হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ১৪

#হলুদ_খামের_চিরকুট
১৪
.
অর্থী ওর মায়ের কাছে গেলো রান্নাঘরে।
– কিরে মা তুই এখানে কেন এলি?
– এমনি, ভাবলাম তোমাকে একটু সাহায্য করি।
– কোন দরকার নেই সাহায্য করার। যা তুই তোর রুমে যা। গিয়ে দেখ জামাই কি করছে।
– উফফ মা, এতো জামাই জামাই করো না তো। বাবা কখন আসবে?
– বিকেলের দিকে আসবে, ফোন করেছিল
– ওহ্।
– এখন যা তোর রুমে যা।
.
অর্থী রুমে এসে দেখে আলভী রুমে নেই হয়তো ওয়াশরুমে। অর্থী বিছানা গোছাচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
উনার আ ইচ্ছা তাই করবে নাকি! বিয়ে করলো, মন চাইলো ডিভোর্স এর কথা বলে রেখে গেলো আবার এখন প্রেম করতে আসছে, ঢং দেখে বাচি না । আমি কি রোবট নাকি, যখন যা বলবে তাই করতে হবে। আর মা’ও খালি জামাই জামাই করতেছে, আহা কি গুনধর জামাই রে।

আলভী ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে অর্থী বিছানা গোছাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে, তাই দেখে আলভী অর্থীর একদম পিছনে দাড়িয়ে ছিলো।
অর্থী পিছনে ঘুরতেই আচমকা আলভীর সআথে ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে গেলো। আলভীও অর্থীকে ধরতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে অর্থীর উপর পড়ে গেলো।
অর্থী ব্যাথা পেয়ে চেচিয়ে উঠতেই আলভী অর্থীর মুখে হাত দিয়ে বললো
– কি করছ কি! চেচাচ্ছ কেন? কেউ শুনতে পেলে কি ভাববে…..
– উঠুন
আলভীর মাথায় দুষ্টুমি চাপলো। সে অর্থীকে রাগানোর জন্য বললো,
– কেন? এভাবেই থাকি না ভালোই তো লাগছে।
– ছিঃ আপনি কতো অসভ্য।
এই বলে অর্থী আলভী কে ধাক্কা দিয়ে তার উপর থেকে সড়িয়ে উঠে গেলো। আর আলভী হাসতে লাগলো।
– নাস্তা করতে ডাকছে আপনাকে।
এই বলে অর্থী রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
সবাই নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। এমন সময় অর্থীর মা এর ফোনে কল এলো। তিনি কথা বললেন, কিন্তু তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। ফোনটা রাখার পর অর্থী জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে মা, তোমাকে এমন কেন দেখাচ্ছে?
– তোর বাবা ফোন করেছিল। তোর বাবার ছোটবেলার বন্ধু হঠাৎ করেই স্ট্রোক করে ভোরে মারা গেছে।
– ইন না লিল্লাহ! নাম কি মা?
– অনিক, তুই চিনবি না। অনিকের ওয়াইফ আমার দূর সম্পর্কের কাজিন হয়।
– তুমি কি যাবে?
– হ্যাঁ ভাবছি, বাড়িতে তুই আর আলভী বাবা তো আছেই। কি বাবা আজকে থাকবে তো?
– জি আন্টি সমস্যা নেই, আপনি যান।
.
অর্থীর মা নাসতা করে তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। আলভী তাকে এগিয়ে দিলো। এরপরে আলভী অর্থীদের বাসায় না গিয়ে তাদের বাসায় আসলো এসে সাওয়ার নিলো এরপর তার মা’কে বললো যে অর্থীর মা বাসায় নেই অর্থী বাসায় একাই তাই সে আবার যাবে। আলভীর সাথে কিছু কাপড়, ল্যাপটপ আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিলো। সেদিন সাদিকের বাসা থেকে সরাসরি অর্থীদের বাসায় যাওয়ায় এক কাপড়েই ছিলো।
আলভী অর্থীদের বাসায় পৌছুতে পৌছুতে বিকেল হয়ে গেছে। অর্থী বারান্দায় বসে বই পড়ছিল। আলভী কে বাইক নিয়ে গেটের ভিতরে ঢুকতে দেখে সে রুমের ভিতরে চলে গেলো।
আলভী রুমে এসে দেখে অর্থী পড়ছে। সে কোন কথা না বলে বিছানায় গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। অর্থী রুম থেকে উঠে বই নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো। আলভী কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু কিছুই বললো না।
আলভী কাজ করছিল বিছানার মধ্যে অর্থীর ফোন বাজছে। আলভী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফোন স্ক্রিন এ মিফতার নামটা ভেসে উঠছে। আলভী ফোন টা রিসিভ করলো,
– হ্যালো অর্থী…
– হ্যালো
– কে?আলভী ভাইয়া নাকি ?
– হুম, কেমন আছো?
– জি ভাইয়া ভালো। আপনার প্রেমের নাও কতদূর এগুলো?
– এখনও তীরেই আছে। তোমার বান্ধবী এগোতে দিলে না?
