ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ১২+১৩

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_১২
#সুলতানা_সিমা

নীল শাওন দিহানের সামনে বসল। শাওন দিহানের বাহুতে হাত দিয়ে কিঞ্চিত স্বরে বলল”
_দিহান তুই কারও জন্য কাঁদছিস? “দিহান মাথা তুলে তাকাল। এই অল্প সময় কান্না করেও দিহানের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখের পানিটা মুছে কান্নাজড়িত গলায় বলল”
_আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন দোস্ত তোরা বলবি? কেন আমার মনে হচ্ছে ও আমার খুব আপন? [শাওনের দুহাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে] দোস্ত আমি ওর সব কষ্ট মুছে দিতে চাই। আমি ওর পাশে থাকতে চাই। ওর ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করতে চাই।”
_কিন্তু কিভাবে এসব করবি? বিয়ের পেছনের কারণ না জেনে ওকে বাসায় তুলবি?
_বিয়ের পেছনে কি কারণ আমি আপাতত জানতে চাইনা। আচ্ছা তোরাই বল তদের কি মনে হচ্ছে অরিন কারও ক্ষতি করতে পারে?
_অরিনের বিষয়ে এতকিছু শুনার পর আমার আর মনে হচ্ছে না যে অরিন কারও ক্ষতি করতে পারে। আমার মনে হয় ওকে কেউ জোর করে এটা করিয়েছে। ওকে এটা করতে বাধ্য করেছে কেউ। আর এই কেউ টা কে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।[নীল]
_সেটা পরে দেখা যাবে আপাতত আমি এগুলা খুঁজতে চাইনা। আমার খুব খারাপ লাগছে রে। মুখে যা এসেছে ওকে তাই বলেছি আঘাত দিয়ে কথা বলেছি অপমান করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর তোরা আমি একটা কথাও ওকে ছোট করতে বলিনি, সব বলেছি রাগের মাথায়।
_ এখন কি করতে চাস তুই? [শাওন]
_ওর একজন ভালো বন্ধু হতে চাই। ওর কষ্টগুলা মুছে দিয়ে ওকে নতুন জিবন দিতে চাই। আমি চাই ও ভাবুক ওর কেউ আছে।
_ওকে তাহলে দেরী কেন আজ থেকে শুরু কর।[নীল]
_হুম চল রুমে চল।

তিনজন মিলে রুমে গেল। দিহান রুমে ঢুকেই ওয়াসরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখল তন্দ্রা চারটা কল দিছিল। নীল শাওন সোফায় বসে ফোন টিপছে। দিহান বারান্দায় চলে গেল। তন্দ্রাকে ডায়াল করবে তার আগে আবারও তন্দ্রার কল এল। দিহান কল ধরতেই তন্দ্রার ঝাঁজালো গলা”

_ওই কই ছিলা এতক্ষণ তুমি? কতটা কল দিছি।
_সরি ওয়াসরুমে ছিলাম।
_রাতে কল ধরনি কেন?
_একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলাম তাই কল ধরতে ইচ্ছে হয়নি।
_ওওওওও আচ্ছা এখন আমি ইচ্ছের উপর দাঁড়িয়ে আছি? যখন ইচ্ছে হবে আমার সাথে কথা বলবা যখন ইচ্ছে হবেনা বলবা না। তাইতো?
_তন্দ্রা সব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করবে না। তোমাকে বুঝতে হবে মানুষ সব সময় একই মুডে থাকেনা।
_তুমি আমাকে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলছ?
_আমি ঝাড়ি দেইনি তোমার এটা মনে হচ্ছে। কেমন আছো?
_দুপুর দুইটায় দেখা করতে পারবে?
_না।
_কেন?
_একজনের সাথে দেখা করতে যাব।
_ওকে। আসতে পারবা না যখন আমাকে কিছু টাকা দাও।
_টাকা মানে? আমার হাতে এখন টাকা নাই।
_তোমার আব্বু আম্মুকে দিতে বল।
_প্রতিদিন হাত পাততে ভাল লাগেনা তন্দ্রা। আর প্রতি সপ্তাহে কেন তোমার টাকা লাগবে। তোমার আম্মুর কাছে চাও।
_তুমি আমায় খোঁটা দিচ্ছ? ওকে ঠিক আছে আমি ভাবছিলাম তোমার সব কিছুর উপরে আমার অধিকার আছে। কিন্তু না আমার কোনো অধিকার নেই। [ন্যাকামি করে কেঁদে কেঁদে]
_তন্দ্রা প্লিজ don’t cry! দেখ আমার হাতে দুহাজার টাকা আছে তাও এটা আমার না এটা অন্য জনের আজ তাকে সে ফেরত দিতে যাব। সে খুব অসহায় এই টাকাটা তার প্রয়োজন।
_অহ। তোমার হাতে টাকা রেখেও তুমি না বললা? ওকে জান ভালো থেকো বাই।

তন্দ্রা ফোন কেটে দিল। দিহানের খুব রাগ হচ্ছে তন্দ্রার উপর। কিছুতেই কেন বুঝতে চায়না এই মেয়েটা সে একটা বেকার ছেলে তার হাতে টাকা আসবে কই থেকে। বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে যেতে পিছন ঘোরে দেখল নীল আর শাওন দাঁড়িয়ে আছে। দিহান বারান্দার রেলিংয়ে পিঠ ঠেকে এক হাত পেটের উপর বাঁজ করে এক হাত কপালে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। নীল আর শাওন একটু এগিয়ে আসল। নীল দিহানের কাধে হাত রেখে বলল”

_দোস্ত তর কি মনে হয় তন্দ্রাকে বিয়ে করলে তুই সুখি হতে পারবি? পারবি না রে। এই মেয়েটার সাথে তর পরিবারের যায়না। তর পরিবারের সবাই মিলেমিশে থাকে কখনো ঝগড়া হয়না। তন্দ্রা হল ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার মেয়ে। ও তর পরিবার টিকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু তুই বুঝতে চাসনা। সে তোকে বলল সে সুইসাইড করবে আর তুইও সেটা বিশ্বাস করে পরিবারে যোদ্ধ শুরু করে দিলি ওকে ছাড়া তুই কাউকেই বিয়ে করবি না। আমার কি মনে হয় জানিস ও তোকে ভালোবাসে না ও তোর টাকাকে ভালোবাসে।

