#হলুদ_খামের_চিরকুট
১২
.
– সর্বনাশ
মিফতার এভাবে সর্বনাশ বলে উঠাতে সাদিক ও আলভী দুজনেই অবাক হয়ে মিফতার দিকে তাকালো।
সাদিক বললো,
– কি হয়েছে?
মিফতা আলভী কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ভাইয়া আপনি অর্থীকে ডিভোর্স এর কথা বলেছেন এবং ওর বাসায়ও রেখে এসেছেন!!!
মিফতার কথা শুনে আলভী ডিভোর্স এর কথা ভাবতে সেও সর্বনাশ বলে উঠলো।
কিছুক্ষণ সেভাবেই চুপ হয়ে বসে থাকার পর আলভী বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– আমি যাচ্ছি
– সে কি রে, মা তোর জন্য রান্না করছে আর তুই না খেয়ে চলে গেলে মা রাগ করবে।
– অন্য আরেকদিন এসে খেয়ে যাবো প্লিজ তুই আন্টিকে বুঝিয়ে বলিস।
এই বলে আলভী তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেলো।
আলভী বেড়িয়ে যেতেই মিফতা মুচকি মুচকি হাসছে। তা দেখে সাদিক বললো,
– কিরে হাসছিস কেন?
– ও তুমি বুঝবে না। যদি বুঝতা তাহলে এতদিনে একটা প্রেম করে ফেলতা।
সাদিক মিফতার কান টেনে ধরে বললো,
– বেশি পেকে গেছিস তাই না!!!
– উফফ্ ভাইয়া লাগছে, কান ছাড়ো। আমি কাঠাল নই যে পেকে যাবো।।
.
আলভী অর্থীদের বাসায় এসে পৌঁছে গেছে। অনেক্ষণ থেকে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছে। অর্থীর মা এসে দরজা খুলে দিলো।
– বাবা তুমি? আসো আসো ভিতরে আসো।
আলভী তার শ্বাশুড়িকে সালাম দিয়ে ভিতরে গিয়ে বসলো।
– আন্টি অর্থী কোথায়? আসলে ওর কাছে একটু দরকার ছিলো।
– অর্থী তো ওর রুমে। কাল আসার পর থেকে মেয়েটার শরীরটা ভালো নেই। আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।
– না না আন্টি তার দরকার হবে না। আমিই যাচ্ছি ওর রুমে।
.
আলভী বলে তো দিলো যে সে যাবে অর্থীর রুমে কিন্তু অর্থীর রুম কোনটা তা তো সে জানে না। এর আগে এই বাড়িতে আসেও নি। কাল এসেছিল তাও ডাইনিং রুমেই বসেছিল।
আলভী এদিক ওদিক দেখতে দেখতে একটা রুমের সামনে এসে দাড়ালো। রুমের দরজা খোলা ছিলো। আলভী রুমের দরজা দিয়ে উকি দিতেই দেখতে পেলো অর্থী তার পড়ার টেবিলে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আলভী গিয়ে অর্থীর মাথার কাছে দাড়ালো। আজ যেনো নতুনভাবে অর্থীকে দেখছে। খুব নিষ্পাপ দেখাচ্ছে তার ঘুমন্ত চেহারা, এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আলভী। কিন্তু এই দেখায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে অর্থীর চুলগুলো।
চুলগুলো অর্থীর মুখে এসে পরেছে। আলভী হাটু গেড়ে বসে ফু দিয়ে অর্থীর চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কিন্তু চুলগুলো আবার তার মুখে এসে পড়লো। এবার হাত দিয়ে চুলগুলো সড়িয়ে দিতে গেলেই আলভীর স্পর্শে অর্থী জেগে উঠলো। চোখ খুলে সামনে আলভী কে দেখতে পেয়ে চমকে গিয়ে উঠে দাড়ালো।
– আপনি”!!!!!
আলভী তখনও হাটু গেড়ে বসে অর্থীর দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো, এভাবে কি দেখছেন।
আলভী ভুরু নাচিয়ে অর্থীর দিকেই ইশারায় দেখিয়ে দিলো।
অর্থী নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে এক দৌড়ে বিছানায় রাখা ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো।
আলভী উঠে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। – আপনি এখানে কেন এসেছেন?
আলভী অর্থীর কথায় উত্তর না দিয়ে বিছানায় গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
– কি হলো, কথা বলছেন না কেন?
– কি বলবো?
– কি বলবেন মানে! আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি সেটা কানে যাচ্ছে না আপনার।
– তোমার প্রশ্ন পরে আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও?
এরপর আলভী তার পকেট থেকে খামটা বের করে বললো,
– এটা কি?
