ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ৯

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৯

মিস্টার মাহমুদ- সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। আমি শুধু কিছু কথা বলতে চাই। আমি আপনার খুব একটা বেশি সময় নিব না। আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি কি এমন বলব যা প্রথমে বলি নি এখন বলব। আর তারাই এখানে থেকে কি করবে? সবাই আমাকে চিনে। আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আমি একজন সফল ব্যবসায়ী হয়েছি। সবাই আমাকে চিনলেও আমার পরিবারকে কেউ চিনে না। সবাই জানে আমার একটা মেয়ে আছে কিন্তু তাকে আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নি। আসলে আমার মেয়েই আমার পরিচয়ে কারো সামনে আসতে চায় নি। সে চায় নিজে কিছু করে পরিচিত হতে। আর তার চালচলন দেখেও কেউ বিশ্বাস করবে না যে ও আমার মেয়ে। আপনাদের মধ্যে অনেকই হয়ত জানেন আমার মেয়ে আপনাদেরই ভার্সিটিতে পড়ে। আবার অনেকেই তা জানেন না।

মিস্টার মাহমুদের কথা শুনে পুরো অনুষ্ঠানে শরগুল পড়ে গেল। মিস্টার মাহমুদের মেয়ে এই ভার্সিটিতে পড়ে? কে সে কে সে? হেন তেন।

আর তারা সব মাথা নিচু করে শুনছে। সে চাইছে না এমন কিছু। সে শক্ত করে এক হাতে তার বাপির কোর্ট এর হাতা ধরে আছে।

এতে সবার ভাবান্তর হলেও ভাবান্তর নেই রাতের মধ্যে। তার মধ্যে এমন একটা ভাব যেন সে সব জানে এবং চিনে মিস্টার মাহমুদের মেয়েকে।

মেঘ- কি রে তো আশ্চর্য লাগছে না মিস্টার মাহমুদের মেয়ে পড়ে আমাদের ভার্সিটিতে আর আমরাই জানি না?(রাত কে উদ্দেশ্য করে)

রাত জবাব না দিয়ে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে তারা আর মিস্টার মাহমুদের দিকে।

আকাশ- আরে ইয়ার আগে জানলে যে করেই হোক খুজে বের করে প্রেম করতাম তারপর বিয়ে করে শ্বশুরের বিজনেস। আহ।

আকাশের কথা শুনে রাতের রাগ ধপ করে উঠে গেল। কিন্তু সে হাত মুঠ করে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। যে চাইছে না এখানে কোনো ঝামেলা করতে।

এনি- আই কান্ট বিলিভ দিস দেশে নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যান এর মেয়ে পড়ে এখানে আর আমরা জানি না। আগে জানলে তো ফ্রেন্ডশিপ করতাম। সে যাই হোক এখন তো জানব পরে না হয় করে নিব।(এক্সাইটেড হয়ে)

এনির কথায় রাত শুধু এক রহস্যময় হাসি দিল।

আকাশ- ঠিক। আমিও না হয় পরে প্রেম করব।(খুশিতে গদগদ হয়ে)

এদিকে রাতের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। তার ইচ্ছা করছে আকাশকে মেরে এখানেই পুতে দিতে। কিন্তু বন্ধু হয় তাই সে তা করবে না। তাই যেভাবেই হোক রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

মিস্টার আহমেদ- এহসানের মেয়ে এখানে? ওহ নো রাতও তো এখানে আছে। এই এহসানটারই কি দরকার ঘটা করে নিজের মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এখন রাতকে কি করে সরাবো?(মনে মনে)

মিস্টার আহমেদের চিন্তায় এক বালতি জল ঢেলে মিস্টার মাহমুদ আবার বলতে শুরু করলেন।

মিস্টার মাহমুদ- কিন্তু আমি চাই সবাই আমার মেয়ে আমার কলিজার টুকরাকে চিনে রাখুন। এতে হয়ত আমার মেয়ে রাগ করবে কিন্তু আমি ভার্সিটিতে আমার মেয়ের সেফটি চাই। যা হয়ত তার পরিচয় তাকে এনে দিবে। তো আজকে এখানে পুরো ভার্সিটির সামনে আমি আমার প্রিন্সেস কে প্রেজেন্ট করছি। হেয়ার ইজ মাই ওয়ান এন্ড ওয়ানলি ডটার তারা মাহমুদ।(তারাকে দেখিয়ে জুড়ে বললেন)

মিস্টার মাহমুদের কথা শুনে যেন এক একজনের চোখ কুটোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না এই তারা দা গ্রেট বিজনেসম্যান মিস্টার এহসান মাহমুদের একমাএ মেয়ে তারা মাহমুদ।

তারার এখনো কোনো রিয়েকশন নেই। সে নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। মিস্টার মাহমুদ আবার একহাতে তারাকে জড়িয়ে ধরে।

তারার বন্ধুরা তো অবাকের চরম পর্যায়। কেউ ভাবতে পারছে তারা মাহমুদ তাদের বন্ধু। তাদের মতো মিডিলক্লাস ফ্যামিলির ছেলেমেয়েদের বন্ধু।

তন্নিমা- আচ্ছা আমি যা শুনেছি তোরাও কি তাই শুনেছিস?

