স্বামীর অত্যাচার পর্ব ৩

#স্বামীর_অত্যাচার !!
#Part_3

__রাগে ইচ্ছে করতেছে কয়েকটা ইদুর নিয়ে এসে ওর মাথায় ঢেলে দিতে…..

কথা দিয়ে কথা না রাখা যেন নিলয় চৌধুরীর স্বভাব….তাহলে এমন মানুষের থেকে যে কিছু আশা করাই ভুল…
নিজের রাগটাকে পুষে বড় সড় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রুমটা পরিষ্কার করতে লাগল…..কাটা হাতে যেন আবার কাঁটা দিয়ে আঘাত করল ছোট্ট ছোট্ট কাচের টুকরো গুলো……..তারপরে ও থেমে নেই….সবকিছু গুছিয়ে সোপায় গাঁ এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাল হাজারো ক্লান্তি নিয়ে……..

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে…….কেউ যেন আস্ত একটা মরিচ খাইয়ে দিয়েছে……আর সেটা ঘুমের ঘোরে চিবিয়ে চিবিয়ে খেল মনে হচ্ছে….জ্বালে সারামুখ যেন জ্বলছে….একটু একটু করে চোখ খোলতে….ভূত দেখার মত চমকে উঠল..সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে….ইদুরের মত সামনের সব দাত বের করে ফ্যাক ফ্যাক করে ওর দিকে চেয়ে আছে…. ক্ষনিকের জন্য নিলয় নামে মানুষটার কথা ভুলেই গেছে…..
জ্বালে মুখ জ্বলছে…আর রাগে মাথা পাটছে…
;;;;আপনার সমস্যাটা কোথায়?কেন এমন করছেন…?এসব করে বা কি সুখ পাচ্ছেন?
;;;;ওপপ সমস্যা তো আমার না তোমার……যেভাবে
হা করে ঘুমাচ্ছিলে দেখে মনে হল আস্ত একটা হাতি খেতে পারবে….তাই ভাবলাম একটু না হয় দয়া দেখায়……..রাতে তো না খেয়েই ঘুমিয়েছ…..
;;;মনুষ্যত্ব বিহীন মানুষেরগুলো এভাবে দয়া করে তাহলে……আজ জানতে পারলাম..শুধু জানতে না,সেই নমুটায় তো চোখের সামনেই দেখতেই পেলাম… মাঝরাতে ভাত খাইয়ে দেবার বদলে মরিচ খাইয়ে দেয়….বাহ….
;;;স্টপ ইট…..
;;আপনার গাঁয়ে লাগছে কেন আমি তো আপনাকে বলি নায়…..আপনার তো দয়া মায়া বিবেক সব আছে…তাহলে তো আপনার গাঁয়ে লাগার কথা না…
;;;চুপ একদম চুপ….
এক্ষুণি এক কাপ কপি করে নিয়ে আসো………
;;;এবার বুঝতে পারলাম দয়াটা কেন হল…….
;;;বুঝতে যখন পেরেছ তাহলে দাঁড়িয়ে আছ কেন?যাও….

নিলয়ের গর্জন শুনে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল…..তা না হলে আবার আস্তে গিলে ফেলবে……সব জ্বাল যেন উধাও হয়ে গেল….তারপরে ও রান্নাঘর ঢুকে ঢকঢক করে কয়েকগ্লাস পানি খেয়ে নিল…তাড়াতাড়ি করে কপি বানিয়ে রুমে প্রবেশ করে মগটা নিলয়ের হাতে দিতেই… ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যায়…….তাহিন একটু ভয় পেয়ে একপা পিছিয়ে গেল…..নিলয় রেগে গিয়ে….
;;;কি করলে এটা……মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে বলে….এমনটা করলে না….?

