💞 তোমার আড়ালে 💞
Urme prema (sajiana monir)
পার্ট :১০
ফ্লোরে সুবাহ র নিথর দেহ পড়ে আছে হাতের কাটা স্থান থেকে রক্ত পড়ে ফ্লোর ভেসে আছে ।পড়নের সেই পার্টি পড়া কালো শাড়ি ।পাশেই রক্ত মাখা ছুড়িটা পড়ে আছে ।আরোশের এই দৃশ্যে দেখে যেন পুরো দুনিয়া থমকে গেছে।
সুবাহ র এমন অবস্থা সে কিছুতেই সয্য করতে পারছেনা ।তার মধ্যে ভয় কাজ করছে সামনে আগানোর শক্তি পাচ্ছে হাত পা কাপঁছে সুবাহর এই অবস্থা দেখে মাথা চক্কর মারছে !
নিজের ভালোবাসার মানুষ কে নিজের চোখের সামনে এ অবস্থায় দেখলে কি করে কেউ সুস্থ থাকে ?
আরোশ যা বলেছে সব রাগের মাথায় বলেছে তার মাথা ঠি ক ছিলোনা আদির কাছাকাছি সুবাহকে দেখে কিন্তু সুবাহ এটা কি করলো ?
তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য সে আত্নহত্যা করলো ! সে এখন কি করে বাচঁবে ?সে তো সব পারবে কিন্তু সুবাহকে ছাড়া বাচঁতে পারবেনা ।সুবাহ উপর রাগ অভিমান যাই করুক না কেন কিন্তু তাকে কখনো ছাড়তে পারবেনা চোখের আড়াল করতে পারবেনা ।
আরোশ আস্তে আস্তে সুবাহর দিকে পা বাড়ায় চেহারায় কোন ভাবনা চেন্তা নেই যেন সে পুরো নিশ্ব হয়ে গেছে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে !
তার নিজের কাছে নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে ।
আরোশ সুবাহর কাছে যেয়ে হাটুঁ গেড়ে তার সামনে বসে সুবাহ কে নিজের বুকে জরিয়ে ধরে গালে হাত রেখে কান্না করেতে করতে পাগলের মত বলতে লাগে
“সুবাহহহহ!
সুবাহ !
জান উঠো প্লিজ জান উঠো আমি আর তোমার উপর রাগ করবোনা আর তোমাকে কিছু বলবোনা তুমি আমাকে যেই শাস্তি দেবে সব মাথা পেতে মেনে নিবো !
তুমি যা চাইবে ঠি ক সেই ভাবেই হবে জান প্লিজ তুমি উঠো !
আমি পারছিনা তোমাকে ভাবে দেখতে !
কেন করলে এমন তোমার তো আমার উপর রাগ ছিলো তাহলে আমাকে শাস্তি দিতে কেন নিজের ক্ষতি করলে ।”
বলেই হাউমাউ করে বুকে জরিয়ে কাদঁতে লাগে তারপর তারাতারি করে সুবাহকে কলে উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে যায় ।ড্রাইভারকে সামনে গাড়ি চালাতে বলে আর আরোশ পিছনের সিটে সুবাহকে কোলে করে বার বার তাকে উঠানোর চেষ্টা করছে ।সুবাহর এখনো হালকা শ্বাস চলছে কিছু সময়ের মধ্যেই আরোশ সুবাহকে নিয়ে হসপিটালে পৌছিয়ে যায় ।ডক্টোর তারাতারি করে সুবাহকে ও টি তে নিয়ে যায় !
আরোশ ও.টি র বাহিরে দাড়িয়ে আছে তার পুরো শরীর রক্তে ভিজে আছে ।আরোশের চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝড়ছে ।তার নিশ্বাস মনে হচ্ছে থেমে যাবে এখনই ।সুবাহকে ছাড়া সে নিজেকে কল্পনা করতে পারে না ।আরোশ যা বলেছে সব রাতের মাথায় বলেছে সত্যিতো এটাই সে সুবাহকে ছাড়া নিজে বেচেঁ থাকার কথা ভাবতেও পারেনা । তার শুরুটা ও সুবাহ আর শেষটাও যে সেই তাই তো সুবাহকে আদির সাথে সয্য করতে পারেনি !
