হঠাৎ হাওয়া, পর্ব:১১+১২

#হঠাৎ_হাওয়া (১১)

মায়া জ্ঞান ফিরে নিজের ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করলো,বিকেলের কথা সব মনে পড়তেই ও লজ্জা পেয়ে কম্বলের নিজে চোখ বুজে রইলো।দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো,মায়ার বাবা ওর রুমে আসতেই মায়া কম্বলের থেকে বেরিয়ে হাসি মুখে ওর বাবার দিকে তাকালো, মায়ার বাবাও একগাল হেসে বললো,
—আর কতবার জ্ঞান হারাবি জীবনে বলতো?
মায়া হেসে গানের সুরে বললো,
—আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো বাচাতে পারবে না কেউ।
মায়ার বাবা হেসে বললেন
—ডক্টর হিমালয় ও না!?
মায়াও হেসে আবার কম্বলের নিচে চলে গেলো
—বাবাই তুমি যাও এখান থেকে আমি লজ্জা পাচ্ছি
—এরকম বলে কয়ে কেউ লজ্জা পায় তোকে দেখে বুঝলাম
—যাওওও তুমিইই
—খাবার পাঠিয়ে দেব?
—না,পরে।
—আজও কি ডাক্তার সাহেব আসবে নাকি।
—বাবাইইই যাওও
—আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি
মায়ার বাবা দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল,
—মায়া
—শুনছি না আমি
—আই এম সরি মা,আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিতে যাচ্ছিলাম।
মায়া মাথা বের করে বাবার দিকে তাকালো, বিছানা থেকে উঠে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—শোনো,তুমি আমার কাছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধ মানুষ, তোমার কোনো ভুল থাকতে পারে না।
—তুই বললেই তো হবে না
—আমি বললেই হবে,
—না
—হ্যা,তুমি ভুল করেছ এটা তোমার শাস্তি আমি যা বলব তাইই হবে
—তা তো এমনিতেই হয়,তুই কত আমার কথা শুনিস!
—কিই বললে!
দুজনেই হেসে ফেললো। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবার বুকের মধ্যে মাথা রাখলো
—খুবই বাজে অভ্যেস তুই আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিস।
—চুপ করো তো।এত কথা বলো কেন?
মায়ার বাবা হেসে চুপ করে গেলেন।

মায়ার ফোন আসলো রাত দশটার পরে।মায়া স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে নিজে নিজেই বলল,
—হেহ এখন ফোন করার সময় হইছে, আমার সাথে ভাব নিতেছে হুহ।
কল কেটে যেতেই মায়ার আফসোস হতে লাগলো,ফোন হাতে নিয়ে বসে আবার কল আসার অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু হিমালয় আর ফোন করলো না মায়া নিজ মনে বলতে লাগলো,
—কত্ত খারাপ! মানুষ কত্ত খারাপ আরে এক্সিডেন্টলিও তো মানুষ প্রথমবার রিসিভ করতে না পারে আরেকবার তো কল দিতেই পারে!অদ্ভুত!