নিলয়ের কথায় শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে…নিজেই তো কাপটা ধরেনি….আর দোষটা ঠিকিই ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিল……নিলয়ের কথার জবাব না দিয়ে সামনে এগিয়ে এসে চুপচাপ কাচের টুকরো গুলো তুলে..রুম থেকে বের হয়ে গেল…..নিলয় এমন চুপ থাকার কারণটা বুঝতে পারল না…..

কিছুক্ষণ পর তাহিন রুমে আসতে নিলয়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেল ওর হাতে চার পাঁচটা কপির মগ দেখে…….তাহিন নিলয় থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে….
;;;নিন এবার খেয়ে নিন…আর যদি ইচ্ছে না হয় ফেলে দিতে পারেন এতে আমার কেনো সমস্য নেই……..আপনি না খেলে অত্যন্ত ইদুরগুলা তো খেতে পারবে…বলা তো যায় না বাচ্চা ইদুর যেহেতু পাওয়া গেছে সেহেতু বড় ইদুর ও থাকতে পারে… আর ওরা ও আপনার সাথে কপি খেতে আসলে ও আসতে পারে….
কথাটা শুনে নিলয় রাগি চোখে ওর দিকে তাকাতেই তাহিন একটা চোখ টিপ মেরে ট্রেটা বিছানায় রেখে এক দৌড়ে কম্বলটা নিয়ে সোপায় গিয়ে শুয়ে পরল……চুপচাপ থাকা মেয়টা এমন কান্ড করবে নিলয় তো ভাবতেই পারেনি….একটু পর পর চুপিচুপি কম্বলটা সরিয়ে নিলয়ের অবস্থা দেখছে আর হাসছে……নিলয় রাগে সাপের মত ফুসফুস করছে কিন্তু প্রকাশ করার মত ভাষাটায় যেন হারিয়ে ফেলেছে………….
এবার যেন মনের মধ্যে খুশির বন্য বয়ে যাচ্ছে….ইদুরের নাম শুনে নিলয় এখন আর কিছু করার কথা ভাববে না…নিশ্চিত এবার ঘুমিয়ে পরল…..

সকাল হতেই নিলয় রেড়ি হয়ে কোথায় যেন বের হয়ে গেল…..আর তাহিন সেই সুযোগে নিলয়ের ঘরে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে……কিন্তু সব জায়গায় তালা দেওয়া…..
হঠাৎ করে গাড়ির হর্ণ শুনে তড়িগড়ি করে নিচে আসতে দেখে নিলয় দুহাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢুকে…এত গুলা বাজারের ব্যাগ দেখে তাহিনের মাথা যেন ঘুরে গেল…নিলয় কি এখন এসব রান্না করতে বলবে……বললে কি করে এতগুলা রান্না করবে ভাবতেই পারছেনা…..
ভাবনা না শেষ হতে না হতে নিলয় বলে উঠল….
;;;;দুপুরের আগে যেন সব রান্না হয়ে যায়…..
;;;এ্যা….
;;;;;এ্যা না হুম….তাড়াতাড়ি কাজে লেগে পর…..
;;;এতগুলা মাছ, মাংস, সবজি কে খাবে…?
;;;;আশেপাশে ফ্লাটের কয়েকজন মহিলা আসবে বলেছিল……তাই ওদের বললাম যেন লান্সে টাইমে আসে..তাছাড়া তুমি তো ভালই রান্না কর সেটা ওদের দেখাতে হবে না……
;;;একবার ও আমার কথা ভেবে দেখেছেন কি করে কাটা হাত নিয়ে এতগুলা রান্না করব….
;;;আমি তো তোমার কথা ভেবেই বলেছি….
;;;ওহহহ আপনি তো সারাদিনে সবথেকে বেশি আমাকে নিয়েই ভাবেন…কিভাবে অত্যাচার করার যাবে…..আমাকে নিয়ে না ভাবলে তো আপনার দিনিই বৃথা….