আদির সাথে সুবাহকে দেখে তার মাথা পুরো বিগরিয়ে গিয়েছে তাই রাগের মাথায় যাতা বলে দিয়েছে সুবাহকে আজ তার গায়েঁ হাত তুলে ফেলেছে !
সুবাহ যখন তাকে ছেড়ে যাবার কথা বলেছে তখন তার মাথা ঠিক রাখতে পারেনি তার গলা চেপে ধরেছে ।
আরোশ ও.টি র সামনে ফ্লোরে হাটুঁ গেড়ে বসে নিশব্দে নিজের চোখের জল ফেলছে । আরোশ পুরো স্থব্দ হয়ে গেছে সে যেকোন মূল্য সুবাহকে সুস্থ চায় তার সুবাহ কে চায়।
কিছুসময় পর সুবাহর বাড়ির মানুষ হসপিটালে চলে আসে সাথে জান্নাত ও আছে ।বাড়ির কাজের লোক সুবাহর বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়েছে ।সুবাহর মা আরোশের সামনে এসে আরোশ কে তার দিকে আরোশের গালে রেগে জোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয় তারপর রেগে বলতে লাগে
“আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তোমাকে বিশ্বাস করে নিজের মেয়ে তোমার কাছে দিয়ে নিশ্চিত থাকা ।আমারই ভুল ছিলো যে আমি ভেবেছি আমার মেয়ে তোমার সাথে সুখে থাকবে !
কিন্তু তো আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো শুধুই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য !
আমার মেয়ে যেই অন্যায় করনি তুমি দিনের পর দিন তার শাস্তি দিয়ে এসেছো !
এখন তাকে এখানে কেন এনেছো ?
মরতে দিতে !
শান্তি তো পেত আমার মেয়ে সকল যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতো !”
বলে হু হু কাদঁতে লাগে সুবাহর মা কান্না করতে করতে নিচে বসে পড়ে জান্নাত তার মায়ের কাছে বসে তাকে সামলাতে লাগে ।জান্নাত কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আন্টি দেখবে ঠিক আমাদের সুবাহ সুস্থ হয়ে যাবে ।ওর কিছু হবেনা ।”
সুবাহর মা সেখানে বসে থেকে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“আমার মেয়েটা ছোট থেকে শুধু কষ্টই পেয়ে আসলো সব সময় নিজে শুধু ত্যাগ করেই আসলো বিনিময়ে কিছু পেলো না ।পরিবারের জন্য নিজেকে শেষ করে দিলো কিন্তু সেই পরিবারই তাকে বুঝলো না ।যাকে ভালোবাসলো সে ভুল বুঝলো !”
বলেই আবার কান্না করতে লাগলো ।নিদ্রা আর সুবাহর দাদীকে হসপিটালে দেখে সুবাহর মা রেগে তাদের দিকে তেড়ে যায় ।নিদ্রার গালে জোরে থাপ্পর দেয় হসপিটালের সবাই হা করে আছে ।সুবাহর দাদী রেগে সুবাহর মা কে বলতে লাগে
“তোমার সাহস কি করে হয় নিদ্রার গাঁয়ে হাত তুলার !
কে দিয়েছে তোমাকে এত সাহস তোমাকে তো …..।”
সুবাহর মা সুবাহর দাদীকে থামিয়ে বলতে লাগে
“এটা আমার অনেক আগেই করার দরকার ছিলো তাহলে হয়তো আজ আমার মেয়েকে এই পরিস্থিতে দেখতে হতো না !
