হিয়ার মাঝে পর্ব ২৬+২৭

#হিয়ার_মাঝে
২৬
#WriterঃMousumi_Akter

কেটে গিয়েছে তিন দিন বাড়িতে আমাকে নিয়ে তুমুল অশান্তি হতো কিন্তু সেটা হলো না কারণ নিরবের বাবা মা আসছেন বাসায় যার জন্য বাসা গোছগাছ করতে হয়েছে।বাসার প্রতিটি কোনা পরিষ্কার করা হয়েছে।উনারা একদিন আগেই হোটেলে উঠেছেন আজকে এ বাড়িতে আসছেন।আমাকে আড়াল করে কিছু একটা করছে তারা যেটা আমি বুঝতে পারছি না।আমার আড়ালে অনেক লুকোচুরি চলছে সন্দেহ হলেও বুঝতে পারছি না আমি।

মা আর বাবা আপুকে বলছে সুন্দর ভাবে সাজগোজ করতে।নিরবের বাবা মায়ের যেনো আপুকে দেখেই তাক লেগে যায়।আপুও আজ মারাত্মক রকমের খুশি।বাবা আমাকে ডেকে বললেন আজ নবনিতার জীবনের ভীষণ ইমরটেন্ট দিন।তুমি যেনো কোনো সিনক্রিয়েট করো না।আমি বাবাকে বললাম আমাকে নিয়ে ভাববেন না আপনাদের কোনো কাজে ঝামেলা কখনো করি নি আর করবো ও না।

নিরব এক হাত বুকে বেঁধে আরেক হাত দিয়ে ঠোঁট এ স্পর্শ করে খানিক টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে কি দেখছে ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে।আমি চোখ ইশারা করলাম কি? নিরব একটু একটু করে এগিয়ে আমার কাছে এসে বলে শুনেছি মানুষ বিয়ের আগে আরো সুন্দর হয় সত্যি কি তাই।আমি বললাম তা কার বিয়ে শুনি।

-নিরব বলে আমার বিয়ে,দেখো তো আমি সুন্দর হয়েছি কিনা।

-ঠাট্টা করছেন।এমনি সুন্দর মানুষ আলাদা করে কি সুন্দর হবেন।

-আমি সুন্দর না হলেও আম্মুর বৌমা কিন্তু পুরাই আগুন

-আগুনে পুড়িয়ে দিবো কিন্তু।

-আগুনে তো পুড়ছি যত পুড়ছি ভালবাসা তত ই খাঁটি হচ্ছে।

-হয়েছে প্রেমের কবি।কবিতা ছাড়ুন এবার।

-ওকে ম্যাডাম এবার যা হবার বাসর ঘরে হবে।আপনাকে আমার বাসর ঘরে নিতেই আব্বু আম্মু আসছে।

-আমাকে নাকি আপুকে নিতে।

-তোমার আপু আমার বাসর ঘরে।একটা মেয়ে হলো ও।আমি কেনো একটা গরু ও এমন ডাইনি শাকচুন্নি মেয়েকে বিয়ে করবে না।এক্সকুউজ মি তুমি কোন সাহসে ওর নাম টা নিলে আমার সাথে।একটা থাপ্পড় মারবো যাতে এগুলো বাজে কথা আর মুখ দিয়ে না বেরোই।

