হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ১৩

#হলুদ_খামের_চিরকুট
১৩
.
অর্থী ছাদে বসে কাদছে আর ভাবছে, আমার জীবনেই কেনো এতোকিছু।

অর্থীর মা আলভী কে খাবার দিয়ে কাজের মহিলা কে বললো অর্থীকে খুজতে। কাজের মহিলাটি কিছুক্ষণ পরে এসে বললো, পুরো বাসায় কোন রুমে বারান্দায় অর্থী নেই।
– উফফ্, এই মেয়েটা যে কি করে না। নিশ্চয়ই ছাদে গেছে। সন্ধ্যা হতে চঅলেছে আর এই সময়ে সে ছাদে গেছে।
কাজের মহিলাটিকে বললো ছাদ থেকে ডেকে আনতে। অর্থী তখনও ছাদের রেলিং এর কাছে বসে কাদছিল। আকাশটা সূর্য কে বিদায় দিয়ে রাতের অন্ধকার কে বরন করছে। আবছা আলো আবছা অন্ধকার চারিদিকে।
কাজের মহিলাটি ছাদে এলো। কাজের মহিলাটি যখন অর্থীর কাছে গেলো তখন অর্থীর অবয়ব বুঝা যাচ্ছিলো কিন্তু অর্থী যে কাদছিলো তা বোঝা যাচ্ছে না।
কাজের মহিলাটি বললো, অর্থীকে তার মা ডাকছে। অর্থী চোখ মুখ মুছে বাসায় গেলো। ডাইনিং এ যেতেই দেখে তার মা আলভী কে জামাই আদর দিয়ে খাবার খাওয়াচ্ছে। অর্থীর তার মায়ের উপরেই রাগ লাগছে।
– অর্থী তোকে না কতবার সন্ধ্যা বেলা ছাদে যেতে বারণ করেছি। আর তোর চোখ ফোলা ফোলা লাগছে কেন?
– ঘুমানো বেশি হয়ে গেছে বোধহয়।
এরপর অর্থীর মা আলভী কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– বাবা আজ থাকছ তো?
আলভী উত্তর দেওয়ার আগেই অর্থী বলে উঠলো,
– না মা উনি থাকবেন না। উনার খুব জরুরী কাজ আছে।
– এ কেমন কথা বাবা, রাত হতে চললো। আর তুমি এই রাতের বেলা চলে যাবা?
– দেখেন না আন্টি, আমিও তো তাই বলছিলাম কিন্তু মা বাসায় চিন্তা করবে দেখে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
– কিহ চিন্তা করবে কেন? তুমি ফোন করে বলে দাও যে তুমি এখানে এসেছ আর থাকবে আজকে
– জি আন্টি।
অর্থী রাগী চোখে আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে। (অসহ্য, কেন করছে উনি এমনটা)
.
রাতে আলভী অর্থীর রুমে বসে আছে। অর্থী তখন থেকে রুমে আসে নি। আলভী বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর আলভী কি মনে করে অর্থীর ফোনটা হাতে নিলো । ফোনে নরমাল লক করা। ফোনে গ্যালারি ওপেন করে অর্থীর পিক দেখছে আর মুচকি হাসছে। অর্থীকে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে ছবিগুলোতে। একটা পিক দেখে আলভী হাসতে হাসতে শেষ। পিকটাতে অর্থী আইসক্রিম খাচ্ছে আর ওর পুরো নাকে মুখে গালে আইসক্রিম লেগে আছে।
এরই মধ্যে অর্থী রুমের মধ্যে আলভীর হাতে তার ফোন দেখে এক ঝটকায় ফোন কেড়ে নিলো।
এদিকে আলভী হাসতেই আছে। আর অর্থী ফোন স্ক্রিন এ তার ওই ছবিটা দেখে আলভীর দিকে রাগী চোখে তাকালো।
– কারো পারসোনাল জিনিস এ হাত দিতে নেই। জানেন না আপনি?
আলভী হাসতে হাসতেই বললো,
– পারসোনাল কোথায়? আমি তো আমার বউয়ের ফোনে হাত দিয়েছি।
– বউ (ব্যাঙ্গ করে) শুনেন এইসব ঢং আমার সামনে করবেন না, যত্তসব।
আলভী তবুও মুখ টিপে টিপে হাসছে
– আবার হাসছেন😠
আলভী এবার মুখে আঙুল দিয়ে দিলো।
– কাল সকাল হতেই এই বাড়ি থেকে বিদায় হবেন।
– ইসস বললেই হলো!! শ্বশুরবাড়ি এদেছি কয়েকদিন থাকবো, জামাই আদর নিবো তারপর বউ সহ বিদায় হবো।
– এই ন্যাকামি গুলো আমার সামনে একদম করবেন না।
আলভী অর্থীর সামনে দাড়িয়ে ভুরু নাচিয়ে বললো,
– তাহলে কি করবো? রোমান্স নাকি ভালোবাসা কোনটা?
– আপনি একটা….. অসহ্য।
এই বলে অর্থী রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে লাগলো।
– আরে কোথায় যাচ্ছ?
– জাহান্নামে!!!! 😠
অর্থী রুম থেকে বেড়িয়ে এসে পাশের রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি তার মা পিছন থেকে বললো,
– কিরে অর্থী এই রুমে কি করছিস তুই।
– ঘুমোতে এসেছি।
– কিহ তোর রুম ছেড়ে এই রুমে কেন?
অর্থীর পিছনে পিছনে আলভীও বেড়িয়ে এসেছে রুম থেকে। সে পিছন থেকে বললো,
– আসলে আন্টি, আমি এখনো মা’কে ফোন ফোন করে জানাই নি যে আমি আজ এখানে থাকবো। রাত অনেক হয়েছে মা হয়তো চিন্তা করছে এখনো জানাই নি কেন তাই রাগ করে এই রুমে চলে আসছে।
– এ কেমন কথা অর্থী। এটুকু বিষয়ের জন্য রাগ করতে হবে। আলভী বাবা তুমি এখনি তোমার মা’কে ফোন করে জানিয়ে দাও।
আলভী ফোন বের করে তার মা’কে জানিয়ে দিলো যে সে অর্থীদের বাসায় আছে এবং থাকবে আজকে।
– অর্থী যা এখন তোর রুমে যা।
অর্থী দাড়িয়েই আছে।
– কি হলো যা….
অর্থী গাল ফুলিয়ে তার রুমে চলে গেলো।
– তুমি কিছু মনে করো না বাবা, আমার মেয়েটা একটু রাগী ও অভিমানি।
– জি আন্টি ( মনে মনে বললো, বড্ড অভিমানি)
.
আলভী রুমে এসে দেখে অর্থী দাড়িয়ে আছে। রাগে তার চেহারা লাল হয়ে আছে। আলভী রুমে ঢুকে আবার আগের মতো হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
অর্থী চোখ বাকিয়ে আলভীর দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে এই মুহূর্তে আলভীর মুখে মরিচ বেটে দিতে।
.
– কি হলো ম্যাডাম ঘুমোবেন না? নাকি দাড়িয়ে দাড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেওয়ার প্লান করছেন?
অর্থী কিছুই বললো না। আলমারী থেকে চাদর বের করে মেঝেতে বিছিয়ে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো।
অর্থীর রুমে সোফা নেই। অর্থীই রাখে নি, ওর রুমে চারিদিকে বই এর তাক। যা বই বিভিন্ন ধরনের বই দিয়ে ভর্তি। এখন অর্থী মনে মনে ভাবছে একটা সোফা থাকলেই ভালো হতো।
অর্থী যেই পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করেছে তখনি আলভী এসে তার পাশে শুয়ে পড়লো। অর্থী লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো,,
– আরে আরে করছেন কি? আপনি এখানে কেন শুচ্ছেন?
– তুমি এখানে কেন ঘুমোচ্ছ?
– আমার রুম আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুমাবো।
– তো আমার বউয়ের রুম আমিএ যেখাবে ইচ্ছা সেখানে ঘুমাবো তাতে তোমার কি?
অর্থী আলভীর কথা শুনে রাগে ফুসছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কারন অর্থী ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আলভীর সাথে তর্ক করে কিছু হবে না। তাই বাধ্য হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

