম রয়েছে। বসার রুম পেরিয়ে গেলে উঠানের মতো ছোট জায়গা রয়েছে সেখানেই দুই তলায় উঠার সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির ডান পাশে দু’টো ঘর রয়েছে আর বাম পাশ থেকে মহিলাদের কথার শব্দ আসতে থাকে। আরাফ বুঝে সেখানে বোধ-হয় রান্না ঘর।সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আরাফ বুঝতে পারছে না সায়নেরা কোথায় আছে। যেই মেয়েটি শ্রেয়াকে কল পাড়ে নিয়ে গেয়েছিলো সেই মেয়েটাকে দেখে আরাফ ডাক দেয়। মেয়েটা আরাফকে দেখে তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় দেয়।

‘সায়নরা কোথায় বলতে পারবেন?’

মেয়েটা হাত দিয়ে ডান পাশের একটা রুম দেখিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আরাফ প্রথমে একটু অবাক হলেও বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয়। তারপর মেয়েটার বলা রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুমে গিয়ে দেখে সায়ান ফোন নিয়ে ব্যস্ত আর রুবেল ছেলেটার সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে।

‘কিরে ফ্রেশ না হয়েই রুমে এসে শুয়ে পড়লি?’

‘মামি বললো এখানে কল পাড় একটা তাই শ্রেয়ার গোসল শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’, আরাফের প্রশ্নের উত্তর দেয় রুবেল।

‘ভাইজান আমি চইল্লা যাই এখন?’, কথার মধ্যেই রাকিব বলে।

‘এই না খেয়ে দেয়ে যাবি। কত রান্না করছি মেহমানের জন্য তুই ও তো মেহমানই।’, সায়নের মামি কক্ষে ঢুকে জবাব দেয়।

‘আসসালামু আলাইকুম মামি আমি আরাফ।’

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। তোমায় দেখেছি কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় আলাপ করে হয়ে উঠেনি। শুনো তোমরা গিয়ে কল পাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি। এই রাকিব তুইও যা।’, কথাটা বলে মামি কক্ষ ত্যাগ করে।

সায়ন ফোন রেখে জানায় সে ঘুমাবে তাঁকে যেনো কেউ বিরক্ত না করে। আরাফ আর রুবেল হতাশ হয়ে রাকিবকে নিয়ে চলে যায়। সায়নকে এখন কিছু বলে লাভ নেই ও যেটা বলে সেটাই করে।

‘আপা আপনের মতো হতে চাই বড় হয়ে।আপনাকে আমার কি যে ভালো লাগে।’

মেয়েটা হেসে বলে,’ আমার মতো হতে হবে না তুই আমার থেকেও অনেক মেধাবী। বড় হয়ে অনেক বড় কিছু হবি।’

কারেন্ট নেই তাই কুপি জ্বালিয়েছে মনি।কুর্তিটা ঠিক করে চুলগুলো বিনুনি করে বিছানায় বসে মেয়েটা। টেবিল থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়ে মনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। এর মধ্যে একদল পিচ্চি প্রবেশ করে ঘরে।
‘ রাইদা আপা আইসা পড়ছি আমরা।’

‘বস সবগুলা কোন চ্যাপ্টার বুঝতে চাচ্ছিস জলদি বের কর। এই মনি রাকিব কোথায়? চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে আসেনি এখনো?’

‘না তো সেই যে গেলো খবরই নাই কোনো।’

রাইদা ভাবনায় পড়ে যায় এর মধ্যে রাইদার নানী আসে গরম চা নিয়ে।
‘রাইদা নে চা টা খা আমি পাশের বাড়ি গেলাম গল্প করতে। মনিদের পড়া হলে আমাকে ডাক দিস।’

‘এই ভরা সন্ধ্যায় তোমার যেতেই হবে? ‘

‘আরে মালেকার মাইয়ার বিয়া ঠিক হইছে একটু পাত্রের খবরটা শুইনা আসি। ‘

‘মারিয়া কোথায়? সেই যে বিকালে গেলো এরপর কোনো খবরই পেলাম না ওর।’

‘পাশের বাড়িতেই আছে।ওরে নিয়াই আসুম চিন্তা কইরো না।’

কথাটা বলে রাইদার নানু মাথায় কাপড় দিয়ে বের হয়ে যায়।

রাইদা পোলাপান গুলোকে পড়াতে থাকে। ঘন্টা খানেক পর রাকিব দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে আর হাঁপাতে থাকে। রাকিবকে এভাবে দেখে রাইদা জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে কি হয়েছে? হাঁপাচ্ছিস কেনো?’

‘ওরা আইতেছে আপা।’

‘কারা?’