-দেখুন আমার খুব ভয় করছে আপনার বাবা কি আমায় মেনে নিবেন।

-আমার বাবা তার ছেলেকে ভাল ভাবেই চিনে।শোনো আমার হয়তো এভাবে কাজ টা করা উচিত হচ্ছে না। আমার আগেই সব টা ক্লিয়ার কর উচিত কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই করছি না।তোমার মা আর নবনিতার সঠিক শাস্তি দেওয়ার জন্য।তোমার মা বাবা যে প্লান করছে আমার সাথে নবনিতার বিয়ে দিবে তা উনারা কি আমার কাছে একবার ও শুনেছেন শুনেন নি তো।আমি তো বুঝতে পারি নবনিতার একটা টান আছে আমার দিকে।শোনো ওরা লোভী তো চাই যে আমার সাথে বিয়ে হলে আমেরিকা চলে যেতে পারবে।বা আমাদের যে অর্থ সম্পত্তি আছে ওদের সেগুলোর লোভ।এসব কি আমি বুঝি না।আমাকে ভালবাসা বুঝালে কাজ হবে।তোমার মা বাবা যখন আমার কাছে শোনার প্রয়োজন মনে করে নি তাই আমিও বলার প্রয়োজন মনে করছি না যে আমার তাদের মেয়েকে এক বিন্দু ও পছন্দ না।আম্মু তো সব টাই জানে।আর আমিও ইচ্ছা করেই আম্মুকে আব্বুর কাছে ক্লিয়ার করতে নিষেধ করেছি ব্যাপার টা।মনে আছে মৃথিলা নব কে দেখতে এসে পাত্রপক্ষ তোমাকে পছন্দ করায় কি অমানবিকের মতো মেরেছিলো তোমায়।এবার তার ই উপযুক্ত বিচার হবে।আসলে আমি ভাল ছিলাম মিথু আম্মুর নিষ্পাপ ছেলেই ছিলাম কিন্তু এখানে এসে আমিও পাপি হয়েছি।আই হেট মাই মাইন্ড মিথু আই হেট মাই মাইন্ড।তুমি শুধু আজ খেলা দেখবা আর চিল মুডে ঘুরবা।

মুনতাহা ফোন দিয়েছে ভিডিও কল রিসিভ করেই মুনতাহা আমাকে বলে কিরে পিচ্ছি গিয়েই ভুলে গিয়েছিস।।।

আরে না আপু।এখানে আজ এক ধামাকা হবে শুনছি।

কিসের ধামাকা।

আপু শেষ হলে বলো।মামা,মামি,দাদু কোথায়?..

পেছন থেকে সবাই আমাকে দেখছে আর হাসছে।আমি দাদুকে বললাম হ্যালো সুইটহার্ট কেমন আছো।দাদু আমাকে বলে দিদি তুই কবে আসবি।মামা বলে মামনি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।

খুব শিঘ্রই আসবো।বিকালে ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা নিও পাঠিয়ে দিয়েছি মামা।তুমি আগে নিজের চিকিৎসা করাও।

এত টাকা কোথায় পেলি তুই।

সব পরে বলবো এখন রাখছি রাতে আবার ফোন দিবো।

সকাল সাড়ে এগারো টার দিকে নিরবের মা বাবা আমাদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলো।নিরবের মায়ের মুখ টা নিরবের মতোই হয়েছে।আমাকে দেখেই মন ভাল হওয়ার মতো মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।তার মানে উনি আমায় চিনে ফেলেছেন।বেশ লজ্জা ও পেয়ে গেলাম।
প্রায় এক ঘন্টা সবাই খোশ গল্পে মেতে থাকলেন।নিরবের বাবা নবনিতা আপুর দিকে তাকিয়ে বলেন এটা কি আপনাদের বড় মেয়ে মা বাবা বলেন হ্য এটাই আমাদের বড় মেয়ে।ভারী মিষ্টি,রূপে লক্ষি।নিরবের মা আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে এটা বুঝি সেই ছোট্ট মৃথিলা।দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গিয়েছে।নিরবের বাবা বলেন তাহলে আশরাফ আমাদের তো ফোনে কথা হয়েই গিয়েছে।আমাদের এখানে কি উদ্দেশ্য আশা জানোই তো।নিরবের মা বলে হ্যা আর ছেলের বউ নিতেই এসছি।

নিরব দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।বার বার আমার দিকেই তাকাচ্ছে।আমার সাথে চোখে চোখ পড়তেই চোখ টিপে দিলো।এইদিকে বুকের মাঝে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে আমার।কি থেকে কি হয় বলা যায় না।

-নিরবের বাবা হুট করেই আপুর গলায় গোল্ড এর চেইন পরিয়ে বললো আমার ছেলের সাথে সুখি হও মা।নিরব তোমাকে পছন্দ করে আমার ছেলের পছন্দ মানেই আমার পছন্দ বুঝলে মা।

-নিরবের মা নিরবের বাবা কে বলে তোমার চেইন দেওয়ার সাথে ছেলের সুখি হওয়ার কি রিলেশন বুঝলাম না তো নিরবের বাবা।

