#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#১৫তম_পর্ব
মোবাইল স্ক্রিনে পরিচিত নামটা ভেসে আছে, রিং হচ্ছে না একটা চমৎকার সুরেলা কন্ঠে কেউ বার বার বলে যাচ্ছে,
আপনার কাঙ্খিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না,অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ,
the number you are calling is unreachable at this moment please try again later. Thank you.
উচ্চ শিক্ষিত আনোয়ার সাহেব যেন ইংরেজীর সাথে সাথে বাংলাও ভুলে গেছে।নম্বরটি বন্ধ বলার পরের বার কয়েক ফোন করেছে শুরু কাঙ্খিত ব্যক্তির আওয়াজ শোনার জন্য।
কিন্তু তিনি হতাশ হলেন।নম্বরটি তার ফোনে বছরের পর বছর পরে থাকলেও এ নম্বরে কথা হয়েছে খুবই কম।হাতের আঙ্গুলে গোনা যাবে। আগে কখনো দরকার পরেনি রান্না ঘরের দিকে একটু কান পেতে থাকলেই রিনরিনে গলার আওয়াজ টা শোনা যেত। কিন্তু এখন এ ঘর ও ঘর সারা বাড়ি খুঁজলেও গলার আওয়াজ তো দূরের কথা কোনো কিছুতে তার অস্তিত্বের চিহ্নই পাওয়া যায় না।
নিজের আত্নসম্মন হাড়ানোর ভয়ে।আমেনার কাছে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়ে, পরে আর কখনো তার সামনে তাকে ভালোবাসার দাবি করে নি।আর না কোনো সময় তাকে সাপোর্ট করেছে।
যদি সে আমেনার সামনে নিজের ভালোবাসা দাবি করতো তাহলে সে ছোট হয়ে যেতো না?সে তার যগ্য ছিলো না বলে নয়নকে বিয়ে করেছে। কিন্তু মোহ কাটতেই বুঝতে পারলো ভালোবাসার জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে সে যদি তখন নয়নকে ছেড়ে আবার তার কাছে যেতো তার কাছে ক্ষমা চাইত,তাহলে তো তার মাথা হেঁট হয়ে যেতো। আর একটা অশিক্ষিত মেয়ের সামনে মাথা নত করতে তার বিবেকে বাধছিলো।
তার চেয়ে বরং থাক সে নিজের মত তার আশেপাশে। কোথাও তো আর যাচ্ছে না। চোখের সামনেই থাকবে আজীবন।সে না হয় দূরে দূরে থেকেই ভালোবাসবে।দূর থেকে ঘরের প্রত্যকটা জিনিসের থেকে তার ছোঁয়া অনুভব করবে।
নয়ন আমেনাকে প্রায় প্রতিদিনই কটু কথা শোনাতো, তাকে বুঝিয়ে দিতো তার স্থান। বাড়ির কাজের লোকের চেয়েও খারাপ ব্যবহার করতো বিপরীতে সে কিছু বলতো না খালি মাঝে মাঝে আনোয়ার সাহেবের চোখের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকতো। তার সামনেই বেশি অপমান করতো আমেনাকে তার ঐ চোখের দিকে তাকালে তার মন ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যেতো কিন্তু কিছু বলতো না সে। তার পক্ষ নিয়ে কথা বললে যদি সে ভেবে বসে ভালোবাসে তাই পক্ষ নেয়।সে চাইত না আমেনা কখনো জানুক তাকে ভালোবাসার কথা।তাই দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করত।আর যখন সহ্য করতে না পারতো চুপ চাপ উঠে যেতো।
সে ভেবেছিল তার ভালোবাসা আজীবন তার মনের কোঠায় গোপন থাকবে কেউ জানবে না তার ভেতরের ভাঙ্গনের কথা। মরার আগে না হয় ক্ষমা চেয়ে নেবে দেয়া না দেয়া তার ব্যাপার।
হায়! আগে যদি জানত শেষ বয়সে এসে এভাবে বিচ্ছেদ হবে দেখা মিলবে না,কথা হবে না, অনুভব করতে পারবে না তার ছোঁয়া দিনের পর দিন মাসের পর মাস যা মরণ যন্ত্রণা দিবে তাকে। তাহলে কোনো দিনই এই মিথ্যে অহংকার নিয়ে পরে থাকতো না। তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে ভালোবাসার ভিক্ষা চাইতো সে।