নিলয় একটা শয়তানি হাসি দিয়ে…..
বেশি কথা না বলে যেটা করতে বলেছি সেটা কর……

তাহিন ও হারার পাত্রী নয় নিলয়কে এর মূর্খম জবাব দিবে…..তাহিন জানে নিলয় এটা ইচ্ছে করে করেছে….ওদের সামনে ওকে ছোট করার জন্য…..

দুপুর ২.৩৫ মিনিট হাতের অসহ্য ব্যাথা নিয়ে রান্নাটা শেষ করল…….কিন্তু এখন ও ওদের আসার নাম গন্ধ নেই…..এতক্ষণে তো চলে আসার কথা…..তাহলে কি এসব নিলয়ের কারসাজি ছিল………
বলতে না বলতেই নিলয় এসে……
;;;ওনার নাকি আসতে পারবে না…

কথাটা শুনে তাহিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ পরল…..যা ভেবেছে ঠিক তাই……
;;;আসতে পারবে না মানে…..
;;;;কেন সেটা জানিনা তবে একজন ফোন করে বলল….
;;;এটা বলছেন না কেন আপনি আসলে কাউকে দাওয়াত করেননি……শুধু মাত্র আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এসব করেছেন….সোজা বলে দিলেই আপনি আমার হাতের রান্না খেতে চান…. আপনাকে এর থেকে বেশি রান্না করে খাওয়াতাম……তারপরে মিথ্যা বলার কি দরকার ছিল….
;;;আমি খাব এই খাবার গুলা ……অসম্ভব…. তোমার রান্না সম্পর্কে আমার ভালই ধারনা আছে…..

;;;আপনার মত নিচ মনের মানুষ আমার হাতের রান্না খেলে ও পাপ হবে…………

;;;কি বললে…..

;;;কিছু না…….
বলেই রুমে চলে গেল চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পরছে……আরো কিছু বলতে চেয়ে ও বলতে পারল না…প্রচুর ক্ষিদে ও পেয়েছিল…কিন্তু এখন সেই ক্ষিদাটা ও মরে গেল….. কান্না কান্না করতে শুয়ে পরল…..

সন্ধ্যার সময় নিলয় বাসায় ফিরে তাহিনকে চারিদিকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু তাহিনের দেখা কোথাও মিলছে না…..রাগে নিলয়ের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল ওকে খু্ঁজে না পেয়ে…..

রাগে নিলয়ের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল…তাহিনকে খুঁজে না পেয়ে ….

