এতো চাই তোকে পর্ব ১৫

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১৫
#Mst_Liza

সন্ধ্যার দিকে হৃদের জ্ঞান ফিরেছে।ওর সব মনে পরেছে।কাকিমণির কথা ভাবতেই অনেক ভেঙে পরেছে হৃদ।কাকিমণি আর নেই এটা যেন ও বিশ্বাসই করতে পারছে না।কত স্বপ্ন ছিলো কাকিমণির আমাদের বিয়েটা নিয়ে।অথচ কি হয়ে গেলো।মা আর নূর আপু হৃদকে সামলাচ্ছে।আমার শরীরে শক্তি কোথায়? তিনদিন তো হসপিটালে পরেছিলাম।কিছু খাইনি। নিজের যত্ন নিই নি।এখন দূর্বলতায় ঘিরে ধরেছে আমাকে। আপু পেগনেন্ট। মনের অবস্থাও ভালো নেই। এর মধ্যে সবকিছু নিজের হাতে সামলাচ্ছে।আপুর বেবিটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে খুব।প্রিয়া যেমন জেদি মেয়ে এতো সহজে মেঘ স্যারকে আপুর কাছে আসতে দিতে চাইবে না।কিছু করে না বসে প্রিয়া।আবার ভাবছি এতো ভয় পেলে চলবে না।আবির চৌধুরী তো আছেন।উনাকে বলে যদি মেঘ স্যারকে তার ভুল বুঝাতে পারি।তাহলে আমার আপু একটু সুখি হবে। নিজের ভালোবাসাকে ফিরে পাবে।

হৃদের পাশের বালিশে শুয়ে আছি আমি।নূর আপু আর মা রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে হৃদ ঘুরে এসে আমার পেটে নিজের মুখটা গুজে দিলো। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো হৃদ।আমি বুঝতে পারছি ওর কাকিমণির কথা খুব মনে পরছে।কিন্তু ওকে কি বলে বোঝাবো সেটা ভেবে পাচ্ছি না।হৃদের চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে মাথাটা আঁকড়ে ধরে উঠিয়ে বললাম,

—“দেখও হৃদ তুমি যদি এভাবে কাঁদো তাহলে কিন্তু আমিও কাঁদবো।আমি কাঁদলে তোমার পুচকুও কাঁদবে।”

হৃদ আমার মুখটা টিপে ধরলো।এক হাতে চোখের পানি মুছে নিয়ে অন্য হাতটা আমার পেটের উপরে রেখে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠলো,

—“আমার মনে হচ্ছে আমার মা আমাদের খুব কাছে আছে।তোর আর আমার সন্তান।এইখানে।”

কথাটা বলে হৃদ আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে। মাথাটা এনে আমার বুকে রাখলো।আমি হৃদের পিঠে একটা হাত রেখে অন্য হাতটা হৃদের মাথায় রাখলাম।হৃদ আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

—“আমার সন্তানের খুব যত্ন নিতে হবে কিন্তু।তুই খাওয়া দাওয়া তেমন একটা করিস না।এই সময়টাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি তোকে প্রচুর খেতে হবে।সিঁড়িতে চড়া যাবে না।রাত জাগা যাবে না।আর আমাকে ভালোবাসতে হবে।পারবি?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম,

—“হুমম।পারবো।এখন একটু ঘুমাও তো তুমি।কাল হসপিটাল যাবা তো।কাজের মধ্যে থাকলে তোমার মনটাও ভালো থাকবে।”

হৃদ কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলো।আমারও ঘুম আসলো।ঘুম থেকে উঠেছি সময়টা খেয়াল নেই।চোখ মেলে দেখি আপু আলমারি থেকে কাপড় বের করে হৃদকে দিচ্ছে। আর হাসি মুখে বলছে। ওটা পরলে হৃদকে ভালো লাগবে।আমাকে দেখে এগিয়ে এসে আপু বললো,

—“আজ কি কলেজ যাবি নাকি বাড়িতেই রেস্ট নিবি?”

