হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ৬

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#আদিলা
#পর্বঃ৬
_______________
পুরো আকাশ ঘুট ঘুট অন্ধকার। আজ চাদটাও যেন কোথায় লুকিয়ে পরেছে। আমির একপানে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।। ইয়ামিনা পাশে এসে দাড়ায়।। আমির আকাশের দিকে চেয়ে বলে…..
আমি খুব স্বার্থপর আর খারাপ তাই না।
হটাৎ এমন কথায় ইয়ামিনা একটু ইতস্তত বোধ করে।। উত্তরে কি বলবে ইয়ামিনা বুঝতে পারছে না।
আমির ইয়ামিনার উত্তরের আশা না করে রুমে চলে যায়….
কিছুক্ষন পর ইয়ামিনা এসে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে……
____________🌸🌸

সকালে একটা মেয়ের আওয়াজে ইয়ামিনার ঘুমটা ভেঙে যায়। উঠে চারপাশ তাকিয়ে দেখে আমির পাশে নেই।। ইয়ামিনা কিছুটা অবাক হয়।। পাশের রুম থেকে আওয়াজটা আসছে।। ইয়ামিনা শাড়ি ঠিকঠাক করে মাথায় গোমটা দিয়ে রুম থেকে বের হয়… আওয়াজটা অফিস রুম থেকে আসছে। আমির তার রুমের পাশেই খুব শক করেই এই রুমটা বানিয়ে ছিল। অফিসের যাবতীয় কাজ প্রায় সে এখানেই করে।।।ইয়ামিনা ইচ্ছা না থাকার সত্ত্বেও রুমে উকি দেয়…

আমির চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।। চোখের রোগ যেন ফুলে উঠেছে।। চোখের মধ্যে একরাশ ঘৃনার জল…কেন এমন করছো ইশিতা।। আজ আমার এই পুঙ্গত্তের কারনে তুমি আমকে ভালবাসতে পারছো না এতটাই কি দুর্বল ছিল আমাদের ভালবাসা।।

দেখ আমি তোমাকে ভালবাসতাম এখন বাসি না। আর আমি রিলেশনে তোমাকে কোনো কমিটমেন্ট দেয়নি যে ভালবাসতে হলে তোমার সাথে আমার সারাজীবন থাকতে হবে… তুমিও মজা করেছো আমি করেছি তাও আবার কিছু সময়ের জন্য…

ওয়াট দ্যা বলে ইশিতার সামনে গ্লাসটা ছুড়ে মারে রাগে তার সারা শরীর কাপছে। আমির নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে….তাহলে কেন ভালবাসি ভালবাসি বলে আমার পিছে সারাদিন ঘুরতে। কই আমি তো তোমাকে বলেনি আমাকে ভালবাসতে তুমি তো এসেছিলে আমার কাছে ভালবাসার অধিকার নিয়ে। আজ যখন আমি তোমাকে এতটাই ভালবেসে ফেলছে। তখন তোমার কাছে মজা মনে হচ্ছে আমির চিৎকার দিয়ে বলে আন্সার মি ডেম ইট।।

লিসেন্ট এত রিয়েক্ট করার কি আছে। ইটস নরমাল। আমার তোমাকে এখন আর ভাললাগে না।। বিয়ে তো করেই ফেলেছো পা দুইটা ভেঙে পরে আছে কিন্তু শরীরের জ্বালা কমেনি তাই তো একদিনে বিয়ে করে ফেলেছে। কেন তোমার বউ কি সুখ দিতে পারছে না বলে আমার কাছে আসার চেষ্টা করছো। তো ভাল করে শুনে রাখ আমি কখন তোমার কাছে কাম বেক করবো না আমি কেন কোনো মেয়েই করবে না তোমার এই পঙ্গুত্বের কারনে।। ওই মেয়ের নিশ্চয়ই টাকা পয়শা দেখেই তোমাকে বিয়ে করেছে থার্ডক্লাস মাইন্ডের চিপ গার্ল।। কোনো ভাল বংশের মেয়ে বিয়ে কি তোমার এই অবস্থা দেখে তোমার দিকে ফেরেও তাকাবেনা।।

আমির এখনও ওইভাবে তাকিয়ে আছে এটাই কি তার সেই ইশিতা ছিল যে তাকে পাগলের মত খালি ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তাকে পাগল করে ফেলত।। নিজের এরকম না হলে ইশিতার রুপ কখনও সে দেখতে পেত না। আমিরের বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।। ইশিতার মুখ থেকে এসব কথা শুনবে কখনো ভাবতেও পারেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমিরের গলা ধরে আসচ্ছে। ধরা গলায় বলে..ই.ই.ইশিতা তুমি আমাকে এসব বলতে পারলে তুমি আমাকে না খুব ভালবাসতে…

ও হেলো খালি ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ইমসোনাল ব্ল্যাকমেইল করতে আসবা না। এতটা ক্যারেক্টর লেস আর নিলজ্জ্ব কেমনে হয় বার বার ফিরিয়ে দেওয়ার সত্ত্বেও কেন কুত্তার মত ঘু…….ঠাসসসসসসসসসসসস
আর বলতে পারলোনা তার আগেই ইয়ামিনা কষিয়ে ইশিতার গালে চড় মারে……ইশিতা তাকাতেই যেন ইয়ামিনা আরেকটা চড় মেরে বসে।।।আমির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এমন কিছু হবে ভাবতে পারে নি।।
ইয়ামিনা এখন নিজের মধ্যে নেই রাগে তার সারা শরীর ঝংকার দিয়ে উঠেছে….
ইশিতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইয়ামিনা বেশ বড় গলায় বলে…
এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার। উনি কিছু বলচ্ছে না দেখে মুখে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছো।। ক্যারেক্টর লেস কাকে বলছো নির্লজ্জ কাকে বলচ্ছো আরে ক্যারেক্টর লেস তোমাদের মত মেয়েরা হয় যারা জামা কাপরের মত ছেলে বদলায়।। উনি তোমাকে কিছু বলছে না দেখে ভেবে নিও না উনি তোমার এসব চিপ টাইপের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।উনি তোমাকে ভালবাসে বলে সব শুনে যাচ্ছে। আরে যে মেয়ে ভালবাসার মুল্য দিতে পারে না সে মেয়ে কাউকে ভালবাসবে কিভাবে। তোমার কাছে ভালবাসা টাকার খেল হতে পারে। সেদিন উনি পুঙ্গত্ব ছিল না বলে সে তুমি তাকে ভালবাসতে আজ তার এই দুরঅবস্থা তুমি তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো।। তো কান খুলে শুনে রাখ তোমাদের মত মেয়ে কোনো দিনও সুখি হতে পারবে আমি গেরান্টি দিয়ে বলছি। আজ উনার ভালবাসা তোমার কাছে নির্লজ্জ মনে হচ্ছে কিন্তু একদিন এই ভালবাসা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবে কিন্তু সেদিন তুমি তার ধরাও পাবে না ৷।।আর থার্ডক্লাস গার্ল কাকে বলচ্ছো নিজেকে একবার আয়নাতে ভাল করে দেখো তাহলে বুঝতে পারবে ক্যারেক্টর লেস কে।যদি আর একটুও লজ্জা থাকে তো সোজা এখান থেকে কেটে পর কোনো দিনও যেন তোমার মুখ না দেখি তাহলে আমার ভয়ংকর রুপ দেখতে বাধ্য হবে।জাস্ট গেট লস্ট।।
ইশিতা আমিরের দিকে একবার তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে গটগট করে চলে যায় সেখান থেকে।।।

ইয়ামিনা রাগি দৃষ্টিতে আমিরের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে… আপনার কি লজ্জা শরম বলতে কি কিছু নেই। ওই মেয়ে ঠিকি বলেছে আপনি আসলেই নির্লজ্জ। চোখের সামনে সব দেখে কেন না দেখার ভান করছেন। আপনি কি বুঝত্ব পারচ্ছেন না।ওই মেয়ে আপনাকে কোনো দিন ভালইবাসে নি আরে যার নিজের ক্যারেক্টর ঠিক নাই সে ভালবাসবে কিভাবে।।এইভাবে অন্ধ না হয়ে চোখ খুলে আশেপাশে ভাল করে তাকিয়ে দেখুন।বার বার কেন নির্লজ্জ্বের মত ওই মেয়ের ভালবাসা চাইছেন। যদি একটুকু নিজের মধ্যে আত্নসম্মান বেচে থাকেন তাহলে ওই ক্যারেক্টার লেস মেয়ের কাছে ফিরে যাবেন না।।
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।। ইয়ামিনার মুখ রাগে পুরো লাল আভায় ধারন করেছে। রাগে ইয়ামিনার ঠোট কাপচ্ছে রীতিমতো। আমির এখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।।
ইয়ামিনা আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসে।।ঠেস দিয়ে দেয়ালে দাড়িয়ে পরে। চোখের কোনে জল যেন থামচ্ছে না। আজ তার দিহানজি পাশে থাকলে ওই মেয়ে কখনও তাকে এসব বলার সাহস পেত না। কেন করলেন আমার সাথে দিহানজি আমি যে আর পারচ্ছি না হাপিয়ে উঠেছি। এই মিথ্যে সংসার খেলতে খেলতে। হটাৎ রুমের ভেতর পরার কিছু আওয়াজ পেয়ে ইয়ামিনা দৌড়ে রুমে যায়। যেয়ে দেখে আমির হুইল চেয়ার থেকে নিচে পরে গেছে উঠতে পারচ্ছে না গ্লাসের বেশ কয়েকটা টুকরা আমিরের হাতে বিধে গেছে।যার কারনে বেশ রক্ত বের হচ্ছে। ইয়ামিনা তড়িঘড়ি করে আমির কে ধরে উঠায়।উঠিয়ে কোনো মতে সফায় বসায়। আমিরের হাতের রক্ত ইয়ামিনার সাদা পেটে পিঠে লেপ্টে গেছে।।ইয়ামিনা অস্থির হয়ে বলে…আপনি একটু বসুন এখানে আমি এখনি আসছি বলে ইয়ামিনা উঠতে নিলে তার আগেই আমির রক্তামাখা হাতে ইয়ামিনাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে কেদে দেয়। ইয়ামিনা অবাক সাথে বিচলিত হয়ে পরে…এত রাগী আর গম্ভীর মানুষ এইভাবে কাদতে পারে ইয়ামিনা ভাবতে পারচ্ছেনা।
.
.
.
.
চলবে…🌸

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।। নেক্সট না করে সুন্দর গঠনমূলক কমেন্ট করুন। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন…..🌸🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here