হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে পর্ব ২৪+২৫

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব ২৪+২৫
#কায়ানাত_আফরিন

৩১.
আজ আকাশটি স্বচ্ছ। নীলাভ বর্ণের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। ঢাকা ভার্সিটির টিএসসির চত্বরে খোশগল্পে মেতে উঠেছে রোদেলা আর রাত্রি। মৌনি ওদের সাথে থাকলেও মন অপেক্ষা করছে নিভ্রর জন্য। হ্যাঁ , নিভ্র ; এমন একজন মানুষ যার কথা চিন্তা করলেই মনে বসন্তের মতো ফুরফুরে হাওয়া বইতে থাকে। অপেক্ষা জিনিসটা অনেকের কাছে বিষাক্ত লাগলেও মৌনি চরম উপভোগের সাথে অপেক্ষা করছে নিভ্রর জন্য। রাত্রি আর রোদেলা একপলক মৌনির দিকে তাকালো। মৌনির সেদিকে কোনো হুঁশ নেই। ও আনমনে ঝালমুড়ি চিরিয়ে যাচ্ছে আর অপার্থিব দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

রাত্রি এবার বিদ্রুপ করে গান গেয়ে উঠলো,
”তুমি তলে তলে টেম্পো চালাও আমি করলে হরতাল
(আমি করলে হরতাল বইনা ; আমি করলে হরতাল)
শুধু ডাইনে বাইমে ঘোরাও দেইখা তিতা হইলো বন্ধুর ঝাল
(তিতা হইলো বন্ধুর ঝাল ; বইনা তিতা হলো বন্ধুর ঝাল
আরে ফুলকলি ও ফুলকলি , Fool বানাইয়া উড়াল দিলি
উড়াধুরা দুঃখের আচঁর, ঝিকিমিকি জ্বলে
চোখেতে ধুলো দিয়া ; বড়লোক করবা বিয়া
এই জ্বালাতো মিটাবো আমি ; DJ গানের base দিয়া
আর বলবো,
কয়দিনপর বেস্টফ্রেন্ডের (মৌনি) বিয়া ”

রাত্রির গান শুনে মৌনি হাসবে না কাদবে বুঝতে পারলো না। এরকম ধরনের গান এই পৃথিবীতে আছে কি-না মৌনির তা মনে হয় না। একটা বিরক্তিকর ভঙ্গি নিয়ে রাত্রির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কিন্ত মেয়েটা নির্বিকার। রোদেলাও দুজনের ভাবহীন চোখাচোখি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো। রোদেলার এই গুণ একটা বিশেষ গুণ। কিছু পারুক আর না পারুক নিজের হাসি দিয়ে পুরো ক্যাম্পাস মাথায় তুলে নিতে পারে। মেয়েদের হাসিতে ছেলেরা প্রেমে পড়ে যায় আর রোদেলার হাসি শুনে ছেলেরা ভয়ে পালিয়ে যায়।

রাত্রি এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
–”দিলি তো রৈদ্দা গানের মুডটা নষ্ট করে। কি সুন্দর করে মৌনি আর জিজুর জন্য গান গাচ্ছিলাম তোর ডাইনিরূপী হাসি শুনে দিলি মুডটা পগার পার করে।”

রাত্রির ধমক খেয়ে চুপসে গেলো রোদেলা। মৌনি এবার ওদের দুজন থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এ দৃশ্য আর নতুন না। নিত্য পরিচিত এই দৃশ্যের সাথে মৌনি ভালোভাবেই অবগত। তবুও নিভ্র আসার পর থেকে জীবনে মনে হয় যেন নতুনত্ব এসেছে।

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিভ্রকে দেখতে পেলো মৌনি। গাড়িটা পার্কিং লটে রেখে এসে রাস্তা পেরিয়ে টিএসসির দিকে অগ্রসর হচ্ছে সে। মৌনি গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকলো নিভ্রর দিকে। আজ আকাশি শার্ট পড়ে একেবারে ফর্মাল গেটাপে এসেছে নিভ্র। বুঝাই যাচ্ছে হসপিটাল থেকেই সরাসরি এখানে এসেছে। মৌনি নিভ্রকে দেখে বারকয়েক শুকনো ঢোক গিললো। কেননা এই ফর্মাল গেটাপে নিভ্রকে আজ প্রথম দেখলো মৌনি। মনের মধ্যে একটা গান বাজতে লাগলো , ”আছো কি দেখাতে আয়না সারাদিন
নিজেকে বানাতে আমার আলাদিন !”