বাইরে বের হওয়ার মতো কোনো স্কোপ নেই। তাহলে?….তাছাড়া তনিমার সাথে একটু আগেই কথা হল….ওর ফোন পেয়েই তো বাসায় ফিরে….আর এসে দেখে তাহিন কোথাও নেই…..ছাদ থেকে শুরু করে প্রতেেকটা রুম খুঁজে দেখল কিন্তু তাহিনের দেখা কোথা ও মিলল না…….রাগে মাথাটা যেন পেটে যাচ্ছে…..এই মহূর্তে যদি ওকে সামনে পায় কি অবস্থা করবে সেই সম্পর্ক যেন নিজের ও ধারণা নেই……
রুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ করে বারান্দা থেকে ঘুঙানোর শব্দ পেল… গদগদ পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে তাহিন বারান্দার এক কোণে গুটিসুটি মেরে হাটুর উপর মাথা ভাজ করে বসে আছে…….তাহিন যেন নিজের মাঝে নেই….থাকলে তো এতক্ষণে নিলয়ের গর্জনে ওর কান অবব্দি পৌঁছে যাওয়ার কথা এই স্বল্প দূরত্বে….
তাহিনকে দেখে নিলয়ের রাগটা আরো বেড়ে গেল…….
হেচকা টান দিয়ে উঠাতে তাহিনের ধ্যান ভাঙে……তাড়াডাড়ি করে চোখ মুছে নিলয়ের দিকে তাকাতে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল ঝাপসা আলোয় ওর ভয়ঙ্কর রুপ দেখে..চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে…চোখের লাল অাভায় এখন যেন সব জ্বালিয়ে দেবে….এত রাগের কারণ বুঝতেই পারছেনা. আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিলয় ওকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে চড় মারার জন্য হাত উপর করতে তাহিন ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে নেই…..কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা…তাহলে কি নিলয় এখন ওকে মেরেই ফেলবে…ভাবতেই ভয়ে হাত ঠান্ডা হয়ে গেল…..আর হঠাৎ করে নিলয় ওর মুখের সামনে থেকে হাতটা সরিয়ে ধুপ করে বিছানার উপর ছুড়ে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেল……
তাহিন একটু অবাক হয়ে আস্তে আস্তে করে চোখ খুলতে দেখে নিলয় নেই… নিলয়ের আচরণটা একটু অদ্ভুত লাগছে…..বুঝতে পাররছেনা কিছুই….আর তখনি
ওয়াশরুমে থেকে ধুপ ধাপ করে কিছু ভাঙার শব্দ আসল…….তাহিন বুঝতে পারছে নিলয় রাগটা ওখানেই গিয়ে কমাচ্ছে……..
প্রায় অাধঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে একটা চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসল তাহিনের কানে……
নিলয় ওয়াশরুম থেকে দাঁতে দাত চেপে কি যেনন বলল…কিন্তু খেয়াল করতে পারিনি…..
দ্বিতীয়বার স্পষ্ট শুনতে পেল…..কারণ
নিলয় এবার খুব জুরে চেচিয়ে বলল,
;;;কি বলছি শুনতে পাচ্ছ না… আমার টাওয়ালটা দিয়ে যাও…
তাহিন ঠিক শুনছে কিনা বুঝতে পারছেনা….নিলয় ওকে টাওয়াল দিতে বলছে…..তারমানে শাওয়ার নিচ্ছে…..তাহিন ঠোঁঠের একটা হাসি দিয়ে শুনে ও না শুনার ভান করে বসে থাকল…..
নিলয় তাহিনের সাড়া শব্দ না পেয়ে রেগে দরজায় প্রচন্ড জোরে লাত্তি মেরে…..
;;;আমি জানি তুমি রুমেই আছে….ভালই ভালই টাওয়ালটা দিয়ে যাও…তা নাহলে কিন্তু খারাপ অবস্থা হবে…….
এটা শুনে তাহিন ধড়ফরিয়ে উঠে গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে আস্তে করে বাইরে থেকে দরজাটা লক করে দিল….. শাওয়ার নিলে যখন রাগ কমে তাহলে এভাবে আরেকটু থাকলে ক্ষতি কি……রাগটা একেবারেই কমেই যাবে….
মনে কথাগুলো ভাবছে আর মুখ চেপে চেপে হাসছে…
;;;তুমি টাওয়াল দিবে না তো…তাহলে আমি এভাবেই বের হয়ে আসছি…….
;;…তাহিন মনে মনে বলতে লাগল…বের হতে পারলে না আসবেন…..দরজা তো অনেক আগেই লকড হয়ে গেছে….

