হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ১০

#হলুদ_খামের_চিরকুট
১০
.
অর্থী রুমে এসে ব্যাগ গোছাচ্ছিল। তখন আলভী এসে বললো,
– তুমি কি সত্যিই, আজকেই যেতে চাইছ?
– কি মনে হয় আপনার!
আলভী আর কিছুই বললো না। অর্থী চুপচাপ রেডি হয়ে রইলো।
তারা রওনা দিলো অর্থীর বাবার বাসার উদ্দেশ্যে।
বাসায় পৌছেই অর্থী তার মা’কে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো। আলভী সাথেই ছিলো। আলভী ভাবছে হয়তো এতদিন পর তার মায়ের সাথে দেখা হয়েছে তাই এভাবে কাদছে।
.
– আলভী, আসো বাবা ভিতরে আসো।
– না আন্টি৷ আমার কাজ আছে। আমি আসলে অর্থীকে দিতে আসলাম।
– এ কেমন কথা আলভী!! তুমি এ বাড়ির জামাই আজ প্রথম আমাদের বাসায় এসেছ। তোমাকে দরজা থেকেই যেতে দিবো নাকি!!
– মা উনাকে যেতে দাও। উনার সত্যিই অনেক গুরূত্বপূর্ণ কাজ আছে।
অর্থী কথাটি বলার সাথে সাথেই আলভী অর্থীর দিকে তাকালো।
– অর্থী তুই চুপ কর। দেখো বাবা কাজ আছে বুঝলাম। কিন্তু তুমি যদি এভাবে দরজা থেকেই চলে যাও তাহলে অর্থীর আব্বু খুব রাগ করবে। অন্তত পক্ষে কিছু মুখে তো কিছু দিয়ে যাও।
আলভী আর না করলো না।
অর্থী বাসার ভিতরে প্রবেশ করেই তার রুমে চলে গেছে।
অর্থীর মা আলভী কে নাস্তা দিতে দিতে বললো,
– বাবা, কাল যখন অর্থী ফোন করে বললো সে আজ আসবে, তারপর তোমার বাবাকে অর্থীর বাবা ফোন দিয়েছিল। অর্থী ওর পরীক্ষা পর্যন্ত এখানেই যেহেতু থাকবে আমরা চাচ্ছিলাম ওর পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আর তোমার ছুটি শেষ হওয়ার আগে, আমাদের বাসায় একটা ছোট অনুষ্ঠান করতে। আসলে বিয়েটা এমনভাবে হয়েছে আমাদের কোন আত্মীয় স্বজন ছিলো না, তাই আরকি এই অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছি। তোমার বাবাও এতে রাজি হয়েছেন। ততদিন নাহয় অর্থী আমাদের এখানেই থাক।
– জ্বি আন্টি।

আলভী থাকাকালীন অর্থী এক মুহূর্তের জন্য রুম থেকে বের হয় নি। আলভী বেড়িয়ে আসার আগে বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল হয়তো অর্থীকে খুজছিলো। আলভী চলে গেলে অর্থীর মা অর্থীর রুমে গিয়ে দেখে সে শুয়ে আছে। তিনি অর্থীর পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– কি রে মা এই অবেলায় শুয়ে আছিস যে? অর্থী তার মায়ের কোলে মাথা রেখে কেদে দিলো।
– কি রে কাদছিস কেন? কি হয়েছে?
– মা তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিল।
– এই বলে কাদতে হবে বোকা মেয়ে। প্রত্যেক মেয়েকেই তার বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয় এটাই নিয়তি।
অর্থী আর কিছুই বলছে তার মায়ের কোলে চুপটি করে শুয়ে আছে আর তার মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
.
সারাদিন শুয়েই ছিলো অর্থী। রাতে খেতে ইচ্ছে করছিলো না তার তবুও তার মায়ের জন্য খেতে হলো। তার বাবা বাসায় নেই য়ার দাদু বাসায় গেছে। অর্থী খাওয়া করে এসে শুয়ে পড়েছে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তার ছিটেফোটা যেনো অর্থীর মনে বর্ষিত হচ্ছে।
.
এদিকে আলভীও রুমের ভিতর ছটফট করছে। ঘুম আসছে না তার। মনে মনে ভাবছে অর্থীর সাথে ঝগড়া করে ঘুমোতে যাওয়াটা প্রতিদিনের অভ্যেস হয়ে গেছে তাই হয়তো এমন লাগছে। মিস করছি মেয়েটাকে, তার আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করাটাকে।
এই বলে হেসে উঠলো আলভী।
.
পরেরদিন অর্থী রুমের মধ্যে বসে আছে। ওর মায়ের ফোন ওর কাছেই ছিলো। ওর নায়ের ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। অর্থী রিসিভ করে ওপাশ থেকে “হ্যালো ” বলা কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারলো, এটা মুমু।
– কেন এখানে ফোন করেছ আপু?