আমি বললাম,

—“হৃদতো যাচ্ছে ওর সাথে গেলে আমারও মনটা ভালো থাকবে।সারাদিন বাড়িতে থাকার চেয়ে কিন্তু তুমি যাবে না আপু?”

আপু মুখে হাসি টেনে নিয়ে বলল,

—“কোথায় যাবো? আমি ভেবেছি মেঘকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।আর এই সন্তানটাও রাখবো না।পৃথিবীতে আসলেই আবির চৌধুরীকে দিয়ে আসবো।মানুষটা সারা জীবন একা থেকেছে।আপন ছেলে মেয়েও তাকে কখনো ভালোবাসা দেয় নি।শুধু সম্পত্তির লোভে যতটুকু সম্মাণ দিয়েছে।বাচ্চাটাকে পেলে হয়তো জীবনে একটু সুখি হবে।ওই হসপিটালে আমি আর যাবো না।আমি আবির চৌধুরীর সাথে কথা বলেছি।আমার সব দায়িত্ব হৃদকে বুঝিয়ে দিতে।পুরো হসপিটালে হৃদের মতো আদর্শবান ডাক্তার আর ক’জন আছে? হৃদ ঠিক পারবে পুরো হসপিটালটা সামলাতে।”

কথাগুলো বলে আপু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।হৃদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।আমি হৃদকে বললাম,

—“আপুকে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন ছিলো হৃদ।তোমরা ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ফ্রেন্ড।বেবিটার জন্য অন্তত মেঘ স্যারের কাছে ফিরে যাওয়া উচিত আপুর।তুমি তো আপুকে বলে বোঝাতে পারো।”

হৃদ আমাকে বলল,

—“আমি কখনোই নূরকে বলতে পারবো না মেঘের মতো একটা খারাপ মানুষের সাথে সংসার করতে।মেঘের কাছে ফিরে যেতে।মেঘের বেবিটা যদি মরেও যায় তবুও না।ভালো হয়েছে নূর নিজের থেকে ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।মেঘের কোনো যোগ্যতা নেয় নূরের ভালোবাসা পাওয়ার।”

—“তোমার আছে যোগ্যতা?”

আমার প্রশ্ন শুনে হৃদ আমার মুখের দিকে তাকালো।আমি উঠে গিয়ে হৃদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললাম,

—“দেখও হৃদ। আপুকে তো তুমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতে।হয়তো এখনো ভুলতে পারো নি।আমি বুঝতে পারছি তোমার মনে এখনো আপু আছে।নিজের সন্তানের কথা কত ভাবো অথচ মেঘ স্যারের সন্তান? তুমি কিভাবে বলো বেবিটার মরে যাবার কথা।তোমার মুখে কি আটকায় না? আমি সবসময় চাই আপু নিজের ভালোবাসার কাছে সুখে থাকুক আর তুমি চাও আপু এভাবে মেঘ স্যারের থেকে দূরে থেকে কস্ট পাক?”

হৃদ আমার কথা শুনে খুব রেগে গেলো।নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল,

—“ফুল আমাকে রাগিয়ে কখনো কথা বলিস না।আমার নূরের জন্য চিন্তা হয় বলে কথাগুলো বলেছি।আমি নূরের পরিবারের একজন সদস্য।ওর ভালো চাই আমি।এটাকে কেন্দ্র করে এমন কিছু বলিস না যা তোর আর আমার সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।”

আমি হৃদকে টেনে ধরে বললাম,

—“আচ্ছা ছরি।ভুল হয়েছে আমার।তোমাকে আর কিচ্ছু বলবো না।”

হৃদ আমার মুখের দিকে তাকালো।আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

—“এতো বোকা কেন রে তুই? তুই জানিস তোকে আমি কতটা ভালোবাসি।নূর ছিলো আমার অতীত।তোর মুখে যেন আর কখনো আমি এমন কথা না শুনি।”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলবো না বুঝিয়ে হৃদকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।হৃদ যতোই বলুক।আমি তো ওকে ভালোবাসি।চিন্তা হয় খুব।হৃদ শুধুই আমার।ওর মনে আপুকে আর আসতে দেবো না।আপুকে মেঘ স্যারের জীবনে ফিরে যেতেই হবে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here