দিহান চোখ তুলে তাকাল নীলের দিকে। আসলেই কি তাই? তন্দ্রা কি সত্যি তাকে নয় তার টাকাকে ভালোবাসে? কিন্তু সে তো টাকা পয়সা কামাই করেনা। দিহানের মাথা ভনভন করছে। সে নীল আর শাওনকে বলল”
_আচ্ছা বাদ দে এগুলা। আয় নিচে আয়।
_হুম।
তিনজন এক সাথে নিচে নামল। দিশা ইশি লুপা দিয়া রুহান বসে নাস্তা করছিল। আর তিনটা চেয়াল ই বাকি ছিল শাওন এসে দিশার সোজা চেয়ারটায় বসল নীল লুপার সোজাটায় দিহান দিয়ার সোজাটায়। দিহান টেবিলে বসে তার মাকে ডাক দিল। শাওন দিশাকে বলল”

_কেমন আছো দিশা?
_জি ভাইয়া ভালো আপনি কেমন আছেন?
_হুম অনেক ভালো।
_নীল ভাইয়া কেমন আছেন?
_যাক কেউ তো আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কেমন আছি। হুম বইন ভালাই আছি।” নীলের কথায় ইশি দিশা জোরে হেসে উঠে। নীল একবার লুপার দিকে তাকায় লুপা বিরক্তি মুখে বসে আছে। নীল একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস নিল। ততক্ষণে দিহানের আম্মু চলে আসলেন উনার পেছনে ইশির মা ও লুপার মা আসলেন। আজও লুপার মায়ের হাতে ডিম ভাজার প্লেট নীল শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল ”
_দিহান আমি তাহলে আজ উঠি। “ইশির মা বললেন
_এই ছেলে চুপচাপ বসত। একদম উঠি উঠি করবে না।
_না আন্টি বাসায় বলে আসিনি আমার মনে হয় এখন যাওয়া উচিত।
_যাবে বাবা আগে নাস্তাটা করে নাও।[দিহানের আম্মু]
_আজ কিন্তু আমি ডিম ভাজি নি আজ বড় ভাবি ভাজছে।[লুপার আম্মু]
নীল যেন প্রান ফিরে পেল। দিহানের আম্মু সবাইকে নাস্তা তুলে দিচ্ছেন নীল মাঝে মাঝে আঁড়চোখে লুপার দিকে তাকাচ্ছে। লুপার চোখে একবার চোখ পড়ে গেল লুপা কিঞ্চিত স্বরে যত্তসব ফাউল বলে উঠল। কথাটা সবার কানে যায় সবাই তার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকায়। লুপা উঠে চলে যায়। তার মা পিছন থেকে ডেকে বলেন পুরোটা শেষ করে যা সে কলেজ যাবে বলে চলে যায়। দিহানরা তিনজন মিলে নাস্তা শেষে তারাও বেরিয়ে পড়ে। আজ তারা ভার্সিতে যায়নি। অরিনের কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই মিলে অনেকক্ষণ কলেজের গেটের সামনে দাঁড়ায় অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুপুর দুইটার দিকে লুপা আর অরিন বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে। লুপা বেরিয়ে আসতেই দেখে তাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভার বলছে সে বাসায় যাবে তাই লুপাও যেন চলে আসে। লুপা অরিনকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। দিহান আগে থেকেই এ ব্যবস্থা করে রাখছে। ড্রাইভারকে সে নিজেই ফোন করিয়ে আনছিল। লুপা যাওয়ার পরে তারা অরিনের পিছু নেয়। একটু জায়গায় গিয়ে অরিন একটা গাছের নিচে বসে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটু পানি খেল। দিহানকে নীল ও শাওন বলল যাওয়ার জন্য দিহান গেল দু’কদম গিয়ে ফিরে আসল এসে বলল”

_দোস্ত তোরাও আয় আমার একা ভয় করছে।
_শালা আমরা কেন যাব তুই যা আমরা আছি তো।[শাওন]
দিহান বিরবির করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে এগুল। একটু যেতেই মনে পড়ে গেল অরিন যে হাতে থু থু নিয়ে তাকে থাপ্পড় দিছিল সেটা। দিহান আবার পিছন ঘোরে গেল নীল ধমকের স্বরে বলল”
_ওই দেখ আবার ফিরে আসবি তো তকে ফেলে আমরা চলে যাব। ব্লুটুথ তো আছে তাইনা। আমরা বলে বলে দিব তুই শুধু বলবি।
_ওকে আমি যখন গলা ঝাড়ব তোরা বুঝে যাবি আমি তোদের হেল্প চাইছি।” দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে অরিনের সামনে গেল। অরিন চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিল মাত্র। দিহান অরিনকে বলল”
_হা হা হাই। কিকি কি করেন?” অরিন পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে দিহান দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। অরিন একবার আকাশের দিকে তাকাল তারপর দিহানকে বলল”
_আজ তো সূর্য মেঘে ঢেকে আছে। গরমটাও তেমন নেই আপনি এতো ঘামছেন যে?
_ক ক কই নাতো। [ঘাম মুছতে মুছতে]
_কিছু করছিনা পিপাসা লাগছিল দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া ঠিক না তাই এখানে বসে পানি খেলাম। আপনি এখানে কেন?
_হ্যা আমি এখানে কেন?” অরিন কপাল কুঁচকে তাকাল। বিস্মিত হয়ে দিহানকে বলল”
_আপনি এখানে কেন নিজেই জানেন না?
দিহান আঁড়চোখে একবার বাম পাশে তাকাল নীল আর শাওন ইশারা দিচ্ছে বার বার আসল কথা বলার জন্য। দিহান কানে হাত দিয়ে দেখল তার ব্লুটুথ পরে গেছে। দিহান চোখ খিঁচে একটু সাহস জুগিয়ে বলল”

_আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।
_জি বলুন।
_আপনি আমার বন্ধু হবেন?” দিহানের কথায় অরিন অবাক হয়ে তাকায়। দিহানকে জিজ্ঞেস করে”
_বন্ধুত্ব কেন করতে চান? একটা বস্তির মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে আপনার সম্মানে বাঁধছেনা?
_সরি অরিন আসলে আমার মাথা ঠিক ছিলনা। আমার সাথে যা হয়েছিল সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। আমার খুব রাগ জমেছিল আপনার প্রতি। আই এম সরি।
_ইটস ওকে। বাট আমি আপনার বন্ধু হতে পারব না।
_কেন?
_আমি একটা ফকিন্নি টাইপ মেয়ে সমাজে কিভাবে চলতে হয় তা আমার জানা নে……..অরিন আর কিছু বলতে পারল না দিহান অরিনের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে অরিনকে চুপ করিয়ে দিল। অরিন দিহানের চোখের দিকে তাকাল। আজ দিহানের চোখে তার অন্য রকম কিছু দেখা যাচ্ছে। দিহানের নাক তার মতই সরু,ঠোঁট দুটো অনেক সুন্দর হালকা গুলাপি খুব আকর্ষনীয়,চোখের পাপড়ি গুলা লম্বা,ফর্সা গালে কোঁচা কোঁচা দাড়ি,চুল গুলা চিল্কি খুব ঘন বাতাসের ছোঁয়ায় প্রজাতির ডানার মতো নাচানাচি করছে। এই চুলে হাত ডুবালে যেন শুধু তুলতুলে নরম তুলো খুজে পাবে। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক নরম হবে এই চুল গুলা।

