হিয়ার মাঝে পর্ব ১৯+২০

#হিয়ার_মাঝে
১৯.
ঠাসসস শব্দে দু’গালে দুটো থাপ্পড় মেরেই ক্ষ্যান্ত হন নি মা সাথে চুলের মুঠি ও খুব জোরে ধরলেন।আমি ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম।মা আমাকে মারছো ক্যানো?কথাটা শুনেই মায়ের মার যেনো আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো।

নষ্টা কোথাকার,, স্কুলে যাওয়ার নাম করে এগুলা করে বেড়াস তাইনা।দুঃচরিত্রা।সত্যি করে বল তোর মায়ের মতো আর কি কি করেছিস।কোন বিবাহিত ছেলের সাথে লটর পটর করতেছিস।তোদের তো অভ্যাস বিবাহিত ছেলেদের প্রতি এডভান্টেজ নেওয়া।।
আমি কি করেছি মা।

এখনো কিছুই জানিস না কি করেছিস।।।।।
আপু একটা ফোন বের করে দিয়ে বললো এটা কার।এ ফোন কোথায় পেয়েছিস।কে দিয়েছে বল।কার সাথে লটর পটর চলতেছে সত্যি করে বল।

নবনিতা মেসেজ গুলো পড়তো।।।

মা ফিঙ্গার লক দেওয়া খুলবো কিভাবে।সাটারে একটা মেসেজ আছে মা ওটাই পড়ছি।

প্রিয়তমা আমি নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় তুমি ছাদ বা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকবে তোমার ওই চাঁদমুখ দেখে যেতে যেতে আমার মাত্রা শুভ হবে।

দেখলে মা কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার।নিশ্চয় আশেপাশের কেউ দিয়েছে এই ফোন।এই আশেপাশের কারো সাথেই পিরিত জনিয়েছে তোমার মেয়ে মা।নবনিতা আমার কথাটা একবার ও বলবি না গা গোলায় আমার ভাবতে গেলে।আমি জাস্ট নিতে পারছি না।

মা আমার হাত চেপে ধরে বলে কে দিয়েছে এই ফোন সত্যি করে বল।বল বলছি।তাহলে আজ অনেক কিছু হয়ে যাবে।।

আমি নাম বলতে পারবো না মা কে দিয়েছে।তুমি আমার সাথে যা খুশি তাই করো তবুও আমি নাম প্রকাশ করতে পারবো মা ক্ষমা করো মা।

বাহ ভাল চটাং চটাং বুলি ফুটেছে তোর দেখছি মিথু।তোর বাবা আজ বাড়িতে আসছে।তোর একটা ব্যাবস্থা না করলেই নয়।

আপু জোর করে আমার আঙুন চেপে ধরে ধরে ফোনের লক খোলার চেষ্টা করলো।আমি আপুকে বললাম জোর করার কিছুই নেই।আমি নিজেই দিচ্ছি।সব গুলা আঙুল দিলাম কোন টায় ম্যাচ করলো না।আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম।আপু বললো তোর ফিঙ্গারে লক খুললো না তাহলে কার ফিঙ্গার দেওয়া।

আমি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললাম যার ফোন তার ফিঙ্গারেই খুলবে।আর হ্যাঁ আগের দিন গুলা ভুলে যাও।আমার সাথে বেশী বাড়াবাড়ি করো না আর আপু।এই ফোন টা আমাকে একটা জ্বীনে দিয়েছে।আর সে এসেই ফোন টা খুলে দিয়ে যায়।খুব ভয়ংকর সে জ্বীন।সারাক্ষণ আমার পাশে পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকছে।কে আমাকে কি বলছে না বলছে সব দেখছে।

আপু দাঁত খিচে বলে তুই আমাকে মেন্টাল পেয়েছিস তাইনা।তোর ফোনে যে আম্মুর নিষ্পাপ ছেলে দিয়ে নাম্বার সেভ করা আর সে নাম্বার থেকেই মেসেজ এসছে সেটাকে তুই জ্বীন বলেই চালিয়ে দিচ্ছিস।

মা আমাকে বলে দে ফোন টা দে তোর বাবা আসলে দেখাবো। তোর কুকির্তী গুলো।আমি মায়ের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বললাম এটা আমার ব্যাক্তিগত জিনিস মা।আর হ্যাঁ বাবা বলে আমার কিছুই নেই।সো সে ভয় আমাকে আর দেখিও না।বাবা কোনদিন মেয়ে বলে আমাকে কাছে টেনে নেই নি তাহলে কিসের বাবা।বাবা তো আপুর।আপুর খুশি হওয়ার কথা।

দিন দিন তোর কথার এত বলি ফুটেছে।তোর মুখ কিভাবে সোজা করতে হয় সে আমার জানা আছে খুব ভাল ভাবে।