আলভী অর্থীকে বিছানায় শুতে দেখে মুচকি হেসে সেও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর আলভী লক্ষ্য করলো অর্থী মাথায় হাত দিয়ে এপাশ ওপাশ করছে।
– মাথা ব্যাথা করছে?
আলভীর প্রশ্নে অর্থী কিছুই বললো না আলভীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার ওপাশ ফিরে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর অর্থী খেয়াল করলো আলভী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
অর্থী আলভীর দিকে ঘুরতেই দেখতে পেলো আলভী অর্থীর একদম কাছে এসে গেছে।
– আপনি……
আলভী অর্থীর ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বললো
– শিহহহ, একদম কথা বলবা না। চুপটি করে থাকো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
– দরকার…..
– চুপ করতে বলেছি না { একটু ধমক দিয়ে}
অর্থী জেন জানি আলভীর এই ধমক টা ভয় পায় তাই আর কিছুই বললো না। আলভী অর্থীর মাথা ধরে তার বুকের মাঝে রাখলো আর অর্থীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
অর্থী চুপ করে আছে। অর্থী আলভীর হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছে। ভালোই লাগছে তার। এভাবে কখন যে সে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো টেরই পেলো না।
.
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো, অর্থী দেখলো আলভী তার কোমড়ে হাত দিয়ে শক্ত করে তাকএ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। অর্থী নড়াচড়া করতে পারছে না, খুবই অস্বস্তি লাগছে তার।
একটু পরে আসতে করে তার কোমড় থেকে ধীরে ধীরে হাতটা সড়িয়ে দিতে চাইলে আলভী আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
অর্থী এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতে থাকলো।
– উফফ, এতো নড়াচড়া করছ কেন?
– ছাড়ুন আমাকে,
– ছাড়বো না
– দেখুন ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
আলভী অর্থীর কথা শুনে হেসে বলল,
– ঠিক আছে করো চিৎকার।
অর্থী আলভীর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আলভী মুচকি হেসে বললো,
– তোমার চিৎকারে কেউ আসবে না। বরং তোমার চিৎকার শুনে সবাই অন্যকিছু ভাবছে।
এই বলেই আলভী হাসতে লাগলো। আর অর্থী কিছুক্ষণ ভেবে লজ্জায় চুপ করে রইলো।
.
চলবে…..
.
লেখা -ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here