হঠাৎ করে নিলয় একদম চুপ হয়ে গেল… ঠান্ডায় কি তাহলে ফ্রিজ হয়ে গেছে….নাকি
ঝর উঠার আগে শান্ত পরিবেশ…তাহিন এবার ভয় পেয়ে গেল..
আমতা আমতা করে বলল…..
;;;;আমায় ডেকেছেন…..?
নিলয় কোনো জবাব দেয়নি তাহিন আবার জিজ্ঞেস করতে…নিলয় দাঁতে দাত চেপে বলল….
;;;তুমি ছাড়া কি এ ঘরে আর কেউ আছে….
;;;না আসলে শুনতে পাইনি…
;;;;শুনতে না পেলে দরজাটা আপনি আপনি লক হয়ে গেছে তাহলে……এক্ষুণি খোল বলছি খুব বাড় গেছ না এর শাস্তি তো পেতেই হবে….
তাহিন আমতা আমতা করে…না মানে আপনি যদি সত্যি সত্যি এমন অবস্থায় বের হয়ে আসেন তার জন্য ….
;;;এত.ভনিতা না করে যেটা করতে বলেছি সেটা কর….
তাহিন ভয়ে ভয়ে ওয়াশরুমে দরজাটা খুলতে যাবে তখনি বাসার কলিং বেল বেজে উঠল…..মনটা খুশিতে নেচে উঠল….নিলয় আওয়াজটা শুনতে পেয়ে তাহিনকে বলল…টাওয়াল না দিয়ে আবার দরজা খুলতে যেওনা যেন…. তাহিন টাওয়ালটা নিয়ে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে টাওয়ালটা নিলয়ের দিকে ছুড়ে দিয়ে দিল একটা ভৌ দৌড়ে….ওপপ এবার যেন হাপ ছেড়ে বাচঁল… যা বাচাঁন বাচাঁল আজ ঠিক সময় বেলটা না বাজত তাহলে শান্তিস্বরুপ সারারাত আমাকেই আটকিয়ে রাখত মনে হয়..কিন্তু আজ এত রাগের মাঝে ও কেমন একটু শান্ত মনে হচ্ছে,না ব্যপারটা কি?……নিজের সাথে নিজেই কথা গুলে বলতে বলতে সুইচটা অন করে দরজা খুলে দিতেই বড় সড় একটা ধাক্কা খেল মামতো ভাইবোনদের দেখে…ওদের দেখে খুশিতে আত্মহারা হলে সেটা যেন প্রকাশ করতে পারছেনা নিলয়ের কথা ভেবে…যদি নিলয় ওদের সামনে উল্টা পাল্ট কিছু করে…… রিদিতা তাহিনকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরতে ওর ভাবনার ছেদ ঘটে….তারপর তাহিন ও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে…অনেকক্ষন হয়ে গেল কেউ কাউকে ছাড়ছে না.. রাফি এই দৃশ্য দেখে……
;;;;যদি এবার এই সুবোধ বালকটার দিকে নজর দিতেন……এমন হলে তো আর ভিতরে যাওয়া লাগবে না…..
রাফি কথা শুনে দুজনে একসাথে হো হো করে হেসে উঠল….
তাহিন হঠাৎগম্ভীর হয়ে বলল….
;;কাউকে ভিতরে আসতে দেওয়া হবে না….তোরা আসবি সেটা বলিস নি কেন?
রাফি ভ্রু কুচকে,
কি বলছ এসব….ফুফি তো নিলয় ভাইয়াকে ফোন করে বলেছিল আমার আসব সেটা….কেন তোমাকে বলনি….
তাহিন একটু হেসে,ও হে বলছিল আসলে আমি তুদের দেখে খুশিতে ভুলে গেছি………তাহিন কথাটা ইচ্ছে করে বলেছে….নিলয় জানে কিনা সেটা দেখার জন্য…..
তারমানে নিলয় জানে আর এজন্য সুবোধ বালক হয়ে আছে …..