দুপুর বেলা কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেওয়ার সাথেই ঘরে প্রবেশ করেন আশরাফ সাহেব।অনেক দিন বিদেশ থেকে বাড়িতে ফিরলেন।বাড়িতে ফিরেই নিজের মেয়ে নবনিতা কে জড়িয়ে ধরলেন।আহ কত ভালবাসা বাবা মেয়ের।

আমার কলিজা টা, কেমন আছো মা।চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেনো এমন।খাওয়া দাওয়া হয় নি ঠিক ভাবে তাইনা।মাকে বললো সানজিদা আমার মেয়ে এভাবে শুকিয়ে গিয়েছে কেনো?আমি নেই আর আমার রাজকুমারী শুকিয়ে গিয়েছে।মামনি বাবা চলে এসেছে এখন আর তোমার কোনো অসুবিধা হবে না।

বাবা তুমি ছিলে না আমি ভীষণ মিস করেছি বাবা।বাসায় সব সময় কিছু নেই কিছু নেই একটা ব্যাপার ছিলো।

আমি তো জানতাম আমার সোনামনি ছাড়া কেউ আমাকে মিস করে না।।

ওদের ফ্যামিলির মাঝে আমি বোধহয় বাইরের কেউ।দূরে দাঁড়িয়ে আছি কেউ জানতেই চাইনি যে আমি কেমন ছিলাম।মানুষের বাবা আর আমার বাবা।বাহ।

অনেক্ষণ ধরে তাদের কুশল বিনিময় শেষ হলে বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওখানে দাঁড়িয়ে আছো যে দ্রুত খাবার খেতে দাও আমার ক্ষুদা পেয়েছে খুব।

আমি চোখের কোনার পানি মুছে ডায়নিং এ খাবার দিলাম সবাই কে।বাবা বিদেশ থেকে অনেক কিছু এনেছে তবে তার সব টাই আপুর মায়ের জন্য।আমার জন্য কিছুই না।আপুর জন্য স্টোনের গহনার সেট এনে বলছে আমার রাজকুমারী কে অনেক সুন্দর লাগছে।

এমন সময় নিরবের আগমন। নিরব বলে আঙ্কেল কেমন আছেন।বাবা নিরব কে জড়িয়ে ধরে বলেন হাউ আর ইউ মাই সন।জ্বী ভাল আছি।রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নি তো না আঙ্কেল আসতে।না বাবা কোনো সমস্যা হয় নি।ওকে আঙ্কেল যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।

বাবা ফ্রেশ হয়ে এলেন ডায়নিং এ সব খাবার রেডি রাখলাম।বাবা আর আপু পাশাপাশ বসেছে।মা আর বাবা পাশা পাশি চেয়ারে বসেছে।নিরব একটা চেয়ারে বসেছে আর একটা চেয়ার ফাঁকা। নিরবের চোখে মুখে মারাত্মক বিরক্তি দেখা যাচ্ছে নিরব কিছু বলবে হাত কচলাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে।আমি ইশারা দিয়ে বললাম না থাক ঝামেলা করোনা।সবাই কে খাবার দিচ্ছি বাবা আপুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আপু ফোন চাপছে।বাবা বলছে অনেক দিন আমার মেয়েকে খাইয়ে দেই না এতদিন নিজেও খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাই নি আমি।আমার সামনেই আমার বাবা তার আরেক মেয়েকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে আর আমার সাথে কাজের মেয়ের মতো ট্রিট করে যাচ্ছে।যদি ও আমি কোনো কষ্ট পাচ্ছি না।কারণ এটা আমার অভ্যাস আছে আগে থেকেই।

সবাই খাচ্ছে নিরব টেবিলে কনুই বাঁধিয়ে দুই হাত উঁচু করে বসে আছে খাবার মুখে তুলছে না।বাবা আর আপুর দিকে তাকিয়ে আছে নিরব কপাল কুঁচকে।সবাই খোশ গল্পে মজে আছে।নিরব বাবার দিকে তাকিয়ে বলে আচ্ছা আঙ্কেল আপনার কয়টা মেয়ে। বাবা যেনো কথাটায় অস্বস্তিতে পড়ে যায়।বাবা মুখ কালো করে বলেন দুইটা মেয়ে।তুমি তো জানোই বাবা তাহলে হঠাৎ এ প্রশ্ন করছো যে?

