হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ১১

#হলুদ_খামের_চিরকুট
১১
.
– প্লিজ নামটা মনে করুন
– ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে, ওর নাম অদ্রিতা জান্নাত।
– অদ্রিতা!!! ওর কোন ঠিকানা বা অন্য কিছু?
– ওই দুজনের একজনের নাম অদ্রিতা জান্নাত। শুধু এতটুকুই মনে আছে। আর ঠিকানা এর কথা বলতে পারছি না আমি, তেমনভাবে চিনি না।
– এটুকুর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

এই বলে আলভী চলে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। এখন আলভী তার বন্ধু সাদিকের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ঘটনাটা ২০১৪ সালের । সালটা স্পষ্ট ভাবে মনে আছে আলভীর যখন সে চিরকুট টা পেয়েছিল। আলভী মনে মনে ভাবছে তবে কি আমি আমার অপরিচিতাকে খুজে পাবো। নিজে নিজেই ভাবছে আর মনে মনে হাসছে। হয়তো এতোদিনের অপেক্ষার শেষ হতে চলেছে, খুজে পেতে চলেছি আমি সেই অপরিচিতাকে।

আলভী ভাবছে, সাদিকের বোনও সেইসময় ক্লাস নাইনেই পড়তো মেবি.। তাইতো সাদিক অর্থীকে চিনে। অর্থীর কথা মনে হতেই কিছুটা বিষন্ন হলো আলভী।

সাদিকের বাসায় গিয়ে পৌছালো। সাদিক বাসাতেই ছিলো। আলভী কে দেখে অনেক অবাক হলো কারন যেই বন্ধুকে আজ পর্যন্ত টেনে হিচরেও তার বাড়িতে আনতে পারে নি সেই বন্ধু আজ তার বাসায় তাও আবার ভর দুপুরে।
– আলভী তুই? আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে। তোর পদার্পণ আমার বাড়িতে।
– হ্যাঁ আমি, কেন আমি তোর বাসায় আসতে পারি না।
– আজ পর্যন্ত তো এলি না। আচ্ছা আয় ভিতরে আয়।
আলভী ভিতরে গিয়ে বসে। সাদিক তার মাকে নাস্তা দিতে বলতেই,
– নাস্তা টাস্তা পরে, আমি এক দরকারে এসেছি।
– দরকারে তাইতো বলি আজ হঠাৎ তুই আমার বাসায় কেন। আচ্ছা বল কি দরকারে?
– দরকারটা তোর কাছে নয় তোর বোন মিফতার কাছে।
– মিফতার কাছে (অবাক হয়ে) কাহিনী কি খুলে বল তো।
– সব বলছি তুই আগে মিফতা কে ডাক প্লিজ।
সাদিক মিফতাকে ডাকার জন্য কাজের লোককে বলে আলভী কে বললো,
– এবার বল কি কাহিনী?
আলভী প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব খুলে বললো। আলভী ল্র কথা শুনে সাদিকের চোখ ছানাবড়া
– তুই এখনো সেই চিঠির পিছনে পরে আছিস,!!!! আলভী, তোর মাথা তো ঠিক আছে। বিয়ে হয়েছে তোর, অর্থী যদি এসব জানতে পারে তাহলে কতটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছিস?
– আমি অর্থীকে ডিভোর্স এর কথা বলেছি
– কিহহ!!!!”!
– হ্যাঁ, আর আমার মনে হয় অর্থীও তাই চায়।
– ও কি তোকে বলেছে ও তাই চায়।
– না তবে আমার মনে হয় ও এটাই চায়।
এরই মধ্যে সাদিকের বোন মিফতা চলে এলো।
– ভাইয়া তুমি ডেকেছিলে?(আলভীর দিকে চোখ যেতেই) আরে আলভী ভাইয়া যে? কেমন আছেন ভাইয়া?
আলভী কোন ভণিতা না করেই বললো,
– আমার তোমার কাছে একটু হেল্প লাগবে মিফতা?
– জি ভাইয়া বলেন, কি হেল্প।
– আচ্ছা তোমার সাথে স্কুলে ক্লাস নাইনে অদ্রিতা জান্নাত নামে কেউ পড়তো?
– অদ্রিতা (একটু ভেবে) হ্যা পড়তো তবে অন্য সেকশনে।
– প্লিজ ওর নাম্বারটা একটু জোগাড় করে দিতে পারবা,?
– নাম্বার!!!! ফ্রেন্ড দের কাছ থেকে খোঁজ নিতে হবে। আমার কাছে তো নেই, তাদের কাছে থাকতে পারে।
– প্লিজ এখনি খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবা?
– এখনি??!!!(একটু অবাক হয়ে)
– হ্যাঁ, খুবই দরকার। প্লিজ।
মিফতা আলভীর কথার কিছুই বুঝতে পারছে না। কেন সে এভাবে অদ্রিতার নাম্বার চাইছে তবুও বললো,
– আচ্ছা আমি আমার ফ্রেন্ড দের ফোন করে জানাচ্ছি।
.
মিফতা একে একে তার স্কুল লাইফের সব ফ্রেন্ড দের ফোন দিচ্ছে আর অদ্রিতার নাম্বার চাচ্ছে।
আলভী আর সাদিক বসে আছে। সাদিক আলভী কে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু বললো না কারণ সে জানে এখন যাই বলুক না কেন আলভী কিছুই শুনবে না, এর আগেও অনেক বুঝিয়েছে আলভী কে কিন্তু কোন লাভ হয় নি, আলভী কিছুই শুনে নি। তাই চুপ করে শুধু দেখছে।