মায়ার ফোনে টেক্সট আসলে মায়া ওপেন করে দেখলো লেখা”আমাকে বকাঝকা আর নিজে বিড়বিড় করা শেষ হলে বলো আমি কল করবো”।মায়া একটু আহত হলো এই লোকটা বুঝে গেলো কি করে!মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কল করলো, হিমালয় কেটে কল ব্যাক করতেই মায়া ও আবার কেটে কল ব্যাক করলো,
—তুমি ফোন কেটে ব্যাক করলে কেন?
—আপনি করলেন কেন?
—তুমি এমন কেন মায়া?
—যাতে আপনি এই প্রশ্ন করতে পারেন তাই।
হিমালয় চুপ করে রইলো।
—কিই?সাইলেন্ট মুডে চলে গেলেন কেন?
—এখন কেমন আছো?
—আপনাকে বলব কেন?আপনি আমাকে রেখে চলে গেলেন কেন?আপনার উচিত ছিল না আমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত আমার পাশে বসে থাকা?
—কাল রাতে তুমি ঘুমাও নি একটুও তাছাড়া তুমি মেন্টালি খুব ডিস্টার্ব ও ছিলে এত বড় ডিশিসন নিয়ে তুম টায়ার্ড তাই তোমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল আমি জানতাম তোমার ঘুম কতক্ষণ নাগাদ ভাঙবে।
—আপনি আমায় ইনজেকশন দিয়েছেন!ইনজেকশন!
—তুমি ইনজেকশন ভয় পাও নাকি?
মায়া আমতা আমতা করে বললো
—নাহ!নাতো!আমি বলতে চাচ্ছি আপনি কেন আমায় ইনজেকশন দেবেন?আমি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলাম আপনার কি আমার পাশে থাকা উচিত ছিল না?হুম?বলুন?
—তুমি কি এজন্য রাগ করেছ?
—হ্যা আমি খুব রাগ করেছি।
—এরকম বলে কয়ে কে রাগ করে মায়া?
—আমি করি।
—আচ্ছা ঠিকাছে।
—কি আচ্ছা ঠিকাছে!!!আমি রেগে আছি! রাগ ভাঙাবেন না?
—ফোনে ফোনে তো আমি রাগ ভাঙাতে পারি না।
—তাহলে চলে আসুন
—আমি তোমার বাসার নিচে।
—বাসার নিচে ঢুকলেন কিভাবে?
দুজনেই হেসে ফেললো
—এরকম অদ্ভুত কথা পাও কোথায় তুমি?
—আপনি দু মিনিট দাড়ান আমি রেডি হয়ে আসছি।
—না রেডি হতে হবে না গোছানো তুমির থেকে এলোমেলো তুমি আমার বেশি প্রিয়।
মায়ার পুরো শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো, কত সহজ স্বাভাবিক একটা কথা অথচ শুনতে কি ভালো লাগে!
মায়া চুলগুলো হাতখোপা করে একটা হালকা শাল গায়ে জড়িয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো,দূর থেকে হিমালয় ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো হিমালয়ের সামনে দাড়াতেই ওর শরীর কাপতে লাগলো।হিমালয় কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মায়া তাকাতে পারলো না, ওর খুবই লজ্জা লাগছে, হুট করে মায়া হেসে ফেললো,হিমালয় জিজ্ঞেস করলো,
—হাসছো কেন?
—চলুন আবির ভাইয়াদের বাসায় যাই
হিমালয় অবাক হয়ে বললো
—কেন!
—বাহরে! আমি যে প্রেমে পড়লাম এটা মিষ্টিকে বলতে হবে না?
—এখন কয়টা বাজে তুমি জানো মায়া?
—কত আর? এগারোটার মত।
—আবিরের বাবা মা কি ভাববে বলোতো?
—কি ভাববে?যে আমার ভালো ড্রেস নেই? আরে আমি কি হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকা যে রাতের বেলায় গয়না মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে যাবো?অন্যএকদিন সুন্দর একটা ড্রেস পড়ে গেলেই ওনারা বুঝবেন যে এটা আমার বাসায় পড়ার ড্রেস।
—কিন্তু…
মায়া নাকি সুরে বলতে লাগলো
—ওহ, প্রথম দিনেই আপনি কেন কিন্তু করছেন?এত্ত কিপটা কেন আপনি বলি ওদের বাসায় যেতে কি আপনার গাড়ির তিনমণ তেল পুড়বে?বেশ যেতে হবে না। থাকুন আপনি।
মায়া উলটো পথে হাটা ধরলো,হিমালয় হাল ছেড়ে দিল এই মেয়ের সাথে পারা যাবে না দৌড়ে গিয়ে মায়ার সামনে দাড়ালো,
—ঠিকাছে চলো।
মায়া মুখ ভেংচি দিয়ে বললো
—না আমি রেগে গেছি।
হিমালয় হাসলো মেয়েটা আসলেই পাগল,
—তোমার রাগ কি সরি বললে ভাঙবে?
—না আমার রাগ ভাঙবেও না, ছিড়বেও না।
হিমালয় এক গাল হেসে রাস্তার উপর দুই হাটু গেড়ে কানে হাত দিয়ে বসে মায়ার মুখের দিকে চেয়ে বললো,
—মহারানীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ এই যে আপনার কাছে এই অধম ক্ষমা প্রার্থীএই বিষয় বিবেচনা করিয়া ক্ষমা মঞ্জুর করে আমায় বাধিত করুন।
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!শুকনো ঢোক গিলে বাচ্চাদের মত হিমালয়ের হাতদুটো হিমালয়ের গালের দুপাশে রাখলো,ওর চোখ ছলছল করছে দেখে হিমালয় উঠে দাঁড়িয়ে বিচলিত হয়ে বললো
—কি হয়েছে মায়া! তুমি কাদছো কেন?
—আই এম সরি।
—কেন!
—আমি তো মজা করছিলাম,
—আমি তো জানি তুমি মজা করছিলে!তুমি কাদছ কেন?
—আপনি এত সুন্দর করে আমার রাগ ভাঙাতে চাইলেন অথচ আমি মিথ্যেমিথ্যি রাগ করে আছি! আমি সত্যি সত্যি রাগ করলে তো, সেই বাঘ আর রাখাল বালকের মত আপনি আমার রাগ ভাঙাবেন না।আপনি তো ভাববেন আমি মজা করছি!
হিমালয় হেসে মায়ার হাত দুটো ধরে বললো,
—তোমার মিথ্যেমিথ্যি রাগ ভাঙাতেও আমার ভালোলাগে, তুমি সত্যি রাগ করলে আমি আরো সুন্দর করে তোমার রাগ ভাঙাবো।
—সত্যি!?
—হ্যা
—আর আপনি রাগ করলে আমি কি করবো?
হিমালয় মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
—শুধু শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরো, ছুটে যেতে দিও না।
মায়া মাথা নিচু করে হাসলো….