-তুমি না বলেছিলে আশরাফ এর মেয়েকে তোমার ছেলের বউ বানাবে।

-বানাবো বলেছি তোমাকে কি হুট করেই চেইন পরিয়ে দিতে বলেছি।বন্ধুর মেয়েকে কিছু দেওয়ার হলে আলাদা কিনে আনতে আমার ছেলের বউ এর জন্য যেটা এনেছি সেটা দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো।

-দেখো শিলা তুমি নিজেই বলেছিলে আশরাফ এর মেয়ের কথা।

-হুম বলেছিলাম কিন্তু উনার তো মেয়ে একটা নয় দুটো।আর কোনটাকে বউ বানাবো সেটা তো বলি নি।আমার মৃথিলা কে পছন্দ।

-নিরবের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে চমকে গেলেন আপু সহ মা বাবা সবাই।আর নিরব মুচকি হেসে যাচ্ছে

-বাবা বলেন এটা আপনি কি বলছেন ভাবি আমরা তো নবনিতা আর নিরব এর বিয়ে ঠিক করেছি।নিরবের তো নবনিতাকেই পছন্দ।

-দেখুন বিয়েটা সারাজীবন এর ব্যাপার।এটা আপনি আর আমি ঠিক করলেই তো হবে না।এখন কার যুগের ছেলে মেয়ে তারা যাকে ভালবাসবে তার সাথেই বিয়ে দিতে হবে।তাছাড়া নিরব তো আপনার মেয়েকে কখনো বলে ন যে সে আপনার মেয়েকে ভালবাসে বা বিয়ে করতে চাই।

-মা বলে নিরবের তো মতি গতি এমন ই লাগে।

-আপনারা নিজের থেকে অনেক কিছুই ভেবেছেন।কিন্তু নিরব এ বাড়িতে এসেই মৃথিলাকে পছন্দ করে।আর নিরবের ভালবাসার নাম মৃথিলা।তাছাড়া আমি মা সে তো যাকে ভালবাসবে তার কথাই আমাকে বলবে।আমার ছেলে ক্লিয়ারলি আমাকে বলে দিয়েছে সে বিয়ে করলে মৃথিলাকেই বিয়ে করবে।

-মা বলে দেখুন ভাবি আমার মেয়ে এটা সহ্য করতে পারবে না।ও নিরব কে খুব ভাল বাসে।তাছাড়া বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে আমরা কিভাবে দেই ভাবি।

-সহ্য তো অনেকেই অনেক কিছু করতে পারে না তাও করতে হয়।আপনার মেয়ে যেমন নিরব কে ভালবাসে তেমনি আমার ছেলে ও মিথুকে ভালবাসে হিসাব সমান সমান।বড় মেয়ে রেখে দুদিন আগেই তো ছোট মেয়ের জন্য পাত্র দেখেছিলেন।তখন হিসাব ছিলো না এটা ভাবি।

-বাবা বলে নিরবের বাবা কে দেখ এখন যদি নিরব নবনিতাকে বিয়ে না করে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে না।মিথুর দিক টা আমি সামলে নিবো তুই নিরব কে বোঝা।

নিরব বলে উঠলো আঙ্কেল সব সময় মিথুর দিক টা আপনাকে সামলানো লাগবে না।আমি আছি মিথুকে সামলানোর জন্য।আমার কাট এন্ড ক্লিয়ার কথা শুনে রাখুন আমি মৃথিলাকে বিয়ে করতে চাই।নবনিতাকে কে আমার এক বিন্দু ও ভাবনা নেই।এখন যদি আপনারা নিজের ইচ্ছায় না দেন আমি মিথুকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।বাকিটা আপনাদের ব্যাপার।

নিরবের আম্মু আপুর গলায় অন্য একটা চেন পরিয়ে আগের টা খুলে নিয়ে আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলেন এটা আমার বৌমার জন্য বানিয়েছিলাম। আমার কপালে একটা চুমু দিলো।আর মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করলো সুখি হও মা।
#হিয়ার_মাঝে
২৭.
#WriterঃMousumi_Akter

বাসার মাঝে গম্ভীর এবং থমথমে একটা পরিবেশ।আপু কেঁদে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।মা তো বিশ্রি গলায় বলে উঠলো নিরবের আম্মুকে শিলা আপা আপনি জেনে শুনে ওই মেয়েটাকে ছেলের বউ বানাচ্ছেন।আপনি জানেন না ওর মায়ের চরিত্র কেমন ছিলো। একটা দুঃচরিত্রার মেয়ে ও।ওর চরিত্র ও হুবহু এক ই হবে।আপনার ছেলের জীবন নষ্ট হবে।আপনি মা হয়ে এমন ডিসিশন কিভাবে নিচ্ছেন।যে মেয়েকে আমরাই মেয়ে বলে মানি না সেই মেয়েকে আপনার ছেলের জন্য পছন্দ করছেন।

