হয়তো তোরই জন্য পর্ব ১০

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি

কথাটা বলেই জায়ান গাড়ির দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে তমার হাত ধরে ধান ক্ষেতে ঝাপ দিলো। সাথে সাথেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেলো।

জ্বলজ্বল করে আগুন জ্বলছে গাড়িতে। আশেপাশের মানুষ ভয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকেই গাড়ির কাছে এগিয়ে এসে নানা ধরনের মন্তব্য করছে। পুরো এলাকায় হাঁক ডাক পড়ে গেছে। মানুষ নিজেদের মধ্যে অনেক কুৎসা রটারটি করছে। এর মধ্যে রেস্টুরেন্ট থেকে একজন স্টাফ দৌঁড়ে এসে মুখে হাত দিয়ে জ্বলন্ত গাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ওহ্ গড….এই কি হলো? দুটো তাজা প্রাণ এভাবে শেষ হয়ে গেলো? ছেলে আর মেয়ে দুটো সবে মাএ আমাদের রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে দেয়ে বের হয়েছিলো। গাড়িতে উঠার সাথে সাথেই এভাবে নিজেদের মৃত্যু ডেকে আনবে আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। সাংঘাতিক খারাপ লাগছে।”

ভীড় জমিয়ে রাখা লোক গুলো থেকে একজন লোক ঐ স্টাফ টাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ভাই আমার মনে হয় পুলিশ এন্ট্রি করা উচিত। ঘটনাকে এভাবে হেলা ফেলা করা উচিত হবে না। গাড়িতে উঠার সাথে সাথে গাড়িটা আপনাআপনি ব্লাস্ট হয়ে যাবে এর তো মানে হয় না। নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে। তাছাড়া ছেলে আর মেয়েটার ফ্যামিলিতে ও তো ইনফর্ম করতে হবে। তাই আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পুলিশ ডায়েরী করা উচিত।”

আশেপাশের মানুষ গুলো লোকটার সাথে সম্মতি জানালো। সাথে স্টাফ টা ও। হাক ডাক থেকে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কালো হুডি পড়া এক্টা লোক সব দেখছে আর রাগে ফুসছে। লোকটা আর সহ্য করতে না পেরে পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কারো নাম্বারে কল লাগিয়ে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

—-“বস….বোমটা ঠিক টাইমেই ব্লাস্ট হয়েছে আশা করি জায়ান আর তমা ভাবী এতোক্ষনে মায়ের ভোগে চলে গেছে। বাট এখানে এক্টা ক্যাচাল হয়ে গেছে।”

ঐ পাশ থেকে উওেজিত কন্ঠে পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—-“কি ক্যাচাল?”

—-“রেস্টুরেন্টের আশে পাশের লোক গুলো পুলিশ ডাকছে। এতে আমাদের ঝুঁকির পরিমান বেশি আছে।”

ঐ পাশ থেকে লোকটা হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“কিচ্ছু করতে পারবে না পুলিশ আমাদের। আমাদের টিকি টি ছুতে পারবে না। পুলিশের এতো বড় ক্ষমতা হয় নি আমার প্ল্যান ধরার। এতো বছর ধরে এসব লাইনে যুক্ত আছি আজ পর্যন্ত পুলিশ আমার ছায়া ও মারাতে পারল না। আর এখন কিনা মাঝ রাস্তায় এসে আমার প্ল্যান ধরে আমি অব্দি পৌঁছে যাবে! হাসালি আমায়। শুন….তুই নিশ্চিন্তে ঐ খান থেকে লেজ গুটিয়ে পালা। তবে ভালো করে চেইক করে আসিস ঐ জায়নের বাচ্চা আর আমার সুইটি কিউটি তমুটা আদৌ মরেছে কিনা!”

