#__অবহেলার_শেষে___(৭ম/শেষ পর্ব)
লেখক সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)
“শোন অপরিচিতা বোন এখন তোমার বয়স সবে মাত্র ১৮ হয়েছে। হয়ত তুমি মনে করছ সেই কলেজ লাইফের রিলেশন টা অনেক মজার ছিল। সে অনেক ভালোবাসতো। আরে বোকা মেয়ে সে যদি তোমাকে ভালোবাসতো তবে একেবারের জন্য হলেও তো তোমার পরিবারে বলতে পারত৷ অথবা তার পরিবার থেকে কাউকে পাঠাতে পারত। সে কিন্তু কিছুই করেনি। আরেক টা কথা শোন স্কুল কলেজ লাইফে কেউ কেউ রিলেশন কেন রাখে জানো! কেউ কেউ কেবল মাত্র একটু ফোনে গল্প করার জন্য আর কলেজে, স্কুলে টাইমপাস করার জন্যই রিলেশন করে৷ আবার কেউ কেউ রিলেশনে জড়ায় তার ঐ উঠতি বয়সের চাহিদা মিটানোর জন্য৷ একটা বার লুকিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখো৷ তোমার অবর্তমানে সে হয়তোবা আরেক টা রিলেশনশিপ এ জড়িয়ে গেছে। আবার নতুন করে কাউকে বলছে তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না৷ তুমি হয়তোবা এখন আমাকে বলবে আমি যে তোমাকে এতো জ্ঞান দিচ্ছি আমি কেন তবে ঐ ভুল টা করেছিলাম৷ আসলে আমার ঐ ভুলের কারনে শিক্ষা হয়েছে বলেই তো তোমাকে আজ বুঝাতে পারছি৷ ভুল থেকেই তো সবাই শিক্ষা নেয়।’ এই বলে অবন্তী অপরিচিতাকে বুঝাতে লাগল।
অপরিচিতা বলে উঠল, “আপু আমি যেমন ২ বছরের সম্পর্কের মায়ায় জড়িয়ে গেছি সে কি জড়িয়ে যায় নি?”
আবন্তী বলে, “হ্যা এটা ঠিক বলেছ। এক সাথে চলার ফলেই আসলে মায়া জন্মায় ভালোবাসা জন্মায়। প্রথম দেখায় তো কেবল সুন্দর চেহারাটাই ভালো লাগে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে ৩-৪ বছরের রিলেশনশিপ এর মায়ার চাইতে ৩ অক্ষরের “কবুল” শব্দটার মায়া অনেক বেশী। হুট করেই একজন কে আই লাভ ইউ বলে ফেলা যায়। কিন্তু কবুল শব্দটা উচ্চারণের সময়ে হৃদয় টা ছিঁড়ে যায়। চোখে থেকে আপনা আপনি পানি ঝরে। সেই পানিটা একদিক দিয়ে সুখের অন্যদিক দিয়ে বেদনার। তুমি আজকে যদি তোমার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি চলে যাও এবং ইদ্দত পালন শুরু করে দাও। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি৷ তুমি কালকেই হাতের ‘অনামিকা’ আঙুল টার দিকে তাকিয়ে ভাববে এখানে অনেক যত্নের একটা আংটি ছিল। খেতে গেলে ভাববে সে কি খেয়েছে না আমার জন্য কষ্ট পেয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমাতে গেলে ভাববে সে কি ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে নাকি বিছানার দিকে তাকিয়ে আমার কথা ভাবছে! তারপর দিন শেষে পরিসংখ্যান করবে তুমিই তার চাইতে বেশী ভেবেছ। তুমি তার চেয়ে কম ঘুমাতে পেরেছ। তুমিই ঠিক মতো খেতে পারোনি। তখন আবার ভাবতে শুরু করবে ঐ দিন কত কষ্ট করে “আলহামদুলিল্লাহ, কবুল” শব্দ গুলো বলে ছিলাম। আজ এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে চলে এলাম। আমি কি ভুল করিনি! তখন তোমার বুঝে আসবে যে, হ্যাঁ তুমি কি জিনিস পিছনে ফেলে রেখে চলে এসেছ। তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে তুমি আর সেই হারানো জিনিস আগের মতো করে ফিরে পাবে না৷”