অনিক- হ্যা রে।

আনিকা- আমাদের তারা দা গ্রেট মিস্টার মাহমুদের মেয়ে?

রিমা- কেউ আমারে ধর আমি এখনি মরে যামো।

রবিন- কান্ট বিলিভ দিস।(হা হয়ে)

এদিকে,
রাত গ্যাং এর অবস্থা তো আরো খারাপ। তারা তো তাদের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এনি তো মনে হয় জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। কাকে সে এতোদিন মিডিলক্লাস বলে অপমান করেছে। যাকে সে অপমান করেছে সে তো তাকে একহাতে কিনে অন্য হাতে বেচে দিতে পারে। এনি আর নিতে না পেরে ধপ করে বসে পড়ল।

আকাশ- এটা আমি কি শুনলাম?(অবাক হয়ে)

মেঘ- ঠিকি শুনেছিস। এই তারাই তারা মাহমুদ। যাকে তুই কলেজ থেকে বের করার হুমকি দিয়েছিলি।

নিপা- আমার তো হাত পা কাঁপছে রে। আমি তো ওকে পায়ে বাজিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম তারপর ওর মুখের উপর হাসছিলাম।(টেনশনে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে)

এনি- উফ চুপ করবে তোমরা। এটা কি করে হতে পারে। এই মেয়ে এমন ভাবে থাকতো যে দেখে বুঝায় যেতো না যে এই মেয়ে এত বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে। তাও আবার নাম্বার ওয়ান ব্যবসায়ীর।

মেঘ- তুমি চুপ কর। কম অপমান তো কর নি ওকে। এবার যদি আমাদের নামে নালিশ করে? তো আমরা তো সবাই আউট হয়ে যাব ভার্সিটি থেকে।

আকাশ- আমার বাবাও আমাকে আটকাতে পারবে না। কারণ মিস্টার মাহমুদ এই কলেজের ট্রাস্টিদের মধ্যে একজন তারপর এত বড় বিজনেসম্যান।

এনি- আমার কিছুই করতে পারবে না। আমার বাবাও তো এই ভার্সিটির ট্রাস্টি আর ব্যবসায়ীও।(ভাব নিয়ে)

আকাশ- তুমি থাকো তোমার ভাব নিয়ে। মিস্টার মাহমুদের কাছে তোমার বাবা কিছুই না। হুহ।

নিপা- এই চুপ কর না তোরা। আমার তো টেনশন হচ্ছে। এই রাত তোর টেনশন হচ্ছে না?

রাত একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাঁকা হেসে চলে গেল।

মেঘ- এর আর কিসের টেনশন এর বাবাও তো কম না দেশের টপ ৫ এর দ্বিতীয় জন।

নিপা- তা ঠিক।

মিস্টার আহমেদ- এইটা তুই ঠিক করলি না এহসান। এতোদিন মামনির থেকে রাতকে অনেক কষ্টে দূরে রেখেছি। এখন যা হবে তার জন্য তুই দায়ি থাকবি আর ভুগতে হবে আমার মামনিকে।(মনে মনে বলেই উনি উঠে চলে গেলেন।)

উনি তো জানেন না যে রাত আগে থেকেই তারাকে চিনে। কিভাবে সে আমরা পরে জানব।

কিছুক্ষণ নিরবতার পর সবাই একসাথে হাত তালি দিতে শুরু করে। একটু পরে স্যাররা সবাই এসে তারার সাথে ভালো করে কুশল বিনিময় করে এবং ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হলে তাদের জানাতে বলে।

তারা সবাইকে ধন্যবাদ বলে। অভিমান করে বাপিকে বাই বলে নেমে আসে স্টেজ থেকে।

তারা স্টেজ থেকে নামতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতোদিন যারা ভাব নিয়ে চলতো তারাও আজকে তারার সাথে কথা বলতে এসেছে। তারা একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে সবার সাথে একটু কথা বলে চলে যাতে নেয় বন্ধুদের কাছে। কিন্তু গিয়ে দেখে ওখানে কেউ নেই। তারা বুঝতে পেরেছে সবাই রাগ করেছে। আর তারা জানেও এখন ওরা সবাই কোথায় আছে। তাই তারা হেসে সে দিকে হাটা দেয়।

যাওয়ার মাঝেও পথ আটকে দাঁড়ায় রাত গ্যাং। যেখানে শুধু রাত নেই।

সবাই তারাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। তাই একজন আরেকজনকে ঠেলছে শুরু করার জন্য। কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারছে না। তাদের এমন ঠেলাঠেলি দেখে তারাই বলে-

তারা- কিছু বলবেন?

আকাশ- না মানে হ্যা তারা।

তারা- জি বলুন।

মেঘ- আসলে তারা উই আর ভেরি সরি।

তারা- কেন?