আজ আমার মেয়ের এই পরিস্থিতীর জন্য শুধু আপনারা দুজন দায়ী ।যেদিন সুবাহ কে আপনারা এসব কিছু করতে বাদ্ধ করেছেন সেদিন যদি আমি এমন স্টেপ নিতাম তাহলে হয়তো আমার মেয়ে ভালো থাকতো ।আপনারা দুজন সুবাহকে বাদ্ধ করেছেন আরোশের থেকে নিজেকে আড়াল করতে তাকে নিজের পরিচয় গোপন রাখতে আরোশের সামনে নিদ্রাকে প্রভা প্রমান করতে !
আজ ভার্সিটিতে যা যা হয়েছে তার সব কিছুর জন্য নিদ্রা দায় ছিল নিদ্রা প্লান করে সুবাহ আর আদিকে এক রুমে আটকিয়ে রেখেছে তাকে চরিত্রহীন প্রমান করার জন্য !
জান্নাত আর আদি আমাকে সব জানিয়েছে আজকে ভার্সিটিতে যাযা হয়েছে ।”
পাশ থেকেই সুবাহর বাবা জোর গলায় বলতে লাগে
“তুমি এসব কি বলছো ?
মা আর নিদ্রা কেন এসব করবে !”
সুবাহ র মা সুবার বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“হ্যা এটাই সত্যি !
তোমার মা আর তোমার ভাগনী সব কিছু করেছে এসব কিছুর জন্য তারা দুজনই দায়ী !
আমার মেয়ের এই পরিস্থীতির জন্য তারা দায়ী তাদের জন্যই আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা ।
এতদিন ২২ টা বছর আমি চুপ করে ছিলাম সব অন্যায় সয্য করেছি কিন্তু আর না আজ আমার মেয়ের জীবন নিয়ে প্রশ্ন আজ আমি উনাকে ছাড় দিবোনা এর ফলাফল যাই হোক না কেন তুমি আমাকে সাপোর্ট করো আর না কর !”
সুবাহর মা সব কিছু খুলে বলে সুবাহ র বাবাকে সুবার বাবা সব শুনে সুবাহর দাদীর দিকে তাকিয়ে রেগে চিৎকার করে বলতে লাগে
“তুমি যা করেছো মা এর পর থেকে তুমি আমাকে কি নিজের থেকে দূর করবে আমিই তোমার সাথে থাকবোনা !
এতদিন ভেবেছি তুমি আমার স্ত্রীকে অপছন্দ কর কিন্তু হয়তো আমার সন্তানদের মেনে নিয়েছো তাদের আপন ভাবো কিন্তু তুমি তো দেখছি তাদের সয্যই করতে পারো না !
আমি নিজে থেকেই তোমার কাছে থাকবেনা আমার স্ত্রী আর সন্তান কে তোমার আসে পাশে রাখবোনা !
তুমি আমার মেয়ের সাথে যদি এসব করতে পারো তাকে খুন করতেও তুমি একবার ভাববে না !
আর আমি আমার সন্তানের কখনই কোন ক্ষতি হতে দিবোনা তোমার থেকে দূরে থাকাই আমার সন্তানের মঙ্গল ।আমার স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে তোমার থেকে দূরে চলে যাবো তোমার আর আমাদের চেহারা ও দেখতে হবেনা ।
তুমি তোমার মেয়ে আর নাতনীকে নিয়েই থাকো !”
আরোশ সব কিছু শুনে স্থব্দ রয়ে যায় তার পায়ের নিচ থেকে মাটি যেন সরে গেছে ।এত বড় ভুল সে কি করে করলো ?
সব কিছু করেছে নিদ্রা আর সুবাহর দাদী আর সে সুবাহকে বিনাদোষে শাস্তি দিলো !