অপরিচিতা উত্তর দেয়, “আপু তবে এখন আমি কি করব আমাকে একটা সঠিক রাস্তা বলে দাও”।
অবন্তী বলে, ” আমি এতোক্ষণ যা বল্লাম, খুঁজে দেখ তার মাঝেই তোমার সঠিক রাস্তা। তুমি ঐ সব অতীত ভুলে এখন বাস্তবতার চিন্তা করো। এখন তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পরে তুমি যতই অতীত ভাববে ততই তোমার পাপের পাল্লা ভারী হবে। আর তাছাড়া তুমি যদি এখন আবার সেই পুরাতন প্রেমিক এর কাছে ফিরে যাও তুমি কি ভাবছ তুমি সুখি হবে! মোটেও না। ছোট থেকে ছোট ভুলে সে তোমাকে খোঁটা দিবে৷ তোমার একটু ভুলেই শাশুড়ী ননদের খোঁটা শুনতে হবে। তাই যা বলেছি তাই কর। যাও পিছনের সিটে গিয়ে বসো। রাতে অতীত ভুলের জন্য স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও আর সুন্দর করে সংসার শুরু করো।”
অপরিচিতা একটু চুপ থেকে আবার বলে, “সত্যিই যাব আপু”।
অবন্তী বলে, “তো আর কি, যাও পিছনের সিটে যাও৷ আর আমার জন্যও দোয়া করো যেন সব ঠিক হয়ে যায়৷”
অপরিচিতা মুচকি হেঁসে অবন্তীর পাশ থেকে উঠে দুই সিট পিছনে গিয়ে স্বামীর পাশে বসে।
অবন্তীর মুখে ও হাসি ফুটে উঠে। মনে মনে বলতে থাকে, “আল্লাহ আমি পেরেছি নিজে ভুল করলেও অন্যকে ভুল করতে দেইনি৷ আমি তাকে বুঝাতে পেরেছি । আমি একটা সংসার সুন্দর করার উছিলা হয়েছি আল্লাহ। আল্লাহ এই কাজকে উছিলা করে তুমি আমার সংসারটা ঠিক করে দাও। আল্লাহ তুমি ওনার মন পরিবর্তন করে দাও। এখন থেকে যেন উনি আমাকে আগের মতেই ভালোবাসে সেই ব্যবস্থা করে দাও।”
.
. (প্লিজ গল্পের শেষে লেখা কথাগুলো অবশ্যই পড়বেন)
.
অবন্তী আজকে তার বাপের বাড়ি যাচ্ছিল। একা একা তো আর যাওয়ার কথা ছিল না। অবশ্যই তার স্বামী সাথে থাকত। আসার সময় স্বামীকে অনেক বলেছিল কিন্তু তার স্বামী আব্দুল্লাহ বলে, “দেখ আমি কোন মুখ নিয়ে তোমাদের বাড়িতে যাব৷ আমি পারব না৷ আব্বা আমাকে দেখলেই অপমানিত হবেন। আম্মা আমাকে দেখলে অপমানিত হবেন। আমি কারো দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারব না৷ কারন মুখ তুলে তাকালেই তারা অপরাধ বোধে ভুগবেন। আমি চাইনা ওনাদের অপমানিত করতে৷ তার চেয়ে ভালো তোমার যেতে মন চায় যাও। আমি গাড়িতে তুলে গিয়ে আসি৷ বাস একবারে তোমাদের এলাকার স্টেশন হয়ে যাবে৷ সেখান থেকে পরে রিকশা করে চলে যাবে৷”
অবন্তী আর কিছুই বলতে পারে না। কারন তার বুঝা হয়ে গেছে, কি ভুল সে করে ফেলেছে। তাই কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়৷ আব্দুল্লাহ ও স্ত্রীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে অফিসে চলে যায়৷ আর সেই বাসেই উঠে অন্য আরেক নববিবাহিত দম্পতি। যখনই মেয়েটি তার স্বামীর সাথে না বসে বরং অবন্তীর পাশের খালি সিটে এসে বসল তখনই অবন্তীর মনে হলো হয়তোবা তাদের কোন ঝগড়া হয়েছে নতুবা তার মতোই কোন সমস্যা।