না পাশে বসিয়ে তো একটা মেয়েকেই খাইয়ে দিচ্ছেন।আরেক টা মেয়ে তো খাবার সার্ফ করছে।

মৃথিলা একটু অন্য রকম, ও নিজেই পারে খেতে।তাছাড়া আমার প্রতি ওর অতটা টান নেই।নবনিতা আমি ছাড়া থাকতেই পারে না।এইজন্য নবনিতা আদর করাটা বেশী হয়।

মা বলে উঠলো নিরব আর নবনিতা দুটোতে সমান আদুরে।নিরব কেও তো মনে হয় আপা খাইয়ে দেই।

নিরব হেসে বললো না আন্টি।আমার খাবার আমি নিজেই খাই।বড় হওয়ার পর নিজের কাজ গুলো সব নিজেই করি আমি।অন্যকে খাটিয়ে খাওয়া টা আমার পছন্দ নয়।তাছাড়া অকর্মণ্য আর অলস ব্যাক্তিরাই হাত পা নাড়িয়ে খাই না।

বাবা বললো আসলে বাবা নবনিতাকে ছোট বেলা থেকেই আমি এমন ই আদর যত্ন করে বড় করছি।

খুব ভাল আঙ্কেল যেমন গাছ লাগাবেন একদিন তেমন ই ফল পাবেন।তা বিয়ের পর কে ওকে খাইয়ে দিবে এভাবে।

সেটাই তো চিন্তা করছি বাবা।

আঙ্কল এক কাজ করূন হাতের কাছে কোনো চেনা জানা ছেলে থাকলে দেখুন যে আপনার মেয়ের কথাই উঠবে আর বসবে।

বাবা বলেন তুমি ঠিক ই বলেছে তেমন ছেলেই দেখেছি আমার মেয়ের জন্য।আচ্ছা নিরব তোমাদের বিজনেস কেমন চলছে।

আঙ্কেল বিজনেস নিয়ে আমার তেমন কোনো আইডিয়া নেই।আমি এগুলা বুঝি না।এখানে এসছি আপনার কাছে আইডিয়া নিতে। আপনি তো বিজনেস আর পারসোনাল লাইফ দুটোই বিজনেস করে ফেলেছেন।এইখানে আঙ্কেল আপনি কিন্তু আমার গুরু।আমাকে কিন্তু শেখাতে হবে।

বাবা বলেন ডোন্ট ওরি মাই সন।আমি আছি তো তোমার সাপোর্টিং হ্যান্ড।

নিরব খাবার টা রেখে যাওয়ার সময় বললো মৃথিলা আমার খাবার টা আমার রুমে দিয়ে যাও তো প্লিজ।খাবার খেতে ভাল লাগছে না এখন।

সবার খাওয়া হয়ে গেলে আমি প্লেট গুলা সব ক্লিন করে নিরবের রুমে খাবার টা দিতে গেলাম।নিরবের ছাই রঙা শার্ট পরা অফ হোয়াইট জিন্স পরা।হাতা টা গোটানো।ফর্সা গালে মাত্র ই দাঁড়ি জাগ দিয়েছে।প্যান্ট এক ভাজ দেওয়া নিচ দিক থেকে।বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে জানালার দিক মুখ করে।

আমি রুমে প্রবেশ করতেই দরজার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নিরব।নিরবের মন খারাপ।কিন্তু কেনো মন খারাপ সেটাই বুঝছি না।খাবার টা টেবিলে রেখে বললাম নিরব ভাইয়া আপমার খাবার খেয়ে নিন।বলেই রওনা দিলাম নিরব পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে বলে দাঁড়াও মিথু।আমি নিঃশব্দে থেমে গেলাম।দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।দুজনের চোখ ই কথা বলছে।দুজনের চোখেই বৃষ্টি নামবে বোধ হয়।কিসের আকুলতা ব্যাকুলতা দুজনের চোখে।কি আছে দুজনের মনে দুজনেই জানে।

নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম কি দেখছেন।

তোমাকে

নতুন করে কি দেখছেন।

তোমার ভেতরের কষ্ট।কষ্ট বইতে খুব কষ্ট হলে আমাকে উজাড় করে দাও মিথু।আমি সব নিংড়ে নিবো।আমি পারবো সব কষ্ট নিতে কিন্তু তুমি যে পারবা না।

আমার কষ্ট নেই।

তোমার বাবা আসার পরে আমি দেখেছি বুকের মাঝে কেমন কাঁন্নার বৃষ্টি হচ্ছিলো।বাবার মতো আপন জন এ পৃথিবীতে নেই সেই বাবা এতটা অবহেলা করলে কি মেনে নেওয়া যায়।মিথু আমাকে ভালবাসতে দিবে তোমার।সারাজীবন আমার বুকের মাঝে আগলে রাখতে দিবে তোমায়।এতটাই ভাল রাখবো যে কোনো ভালবাসা তুচ্ছ লাগবে।

আমি হেসে দিয়ে বললাম অল রেডি সব ভালবাসা তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে বুদ্ধুরাম।শ্বাশুড়ির নিষ্পাপ ছেলেকে বলে দিবেন তার বৌমা তার ভালবাসায় একটু একটু করে অনুভব করতে শিখে গিয়েছে।মিথু এখন আর অন্যর জন্য কষ্ট পাই না।কথা টা বলেই রুম থেকে ছুটে পালিয়ে গেলাম।