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

#হঠাৎ_হাওয়া (১২)

—আবির ভাই আমি তোর বাড়ির সামনে গেট টা কি খুলবি?
—আপনি কে ভাই?!
—শ্বশুরের বাচ্চা শালা আমি হিমালয় আমার নম্বর সেভ নাই তোর কাছে?
—কোন হিমালয়?
—ভাই প্লিজ আমার সাথে মায়া আছে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে
—ওয়েট।

আবির বাইরে এসে মায়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলেই হিমালয় বললো
—তুই কি আমায় চিনতে পারছিস না!
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তুমি জানো মায়া এই যে আমাদের প্রায় ৮/৯ বছরের সম্পর্ক এর মধ্যে এই ছেলে ৮/৯ বার আমার বাসায় এসেছে কি না সন্দেহ, আজও নিশ্চয়ই তুমি বলেছ বলেই এসেছে।
মায়া হাসলো,হিমালয় মিনমিন করে বলল,
—ধুর তাইলে থাক আমি গেলাম
আবির মায়ার হাত খপ করে ধরে বললো
—ওকে রেখে যেতে পারলে যাবি, আলবিদা কাল হসপিটালে দেখা হবে।
আবির আর মায়া ভেতরে ঢুকে গেলো, হিমালয় কতক্ষন অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখল মিষ্টি আসছে,মিষ্টি হালকা হেসে বলল
—হিমালয় ভাইয়া চলুন।
—মিষ্টি…
—হ্যা বলুন?
—তোমার কপাল কিসে কাটলো?!
মিষ্টি হেসে বলল,
—হঠাৎ হাওয়ায়।
হিমালয় কিছুক্ষণ মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—তুমি কিছু লাগাও নি কেন!
—চলুন ভাইয়া আব্বু আম্মু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভেতরে।
—আবির আর তোমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
—আমার তার সাথেই কোনো সমস্যা হয় হিমালয় ভাইয়া যার সাথে সখ্যতা হয়।আপনার বন্ধুর সাথে আমার কোনো সখ্যতা নেই তাই সমস্যা হচ্ছে না। আপনার বন্ধু অতি উচ্চ মানের সাধু ব্যাক্তি সবার বাহবা নেওয়ার জন্য সে আমাকে বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু আমায় সহ্য করতে পারেন না আমাকে দেখলেই তার আকাশ পাতাল উল্টে যায় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করে রাত পার করে,আচ্ছা ভাইয়া আমি কি আপনার বন্ধুর পা ধরে বসে ছিলাম বিয়ে করব বলে বলুন?
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেলল,মিষ্টি হেসে বললো
—আপনি ভাববেন না আমি জানি না যে সে জীবনে ভালোবেসে খুব বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে তা নিজেই স্বীকার করেছে, তার জীবনের চরম বিপর্যয়ের কথা সে আমায় বলেছে,আমি বলছি না সে খারাপ মানুষ, তবে তাকে আমি বুঝে উঠি না সে মুহুর্তেই তরল হয়ে যায় আবার তক্ষুনি কঠিন থেকে কঠিনতম হয়!তার সুন্দর একটা পরিবার আছে আমার শ্বশুর আমায় এত আহ্লাদ করে যা আমার বাবাও করে না, আমার শ্বাশুড়ি পারলে তিন বেলা মুখে খাবার তুলে আমায় খাইয়ে দেয় কেন জানেন? কারণ তাদের ছেলে তাদের সাথে ঠিকমত কথাও বলে না তাদেরও ইচ্ছে করে সন্তান কে স্নেহ করতে।এনিওয়ে ভাইয়া চলুন ভেতরে যাই।
হিমালয়ের মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো এখানে না আসলে সে জানতই না আবিরের বাসায় এরকম পরিস্থিতি।