কিন্তু আফসোস এখন আর কিছুই সম্ভব না।সে যদি পারতো অতীতে ফিরে গিয়ে তার করা সব ভুল শোধরাতে তাহলে হয়ত আজ শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারতো সবাই।
কাঁপা কাঁপা হাতে আবার ডায়েল করলো অন্য একটা নম্বরে যার তার সবচেয়ে নিকটবর্তী আত্নার আত্নীয় হওয়ার কথা ছিল।যার শরীরের তারই রক্ত বইছে কিন্তু স্বভাবে হয়েছে একদম তারই বিপরীত,
রিং হচ্ছে আনোয়ার সাহেবের মনে ক্ষীণ আশা জন্ম নিলো কেউ ফোন তুলছে না।আরো বার কয়েক দেয়ার পর বুঝতে পারলো অপর পাশের মানুষ টা বিরক্ত হচ্ছে তাই বার বার কেটে দিচ্ছে। কিন্তু সেও যেন পণ করে নিলো, ফোন ধরার আগ পর্যন্ত কল দিয়ে যাবে। যদিও কাজটা বেহায়াদের স্বভাবের মধ্যে পরে কিন্তু আজ কাল সে বেহায়া হতেও রাজি থাকে।যদি। যদি একটাবার কথা বলা যায়!
প্রায় আট থেকে দশ বার ফোন দেয়ার পর কেউ ফোনটা রিসিভ করলো,
—হ্যালো,হ্যালো কে আরাফ আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস বাবা?
—হ্যা বলুন? বারবার কেনো ফোন করছেন? মিনিমাম কমন সেন্স বলতে কিছু নেই। দেখছেন বারবার ফোন কেটে দিচ্ছি এর মানে ব্যস্ত আছি বা আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।এতটুকু কি বুঝতে পারেন না আপনি? প্রতিদিন ফোন করে করে কেনো জ্বালাচ্ছেন আমাদের আপনি? আমাদের ভালো থাকতে দিবেন না?নাকি একটু শান্তিতে আছি বলে সহ্য হচ্ছে না?আজ যদি নম্বরটা বেশি দরকারি না হতো তাহলে কবেই বন্ধ করে দিতাম। ফোন দিয়ে এখন চুপ করে আছেন কেনো? বলুন আজ আবার কি বলার আছে?মা আমার সাথে নেই আর না মা ফোন ইউজ করে আপনি যদি আপনার অহেতুক কনসার্ন দেওয়ার জন্য ফোন করে থাকেন তাহলে বলে দেই যখন আপনার কনসার্নের দরকার ছিলো একটু ভালোবাসা একটু আদরের দরকার ছিলো তখন আপনাকে আমি বা আমার মা কেউই তা পাই নি।আর এখন এসবের কিছুই আমাদের দরকার নেই। আর আপনার ফালতু দায়িত্ব বোধ আমাদের দেখাতে আসবেন না। ছোট কাল থেকে দেখেই আসছি আপনি কতটা দায়িত্ববান পিতা আর স্বামী। আমার কাজ আছে রাখছি।আর হ্যা দয়া করে রোজ রোজ ফোন করবেন না।আমি যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করি।
ছেলের ধারালো কন্ঠ যেন তার গায়ে সামান্য ও ছুঁতে পারলো না, সত্যিই তো বলছে ছেলে একটা কথাও মিথ্যে না। কিন্তু সে কি জানে তার বাবা তাকে কত ভালোবাসে?প্রথম সন্তান ছিলো সে বাবা হওয়ার প্রথম অনুভূতি।কম তো আদর করেনি শুধু নয়নকে বিয়ে করার পর আদর গুলো প্রকাশ করেনি। কিন্তু বাইরে তার ছেলেকে নিয়ে অনেক গর্ভ করতো সে।আড়ালে তাকে কত ভাবে সাপোর্ট করেছে কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি তাহলে হয়তো সে তার কোনো কিছুই গ্রহণ করতো না।এসব কথা এখান মনে করে এখান আর লাভ নেই।সত্যি সে বঞ্চিত করছে তার সন্তানকে তার ভালোবাসা থেকে। ভালোবাসার অভাব কি আর টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে পূরণ করা যায়?
আরাফের ধারালো কথার বিপরীত কিছু বললো না সে বরং গলা খাদে নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় অনেকটা মিনতি সুরে বলল,
—দয়া করে ফোন রাখো না বাবা আজ শুক্রবার আরাফ তোমার কোনো কাজ নেই আমি জানি।আজ তুমি তোমার মায়ের সাথে সময় কাটাচ্ছো।আমেনা কি তোমার পাশে আছে ওকে কি একটু দেয়া যাবে?আজ অনেক দিন ওর সাথে একটু কথা বলতে পারি না।
বলতে বলতে কেঁদে দিল আনোয়ার সাহেব। বাবার এমন কান্নার আওয়াজ শুনে আরাফ চেয়েও আর কোনো কঠিন কথা বলতে পারলো না। সে চায়না এই লোকটার সাথে মা কথা বলুক। আবার সে তার জন্য কষ্ট পাক আর আবার সেই নরকে ফিরে যাক।
কিন্তু বাবা নামক মানুষটার জন্য কেনা জেনো মায়া লাগছে।লোকটাকে কখনো ভাঙতে দেখেনি সে আর আজ তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য আকুল হয়ে আছে।আর সারাটা জীবন তাঁকেই অবহেলা করে এসেছে।একেই হয়তো বলে কর্মফল।
আনোয়ার সাহেব ঠিক বলেছেন আজ শুক্রবার ছুটির দিন তাই আরাফ মায়ের সাথেই আছে।ঐ বাড়িতে থাকতেও সে তার ছুটির দিন গুলো তার মায়ের সাথেই কাটাতো এক সাথে রান্না করতো ঘুরতে বের হতো।সেই তো ছিলো তার মায়ের একমাত্র সঙ্গী।
আরাফ না চাইতেও ফোনটা তার মায়ের কাছে দিল সে রান্নায় ব্যস্ত ছিল,আরাফ ফোন তার কানে দিয়ে বললো,
—কথা বলো।
আমেনা ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
—কে?
আরাফ কিছু না বলেই রান্নাঘর ত্যাগ করলো, ছেলেকে কিছু না বলে চলে যেতে দেখে আমেনা ফোন কানে রেখে বললো,
—হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
ওপাশে জেনো হঠাই কান্নার আওয়াজ আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। আমেনা থমকালো তার আওয়াজ টা চিনতে বেশি সময় লাগলো না। তার চোখদিয়েও নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো…
।
।
।
।
মাহিয়াত অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেডি হচ্ছে। ফিমা একটা একটা করে সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছে আর চোখ মুখ কুঁচকে বিরবির করে মাহিয়াতের গুষ্টি উদ্ধার করছে। যদিও রাগটা সে উপরে উপরে দেখাচ্ছে কিন্তু মনে মনে সে খুবই আনন্দ পায় মাহিয়াতের কাজ গুলো করে দিতে।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আড় চোখে সে ফিমাকে দেখছিলো।এখন আর শাড়ি পরতে পারে না সে।সামনে কুচি দিয়ে গোল করে জমা আর ঢোলা পায়জামা পরে থাকে।কি সুন্দর দেখায় তাকে একেবারে বাচ্চা মেয়েদের মতো।আর আজকাল তার আচরণ গুলোও একেবারে বাচ্চদের মত হয়ে গেছে।মাহিয়াত আনমনেই হাসলো।
সম্পূর্ণ রেডি হয়ে মাহিয়াত ফিমার কাছে গিয়ে বসলো। ফিমা গাল ফুলিয়ে আছে তাকে বসতে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল,আজ ফিমা বাইরে ঘুরতে যেতে চেয়েছে আর মাহিয়াত এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এতো বেশি নরাচরা করতে নিষেধ করছে।
প্রেগনেন্সির তৃতীয় ধাপটায় খুবই সাবধানে পার করতে হয়। এছাড়াও ফিমার শরীরের কান্ডিশন এখনো খুব একটা ভালো না। ডক্টর বলেছে রেষ্টে থাকতে, কোনো ভারি কাজ না করতে,সিড়ি এভোয়েট করতে। তাইতো সে তাদের ঘর নিচে সিফ্ট করতে চেয়েছিল কিন্তু ফিমা নাছড় বান্দা সে নিচে যাবেই না।আর আজ আবার বাইরে ঘুরতে যেতে চাইছে মাহিয়াত মানা করে দিয়েছে আর এটাই তার রাগের প্রধান কারণ।
যদিও সে ফিমাকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই অফিস থেকে ফোন আসে আর তাকে আর্জেন্ট যাওয়ার জন্য বলে কি নাকি সমস্যা হয়েছে তা ঠিক করতে হবে তাই মাহিয়াতকে প্রয়োজন।এর জন্যই এই ভর দুপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
—আচ্ছা,বেগাম তো ফুলে পুরো বম হয়ে আছে মুখই দেখা যাচ্ছে না।তা আমার রাজপুত্রও কি আমার সাথে কথা বলবে না নাকি?
ফিমা গাল ফুলিয়ে বললো,
—না কথা বলবে না রাজা সাহেব রাজপুত্র কে ঘুমাতে নিয়ে যায়নি তাই রাজপুত্র রাগ করছে।হুহ।
—আপনি কেনো কথা বলছেন? আমি তো রাজপুত্রর সাথে কথা বলছি। আপনি না আমার সাথে রাগ করেছেন তালে আবার বেহায়ার মত কথা কেনো বলছেন?
—আমি মোটেও বেহায়া না আপনি বেহায়া আপনি খারাপ। আমার বয়েই গেছে আপনার সাথে কথা বলতে আমি তো শুধু রাজপুত্র আমায় যা বলতে বলেছে তাই বলেছি।
—ওহ আচ্ছা তাহলে মা ছেলে যুক্তি করে নিয়েছেন? আমার সাথে কথা বলবেন না। আচ্ছা ঠিক আছে আমি তো আপনাদের হুকুমের গোলাম তো জাহাঁপনা হুকুম করুন কি করলে রাজপুত্র আর বেগমের রাগ ভাঙবে?
মাহিয়াত মাথা নত করে কথাটা বললো,ফিমা আড় চোখে একবার তাকিয়ে মুখ টিপে একটু হাসলো তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
—বেশি কিছু না শুধু একট বক্স ডেইরি মিল্ক,একটা বার্গার একটা শর্মা আর চকলেট আইসক্রিম হলেই চলবে আর কাল ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।বেস।
মাহিয়াত চোখ বড় বড় করে বললো,
—আচ্ছা তো এই খবর? ওকে ডান রাজপুত্র আর তার মার কথাই রইলো কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাবো?
ফিমা আমতা আমতা করে বলল,
—বিনিময়? বিনিময় আবার কি আপনার আর রাজপুত্রের মধ্যে কি বিনিময়ের সম্পর্ক নাকি?
—উহু এসব মিষ্টি কথায় চিড়ে ভিজবে না।বলুন বলুন আমি কি পাবো?সবারই তো সবার কাছে একটা প্রতাশা থাকে তাই না?
মাহিয়াতের কথা শুনে ফিমা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল,
—ঠিক আছে। ঠিক আছে রাজপুত্র আর তার মা রাজা সাহেব কে এতো গুলো ভালোবাসবে।
ফিমা হাত মেলে দেখালো মাহিয়াত সাথে সাথে তার একে বারে কাছে চলে গেলো ফিমার চোখে চোখ রেখে বলল,
—তো এখন একটু এডভান্স পেমেন্ট করে দিন।সে তো আপনাদের ভালোবাসা পাওয়ার লোভে কাতার হয়ে আছে।
হঠাৎ মাহিয়াত ফিমার এতো সামনে এসে বসাতে সে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলো। পরে মাহিয়াতের কথায় তা লজ্জায় পরিণত হলো।মাহিয়াতের ঠোঁটের আর তার ঠোঁটের মাঝে মাত্র দু আঙ্গুলের তফাত।ফিমা কিছু বলতে পারছে না কেন জানো মাহিয়াত তার কাছে এলে কথা বলা বন্ধ হয়ে আসে,নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় মাহিয়াত আরো কাছে আসতে নিলেই ফিমা সাথে সাথে তার চোখ বন্ধ করে নিল,ফিমাকে চোখ বন্ধ করে কাঁপতে দেখে মাহিয়াত ঠোঁট কামড়ে হাসলো তারপর ঠোঁটের কাছে হালকা করে ফু দিলো। ফিমা কেঁপে উঠলো শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।মাহিয়াতের এই ছোট ছোট মিষ্টি আদর গুলো তার অনেক ভালোলাগে। মাহিয়াত নিচে হাঁটু গেড়ে বসে ফিমার পেটে একটা লম্বা চুমু দিয়ে বলল,
—উঠুন উঠুন আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে এখন আর আদর খাওয়া লাগবেনা।
ফিমা কিছু বলতে পারলো না।মাহিয়াতই তাকে ধরে দাঁড় করালো তারপর কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে আলতো করে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বললো,
—রাতে জলদি আসার চেষ্টা করব। মনে হয়না তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবো।তবুও চেষ্টা করবো,রাতে না খেয়ে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই খেয়ে শুয়ে পরবেন। খবরদার বারান্দায় যাওয়ার কথা একদম ভাববে না,আর কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে বা মা কে ফোন করবেন নিচে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।আর নিজের আর রাজপুত্রের খেয়াল রাখবেন। ঠিক আছে?
—হুম।
মাহিয়াত আরো কিছুক্ষণ তাকে জড়িয়ে রেখলো।এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।কিছুক্ষণ জরিয়ে না রাখলে সারাদিন খালি খালি লাগে। মনে হয় কি জানো একটা করা বাকি ছিলো। ঘর থেকে বের হলেই ছটফট লাগে। মেয়েটা দিন দিন তাকে জেকে ধরছে। অদ্ভুত এক মায়ায় আটকে পরছে।জানে এটা অন্যায় কিন্তু মন মানে না। তবুও নিজেকে বার বার শাসায় বুঝ দেয় আর মাত্র কয়েকদিন তারপর সে চলে যাবে মোহ কেটে যাবে।নুহাকে নিয়ে ভালো থাকবে কিন্তু শান্তি পায় না। কোনো কিছুতেই শান্তি পায় না।তাই আর নিজেকে আটকে রাখে না মনে যা চায় তাই করে।
মাহিয়াত চলে গেলো ফিমা এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে।এত সুখ তার কপালে সইবে তো? নাকি সময় শেষ হলে মাহিয়াত তাকে ছুড়ে ফেলে দিবে।সে কিভাবে থাকবে মাহিয়াতের ভালোবাসা গুলো ছাড়া। কিন্তু তার যে আরো একটা স্ত্রী আছে যার সাথে দুই বছরের প্রণয় আর দশ বছরের পরিণয়ের সম্পর্ক।আচ্ছা মাহিয়াতের ভালোবাসা গুলো শুধু দেখানো নাকি সত্যিই ভালোবাসে? তাহলে কি তার আগমনে এত বছরের ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো?নাকি মাহিয়াত দুজনকেই ভালোবাসে? দুজনকেই কি একসাথে ভালোবাসা যায়?
এই প্রশ্নে গুলোর উত্তর জানা নেই তার।তবে তার কেনো জানি মনে হচ্ছে মিহিয়াত তাকে ছাড়বেনা।সবসময় আগলে রাখবে। কিন্তু যখনি ফাহির বলা কথা গুলো মনে পড়ে মনকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।সে বারবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যেন ফিহির কথা গুলো মিথ্যে হয়ে যায়।
কিন্তু আদোও কি তারা এক সাথে চলতে পারবে কিনা কে জানে…
চলবে…