হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ পর্ব -০৪

#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

শামিমা রুমে আসতেই ললিত তার দিকে একটি পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘নাও এই পেপারে সাইন করে দাও।’

শামিমাঃকিসের পেপার এটা?

ললিতঃডিভোর্স পেপার। কি এটাই ভাবছ তো? তাহলে ভুল ভাবছ আমার কোন ইচ্ছা নেই তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার। আমি শুনলাম তোমার বাবা তার সম্পত্তির একটা অংশ তোমার নামে লিখে দিয়েছে। এটা হলো সম্পত্তি পেপার। তুমি তোমার সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দাও।

শামিমাঃআপনি কি করে ভাবলেন যে আপনার মতো মানুষের হাতে আমি,,,,

শামিমা কথা বলা শেষ করার আগেই ললিত শামিমার গলা টি’পে ধরে। শামিমা অনেক চেষ্টা করে ললিতকে সরানোর। ললিত একসময় শামিমাকে ছেড়ে দেয়।

ললিতঃতুই আমার কথা যখন শুনবি না তখন আমাকে অন্য পথ দেখতে হবে। তোর বোনকে কাজে লাগিয়ে আমি কি করি শুধু দেখ একবার।

শামিমাঃআমি আপনাকে আর কোন কিছু করার সুযোগ দেবো না। আমাকে আপনি চেনেন না। আমি যতদ্রুত সম্ভব আপনাকে তালাক দেব। আমি চেয়েছিলাম আপনাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনব। কিন্তু এখন উপলব্ধি করতে পারছি আপনি নিজেই একটা শ’য়তান। আর শ’য়তানকে কোনদিনও ভালো করা যায়না।

ললিতঃতাই কর। আমায় ডিভোর্স দিয়ে দে। তারপর আমি তোর বোনকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে যাব। তুই তো জানিস তোর বোনের উপর আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। বড়জোর দুদিন সংসার করব। আর তারপর,,,,

শামিমাঃআমি এসব কিছুই হতে দেবো না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।

৭.
সুমি বসে বসে মেকআপ করছিল। হুট করে ললিত পেছন থেকে এসে সুমিকে ডাকে। সুমি পিছনে ফিরে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
‘ললিত তুমি এসেছ?’

ললিতঃআমাকে তো আসতেই হতো সুমি। তুমি জানো শামিমা যা বলছে সব মিথ্যা। তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে কোনদিন চোখ তুলেও তাকাই নি। আর ঐ শামিমা আমার নামেই কিসব বলছে। তুমি কিন্তু ঐ মেয়েটাকে একদম বিশ্বাস করবে না।

সুমিঃআমি বিশ্বাস করতেও চাইনা। আমি শুধু তোমায় বিশ্বাস করি। তুমি আমার আপুকে ডিভোর্স দিয়ে আমায় বিয়ে করে নাও। আমি যে আপুর পাশে তোমাকে মেনে নিতে পারছি না।

ললিতঃআমি তো তাই বলছি। কিন্তু আমার যে তোমার একটা সাহায্য প্রয়োজন। তুমি সাহায্য করলেই আমি শামিমাকে তালাক দিয়ে তোমায় বিয়ে করতে পারব।

সুমিঃবলো আমায় কি করতে হবে। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।

ললিতঃএই পেপারে তোমার বাবার একটা স্বাক্ষর নিয়ে আসতে হবে। পারবে তো?

সুমিঃএটা কিসের কাগজ?