শাড়ীর আচলে ঢাকা হাত যেন রিদিতার চোখ এড়ায় নি…ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তাহিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেই….
আপু তোমার হাতে কি হয়েছে….?পুরো হাতে এমন ব্যান্ডেজ কেন?
তাহিন চমকে গিয়ে শাড়ীর আচলে হাতটা পেছিয়ে নিয়ে…কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় নিলয় সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে….জবাব দিল…
;;;তোমার আপুর হাত আমিই কেটে দিয়েছে….
তাহিন অবাক হয়ে নিলয়ের দিকে তাকাল….আর রিদিতা ভ্রু কুচকে,,
;;;মানে?
তাহিন তড়িঘড়ি করে রিদিতাকে হেসে জবাব দিল,
আরে এত ঘাবরে গেছিস কেন উনি তোর সাথে দুষ্টামি করতেছে আসলে পিয়াজ কাঁটতে গিয়ে ভুল বশত হাতটা একটু বেশিই কেটে গেছে…
;;;ওহহহ তাই বল…..
তাহিন নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে একটা চোখ টিপ মেরে দিল…….তাহিন চোখ সরিয়ে নিয়ে
ওদের বসিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল….একটু পর রিদিতা ও তাহিনের পিছন পিছন গেল……ওর হাতের কাজ কেড়ে নিয়ে নিজেই করতে শুরু করল…..
;;;রিদু আমি করতে পারবো তুই গিয়ে বস…..
;;;ওপপপ আপু তুমি তো জান আমার এসব করতে ভালই লাগে….
;;;জানি তো…কিন্তু এখন আমার কষ্ট হবে বলে কথাটা বলছিস…দেখ সামান্য ব্যাথাতে পেয়েছি মাত্র কিছু হবে না এতে…..
;;;মোটেই না….এমন হলে তো তোমাকে কিছুই করতেই দিতাম না….
আসলে এই মুহূর্তে আমার একটু চা প্রয়োজন তাই তোমাকে আর আটকালাম না……..
তাহিন গগনবিহারী হাসি দিয়ে…..
চা পাগলি কোথাকার……..

নিলয় ঠোঁঠের কোণে হাসিটা রেখে রাফি সাথে দুচারটা কথা বলছে…..আর রিদিতা চা বানিয়ে ড্রনিং রুমে সবার জন্য নিয়ে আসল…..তনিমা নাস্তা থেকে শুরু করে অনেক কিছু রান্না করে পাটিয়েছে……তাই আর এসব কিছু করতে হয়নি…….
হঠাৎ করে নিলয় ওদের মাঝখানে উঠে যেতেই রিদিতা নিলয়কে থামিয়ে দেই
;;;আরে ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন….?
;;;;নিলয় ঠোঁঠের কোণে সেটা হাসিটা রেখে না আসলে…আমার একটা জুরুলী কাজ আছে তাই একটু বের হতে হবে…

রিদিতা::তা তো হবে না…আপনি আজ কোথায় যাচ্ছেন না……
কারণ আপনাকে আজ আমাদের রান্নাকরে খাওয়াতে হবে…..
নিলয় ভ্রু কুচকে….হোয়াট?
রিদিত::আপনি এত অবাক হচ্ছেন কেন
…আমি শুনেছি অনেক ভাল রান্না করতে পারেন…..আর আপু তো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ…এতক্ষণ আপনায় কথা বলতে বলতে আমার কান শেষ করে দিল…..
–বুঝলাম না….
রিদিতা মুচকি হেসে….
আপনি আপুকে প্রতিটা কাজে হেল্প করেন তার জন্য আরকি… এমনকি এটা ও বলেছে হাত কেটে যাওয়ার পর থেকে নাকি সব রান্না আপনি নিজ হাতেই করছেন…..
তাই আজকে আমাদের ও কিছু একটা রান্না করে খাওয়াতে হবে…..
নিলয়ের মাথায় যেন অাকাশ ভেঙ পরল…রাগি চোখে তাহিনের দিকে তাকাতেই তাহিন ও একটা চোখ টিপ মেরে দিল…এটা দেখে তো নিলয়ের গাঁ আরো জ্বলে যাচ্ছে……….
;;তোমার আপু দুষ্টামি করেই বলেছে এসব কথা….আমি মোটেও রান্না করতে পারিনা……
রিদিতা::আমরা কিন্তু না শুনছি না না….আপু দুষ্টামি করে নি আমরা জানি……
রাফি ছেলেটা ভীষন দুষ্টু এটা শুনে তো নিলয়ের পিছু লাগল ওর হাতের রান্না খাওয়ার জন্য……আর কি নিলয় বাধ্য হয়ে রান্নাঘরে যেতে হল… সাথে রাফি ও গেল…….নিলয় কিন্তু ভালই রান্না করতে পারে….মাঝেমাঝে নিজেই করে খেত….এদিকে তাহিন তো খুশিতে অাত্মাহার হয়ে গেল…কিন্ত নিলয়ের সামনে সেই খুশিটা প্রকাশ করনি…এমনিতে তো ক্ষপে আছে…রিদিতা কে এমনিই ওর কথা বলল কিন্তু ও যে এমন কান্ড করবে ভাবতেই পারেনি….যাক ভালই হল
নিলয় রান্না করছে আর তাহিন রিদিতাকে সারাবাড়ী ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে…..