লোকটা ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,

—-“আপনার উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের। ওকে বস রাখি।”

কথাটা বলেই লোকটা ফোনটা কেটে দিলো। মুখ থেকে কালো টুপিটা সরিয়ে ধীর পায়ে হেটে লোকটা সামনে জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর সাথে মিশে গেলো। রেস্টুরেন্টের স্টাফ এতক্ষনে পুলিশ কল করে দিয়েছে। পুলিশরা হয়তো গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছে। ঐ লোকটা গাড়ির চারপাশে ঘুড়ে ঘুড়ে জায়ান আর তমার জ্বলন্ত দেহটা দেখার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছে। কিন্তু গাড়িটা এতোই জঘন্য ভাবে খাঁক হয়েছে যে কিছুই সঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। লোকটা মৃদ্যু হেসে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,

—-“জায়ানের বাচ্চা….তোর কাহিনী খতম। আমার বস সফল হয়েছে তোকে আর তোর বউকে জ্বালিয়ে খাক করে দিতে।”

লোকটা গাড়িটার দিকে শেষ বারের মতো তাকিয়ে টুপিটা মাথায় জড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের গাড়িতে উঠে গেলো। লোকটা গাড়িটা স্টার্ট করার সাথে সাথেই পুলিশের গাড়ি এসে হাজির। ঘটনা স্থলে পৌঁছে পুলিশ দুটো চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাপ দিয়ে নেমে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। আশে পাশের লোক গুলো পুলিশদের দেখে সরে দাঁড়ালো। পুলিশ গুলো গাড়িটার চারিদিক ঘুড়ে ঘুড়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জমায়েত বদ্ধ লোক গুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“আপনাদের মধ্যে কে আমাদের কল করেছে?”

রেস্টুরেন্টের স্টাফটা জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—-“স্যার আমি কল করেছি। আজমেরী রেস্টুরেন্টের স্টাফ আমি।”

পুলিশ গুলো স্টাফ টাকে উনাদের কাছে ডেকে বলল,,,,,,

—“ফার্স্ট টু লাস্ট সব আমাদের খুলে বলো। সম্পূর্ণ ঘটনা বলবে কোনো কিছু যেনো বাদ না পড়ে।”

স্টাফটা পুলিশের গায়ে ঘেঁষে মিনমিন করে বলল,,,,,,

—-“স্যার….দশ থেকে পনেরো মিনিট আগে গাড়িটা হুট করে ব্লাস্ট হয়ে যায়। আমাদের চোখের সামনে। কোনো কিছুই ঠিকভাবে ঠাওর করতে পারলাম না। আধ ঘন্টা আগে ছেলে আর মেয়েটা আমাদের রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে এসেছিলো। খেয়ে দেয়ে ওরা হাসি মুখে যেই না গাড়িতে উঠল অমনি গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেলো। ইমেজিন ও করতে পারছি না।”

—-“গাড়িটা ব্লাস্ট করার সময় আপনারা কোথায় ছিলেন? আপনাদের চোখে কিছু পড়ে নি?’

—-“না স্যার। কারণ আমাদের রেস্টুরেন্টের সামনের ল্যাম্প পোস্টের লাইট গুলো কেউ ভেঙ্গে দিয়েছে। আশে পাশের লোকজন সবাই জট পাকিয়ে লাইট ভাঙ্গার কারণ অনুসন্ধান করছিলাম। এর মাঝেই এসব ঘটে গেলো। আমরা কেউ কিছু দেখি নি।”

পুলিশ গুলো কপাল কুচকে দ্রুত পায়ে হেঁটে ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়ালো। দুই জনই ল্যাম্প পোস্টের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে বলে উঠল,,,,,,

—-“এটা এক্টা পরিকল্পিত মার্ডার ছিলো। তাই ল্যাম্প পোস্টের লাইট গুলোকে এভাবে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ব্লাস্টের আগে যেনো কেউ কিছু টের না পায় এর জন্যই এই প্ল্যান।”

পুলিশ গুলো আবার স্টাফ টাকে ডেকে বলল,,,,,

—-“আপনি সিউর তো ছেলে আর মেয়েটা গাড়িতেই ছিলো?”