আপু আমাকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।আপু মারাত্মক সন্দিহান হয়ে উঠলো আমার হাসি দেখে।আপু উঁকি দিয়ে দেখলো নিরব ও হাসছে।আপুর মনে সন্দেহর জন্ম নিলো।

সেদিন রাতে মা বাজখাই গলায় বলে উঠলো বাবাকে মান সম্মান যাওয়ার আগে তোমার ওই দ্বীতীয় পক্ষের মেয়েকে আগে বিয়ে দাও।ওর মা কে বিয়ে করে আমার জীবনের বারোটা তো এমনি বাজিয়ে দিয়েছো।এখন যদি যার তার সাথে ভেগে যায় তাহলে মান সম্মান আর একটুও থাকবে না।বাবা বললেন কেনো কি করেছে মৃথিলা।কি করেছে সেটা জানতে চাও।নাগর জুটিয়ে নিয়েছে তোমার মেয়ে।বাবা বললেন হোয়াট মুখ সামলে কথা বলো ওর চরিত্র ওতটাও খারাপ নয়।মা দাঁত খিচে বলে উঠলো বাহ বাহ বাহ টান তো কমে নি দেখছি।আমি আর আমার মেয়ে কাল ই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তুমি থাকো তোমার সতী বউ আর তার মেয়েকে নিয়ে।বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন আহা সানজিদা মুখে লাগাম দাও।ও আসলে করেছে টা কি।’তোমার মেয়ের কাছে ফোন পাওয়া গিয়েছে সে তার প্রেমিকের দেওয়া ফোন দিয়ে প্রেম আলাপ করছে। তাছাড়া কথায় কথায় তর্ক করছে।মান সম্মান যাওয়ার আগে একতা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।আমার কথা না শুনলে ফিউচারে খারাপ কিছু হলে আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো সোজা কথা।এমনি তে আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে মুশকিলে আছি।তোমার এই মেয়ে আবার কারো সাথে পালিয়ে গেলে কি নিরব বা তার ফ্যামিলি কি নবনিতা কে বিয়ে করতে চাইবে।বাবা সে রাতেই চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকলেন।বুঝতে পারলাম বাবা রেগে আছেন।চুপচাপ গিয়ে দাঁড়ালাম বাবা আমাকে ধমক দিয়ে বলেন গরম ভাত খেয়ে নি চিড়ার শখ হইছে তোর।তোর বয়সী মেয়েরা লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত আর তুই প্রেম পিরিতি নিয়ে বিজি।তোর কাছে নাকি কার ফোন আছে।কে তোকে ফোন দিছে, বাবা এবার খুব জোরে ধমক দিলেন বাবার কথা দেওয়ালে গিয়ে প্রতিদ্ধনি হয়ে ফিরে এলো।আমি এক হাত কেঁপে উঠলাম।আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম কি কি কিসের ফোন বাবা।বাবা আরো রেগে গিয়ে জোরে চড় নিয়ে এগিয়ে এলেন কিসের ফোন তুই জানিস না সাথে সাথে নিরব এসে বাবার হাত টা ধরে নামিয়ে দিয়ে বলে সরি আঙ্কেল আপনার হাত টা ধরলাম।যেভাবে চড় ট নিয়ে গেছিলেন আপনার মেয়ে বাঁচতো না।আপনাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে কথা বলাটা উচিত নয় তবুও বলছি এই ফোন টা নিয়েই কি আপনাদের এত সমস্যা।মা চট জলদি বলে উঠলো হ্যাঁ নিরব এই ফোন টা।এটাই কেউ মৃথিলাকে দিয়েছে।ওর গায়ে হাত তোলার পরেও স্বীকার করে নি কার ফোন।ফোনে অন্য কারো ফিঙ্গার দেওয়া।

নিরব নিজের ফিঙ্গার দিয়ে ফোন টা খুলে দিয়ে বলে আন্টি এটা আর ফোন।আমি ভুলে মিথুর রুমে রেখে এসছিলাম।আর আপনারা যে মেসেজ গুলা নিয়ে এক্সাইটেড সেটা আমার একান্ত পারসোনাল সেটা কারো সাথে শেয়ার করতে চাই না।এনি ওয়ে আমার ফোনের জন্য মৃথিলাকে এত গুলা কথা শুনালেন যখন সরি টু সে আমি এখানে আর থাকছি না।বাবা নিরব কে অনেক অনুরোধ করলো থেকে যাওয়ার জন্য নিরবের কাছে সরি ও বললো।কিন্তু এক ই কথা নিরব এখানে থাকবেই না।