নিভ্র আর মৌনির চোখাচোখি হতেই একটা বিস্তৃত হাসি মুখে ফুটিয়ে তুললো নিভ্র। রোদের আমেজে ট্রিম করা দাঁড়িতে নিভ্রকে অপরূপ লাগছে। নিভ্র যে কখন ওর কাছে এসে দাঁড়ালো মৌনি তা বুঝতে পারলো না। ওর ঘোর ভাঙলো রাত্রির কথায়,

–”নে , তোর ডাক্তারসাহেব এসে পড়েছে। এখন এমনে চোখ দিয়ে গিলতে হবে না। আস্ত মানুষটাই তোর।”

রাত্রি এই কথাটা বেশ জোরেই বলে ফেলেছিলো যার কারনে সবাই ড্যাবড্যাব করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনকি ফুচকাওয়ালা আর ঝালমুড়ি মামাও। মৌনি একরার গ্যাসের পিন্ডর ন্যায় রাত্রির দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মেয়ে জীবনেও শুধরাবে না। নিভ্রর দিকে তাকাতেই দেখে নিভ্র ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে। ইসসস ! কি লজ্জা।

–”ডাক্তারসাহেবের প্রেমিকা ! চলেন তাহলে। আজকে আপনার ডাক্তারসাহেবের সাথে একটু ঘুরাফিরা করবেন। প্রস্তুত তো !”

নিভ্রর এই কথায়টায় অন্যরকম এক মাদকতা মৌনির মন ছুয়েঁ দিলো। ছেলেটার কথা জাদুর মতো মৌনিকে প‍্রভাবিত করে। সৌজন্যতা বজায় রেখে মৌনি তাই বললো,

–” অবশ্যই আমি প্রস্তুত !”

নিভ্র এবার আগলে ধরলো মৌনির ডানহাত। একপলক রাত্রি আর রোদেলার দিকে তাকিয়ে দেখলো দুজনের উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিভ্র আর মৌনির দিকে। নিভ্র তাই বিদ্রুপ সরে বললো,

–”আপনাদের মহারাণীকে নিয়ে গেলাম। কৃপা করে এমন চোখে না দেখলেও চলবে ! আল্লাহ হাফেজ !”

এ কথা বলেই মৌনির হাত ধরে অন্যদিকে লে গেলো নিভ্র। রোদেলা আর রাত্রি এখনও কুম্ভকর্মের মতো সেখানে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিভ্রর কথাটা যখন দুজনেই বুঝে ফেললো আপনা-আপনি ভ্রু কুচকে আসে দুজনের। নিভ্র মানুষটা ভারীই অদ্ভুত।

—————————————-
৩২.
জহির শেখের পরিত্যক্ত আস্তানায় বসে আছে রিদান। চোখের দৃষ্টি বেশ গুরুগম্ভীর। নিজের তর্জনী দিয়ে বারবার কপাল স্লাইড করে যাচ্ছে সে। লালচে ঠোঁট দুটো চেপে নির্বিকার ভঙ্গিতে কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত। সময়ের সাথে সাথে রহস্যের জটও যেন আরও তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একে তো মৌনির কেস। জহির শেখের বিরুদ্ধ মৌনির কাছে স্ট্রং এভিডেন্স ছিলো।আর এই এভিডেন্সের জন্য মৌনির সাথে পশুর মতো আচরণ করেছে রিদান। যদিও মৌনিকে পরবর্তী অচেনা একজন প্ল্যান করে নিয়ে যায় কিন্ত রিদান এ নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি। জহির শেখের জেলে যাওয়ার জন্য রিদানের ইচ্ছে করেছিলো মৌনিকে জাস্ট খুন করে ফেলতে। কেননা ওর এভিডেন্সের জন্যই আজ ওর বাবা মিনিস্টারের আসন পদত্যাগ করেছে। এতবছর রাজনীতিতে যা নাম ছিলো সবই একদিনের ব্যবধানে ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিলো।

কিন্ত আজ সকালেই চমকপ্রদ একটা ঘটনা ঘটলো। রিদানের গুপ্তচর কোনো এক সূত্রে জেনে গিয়েছে যে এভিডেন্সগুলো মৌনি ফাঁস করেনি। করেছে অন্যকেউ। সেটা কে ! রিদান তা জানে না। যদি এ কাজটা মৌনিই করতো তবুও এই মুহূর্তে রিদান মৌনিকে কিছু বলতো না। শুধুমাত্র মৃধা নামের একটা মেয়ের জন্য। সাদামাটা ধরনের এই মেয়েটা এতবছরেও ওর মনে কোনো অনুভূতি দিতে পারেনি যেটা গত দুদিন ধরে মৃধার জন্য রিদান অনুভব করছে।

তবুও মনে একটা কৌতুহল জেগে উঠলো রিদানের। কাজটা মৌনি না করলে তবে কে করলো? মৌনির নিকট আত্নীয়? সেটা তো অসম্ভব । কারন রিদান এ ব্যাপারে পুরো খোঁজ লাগিয়েছিলো। রিদানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। পরিস্থিতিটা আরও ভীতিকর হয়ে যাচ্ছে। সেদিন রাতে মৌনির চিৎকার বেশ ভাবিয়ে তুলছে রিদানকে। মৌনিতো এতটা অস্বাভাবিক ছিলো না। তবে কি ওই ”সিজোফ্রেনিয়ার” ডোজটার জন্যই এমন হয়েছে? বাবার কথামতো মৌনিকে জোরপূর্বক সেই ইনজেকশনটা দিয়ে কি কোনো ভুল করলো রিদান?

–”ওস্তাদ !”

কারও শঙ্কিত কন্ঠ শুনে সেদিকে মনোনিবেশ করলো সে। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সবর দাঁড়িয়ে আছে। রিদানের বিশ্বস্ত একজন লোক। সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে এই লোকটাই মৌনির পায়ে গুলি করেছিলো। সবর আবারও বলে উঠলো ,

–”আমার একজনরে সন্দেহ হইতাসে ওস্তাদ। যে সব প্রমাণ ফাঁস কইরা দিসে।”

–”কে?”

–”নিভ্র আহমেদ। ”

ভ্রু কুচকে ফেললো রিদান। এই নামের কোনো মানুষকে সে চেনে বলে মনে হলো না। তাই সবরকে বললো,

–”নিভ্র এহসান আবার কে?”

–”চট্টগ্রামে যার বাসায় মাইয়্যাটা তিনদিন ছিলো। আপনি খোঁজ না নিতে বললেও আমি নিয়েছিলাম। ছেলের নাম নিভ্র । চট্টগ্রামে বাপের বাড়ি। ঢাকায়ই থাকে। এর বেশি আর কিছু জানতে পারি নাই।”

কৌতুহলাটি আরও চাড়া দিয়ে উঠলো রিদানের মস্তিষ্কে। এতদিন জহির শেখের কাজের চাপে চট্টগ্রামে মৌনি কার বাসায় ছিলো এই জিনিসটা ওর মাথায়তেই আসেনি। এই জন্য সবরকে প্রচন্ড বিশ্বাস করে সে। কাচপাকা চুলের এই মধ্যবয়স্ক লোকের এই দূরদর্শিতার গুণটা জহির শেখের রাজনীতির জীবনেও বড্ড প্রভাব ঘটিয়েছিলো। রিদান আবারও বললো,

–”মৌনি আর ওই নিভ্র কি পূর্ব পরিচিত?”

–”মোটেও না ওস্তাদ। আমি পুরা তল্লাশি চালায়ছিলাম। দুজনে পূর্ব পরিচিত না। তবে………….”

–”তবে কি?”

–”আমার মনে হয় ওই মাইয়্যাডারে আপনার হাত থেকে ওই ছোড়াটাই নিয়া গেসিলো।”

সবর আজ এতবছর ধরে ওদের বিশ্বস্ত হয়ে কাজ করছে কিন্ত রিদান পারেনি ওর মুখের ভাষা পরিবর্তন করতে। মাঝে মাঝে এমন সব বাচনভঙ্গি ব্যবহার করে যার দরুন রিদানের চোখ কপালে উঠে যায় । এখন ঠিক একই সমস্যাটা রিদানের হয়েছিলো কিন্ত রিদান সেদিকে পর্যবেক্ষণ না করে সবরের কথাটার দিকে মনোযোগ দেয়। একবাক্যের এই কথাটা রিদানের অবচেতন মনে আবারও একটা ধাঁধা তৈরি করেছে নিভ্র সম্পর্কে। যদি সেইরাতের কল করা ছেলেটা আর নিভ্র এক থাকে তবে বুঝতে হবে এই ছেলে কোনো সাধারন মন-মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ না। তীব্র বিচক্ষণতা এর শিরায়-উপশিরায় চলে যা মোটেও রিদান হালকাভাবে নিবে না।

রিদান হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বাকা হাসি দিলো। তারপর বলে উঠলো…………

–”সবর?”

–”বলেন ওস্তাদ।”

–”ছেলেটার খোঁজ নাও। আমি কথা বলতে চাই।ছেলেটা কে , কোথায় থাকে , প্রফেসন সব কিছু।”

–”আ-আসলে ও-ওস্তাদ। আরও একখান কথা ছিলো।”

রিদান খেয়াল করলো সে সবর কিছুটা কাপছে। হয়তো ভয়ে নতুবা অস্বস্তিতে। ব্যাপারটা অবাক করলো রিদানকে। কেননা সবর ই রিদানের একমাত্র লোক যে কিনা রিদানের সাথে স্বতস্ফূর্তভাবে কথা বলে। আর বাকিরা সবাই রিদানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতে হাটু কাপিয়ে ফেলতো। রিদান তাই বললো,

–”এত ভয় পাচ্ছো কেনো সবর? আমি তো জাস্ট ওই ছেলেটার খোঁজ নিতে বলেছি।”

–”মৃধা আপা ওই ছেলেটার ব্যাপারে জানে।”
চট করে বলে ফেললো সবর। রিদান আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে সবরের দিকে। ফর্সা মুখটিতে বিভ্রান্তির ছাপ।

–” মৃধা জানে মানে? এসব কি বলছো? মৃধা কেনো ওই ছেলেটার ব্যাপারে জানবে?”

সবরের কপাল দিয়ে তরতর করে ঘাম ঝড়ছে। উত্তরটি শোনার পর রিদান কেমন প্রতিক্রিয়া করবে তা জানা নেই সবরের। তবুও একবুক সাহস নিয়ে বলে উঠলো,

–”মৃধা আপাই সেদিন মাইয়্যাডারে পালাইতে সাহায্য করছিলো।আপা একটু হলেও ওই নিভ্রর ব্যাপারে জানে।”

এতটুকু বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সবর। রিদানের মুখোমুখি হওয়ার মতো সাহস এখন ওর নেই। রিদান শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো সবরের দিকে। যেনো একথাটা কোনোক্রমেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না। মৃধাই তবে মৌনিকে পালাতে সাহায্য করলো? রিদান জানে মৌনির সাথে ও যেটা করেছে সেটা অন্যায় তাই বলে মৃধা এতবড় একটা কাজ করে ফেলতে পারলো?

–”তুমি কিভাবে জানো যে কাজটা মৃধাই করেছে?”

–”আপনিই চিন্তা কইরা দেখেন। ওই ছোড়াটার কখনোই সম্ভব হইব না একা একটা মাইয়্যারে নিয়ে আসার। মৃধা আপাও চাইছিলো যে মাইয়্যাডা আপনার কাছ থেকে পালিয়ে যাক।”

রিদান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অন্য কেউ হলে তাকে শেষ করে ফেলতে রিদান দুবারও ভাবতো না। কিন্ত এটা অন্যকেউ না ; এটা মৃধা। পরপর দুবার রিদানের কথা অমাণ্য করে এমন কাজ করেছে সে। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে রিদান। আগে রংহীন দুনিয়ায় নাইটক্লাব , মদ , ফুর্তি আর মেয়ে নিয়ে সময় কাটিয়ে দিতো কিন্ত এখন পারবে না। বারবার মুখের সামনে ভেসে ওঠে শ্যামবর্ণের মৃধার মিস্টি মুখশ্রী। আর আজ মৃধার দেওয়া এত বড় ধাক্কা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সবকিছু কেমন যেনো লাগছে নিস্তব্ধ। অসহায়ত্বের ছাপ।

৩৩.
রোদের তীব্রতা কমে গিয়ে এখন চলছে মৃদু আলোর খেলা। ফুরফুরে বাতাসে আশপাশে নতুনত্বের সমারোহ। ক্ষণে ক্ষণে বকুল ফুলের মৃদু সুবাস অনুভব করছে মৌনি।যদিও এখন বকুল ফুলের সময় না তবুও এমন মৃদু ঘ্রাণ কি মৌনির অবাস্তব কল্পনা নাকি অকপটে দৃশ্য তাই ভাবার বিষয়। ছোট্ট একটা লেকের পাড়ে বসে আছে দুজনে। জায়গাটা বেশ সুন্দর। ২০১৭ সালে একবার অপূর্ব আর মেহেজাবিন চৌধুরির ”বড় ছেলে” নাটকের শুটিং এখানে হয়েছিলো। তখন থেকেই এই জায়গাটি তুমুল জনপ্রিয়ে হয়ে উঠে। এখন পড়ন্ত দুপুর বিধায় জনমানবের আনাগোনা কিছুটা কম।

মৌনি নিজের অমাণ্য মনটিকে অতিক্রম করে বারবার তাকাচ্ছে নিভ্রর দিকে। নিভ্র মৌনির একহাত আগলে তাকিয়ে আছে লেকের পানির দিকে। আবছা আলোর প্রতিফলনে জল টলমল করে উঠছে। আর সেই আলোরাশিগুলো বারবার আছড়ে পড়ছে নিভ্রর সুদর্শন মুখটিতে। হালকা বাদামী চোখগুলো আলোর সংস্পর্শে যেনো আরও উজ্জল হয়ে ওঠে। আচ্ছা নিভ্র কি আসলেই সুন্দর নাকি শুধু মৌনির কাছে এতটা সুন্দর মনে হয়? মৌনি হাজারো খুঁজেও এই উত্তরটা পেলো না।

–”একটা কথা বলবেন ডাক্তার সাহেব?”

–”বলো?”

–”আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কি?”
মৌনির জড়ানো কন্ঠ। তীব্র চাহিনী দিয়ে অপেক্ষা করছে নিভ্রর প্রতিউত্তর শোনার জন্য।
নিভ্র কিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে জিভ দিয়ে হালকা ভিজিয়ে নিলো নিজের কোমল ঠোঁটজোড়া। তাপর বললো,

–” Generally সবাই ভালোবাসা বলতে বোঝায় আবেগ , অনুভূতি । কিন্ত আমার ক্ষেত্রে সেই সংজ্ঞাটা অল্প একটু ভিন্ন। আবেগ , অনুভূতি ভালোবাসা না ; সেটা হলো ভালোলাগা। জাস্ট ক্ষণিকের মোহ। আর সেই মোহ কেটে গেলেই মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। (একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে) আমার কাছে ভালোবাসা হলো দায়িত্ববোধ , প্রতিশ্রুতি , সত্তার একটা অংশ। আমি চাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে তোমায় আগলে রাখতে । চাই আজীবন তোমার হাত ধরে পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে আর সবশেষে চাইবো তোমার অস্তিত্বটাকে নিজের মধ্যে ধারন করে রাখতে। এভাবে যদি প্রতিটা মানুষ ভাবতো তবে মানুষের রিলেশনে ব্রেকাপ শব্দটা থাকতো না , থাকতো না ডিভোর্স নামের অংশটা। ”

মৌনির অবাক হওয়ার প্রবণতাটি যেন ধাপে ধাপে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। নিভ্রর কাছে বসলে প্রতিটা বিষয় সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে পারে সে। পৃথিবীটা মনে হয় চমৎকার এক উপভোগ্যের বিষয়। ঢাকায় আছে মৌনি আজ প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে এলো কিন্ত এ কয়েকদিনে মৌনির বিন্দুমাত্র কোনো সমস্যা হয়নি। হনি কোনো মানসিক পরিবর্তন। এর ক্রেডিট কি তবে নিভ্রকেই দিতে হবে?

–”জানেন ! আমার না মাঝে মাঝে দূর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আপনার সাথে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘ ছুয়ে আসি। অনুভব করি সেই স্পর্শকাতর স্পর্শ গুলো। রাতের আধাঁরে আপনার বুকে মাথা রেখে তারার খেলা উপভোগ করার মতো ভয়ঙ্কর সব ইচ্ছে জেগে উঠে আমার। সেই রাতের মতো ট্রাকে চড়ে আপনার গায়ের মৃদু সুবাসের সাথে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে খুবই ইচ্ছে করে।”

মৌনির চোখে মুখে প্রবল উত্তেজনা। অপার নয়নে তাকিয়ে আছে ও নিভ্রর দিকে। নিভ্র ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ পরখ করে নিলো মৌনিকে। এমতাবস্থায় নিভ্রকে আবারও মনে ধরে গেলো মৌনির। নিভ্র কিছু একটা ভেবে আস্তে করে এগিয়ে এলো মৌনির কানে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

–”আমি সবসময় স্বাভাবিকভাবে থাকি দেখে এমন মনে করোনা আমার মনে কোনো অনুভূতি নেই। এসব কথা বলে আমার মাথা নস্ট করার ধান্দায় থাকো নাকি তুমি? অন্যরকম ফিলিংস হয় তো !”
.
.
.
.
.
~চলবে
২০০০ শব্দ দিয়ে দুটো পর্ব দিয়েছি। পর্বটি ভালো লাগলেও জানাবেন ; মন্দ লাগলেও জানাবেন। আপনারা আমার ভুল-ক্রুটি ধরিয়ে না দিলে আমি কখনোই তা সংশোধন করতে পারবো না। আশা করি সবাই মতামত দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here