তখনই অবন্তীর প্রশ্নের জবাবে অপরিচিতা বলে তার জীবনের ১ম প্রেমের গল্প। তার ভালোবাসার গল্প এবং তার পরিবার তার অমতে তাকে বিয়ে দিয়েছে সেই গল্প।
অবন্তী অপরিচিতার ভুলটা বুঝতে পেরে নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলে অপরিচিতা কে বুঝাতে সক্ষম হয়, যে আসলে বিয়ের সম্পর্কটাই আসল সম্পর্ক।
অবন্তীর স্টেশন এসে পরেছে। তাই নামতে যায়, তখন খেয়াল করে পিছনের সিটে তাকিয়ে দেখে অপরিচিতা তার স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে৷ নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠে তার ঠোঁটে।
বাস থেকে নেমে রিকশায় উঠে৷ রিকশায় বসে ভাবতে থাকে। আমি কত কিছু হারিয়ে ফেলেছি৷ আজ হয়তোবা উনি সাথে আসলে আমিও এমন করে উনার কাঁধে মাথা রেখে প্রকৃতির সুন্দর্য উপভোগ করতে পারতাম।
বাপের বাড়িতে সবাই জিজ্ঞেস করে, “জামাই কে নিয়ে আসলি না কেন”?
অবন্তী নিজের চেহারা যথাসম্ভব সাভাবিক রেখে বলে, ” আসলে উনার আজকে নাকি জরুরি কাজ আছে তাই আসে নাই৷ পরে আসবে”।
কিন্তু অবন্তীর ভাবী বুঝে ফেলে যে অবন্তী মিথ্যা বলছে৷ রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে অবন্তীকে জিজ্ঞেস করে, “অবন্তী তোমার জামাই কি এখনো রাগ করে আছে নাকি? আজকে আসল না কেন”?
অবন্তী ভাবীর কাছে কিছু লুকায় না সব বলে দেয়৷
অবন্তীর ভাবী ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কেঁদো না সব ঠিক হয়ে যাবে৷ একটা বাবু হলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ দেখো নাই তোমার ভাইয়া আগে আমার সাথে কতো রাগ দেখাতো কিন্তু যেদিন শুনছে আমার বাবু হইব ওই দিন থেইকা তো আমি যা বলি তাই শুনে। আগে তরকারিতে একটু লবন কম বেশী হলেই রাগারাগি করত। আর ঐ দিন তরকারিতে ভুলে লবন দেইই নাই কিন্তু চুপচাপ কষ্ট করে খাইয়া নিছে। খাওয়া শেষ কইরা তারপর বলছে। এই তরকারি তে লবন মনে হয় কম হইছে৷ পরে তো আমি দেখি যে লবন দেই নাই। আমি পরে যখন কইলাম আপনে লবন ছাড়া তরকারি কেমনে খাইছেন একবার বললেন ও না। পরে তোমার ভাইয়া কইতাছে, তুমি সারাদিন এতো কষ্ট করো। এই গরমের মধ্যে রান্না করো। আমি একটু কষ্ট করে না হয় খাইলামই’। পুরুষ মানুষের এমনই রাগ বেশী।
কিন্তু দেইখ বাবু হইলে তখন আর রাগ করত না। তুমি যা কইবা তাই শোনব।
( অনেক পুরুষ বলে একবার চিন্তা করি বউ এইটা ডিভোর্স দিয়ে আবার বিয়া করমু খালি পোলাডা/মাইয়াডার দিকে চাইয়া পারি না। তাদের বলি ভাই আপনার পোলা/মাইয়াডা কিন্তু আপনার স্ত্রী এর কারনেই হইছে। সুতরাং সন্তানের চেয়ে সন্তানের মাকে অধিক ভালোবাসতে শিখুন)
অবন্তী মনে মনে ভাবে উনি তো এখনো আমাকে ভালোইবাসে না ঠিক মতো আবার বাবু!