অরিন এই প্রথম দিহানকে এতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। কেন জানি তার মনে খুব ভালো লাগা কাজ করছে। তার স্বামী দেখতে এত সুন্দর? হোক সেটা ক্ষনিকের জন্য কিন্তু স্বামীই তো। দিহান আর অরিন একজন আরেকজনের চোখে হারিয়ে গেছে। এদিকে শাওন আর নীল বার বার কুকিলের মত কু কু করে যাচ্ছে। একসময় নীল ছোট একটা পাথর নিয়ে ডিল দেয়। সেটা এসে দিহানের কপালের পাশে পড়ে। দু’জনের হুস আসে তৎক্ষনাৎ দুজন দুদিকে ছিটকে যায়। দিহান কপালে পাশটায় হাত বুলায়। অরিন চারিদিকে তাকিয়ে বলে”

_মনে তো হচ্ছে কেউ ডিল মারছে। কিন্তু কে মারল? আসে পাশে তো কাউকে দেখছি না।
_বাদ দেন চলেন বসি একটু।
_হুম। এখানে গাছ তলায় বসতে আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?
দিহান কোনো জবাব না দিয়ে বসে পড়ল। অরিনও গিয়ে বসল। একটুসময় দু’জন চুপচাপ বসে রইল। সুনশান পরিবেশ শুধু মাঝে মাঝে দু’একটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। গলাটা একটু ঝেড়ে দিহান বলল”
_আমি জানতে চাইব না কেন আমাকে বিয়ে করছেন কি তার কারণ। কারণ টা যেটাই হোক সেটা যে কারও ক্ষতি করার মতো হবে না এটা আমার বিশ্বাস।
_এমন ওতো হতে পারে আপনি ভুল বিশ্বাস করছেন।
_এমন না ও তো হতে পারে?
অরিন কিছু বলল না সামনে থাকিয়ে গাছ থেকে ঝড়ে পরা পাতা গুলার দিকে তাকিয়ে রইল। দিহান বলল”
_হবেন আমার বন্ধু?
_হুম হব তবে একটা শর্তে।
_আমি রাজি বলুন কি শর্ত।
_আমাকে আবার তুমি করে বলতে হবে।
_ওকে ওটা এমনিতেই বলতাম।
_আপনার জি জি জিএফ কেমন আছে?
_সেদিন ভয়ে তোতলাচ্ছিলাম বলে আজ ব্যঙ্গ করছ?
_হা হা হা হা আপনি যেটা মনে করেন। এবার বলেন আপনার জিএফ ভালো তো?
_আছে ভালো কিন্তু সব সময় শুধু ঝগড়া করে। ভালো লাগেনা।
_যে ভালোবাসায় ঝগড়া বেশি হয় সে ভালোবাসার গভিরতাও বেশি হয়।
দিহান জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে হুম বলল। তারপর পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দুহাজার টাকা বের করে অরিনকে দিয়ে বলল”
_অরিন কাল পরশু তুমি আমার পর ছিলে আজ তুমি আমার বন্ধু তাই সাহস করে কিছু বলতে পারি। প্লিজ টাকা টা নিয়ে নাও অরিন।
_এটা আপনি পেতেন তাই এটা আপনাকে দিছি। আপনি আমাকে দিচ্ছেন কেন? কোনো সম্পর্কের মাঝে টাকার সম্পর্কটা আমার পছন্দ নয়।
_অরিন আমি সেটা বলছিনা। আসলে আমি বুঝিয়ে বলতে পারছিনা। তোমার এখন টাকার খুব প্রয়োজন আমি জানি তোমার কাছে টাকা নেই প্লিজ নাও।
_উহু আমার কাছে টাকা আছে। আর হ্যা লুপার থেকে আমি শুনেছি আপনি কিছু করেন না তাহলে এত টাকা কই পান? এত বড় হওয়ার পরেও বাবা মায়ের থেকে হাত পেতে টাকা নেন লজ্জা করেনা? লেখাপড়ার পাশাপাশি মানুষ অনেক কিছু করে এতে সম্মান নষ্ট হয়না। সম্মান নষ্ট হয় অন্যের থেকে হাত পেতে টাকা চাইলে। এটা আপনার টাকা এটা রাখুন।

দিহান বিস্মিত হয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে তাকল তন্দ্রা আর অরিনের মাঝে কত তফাত সেটা মাপতে লাগল। অরিন দিহানকে বলল”
_তাহলে আজ আমি উঠি কাল দেখা হবে।
_আরেকটু বস না প্লিজ।
_বসে কি করব তাছাড়া আমার কাজ আছে আমি যাই।
_একদিন টিউশনিতে না গেলে হয়না? “অরিন অবাক হয়ে তাকাল দিহান বলল”
_লুপা বলেছে তুমি টিউশনি কর।
_অহ।
_আজ না হয় না গেলে। প্লিজ।
_ওকে বসেন।

অরিন আবার বসল। দিহানের চোখ বার আর অরিনকে দেখতে চাচ্ছে। আজ হঠাৎ করে অরিনকে তার কাছে এতো সুন্দর কেন লাগছে সে নিজেই জানেনা। অরিনের চোখের দিকে তাকালে নেশা ধরে যায়। কি আছে এমন এই চোখে? দিহান অরিনের দিকে তাকিয়ে ছিল অরিন তাকাতেই দিহান চোখ সরিয়ে নিল। অরিন বলল”