সুবাহর তো কোন অন্যাই ছিলোনা সে তো যা করেছে সব কিছুর জন্য সে বাদ্ধ ছিলো ।কিন্তু আরোশের কি দোষ আরোশকে নিদ্রা যা দেখিয়েছে তাই তো সে দেখেছে ।আরোশের এখন নিদ্রাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তার নিজেকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে ! সে কি করে নিদ্রার মত বেহায়া মেয়েকে বিশ্বাস করলো আর সুবাহকে ভুল বুঝলো !
নিজের ভালোবাসার উপর এখন তার নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে সে কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করলো !
আরোশ কোন ভাবেই সুবাহকে হারাতে পারবেনা সুবাহকে কারন সুবাহকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা !
নিদ্রা যা করেছে তার শাস্তি তো আরোশ তাকে দিবেই কঠিন শাস্তি কিন্তু তার আগে সুবাহর সুস্থতা আগে !
সুবাহর কাছে তার ক্ষমা চেতে হবে সে যা করেছে তার জন্যে কোন ক্ষমা নেই সে জানে !
আদো সুবাহ তাকে ক্ষমা করবে কিনা তা তার জানা নেই কিন্তু সে শুধু জানে সুবাহকে ছাড়া থাকতে পারবেনা !
আরোশ নিদ্রার দিকে রক্ত চক্ষু তে তাকিয়ে আছে নিদ্রাকে সে কি করবে তার নিজের ও জানা নেই !
সুবাহর দাদাভাই সুবাহর দাদীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“তুমি যা করেছো তার জন্য তোমার কোন দিন ক্ষমা করবো না !
তুমি তোমার এক নাতনীর শখের জন্য অন্য নাতনীর জীবন নষ্ট করেছো ।
তোমার নাতনীর প্রতি অন্ধভালোবাসাতে তুমি তোমার পরিবার হারলে তোমার স্বামী সন্তান পরিবার সবাইকে হারালে তোমার সাথে আমাদের কারো কোন সম্পর্ক নেই !
তোমারা দুজন এখান থেকে বের হও হসপিটাল থেকে যাও তোমাদের দুজনকে দেখতে ইচ্ছে করছেনা ।
যাও এখান থেকে (ধমক দিয়ে )!”
সুবাহর দাদী আর নিদ্রা চলে যায় ।আরোশ ও.টি র সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে ।কিছুসময় পর ডক্টোর বের হয় আরোশ তার দিকে এগিয়ে অস্তির হয়ে বলতে লাগে
“সুবাহ কেমন আছে
আমার সুবাহ সুস্থ আছে তো !”
ডাক্টার উত্তরে বলতে লাগে
“পেশেন্ট ঠিক আছে ছুড়ি আঘাত বেশি গভীরে যায়নি ।শরীর থেকে অনেক ব্লাড গিয়েছে প্রোপার রেস্ট নিতে হবে !
কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে !”
সুবাহর বাবা বলতে লাগে
“ডক্টোর আমরা সুবাহর সাথে দেখা করতে পারবো !”
ডাক্টার বলতে লাগে
“জ্বি কিন্তু সাবধানে এখন উনি রেস্ট নিচ্ছে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে কোন হৈচৈ জাতে না হয় ।”
ডাক্টার চলে যায় সুবাহ কে দেখতে আরোশ প্রবেশ করতে নেয় সুবাহর বাবা আরোশকে যেতে না দিয়ে তাকে আটকিয়ে বলতে লাগে
“আমি চাইনা তুমি আমার মেয়ে র সাথে দেখা করো !
তোমাকে দেখে সে কষ্ট পাবে ।আমি কোন ঝামেলা চাচ্ছিনা তুমি চলে যাও ।আমার মেয়েকে আমি নিজের কাছে রাখবো আমি চাইনা পরবর্তিতে আমার মেয়ের এমন কোন কিছু হোক !
আমার মেয়ের জীবন থেকে জূরে সরে যাও ।”
বলেই তারা ভিতরে চলে যায় আরোশ সেখানেই দাড়িয়ে থাকে ….
চলবে….
❤️❤️❤️❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