অবন্তীর ভাবি বলে, ” অবন্তী হইছে এখন আর চিন্তা করন লাগতো না যাও গিয়ে ঘুমাও। আমিও জাইগা তোমার ভাই মশারি ছাড়াই শুইয়া রইছে৷ যেই মশা! যাই আমি, গিয়ে তোমার ভাইরে মশারি টানিয়ে দিতে হইব”, বলেই চলে যায়।
অবন্তী ও নিজের মতো মশারি টানিয়ে শুয়ে পরে। তারপর স্বামীকে ফোন দিয়ে খাওয়াদাওয়ার খোঁজ নিয়ে ঘুমিয়ে পরে৷
দু’দিন পর অবন্তীর আর বাপের বাড়িতে মন বসে না৷ খালি ভাবির কথা গুলো চিন্তা করে। স্বামীকে ফোন দিয়ে বলে এসে নিয়ে যেতে। কিন্তু আব্দুল্লাহ আসবে না জানিয়ে দেয়৷ কোন ভাবনা অন্তর না পেয়ে বাবাকে বলে ফেলে, “আব্বু তুমি একটু বলো না হলে উনি আসবে না”।
অবন্তীর বাবা লজ্জা সত্ত্বেও কোন রকমে মেয়ের জামাইকে কল দিয়ে বাড়িতে আসার কথা বল্লো।
আব্দুল্লাহও শশুড়ের কথা ফেলতে পারল না৷ অবন্তীকে নিতে চলে আসল। খাবার টেবিলে যখন সবাই একসাথে খেতে বসল আব্দুল্লাহ একবারও মাথাটা উচু করতে পারল না, পাছে তার শশুড়ের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়৷ বিকালে স্ত্রী কে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসল আব্দুল্লাহ।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবন্তীকে সাজাতে দেখে প্রশ্ন করে, ” এই রাতের বেলায় সাজগোজ করার মানে টা কি?”
অবন্তী একটু লজ্জা মাখা সুরে বলে, “খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাই”।
আব্দুল্লাহ আর কিছু না বলে শুয়ে পরে। অবন্তী হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে। “কত কষ্ট করে সাজলাম আর উনি ঘুমিয়ে পরল”, মনে মনে রাগে গুনগুন করতে করতে কথাটা বলেই। যত্ন করে আঁচড়ানো চুল গুলোকে আউলা করে দেয় রাগে৷ শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের কাজল লেপ্টে দেয়। রাগে উল্টো দিকে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করে৷
হঠাৎ করেই আব্দুল্লাহ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে, “এতো রাগ করলে কি চলে?”
আবেগি স্বরে উত্তর দেয় অবন্তী, “কি করব তবে কতো কষ্ট করে সাজলাম আমি আর আপনি কিনা ঘুমিয়ে যাচ্ছেন।”
“তা এতো রাতে সাজগোজ করার মানেটা কিন্তু বুঝলাম না”!
“কেন সেজেছি তা বুঝি আপনি বুঝেন না!”
“না বুঝিনা তো, তুমি না বললে কি করে বুঝব কেন করেছ”।
” আমার একা একা ভালো লাগে না। আপনি তো সারাদিন ই অফিসে থাকেন। আর আমি বাড়িতে সারাদিন একা একা থাকি। আমার বোরিং লাগে”।
“তা ওই একা থাকার সাথে এই সাজুগুজুর কি সম্পর্ক”!
-” কোন সম্পর্ক নেই। আমার মন চাইছে তাই সেজেছি। ন্যাকামি করে কিছু যেমন বুঝে না৷ আপনার শুনতে হবে না কিছু”, বলেই একটা কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে উল্টো পাশ ফিরে শোয়।
আব্দুল্লাহ অবন্তীর রাগ দেখে হেঁসে ফেলে। অবন্তীকে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এই শুনো না, আমাদের যদি একটা ছোট্ট মেয়ে থাকত তবে কত ভালো হতো তাই না! সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করত। কতো ভালো হতো তাই না!”
অবন্তী মুখ ঘুড়িয়ে আব্দুল্লাহ বুকে মাথা রাখে। বিড়াল ছানার বুকের সাথে মিশে গিয়ে বলে, ‘একটা কথা বলবো আপনাকে?’