_চলেন একটু ওই পুকুরটায় গিয়ে বসি।
_হুম চল।
” দিহান অরিন উঠে এক সাথে পুকুরের দিকে গেল। একটা গাছের আড়াল থেকে শাওন আর নীল একজনের দিকে তাকিয়ে আবার দিহানদের দিকে তাকাল। ওরা কই যাচ্ছে তাদের মাথায় আসছে না। তারাও পিছু নিল। দিহান অরিন পুকুর পারে এসে দেখল পুকুরের ঘাটের সিঁড়ি পিছলে হয়ে আছে। দিহান বলল”
_দেখে মনে হচ্ছে এখানে পা রাখলেই পিছলে যাবে। চল অন্য কোথায় বসি।
_না না আমি সিঁড়িতেই বসবো। একেবারে নিচের সিঁড়িটায়।” দিহান কেন জানি না বলতে পারল না। সে আস্তে আস্তে দু’সিঁড়ি নামলো। নেমে অরিনের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলল”
_আমার হাত ধরে ধরে আসো।” অরিন হাত বারিয়ে দিল। অরিন দিহানের হাতে তার হাতটা রাখতেই দু’জনই হালকা কেঁপে ওঠল। অরিনের নরম হাতের ছোঁয়া দিহানের মনে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। আর দিহানের ছোঁয়া লেগে অরিনের হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। দিহানের দিকে একবার চোখ তুলে তাকাল। দিহান অরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে অরিনের হাতটা শক্ত করে তার মুঠো ধরল। তারপর দিহানের হাতে ভর দিয়ে দিয়ে সে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে নিচে নামল। একেবারে নিচের সিঁড়িতে এসে দিহান অরিনের হাত ছেড়ে দিল। অরিনের ছোঁয়ায় তার মস্তিষ্ক অনেক কিছু করতে চাচ্ছে। আরেকটু ছোঁয়ে থাকলে যেন সে মাতাল হয়ে যাবে।

পায়ের স্যান্ডেল খুলে পাশে রেখে দু পা পানিতে ভিজিয়ে সিঁড়িতে বসল অরিন। দিহানও তার পাশে বসল এতটা পাশে যে একটু নড়লেই একজনের গা আরেকজনের গায়ে ঘঁষা লাগবে। দিহানের এভাবেই বসতে ভাল লাগছে। অরিন দিহানকে বলল
_পা ভিজান দেখবেন অনেক ভালো লাগছে।
_ওয়েট। জুতো খুলতে হবে।” দিহান তার জুতার ফিতা খুলতে লাগল একটার খুলে ফেলল আরেকটার খুলতে গিয়ে ফিতায় গিট লেগে গেল। ফিতা খুলতে না পেরে জুতা এমনি টেনে পা থেকে বের করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না। শেষে ব্যর্থ হয়ে দিহান বলল”
_এক পা ভিজালে চলবে?
_আপনি কিছু মনে না করলে আমি ফিতাটা খুলে দিতে পারি।
_আরে না না না লাগবে না। “অরিন দিহানের কথা শুনল না। কোলের উপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশে রাখল। তারপর দিহানের পায়ের সামনে বসে ফিতা খুলতে লাগল। অরিন মাথা নিচু করে ফিতা খুলছে এতে করে তার দুপাশের থুতনি সমান ছোট চুলগুলা সব মুখের দুপাশ ছড়িয়ে পড়েছে। যতবার ফিতায় টান দিচ্ছে ততবার চুলগুলা হেলেদুলে নেচে উঠছে। এই দৃশ্য টা দিহানের কাছে অনেক ভালো লাগছে। তার ইচ্ছে করছে অরিনের চুল গুলা কানে গুজে দিতে।

অনেক চেষ্টা করার পড়ে অরিন ফিতাটা খুলল। ফিতা খুলে সে জুতা খুলতে লাগল। জুতা পা থেকে একটু বের করে দিহানের উম্মুক্ত পায়ের অংশে হাত দিয়ে ধরল। দিহান কিঞ্চিত কেঁপে ওঠল। অরিন দিহানের পা ধরে বাকিটাও খুলল। দিহানের শ্বাস ভারি হয়ে আসছে। হার্ট খুব দ্রুত চলছে। বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে। কই তন্দ্রার ছোঁয়া পেলে তো এমন হয়না? দিহানের মনে বার বার অরিনকে ছোঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগছে। শুকনো একটা ঢোক গিলে তারাতাড়ি পা পানিতে ভিজাল। তার শরিরে গরম বাতাস বইছে মনে হচ্ছে। অরিন দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল”
_আপনার পা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে আপনার পায়ের নক গুলা।” দিহান লজ্জা পেল। কথা ঘোরাতে বলল”
_এখন তো আমরা বন্ধু হয়ে গেছি তুমি করে বল।”
অরিন কিঞ্চিত হাসল কিছুই বলল না। এদিকে আড়াল থেকে ক্যামেরায় তাদের সুন্দর মূহুর্তগুলো বন্দি হচ্ছে।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_১৩
#সুলতানা_সিমা

অরিনের সাথে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দিহান। সে ভুলেই গেছে তার সাথে যে নীল আর শাওন ছিল। বাসায় এসে সোজা তার রুমে চলে যায়। অন্য দিনের মতো ইশি দিশার সাথে এক দফা ঝগড়া হয়নি আজ। রুমে গিয়ে পকেট থেকে ওয়ালেট আর ফোন বের করে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ওয়াসরুমে চলে যায়। আজ তার অনেক ভালো লাগছে। অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে পূর্ণ পূর্ণ লাগছে। কিন্তু কেন? সেটা সে নিজেও জানেনা। অরিনের চেহারাটা বার বার চোখে ভেসে উঠছে। অরিনের হাসি অরিনের কথা বলার ভঙ্গি অরিনের নেশা ধরানো চোখ সব কিছু। মুখে পানি দিয়ে আয়না তাকিয়ে একা একা হেসে উঠল দিহান। মুখ মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসলো। এসে ফোন হাতে নেয়। তন্দ্রা ১০০+ ফোন দিছে। তার ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে বুঝেনি। তন্দ্রার নাম্বারে ডায়েল করল দিহান। তন্দ্রা সাথে সাথে কল রিসিভ করল মনে হয় হাতে ফোন নিয়ে বসে ছিল। ফোন ধরেই কান্নাজড়িত গলায় বলল ”

_সারাদিনে এখন মনে হল তাইনা?” দিহান ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল”
_সরি ফোন সাইলেন্ট ছিল।
_তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাস না দিহান। তুমি বদলে গেছ অনেক বেশি বদলে গেছ।” বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল তন্দ্রা।
_বদলি নি। কান্না থামাও। কেমন আছো?
_সারাদিন কই ছিলা তুমি?
_একটা ফ্রেন্ডের সাথে।
_ছেলে নাকি মেয়ে?
_মেয়ে।
_অহ।” তন্দ্রা আর কিছুই বলনা কিন্তু স্পষ্ট তার কান্নার শব্দ শুনা গেল। দিহান তন্দ্রাকে বলল”
_তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো? আমি চাইলে কিন্তু তোমাকে মিথ্যে বলতে পারতাম কিন্তু আমি বলিনি। তুমি যদি এখন এই বিষয় নিয়ে আমায় সন্দেহ কর তাহলে নেক্সট টাইম আমি এমন কথা তোমার থেকে লুকাবো। কারণ একটাই,আমি চাইব না তুমি অযথা কিছু নিয়ে আমার সন্দেহ কর বা ঝগড়া কর।
_আমি সন্দেহ করছিনা আমার খারাপ লাগছে।
_খারাপ লাগার কি আছে আমি তো তার সাথে খারাপ কিছু করছি না।
_ কাল যাবে ভার্সিটিতে?
_হুম যাবো। এখন রাখছি আমার খিদে লাগছে।