ললিতঃতুমি এত প্রশ্ন করো কেন? আমার উপর কি তোমার একটুও বিশ্বাস নেই নাকি আমাকে তুমি একটুও ভালোবাসো না।

সুমিঃআমি তোমায় বিশ্বাস করি ললিত। আমি তোমার কথামতোই কাজ করব।

সুমির কথা শুনে ললিত শ’য়তানী হাসি হাসে। আর মনে মনে বলতে থাকে,
‘কত বোকা তুমি সুমি। তোমাকে কাজে লাগিয়ে যে আমি নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছি তুমি কোনদিন সেটা বুঝতেও পারবে না।’

সুমিও মনে মনে ভাবছে,
‘এবার দেখ আপু আমিই চ্যালেঞ্জে জিতে যাব। তোকে বলেছিলাম না ললিত আমার কাছেই ফিরবে। দেখ তাই হলো। ললিত আমার কাছেই ফিরল। তুই আমার কাছে হেরে গেলি।’

শামিমা বই পড়ছিল। আচমকা বইয়ের ভাজে রাখা একটি চিঠি তার চোখে পড়ে। চিঠিটা দেখে শামিমার চোখ
অশ্রুতে ভড়ে যায়। মনে পড়ে যায় সেই সাকিবের কথা। সাকিব শামিমার চাচাতো ভাই। দুজনে ছোটবেলা থেকে একসাথে বেড়ে উঠেছে। সাকিব শামিমার থেকে মাত্র ৪ মাসের বড়। দুজনের সেই ছোটবেলা থেকে কত ভাব। সাকিব ছোট থেকেই শামিমাকে কত আগলে রাখত। ছোটবেলায় কত বড় বউ খেলত তারা। সাকিব তো সেই সময় বলতো, ‘শামিমা তুই বড় হলে আমি কিন্তু সত্যি তোকে বিয়ে করব।’ এসব কথা শামিমার শৈশব মনে তখন সেরকম প্রভাব বিস্তার করেনি। সাকিবও হয়তো মজার ছলে কথাগুলো বলেছিল।

সাকিবের কথা আর ভাবতে চায়না শামিমা। আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে তার বড় চাচা সপরিবারে বিদেশে চলে গেছে। সাকিব যাওয়ার আগে শামিমার হাতে এই চিঠি দিয়ে গিয়েছিল। যেখানে লেখা ছিল,
‘আমার জন্য অপেক্ষা করিস। আমি ফিরে এসে আমার ছোটবেলায় দেওয়া কথা অবশ্যই পূরণ করবো।’

ব্যস এটুকু কথাতেই শামিমার কিশোরী মনে অন্যরকম এক অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এতদিন ধরে শামিমা সাকিবের অপেক্ষাতেই ছিল। আয়েশা তো কতবার শামিমাকে বুঝিয়েছে যে তো চাচারা সবাই বিদেশে গেছে থেকে কেউ আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। ওরা আর ফিরবে না। কিন্তু শামিমা সেসব কথা শোনেনি। এতদিন তাও যা একটু আশা মনে পুষে রেখেছিলযে সাকিব একদিন নিশ্চয়ই তার কাছে ফিরে আসবে। আজ আর সেই আশা নেই শামিমার। সাকিব ফিরে আসলেও বা কি হবে? শামিমা তো এখন বিবাহিত। মুহুর্তেই সাকিবের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেয় শামিমা। আর যাই হোক একজন বিবাহিত নারী হয়ে এভাবে পরপুরুষের কথা ভেবে পাপ করতে চায়না সে। তাই চোখের জল মুছে বইটা সযত্নে তুলে রাখে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘এই বইটার মতো তোমাকেও তুলে রাখলাম দূরে সাকিব ভাইয়া। আমাদের এক হওয়া হয়তো ভাগ্যে ছিলনা। আল্লাহর কাছে চাইব তিনি যেন তোমাকে সুখী রাখেন।’

৮.
‘সুখ শব্দটা আমার জন্য নয়। এই পৃথিবীতে সবাই সুখী হতে পারবে কিন্তু আমি কোনদিন সুখ নামক জিনিসটা স্পর্শ করতে পারব না। জানি না সুখের সাথে আমার কিসের শত্রুতা। কেন আমার থেকে দূরে থাকে সুখ?’