– ‘ বলতে থাকো।’
– ‘ জানিনা আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা তবু বলি। আমার আর ওর মধ্যে যদিও ৩ বছরের একটা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কসম করে বলতে পারি আমাদের মধ্যে কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না।’
— ‘ অবন্তী এখন ওসব কথা থাক।’
— ‘ সব কিছু আপনাকে না বললে যে আমার ভিতরে শান্তি হচ্ছে না। আমার বুকটা ফেটে যায় যখন আপনি আমার সাথে ঠিক মতো কথা না বলেন। আমি অবশ্যই মানছি আমি যা করেছি তার কোন ক্ষমা নেই। তবুও বলি প্লিজ বিশ্বাস করুন আমাদের আট দশটা রিলেশনশিপের মতো আমাদেরটা ছিল না। আমরা এটলিস্ট কোথাও একসাথে ঘুরতে পর্যন্ত যাই নি। আমার ভুল গুলো আমি অবশ্যই মেনে নিয়েছি কিন্তু প্লিজ আপনি কখনো আমাকে চরিত্রহীন বলে মনে করবেন না।’
— ‘ অবন্তী, চরিত্রহীন কথাটা হয়তো ছোট। কিন্তু এর মানে অনেক বিশাল। আমি কখনোই হয়তো তোমাকে একথাটা বলতে পারব না। যদি একথা বলতে পারতাম তবে কখনোই তোমাকে ফিরিয়ে আনতাম না। অবন্তী থাক আগে যা হয়েছে তা ভুলে যাও। শুধু এতো টুকুই মনে রেখো আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক। তাই অন্তত এমন কথা আমার সামনে বলো না যাতে আমি কষ্ট পাই।”
— ‘ আপনি যে আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি খুব ভালো করে জানি। ইনফেক্ট আমিও কোনদিন আপনাকে এতোটা ভালোবাসতে পারব কিনা জানি না। এতো ভালোবাসার পরেও কেন তবে আমাকে দুরে রাখেন। ‘
— ‘ জানি না কেন! কেন জানি একটু রাগ জমে গেছিল তোমার প্রতি।”
— ‘ এটাকে রাগ বলে না, ঘৃণা বলে। আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই আমি যখন আপনাকে একটুও ভালোবাসিনি তখন আস্তে আস্তে আপনার কষ্ট লাগতে থাকে। আর সেই কষ্ট থেকে আস্তে আস্তে আমার প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে। যখনই আমি চাই যে একটু আপনার বুকে মাথা রাখব। তখনই আমার স্পর্শটা পর্যন্ত আপনার ঘৃণা লাগতে থাকে। জানেন আমার কতটা কষ্ট হয়। হয়তো আপনি বলবেন সবাই বলবে যে, আমি অন্য কোথাও যেতে পারিনি বলেই এসে আপনার কাছে ঠাঁই নিয়েছি। আমিও এটা অনেকটাই মানি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে। আপনার প্রতিও আমার অনেক মায়া ছিল। কিন্তু কেন জানিনা আমি শয়তানের কাছে হেরে গেলাম। আমি পারিনি সব ভুলে আপনার বুকে মাথা রাখতে। ”
আব্দুল্লাহ কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ আমার মা শেষ মুহুর্তে এসে শুধু তোমার জন্য কষ্ট পেয়েছে অবন্তী। মা আমাকে ভরসা করার মতো কারো কাছে রেখে যেতে পারেনি এই জন্য কষ্ট পেতে পেতে মারা গেছে। অবন্তী মায়ের জন্য কি তোমার একটুও মায়া লাগনি?”