হিমালয় উত্তেজিত হয়ে মায়াকে ফোন করে বলল,
—এই মায়া তুমি কি জানো আবির মিষ্টির বৌভাতের জন্য রাজি হয়ে গেছে?
মায়া হাই তুলতে তুলতে বললো মিনিট দশকের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে দেখবেন আমি আপনার ড্রয়িং রুমে আপনার আব্বু আম্মুকে মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইট করতে এসেছি।
মায়া ফোন কেটে দিলো, হিমালয় হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো বিড়বিড় করে বলল,
—এই মেয়ে বলে টা কি! মা যদি মায়ার কথা জানে,সিরিয়ালের ন্যাকা মা দের মত বাসায় কি সিন ক্রিয়েট করবে আল্লাহই জানে!
হিমালয় ড্রয়িং রুমে এসে দেখে মায়া হিমালয়ের মা রেহেনা আহমেদ কে কদমবুসি করছে পাশেই আবির দাঁড়িয়ে, হিমালয় নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না সিড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে, দেখলো মায়া রেহেনা আহমেদ কে বলছে
—আন্টি জানেন হিমালয় আপনাকে কত ভালোবাসে? আমি ওকে আড়াইবার প্রপোজ করেছি আর ও কি না বলে ওর মা ই ওর কাছে সব ওর মা যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে যতই ওর আমাকে একটু একটু পছন্দ হোক ও ওর ভালোলাগা বিসর্জন দিয়ে দেবে ওর মায়ের পছন্দমত মেয়েকেই ও বিয়ে করবে, আন্টি বলুন আমি কি অসুন্দর আন্টি আপনিই বলুন?
আবির পানি খেতে খেতে বিষম খেলো, হিমালয় হা করে তাকিয়ে আছে,হিমালয়ের মায়ের চোখ ছলছল করছে তিনি অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে বললেন,
—হিমালয় এই কথা বলেছে?
—আন্টি আপনার কি আমাকে দেখে মিথ্যেবাদী মনে হচ্ছে?কোনো মেয়ে কি একটা ছেলের কাছে রিজেক্ট হওয়ার কথা কাউকে বলতে পারে?এর চেয়ে অপমানের কিছু আছে? আন্টি আমার মত একটা ইনোসেন্ট মেয়ে কি মিথ্যে বলতে পারে?বলুন?আপনি আপনার ছেলে কে চেনেন না?
—না না মা আমি তো জানি আমার হিমালয় আমাকে কত ভালোবাসে,
—আন্টি আমি যে আড়াইবার আপনার ছেলেকে প্রপোজ করলাম তা কি বৃথা যাবে আন্টি?
হিমালয়ের বাবা এতক্ষণ অবাকের চরম মাত্রা থেকে বের হয়ে বললেন,
—মা সবই তো বুঝলাম কিন্তু আড়াইবার কি করে প্রপোজ করলে?
—আরে আঙ্কেল দুইবার আমি ডাইরেক্ট প্রপোজ করলাম আর প্রথমবার আমার বান্ধবীকে দিয়ে করালাম হলো না?আড়াইবার?
হিমালয়ের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বলল,
—হ্যা তাই তো তাই তো।
—আন্টি,আমার আম্মু নেই আন্টি ইচ্ছে হলেই আমি কাউকে মা বলে ডাকতে পারি না এইটা ওইটা রান্না করে খাওয়ার বায়না করতে পারি না, আমি হিমালয়ের মত ভাগ্যবান নই আন্টি, বলুন আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি?
হিমালয়ের মা কেদেই ফেললো তিনি পরম মমতায় মায়াকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
—খুব পছন্দ হয়েছে মা। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
—আর আঙ্কেল আপনার?