অবশেষে নিরব বললো আমি এক শর্তে থাকতে পারি এ ফ্যামিলর সবাই মৃথিলার কাছে সরি বলবে।না হলে আমি এখানে থাকবো না।নিরব এর রাগ নিয়ে সবার একটু আধটু ধারণা আছে বাধ্য হয়ে মা আপু বাবা সবাই আমাকে সরি বললো।

যা ঘটনা ঘটে গেলো আমি পুরাপুরি অবাক হয়ে গেলাম।এই নিরব টা পারেও বটে।নিরব টার মাঝে সত্যি ম্যাজিশিয়াল ব্যাপার আছে।পৃথিবীর সব কিছুতে স্যাক্রিফাইস করেছি কিন্তু এই নিরবের ব্যাপারে কোনো স্যাক্তিফাইস করবো না।ওই নিরব টা শুধুই আমার।

নিরব বাবার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন আঙ্কেল মিথুর ফোন নেই কেনো?বাবা বললো ও ছোট মানুষ তাই ফোন দেওয়া হয় নি।নিরব বাবাকে বললো ও এখন যথেষ্ট বড় এই থিংক ওর এখন ফোন ইউজ এর বয়স হয়েছে বলেই বেরিয়ে গেলো নিরব।

পরের দিন সকালে কফি হাতে নিয়ে সবাইকে দেওয়ার পরে নিরবের রুমে গেলাম।নিরব সোফায় বসে টি টেবিলে পা দিয়ে পায়ের উপর ল্যাপটপ দিয়ে এক নজরে দেখে চলেছেন।আমি একটু উঁকি দিয়ে দেখি ডায়মন্ডের বিভিন্ন সেট দেখছে।পূর্ণ মন নিয়ে দেখছে।আমি কফি টা টেবিলে রেখে বললাম হ্যালো রাগি বাবু আপনার চা।নিরব আমার হাত টেনে ধরে ওর কোলের উপর বসিয়ে বলে এই যে রাগের মেডিসিন আপনি একটু বেশী বেশী ডোজ দিলেই তো রাগ থাকে না আমার।আমি নাম মুখ কুচক্যে ঠোঁট কামড়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম ডোজ কিভাবে কম দিলাম শুনি।উনি ল্যাপটপে মন দিতে দিতে বলেন এই আমার সামনে দিয়ে পেত্নির মতো না ঘুরে সারাক্ষণ মা আর আপুর ভয়ে ওই বাটপার আশরাফ তোমার বাপের ভয়ে ভয়ে থাকো।আচ্ছা এই ডাইনোসরের ফ্যামিলি ত্যাগ করবে কবে শুনি খালাতো বোন।

আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে বললাম খালাতো বোন হলাম কিভাবে।

আমাকে ভাইয়া ডাকো যেভাবে সেভাবে খালাতো বোন।

আমি হেসে দিয়ে বললাম আমি যায় এবার নইলে কেউ দেখে ফেলবে।

নিরব হাত টে ছেড়ে দিয়ে বললো,,
“তুমি পাশে এসে দাঁড়ালে আমার একাকীত্ব ছোট হয়ে যায়।”
#হিয়ার_মাঝে
২০.
বাড়িতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে আমার বিয়ে নিয়ে।মায়ের কথা সে আমাকে এখন বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।আমাকে বিয়ে না দিলে সে এ বাড়িতে আর পানি ও স্পর্শ করবে না।নিরব গম্ভীর মুডে সব টা দেখছে।কাউকে কিছুই বলছে না।বরং সবার সাথে আমার বিয়েই নিয়েই আলোচনা করে যাচ্ছে।কেমন ছেলে হলে ভাল হয় কোন টাইপ ছেলে হলে মানাবে নিরব বেশ আলোচনা করছে বাসায়। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি নিরবের মাঝে কোনো রিয়্যাক্ট নেই।কোনো চিন্তা, বা খারাপ লাগা কোনো ভাবাবেগ ও নেই ওর মাঝে।মা বাবাকে বুঝিয়েছে আমাকে এখন বিয়ে না দিলে আপুকে ভাল বিয়ে দেওয়া যাবে না।মা কি কি ভাবে বুঝিয়েছে মা ভাল জানেন।