অবন্তী ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎই পাগলের মতো করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, ” মা আমাকে এতো ভালোবাসত, আমাকে এতো আদর করত। আমাকে যেদিন বলেছিল “তুই তো আমার মেয়ের মতোই” সেদিন থেকেই উনি আমার কাছে নিজের মায়ের মতোই হয়ে গিয়েছিল। জানিনা তবু কেন আমি মাকে এতোটা কষ্ট দিলাম। ঐ কথা মনে পড়লে আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যায়। আজও ঐ ঘরে গেলে আমার চোখে ভেসে ওঠে উনি হাসতে হাসতে বলছেন “তুই তো আমার মেয়ের মতোই”।
অবন্তী আর বলতে পারে না পাগলের মতো কাঁদতে থাকে। আব্দুল্লাহ অবন্তীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে প্লিজ আর বলো না। একটু শান্ত হও নয়তো শরীর খারাপ করবে।”
অবন্তী একটা ভীত বিড়ালের বাচ্চার মতো করে স্বামীর বুকের সাথে লেপ্টে থাকে। একটু পর পর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।
বেশ অনেকক্ষণ পরে অবন্তীকে চুপ থাকতে দেখে আব্দুল্লাহ বলে, ‘ এই অবন্তী, ঘুমিয়ে গেছো?’
— ‘ না, আর কতক্ষণ এভাবে থাকতে দিন না প্লিজ। আরেকটু শক্ত করে ধরবেন আমাকে! যেন এতোদিনের সব কষ্ট মিশে যায়।’
— ‘ অবন্তী, তোমার কি হয়েছে বলতো। আচ্ছা শোন, আজকে থেকে আর অতীতের কোন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না কেমন! আর এই কয়দিনের জন্য দুঃখীত আর বকা দিব না তোমাকে।’
— ‘ সত্যি! এভাবে আগলে রাখবেন তো সবসময়। আর একটা কথা দিবেন।’
— ‘ আবার কি কথা! ‘
— ‘ আজকের পর থেকে আমি যদি কোন ভুল করি তবে আমাকে প্রয়োজনে যতক্ষণ ইচ্ছে মারবেন। কিন্তু আমাকে আপনার কাছ থেকে দুরে যেতে দিবেন না।
— ‘ আচ্ছা ঠিক আছে, এবার বলো ছাঁদে যাবে! আজকে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। ‘
— ‘ এই চাঁদ সবসময়ই উঠবে। কিন্তু আমার এখন যতটা ভালো লাগছে এই ভালো লাগা আর কখনো পাবো না।’
আব্দুল্লাহ মুচকি হেঁসে বলে, ‘এভাবেই সব সময় থাকবে তো! যদি আবার কখনো আমাকে ছেড়ে যাও আমি হয়তো বাঁচবো না।’
সেই দিনটা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনো আসবে না। যতদিন বেঁচে আছি এভাবেই পাশে থাকবো। বিনিময়ে শুধু একটু ভালোবাসা দিবেন।’
আব্দুল্লাহ্ আর কিছু না বলে অবন্তীর কপালে একটা গাঢ় চুমু দেয়। অবন্তী যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় কিছু পায়। সে গুটি মেরে আবারও মিশে যায় স্বামীর বুকে। স্বামীর গেঞ্জি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ভাবতে থাকে, ‘এরচেয়ে সুখ আর কি হতে পারে। আর আমি কিনা অবৈধতায় সুখ খুঁজেছিলাম। সে আব্দুল্লাহর কানে কানে বলে, ‘খুব ভালোবাসি। কখনো ছেড়ে যাবো না। শুধু এভাবে একটু আদর দিও।’
পৃথিবীর দুপ্রান্তের দু’টো মানুষ একত্রে মিলিত হলে হয়তো এভাবেই একে অপরের সাথে জরিয়ে যায়। তারা তখন চাইলেও একে অপরের থেকে দুরে থাকতে পারে না। কোন এক অজানা সুতো তাদের বেঁধে রাখতে চায়। হয়তো সেটা সেই তিন অক্ষরের শব্দ ‘কবুল’। এই শব্দটা উচ্চারণ করতে যেমন কষ্ট হয়। ঠিক তেমনি এটা ভেঙে আলাদা হয়ে যাওয়াও হয়তো কষ্ট। পরিশেষে একটা কথাই বলা যায়। অবৈধতার সুতোয় বাঁধা পরার আগেই প্রিয়জনদের এই বৈধ ভালোবাসার সুতোয় বেঁধে দিতে চেষ্টা করুন। হয়তো তারা এই সুতোটা ধরেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারে সাচ্ছন্দ্যের মাঝে। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটা স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন। একে অপরের ভরসায় কাটিয়ে দিক সারাটি জীবন এই কামনা। ( সমাপ্ত )
(