মিফতা তার কোন এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে অদ্রিতার নাম্বার পেলো। অদ্রিতার নাম্বার পাওয়া মাত্রই আলভী সেই নাম্বারে ফোন দিতে নিলো কিন্তু সাদিক আলভীকে থামিয়ে দিলো।
– শুন, এতো তাড়াহুড়ো করার কোন দরকার নেই। হতে পারে আননোন নাম্বার দেখে মেয়েটা পারসোনাল কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর নাও দিতে পারে।
আলভী ভেবে দেখলো সাদিক ঠিক বলছে।
– তাহলে কি করবো?
– এক কাজ কর, মিফতা কথা বলুক আগে। মিফতাকে চিনে যেহেতু। তোর যা যা জানার আছে বা কথা বলার আছে সেগুলো মিফতাই জিজ্ঞেস করবে। তারপরে নাহয় তুই কথা বলিস।
– হুম এটাই ঠিক হবে মনে হচ্ছে।
এরপর আলভী মিফতাকে বুঝিয়ে দিলো কি কি জিজ্ঞেস করবে সে অদ্রিতাকে। মিফতা আলভীর কথা শুনে অবাক হচ্ছে। এসব কেন জানতে চাচ্ছে আলভী কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

মিফতা অদ্রিতাকে ফোন দিলো। দুবার রিং হবার পর রিসিভ হলো।
মিফতা অদ্রিতাকে প্রথমে তার পরিচয় দিয়ে কেমন আছে না আছে তা জিজ্ঞেস করে বললো,
– আচ্ছা অদ্রিতা, ক্লাস নাইনে থাকাকালীন তুমি কি কোন সাহিত্য কন্টেস্টে অংশ নিয়েছিলে?
– উমমম, ক্লাস নাইনে………. হ্যাঁ নিয়েছিলাম অংশ। কেনো বলো তো?
– না তেমন কিছু না। আচ্ছা তুমি কি লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর হিমু সিরিজের কোন গল্প পড়েছ?
– আরে ধুর, ওইসব পড়ার মতো আমার ধৈর্য নেই। পাঠ্যবই পড়ার মতোই ধৈর্য নেই আর এসব দূরে থাক।
– তাহলে সাহিত্য কন্টেস্টে অংশ…..?
– আরে আমাদের সেকশন থেকে কেউ পার্টিসিপেট করছিল না তাই নাম দিয়েছিলাম
– ওহ্। আচ্ছা ক্লাস নাইন থেকে আরেকজন পার্টিসিপ্যান্ট করেছিল না???
– হ্যাঁ, তোমাদের সেকশন থেকে একজন!
– আমাদের সেকশন থেকে………
– আরে ওই যে কি যেনো মেয়েটার নাম। ওই যে খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করে যেই মেয়েটা।….. অর্থী অর্থী
– অর্থী……
মিফতা স্পিকারে রেখে অদ্রিতার সাথে কথা বলছিল, সাদিক এবং আলভীও তাদের কথোপকথন শুনছিল।
অর্থীর নাম শুনে যতটা না সাদিক অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে আলভী।
আলভী মনে মনে ভাবছে যে তারমানে অর্থী সেই অপরিচিতা যাকে সে এতোদিন থেকে খুজছে! আর সেই অপরিচিতার সাথেই তার বিয়ে হয়েছে অথচ আলভী……
আলভী মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে
– সে আমার সাথেই ছিলো। এতোটা কাছে থেকেও আমি সেই অপরিচিতা কে চিনতে পারি নি।
মিফতা অদ্রিতার সাথে কথা বলা শেষ করে বললো,
– কেউ আমাকে বলবেন প্লিজ, এসব কি হচ্ছে?/?

সাদিক আলভী কে বললো,
– কিরে কি ভাবছিস এভাবে মাথায় হাত দিয়ে। যাকে এতোবছর থেকে খুজছিলি তাকে তো পেয়েছিস। অর্থীই সেই মেয়ে।
আলভী সাদিক এর কথায় মাথা তুলে বললো,
– অর্থীতো চিরকুট টা পরেছে। তারমানে সে জানতো যে অর্থীই নিজেই সেই মেয়ে যাকে আমি এতোবছর থেকে খুজছি। তাহলে ও চুপচাপ ছিলো কেন?
– কেউ প্লিজ আমাকে বলো কি হয়েছে? ( প্রায় চেচিয়ে বললো মিফতা)
মিফতার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্থী। তাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

আলভী চুপ হয়ে চিন্তা করছে অর্থী এটা জানার পরও কেন চুপ ছিলো। সাদিক মিফতাকে পুরো ঘটনা খুলে বললো, আলভীর চিরকুট পাওয়া থেকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা পর্যন্ত।
মিফতা পুরোটা শুনে কিছুক্ষণ ভাবার পর বললো,
– সর্বনাশ
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here