শুনেছি পাত্র পক্ষ আজই আমাকে দেখতে আসবে।মনের মাঝে প্রচন্ড খারাপ লাগছে।এখনি বিয়ে করতে চাই না আমি।প্রয়োজনে কোথাও পালিয়ে যাবো তবুও আমি বিয়ে করবো না।আমাকে অনেক লেখাপড়া করতে হবে।আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে।আর নিরব টা একটা চিটার বজ্জাত।এতদিন ভাবতাম ছেলে আমার জন্য দিওয়ানা।কিন্তু এখন দেখো বাড়িতে আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে তার কোনো চিন্তা বা ভাবাবেগ নেই।আমার নিরব কে চেনা হয়ে গিয়েছে। রিতীমতো ছেলের ছবি ও হাজির বাড়িতে।কি কালো আর মোটা ভুড়ি ওয়ালা একটা লোক।বাড়িতে সবাই খুব প্রশংসা করছে এমন সুন্দর ছেলে নাকি লাখে একটা মিলে না।আমি নাকি খুব লাকি তাই এমন ভাল ছেলে জুটেছে।ছেলের আগে একটা বিয়েও ছিলো।ঢাকায় বাড়ি গাড়ি আছে নাকি।সবাই যেভাবে প্রশংসা করছে তাতে যেনো রণবীর কাপুর।ছেলেকে দেখেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দিলাম আমি।এই বিশ্রি মানুষ টার সাথে বিয়ে হবে আমার।এই ছিলো আমার কপালে।

ঘরময় পায়চারী করছি আমি আর একা একা কেঁদে যাচ্ছি।কাকে কি বলবো কেউ তো আমার অনুমতি টুকুও নেই নি।আমার মতামতের গুরুত্ব ও নেই।বাড়িতে আজ মা নিজ হাতে রান্না করছে।আপদ বিদয়ের শেষ রান্না।

নিরব ছেলের ছবি দেখে বলেছে বাহ! মাসআল্লাহ।এ বাড়ির জন্য উপযুক্ত জামাই হবে।আঙ্কেল এই ছেলের সাথেই কিন্তু বিয়ে দিতে হবে।আজকাল টাকা থাকলে আর কি লাগে বলুন।

মা আর আপু রান্নাঘরে বলাবলি করছে ওর মা যা করেছিলো তার উপযুক্ত জবাব মিথুকে দিয়ে শোধ দিবো।এই বুড়ো, টাকলার সাথে বিয়ে দিয়ে চিরবিদাই করে দিবো।মৃথিলার মা আয়েশা কোথায় তুই এখন ডাইনি দেখে যা তোর মেয়ের জামাই।আমার সাথে যা করেছিলি তোর মেয়েকে দিয়ে তার দ্বীগুন উসুল করে দিচ্ছি।তাছাড়া তোর মেয়ের নজর নিরবের দিকেও পড়েছে।নিরবের সাথে বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই বিদাই দিবো এখান থেকে।

চারদিকে সবাইলে বেশ আনন্দিত দেখছি।সাথে নিরব ও বেশ খাটাখাটনি করছে।আমি নিরব এর দিকে রাগে অভিমানে আর তাকালাম না সোজা সুপ্তি বাসায় গেলাম।সুপ্তি আমাকে দেখে বলে কিরে নববধূ কি খবর।আমি মন খারাপ করে সুপ্তির পাশ কাটিয়ে সুপ্তির রুমের ভেতরে গিয়ে সুপ্তির বিছানায় বসে পড়লাম।আমার ভীষণ মুখ কালো দেখে সুপ্তি আমার সামনে দিয়ে ডান্স দিতে দিতে বলে ইস তোর বর দেখতে কেমন হবে তাই ভাবছি।তার থেকে বড় কথা নিরব ভাইয়া ওই বেটার কি হাল করবে।
অগ্নিমূর্তির ন্যায় চোখ নিয়ে তাকিয়ে বললাম নিরব নিরব করিস না সুপ্তি।নিরব এর কি আমার বিয়ে।সে ওই বেটার আবার কি করবে।

সুপ্তি কপাল ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে তাই?নিরবের কি?আসলেই তো নিরবের কি?

আমি সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললাম সুপ্তি আমি লেখাপড়া করতে চাই।প্লিজ হেল্প মি সুপ্তি।আমি এভাবে বিয়ে করতে চাই না।নিরব এর আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।ও চাই আমার বিয়ে হয়ে যাক।নিরব আমাকে ভালবাসে না সুপ্তি।

সুপ্তি এবার আমাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে তার মানে মিথু তুই এতদিন ভাবতি নিরব তোকে ভালবাসে।

আমি চুপ করে রইলাম কিছুই বললাম না।

সুপ্তি আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।মিথু তুই কি নিরব কে ভালবাসিস।

আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললাম ভালবাসি আমি ভালবাসি নিরব কে।ভীষণ ভালবাসি।ও কেনো আমার জীবনে এলো।আমি এখন নিরব ছাড়া থাকতে পারি না সুপ্তি। কেনোই বা আমার মরূভূমির মতো জীবনে ও কেনো বৃষ্টির ফোটা দিতে এলো।সুপ্তি আই ওয়ান্ট নিরব ও কেনো বুঝছে না আমি এভাবে বিয়ে করে সুখি হতে পারবো না।