দিহান ফোন রেখে দিল। কেন জানি তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ফোন রেখে ড্রয়িংরুমে আসল তার বাবা আর চাচারা মিলে কি নিয়ে যেন আলাপ আলোচনা করছেন। আর মা চাচিরা সোফার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। দিহান সোফায় গিয়ে বসল। সবাইকে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে। দিহান বলল ”

_কি হইছে বাবা? কোনো সমস্যা?” দিহানের কথায় উনারা কোনো জবাব দিলেন না। দিহান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চাইল উনি কিছু বললেন না। দিহানের বড় মা বললেন”
_তোদের কলিজার বড় ভাই জিহান বিয়ে করছে।
_কিইইইইইই ভাইয়া বিয়ে করছে? কবে?
_কি জানি কবে করছে। আমাদের কি বলে করছে নাকি? পরিবারের মানসম্মানের কথা একবারও ভাবল না। আশেপাশের লোক এসব শুনলে না জানি কি কি কথা বলে।” দিহানের বড় মায়ের কথার উপর দিহানের বাবা রাগান্বিত স্বরে বলেন”
_তারপরও তো ভাইয়া মেনে নিয়ে বলছেন বউ নিয়ে বাড়ি আসতে। যদি এটা দিহান করত তাহলে আমি তাকে বাড়িতেই আসতে দিতাম না ত্যাজ্যপুত্র করে দিতাম।

দিহানের বাবার মুখে এমন কথা শুনে দিহান আঁতকে উঠল। সে যে এমন কিছু করেনি সেটা তো নয়। যেভাবেই হোক সেও তো জিহানের মতো কাজ করেছে। যা নিজের পরিবারের সম্মানে আঘাত আনার জন্য যথেষ্ট। দিহান একটু নড়েচড়ে বসে তার বড় মা কে বলল”
_বাসায় আসার পথে ঝিনুকের [জিহানের জিএফ] সাথে দেখা হয়েছে কই ঝিনুক তো আমাকে এসব কিছু বলল না।
_সেটাই তো আমরাও ভাবছি ঝিনুকের সাথে বিয়ে ঠিক থাকার পরেও অন্য মেয়েকে বিয়ে করল কেন?[বড়মা]
দিহানের কপাল কুঁচকে এলো। তার সাথে যা হয়েছে জিহানের সাথেও তা হইনি তো? এমন তো নয় দিহানের বিয়ে আর জিহানের বিয়ের পিছনে একই কারণ? ভাবতেই দিহানের মনে অজানা এক ভয় কাজ করতে লাগল।
__________________________

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দিহান ভার্সিটি চলে গেল। ভার্সিটিতে গিয়ে নীল আর শাওনকে খুঁজতে লাগল। অনেক খুঁজার পরে কেন্টিনের কোণে একটা গাছের নিচে তাদের পেল। শাওন নীল বাদে আর কেউ নেই সেখানে। দিহান নীল শাওনের মাঝখানে বসে দুজনের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল”
_কি ব্যাপার আমাদের নীল দরিয়া সুনশানের কি হলো?” দিহানের কথাটা বলতে দেরী হয়েছে তার পিঠে কিল গুসি পড়তে দেরী হয়নি। দিহান নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল”

_মারছিস কেন তোরা? কি করছি আমি?
_শালা প্রথমে তো যেতেই ভয় পাইছিলি যাওয়ার পরে আমাদের আর খুঁজও নিলি না?[নীল]
_একদিনেই তুই আমাদের ভুলে গেছিস আর কিছুদিন পরে তো তুই আমাদের চিনবিই না।[শাওন]
_দোস্ত দেখ আমি নিজেই জানিনা আমার সাথে কি হয়েছে। ওর সামনে যাওয়ার পরে আমার সব কিছু অন্য রকম লাগছিল। অনুভূতি গুলা অন্য রকম ছিল যা আগে কখনো হয়নি। বিশ্বাস কর আমার নিজের সাথে কি হইছে তা আমি নিজেই জানিনা। সারাদিন শেষে ও যখন বিদায় নিছিল খুব খারাপ লাগছিল। কেন লাগছিল জানিনা। তাই তদের আর খুঁজ করা হয়নি। সরি রে।” শাওন নীল দিহানের দিকে কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকাল। দিহান বোকা ভনে গেল। শাওন বলল”

_প্রেমে ট্রেমে পড়িস নি তো?
_আরে দূর কি বলছিস প্রেমে পড়ব কেন? ও আমার খুব ভালো বন্ধু।
_বাহ একদিনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেল? [নীল]
_ওর সাথে তো আমার পরিচয় টা একদিনের নয় তাইনা?

কার সাথে একদিনের পরিচয় না?”

হঠাৎ কারও কথা শুনে তিনজন সেদিকে তাকাল। তন্দ্রা দাঁড়িয়ে আছে। তন্দ্রাকে দেখে নীল বিরক্ত হল কিঞ্চিত স্বরে বলল” আইছে ন্যাকার খালাম্মা।” তন্দ্রা হেলেদুলে হেটে এসে তাদের সামনে দাঁড়াল। নীল আর শাওন চলে গেল সেখান থেকে। দিহান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে তন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করল”
_এভাবে হেলেদুলে হাটো কেন তুমি?” তন্দ্রা কিঞ্চিত রাগি স্বরে বলল”
_আমার তো সব কিছুই তোমার খারাপ লাগে। আমার হাটা,ড্রেসাপ,কথা বলা সবকিছুই তোমার খারাপ লাগে।
_ সামান্য কথায় রেগে যাচ্ছ কেন?
_এটা সামান্য কথা?
_না এটা অনেক বড় কথা। তাই ক্ষমা চাচ্ছি আমি এটা বলার জন্য। তোমার যেভাবে খুশি তুমি চল আমি আর কিছু বলব না।
_বাহ তুমি দেখছি আজকাল রাগ করতেও জানো।
_সব কিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। অলওয়েজ ঝগড়া করলে সম্পর্কে ফাটল ধরে। সব কিছুতে সব সময় শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া। সবসময় কি মোড একরকম থাকে?” তন্দ্রা আর কিছু বলল না দুজন চুপচাপ বসে থাকল। কিছুক্ষণ পরে দিহান তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে দেখল তন্দ্রা বসে মাথা নিচু করে কান্না করছে। দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তন্দ্রার পাশে বসল।