—-“জ্বি স্যার হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর।”

পুলিশ গুলো স্টাফটাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল নিজের কাজে যেতে। স্টাফটা ও মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো। দুজন পুলিশের মধ্যে একজন পুলিশ বলে উঠল,,,,,,

—-“ফরেনসিকদের ডাকা উচিত। মৃত ব্যক্তিদের আলামত খুঁজে বের করতে হবে।”

অন্য পুলিশটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। সাথে সাথেই উনি ফরেনসিকদের কল করে বলে দিলো ঘটনাস্থলে চলে আসতে।

অন্যদিকে,,,,,,,,

জায়ান আর তমা ধান ক্ষেতে ঘাপটি মেরে বসে আশে পাশের সব কিছু দেখছে এবং শুনছে। মৌনতা ভেঙ্গে তমা বিড়বিড় করে জায়ানের কানে কানে বলল,,,,,,

—-“আমার মনে হচ্ছে বাড়িতে কল করে সত্যিটা জানিয়ে দেওয়া উচিত। গাড়ি ব্লাস্টের কথা জানলে বাড়ির সবাই মৃত প্রায় হয়ে যাবে। ওরা ভাববে আমরা ও হয়তো গাড়ির সাথে সাথে ব্লাস্ট হয়ে গেছি।”

—-“আমাদের এখন কোনো মতেই বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করা চলবে না। গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। কারণ আমাদের শক্রুরা আমাদের থেকে ও অধিক ধুর্ত। তাছাড়া পুলিশ চলে এসেছে। আমি সিউর ফরেনসিকরা এসে আমাদের শরীরের কোনো আলামত খুঁজে পাবে না। পাবে কি করে? আমরা তো গাড়িতেই ছিলাম না। তখন ওরা বুঝে যাবে আমাদের কোনো ক্ষতি হয় নি। আমরা সেইফ আছি বা পালিয়ে গেছি। এই খবরটা যদি ভাইরাল হয় তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের শত্রুদের কান অব্দি পৌঁছে যাবে। সাথে সাথে শুরু হয়ে যাবে আরেক প্ল্যানিং। আমাদের তন্ন তন্ন করে খুঁজবে ওরা। এর আগেই আমাদের শাফিনকে খুঁজে বের করতে হবে। এখনি এখান থেকে আমাদের পালাতে হবে। তমু চল এখান থেকে।”

কথাগুলো বলেই জায়ান তমার হাত ধরে ধীর পায়ে হেঁটে ধান ক্ষেত পাড় হওয়ার উদ্দেশ্যে লেগে পড়ল। ওরা দুজনই খুব সাবধানে পা ফেলছে। কেউ যেনো কিছু আঁচ করতে না পারে। কারণ, রাতের বেলায় সামান্য এক্টা তুড়ির আওয়াজ ই পৃথিবী কাঁপানোর মতো মনে হয়। সেখানে ধান ক্ষেতে পা ফেলার শব্দ তো পৃথিবী ধসের শব্দের চেয়ে কম মনে হবে না। তাই ওরা খুব সাবধানে সামনে পা ফেলছে। তমা বেশ ভয় পাচ্ছে। কারণ, চারদিকটা পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভূত প্রেতের ভয়ের পাশাপাশি সাপ গোপের ও ভয় আছে। ধান ক্ষেতে সাপরা বুক ফুলিয়ে অবাধে চলাচল করে। কখন কি থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না। তমা কাঁপা কাঁপা হাতে জায়ানকে ধরে আছে। জায়ান ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে তমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“ভয় পাচ্ছিস তমু?”

—-“হুম। ভীষণ ভয় করছে।”

জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে তমাকে কোলে তুলে নিলো। তমা চোখ বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান তমার কপালে চুমো খেয়ে তমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,

—-“এবার ভয় করছে?”

তমা মাথা নাঁড়িয়ে না জানালো। জায়ান তমার নাকের সাথে নাক ঘঁষে তমাকে নিয়ে সামনে হাঁটা ধরল। জায়ান হাঁটছে তো হাঁটছে ধান ক্ষেত যেনো ফুরাচ্ছেই না। উল্টো ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে জায়ানের পা ও ধরে আসছে। তমা ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“আমাকে নামিয়ে দাও জায়ান ভাইয়া। আমি পারব হাঁটতে। আমার আর ভয় করবে না। তুমি তো আছোই আমার পাশে।”

জায়ান ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বলল,,,,,

—-“চুপ কর তমু। বেশি কথা বলিস না। আমার মনে হচ্ছে আমরা রোডের কাছাকাছি চলে এসেছি। আর এক্টু হাটলেই হবে।”

জায়ানের কথা শুনে তমা চুপ হয়ে গেলো। জায়ান খুব মনযোগ দিয়ে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। কিছু দূর হাঁটার পর জায়ান রাস্তার সন্ধান পেলো। রাস্তায় দু এক্টা গাড়ি ও চলছে। জায়ান এবার দ্রুত পায়ে হেঁটে রাস্তায় উঠে গেলো। সাথে সাথে তমা ও কোল থেকে নেমে গেলো। জায়ান খুব পেরেশান হয়ে গাড়ি খুঁজছে পাহাড়তলী গ্রামে পৌঁছানোর জন্য। তমার হাতটা জায়ান শক্ত করে ধরে রেখেছে।

হুট করে এক্টা গাড়ি এসে থামল জায়ানদের সামনে। জায়ান কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে এসে তমা আর জায়ানের সামনে দাঁড়ালো। জায়ান কিছুটা হকচকিয়ে যেই না তমার হাত ধরে সামনে দৌঁড়াতে যাবে এর আগেই লোকটা জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো মুখ করে জায়ানের কাছে হাত জোড় করে বলল,,,,,

—-“ভাই প্লিজ আমার বোনটাকে বাঁচান। শুধু মাএ আপনিই পারবেন আমার বোনটাকে বাঁচাতে। আমার বোনটাকে প্রায় অনেকদিন যাবত খুঁজে পাচ্ছি না। টেনশানে টেনশানে আমাদের পরিবারের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি পালিয়ে ছুটে এসেছি আপনার কাছে। কারণ আমি জানি, আপনি খুব সাহসী। আপনি এতো সহজে মরতে পারেন না।”

জায়ান কপাল কুচকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“আপনি আসলে কি বলতে চাইছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে এটা বুঝতে পারছি আপনি আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। আপনি আমাদের চরম শত্রু।”

কথা গুলো বলেই জায়ান লোকটার নাক বরাবর এক্টা ঘুষি বসিয়ে তমার হাত ধরে দৌঁড়াতে লাগল। লোকটা রক্তাক্ত নাকটায় হাত দিয়ে জায়ানের পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,

—“জায়ান ভাই প্লিজ আমার হেল্প করুন। আমার নিষ্পাপ বোনটাকে বাঁচান। আমি আপনার শত্রু না। আমি আপনার সহযোদ্ধা। আমরা একই লড়াইয়ের সৈনিক। প্লিজ জায়ান ভাইয়া আমার কথা বিশ্বাস করুন। আমি আপনার ক্ষতি করব না। উল্টো চাইব আপনার সাহায্য করতে। কারণ, আপনিই একমাএ পারেন আমার বোনকে বাঁচাতে।”

জায়ান লোকটার কথায় কান না দিয়ে তমার হাত ধরে দৌঁড়াচ্ছে। তমা হাফাচ্ছে আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—-“জায়ান ভাইয়া আমার লোকটাকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। উনি হয়তো আমাদের সত্যিই হেল্প করতে চায়। বলা যায় না, হয়তো উনাকে দিয়ে আমাদের কিছু উপকার ও হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, উনার কথা গুলো আমাদের শোনা উচিত। তাছাড়া উনি উনার বোনকে বাঁচানোর কথা বলছে। নিশ্চয়ই উনার বোন আমাদের মতো বড় কোনো বিপদে পড়েছে।”

—-“চুপ কর তমা। আপাতত কাউকেই বিশ্বাস করা যাবে না। নিজের ছায়াকে ও না। আমার তো লোকটাকে ভীষণ ভাবে ডাউট হচ্ছে। প্রথমত, লোকটা কিভাবে জানল আমরা এখানে আছি? দ্বিতীয়ত, আমরা মরে গেছি নাকি, বেঁচে আছি এই কথাটা উনি কিভাবে জানল। তুই আর আমি ছাড়া আমাদের বেঁচে ফেরার কথা তো থার্ড পার্সনের জানার কথা না। আমার তো মনে হচ্ছে এই লোকটা ও আমাদের ঐ অদৃশ্য শত্রুদের চ্যালা। আমাদের জন্য হানিকারক উনি। সো প্লিজ কথা না বাড়িয়ে দৌঁড়া।”

তমা আর কথা না বাড়িয়ে জায়ানের সাথে তাল মিলিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। পিছনের লোকটা দৌঁড়ের গতি বাড়িয়ে দিয়ে সোজা জায়ানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। লোকটার নাক বেয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। গাঁ দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। জায়ান চোখ, মুখ লাল করে লোকটার পেটে এলোপাথারী কিল, ঘুষি মেরেই চলছে। লোকটা চুপচাপ সব সহ্য করে নিচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর বিন্দু মাএ চেষ্টা করছে না। এক পর্যায়ে লোকটার নাক, মুখ বেয়ে রক্ত গড়াতে শুরু করল। তমা এসব দেখে ভয়ে কাঁদছে আর জায়ানের পিঠে কিল, ঘুষি মেরে বলছে,,,,,,,

—-“তুমি কি মানুষ জায়ান ভাইয়া? কিভাবে পারছ এতোটা নিষ্ঠুর হতে? উনার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্লিজ উনাকে ছাড়ো।”

জায়ান এবার হুশে এলো। হাত দুটো গুটিয়ে সে লোকটার দিকে তাকালো। নাক, মুখ রক্ত গড়াতে গড়াতে লোকটার পুরো শরীর রক্তে রঙ্গিন হয়ে গেছে। লোকটা প্রায় আধমরা হয়ে গেছে। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। লোকটা হেলে দুলে বেসামাল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলছে,,,,,

—-“প্লিজ জায়ান ভাইয়া আমার বোনকে বাঁচান। আর এক্টু দেরি করলেই হয়তো ওরা আমার বোনকে বেচে দিবে। তখন হয়তো আমি আর আমার বোনকে খুঁজে পাবো না। এই পৃথিবীতে আমার বোন ছাড়া আর কেউ নেই। আমি আমার বোনকে নিজের চেয়ে ও বেশি ভালোবাসি। প্লিজ সেইভ মাই সিস্টার জায়ান ভাইয়া। প্লিজ।”

কথা গুলো বলেই লোকটা জায়ানের পায়ে লুটিয়ে পড়ল। জায়ান মুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না আদৌ লোকটাকে বিশ্বাস করা উচিত কিনা। তবে এই মুহূর্তে লোকটাকে দেখে নিষ্পাপ মনে হচ্ছে। লোকটার আকুতি জায়ানের কঠোর মনটাকে নাঁড়িয়ে দিয়েছে।

তমা চোখ, মুখ লাল করে চোখে অজস্র জল রাশি নিয়ে জায়ানের গালে এক্টা থাপ্পড় বসিয়ে কঠোর কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

—“ছি জায়ান ভাইয়া ছি। তুমি এতোটা হার্টলেস পার্সন আমার সত্যিই জানা ছিলো না। লোকটাকে এতোটাই হিংস্র ভাবে মেরেছ যে, লোকটা আধমরা হয়ে গেছে। তোমার থেকে সামান্য হেল্প চেয়েছে বলে তুমি নিজেকে খুব বড় মনে করছ তাই না?”

কথাগুলো বলেই তমা কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে নিচে বসে লোকটাকে তমার হাঁটুতে রেখে গালে চাঁপড় মারছে আর বলছে,,,,

—-“ভাইয়া প্লিজ চোখ খুলুন। আমি আপনাকে সাহায্য করব ভাইয়া। প্লিজ চোখ খুলুন।”

#চলে,,,,,,,,,,,

(১০০ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে গল্পটা লিখেছি। ২ ঘন্টার জায়গায় ৪ ঘন্টা লেগেছে গল্পটা লিখতে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here