নিরব বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে আন্টি ব্যাস অনেক হয়েছে।ওর শরীরে আপনার হাজবেন্ড আশরাফ সাহেবের ও মহা পবিত্র রক্ত আছে।এখন কার চরিত্র ও বহন করবে সেটা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।তাই রক্তের দোষ দিলে আপনার স্বামির ঘাড়েই আগে পড়বে।আর বারবার আপনি ওর মায়ের দোষ না দিয়ে আঙ্কেল এর দিকেও আঙুল তুলুন।এবার নিরব বাবার দিকে তাকিয়ে বলে কি আঙ্কেল অতীত কি কিছু মনে পড়ে।আপনি বলেন আন্টিকে হোয়াট ইজ কাহিনী।আপনার লজ্জা করে না আঙ্কেল নিজের সন্তানের সাথে এমন ব্যবহার করতে।উপরে গিয়ে কি উত্তর দিবেন।আপনার বিবেক কে কি উত্তর দিবেন।মৃথিলা মায়ের দোয়া কি পুরাটাই ছিলো নাকি আপনার ও ছিলো।আপনার ঘাড়ে কি ছুরি ধরেছিলো বিয়ে করতে।একদিন যে মেয়েকে এত অবহেলা করছেন সেই মেয়ের পায়ের তলায় এসে পড়তে হবে।

নিরবের আম্মু বলে আপনারা বিষয় টা এত সিরিয়াস নিচ্ছেন কেনো? সৃষ্টি কর্তা যার সাথে যার জুড়ি রেখেছেন সেটাই হবে।তাছাড়া নিরব আর মৃথিলার মাঝে একটা রিলেশন আছে কিন্তু নবনিতা আর নিরবের মাঝে তেমন কিছুই ছিলো না।ব্যাপার টা একটু বেশী বাড়াবাড়ি হচ্ছে সানজিদা আপা।আর আমি কারো জাত বাংশ দেখতে আসি নি আমার ছেলের ভালবাসা দেখতে এসেছি।

মা বলে আমি জানতাম ওই মেয়ে ঠিক ই একটা ঝামেলা লাগাবে।মা বাবার উপর তেড়ে গিয়ে বলে ওর মা তোমার মাথা খেয়েছিলো এখন তার মেয়ে আমার জামাই এর মাথা খেয়েছে। ওরা মা মেয়ে মিলে আমাদের সব সুখ শান্তি ধ্বংস করে দিলো বলেই মা আপুর রুমে চলে গেলো।

বাবা ক্লিয়ার লি বলে দিলেন নিরব দের দুঃখিত আমি মৃথিলার বিয়ে দিতে পারবো না আমার এক মেয়েকে কষ্ট দিয়ে আরেক মেয়ের বিয়ে কিছুতেই দিতে পারবো না।আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি কিছুই বলছি না।এরা তো আমাকে আজ গরম তেলে দিয়ে ভেজে ফেলবে।আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি।

নিরব বাবাকে বলে ঠিক আছে আমরা মিথুকে নিয়েও চলে যাচ্ছি এখান থেকে।বাবা কোনো কথার উত্তর দিলেন না।

নিরবের মা বাবা বাসা থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন ই আপু এসে আটকে দিলো।আঙ্কেল আন্টি জাস্ট ভুল বোঝাবুঝি হইছে নিরব আর মিথুর ই বিয়ে হবে আর আমি ইনজয় করবো বিয়েটা।বিশ্বাস করুন আমি ভীষণ ইনজয় করবো আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল টা।মিথু আমায় ক্ষমা করে দে তুই।আমি অনেক অন্যায় করেছি প্লিজ ক্ষমা করে দে আমায়।আসলে নিরব ভাইয়া কে জাস্ট একটু ভাল লেগেছিলো আমার কিন্তু নিরব ভাইয়া সত্যি মিথুকে ভালবাসে এটা বুঝতেই পারি নি।