_সরি। তুমি এমন কাজ করো যে আমি রাগ না করে থাকতে পারিনা। কান্না বন্ধ কর আর ক্লাসে চল।” তন্দ্রা চোখের পানি মুছে বলল ”
_আমার ক্লাসে যেতে মন চাচ্ছে না। চল একটু ঘুরে আসি।
_একটা ক্লাস করে যাই?
_ওকে। আজ কিন্তু আমাকে ওই শাড়িটা কিনে দিতে হবে।
_আমার কাছে তো টাকা নাই। বিকাশেও এক টাকা নাই।
_বলে দিলেই পার আমাকে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছ। এখন যদি এই অবস্থা হয় বিয়ের পরে আমায় কি দিবে আমি তো সেটাই ভাবতেছি। ওকে থাকো তুমি আমি যাচ্ছি। বাই।” বলেই তন্দ্রা কটকট করে হেলেদুলে হেটে চলে গেলো। দিহানের মাথায় একটা কথা আসেনা সবসময় কেন তন্দ্রা শুধু টাকা টাকা করে। সে কি বুঝেনা দিহানও চলে মা-বাবার থেকে নিয়ে। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্লাসের দিকে চলে যায় দিহান।

ক্লাস শেষে নীল ও শাওনকে বসতে বলে চলে গেল অরিনদের কলেজের দিকে। অরিনকে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছে তার। অরিনের ছোঁয়াতে সে যে সুখ পায় সেই সুখ পেতে মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। হঠাৎ করে অরিনের জন্য এতোটা টান কেন হচ্ছে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারেনা। অরিনদের কলেজের গেটের সামনে যেতেই তার চোখে পড়ল অরিন আর লুপা কথা বলে বলে গেটের দিকে হেটে আসছে। দিহান সেখান থেকে সরে এসে লুপাকে কল দিল লুপা কল ধরতেই বলল তারাতাড়ি বাসায় যেতে। লুপা অরিনকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। লুপা চলে যাওয়ার পরে দিহান অরিনের সামনে গেল। দিহানকে দেখে অরিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো”

_আরে আপনি এখানে? মাত্রই না লুপাকে কল দিয়ে বাসায় যেতে বললেন?
_হুম যদি লুপা বাসায় না যেত তাহলে আমি এখানে আসতাম কি করে?
_আপনি দেখছি খুব চালাক।
_হুম তোমার থেকে কম।” দিহানের কথায় কিঞ্চিত হাসল অরিন।
_চল একটু ঘুরে আসি।” অরিন ফোন বের করে টাইম দেখে নিল। তারপর দিহানকে বলল”
_হুম যাওয়া যাবে কিন্তু বেশিক্ষণ থাকা যাবে না আমাকে আজ টিউশনিতে যেতেই হবে নয়তো এটা আর থাকবে না।
_ওকে এবার চলো।
_হুম।

দিহান অরিনকে নিয়ে নির্জন একটা জায়গায় গেল। চারিদিকে সারি সারি গাছ প্রতিটি গাছের নিচে শুকনো পাতা পড়ে আছে। এ যেন পাতার বিছানা। দেখতে অপরূপ সুন্দর লাগছে। অরিন চারিদিকে তাকিয়ে দিহানকে বলল”
_জায়গাটা একদম নিরিবিলি কেমন যেন ভুতুড়ে টাইপ।
_তোমার ভয় করছে না?
_কেন?
_এই যে এমন একটা জায়গায় আমি তোমায় নিয়ে এলাম। যদি খারাপ কিছু করি।
_ভয় তো আপনার পাওয়ার কথা।” দিহান অরিনের কথার জবাব দিতে যাবে তার আগেই তার কানে কিছু একটা শব্দ এল। যেন পাতার উপর দিয়ে কেউ হাটছে। তাও খুব সতর্ক ভাবে। দিহান তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে তাকাল কিন্তু কাউকে দেখতে পেলনা। এখানের আসার পথেও তার মনে হয়েছে কেউ তাদের পিছু পিছু হাটছে। দিহানের সামনে তুড়ি বাজিয়ে অরিন বলল”
_ কি হইছে?
_না কিছু না চল একটু বসি।” দিহান অরিন একটা গাছের নিচে বসল। দু’জনেই গাছে পিঠ ঠেকে বসেছে। একদম কাছাকাছি। দিহানে তীব্র ইচ্ছা জাগছে অরিনের কোলে মাথা রাখতে। যদি অরিন কিছু মনে করে বা তাকে খারাপ ভাবে? এসব মনে হতেই নিজেকে আটকে রাখল দিহান। কিন্তু বেশিক্ষণ পারল না। একসময় তার মনে হলো ক্ষতি কি? বউ তো আমার। বউয়ের কোলে মাথা রাখলে পাপ তো আর হবেনা। দিহান আর দেরী না করে অরিনের কোলের উপর মাথা রেখে শুকনো পাতায় শুয়ে পরল। অরিন যেন ৪৪০ ভোল্টের শকড খেল। হা হয়ে দিহানের দিকে তাকিয়ে তাকল দিহান চোখ বন্ধ করে তার কোলে শুয়ে আছে। অরিন বলল”

_এভাবে শুয়ে পড়লেন যে?
_জানিনা। কেন জানি ইচ্ছে করছিল তোমার কোলে শুতে। বন্ধু ভেবে শুয়েছি কোনো খারাপ মতলব নেই কিন্তু।” চোখ বন্ধ রেখেই বলল দিহান। অরিন কিঞ্চিত হাসল। ভাবল মানুষটা একদম সহজ সরল কোনো কিছুতেই কোনো প্যাচ নাই সব কথা সোজা ভাবে বলে দেয়। আর সে কিনা এই মানুষটাকে ঠকাচ্ছে? ভাবতেই বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অরিন। দিহানের চুলের দিকে দুবার হাত বারিয়ে হাত ফিরিয়ে নিল । দিহান চোখ বন্ধ রেখেই অরিনের হাত এনে তার মাথায় রেখে বলল “একটু হাত বুলিয়ে দাও প্লিজ। একজন বন্ধু হিসাবে অনুরোধ করছি।” অরিন বিস্মিত হল তার মনের ইচ্ছে আর দিহানের ইচ্ছের কত মিল। তারও তো ইচ্ছে করছিল দিহানের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে। অরিন দিহানের চুলের ভেতর নিজের হাত ডুবিয়ে দিলো। দিহানের চুল গুলা অনেক ঘন একদম নরম। অরিন কাল যা ভেবেছিল সত্যিই তাই। এ যেন দিহানের চুল নয় তুলোর রাজ্য। অরিনের ইচ্ছে করছে সারাজীবন এই চুলে হাত ডুবিয়ে রাখতে। কত্ত সুন্দর চুল তার স্বামীর। ভাবতেই লজ্জার হাসি হাসল অরিন। হোক ক্ষনিকের জন্য কিন্তু স্বামীই তো তার।