ডিনারের সময় সবাই একসাথে খেতে বসল…….টেবিলে খাবার সাজানো থেকে শুরু করে ছোট কাট যা কাজ আছে সব নিলয় করেছে….ওর চেহারাটা শুধু দেখার মত ছিল এক প্রকার বাধ্য হয়ে এসব করতে হল….তাহিন সবাইকে নিয়ে দিচ্ছে.. রিদিতা বিরক্ত হয়ে বলল,
;;;ওপপ আপু বস তো আমরা নিয়ে খেতে পারব…..তাছাড়া আজকে ভাইয়ার স্পেশাল আইটেম ভূনা মাংশ….তুমি প্রথমে খাবে না এটা তো হতে পারে না….
রাফি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে…
;;;আপু পরে খাবে এখন আমাদের সাথে খেতে পারবেনা…..
রিদিতা ভ্রু কুচকে
পরে খাবে মানে আমাদের সাথে খেলে কি হবে…..
রাফি::তুই আসলেই একটা হাদারাম…তোর মাথায় কিচ্ছু নেই আম্মু ঠিকিই বলে…..
রিদিতা::কি বললি আমি হাদারাম
রাফি::তা নয়তো কি….
আপু কিভাবে খাবে যদি ভাইয়ে খাইয়ে না দেই……
কথাটা শুনে নিলয়ের বীষম উঠে গেল…
রাফির তাড়াতাড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই নিলয় ঢকঢক করে সব খেয়ে নিল…
রাফি::ভাইয়া আপনি এত ঘাবরে গেলেন কেন?
নিলয়;:কই না তো….
রিদিতা::ভাইয়া আপনি আপনার প্লেট থেকে আপুকে খাইয়ে দিতে পারেন আমরা কিন্তু কিছু মনে করব না……
নিলয়::তোমারা খেয়ে নাও আমি তোমার আপুকে পরে খাইয়ে দিব..
তাহিন ও বলল হুম আমি পরেই খাব….
রাফি আর রিদিতার বলল না….আর ওদের জোরাজোরিতে তাহিনকে ওর পাশে বসিয়ে তাও আবার ওর প্লেট থেকে খাওয়াতে বাধ্য হল…. তাহিন এক গ্রাস মুখে নিচ্ছে আর নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে….নিলয় মনে ক্ষোভ থাকলে ও সেটা প্রকাশ করতে পারছে না….খুব যত্ন করে খাইয়ে দিতে হচ্ছে…তাহিনের চোখের কোণে এক ফোঁটা জল জমা হল….আজ যেন অনেক দিন পর ভাল করে খাবার খেয়েছে…

তারপর খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা চলে গেল…..এত জোরাজুরি পর ও থাকল না…..শুধুমাত্র বিয়ে উপলক্ষে কয়েকদিনের জন্য চট্টগ্রামে এসেছিল…..আর আগামীকাল নাকি ঢাকায় ব্যাক করবে….তাই যাওয়ার আগে শুধুমাত্র ওর সাথে দেখা করতে এল….তাহিন যাওয়ার সময় ওদের এটা ও বলে দিয়েছে তনিমাকে যেন হাত কেটে যাওয়ার কথা না বলে না হয় অযতা টেনশন করবে…..

সবকিছু গুজগাজ করে রুমে যেতেই যেন একটা শকড খেল…..

চলবে…..
<ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন>

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here