তারা কেন তে যেন সবাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তাও নিজেকে সংযত করে বলে।

আকাশ- আসলে এতদিনের করা অন্যায়ের জন্য।(মাথা নিচু করে)

এনি- সরি আমি জানতাম না যে তুমি এতো বড় বিজনেসম্যান এর মেয়ে।

নিপা- সরি ওই দিন পা দিয়ে ফেলে দেয়ার জন্য।

সবাই- আমরা অনেক দুঃখিত। প্লিজ আমাদের নামে কমপ্লেইন করো না। প্লিজ।

তারা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মাথা নিচু করে আছে। আজ তারা তারার পরিচয় জেনেছে তাই তারা তারার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। না জানলে কখনোই ক্ষমা চাইতো না। বরং আরো অপমান করতো। তাই তারা একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে-

তারা- ইট ওকে ভাইয়া আপুরা। ক্ষমা চাইতে হবে না। আমি অনেক আগেই তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। শুধু একটা কথা বলব র‍্যাগিং করো ভালো কথা। কিন্তু এমন র‍্যাগ দিয়ো না যে মেয়েরা লজ্জা এবং অসম্মানে মুখ দেখাতে না পারে। র‍্যাগ করো লিমিটের এর ভিতর থেকে। কারো সম্মানে হাত দিয়ো না কখনো। আর এনি আপু কাউকে ক্লাস দিয়ে বিচার করবেন না। বিচার ক্লাস দিয়ে নয় মন দিয়ে করতে হয়। দেখতে হয় কার মন কত সুন্দর। আমি সিম্পল চলতে পছন্দ করি। আমার বিলাসিতা একদম পছন্দ নয়। তাই আমি সামর্থ্য থাকা সত্যেও বিলাসিতা করি না। আর সবাই এই ভার্সিটিতে নিজেদের যোগ্যতার ভর্তি হয়। তাই দয়া করে তাদের ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অসম্মানিত কাজ করাবেন না। আর নিপা আপু এমন করে কাউকে ফেলে দিবেন না। এতে অনেক বড় ইঞ্জুরি হতে পারে। হয়ত আপনি পড়লে বুঝতে পারতেন কতটা পেইন হয়।

সবাই এতোক্ষণ তারার কথা মাথা নিচু করে শুনছিল। আসলে ভুলটা তো তাদেরই। তারাই লিমিটল্যাস হয়ে গেছিল।

সবাই- আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। থেংকস ক্ষমা করার জন্য। সো নাউ উই আর ফ্রেন্ড?

তারা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে ফ্রেন্ডস।

সবাই খুশি হয়ে চলে গেল।

তারা আবার হাটা শুরু করল বকুল গাছের দিকে। কারণ তারা জানে তার বন্ধুদের এখন বকুল গাছের নিচেই পাওয়া যাবে। হয়ত রাগ করে সবাই গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ভেবেই তারা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল।

এদিকে কেউ একজন কখন থেকে তারার হাসি মুখ দেখে যাচ্ছে আর মনের শান্তি নিচ্ছে সেদিকে তারার খেয়াল নেই।

তারার যাওয়ার পথে আবার পেল বাধা। এ বাধা আর কেউ নয় সামির।

সামির- ওয়াও। আই কান্ট বিলিভ দিস তারা তুমি মিস্টার মাহমুদের মেয়ে।

তারা- তো?(ভ্রু কুঁচকে)

কেন যেন সামিরকে তারাও ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে।

সামির- তুমি তো বল নি তুমি এত বড় বিজনেসম্যান এর মেয়ে।

তারা- আমি কাউকেই বলে নি।

সামির- ওকে। তো কোথায় যাচ্ছো? চলো একসাথে লাঞ্চ করি।

তারা- আমার সময় নেই। আসি।(বলেই সামিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল)

সামির- আগে তো তোমার এটিটিউডে পাগল হয়েছিলাম। আর এখন তো তুমি আমার সোনার ডিম পাড়া হাস। তোমাকে তো এখন যে করেই হোক আমার চাই।(বলেই শয়তানি হেসে চলে গেল)

তারা- উফ একটু শান্তি নাই। বাসায় যাই আজকে বাপির হচ্ছে। তাকে কে বলেছিল আমার পরিচয় দিতে। এখন সবাই আমার সাথে কেমন বিহেভ করছে। আমার একটুও ভালো লাগছে না। উফ এই বকুল গাছটাকেও আজকে আহামরি দূরে লাগছে। যতসব ভালো লাগে না।(বলেই বিড়বিড় করে হাটা ধরল।)

তারা- উফ এখন এই মসিবতেরই আসা বাকি ছিল।(বলেই বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।)

কারণ মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাত। কিন্তু কিছু না বলে কিছুক্ষণ তারা দিকে তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেসে তারার পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

তারা- ওমা এর আবার কি হলো? যাই হোক তাতে আমার বাপির কি? হুহ। আল্লাহ এইবার যেন সামনে আর কেউ না পড়ে। একবার বকুল তলায় যাই। পরে হবে তোদের। কে বলেছি ঢেং ঢেং করে বকুল তলায় চলে যেতে। সবগুলোর পা ভেঙে দিব আমি। হুহ।(বলেই এক রাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে আবার হাটা দেয়।)

চলবে?

ছোট হয় বলেন। আজকে বড় হয়েছে তো? ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here