দিহান চোখ বন্ধ করে আছে অরিন দিহানের দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। অরিন দিহানের চুলে মাঝে মাঝে মুঠি করে ধরছে। যখনি এভাবে ধরে দিহান মুখের ভঙ্গিটা এমন করে যেন সে খুব বেশি সুখ পাচ্ছে। অরিনের ইচ্ছে করছে দিহানের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে। দিহানের ঠোঁট গুলা অরিনকে খুব টানে। হালকা গুলাপি ঠোঁট দুটো যেন ঠোঁট নয় কোনো চম্বুক তাইতো তাকে এতো টানে। দিহান চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল অরিন তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই চোখ দুটোর দিকে তাকালে তার এত নেশা ধরে যে সে নিজেকেই ভুলে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলল ”

_কি দেখছ?” অরিন তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিল। দিহান অরিনের একটা হাত ধরে এনে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল। অরিন বলল” “কি দেখছেন এভাবে?” দিহান অরিনের চোখে চোখ রেখে বলল”
_দেখি কি জাদু আছে এ হাতে
যে আমি এতো সুখ পেলাম তার ছোঁয়াতে।
_বাহ বাহ কবি হয়ে গেছেন দেখছি।” দিহান অরিনের হাতটা আবার নিজের মাথায় রেখে বলল” কবি টবি পরে হবো আগে আরেকটু সুখ দাও প্লিজ।” অরিন আবারও দিহানের চুলে নিজের হাত ডুবিয়ে দিলো। এই মানুষটার প্রেমে পড়ে গেছে সে তাইতো আজকাল তার সাথে আগের মতো বিহেভ করতে পারেনা। দিহান চোখ বন্ধ করে সুখের রাজ্যে ভেসে চলছে। সে কি জানে আড়াল থেকে কেউ একজন তাদের মূহুর্তটা ভিডিও করছে।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#এক্সট্রা_পার্ট
#সুলতানা_সিমা

শেয়ালের হাঁক শুনে ঘুম ভাঙে অরিনের। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার কমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে দিহান। দিহানের গরম নিশ্বাস তার পেটে গিয়ে লাগছে। দিহানের নাক মুখ সব তার পেটে চেপে আছে। দিহান ঘুমের ঘোরে এভাবে তাকে ধরেছে। অরিন এতক্ষণ এভাবে ঘুমিয়ে ছিল? ভাবতেই লজ্জা পেল অরিন। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা দিহানকেও না। শুধু অনুভব করা যাচ্ছে দিহানকে। অরিনের ইচ্ছে করছে দিহানের মাথা চেপে ধরতে এতো জোরে চেপে ধরতে যে দিহানকে একদম তার কলিজায় ঢুকিয়ে দিতে। দিহানের গরম নিশ্বাস তার ইচ্ছেকে আরও তীব্র করে দিচ্ছে। অরিন দিহানের চুলে হাত বুলাতে লাগল। ঘুমান্ত দিহানকে অন্ধকারেই আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে। একদল শিয়ালের হাঁক শুনে অরিনের সব ফিলিংস উদাও হয়ে গেল। ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে গেল। অরিন দিহানকে ডাক দিল দিহান শুনল না। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে। অরিন দিহানকে কিঞ্চিত ধাক্কা দিয়ে ডাক দিল”
_এই শুনছেন? উঠেন প্লিজ।” দিহান একটু নড়ে অরিনকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরিন আবার ধাক্কা দিল।
_এই উঠেন প্লিজ।” দিহান অরিনের হাতটা সরিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। শেয়ালের হাঁক আরও কাছে মনে হচ্ছে। অরিন এবার জোরে জোরে ডাকতে লাগল
_এইইইই উঠেন প্লিজ।” দিহান লাফ দিয়ে উঠল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হাতড়ে অরিনকে খুঁজল অরিন তার সামনেই আছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্লাশ অন করল। অরিনের মুখে ভয়ের চাপ। শিয়াল গুলা মনে হচ্ছে গলা ছিড়ার প্রতিযোগিতা করছে। এতো জোরে ডাকছে মেয়েটা তো ভয় পাবেই। দিহান অরিনের কাঁধে হাত রেখে বলল”
_ভয় পেয়ো না আমি আছি।” দিহান ফোনে টাইম দেখে বলল”
_রাত আটটা বাজে। এতক্ষণ ধরে আমরা এখানে?
_হুম আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন আমিও ঘুমিয়ে গেছিলাম।
_এখন কি হবে?
_আমি কি জানি আমার খুব ভয় করছে।” অরিনের কথা শেষ হতেই একটা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠল। অরিন দিহানকে ঝাপটে ধরলো। শেয়াল কুকুর যত ডাক দিচ্ছে অরিন ততই বেশি শক্ত করে ধরছে দিহানকে। যেন সে দিহানের ভিতর ঢুকে যাবে। দিহানের কেন জানি অসম্ভব ভালা লাগা কাজ করছে। দিহান অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল”

_ভয় পাচ্ছ কেন? বললাম তো আমি আছি।
_আমি বাসায় যাবো প্লিজ চলেন এখান থেকে।
_হা হা হা তুমি তো দেখছি একটা ভিতুর ডিম এসবে এতো ভয় পাও?
_দেখুন একদম মজা করবেন না প্লিজ চলেন এখান থেকে প্লিজ।
_তার আগে তো আমায় ছাড়ো। তারপর না হয় যাব।” অরিন লজ্জা পেল সাথে সাথে দিহানকে ছেড়ে দিল। দিহান দাঁড়িয়ে অরিনের দিকে হাত বারিয়ে দিল। অরিন দিহানের হাত ধরে দাঁড়ায় অরিন দাঁড়াতেই দিহান অরিনকে কোলে তুলে নিল।