সুপ্তি আমাকে বলে নিরব ইজ দ্যা বেষ্ট মিথু।নিরব ভাইয়া চুপ তার মানে বড় বোমা ফাটাবে।আমার ভরসা আছে নিরব ভাইয়া এমন কিছু করবে সবাই অবাক হয়ে যাবে।কিন্তু কেউ টের ও পাবে না এটা নিরব ভাইয়ার কাজ।

বার বার কেউ একজন কলিং বেল চেপেই যাচ্ছে।সুপ্তি আর মৃথিলা অবাক হয়ে যায় এত বার কে কলিং বেল চাপছে।সুপ্তির আম্মু তো মামা বাড়িতে আছে।সুপ্তি দরজা খুলে দিতেই সুদর্শন এক যুবক এর দেখা পেলো।শ্যামবর্ণের একটি ছেলে উচ্চতা ৫ ফিট ৮ “হবে।মুখে ক্লিন সেভ ব্লু জিন্স, ব্লু শার্ট, শার্টের হাতা গোটানো।দেখতে খুব ই মিষ্টি একটা ছেলে।সুপ্তি চোখ ইশারা দিয়ে বলে কি চাই।ছেলেকে হালকা কেশে নিয়ে বলে এক্সকিউজ মিঃআপু ছত্তার ভিলা না এটা।জ্বী এটাই।আচ্ছা ফ্ল্যাট নং ১২ টা কোনপাশে।সুপ্তি কিছু একটা ভেবে গাল ভরে হেসে বলে ইয়ে ভাইয়া আপনি ভুল ঠিকানায় এসছেন এটা হবে এখান থেকে বৌ বাজার যাবেন তার পাশে যে সবজি বাজার আছে সেখানে নীল রঙা যে বাড়িটা ওটাই ছত্তার ভিলা।এবার যান ভাইয়া।ছেলেটি বলে ইয়ে আপু আমাকে তো এ ঠিকানা টাই দেওয়া হয়েছে।সুপ্তি বলে আপনাকে খুব ই ভুল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আমার দেওয়া ঠিকানাটাই সঠিক আপনি যান প্লিজ।ছেলেটা গেলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বুকে ফুঁ দিলো সুপ্তি।মিথু ভ্রু নাচিয়ে বলে কি সমস্যা সুপ্তি লোকটাকে এইভাবে হয়রানি করার মানে কি শুনি।যতটা দূরে পাঠিয়ে দিলি ওর তো আজকের দিন কেটে যাবে। বেচারার কি দোষ ছিল।

সুপ্তি বলে আরে মিথু বুঝতে পারছিস না হতেও তো পারে এই বেটাই সেই বেটা যে তোকে দেখতে আসবে আজ।বা পাত্র পক্ষের কেউ সারাদিন ঘুরতে থাকুক শালা দের মেয়ে দেখার শখ খুব তাইনা।আমাদের রাজকুমার নিরব এসে গিয়েছে তার প্রেমিকার শহরে।যে শহরে নিরব ভাইয়ার মিথু আছে সে শহরে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। আরে মিথু দেখ না পিছে পিছে হোয়ে কিয়া।

আপুর ডাক পড়লো পাত্র পক্ষ চলে এসছে প্রায় এক্ষুণি তাদের সামনে যেতে হবে।

মনের মাঝে তোলপাড় করছে,কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ডায়নিং এ পাত্র পক্ষ এসে পড়েছে।পাত্র, পাত্রের মা এবং বাবা সাথে একটা কাজিন ও এসছে তাদের।নিরব ও তাদের পাশে বসে আছে।রাগেরাগে নিরব কে মেসেজ দিলাম আপনাকে অভিশাপ দিলাম ভালবাসার অভাবে আপনি পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যান।মা আর আপু চায়ের ট্রে আমার হাতে দিয়ে নিয়ে গেলো পাত্র পক্ষের সামনে। গিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে চা এগিয়ে দিলাম।আমার কাছে নাম, ঠিকানা কোন ক্লাসে পড়ি এগুলা শোনার পরে আমাকে বসতে বলা হলো।বাবা জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের কি পাত্রী পছন্দ হয়েছে।পাত্রর বয়সে ৫০ এর কাছাকাছি সে আপুর দিকে তাকিয়ে এক বাক্য বলে দিলো কিছু মনে করবেন না আমার পছন্দ হয়েছে তবে মৃথিলা নয় নবনিতাকে।কথাটা শুনেই আমার সব দুঃখ কোথায় বিলীন হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।আচমকা হেসে উঠলাম।আর আড়চোখে আপুর দিকে তাকালাম আপুর মুখ টা পেঁচার মতো হয়ে গিয়েছে।পাত্র আরো বলতে শুরু করলো নবনিতা রুপে,গুনে সব দিকে মাসআল্লাহ আমাকে যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে নবনিতাকেই বিয়ে করবো।আপনারা যদি রাজি থাকেন তাহলে নবনিতাকে কিছু পরিয়ে যায়।এমন একটা ধামাকা নিউজ হবে সেটা তো ভাবতেই পারি নি আমি।মা আর বাবা তো আকাশ থেকে পড়লেন।পাত্রর মুখে এ কি কথা।আপুর চোখ জ্বলছে রাগে।এক্ষুণি পাত্র কে গিলে খাবে।