দেয়ালে আঘাত করে এই কথাগুলোই বলছিল সুঠাম দেহী, উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের এক যুবক। তার এই কথাটা শুনে অনেকেই হয়তো হেসে ফেলবে। কারণ কি নেই এই যুবকের? বুর্জ খলিফার একটি ফ্ল্যাটে তার বসবাস। দুবাইয়ে তার নামে কতো সম্পত্তি আছে। নিজের চেষ্টায় আজ সে একজন বাংলাদেশী হয়েও দুবাইয়ে একজন নামী ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছে। অর্থ-সম্পদের কোন অভাব নেই তার। অর্থই যে সুখের মূল উপাদান নয় সেটা সাকিবকে দেখে খুব সহজেই বোঝা যায়।

সাকিব নিজের ভাবনায় বিভোর ছিল তখন একজন কালো স্যুট পড়া ব্যক্তি এসে তাকে বলে,
‘স্যার, গাড়ি রেডি আছে। আজ তো আপনার অনাথ আশ্রমে যাওয়ার কথা ছিল।’

নিজের এসিন্ট্যান্টের কথায় সাকিব নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে,
‘অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য উপহার সামগ্রী সব প্রস্তুত তো সালমান?’

সালমানঃজ্বি স্যার।

সাকিব আর কোন কথা না বলে দ্রুত পায়ে হেটে বাইরে চলে আসে। তারপর নিজের গাড়িতে উঠে অনাথ আশ্রমের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। এখানে নিজের মৃত মা-বাবার নামে একটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছে সাকিব।

অনাথ আশ্রমে পৌছে গাড়ি থেকে নামে সাকিব। সাকিবের আসার কথা শুনে অনাথ আশ্রমের সব বাচ্চারা ছুটে আসে। তাদের কাছে যে সাকিব ফেরেস্তার মতো।

অনাথ আশ্রমের পরিচালক আলাউদ্দিন আল মামুনও আসেন তাদের সাথে। সাকিব তার সাথে সালাম বিনিময় করে বলে,
-“সবকিছু ভালোভাবে চলছে তো?”

-“জ্বি, আল্লাহর রহমতে সব ঠিকঠাকই আছে।”

-“মসজিদ তৈরির কাজ কতদূর?”

-“প্রায় হয়ে এসেছে।”

-“সালমান তুমি বাচ্চাদের উপহারগুলো দাও।চাচা আজ যেই জন্য আসা, আমি আগামী কিছুদিন দুবাইয়ে থাকব না। আমার অনুপস্থিতিতে আপনাকেই কিন্তু সবকিছু সামলাতে হবে।”

-“তুমি কোথায় যাবে সাকিব?”

-“সেখানেই যাব যেখান থেকে আমি এসেছিলাম। আমার জন্মভূমি, আমার দেশ। যেখানে আমার পরিবারের সবাই আছে। আমি যে একজনকে কথা দিয়ে এসেছি। তার কাছে তো আমায় ফিরতেই হবে।”

সাকিব তার বাবা-মার সাথে দুবাইয়ে আসার কিছুদিনের মধ্যেই একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা মা’রা যায়। সাকিবও সেইসময় কোমায় চলে যায়। তার জ্ঞান ফিরতেই এক বছর লেগে যায়। তখন দুবাইয়ের একজন শেখ সাকিবকে দত্তক নেয়। এভাবেই চলে যায় সাকিবের জীবন। এখানকার কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে যায় যে আর দেশে ফেরা হয়নি। আজ অনেকদিন পর আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাড়ি ফেরার। শামিমাকে যে এখনো ভুলতে পারেনি সাকিব।

সুমি মিটিমিটি হাসছিল। সে সফল হয়েছে। তার বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল সেই সময় কলেজের কাগজ বলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পেপারটা নিয়ে ললিতের কাছে গিয়ে সুমি বলে,
‘আমি তোমার কথামতো সব করেছি। এই দেখ পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে এনেছি।’

ললিত পেপারটা নিতে চায় তখন সুমি তাকে আটকিয়ে বলে,
‘এই পেপার আমি তোমাকে দিতে পারি কিন্তু তার আগে তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে।’
চলবে….
>>>আসসালামু আলাইকুম। আপনারা যারা গল্পটা পড়ছেন তারা প্লিজ গল্পটা সম্পর্কে এক লাইন হলেও কিছু কমেন্ট করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here