বাবা বলেন মা নবনিতা কি বলছো এসব।আমি পারবো না মেনে নিতে এ বিয়ে।

প্লিজ বাবা মিথু তো তোমার ই মেয়ে, আমি যদি কষ্ট না পাই তাহলে তোমরা এমন করছো কেনো?.আপু জোর করে মা বাবা কে রাজি বানালো এই বিয়েতে।এক পর্যায়ে অস্বাভাবিক হওয়া পরিবেশ আপুই ঠিক করে দিলো।অফিসিয়ালি আমাদের দুজনের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো।কিন্তু আমার মনে কেমন একটা লাগলো আপুর হঠাত বদলে যাওয়া আবার কোনো কাহিনী নেই তো।

নিরবের আম্মু আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেন আমি জানতাম আমার ছেলে এই রাজকন্যাকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে।আমি অনেক দিন এই চিন্তায় ছিলাম মা কবে তোমায় এখান থেকে উদ্ধার করবো।।

আন্টি আপনি কি বলছেন এসব।

এমন সময় নিরব এসে বলে জ্বী আপনার আন্টি এই সর্বনাশ টা করেছে।এই নিষ্পাপ ছেলেকে জোর করে প্রেম ভালবাসায় আবদ্ধ করে দিলো।

নিরবের আম্মু ফাজিল ছেলে বলে বললো আমি তো ঠিক জায়গা ই পাঠিয়েছিলাম।

আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম উনি কি বলছেন আন্টি।

তখন নিরব বললো আমি বলছি বাকিটা ম্যাম।

আম্মু সব সময় আমাকে কড়া নির্দেশ দিতো আমার নাকি কোনো মেয়েকে দেখে ক্রাশ খাওয়া যাবে না।আমার জন্য নাকি ক্রাশ নিষিদ্ধ। কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন করা যাবে না।আম্মু রোজ আমাকে বলতো সে নাকি আমার জন্য বাংলাদেশে বৌমা ঠিক করে রেখেছে ছোট বেলায়।আম্মুকে আমাকে দিয়ে প্রমিন করিয়েছিলো বাংলাদেশে একটা মেয়ে আছে মা মরা এক অসহায় মেয়ে যে কিনা খুব কষ্টে আছে। তার জীবনে ভালবাসার মতো কেউ নেই।আমি যেনো মেয়েটাকে গিয়ে উদ্ধার করি।মেয়েটার জীবনে পূর্ণতা এনে দেই।তখন আমি ভাবতাম আম্মু কি পাগল কোন ছোট বেলায় কাকে না কাকে দেখেছে সে এখন কেমন দেখতে তার ঠিক নেই।কিন্তু আম্মুর কথা কানা,খোড়া বোবা যায় হোক একটা মরা মানুষ কে কথা দিয়েছিলো যে তার মেয়েকে ছেলের বউ বানাবে এই ওয়াদা তার রাখতেই হবে।মায়ের কথায় আমার কাছে সব। তাছাড়া ছোট বেলায় নাকি আমরা জামাই বউ খেলতাম খুব। আম্মুকে নাকি খেলার ছলে বলেছিলাম মিথুকে আমার বউ বানাবো।সেই সূত্র ধরে আমাদের দুজনের মা কথা দিয়েছিলো আমাদের বিয়ে দিবে বড় হলে।তারপর আমার ছুটে আসা এই নগরীতে।তারপর তোমার সাথে দেখা সেই প্রথম দেখাতেই হার্ট এট্যাক হওয়ার উপক্রম।

আমি নিরবের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম আন্টি আজ তোমার জন্য আমি অনেক কিছু পেয়েছি।তুমি এত ভাল কেনো আন্টি।সেই কত গুলো বছর আগের কথা এখনো মনে রেখেছো।তুমি কাছে না থেকেও দূরে থেকেও সারাজীবন আমায় এত টা ভালবেসে গিয়েছো।জানো আন্টি আমি আগে যদি জানতাম এই পৃথিবীতে আমাকে ভালবাসার মতো মানুষ আছে তাহলে এতদিন কাঁদতাম না।আর কাঁদতে হবে না মা।আমরা এসে গিয়েছি সব কাঁন্না শেষ মা।আমার সংসার টা তোমার হাতে দিতে পারলেই শান্তি মা।

এমন সময়ে বাবা খুব জোর গলায় ডাকছে।আমি বাবার রুমে গেলাম সেখানে মা আর আপু ও আছে।

আমি বাবাকে গিয়ে বললাম কিছু বলার জন্য ডেকেছেন।।
ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা কোথায় গিয়েছে মৃথিলা।

আপমার ব্যাংকের টাকা কোথায় গিয়েছে সেটা আমি কিভাবে জানবো অদ্ভুত ব্যাপার।

আমার ব্যাংক নয় ওটা তোমার ব্যাংক ওখান থেকে আজ ৫ লাখ টাকা তুই সাইন দিয়ে নিয়েছো।কিন্তু কেনো নিয়েছো।এই প্রথম বার তুমি ব্যাংক থেকে টাকা তুললে কার অনুমতিতে।

আমি কিছু টা হেসে নিয়ে বললাম আমার ব্যাংকের টাকা আমি কি করেছি সেই কইফত আপনি চাইছেন কেনো?আপনার কি সেই রাইট আছে।তাছাড়া এতদিন জানতাম না যে আমার ই ব্যাংকের টাকা আমাকে দিয়ে সাইন করিয়ে আপনি নেন।অথচ স্কুলের ফিসের জন্য হাজার বার হাত পাততে হয়েছে আপনাদের কাছে।আগে যদি জানতাম এই টাকা আমার তাহলে সব এতিম খানায় দিয়ে দিতাম আপনাদের মতো জানোয়ার দের ভোগ করতে দিতাম না।

মা আমার দিকে তেড়ে এসে বলে যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। আমরা জানোয়ার?

মিষ্টার আশরাফ আপনাকে বাবা ডাকতে ঘৃনা লাগে আমার।আমার মায়ের এত সম্পত্তি এতদিন আপনারা ভোগ করার পরেও এখনো এত টাকা থেকে গিয়েছে তাহলে আপনার প্রথম স্ত্রী কেনো বলে আমার মা টাকার লোভে আপনাকে বিয়ে করেছিলো।নাকি আপনি টাকার লোভে আমার মাকে বিয়ে করে তার পুরো জীবন টা নষ্ট করেছেন।সব কিছু আমি খুজে বের করবো সেদিন কাউকে ছাড়বো না আমি।

বাবা বলেন দেখো মৃথিলা আমি তোমার বাবা আমার অধিকার আছে তুমি কোথায় কি করলে সেটা জানার।আমাকে এখন বলো টাকা কি করেছো।না হলে খারাপ হয়ে যাবে।

দেখুন বাবা আমার সাথে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে বিগত সব টাকা পয়সার হিসাব দিতে হবে।

বাবা রেগে গিয়ে বলেন খুব বুলি ফুটেছে কিসের টাকা।এসব আমার টাকা।আমি তোমার মায়ের নামে দিয়েছিলাম আর সে তোমার নামে করে গিয়েছে।তোমার মা আমার সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতি করেছে।

আপনার হিটলারি ব্রেইনের সাথে পারবো না আমি।তবে আমি আপনাকে কোনো কিছুর হিসাব দিতে পারবো না।দিনের পর দিন এ বাড়িতে আপনার বড় মেয়ের ইউজ করা ড্রেস আমাকে পরতে হয়েছে।খাওয়া শেষে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছেন আর আমি ছোট একটা বাচ্চা একে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটিয়েছি।সুপ্তি আম্মু আমাকে আশ্র‍য় দিয়েছে রাতে।আমার অতীত বড় ভয়ানক।সে গুলোর হিসাব একদিন আপমাদের হয়ে যাবে।

আমার এমন প্রতিবাদী ব্যাবহারে মা আর আপু, বাবা সবাই অবাক হয়ে গেলো।কেউ এটা আশা করে নি আমি এমন কিছু করবো।

সেদিন রাতে আমি নিরবের আম্মুর কোলে মাথা রেখে ঘুমালাম।সারারাত আন্টির গল্প শুনলাম।

পরের দিন সকালে স্টোর রুম পরিষ্টার করতে গিয়ে একটা ডায়রি পেলাম।ডায়রির গায়ে লেখা ছিলো আরু।দেখেই আমি অবাক হয়ে গেলাম কি ছিলো ডায়রির গায়ে লেখা।

চলবে,,,
চলবে,,
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here