রাকিবের জবাবের পূর্বেই এক পুরুষ ঘরে প্রবেশ করে। রাইদা অপ্রস্তুত হয়ে পুরুষটার দিকে তাকায়। কুপির আবছা আলোতে দেখে ঘোলা চোখের এক ফর্সা পুরুষ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে তার কালো রঙের টিশার্ট পরনে কালো জিন্স। রাইদার মনে হলো ছেলেটা তার থেকেও ফর্সা। কালো রঙে পুরুষটাকে আরো বেশি সুদর্শন লাগছে।
রাইদা বিরবির করে বললো,’ছেলে মানুষ এতো সুদর্শন হওয়া বড় অন্যায়।’

‘তুমি এখানে? কে তুমি? আর এই বাড়িতে কি করছো? ‘
রাইদার ধ্যান ভাঙে ঘোলা চোখের পুরুষের কথায়।

মনি রাইদার কানে ফিসফিস করে কিছু বলে এতে রাইদার গলা শুঁকিয়ে আসে।

‘এবার ফেঁসে না গেলেই হয়।’,বিরবির করে বলে রাইদা।

‘এই মেয়ে জবাব দিচ্ছো না কেনো?বিরবির করে কি বলছো?’,বিরক্ত হয়ে সায়ন প্রশ্ন করে।

‘আমাকে কিছু বলেছেন?’,রাইদা নিজের দিকে ইশারা করে বলে।

‘স্টুপিড মেয়ে এখানে তুমি ছাড়া আর কে আছে? ‘

‘কেনো মনি আছে,রাকিব আছে আরো বাচ্চারা আছে ওদের তো বলতেই পারেন।’

‘তোমার কি মাথায় সমস্যা নাকি?’

‘আমার কেনো মাথায় সমস্যা হবে? সমস্যা আপনার। যাকে চেনেন না জানেন না তুমি তুমি বলছেন আবার তাঁরই বাসায় এসে তাঁকে অপমান করছেন।’

‘ওয়েট এটা মাস্টার বাড়ি না?’

‘হ্যা তো?’

‘মাস্টার নানা তোমার কি হয়?’

‘সেটা আপনাকে বলবো কেনো? আপনি এক্ষুনি বের হন এখান থেকে।’, কথাটা বলে বিছানা থেকে উঠে সায়নের সামনে দাঁড়ায় রাইদা।
সায়ন ভালো করে খেয়াল করে দেখে বিকালে যেই মেয়েটাকে দেখেছিলো সেই মেয়ে আর এই মেয়েটার চেহারায় মিল আছে কিন্তু সাজসজ্জা আর কথা বলার ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা একটা আকাশি রঙের কুর্তি পড়ে আছে সাথে ধুতি স্যালোয়ার। চুল গুলো বেনি করা। বেনিটা বেশি বড় না সায়ন আন্দাজ করলো মেয়েটার চুল পিঠ পর্যন্ত কিন্তু বিকালে খোঁপা দেখে মনে হয়েছিলো চুল আরো বড় হবে। কপালে কিছু কাটা চুল ঘামে লেপ্টে আছে। চোখে কালো রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা। আরেকটা আশ্চর্যের বিষয় খেলা করলো সায়ন, মেয়েটা এখন একদম শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে।

‘এই যে মিস্টার কানে শুনেন না? বের হন এখান থেকে।’

‘তুমি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছো কি করে? আর তোমার সাজ এখন এতো ভিন্ন কেনো?’

রাইদা ভ্রু কুঁচকে জবাব দেয়,’ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এভাবেই কথা বলি জন্ম থেকে আর এভাবেই সাজগোছ করি। আপনার কোনো সমস্যা?’

‘তাহলে বিকালে যে গ্রামের মেয়েদের মতো শাড়ি পড়ে ছিলো?’

‘কই না তো! আমি শাড়ি পড়িনা।’

‘তাহলে বিকালে রাস্তায় এই মেয়েটার সাথে যাকে দেখলাম সে কে?’

‘আমি কীভাবে বলবো কাকে দেখেছেন?আপনার বোধহয় সত্যিই মাথায় সমস্যা আছে।’

‘তোমার কি কোনো বোন আছে?’

‘হ্যা আছে। কেনো?’

‘তোমরা কি টুইন? চেহারায় অনেকটা মিল আছে। কাছ থেকে না দেখলে কেউ বুঝবে না।’

‘আপনি কে বলুন তো।একটার পর একটা প্রশ্ন করে আমার মাথা খেয়ে যাচ্ছেন।বিরক্তিকর। ‘,শেষের কথাটা বলে সায়নের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কুপির দিকে তাকায় রাইদা।

‘তোমার বোন কোথায়? ওরে তো দেখছি না এখানে।ওকে ডাকো কথা আছে।’

‘কি কথা আমায় বলেন আমি বলে দিবো।’

‘না তোমার বোনকে ডাকো।যা বলার ওরেই বলবো।’,দু হাত ভাজ করে বুকে রেখে বলে সায়ন।

এবার রাইদা বিরক্ত হয়ে ভাবতে থাকে কিছু।

চলবে?

পর্বঃ০১
#সে_দিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ ঈশিতা ইশা

( আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। নতুন গল্প নিয়ে আসলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের। সবার রেসপন্স পেলে পরের পর্ব দিবো। পারমিশন ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here