হিমালয়ের বাবা আমতা আমতা করে বললো,
—আমারো পছন্দ হয়েছে আর যাইহোক তুমি সরাসরি আমাদের প্রপোজ করেছো আমরা দুজন যদি এখন তোমাকে রিজেক্ট করি তুমি তো সাড়ে চতুর্থ বারের মত রিজেক্ট হবে সেটা কি ভালো দেখায়!?
—ওয়াও আঙ্কেল আপনি তো খুব ব্রিলিয়ান্ট আমার এরকম ব্রিলিয়ান্ট শ্বশুর এমন সুন্দর শাশুড়ি হবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
—আমারো খুব আনন্দ হচ্ছে মা আমার বৌমা এত ইনোসেন্ট ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
মায়া মুখ টিপে হাসলো,হিমালয় উলটো পথে উপরে চলে গেলো এখানে থাকা মোটেই সুবিধের না।
—আঙ্কেল এবার কাজের কথায় আসি
—ও এতক্ষণেও তুমি তাহলে কাজের কথা বলোনি মা?
—না না সেটা তো আবির ভাইয়া বলবে,আন্টি হিমালয় মনে হয় বাসায় নেই তাই না?
হিমালয়ের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
—আছে তো মা ও, উপরের ঘরে।
—ওহ থাক আমি আপনার পারমিশন ছাড়া ওর সাথে আর কথা বলব না ও আবার আমায় রাগ করবে
—সেকি! তুমি এবাড়ির হবু বউ তুমি ওর সাথে দেখা করবে না কি করে হয়!
হিমালয়ের মা তার অনামিকায় থাকা একটা আংটি খুলে মায়ার মধ্যমায় পড়িয়ে বলল,
—পাশের আঙুলে আমার ছেলে পড়িয়ে দেবে তুমি উপরে উঠে ডান দিকে গেলেই হিমালয়ের ঘর পেয়ে যাবে যাও মা।আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি।
মায়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে, রেহেনা আহমেদ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।মায়া উপর তলায় উঠে গেলো।
এতক্ষনে হিমালয়ের বাবা সোফায় বসতে বসতে বললেন
—কি হলো বলোতো আবির?এটা কি মেয়ে নাকি তেজস্বী?
—তেজস্বী ই বলতে পারেন আঙ্কেল আপনার বরফের মত কঠিন ছেলে এর প্রেমে গলে পুরো বাষ্প হয়ে উড়ছে, রাতদুপুরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
—কয়েকদিন যাবত আমিও হিমালয়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করছি!সিলেট থেকে ফেরার পরই, তা একে তোমরা পেলে কই?
—ট্রেনে বিয়ে থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো
—হোয়াট?!
—আঙ্কেল,এই মেয়ে একটা হীরে একে ধারণ করার ক্ষমতা সবার নেই হিমালয়ের আছে, আপনারা যে কি পেতে চলেছেন আপনারা নিজেও জানেন না।
—মেয়েটা বুদ্ধিমতী
—উহুহ আঙ্কেল ওর সাথে মিশে দেখবেন মেয়েটা অলরাউন্ডার আর এটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।আঙ্কেল আমি এখানে কেন এসেছি জানেন?আমি বিয়ে করেছি বৌভাতের দাওয়াত দিতে।
—হোয়াট, সত্যি আবির!
—অবাক হচ্ছেন আঙ্কেল?ভাবছেন ড্রাগ এডিক্টেড সেই ছেলে টা সংসার করবে কি করে?
—আমি তোমার জন্য খুবই খুশি মাই সন।ইটস ফিল লাইক এ ম্যাজিক
—এন্ড মায়া ইজ দ্যা ম্যাজিশিয়ান হু হ্যাভ ডান দিস।ইওর ফ্যামিলি ইজ সো লাকি আঙ্কেল,হিমালয় চুজ দা রাইট লাইফ পার্টনার।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here