_আরে আরে কি করছেন নামান প্লিজ পড়ে যাবো তো।
_তোমার সমান আরোও দুটোকে নিলেও পরবেনা বুঝলে। আমার বডি দেখছো? প্রতিদিন জিম করি কি এমনি এমনি?
_আচ্ছা থাক এতো তারিফ করতে হবেনা নিজের। আমায় নামান।
_কোলে কি তোমার অনুমতি নিয়ে তুলছি যে তোমার বলাতেই নামিয়ে দিব?
_জিএফ কে কোলে নিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে।
_আমি কোনো মেয়ে মানুষকে কখনো কোলে নেইনি এটাই প্রথম।
_তাহলে আমায় নিলেন যে?
_কারণ তুমি আমার ব….এইটুকু বলে থেমে গেল দিহান। অরিন বুঝতে পারছে দিহান বউ বলতে চাইছিল। তার মানে দিহানও তাকে বউ মানে? অরিনের লজ্জা লাগছে মনের মধ্যে সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। দিহানের গায়ের সাথে তাঁর গা লেগে আছে। যেই হোক মানুষটা তাঁর স্বামী তাঁর ভালো লাগার মানুষ। তাও এমন একটা পরিবেশে তাঁর সাথে গায়ে গা লেপ্টানো। মনের মধ্যে তো অনেক কিছু জাগবেই। অরিনের ইচ্ছে করছে নিজেকে দিহানের কাছে সঁপে দিতে। কিন্তু ক্ষনিকের সময়ের সম্পর্কে এমন কিছু ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছেনা অরিনের কাছে।

অরি?” হঠাৎ দিহানের মুখে অরি ডাক শুনে অরিন একটু অবাক হয়। অরি নামে তাকে শুধু তার বোন ডাকে আর কেউ না। দিহান অরিনকে বলল”
_তোমাকে অরি বলে ডাকলে রাগ করবে না তো?” অরিন একটু চুপ থেকে তারপর বলল”
_অরি আমার আপুর দেওয়া নাম। আপনিও ডাকতে পারেন সমস্যা নাই।
_তোমার নিজের আপু?”” অরিন কোনো জবাব দিলনা। কিছুক্ষণ পরে দিহান বলল”
_তোমার বিএফ কি করে?
_আমার বিএফ নাই।
_এটাও বিশ্বাস করতে হবে?
_আপনার ইচ্ছে হলে করেন নয়তো না। তবে এটাই সত্যি আমার কোনো বিএফ নাই।”””

দিহান অরিন কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলে আসল। রাস্তায় এসে দিহান অরিনকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। গাছের নিচে যেভাবে বাইক রেখে গেছিল সেভাবেই আছে। রাত নয়টা হয়ে গেছে। আজ অরিন বাসায় গেলে তাকে অনেক নোংরা নোংরা কথা শুনতে হবে এটা সে জানে। দিহান বাইকে উঠে অরিনকে বলল”
_উঠেন ম্যাডাম।” অরিন উঠল কিন্তু দিহানকে ধরল না। দিহান বলল”
_বন্ধু ভেবে ধরে নাও। নয়তো পড়ে গেলে হাত পা ভেঙে ল্যাংরা হয়ে যাবা।
_হলে হবো তাতে আপনার কি?
_ওকে ধইরনা।” বলেই দিহান বাইকে চালিয়ে টান দিল। সাথে সাথে অরিন পুরোটা গিয়ে দিহানের পিঠে পড়ল। দিহান হেসে বলল”
_আরও দেখাও মহিমা।” অরিন আর বাড়াবাড়ি করল না। হাত দিয়ে দিহানের পেট জড়িয়ে বসে থাকল। প্রতিবারের মতোই অরিনের শরীরের ছোঁয়া দিহানের মনের ইচ্ছেগুলো কে জাগিয়ে দিল। ইচ্ছে করছে অরিনকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে রাখতে। অরিনকে নিজের সাথে মিশিয়ে দিতে। আপাতত এসব মাথা থেকে ঝেড়ে বাইক চালাতে মন দিল দিহান।

দিহান অরিনের বাসার সামনে এসে বাইক থামাল। দিহানের ভেতর কাঁদছে। অরিনকে এখানে রেখে যেতে ইচ্ছে করছেনা। সে তো ভালোবাসেনা তাকে তাহলে এতো টান কেন অরিনের প্রতি। কেন অরিনের মাঝে এতো সুখ সে পায়? যে মেয়েটাকে একদিন ক্ষেত বলে গালি দিত আজ সে মেয়ে কিনা তার সব থেকে ভালো লাগার মানুষ? কিন্তু কেন? এমন ওতো হতে পারে অরিন খারাপ মেয়ে। অরিন তাঁর পরিবারকে বরবাদ করতে এসেছে। দিহানের মাথা ভনভন করতে লাগল। অরিনকে খারাপ ভাবতেই তাঁর খারাপ লাগছে। দিহানকে অন্যমনস্ক দেখে অরিন দিহানের গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাক দিল। দিহানের হুস এলো। শুকনো একটা ঢোক গিলে অরিনকে বলল”

_তা তা তাহলে বা বাই।” কথাটা দিহানের গলা দিয়ে বেরুতে চাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে অরিনের বলতে প্লিজ চলে আস আমার সাথে। অরিনেরও দিহানকে বাই বলতে কষ্ট হচ্ছে। যেন দিহান তার সত্যিকারের স্বামী দিহান দূর কোনো দেশে চলে যাবে তাই বিদায় দিতে বুক ফেটে কান্না আসছে। অরিন জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল”

_তাহলে আজ বিদায়। বাসায় গিয়ে গোসল কইরেন নয়তো শরীর চুলকাবে ঘুমাতে পারবেন না। আর জামাগুলা ভালো করে ধুয়ে দিবেন যেখানে শুইছিলেন যায়গাটা কেমন যেন ছিল।” অরিনের কথায় দিহানের কষ্টটা আরও বেড়ে গেল। এখন তার কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে। অরিনকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে তাঁর মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। দিহান বাই বলে চলে আসে ওখানে থাকলে তার খুব কষ্ট হবে। বুক ফেটে যাচ্ছে তাঁর এভাবে অরিনকে ছেড়ে যেতে। কই তন্দ্রার জন্য তো কখনো এমন হয়নি? তাহলে কি নীল সত্যিই বলছে যে সে অরিনের প্রেমে পড়ে গেছে? যদি তাই হয় তাহলে তন্দ্রা?

চলবে….।

প্রতিটা পাঠক আমার কাছে ভালোবাসার একটা টুকরো। কে কে যেন আরেক পার্ট চাইছিলেন দিয়ে দিলাম😘
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤
চলবে……।

কাল এমবি ছিলনা তাই দিতে পারিনি সরি।❤
চলবে….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here