– অর্থী তুই, কেমন আছিস। জানিস তোর নতুন নাম্বার টা কতবার যে খালামনির কাছে চেয়েছি। কেমন আছিস তুই?
– কেমন থাকা উচিত আমার?
– দেখ আমি সত্যি ধারণা করি নি যে আমার জায়গায় তোকে এই বিয়েটা করতে হবে। আমি যদি জানতাম…..
– যদি জানতে যে এমন হবে তাহলে কি পালাতে না?
মুমু কিছুই বলছে না। নিশ্চুপ হয়ে আছে।
– কি হলো আপু উত্তর দেও। বলো যদি জানতে এমনটা হবে তাহলে কি পালাতে না! তুমি একটিবার অন্তত তোমার পছন্দের কথা তোমার বাবাকে জানাতে।
– আমি জানতাম বাবা কখনো রাজি হতো না। তাই…
– তাই পালিয়েছ তাই তো। তুমি নিজেই ধারণা করে নিয়েছ যে খালু আব্বু রাজি হবে না আর সেই ধারনার উপর ভিত্তি করে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছ পালিয়ে যাওয়ায় । একবার অন্তত বলে তো দেখতে রাজি হয় কি না। তোমার বাবার সারাজীবনের একটু একটু করে গড়ে ওঠা সম্মানের পাহাড়টা তুমি এক নিমিষেই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছ। তোমার বাবা মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসার খুব ভালো প্রতিদান দিয়েছ তুমি। তুমি তো সুখেই আছো তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। মাঝখান থেকে আমি, আমার বাবা মা, তোমার বাবা মা ভুক্তভোগী হলাম।
(ফোনের ওপাশ থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে)
আর কি যেনো বললে আপু তুমি, আমি কেমন আছি? ভালো নেই আমি। একটুও ভালো নেই (কাদতে কাদতে) ভালো থাকতে পারছি না। ভালো থেকো।
এই বলে ফোন কেটে দিলো অর্থী। কআন্না করছে, আজকাল বোধহয় তার চোখের পানিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে।
.
এদিকে আলভী বেড়িয়ে পড়েছে আবার সেই মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য। ভেবেছিল আর কখনো দেখা করবে না তার সাথে কিন্তু কাল রাতে সেই মেয়ে ফোন করে বললো খুব জরুরী কথা আছে তার সাথে৷ সেদিন যখন গিয়েছিল দেখা করতে, আলভী আর তার বন্ধু আসিফ একটি রেস্টুরেন্ট এ মেয়েটি তার প্রেমিক এর সাথে বসে ছিলো। তারা গিয়ে তাদের টেবিলে বসলে মেয়েটি তার প্রেমিক এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।
সাথে সাথেই আলভী সেদিন সেখান থেকে চলে এসেছিল। এক মুহূর্ত থাকে নি সেখানে।
আজ আবার কেন ডেকেছে মেয়েটা সেটাই ভাবছে আলভী। মেয়েটির বলা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখে মেয়েটি একটি টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে। আজ সে একা। মেয়েটির নাম হিয়া।
আলভী গিয়ে মেয়েটার সামনে দাড়াতেই মেয়েটা বললো,
– আলভী সাহেব, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। প্লিজ বসুন, সেদিন ওভাবে চলে গেলেন যে?
– হ্যা আসলে, সেদিন..৷ সরি সেদিন ওভাবে চলে যাওয়ার জন্য।
– ইট’স ওকে। আপনাকে কিছু বলার ছিলো।
আপনি যেই চিঠিটার কথা বলেছিলেন সেই চিঠির হাতের লেখাটা আমার’ই। আমি লিখেছিলাম, তবে কথাগুলো আমার নয়।
– কি বলতে চাইছেন একটু খুলে বলবেন?
– ক্লাস টেনে থাকাকালীন আমাদের কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে সাহিত্য কন্টেস্টে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের গ্রুপে ক্লাস নাইনের দুইজন মেয়ে ছিলো, তাদের মধ্যে একজন হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর হিমু সিরিজের এতটাই ভক্ত ছিলো যে নিজেকে সবসময় রুপা ভাবতো। আর অনেক আবেগ নিয়ে হিমুকে নিয়ে লিখতো। তারই একটি লেখা মজা করে আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে চিঠি হিসেবে লিখেছিলাম। যেটা এখন আপনার কাছে আছে।
আলভী এতক্ষণ কৌতুহল নিয়ে মেয়েটার কথা শুনছিলো।
– নাম কি তার?
– নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। মেয়েটার সাথে আর দেখাও হয় নি। এস এস স্যার পর আমি রাজশাহি চলে যাই।
– প্লিজ নাম’টা একটু মনে করুন!!
– ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে। মেয়েটার নাম হলো অদ্রিতা জান্নাত।
.
(চলবে)
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here