#হলুদ_খামের_চিরকুট
৯
.
অর্থী আলভীর মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলো আলভীর জ্বর।
অর্থী আলভীর গায়ে কাথা দিয়ে দিলো এরপর জলপট্টি দিতে লাগলো।
আলভী তখনও জ্বর এর ঘোরে নাকি নেশার ঘোরে বিড়বিড় করেই যাচ্ছে। অর্থী জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে কপালে হাত দিয়ে দেখছে জ্বর কমেছে কি না। অনেক্ষন থেকে জলপট্টি দেওয়ার পরও জ্বর কমার কোন লক্ষণ নেই। তাই অর্থী ভাবলো হয়ত মাথায় পানি ঢাললে শরীরের তাপমাত্রা একটু কমবে। অর্থী বালতিতে করে পানি আনার জন্য উঠে দাড়াতেই আলভী অর্থীর হাত টেনে ধরে কি যেনো বিড়বিড় করছে। আলভী কি বলছে শুনার জন্য অর্থী আলভীর দিকে একটু ঝুকে বসলো, কিন্তু আলভী কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। আলভীর কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অর্থী বালতিতে করে পানি আনতে গেলো।
আলভীর মাথায় কিছুক্ষণ পানি ঢালার পর অর্থীর মনে হলো জ্বর কিছুটা কমেছে। অর্থী আলভীর মাথার কাছে বসে বসা অবস্থাতেই আলভীর মাথার কাছে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
.
সকালে আলভীর ঘুম ভাঙলে দেখলো তার মুখে চুল । চোখ খুলে দেখে অর্থী তার মাথার কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে, চুলগুলো আস্তে করে সড়িয়ে দিলো। এরপর তার গায়ে চাদর ও বেডের পাশে রাখা বালতি মগ দেখে বুঝতে পারলো যে তার জ্বর এসেছিলো এবং অর্থী রাত জেগে তার মাথায় পানি ঢেলেছে। কিছুক্ষণ অর্থীর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে আলভী অর্থীর চেহারায় পড়া চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিলো । এতে অর্থী কিছুটা কেপে উঠে চোখ খুললো । আলভী সাথে সাথে চোখ বন্ধ করলো। অর্থী আলভীর কপালে হাত দিয়ে দেখছে জ্বর আছে কি না। জ্বর নেই দেখে অর্থী কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। এরপর নাস্তা তৈরী করতে রান্নাঘরে চলে গেলো।
.
নাস্তা রেডি করে রুমে এসে দেখে আলভী বিছানায় নেই। তারমানে সে উঠেছে।
.
দুজনে টেবিলে সামনাসামনি বসে নাস্তা করছে, কারও মুখে কোন কথা নেই। পুরো বাড়িতে নিরবতা কাজ করছে।
কিছুক্ষণ এভাবে যাওয়ার পর আলভী বললো,
– অর্থী কাল……
এই প্রথম আলভীর মুখে নিহের নাম শুনে একটু অবাক হয়েই আলভীর দিকে তাকালো অর্থী। আলভীর চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো,
– সাদিক ভাইয়া আপনাকে দিয়ে গেছে কাল রাতে।
তারপর আবার কিছুক্ষণ নিরবতা। এবার অর্থী বললো,
– খুব ভালোবাসেন সেই অপরিচিতাকে তাইনা? যে আপনাকে সেই চিঠিটা দিয়েছে।
অর্থীর মুখে চিঠির কথা শুনে আলভী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে অর্থী কিভাবে সেই চিঠির কথা জানতে পারলো। তার পরক্ষনেই মনে পড়লো যে অর্থী চিঠিটা নিয়েছিলো। আলভী অর্থীর প্রশ্নের উত্তরে শুধু এতটুকুই বললো
– হয়তো……..
এই “হয়তো ” শব্দটার মধ্যে এক তীব্র আর্তনাদ ও চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে তা অর্থী খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো।
.
আলভী রুমের ভিতর জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে আর এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থী রুমে ঢুকে বললো,
– মা বাবা রওনা দিয়েছে। কথা হয়েছিলো তাদের সাথে।
আলভী অর্থীর কথা শুনতে পেলো। তবে পিছন ফিরে তাকালো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– তোমার চলে যাওয়া উচিৎ।
অর্থী আলভীর কথায় কিছু বুঝতে পারলো না।
– আপনি কি আমাকে কিছু বললেন?
– না কিছুনা।
.