– এগোবে এগোবে…. আচ্ছা যে জন্য ফোন দিয়েছিলাম। অর্থীকে আগাম জন্মদিন এর শুভেচ্ছা জানিয়ে দিবেন আমার পক্ষ থেকে। আসলে আমি রাত বারোটা পর্যন্ত কখনো জেগে থাকতে পারি না, তাই…
– কাল অর্থীর জন্মদিন?
– হুম, কেন আপনি জানতেন না?
– না,
– ওহ্, আচ্ছা ওকে জানিয়ে দিয়েন যে আমি ফোন দিয়েছিলাম।
– ঠিক আছে।
.
আলভী ফোন রেখে দিয়ে ভাবছে, কাল ওর জন্মদিন। তাহলে তো স্পেশাল কিছু করতে হবে। কিন্তু কি করা যায় তাই ভাবতে ভাবতে আলভী বাসা থেকে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।যাওয়ার সময় অর্থীকে বলে গেলো তার ফিরতে রাত হবে। অর্থী কিছুই বললো না। তার রুমে এসে দেখলো বেড এর উপরে আলভীর ল্যাপটপ এবং সেটা ওপেন করা। অর্থী ল্যাপটপ টা অফ করতেই যাচ্ছিলো তখনই একটা মেইল আসলো। অর্থী কি মনে করে মেইল টা ওপেন করলো।
মেইল টা তে তাদের ডিভোর্স এর কথা লেখা। এবং সেপারেশন লেটার এর বিষয়ে। মেবি কোন লয়ার পাঠিয়েছে। মেইলটা দেখে নিজের অজান্তেই কেদে দিলো অর্থী। এরপর ল্যাপটপ যেভাবে ছিলো সেভাবেই রেখে দিলো।
.
আলভীর আসতে একটু রাত হলো। রাত তখন ৯:৩০
বাসার গেইট এ কলিংবেল বাজাতেই কাজের মহিলাটি দরজা খুলে দিলো। আলভীর হাতে অনেক ব্যাগ ও তাতে অনেক কিছু আছে। আলভী কাজের মহিলাকে অর্থীর কথা বলতেই সে বললো অর্থী খাওয়া না করেই ঘুমোচ্ছে।
আলভী ভাবছে এতো জলদি ঘুমিয়ে পড়লো।
অর্থী কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আলভী অর্থীর রুমে এসে দেখে অর্থী নেই। তারমানে অর্থী অন্য রুমে ঘুমিয়েছে। আলভী এটা ভেবে খুশিই হলো, তাহলে নিশ্চিন্তে সারপ্রাইজ এর প্লান অনুযায়ী রুমটা ডেকোরেট করা যাবে। আলভী সব জিনিস রুমে রেখে দেয়। অর্থী পাশের রুমটায় ঘুমোচ্ছিল।
আলভী অর্থীর কাছে এসে দেখে অর্থী ছোট বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওর মুখটা অনেক ফ্যাকাশে হয়ে আছে। আলভীর ইচ্ছে করছিলো ওকে ছুয়ে একটু আদর করার, কিন্তু ও যদি জেগে যায়।
আলভী রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কি মনে করে ফিরে এসে অর্থীর কপালে আলতো করে চুমু দিলো। এরপরে রুম থেকে বেড়িয়ে কাজের মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললো,
– চাচি আপনি তো রাতে মনে হয় এখানে থাকেন না?
– না বাবা থাকি না, আমার বাসা এই সামনেই রাস্তার ওপাশে । অর্থীমনি বললো আজ থেকে যেতে তাই।
– ওহ্, সমস্যা নেই চাচি আপনি বাসায় যান আমি আছি তো। চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
– না না বাবা সমস্যা নেই, আমি যেতে পারবো। সামনেই তো বাসা। তবে তোমাদের রাতের খাবার….
– অর্থী ঘুম থেকে উঠলেই আমরা দুজনেই খেয়ে নিবো।
.
কাজের মহিলা চলে গেলে আলভী রুমে এসে পুরো রুম মোমবাতি দিয়ে সাজালো, কেক টেক সব সাজানো হয়ে গেলে ঘড়িতে তখন ১১: ৪৭ বাজে।
– যাক সব সময় মতো হয়ে গেছে।
আলভী পাশের রুমে গিয়ে অর্থীকে খুবই সাবধানে কোলে নিলো যাতে ওর ঘুম না ভাঙে। অর্থী ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই টের পায় নি।
আলভী অর্থীকে তার রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, এক দৃষ্টিতে অর্থীর দিকে তাকিয়ে রইলো। ঘড়িতে যখন ১২:০০ টা বাজে তখন পাশের টেবিলে থাকা ঘড়িটাতে এলার্ম বেজে উঠলো। আলভী এলার্ম সেট করে রেখেছিল।
এলার্ম এর শব্দে অর্থীর ঘুম ভেঙে গেলো এবং সে ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো চারপাশে মোমবাতির আলো আর আলভী তার সামনে বসে আছে।
অর্থী আলভীর দিকে তাকালে আলভী অর্থীর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
– শুভ জন্মদিন অর্থী।
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here