নিরব বলে উঠলো নবনিতা তাহলে অনেক লাকি নাকি আঙ্কেল আন্টি।আপনারাই তো অনেক প্রশংসা করছিলেন এত ভাল পাত্র এ শহরে একটাও নেই তো দেখুন নবনিতার ভাগ্য কত টা ভাল।সেই বিখ্যাত ভাল পাত্র কিন্তু আমাদের নব কেই পছন্দ করেছে।আঙ্কেল আন্টি আর না করবেন না এখানেই এনগেজমেন্ট করে ফেলুন।নিরবের কথা শুনে আমি তো কোনো ভাবেই নিজের হাসি চেপে রাখতে পারছিলাম না।নিরব টা না পারেও বটে। মা বললো তা কি করে হয় একজন কে দেখতে এসে আরেকজন কে পছন্দ মৃথিলার মন খারাপ হবে তো।আমি মা কে বললাম না মা আমার একটুও মন খারাপ হবে না।দুলাভাই টা খুব পছন্দ হয়েছে আমার।তাছাড়া আপু আমার বড় আপুর বিয়ে আগে হওয়াটাই ভাল।নিরব বললো আন্টি মিষ্টি আনুন জামাই কে খাওয়াতে হবে তো।মা আর বাবা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।তারা যে এমন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় পড়বে ভাবতেই পারে নি।কিভাবেই বা না করবে এ বিয়ের কাজ।আপু রেগে মেগে বলে উঠল আপনার বয়স কত নাতনির বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করতে চান।লজ্জা করে না আপনার।বাবা এই বুইড়া মানুষ টাকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না। আমি কিন্তু সুইসাইড করবো।বেশ খানিক টা ঝামেলা হওয়ার পর পাত্র পক্ষ বেরিয়ে গেলো।

বাবা আপুকে বোঝাচ্ছে আরে মা তোমার বাবা কি মরে গিয়েছে।তুমি ভাবলে কিভাবে অমন ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিবো।তোমার জন্য রাজকুমার দেখা আছে মা।তুমি কেনো কাঁদছো মা।আপু কেঁদে বললো বাবা ওই ধরনের মানুষ যেনো এ বাসাতেই আর না আসে।এমন সময় নিরব বলে আঙ্কেল মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।বিধাতা যা ভেবে রেখেছে তার বেশী কিছুই হবে না।এক মেয়ের জন্য বুড়ো জামাই খুজছেন আরেক মেয়ের জন্য রাজকুমার খুজছেন।আঙ্কেল উপরে ঠেকে যাবেন একদিন।

বিকালে মা নিচ তলার এক আন্টির থেকে একটা জিনিস আনতে পাঠালো আমাকে।আমার সাথে নিরব উঠে লিফট এর দরজা লাগিয়ে দিলো লিফট এর।আমি নিরব দেখে অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলাম।নিরব লিফট এ হাত বাঁধিয়ে আমাকে বলে মানুষের বিয়ে কিন্তু কেউ দাওয়াত ও দিলো না।নিরব কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে গেলে নিরব আমার হাত ধরে আমার চোখে মুখে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে ইস যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।এত খাটাখাটনি করলো আম্মুর ছেলে তার বৌমার জন্য আর এখন আমাকেই অপরাধী করা হচ্ছে।আমি উনার আঙুল টা ধরে মৃদু কন্ঠে বললাম কি করেছেন শুনি।

নিরব আমাকে বলতে শুরু করলো,,

শুনুন মহারানী কি করেছি আমি।প্রথমে পাত্র পক্ষের নাম্বার নিলাম তার সাথে দেখা করলাম। পাত্র কে বললাম যে মেয়েকে দেখতে যাচ্ছেন ওর জ্বীন ভূতের সমস্যা আছে তাছাড়া বিছানায় হিসু করে।ওই মেয়ে ভুলেও বিয়ে করবেন না।তবে মেয়ের যে বড় বোন আছে গিয়ে ডিরেক্ট বলবেন নবনিতাকে পছন্দ হয়েছে আমার।আর বড় মেয়ের নামে বাড়ির সব সম্পত্তি।আরো কত্ত কি করে ম্যানেজ করলাম।

আপনি ভাবলেন কিভাবে ম্যাডাম ওই ভুটকোর সাথে আপনার বিয়ে আমি হতে দিবো।

আমি হেসে বললাম এটা যদি আম্মুর নিষ্পাপ ছেলের কাজ হয়।তাহলে পাপি ছেলের কাজ কেমন?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here