অর্থী কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর বললো,
– আমি জানি না এটা কি।
– তুমি জানতে তাই না?
– কি জানবো!!!!
– এই চিঠির আড়ালে যেই অপরিচিতা আছে সেটা তুমিই।
আলভীর কথা শুনে অর্থীর মন কেপে উঠলো।
– কি হলো উত্তর দাও? কেন জেনেও নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলে তুমি?
– আপনি ভুল জানেন এই চিঠির ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আমি নই সেই মেয়ে।
– একদম মিথ্যা বলবা না, তোমার ঠোঁট কাপছে। আমি জানি তুমি সেই মেয়ে।
এরপর অর্থীর কাছে গিয়ে বললো,
কেন নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলে তুমি?
অর্থীর চোখ ছলছল করছে।
– আপনি ভুল জানেন, এই লেখার আড়ালে যে অর্থী ছিলো সে ছিলো আবেগী আর এখনকার অর্থী আবেগ কে প্রশ্রয় দেয় না, বাস্তবতা কে মেনে চলে সে।
– আমি এতো কিছু জানিনা তুমি আমার অপরিচিতা, তোমাকে আমি এতদিন খুজেছি, চেয়েছি এবং ভালোবেসেছি।
– উহু আপনি যাকে ভালোবাসেন সে আমি না। সে ছিলো আবেগী, আবেগে সে চিঠি লিখতো। সেই চিঠির প্রেমে পড়েছিলেন আপনি, সেই আবেগের প্রেমে পড়েছিলেন। আপনি চলে যান এখান থেকে আর সেপারেশন লেটার পাঠিয়ে দিবেন আমি সাইন করে দিবো (কিছুটা জোর দিয়ে কথাগুলো বললো অর্থী)
এবার রেগে গেলো আলভী । অর্থীর হাত চেপে ধরে বললো,
– কি পেয়েছ কি তুমি, এতো বছর থেকে তোমাকে খুজেছি আমি। আজ যখন তোমাকে খুজে পেয়েছি, তখন চলে যেতে চাইছ সেপারেশন লেটার চাইছ।
– ছাড়ুন আমার হাত, লাগছে আমার।
আলভী অর্থীর হাত ছেড়ে দিতেই অর্থী একপ্রকার চেচিয়ে কেদে বললো,
– আপনারা আমাকে কি পেয়েছেন। কি পেয়েছেন কি আমাকে যার যেমন ইচ্ছা সেভাবে আমার লাইফটাকে পরিচালনা করছেন। মুমু আপু পালিয়ে গেলো, বাবা খালু তাদের তাদের সম্মান বাচাতে আমাকে তার জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিলো। বিয়েটা যখন মেনে নিলাম তখন জানতে পারলাম আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। এবং সে যেহেতু অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই সে আমাকে মেনে নিতে পারবে না আর তাই সে আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়। এটাও মেনে নিতে চাইলাম। মনকে বুঝালাম। এরপর সে জানতে পারলো যে সে যাকে ভালোবাসে সেটা আমিই তখন সে আমাকে ভালোবাসি বলতে চলে এলো। খুব হাস্যকর তাই না। আসলে আমার লাইফটাই হাস্যকর হয়ে উঠেছে।
– অর্থী আমি জানতাম না…….
অর্থী আলভী কে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো।
– কি জানতেন না আপনি, এটা যে আমি সেই মেয়ে। সেই মেয়েটা যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ হতো। তাহলে কি করতেন?
আলভী চুপ করে আছে।
– কি হলো উত্তর দিন। উত্তর নেই তাই তো। আমি বলি উত্তর টা, আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।
আলভী করুন দৃষ্টিতে অর্থীর দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থী কাদছে আর কথাগুলো বলছে।
– অনেক মানিয়ে নিয়েছি আর না। এখন আমি ক্লান্ত। একলা আমিই ভালো আছি, আর কিছুই চাই না আমার। চলে যান আপনি, প্লিজ। আর সেপারেশন লেটার লেটার টা পাঠিয়ে দিবেন। আপনি মুক্তি চেয়েছিলেন, তাই হোক।
– অর্থী আমার কথাটা শুনো প্লিজ…..
আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলো আলভী তার আগেই অর্থী বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আর আলভী বিছানায় বসে রইলো, তার চোখেও অশ্রু কনা।
এরই মধ্যে অর্থীর মা এলো
– বাবা তুমি একাই, অর্থী কোথায়?
– আসলে আন্টি…..
– আচ্ছা আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি, তুমি আসো নাস্তা করো। কি হলো আসো
আলভী অর্থীর মা’ এর সাথে ডাইনিং এ গেলো।
অর্থী ছাদে বসে কাদছে আর ভাবছে, আমার জীবনেই কেনো এতোকিছু।
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে