#হিয়ার_মাঝে
২৮.
#writerঃMousumi_Akter
আমার ছোট্ট মৃথিলা জানি তুই এখন কিছুই বুঝিস না। তুই যে ছোট্ট একটা প্রাণ মাত্র।সারাদিন আমি তোর সাথেই কথা বলি কিন্তু তুই তো শুধু আউ আউ করে আমার কথা শুনিস।এই পৃথিবীতে এখন একমাত্র আমার তুই ছাড়া কেউ নেই।যাকে আমি আমার কষ্টের কথা বলতে পারি।তুই ও কি বড় হয়ে আমায় ভুল বুঝবি কলিজা।আমি জানি যে কোনো সময়ে যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে আমার জীবনে।বড় হয়ে একদিন এই ডায়রি টা পড়বি তুই আর সেদিন জানতে পারবি তোর মা চরত্রহীনা নয়।
বাবার আর ভাই এর অনেক আদরের আয়েশা আক্তার আরু ছিলাম আমি।অনেক মেধাবী হওয়াতে ঢাকা ভার্সিটীতে চান্স ও পেয়ে যায় আমি।অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ ঢাকা শহরে এসেছিলাম আমি।এই শহর আমার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে মা।এখানে এসে একটা মানুষের সাথে পরিচয় হয় আমার।মানুষ টা আমাকে তার মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ফেলেছিলো।আমার প্রথম ভালবাসা ছিলো।আমরা দুজনে চুরি করে বিয়ে ও করে নিয়েছিলাম।তারপর আমার পেটে তুই আসিস।তখন আশরাফ কে বলেছিলাম আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে।কিন্তু আশরাফ আমাকে বলে এই বাচ্চা নষ্ট করে দিতে।কারণ আশরাফ ওর ছোট্ট বিজনেস টা মার যায়।যার ফলে ও আর্থিক অনেক সমস্যা দেখা দেই।ও তখন নিজেই চলার মতো ছিলো না তাই আমাকে নিতে অসুবিধা ছিলো।আমি তখন আশরাফ ২০ লাখ টাকা দিয়ে দেই আমার একাউন্ট থেকে আমার বাবাকে না জানিয়েই।এরপর ও আশরাফ এর সমস্যা গেলো না।তার আরো অনেক টাকা চাই।তাছাড়া আমার ফ্যামিলি মেনে না নিলে সে আমাকে বাড়িতে নিতে পারবে না।আমি নড়াইলে গিয়ে তোর নানা কে জানিয়েছিলাম আমার ভালবাসার কথা।তারা মেনে ও নিয়েছিলো।আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম আমি যাকে ভালবাসি তাকে নিয়েই ফিরবো।তারপর ঢাকায় ফিরলে আশরাফ রাজি হয় না আমার বাড়িতে আসতে।আর প্রেসার দিতে থাকে আমালে বাচ্চা নষ্ট করতে আর আমার কাছে টাকা চাইতে থাকে।আশরাফ যখন দেখলো আমি সব গুছিয়ে নড়াইলের দিকে রওনা হলাম তখন আশরাফ বুঝতে পেরেছিলো যে আমি চলে আসলে সে আর টাকা পাবে না।তাই আমাকে সে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
আশরাফ এর বাড়িতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে যায়। আমার পায়ের তলার মাটি সরে যায়।আমি গিয়ে দেখি আশরাফের ঘরে স্ত্রী সহ একটা মেয়ে ও আছে।বিশ্বাস কর মা মৃথিলা সেদিন আমার বুকের মাঝে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিলো ভেঙে চুরে যাচ্ছিলো ব্যাথায়।আমি এই কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না।চারদিক থেকে অনেক মানুষের ভীড় হয়ে গেছিলো।অনেক মানুষ দেখতে এসছিলো।মানুষ আমাকে যা তা ভাবে বলছিলো।সবাই যখন আমাকে প্রশ্ন করছিলো আমি কেমন চরিত্রের মেয়ে মানুষ একটা বিবাহিত পুরুষের ঘর সংসার নষ্ট করেছি।আমার বুকের মাঝে জ্বলে যাচ্ছিলো।আমি অসহায় নয়নে আশরাফ এর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।এসবের উত্তর আমি আশরাফের থেকে চাইছিলাম।আমি মানুষ কে কি বলবো কোনো উত্তর ছিলো না।মানুষ আমাকে বলছিলো আমি কেনো এত টা জঘন্য কাজ করলাম।কেনো একটা সংসার নষ্ট করলাম। বুকের মাঝে নিঃশ্বাস টা আটকে এলো আমার।কি করতাম আমি তখন।কেউ ছিলো না আমার পাশে।
নবনিতার মা আমাকে দেখেই বলে রাক্ষসী বলেই আমাকে মারতে থাকে।আমি জানি উনার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া মোটেও সহস ছিলো না।কোনো মেয়েই নিজের স্বামির ভাগ কাউকে দিতে চাই না।সেদিন নবনিতার মায়ের ও বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো কষ্টে।আমাকে কেউ ঘরে প্রবেশ করতে দেই নি।বাড়িতে তুমুল অশান্তি।পাড়ার মানুষ দলে দলে এসে আমাকে গালি গালাজ করছিলো।
আশরাফের কাছে একটাই কথা জানতে চেয়েছিলাম কি দোষ ছিলো আমার আশরাফ।কেনো মিথ্যা বলেছিলে তোমার কেউ নেই আমি ছাড়া।তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বন একমাত্র আমি।কেনো বলো নি আমায় তোমার আগে একটা স্ত্রী আছে।কেনো বলো নি তোমার একটা মেয়ে আছে।আমি এখন কি করবো।সমাজের মানুষ ভাবছে আমি চরিত্রহীনা।কি দোষ ছিলো আমার আর নবনিতার মায়ের।আশরাফ আমাকে বলেছিলো সে আমাকে ভালবাসে তাই বিয়ে করেছে।আমি সেদিন আশরাফ কে বলেছিলাম আমার আগেই তোমার জীবনে অন্য কেউ আছে।তোমার জীবনে তার অধীকার বেশী।আমি কোন মুখে আমার বাবার কাছে যাবো।আমি গিয়ে বাবাকে কি বলবো।বাবাকে আমি যায় বলি তবুও তোমার সাথে থাকবো না।আমি ভুলে যাবো আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই দূর্ঘটনা।কিন্তু আশরাফ আমাকে আটকে দিলো।আশরাফ আমার সামনে সুইসাইড করতে গেলো।এইদিকে আশরাফ কে ভালবেসে ফেলেছিলাম নিজের সন্তানের বাবাকে এভাবে মরতে দেখতে ও পারছিলাম না।
তারপর আমি নবনিতার মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম যে আমি তার বোনের মতো থাকবো।কখনো কোনো অধিকার দেখাবো না।নবনিতার মা আমাকে কোনদিন ই মেনে নেন নি।আমি একদিন ও আশরাফ এর সাথে রাত্রীযাপন করিনি।আশরাফ কে নবনিতার মায়ের কাছেই পাঠিয়েছি সব সময়।এক বিন্দু স্বামির অধিকার দেখাই নি।দিনের পর দিন অত্যাচারিত হতে থাকি নবনতার মা সহ এই ফ্যামিলির সবার কাছে।আমার বাবার কাছে চিঠি পাঠাতাম কিন্তু আশরাফ কোনো চিঠি পাঠাতো না।অন্য কে দিয়ে চিঠির উত্তর লিখে নিয়ে আসতো।আশরাফ আমার থেকে রোজ টাকা নিতে থাকে টাকা নিয়ে বিজনেস দাঁড় করিয়ে ফেলে।এরপর তোর জন্ম হয়।তোর জন্মের পর শিলা আপা একদিন এ বাড়িতে বেড়াতে আসে।উনার সাথে ফুটফুটে একটি ছেলে ছিলো যার নাম ছিলো নিরব।শিলা আপাদের বাসা আমাদের এ বাসার পাশেই ছিলো।শিলা আপার কাছে সব খুলে বলেছিলাম।উনি সব জানতো।একটা সময় জানতে পারি আশরাফ আমার সম্পত্তির জন্য আমার সাথে অভিনয় করছে।তখন আমি আমার সব সম্পত্তি তোর নামে করে দেই।আর তখন ই আশরাফ এর অত্যাচার বেড়ে যায়।আমাকে কোন ভাবেই নড়াইলে যেতে দেই নি।যোগাযোগ করতে দেই নি আমার বাবার বাড়ির সাথে।জানিস সব সময় বলতাম তোকে আমার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসতে।অনেক মার খেয়েছি তোর বাবার কাছে।আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি,ভুল সম্পর্কে জড়িয়েছি,ভালবাসা চিনতে ভুল করেছি এই দুনিয়া আমাকে ভীষণ ভাবে ঠকিয়েছে।তারপর বাকি পৃষ্টা গুলো ছেড়ে।
নিজের মায়ের এই করূন কষ্টের কথা গুলো পড়ে বুক ফেটে যাচ্ছে আমার।আমার সেদিন একা ছিলো।কেউ পাশে ছিলো না।কত নির্মম ভাবে কষ্ট সহ্য করেছিলো।ডায়রি টা বুকে চেপে কাঁদছি আমি।বুক ভারি হয়ে আসছে কষ্টে।ইচ্ছা করছে বাবা নামক জানোয়ার কে খুন করে ফেলি।একবার নিজের মাকে কাছে পেতে মন চাইছে।ভীষণ ভাবে মন চাইছে।মায়ের ডায়রিটা বুকে জড়িয়ে মায়ের কথায় ভেবে যাচ্ছি আমি।এমন সময় ঘাড়ে কারো হাত পড়লো তাকিয়ে দেখি নিরব নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।নিরব দেখে যেনো আরো বেশী কাঁন্না পেয়ে গেলো আমার।নিরব আমার হাত ধরে রাস্তায় নিয়ে চলে গেলো।ফাঁকা রাস্তায় দুজনে হাঁটছি।নিরব আমাকে বলে জানো
“জীবনে পারফেক্ট মানুষের চেয়ে একজন সঠিক বিশ্বস্ত মানুষ দরকার… যে কেউ চাইলে পারফেক্ট হতে পারে কিন্তু চাইলেই যে কেউ সঠিক মানুষ হতে পারে না !!
.
অনেক চেষ্টা করার পরেও যে মানুষটার সাথে তুমি ভালো নেই সেই সম্পর্ক থেকে তোমার বেড়িয়ে আসা উচিত… জীবনে সবার আগে নিজেকে ভালো রাখা দরকার… মানুষ সম্পর্কে জড়ায় ভালো থাকার জন্য, ভালো না থাকলে বুঝতে হবে তুমি ভুল মানুষটার সাথে আছো !!
.
জীবনে ভুল মানুষের সাথে জড়িয়ে পরাটা দোষের কিছু নয়… কারণ বেশিরভাগ মানুষের জীবনে ভুল মানুষের কমবেশি আনাগোনা আছে… দোষ হলো সেটাই ভুল মানুষটাকে নিয়ে বাঁচতে চাওয়া !!
.
একজন ভুল মানুষ তোমার জীবনকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারবে না যদি তুমি তাকে খুব বেশি প্রশ্রয় না দাও… কাউকে অতিরিক্ত কিছু বিলিয়ে দিলে অনেক সময় সঠিক মানুষও বদলে যায়, সেখানে ভুল মানুষ তো আরো বেশি সুযোগ খুঁজবে !!
.
যে মানুষটা তোমার প্রতি সম্মান দেখাবে না কিংবা তোমার ইচ্ছাগুলো প্রাধান্য দিবে না বরং সব সময় তার ইচ্ছাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিবে, সেই মানুষটা সঠিক হতে পারে না… সামান্য রাগারাগি হলে কিংবা কয়েকটা দিন কথা না হলে যে তোমার খোঁজ রাখছে না, বরং দিব্যি ভালো আছে সেই মানুষটা তোমার জন্য ভুল মানুষ !!
.
যে মানুষটার সাথে তোমার ভালো সময়ের চেয়ে খারাপ সময়টাই বেশি হচ্ছে, যার সাথে তোমার বুঝাপড়া ভালো হচ্ছে না, যার সাথে তোমার মন মানসিকতাও মিলছে না সেই মানুষটাই আসলে তোমার জন্য সঠিক নয়… বরং দুইজনই একে অপরের জন্য ভুল মানুষ !!
.
উপরের চাকচিক্যময় রুপ দেখে কাউকে সঠিক বিচার করা ভুল… কারণ অনেকের শুধু উপরটাই সুন্দর ভেতরটা ঠিক ততটাই খারাপ… চকচক করলে যেমন সোনা হয়না তেমনি বাহিরের গঠন দেখেও কাউকে খাঁটি বলা যাবে না… যার ভেতরটা সুন্দর সেই মানুষটাই প্রকৃত সুন্দর এবং সঠিক মানুষ !!
.
এই সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে যার একজন সঠিক মানুষ আছে, সেই মানুষটা বড় ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যবতী… সঠিক কাউকে পেলে আগলে রেখো… কারণ জীবনে ভালো সুযোগ আর সঠিক মানুষ সহজে আসে না… খুব কম মানুষই সঠিক মানুষ চিনতে পারে !!” 🙂
আন্টি ও জীবনে ভুল করেছিলো মিথু।এতে আন্টির কোনো দোষ নেই।
আমি নিরব কে বললাম মা কে খুব মিস করছি আমি নিরব বলেই কেঁদে দিলাম।নিরব আমার হাত ধরে বলে মা তোমার সাথেই আছে মিথু।অলওয়েজ দেখছে এভাবে কাঁদলে মা ও কাঁদবে হাসো প্লিজ।
আমার হাসি আসছে না কিভাবে হাসবো।
দেখো মিথু তুমি না হাসলে কিন্তু আমি বাপ্পারাজের একটা গান গেয়ে ফেলবো।স্যাকাময় গান।যে গানে থাকবে ভীষণ স্যাকা হৃদয় বিদারক কিছু সিন।
তাই না।এত মারাত্মক গান গাইতে হবে না।বাসায় চলুন রাত হয়েছে।
হুম বাসায় যাবো আগে একটু গুনে নেই।
কি গুনবেন।
৫১,৫২,৫৩,৫৪,৫৫,৫৬,৫৭,৫৮,৫৯,১২.০০
happy birthday to you dear jaan.
আমি অবাক হয়ে গেলাম।আজ ই আমার জন্মদিন ছিলো অথচ আমি জানিনা।ঘড়িতে ঠিক রাত বারোটা বাজে।দূর থেকে দুজনে উইশ করতে করতে এগিয়ে এলো এক রিফাত ভাইয়া আরেক হলো সুপ্তি।এরা দুজন কিভাবে এলো।ভিডিও কলে মুনতাহা সহ মামা মামি নানার উইশ।আমি জাস্ট চমকে গেলাম আর সাথে বিশাল খুশি।এসব ই নিরবের আয়োজন।আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম।সুপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরে এত্ত গুলা চুমু দিয়ে দিলো।
পাশ থেকে রিফাত বলে বুঝতে পারছি পাশে একজন হ্যান্ডসাম কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওই মহিলার চুমু দিতে ইচ্ছা করছে।তাইতো আমার ভাবিটাকে গিলে খাচ্ছে।দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মিটে। ভাই নিরব আয় আমি তোকে কিস করি।
সুপ্তি কোমরে হাত বেঁধে বলে এই বিশ্রি মানুষ আপনার সমস্যা কি।আর জীবনে ব্রাশ করেছেন বলে তো মনে হয় না এই বাজে মুখে আমার দুলাভাইকে কিস করবেন।তাছাড়া আপনি কি গে নাকি হুম।
এইযে দেখুন মিস লঙ্কা বেশী কথা বললে অভিশাপ দিবো দাঁড়ি গোফ উঠে যাবে তখন ছেলে হয়ে যাবেন আপনার সাথেই গে গিরি করতে পারবো।
নিরব বলে আহা থাম না দুজনে।আজ আমার সুইটহার্ট এ পৃথিবীতে এসেছিলো।এই দিন টা আমার কাছে বিশেষ ইমপরটেন্ট।এই দিনের জন্য ই আমার জীবনে এত খুশি।নিরব আমাকে বলে আগামি কাল তোমাকে নিয়ে নৌকা ভ্রমনে যাবো মিথু।আজ আর গেলাম না কারন এই রাতের বেলা বিপদ আপদ হতে পারে।কিন্তু তোমার জন্য বিশেষ কিছু ভেবেছি।
আমি বললাম কি ভেবেছেন।?
নিরব আমাকে নিয়ে পাশের একটা পার্কে গেলো।রাতের বেলা পার্ক টা ফাকা। সেখানে লাল নীল জুনি লাইটে জ্বল জ্বল করছে আই লাভ ইউ জান মৃথিলা।উইল ইউ ম্যারি মি।
সত্যি আমি ভীষণ খুশি হলাম বলে বোঝানো যাবে না।।
আমার ১৭ তম জন্মদিন উপলক্ষে নিরব আমার জন্য সতেরো টা গিফট বক্স রেখেছে।
কত শত রকমের বেলুনের সমারোহ চারদিকে।আমার চারপাশ ঘিরে বেলুন আর বেলুন তার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছি আমি।
আমার সাইডে নিরব,সুপ্তি আর রিফাত দাঁড়িয়ে আছে।
#হিয়ার_মাঝে
২৯.(মৃথিলার বার্থডে উইশ পর্ব)
#WriterঃMousumi_Akter
মধ্যরাতের শহরে প্রিয়জনের সাথে দাঁড়িয়ে আছি প্রিয় কিছু মুহুর্ত নিয়ে।শহর এখন নিস্তব্ধতা নিয়ে আছে পাখিদের কলরব ও থেমে গিয়েছে মাঝে মধ্য দুই একটা কুকুর বা শেয়ালের ডাক ভেষে আসছে।চারদিক অন্ধকার কিন্তু পার্কের এর নির্দিষ্ট একটা কর্ণারে ঝলমলে আলোকরশ্মি। আমার মাথা সমান বেলুনের সমারোহর মাঝে দাঁড়িয়ে আছি আমি।প্রতিটি বেলুন এর মাঝে দুই একটা করে জোনাক পোকা দেওয়া।জোনাক পোকার লাইটে যে চমৎকার সুন্দর লাগছিলো সেই সৌন্দর্যের প্রেমে যে কেউ পড়তে বাধ্য হবে।চারদিকের সব জায়গার লাইট অফ।বেলুন গুলো দিয়ে Happy birthday mrithila লেখা।বেলুনের মাঝে জোনাক পোকার আলো গুলো অসম্ভব সুন্দর লাগছে।নিরব কি এই শহরের সব জোনাক পোকা ধরে ধরে এত গুলা বেলুনের মাঝে পুরেছে।এটা তো কম ধৈর্য আর কষ্টর কাজ নয়।নিরব যদি এর চেয়ে ডাবল টাকা খরচ করতো তাহলেও এত কষ্ট হতো না।সব টাই ওর হাতে করা।
বেলুনের সমারোহর মাঝে আমি দাঁড়িয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিরব কিছুক্ষণ আগে সে আমাকে অলরেডি একবার প্রপোজ করেছে।আমি চুপ ছিলাম তখন।এবারের প্রপোজ টা আরো বেশী সুন্দর। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে থুতনি তে এক হাত বাঁধিয়ে আরেক হাত বুকে বেধে দাঁড়িয়ে আছে পরনে কালো শার্ট আর কালো জিন্স।এই মানুষ টাকে সৃষ্টিকর্তা এত সুন্দর কেনো বানিয়েছেন।একটা ছেলেকে কেনো এত সুন্দর হতে হবে।এত টা সুন্দর কি না হলেই হয়।উনাকে দেখতে দেখতে ইচ্ছা করে এক জনম উনার দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেই।উনাকে দেখলেই আমার ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে প্রশান্তির এক নির্মল হাসি।এই মানুষ টাকে ঘিরেই আমার অনূভুতি। এই নিস্তব্ধ শহর কে চিৎকার দিয়ে জানাতে ইচ্ছা করছে আই লাভ ইউ নিরব।তুমি শুধুই আমার।তুমিময় বসন্তে এই মৃথিলার অস্তিত্ব শুধু।
নিরব ঠোঁট কামড়ে ধরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে এক পা দু পা করে।ও যতটা এগিয়ে আসছে আমার হার্টবিট ততটা বেড়ে চলেছে।বুকের মাঝে ধুকপুকনি বেড়ে চলেছে বেড়ে চলেছে ভালবাসার এক অস্হিরতা।শরীর কাঁপছে অজানা শিহরনে।নিরব আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছি।নিরব পলক হীন ভাবে দেখছে সেই ঠোঁট ভেজানো। নিরব যেনো আমার ভেতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ঠ নারীকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা,পৃথিবীর সব চেয়ে ম্যাজিশিয়ান নারীকে জানাই আমার জন্য আরো কয়েকযুগ বেঁচে থাকার শুভেচ্ছা।পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর মনের অধীকারী মৃথিলাকে আমার জীবনের আসার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি সে কি এই অধম কে গ্রহন করবে এই বিশেষ দিনে।পৃথিবীর সব থেকে চমৎকার মানুষ টাকে জানাচ্ছি ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি।এই সব জোনাক পোকা গুলো কে সাক্ষী রেখে এই জোনাক জলা নিশীতে তাকে ভালবাসার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সে কি আসবে আমার জীবনে।
আমার জন্মদিনে এত মারাত্মক সুন্দর সারপ্রাইজ পাবো আমি ভাবতেই পারি নি।
একটা বেলুন হাতে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম।জোনাক পোকা তাকে বলে দাও আমিও ভালবাসি তাকে।কিন্তু সে এতটা নির্লজ্জ কেনো? এভাবে সরাসরি এসে কেউ প্রেম নিবেদন করে আমার বুঝি লজ্জা করে না।সে এতটা লজ্জা দেই কেনো?..
নিরব আরেক টা বেলুন আমার দিকে ছুড়ে মেরে বলে জোনাক পোকা তাকে বলে দাও তার লাজুকতার মোহে এই নিরব প্রেমিক খুন হয়ে গিয়েছে।তাকে লজ্জা পেলে যে ভারী মিষ্টি লাগে দেখতে।লজ্জা পেলে তাকে কতটা সুন্দর লাগে সে যদি জানতো নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যেতো।তাকে বলে দাও সে যেনো আমি ছাড়া অন্য কারো সামনে এত সুন্দর ভাবে লাজুকতায় আছড়ে না পড়ে।
আমি আরেক টি বেলুন তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম,,জোনাক পোকা তাকে বলে দাও সে কেনো আমাকে নিয়ে কোনো প্রেমের কবিতা লিখে নি।আমাকে সব সময় কনফিউশনে রেখেছে কেনো?..
নিরব একটা বেলুন হাতে নিয়ে আমার কাছাকাছি এসে বেলুন টা আমার নাক মুখ ঠোঁটের সাথে হালকা ভাবে চেপে ধরে বেলুনের উপর একটা চুম্বন করে বলে,,
তোমাকে নিয়ে যেদিন কবিতা লিখবো,
পুরো পৃথিবী ছেয়ে যাবে লাল নীল ভালোবাসায়।
দেখো, সেদিন আমার কবিতার ছন্দ হারাবেনা।
ভালোবাসায় ভরপুর হবে কবিতার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর।
তোমাকে নিয়ে লিখা কবিতায় থাকবেনা হতাশা,
থাকবেনা কোন আক্ষেপ, কোন হাহাকার।
তোমার জন্য লিখা কবিতার কথা হবে আমাদের দুর্ধর্ষ প্রেমের, কথা হবে কিছু স্বপ্নের।
তোমাকে নিয়ে যেদিন কবিতা লিখবো,
সেদিন কবিতাগুলো সব শহরের অলিতে গলিতে বিলিয়ে দিবে আমাদের ভালোবাসার কথা,
বলবে অপরাজেয় এক প্রেমের কথা।
ওর সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলা কথা আর বেলুনে করা চুম্বন মনে হলে চুম্বন টা বেলুনের ভেতর দিয়ে সরাসরি আমার শরীরের শিরা উপশিরার ভিতর দিয়ে শিহরণ হয়ে বয়ে গেলো।জীবনের এত খুশি এত আনন্দ সব টাই তো নিরবের জন্য।এত বেশী খুশি তে অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো।নিজের সব লজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে গিয়ে নিরব কে জড়িয়ে ধরলাম।নিরবের বুকে মাথা দিয়ে ওর হার্টবিট এর স্পন্দন শুনছি আর চোখের পানি টপটপ করে ওর বুক বেয়ে গড়াচ্ছে।নিরব আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে এভাবে বুকের সাথে লেপ্টে থাকলে নিজেকে সামলাবো কিভাবে শুনি।এই শুনশান নিরবতায় যদি রাতের পরী এসে আমাকে নিজে থেকে ধরা দেই তাহলে তো মস্ত বড় অনর্থ হয়ে যাবে যা থেকে নিজেকে সামলানো যাবে না।অলরেডি বেসামাল হয়ে যাচ্ছি আমি মিস মৃথিলা মিথু।আমি আধো গলায় বললাম আমি এভাবেই থাকবো আপনি যা খুশি করুন।।।
পারমিশন দিচ্ছো।
হুম দিচ্ছি।।
ভয় করে না।
কিসের ভয়।
বোকা সোকা না হলে একটা ছেলের বুকের সাথে লেপ্টে থেকে কেউ বলে কিসের ভয়।
আপনি আবার ছেলে হলেন কখন।
তাহলে আমি কি মহারানী।
আপনি নিজেই ভালভাবে জানেন আপনি কি?
নিরব চুলের কাটাটা খুলে দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিলো।
নিরব আমার চুলে নাক ডুবিয়ে বলে একটা মেয়ের চুলের ও ভীষণ ভাবে প্রেমে পড়া যায় আগে জানতাম না কিন্তু সত্যি।এই মিষ্টি মেয়ে আমার জীবনে আসবে কিছু না শুধু এভাবে আমার বুকে থেকে আমার হার্টবিট শুনবে।মাঝে মধ্য বায়না করে বলবে নিরব আমাকে এক্ষুনি ওই আকাশের তারা এনে দিতে হবে,আমি আদর দিয়ে বলবো আমার চোখের তারা দেখো তোমায় দেখতে পাবে।তুমি বাচ্চাদের মতো বায়না ধরতেই থাকবে। তোমায় বায়না সামলাতে সামলাতে তোমাকে আরো বেশী করে ভালবেসে ফেলবো।আমার একতা আদুরে আর আহলাদী বউ চাই।যার হাজার রকম বায়না থাকবে আমার কাছে।অসম্ভব কিছু বায়না যা পূরনের জন্য সারাদিন ছোটাছুটি করবো আমি।
আমি বুক থেকে মাথা তুলে বললাম আমার একটায় বায়না এই আপনি টা শুধু আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন।
এমন সময় সুপ্তি এসে বলে,,
বলছি কেক কি আমরা খাবোনা।আপনারা তো দুজনে বিশেষ কেক খাচ্ছেন তাই না খেলেও চলবে কিন্তু আমাদের তো খুদা লেগেছে।।।জিজু কেক খাবো।
রিফাত বলে কি পেটুক মেয়ে এত সময় ওপাশে বসে রাক্ষসের মতো খাবার গিলছিলো।
সুপ্তি বলে, একদম বাজে কথা বলবেন না রিফাত কাকু।
আচ্ছা এই ইয়াং ছেলেটাকে কাকু বলে কি জাতির কাকি হতে চান নাকি আন্টি।
আমার সাথে আর কথাই বলবেন না।আমি কাকি হতে যাবো কোন দুঃখে শুনি।
ওকে ফাইন বলবো না তার আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার করুন আমায় প্লিজ।
ওই বিশেষ কেক খাওয়ার কথা বললেন ওটা আসলে কি। আমি কেক খেয়েছি বিশেষ কেক খাই নি জীবনে।তাই আপনার সাহায্য পেলে খেতে পারি কিন্তু।
সুপ্তি বলে ওয়েট করুন খাওয়াবো আগে মিথুর কেক কাটা টা হোক।।।
আমি আর নিরব ওদের কথা শুনে হাসছি খুব।
আমার হাত ধরে নিরব কেক কাটলো।সুপ্তি আর রিফাতের হ্যাপি বার্থডে টু বলা যেনো থামছেই না।নিরব আমার গালে খানিক টা কেক তুলে দিয়ে বলে আবার ও উইশ করছি সোনা এভাবেই হাসি খুশি থাকো আজিবন।
সুপ্তি খানিক টা কেক নিয়ে রিফাতের গালে মুখে লাগিয়ে দিয়ে বলে এটা হলো বিশেষ কেক।যে কেক খেতে হয় না মাখতে হয়।রিফাত নিজের মুখের কেক নিয়ে সুপ্তির গালে মুখে লাগিয়ে দিয়ে বলে আহা পেত্নি দারুন লাগছে।
দুটোতে মারামারি যতক্ষণ পারলো করলো।
সুপ্তি বলে নিরব ভাইয়া এই সতেরো টা বক্সে কি কি গিফট আছে।আর এত গুলা কেনো।
নিরব বলে,নবনিতা জন্মের পর থেকে প্রতিটা জন্মদিনে গিফট পেয়েছে।মৃথিলা পাই নি তাই আমি বিগত সব ইয়ারের গিফট ই দিয়ে দিলাম।বউ বলে কথা।
একটা বক্স খুলে অবাক হয়ে গেলাম আমার মায়ের সাথে আমার ছোট বেলার ছবি। আমি খুব হাসছিলাম ছবিটা দেখে।তখন নিরব আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে।নিরবের চাওনি দেখে বলি এভাবে কি দেখছেন হুম।
নিরব বলে, এক মনে তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসি!তুমি দিন দিন অনেক সুন্দর হয়ে যাচ্ছো মৃথিলা যা আমাকে দুঃচিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।মাঝে মধ্য ডিপ্রেশন চলে আসছে।তুমি এত বেশী সুন্দর হলে আমার সব কিছু ছারখার হয়ে যায়।মনে হয় এই বুঝি যে কেউ তোমার প্রেমে পাগল হয়ে যাবে।তোমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে যাবে।তারপর বলো গিফট গুলো কি পছন্দ হয়েছে।
নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম আপনি তো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গিফট। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ গিফট আপনি।এর চেয়ে দামি কিছু নেই আমার কাছে।
মুনতাহা ফোন দিয়ে আমাকে বলে হ্যালো পুচকি তোর জন্য জন্মদিনে আম্মু নিজ হাতে একটা গাউন সেলাই করছে।আর আমি তোর একটা ছবি আর্ট করেছি।কবে আসছিস বল।আমি আপুকে বললাম এইতো আপু চলে আসবো লাভ ইউ আপু।
ভীষণ সুন্দর ভাবে দিনটা উদযাপন করলাম।
অবশেষে বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফিরে যে এতটা অশান্তির সৃষ্টি হবে ভাবতেই পারি নি।বাসায় ফিরতেই বাবা আমার গালে চড় মারতে গেলেন নিরব সাথে সাথে বাবার হাত টা ধরে ফেললেন।নিরব রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে আছেন বাবার দিকে।নিরব বাবাকে বলে ও আমার ফিওন্সি ওর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবেন না।
অশান্তি এখান থেকে চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো।
#হিয়ার_মাঝে
৩০.
#WriterঃMousumi_Akter
ঘরভর্তি মানুষের সামনে বাবা আমায় মারতে তো গেলেন ই সাথে কতগুলো বাজে কথা ও বললেন।
বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে কি লজ্জার মাথা খেয়েছো।মাঝ রাতে বাড়িতে ফিরছো নেচে গেয়ে।একটা অঘটন ঘটলে মান সম্মান তো আমার ই যেতো।
মা তো সুযোগ পেলেই ছেড়ে কথা বলার মানুষ নন।
ওর লজ্জা ছিলোই বা কবে।সুপ্তিদের বাসায় যাওয়ার নাম করে এই মধ্য রাতে নিরবের সাথে যে বাইরে দিয়ে ঘুরে এলে তোমার কি একটু ও লজ্জা লাগে নি।আর হাতে ওটা কি তোমার কিসের ছবি দেখি।
নিরব বুকে হাত দিয়ে রাগান্বিত ভাবে কপালে কয়েক টা ভাজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিরব বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে আজ একটা বিশেষ দিন সেটা কি মনে আছে আপনার।
বাবা,,কিসের বিশেষ দিন।।।
আজ যে আপনার মেয়ের জন্মদিন সে নিয়ে তো কোনো কিছুই দেখলাম না আপনার মাঝে।অথচ নবনিতার জন্মদিনে এ বাড়িতে জাকজমক অনুষ্টান হয়।আচ্ছা আঙ্কেল একটা মেয়ের জন্ম দিতে পারলেন অথচ তার জন্মের দিন টাই মনে রাখতে পারলেন না।আর দুঃচিন্তার কথা যদি বলেন তাহলে বলবো সেদিন যে মেয়েকে মধ্যরাতে জঙ্গলে ছেড়ে এসছিলেন সেদিন কোথায় ছিলো চিন্তা।বিলিভ মি আঙ্কেল আই এম সরি টু সে আপনাকে সম্মান এর থেকে বেশী আমি আর দিতে পারলাম না।আপনার কি আমাকে চরিত্রহীন মনে হয় আমার সাথে আপনার মেয়ে বাইরে গিয়েছে বলে এতগুলা কথা শুনালেন।আমি কি বুঝি না কোন ইনটেনশনে আপনি কথা গুলা বললেন।আর আন্টি আপনাকে বলছি নবনিতাকে নিজেই আমার দিকে ঠেলে দেন আর মৃথিলা গেলেই যত সমস্যা তাইতো।মৃথিলা একা ছিলো না সাথে সুপ্তি আর আমার ফ্রেন্ড ও ছিলো।আর দেখুন মৃথিলার নাকে যে নাকফুল সেটা আমার ই দেওয়া ওর সাথে আমার বিয়ে আগেই হয়ে গিয়েছে।আশাকরি এর পর থেকে আমার সাথে মেশা নিয়ে মিথুকে কথা শোনাবেন না।আর আপনাদের সে অধিকার ও নেই।আপনারা আমার ভাল ব্যবহার টা দেখেছেন খারাপ টা দেখার চেষ্টা ও করবেন না। আমি ভালোর সাথে ভীষণ ভালো খারাপের সাথে কতটা খারাপ সেটা ভাবতেও পারবেন না।
আমি ও কারো কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে গেলাম।বাবা আমার সাথে আমার রুমে গেলেন।বাবাকে দেখে আমি সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলাম একি আপনি?কিছু বলবেন নাকি আজ ও গলা টিপে মারতে এসেছেন।
বাবা বলেন,,মৃথিলা তুমি এত গুলো টাকা কি করেছো।একাউন্ট থেকে প্রথমে ৫ লাখ এখন আবার ১০ লাখ ১৫ লাখ টাকা কি করেছো?.
আমি বাবার দিকে সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে বললাম আচ্ছা এই টাকা কি আপনার?আপনি কেনো আমায় প্রশ্ন করছেন এই টাকা নিয়ে।দেখুন আশরাফ সাহেব আপনাকে আমি এই জীবনে আর কোনদিন বাবা বলে ডাকবো না। কথাটি বলেই চোখ দিয়ে পানি ফেললাম আমি।আপনি আমার মায়ের সাথে যেটা করেছেন আপনাকে যেকোনো শাস্তি দেওয়াটাই ভুল হবে।এত লোভ আপনার টাকার।শুধু মাত্র টাকার জন্য আমার মায়ের জীবন টা আপনি নষ্ট করেছেন সেই সাথে নষ্ট করেছেন আমার শৈশব।
বাবা আমার কথা গুলো এড়িয়ে যাবার জন্য বলেন তোমাকে কে এসব বাজে কথা গুলি বলেছে।কে তোমার কান ভাঙিয়েছে।
আমি মায়ের ডায়রি টা বাবার দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললাম এটা আমার মায়ের লেখা।কিন্তু এর বাকি পৃষ্টা গুলো নেই।কি করেছিলেন আমার মায়ের সাথে।
তোমার মায়ের সাথে আমি কিছুই করি নি।বিয়ে করলেই কি মানুষের জীবন নষ্ট হয়।সমাজে কি মানুষ দুইটা বিয়ে করে না।
হ্যাঁ করে আপনার মতো মিথ্যা বলে মানুষকে ঠকিয়ে একটা সাজানো গোছানো ফ্যামিলি কেউ ধ্বংস করে না।
ছোট বেলায় যদি সবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে এ বাড়িতে না রাখতাম তাহলে আজ এত উচু গলায় কথা বলার সাহস পেতে না।
এ বাড়িতে রেখেছেন কোথায় পেয়েছেন এ বিলাসবহুল বাড়ি।সব ই তো আমার মায়ের সম্পত্তি দিয়ে করেছেন আজ সব নিজের নামে করে নিয়েছেন।আপনার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো সঠিক প্রমান নেই এটা ঠিক। তবে উপরে একজন আছেন।তার কাছে সব প্রমাণ আছে।একদিন এই ফাকি দেওয়া সম্রাজ্য থাকবে না।আপনার ফ্যামিলি কে আমার কাছে এসে সাহায্য চাইতে হবে।আপনাদের এই অহংকার থাকবে না।
এমন সময় মা আমার রুমে প্রবেশ করে বলেন দেখ মিথু নিরব কে তুই বলে দিবি যে তুই বিয়ে টা করতে পারবি না। আমার মেয়েকে কাঁদিয়ে তুই সুখি হবি।আজ যদি তোর মায়ের পেটের বোন হতো এটা পারতি।
আপনারা আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছেন বাকি আছে ওই ভালবাসা টুকু।আমার জীবনে সব সম্পর্ক মিথ্যা তার মাঝে সত্য এই ভালবাসা টুকু। তাই নিরবের দিকে আমি কাউকে হাত ও বাড়াতে দিবো না।
আর মা তুমি নিজেই তো কোনদিন আমাকে মেয়ে বলে মেনে নাও নি আজ তোমার মেয়েকে আমার বোন ভাবতে বলছো কেনো বলো তো।
বাবা মুড দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।সাথে মা ও গেলো।
নিরবের বাবা নিরব কে বললো
-একটু কথা ছিলো তোমার সাথে।
-বলো বাবা।
-নিরব তুমি আমাকে এভাবে ছোট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি কিনা শেষে ওই মৃথিলা নামক মেয়েটিকে পছন্দ করলে।যার জায়গা এ বাড়িতে কাজের মেয়ের সমান।
-তুমি এক্সজ্যাক্টলি কি বলতে চাইছো বাবা একটু ক্লিয়ার করো,হেয়ালি ছাড়ো।
-আমার পক্ষে মৃথিলাকে ছেলের বউ করা সম্ভব নয়।আমি নবনিতার জন্য কথা দিয়েছি ওর বাবা মা কে।আর তুমি কিনা এসে তাদের মুখের উপর বলে দিলে তুমি নবনিতা নয় মৃথিলাকে চাও।তোমার এত পধঃপতন কেনো পছন্দের।
-বাবা মৃথিলাকে পছন্দ করার জন্য বিশেষ কোনো কারণ লাগে না।ও আস্ত একটা ভাল লাগার কারণ।
-নিরব তুমি ওর অতীত জানোনা। ওর মায়ের চরিত্র।
-বাবা প্রথম কথা বিয়ে টা আমি করবো সো একজন সচেতন বাবা হিসাবে তোমার আমাকে প্রশ্ন করাই উচিত নয়।আর হ্যাঁ মৃথিলার বাবা তোমার বন্ধু বলে ভেবো না পার পেয়ে যাবে।উনার সমস্ত অন্যায়ের সাক্ষী তো তুমিও।মৃথিলার মায়ের যে কোনো দোষ ছিলো না সেটা তুমি খুব ভাল করেই জানো সো অবিবেচক এর মতো কোনো কথাই বলো না।এককজন মানুষ হিসাবে তোমার উচিত নিজের বন্ধুকে বোঝানো তার নিজের মেয়ের সাথে এমন আচরণ না করা।আর হ্যাঁ কি বললে তুমি মৃথিলার পজিশন কাজের মেয়ের মতো।আজ মৃথিলা না থাকলে এদের পরিবারের অবস্থা কাজের মেয়ের মতো হয়ে যেতো।
এমন সময় নিরবের মা বলে তুমি কোন সাহসে আমার ছেলেকে এসে ওদের হয়ে কথা বলছো।বলি বিয়ে কি তুমি করবে নাকি তোমার ছেলে করবে।আমার পই পই করে নিষেধ করে দিচ্ছি আমার ছেলেকে কোনো কিছু নিয়ে প্রেসার দিবে না।
তোমরা কিন্তু আমার প্রেজটিজ এর কথা ভাবছো না।আমি আশরাফ এর কাছে কিভাবে মুখ দেখাবো।
আর নিরব মৃথিলার কাছে কিভাবে মুখ দেখাবে।নিরব তো মৃথিলাকে কথা দিয়েছে।
তোমরা মা ছেলে যা ভাল বোঝো করো।
মা বাবাকে বলে দাও আমার সাথে যেনো বাড়াবাড়ি না করে তাহলে আমার অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না।আমাকে ধমকালেও কাজ হবে না।উনি যদি ভেবে থাকেন আমাকে উনার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবেন এসব বাংলা সিনেমার হুমকি ধামকি দিবেন আই ডোন্ট কেয়ার।আমার দুইটা শক্ত পোক্ত হাত আছে আমি নিজে ইনকাম করতে পারি।এসব পারিবারিক অজুহাত দিয়ে আমার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে সরানো যাবে না।আমার জীবনে আমি কাকে চাইবো সেটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা।
বলেই নিরব বেরিয়ে গেলো।রাগে নিরব এর গাল লাল হয়ে গিয়েছে।চোখ জ্বলছে।মনে হচ্ছে সব কিছু ভেঙে চুরে ফেলবে।
নিরবের বাবা বন্ধুত্তের খাতিরে একটু আপত্তি করলেও ছেলে অন্ত প্রাণ সে।নিরবের মায়ের ঝাঁঝানি খেয়ে ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন।
পরের দিন সকালে,, বাবা বললেন মৃথিলার বয়স মাত্র সতেরো এখনি বিয়ে হলে বিভিন্ন আইনি ঝামেলা পোহাতে হবে।তাছাড়া আমার নাবালিকা মেয়েকে এই মূহুর্তে আমি বিয়ে দিতে চাচ্ছি না।আপাতত এনগেজমেন্ট হয়ে থাকুক পরবর্তিতে বিয়ে হবে।বাবা হিসাবে নিজের মেয়ের এটুকু ভাল আমি চাইতেই পারি।
নিরব হালকা হেসে নিয়ে বলে আঙ্কেল বাল্যবিবাহ তে খুব ভাবছেন নিজের যে মেয়ের ফিউচার নিয়ে।আর বাড়িতে রেখে যে শিশু নির্যাতন করেছেন আপনার আইন কি সেটা জানে।মৃথিলার শরীরে এখনো সব কিছু স্পষ্ট আর ক্লিয়ার দাগ রয়েছে আইন কোন দিকে যাবে ভেবে দেখুন।বাল্যবিবাহ করে একটা মেয়েকে উদ্ধার করলে যদি আইন আমাকে শাস্তি দেই তো আমি মাথা পেতে নিবো।
নিরবের বাবা বলেন,, ঠিক আছে এখন কাবিন হয়ে থাকুক পরে না হয় ধুমধাম করে বিয়ে হবে।
নিরব বলে কাবিন হোক না হোক যা কিছু হোক মৃথিলা আমার বাড়িতেই থাকবে।
সব ঝামেলা শেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো।কিন্তু কথা হলো বিয়ের আগে নিরব আর এ বাড়িতে থাকতে পারবে না।নিরবের মা বাবা তাদের ফ্ল্যাটেই চলে গেলেন।পাশেই নিরব দের ফ্ল্যাট।
বিকালে আমি আর সুপ্তি বাইরে বেরিয়েছি। কারণ রিফাতের কাছে নিরব চিরকুট পাঠিয়েছে।
সুপ্তি আর রিফাত দুজনে ঝগড়া শুরু করেছে আর আমি চিরকুট পড়তে শুরু করলাম।
“তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে অতুলনীয় গল্প। যা পড়ি প্রতিদিন।
লিখি প্রতিদিন।
এ-গল্প তৈরি হয় তোমার কথায়, হাসিতে, গানে, নীরবতায়।
তোমার উপস্থিতিতে যেমন গল্প তৈরি হয়,
তোমার অনুপস্থিতিতেও তৈরি হয় গল্প।
এমন অনুপম গল্প কোথাও পড়ি নি।
সেই ছেলেবেলা থেকে আজ অবধি দেশী বিদশী যতো গল্প পড়েছি,
সেগুলোর কোনোটিই আমাকে এতোখানি বিভোর করতে পারে নি,
যতোখানি করে তোমার গল্প।
তোমার গল্প কখনো পুরনো হয় না।
একঘেয়ে হয় না।
যখনই পড়ি তখনই নতুন।
যেহেতু প্রতিনিয়ত তৈরি হয় এ-গল্প,
তাই এ-গল্পের কোনো শেষ নেই।
তোমার প্রতিটি কথায়, হাসিতে, গানে, নীরবতায় এতো গল্প সৃষ্টি হয় যে,
কয়েক জন্ম লিখেও তা শেষ করা যাবে না।
তোমার গল্প পড়ে যেমন সুখ, লিখেও তেমন সুখ। তোমার গল্প যদিও আমি লিখছি,
কিন্তু এর স্রষ্টা আমি নই।
আমি নিছক অনুকরণকারী।
তোমার সান্নিধ্যে রচিত হওয়া গল্প
মুখস্থের মতো কাগজে লিখি মাত্র।
তোমার গল্পের প্রতিটি শব্দে মেশানো থাকে সুগন্ধি ফুলের আচ্ছন্ন সৌরভ, লাল নীল রূপকথা, শরতের কোমল ছোঁয়া, পাখিদের ওড়াওড়ি, অলস দুপুরের নকশী কাঁথা, তরুণী বধূর লাজুক নয়ন, ছোট্ট শিশুর মিষ্টি হাসি, ঘাসের ডগায় বিন্দু শিশির।
প্রতিদিনকার খণ্ড খণ্ড গল্প মিলে যে-অখণ্ড গল্প তৈরি হয়, তার নাম হলো তুমি।
তুমি নামক অপূর্ব গল্পটিকে
যেদিন থেকে পড়তে শুরু করেছি,
লিখতে শুরু করেছি,
সেদিন থেকে এই ছোট্ট বুক হয়েছে অসীম আকাশ।
আর নিষ্প্রাণ চোখ দুটো হয়েছে স্বপ্নে মাতাল।
তারপর থেকে প্রচণ্ড দুঃখও আমাকে দুঃখিত করতে পারে নি।
প্রবল বেদনাও আমাকে বেদনার্ত করতে পারে নি। অসহ্য শূন্যতাও আমাকে নিঃশেষ করতে পারে নি।
বিধ্বংসী ঝড়ও আমাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে নি।
বিস্ময়কর এই গল্প আমি তাই
বিমুগ্ধ পড়ি প্রতিদিন।
লিখি প্রতিদিন।
ভালোবাসি প্রতিদিন।
প্রেমে পড়ি প্রতিদিন।
প্রতিদিন…প্রতিদিন…।
চলবে,,,
চলবে,,,