আলভী প্রতিদিনের মতো আজও বেড়িয়ে গেলো। বিকাল নাগাদ অর্থীর শ্বশুর শাশুড়ি বাড়ি এলো।
রাতে অর্থী রুমে বসে বই পড়ছিল তখন আলভী রুমে এলো। আলভী রুমে আসতেই অর্থী উঠে দাড়ালো আলভীর জন্য খাবার নিয়ে আসার জন্য।
– আমি খেয়ে এসেছি।
অর্থী আবার আগের জায়গায় বসে বই পড়তে লাগলো। আলভী রুমের ভিতর কিছুক্ষণ পায়চারি করে বসে পড়লো। অর্থী আলভীর দিকে আড়চোখে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে।
– তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো,
– জ্বি বলুন,
– আমার এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই। তোমার কাছে এই বিয়েটা যেমন আন এক্সেপ্টেড আমার কাছেও। আমি বিয়েটা করতে চাই নি আর তোমার ক্ষেত্রে বিয়েটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি জানি তুমিও এই বিয়েটা মন থেকে মেনে নিতে পারো নি। তাই আমার মতে আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত।
আলভী নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো। অর্থী এক দৃষ্টিতে আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখে পানি টলমল করছে।
আলভী আবার বললো,
– আমার ডিভোর্স চাই।
এটা বলে সে অর্থীর দিকে তাকালো আর অর্থী দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলো। অর্থী কেদেই চলছে। সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে কাদতে লাগলো যাতে তার কান্নার আওয়াজ বাইরে না যায়।
আলভী কিছুই বুঝলো না। কেন অর্থী এভাবে দৌড় দিলো।
অর্থী যে তার চোখের পানি লুকাতে দৌড় দিয়েছে তা আলভীর অজানাই রয়ে গেছে। প্রায় এক ঘন্টা পর অর্থী ভেজা অবস্থায় ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
অর্থীকে এইভাবে দেখে আলভী অবাক হয়ে আছে।
– অর্থী তুমি…..৷
অর্থী হাত দেখিয়ে আলভীকে থামিয়ে দিয়ে নিজের মনকে শক্ত করে বললো,
– আমি ঠিক আছি। ঠিক আছি আমি। আমাকে কাল সকালে আমাদের বাড়িতে রেখে আসবেন। আর মুক্তি চাই আপনার? দিলাম মুক্তি। সেপারেশন লেটার পাঠিয়ে দিবেন আমাদের বাসায়।
– কিন্তু……
– চিন্তা করবেন না, যতদিন আমাকে সেপারেশন লেটার পাঠাবেন না কেউ কিছুই জানবে না।
এবার আলভী চুপ হয়ে অর্থীর দিকে তাকিয়ে আছে।
আলভী কখনো অর্থীকে ভালো করে লক্ষ করে নি। আজ যেনো ভিজে শরীরে এক মায়াবতীকে দেখছে তার চোকের সামনে। যার কপাল থেকে পানি গড়িয়ে চিবুক পেরিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করছে। এতটাই মুগ্ধতা যে হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে ।
অর্থী ভিজে শরীরেই আলমারি থেকে কাপড় বের করে আবার ওয়াশরুমে গেলো কাপড় চেঞ্জ করতে।
কাপড় চেঞ্জ করে অর্থী রুমে এসে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।
.
আলভীও চুপচাপ বিছানায় শুয়ে ভাবছে যেই মে সোফায় শোয়ার কথা বললেই ঝগড়া শুরু করে সে আজ নিজেই সোফায় শুয়ে পড়লো। আর ও এতো স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু মেনে নিলো!!!
হয়তো সেও মনে মনে এটাই চায়।
.
অর্থী সোফায় একপাশে ফিরে শুয়ে কাদছে আর ভাবছে (হ্যাঁ, বিয়েটা আমার জন্য আনএক্সেপ্টেড ছিলো। কিন্তু আমিতো এমনটা চাই নি। আমি তো মেনে নিয়েছিলাম এই বিয়েটাকে।)
.
সারারাত একজন বিছানায় এপাশ ওপাশ করে আর একজন সোফায় বালিশ ভিজিয়ে রাত পার করলো।
.
ভোরে আলভী নামাজ পড়তে উঠে দেখে অর্থী বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আলভী অর্থীর কাছে গিয়ে বললো,
– অর্থী তুমি যেতে চাইছো ঠিক আছে। কিন্তু বাবা মা’কে
– চিন্তা করবেন না। বাবা মা’কে কিছু একটা বলে আমি বুঝিয়ে বলবো।
.
নাস্তা বানানোর সময় অর্থী তার শাশুড়ি কে বললো,
– মা ‘ আমার পরীক্ষার তো আর কয়েকটা দিন বাকি। আমি চাচ্ছিলাম যে….
– হ্যাঁ বল,
– আমি চাচ্ছিলাম আমার বাবা বাসা থেকে পরীক্ষা দিতে।
– হুম, ঠিক আছে। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিও। আমি আলভীর বাবাকে বুঝিয়ে বলবো।
– আমি আজকেই যেতে চাচ্ছি।
এটা বলেই অর্থী কেদে দিলো।
– আজকেই!৷ এই দেখো পাগলি মেয়ে কাদছ কেন? আচ্ছা বুঝেছি বাবা মা য়ের সাথে দেখা করতে মন চাইছে তাই তো।
এটা বলতেই অর্থী তার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
অর্থীর শাশুড়ি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।
– আচ্ছা আমি আলভী কে বলবো আজকেই যেনো তোকে নিয়ে যায় তোর বাবার বাসায় কেমন। এবারতো কান্না থামাও। পাগলি একটা,
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে