#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৬
|
উনি ছাদ থেকে নেমে গেলেও নামি দাড়িয়ে থাকি,উনি এতোক্ষন কি বলে গেলেন আমি সেটাই ভাবছি।উনি আমাকে ভালোবাসেন??
–এই নিহু তুই ছাদে এলি কেন??
মীরাকে দেখে আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
–কিরে কি হয়েছে?আর তুই এখানে কেন?আর সৌভিক ভাইয়া তোকে কি বলে গেলো রে?
–দোস্ত
–কি
–আমাকে ধর।
মাথার মধ্যে চিনচিন করছে,নাকে খুব বাজে একটা ধোয়া আসলো,কাশি শুরু হয়ে গেলো।।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম।চোখ খুলতেই দেখি উনি আমার পাশে বসে সিগারেট টানছে। আমার কাশির আওয়াজে উনি আমার দিকে তাকালেন।ওনার হাতে সিগারেট দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।আমাকে দেখে উনি তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেন।
–না মানে আমি কিন্তু সবসময় স্মোক করিনা।টেনশনে থাকলে মাঝে মাঝে,,ওই আর কিকি।এই তো এখন তোমার জ্ঞান ফিরেছে,খুব টেনশন হচ্ছিলো তোমার জ্ঞান ফিরছিলো না তাই।যাও এবার বাসায় চলে যাও,ভোর হতে চললো।
আমি গাড়ির জানালার বাইরে তাকালাম আমার বাসার সামনে,ঠিক মনে করে উঠতে পারলাম না।তখন তো আমি ছাদে ছিলাম আমার মাথা চক্কোর দিয়ে উঠলো তারপর কি হলো?আমি গাড়ির পিছনে তাকিয়ে দেখি শিবলি ভাইয়া ঘুমাচ্ছে।মীরা আর শাওন কই গেলো।আমি কিছু না বলেই ওনার দিকে তাকালাম।
–মীরার কথা ভাবছো হয়তো,ও শাওনের সাথে চলে গেছে বাসায়।এবার তুমিও…..
আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম,একটা কথাও বলিনি উনি হয়তো কষ্ট পেলেন,নাও পেতে পারেন।কারন কাল রাতে উনি আমাকে যা বলেছেন তা আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি পিছন গেট দিয়েই ভিতরে ঢুকলাম।রুমে ঢুকতে যাবো তখনি মা ডাক দেই আমায়।মায়ের গলার আওয়াজে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।আমি তো ভয়ে আল্লাহকে ডাকা শুরু করলাম,,
–কি রে মা তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস??
–……
–কি হয়েছে কথা বলছিস না যে??পানি খেতে এসেছিলি নাকি??
–হ্যা মা হ্যা।পানি খেতে গিছিলাম
–কিন্তু আমি যে তোর ঘরে পানি রেখে এসেছিলাম।
–কই না তো।।
–কি বলিস রেখেছি তো।
–না মা
–সর তো দেখে আসি।
আমি মা কে বাধা দিই,কারন মা ঘরে যেয়ে যদি দেখে পানি আছে তাহলে সন্দেহ করবে।আর তখনি বুঝে যাবে আমি মিথ্যা বলেছি।না বাবা ধরা পড়া যাবে না।মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
ঘরে এসে ভাবছি ওনার কথা,উনি কি মজা করলেন??আর যদি সত্যিও হয় তাইলে শাওন সেজে কেন??উনি হয়েই তো কথা বলতে পারতো।এমন তো না যে ওনাকে আমার একদমি পছন্দ ছিলো না।কাজটা উনি ঠিক করেননি।ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাংলো অনেক বেলা করে।সারাদিন বাসার সবার অনেক আদর পেয়েছি,উপহারও অনেক পেয়েছি।সন্ধ্যাবেলা পার্টি।শাওন,মীরা সবাই আগেই এসেছে কিন্তু আমার শাওনের অপর খুব রাগ হচ্ছে ও এতোদিন ওর ভাইয়ের সাথে ছিল।কোথাও না কোথাও ওউ তো সৌভিক ভাইর সাথে মিলে আমাকে ঠকিয়েছে।শাওনের সাথে এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা করলাম ও আমাকে কিছু কথা বললো যেগুলো জানার পর আমি রাতের থেকেও বেশি শকড কিন্তু এটা কিছুটা শিউর যে সৌভিক ভাই হয়তো সত্যি বলেছেন।
সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো।আমি সাদা এক্টা গাউন পরেছি আজ।একে একে সব মেহমান আসছে।কিন্তু কেন জানি না আজ ওনার কথা বেশিই মনে পড়ছে।আমি দরজার দিকে তাকিয়ে ওনাকে খুজছি।
–আমাকে খুজছো বুঝি?
হটাত করে ওনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যায়।
–আর খোজা লাগবে না আমি এসে গেছি।
–আ আপনাকে কে খুজছিলো আমি তো আপনাকে খুজিনি।
–যাহ মিথ্যুক খুজেছো।
–না খুজিনি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।মানলাম খোজোনি কিন্তু আমার ব্যাপারটা কি ভেবেছো?
–কোন ব্যাপার?
–কোন ব্যাপার মানে??রাতে যে তোমায় মনের কথাগুলো বললাম সেই ব্যাপার।
–না ভাবিনি
–কেন?
–কারন আপনি চিট করেছেন।শাওন সেজে দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়েছেন।আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছেন।আর আমি কিভাবে বিশ্বাস করব যে আপনি যা বলেছেন তা সত্যি?প্রাংক ও তো করতে পারেন।
–আমার মুখের কথাই কি যথেষ্ট না?
–না যথেষ্ট না।
–কিন্তু আমি
• আমি আর কথা শুনলাম না।চলে গেলাম ওখান থেকে।পার্টি শেষ হলো উনি এর মধ্যে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি কথা বলিনি রাতে উনি অনেক বার কল দেন আমি রিসিভ করিনা।
পরের দিন ভার্সিটিতেও উনি কথা বলতে চান কিন্তু আমি চরম মাত্রায় ইগনোর করি।তিন দিন কেটে যায় আমি ওনাকে ইগনোর করেই চলেছি আর উনি আমাকে দিনে ৫০০ বার কল দেই,ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে থাকে।এর মাঝে অনেকবার আমার রাগ ভাঙানোর ট্রাই করেছে কখোনো বার্গার দিয়ে,কখোনো বা ক্লাসরুমের হোয়াইট বোর্ডে সরি লিখে।ব্যাপারগুলো আমার বেশ হাসি পাই কিন্তু আমি রাগ করে থাকার অভিনয় করি।একদিনে ওনার কথা কম ভাবিনি কিন্তু আমি ওনার প্রতি এখোনি দুর্বল হতে পারবো না।আমাকে জানা লাগবে ওনার ফিলিংসটা আসলেই সত্যি কিনা।
আজ ভার্সিটিতে আসার পরপরি অনেক বৃষ্টি।ক্যাম্পাসের অনেক জাইগায় কাদা জমে গেছে।কাদা বরাবরি আমার বিরক্তির বিষয়।পা টিপে টিপে পার্কিং সাইডে যাচ্ছি হটাত পিছন থেকে কেউ যেন আমার হাত চেপে ধরলো।আমিও দেখা নেই তার আগেই উল্টা ঘুরে অন্য হাত দিয়ে দিলাম এক চড়।
–আহ!!আজ আবার মারলে কেন??
উনি গালে হাত দিয়ে আছে।আমি ওনাকেই মেরেছি।ওনার অবস্থা দেখে একটু খারাপ লাগ্লো।আমারি ভুল হুটহাট কাউকে মারা ঠিক না।তারপরো ওনার মুখের রিয়াকশনটা জোস একদম।
–নিহীপাখি তুমি মানুষকে এতো মারো কেন?অবশ্য সবাইকে মারো না আমাকেই মারো।বরকে কেউ মারে?
–বর কে বর?(আমি রাগ করার ভান করে)আর মেরেছি বেশ করেছি।এইভাবে মেয়েদের হাত ধরে কেউ?অসভ্য কোথাকার।
–কি?আমি কি অন্য কোন মেয়ের হাত ধরেছি?আমি তো আমার বউ এর হাত ধরেছি।
–আমি কবে বিয়ে করলাম আপনাকে??
–এখনো করোনি।ভবিষ্যতেতো করবা।
–নাআআআআআআ…..
আমার চিল্লানি শুনে উনি বললেন,
–ঠিক আছে ঠিক আছে।কিন্তু এভাবে চিল্লিয়ো না প্লিজ মানুষ খারাপ ভাব্বে তো।মনে নেই পার্কের ঘটনা।
উনি কথাটা বলে ঢোক গিললেন।আমিও ওইদিনের কথা মনে করে মনেমনে হাসলাম।আসলেই ওইদিন উনি মার খেতে খেতে বেচেছেন।
–হাত ছাড়ুন আমার
–ছাড়ছি আগে বলো আমাকে ইগনোর করছো কেন?
–আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।ইউ চিট মি।
–আমি তো ইচ্ছা করে কিছু করিনি যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে।আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ নিহীন বোঝ
ওনার মুখ দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো।আর মাথায় খেলে গেলো এক দুষ্ট বুদ্ধি।
–ওকে।প্রুভ করেন আপনি সত্যি বলছেন।(আমার কথা শুনে উনি খুশি হয়ে গেলেন যেন)
–হ্যা হ্যা বলো কি করা লাগবে??আমি সব করবো।কিন্তু আমাকে ইগনোর করে কষ্ট দিও না আর।
–ভেবে চিন্তে বলছেন তো সব পারেন?
–হ্যা।তুমি বলো কি করা লাগবে??
(আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে মাঠের মধ্যের কাদা ইশারা করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন)
–বুঝলেন না তো?
–না
–ওই কাদা দেখতে পারছেন?(উনি তাকালেন)
–হুম
–যান ওখানে গিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে আসেন।তাহলেই মানবো আপনি সত্যি বলছেন
–মানে?(উনি অসহায়ের মতো তাকালেন)
–হ্যা যা বলেছি তাই।
–কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
–অসম্ভবের কিছু নেই তো?
–কিন্তু এটা তো নিছক পাগলামি।
–পাগলামি কি জানি না।আপনি যদি ওটা না করেন তাহলেই আমি মানবো
–কিন্তু নিহী
–আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।
উনি কথা বলতে গেলেও আমি বলতে দিলাম না।আমি হাত দিয়ে ইশারা করলাম উনি অসহায়ের মতো হাটতে লাগলেন।আমার বেশ হাসি পাচ্ছে ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয় এতোটাই বোকা যে সত্যি কাদার মধ্যে যাচ্ছে।আমি হাসি আটকে রাখলাম।
–নিহীন এখানে তো অনেক কাদা আমি তো
ধপাস,,উনি আর কিছু বলার আগেই পড়ে গেলো কাদার মাঝে।ওনার মুখে কাদা লেপ্টে গেলো।উনি কাদাই মাখামাখি পুরো এবার আর আমি হাসি আটকাতে পারলাম না।হোহো করে হেসে দিলাম।উনি শুকনো মুখে উঠে দাড়ালেন আমার নাম নিতে না নিতেই আমার ধপাস আমি আরো জোরে হাসলাম আর উনি রাগে গজগজ করছে।আমার হাসছি তখন শিবলি ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করলেন
–হাসছো কেন নিহীন??
আমি হাসতে হাসতে ইশারা করলাম।উনি কাদাই মাখামাখি সৌভিক ভাইকে চিনতে পারলেন না।
–ওমা ওটা কে??
আমি আরো হাসছি।শিবলি ভাইয়া নিজের বন্ধুকেই চিনলো না।অবশ্য ওনার মা আসলেও ওনাকে চিনতো না এতোটাই বাজে অবস্থা।শিবলি ভাইয়া চিল্লিয়ে শুনলো
–কে ভাই তুমি??ওখানে কি করছো?
–ঘোড়ার ঘাস কাটছি হারামজাদা(রাগে)
–এই তোমার গলাটা চেনা লাগছে।একদম আমার বন্ধু সৌভিক এর মতো
–ওরে ঢেড়স আমি সৌভিকি
–কি??তুই ওখানে কেন??
ওনাদের এই কথপোকথনে আমি আরো জোরে জোরে হেসে দিলাম।উনি কাদার থেকে উঠতে উঠতে বললেন,,
–তোমার হাসি বের করছি একবার ওখানে যেতে দাও।
আমি আর দাড়ালাম না।মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড় দিলাম।
চলবে……..#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৭
ড্রাইভার কাকু চলো চালো তাড়াতাড়ি চলো,লেট করা যাবে না তা না হলে পাগলা ষাড় চলে আসবে।
–পাগলা ষাড় আবার কই থেকে আসবো ছোট মা??
–আছে আছে এখানে তুমি চল তো।
ড্রাইভার কাকু গাড়ি চালানো শুরু করে আর আমি পিছে বসে হেসেই যাচ্ছি।ঠিক হয়েছে আমার সাথে এতোদিন চিটারি এবার বুঝবে নিহীন কি জিনিস।
বাসায় এসে খাবার টেবিলেও হাসছি।নিলু আপা অনেকবার জানতে চাইলো এভাবে হাসছি কেন কিন্তু কিছু বললাম না।রাতে খাবার পর ঘরে এসে দেখি ওনার অনেকগুলো মেসেজ।সবগুলোতে লেখা আজকের কাজটা ঠিক হলো না।তুমি ইচ্ছা করে প্রাংক করলে।আমি মেসেজ গুলো দেখে আবারো হাসলাম তারপর শুয়ে পড়লাম।
ঘুমের মাঝেই কেউ জেন আমার গালে হাত বুলাচ্ছে,ঠান্ডা হাত আমার গালে লাগতেই আমি কেপে কেপে উঠছি।হটাত আমার চোখ খুলে গেলো।
–আআ…..উউউউউউউউ
আমার চোখের সামনে কারো একজনের আপছা মুখ দেখে আমি তো ভয় পেয়ে চিল্লানি দিছি কিন্তু সাথে সাথেই আমার সামনে থাকা লোকটি আমার মুখ টিপে ধরলো।
–আরে আরে নিহীপাখি কি করছো কি??বাশ খাওয়াবা নাকি??
এতোক্ষন কে না কে ভাবলেও গলা শুনে বুঝে গেছি এটা ওই অসভ্যটাই।কিন্তু এতো রাতে এখানে আমার রুমে কেন??আমার মুখের ওপর ওনার হাত থাকাই আমি কথা বলতে পারলাম না।
–আমি এসেছি আমি।চিতকার করো না।আচ্ছা তুমি এতো দুষ্টু কেন??সকালে যেটা করলে সেটা কি ঠিক?
–উমউমউউউউউউমউম
–কি উম উম করছো কথা বলো,,
(ব্যাটা কি ছাগল??আমার মুখ টিপে ধরে আছে আমি কথা বলবো কি করে??…আমি এবার চোখ দিয়ে ওনার হাত ইশারা করলাম উনি বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নিলেন।ওনার হাত সরানোর পরই আমি উঠে বসে হাফাতে লাগলাম।উনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেন মনে হলো।আমি ওনাকে সরিয়ে এক লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে ঘরের লাইট অন করে দিলাম)
–আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?
–তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই চলে আসলাম।নিচেই দাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি তো আজ বেলকনিতে আসোইনি।তাই আর কতোক্ষন দাঁড়াবো?বেলকনি বেয়ে ওপরে উঠে দেখি তুমি ঘুমিয়ে গেছো।তোমার ওই ঘুমন্ত মুখটা দেখে যেতেই ইচ্ছা করছিলো না।ঘন্টা দুয়েক পর ভাবলাম এবার বাসায় যায় কিন্তু তোমার ওই মায়াবি মুখটা যেতেই দিলো না।খুব ইচ্ছা করছিলো তোমাকে একটু ছুঁয়ে দিই(ওনার কথা শুনে আমার মাথা ভনভন করছে।এ ছেলে কি পাগল নাকি বেলকনি দিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো??)
–আচ্ছা আপনি কি পাগল??বেলকনি বেয়ে উপরে উঠে আসলেন আর আমার বাসার নিচেই বা আসার কি দরকার??কেউ দেখে ফেললে তো ঝামেলা হয়ে যাবে।
–এতোদিন যখন হয়নি তখন আজও হতো না।
–এতোদিন মানে?
–এতোদিন মানে এই দেড় বছর।তোমাকে দেখার পর থেকে হাতে গোনা দুদিন আমি তোমার বাসার নিচে আসিনি।তোমার দেখা পাই বা না পাই রোজ তোমার বাসার নিচে অপেক্ষা করেছি,কতো মশার কামড় খেয়েছি।
–আপনি রোজ আমার বাসার নিচে আসতেন??আর বেলকনিতেই বা উঠলেন কিভাবে?
–হুম আসতাম তো।আর বেলকনিতে পাইপ বেয়ে উঠেছি।
–কিন্তু কেন?
–তোমাকে দেখতে।জানো একবার তোমাদের পাশের বাসার কুকুরের তাড়া খেয়েছিলাম।সে একদম প্রথম দিনের কথা।আমি ভেবেছিলাম ওটা তোমার বাসা।তাই পাচিল টপকে ওই বাসার ভিতরে ঢুকি।তারপর পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছি।বেলকনিতে উঠে রুমে ঢুকতে যাব দেখি এক আন্টি আমাকে দেখে চিতকার দেছে,ভালো যে আমার মুখ ঢাকা ছিলো।ওনার চিল্লানিতে আমি তো ভয় পেয়ে নিচে লাফ দিয়েছি।দুই তলা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েই ব্যাথায় আ করে উঠি তখনি পাশে দেখি এক কুত্তা তেড়ে আসতেছে।কোনরকম উঠে পাঁচিল টপকে বের হয়েছিলাম।বাবা রে বাবা সেদিন যদি ওই কুকুরটার কামড় খেতাম বা লোক চলে আসতো আমি তো…..
–হাহাহাহহাহহাহাহহহ(ওনার কথা শুনে খুব হাসি পেয়ে গেলো।আমি জোরে জোরে হেসে দিলাম)
–আরে আরে কি করছো এতো জোরে জোরে হাসছো কেন কেউ শুনে ফেলবে তো(আমি হাসি থামালাম)
–আপনি এতো কিছু করে ফেললেন??
–হ্যা
–আপনার পাইপ বেয়ে বেলকনিতে উঠতে ভয় করলো না?
–ভয়??এ মেয়ের কথা শোনো…হাহাহহাহহহহহ।।শোনো মিস নিহীন রুবাইয়াত আমার না সেই ছোট্টবেলার অভ্যাস পাইপ চড়া।বাসা থেকে তো রাতে এইভাবেই বের হতাম।
–সবাইকে লুকিয়ে??
–হুম।
–ব্যাটা তাইলে তলে তলে এটাও করেছে।মানুষের সামনে ভালো সাজার নাটক সব। আসলে একটা মিনমিনে শয়তান।(মনে মনে)
–কি ভাবছো?
–কিছু না।
–ওহ
উনি আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেন আর চোখ বন্ধ করে ফেললেন।
–এই এই আপনি আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেন কেন?
–এটা তোমার বিছানা?
–মানে?আমার ঘর আমার সব আর বিছানাটা কি পাশের বাড়ির মর্জিনার হবে??
–ওহ এই খাট টা মর্জিনার??
–মর্জিনার হবে কেন?আর মর্জিনা বলে কেউ নাই ও।ওঠেন ওঠেন আর বিদায় হন।কেউ দেখে ফেললে বাশ খাবো।
–নাহ আজ আর ভাবছি যাবো না।তোমার বেড টা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে,ভাবছি আজ রাতে এখানেই ঘুমাবো।
–কি??ফাজলামি পাইছেন ওঠেন।
আমি ওনার হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু উনি উঠছেনি না।আমি জোর করে ওনাকে উঠাতে যেয়ে ওনার পায়ে বেধে তাল সামলাতে না পেরে ওনার বুকের ওপর গিয়ে পড়লাম।আমার খোলা চুলগুলো ওনার মুখের উপড় পড়েছে।উনি আলতো হাতে চুলগুলো আমার কানের কাছে গুজে দিলেন।আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে,নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে,উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।উনি আস্তে আস্তে ওনার মুখ আমার মুখের দিকে সরিয়ে আনছে
–কি করছেন এটা??
আমার কথাই উনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি উঠে দাড়িয়ে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে নিলাম।
–এবার আপনি যান
–চলেই তো যাবো কিন্তু তার আগে বলো আমাকে আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে??
–একদিনে তো আরকিছু হয় না।তাই আমি বলতে পারবো না।আপনি এখন বাসায় যান।
আমার কথাই উনি মন খারাপ করলেন।কিন্তু একটু পরেই বললেন বেশি সময় নিও না নিহীপাখি,কষ্ট হয় খুব।আমার কাছে এসে কপালে একটা চুমু দিয়েই চলে গেলেন বেলকনি দিয়ে।নিচে গিয়ে আরো একটা ফ্লাইয়িং কিস দিলেন।আমি ঘরে এসে ভাবছি উনি এতো কিছুও করেছেন আমার জন্য।আমি মুচকি হেসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখি সেই ছোট্ট ছেলেটা দাড়িয়ে।অনেকদিন পর দেখা হলো,ছেলেটা আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে একদিনে।ওকে দেখে আমি এগিয়ে গেলাম।
–ভালো আছো পিচ্চি??
–হুম ভাবি।আপনি কেমন আছেন?
–ভাবি??!!
–হুম ভাবি,কেন অবাক হলেন?আসলে ভাই কইছিলো যতোদিন না আপনারে মনের কথা কইয়া দিবে তোদিন যেন আপু বলি এখন তো আপনি সব জানেন তাই ভাবি কইলাম
–এই পিচ্চিটারেও বাদ দিলো না।দুমিয়ার সবাইকে বলে বেড়িয়েছে নাকি লোকটা??হাহ!সব ঢং,এতোই যখন ভালোবাসে তখন প্রথমেই বলে দিলেই তো হতো(মনে মনে)
–ভাবি চুপ করে আছেন যে??এই নেন আপনার জন্যে ভাই খাবার পাঠিয়েছে।খেয়ে নেবেন
আমার হাতে খাবারের প্যাকেট দিয়ে ছেলেটা চলে গেলো।মীরা এসে জানতে চাইলো এটা কে দিয়েছে??আমি সব খুলে বললাম ওরে সৌভিক ভাইয়ের ব্যাপারটা।আমার কথা শুনে মীরা তো বার বার লাফাচ্ছে আর বলছে ও আগেই বলেছিলো কিন্তু আমিই মানতে চাইনি।আমি ওকে অনেক কষ্টে চুপ করালাম।কি খাবার পাঠিয়েছে দেখার জন্য প্যাকেট খুলতেই দেখি বার্গার ৩টা আর সাথে এক্টা চিরকুট।
“খাওয়াদাওয়া করতে তোমার কি খুব কষ্ট হয়??কোনদিনি খেয়ে আসো না।খাবার খেলে কি হয় একটু?৩টা বার্গার পাঠালাম ২টা খেয়ো আর একটা মীরাকে দিয়ো।নিজে আসতে পারিনি বলে মন খারাপ করো না নিহীপাখি,আমার খুব ইম্পরটান্ট ক্লাস আছে।সরি এন্ড লাই ইউ সো মাচ।”
মীরা জোরে জোরে লেখাগুলো পড়ে বললো,,
–বাব্বাহ,এতো ভালোবাসা???
–ভালোবাসা না ছায়
–থাক থাক তোমাকে আর ঢং করা লাগবে না।ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয় তোমাকে লেটার পাঠাচ্ছে রাতের বেলকনি বেয়ে মিট করতে যায় এতো প্রেম তুমি কোথায় রাখবা নিহীপাআখি..
–এই তুই কি বললি?
–কি আর বলবো নিহীপাখি বললাম,তোমার হবু বরের দেয়া নাম।
–হবু বর?
–তা নইতো কি??তুমি যে ওনার ওপর ক্রাশড তা আমি বুঝি মামু।তাই আর নাটক করা লাগবে না।
–আমি নাটক করছি??
–তা নই তো কি??
–তবে রে দেখাচ্ছি মজা….
আমি মীরাকে তাড়া করলাম ও ছুটছে তার পিছু পিছু আমি ছূটছি।হটাত ধাক্কা খেলাম এক সিনিয়র স্যারের সাথে।যে সে স্যার না ক্যাম্পাসের অন্যতম বদমেজাজি স্যার সেই জন্যেই আমরা বজ্জাতের হাড্ডি নাম দিয়েছি।আমি তাড়াতাড়ি ওনাকে সরি বলি।উনি কিছু বলে না কিন্তু আমার দিকে রাগি চোখে তাকাই।তারপর চলে যায়।
–নিহু বজ্জাতের হাড্ডিটা তোরে এতো সহজে ছেড়ে দিলো কেন??
–সেটাই তো বুঝতেছি না।
–নিশ্চয় তোরে পরে ঝাড়বে।
মীরার শেষের কথাটা খেটে গেলো।আজকে ওই স্যারের ক্লাস আছে।স্যার আমাকে একটা সুত্র ধরলেন,ওনার ভয়ে আমি তো গুলিয়ে ফেলেছি সব
–এই মেয়ে এতোটুকু ছোট্ট সুত্র পারো না আবার বিবিএ পড়তে এসেছো?ঘুষ দিয়ে ভর্তি হয়েছিলে??
–স্যার আমি ঘুষ দিয়ে..
–হাউ ডেয়ার ইউ!মুখে মুখে তর্ক করো?বাবা মা কোন শিক্ষা দেইনি?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?অবশ্য তোমার যে কি শিক্ষা দিয়েছে তা জানা আছে।এতো বড় মেয়ে ক্যাম্পাসে দৌড়াদুড়ি করো বড়দের সম্মান করো না।বেহায়াপনা করে বেড়াও,কোন ভদ্রতাই শেখোনি।আমার তো মনে হয় তোমার ফ্যামিলিই এরকম,অভদ্র।ফ্যামিলি যেমন মেয়ে ও তো তেমন হবে।
(এতোক্ষন আমাকে নিয়ে কথাগুলো মেনে নিলেও আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে কথাগুলো আমার হজম হলো না।খুব রাগ হয়ে গেলো ওনার সাহস হয় কি করে আমার ফ্যামিলিকে খারাপ বলার?আমি কথা শুনাতে চাইলাম কিন্তু মীরা আমার হাত চেপে ধরে ইশারা করলো চুপ থাকতে,পাশ থেকে শাওনও চুপপ থাকতে বললো।স্যার চলে গেলেন।ক্লাসের সবার সামনে আমাকে এভাবে অপমান মেনে নিতে পারলাম না।আমার খুব কান্না পাচ্ছে।বিনা দোষেই আমাকে এতোগুলো কথা শুনালো।)
রাতে মন খারাপ করে শুয়ে আছি,ওনার কল আসলো আমি রিসিভ করলাম না।বেশ কয়েকবার ইগনোর করার পর রিসিভ করলাম।
–নিহীপাখি একটু নিচে আসবে?আমি তোমার বাসার নিচে
–আমি যেতে পারবো না
–কেন?একটাবার আসোইনা তোমাকে একটা কথা বলার আছে।
–আমার ভালো লাগছে না।বাই
আমি ফোন কেটে দিলাম।এই মুহুর্তে আমার কথা বলার বা দেখা করার একদমি মুড নেই।
পরেরদিন ভার্সিটিতে যেয়েই মীরার কথাই শকড হলাম।কালকে যেই টিচার আমাকে বকা দিয়েছে তিনি নাকি আমাকে খুজছিলো ক্ষমা চাওয়ার জন্যে।মীরার কথাই আমি কি রিয়াক্ট করবো বুঝলাম না।ক্লাস করছি সবাই হটাত ওই স্যার আসলো।আমাকে ডাক দিলো সবার সামনে।আমি গেলাম,আর কি অদ্ভুত ব্যাপার উনি আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন সবার সামনে।কালকে আমাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি সেটাও বললেন।
–তুমি আর রেগে নেই তো মা?
–না না স্যার।আমি আর রেগে নেই।
–আসলে ভুলটা আমারি।থ্যাঙ্কস টু আশহাদ ও না থাকলে আমার ভুলটা বুঝতেই পারতাম না।কাল বিকালে আমাকে কল দিয়ে ও আমার ভুলটা রিয়েলাইজ করিয়েছে আর তুমি যে কতোটা ভালো সেটাও বলেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিও নিহীন মা।
স্যার চলে গেলেন আর আমি তো শকড উনি স্যারকে এসব বলেছেন কিন্তু উনি কিভাবে জানলেন??আমি মীরার দিকে তাকালাম ও দুষ্টু হাসি দিলো।বুঝে গেলাম মীরাই বলেছে।
চলবে……..
(