ছুয়ে দিলে মন পর্ব ৩+৪

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৩
অসহায়ত্ব কাকে বলে? তা আজ আমি হারে হারে টের পাচ্ছি।কি করবো?আধাঘন্টা যাবত ওয়াসরুমে শাড়ির সাথে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ করছি।কিন্তু কিছুতেই শাড়ি পড়তে পারছি নাহ।এমনটা না যে আমি শাড়ি পড়তে পারি নাহ।
পারি তবে এই শাড়িটা এতোটাই মোলায়েম যে আমি একা পড়তে পারছি নাহ।ভীষন পিছল শাড়িটা।
রাগে দুঃখে মন চাচ্ছে এইখানেই বসে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেই।আরে উগান্ডার ছেলে তোকে কে বলেছে এমন শাড়ি কিনতে আমার জন্যে?উনাকে ওয়াসরুমের মাজেই বকতে লাগলাম।
কিছুক্ষন পর ওয়াসরুমের দরজা খটখট শব্দ হলো। তারপর উনার কন্ঠ শুনতে পেলাম,
-“Nijhum are you okey?কোন সমস্যা?”
কোনমতো নিজের রাগটাকে দমন করে দাঁতেদাঁত চেপে বললাম,
-” সমস্যা না কোন সমস্যা না।শুধু আপনার এই ফাউল শাড়িটা আমি পড়তে পারছি নাহ।”
-“what the..এইসব কোনধরনের কথা নিঝুম?”
উনার কথায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
-” সত্যি এই শাড়িটা নিয়ে আমি আধাঘন্টা যাবত যুদ্ধ করছি কিন্তু এইটা এতোটাই পিছল যে আমি এটা পড়তে পারছি নাহ।”
-” ok fine..then come out..আমি পরিয়ে দিচ্ছি।”
উনার কথা আৎকে উঠে এক চিৎকার দিয়ে বললাম,
-” নাহহহহ! লাগবে নাহ আপনি কেন পড়াবেন।”
-” তো কে পড়িয়ে দিবে?”
-” জানিনা তবুও আপনি নাহ।”
-” ওকে দেন ওয়াসরুমেই থাকো সারাদিন।”
বলেই মনে হয় চলে গেলেন আমি উনার চলে যাওয়ার আওয়াজ স্পষ্ট শুনেছি।
এখন আমি কি করবো?উফফ! এতো জ্বালা আর ভালো লাগে নাহ।এদিকে ক্ষুদাও লেগেছে।
কিছুক্ষন পর আবারো দরজায় আঘাত করলো কেউ।মনে হয় উনি।আমি এইবার বিরক্ত নিয়ে বললাম,
-” আমি বলেছি নাহ আপনাকে। আমি আপনার কাছে শাড়ি পড়বো নাহ।”
কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে যার কন্ঠস্বর পেলাম।আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।
-” নিঝুম আমি নিভৃতের মা। তুমি বাহিরে এসো আমি পরিয়ে দিচ্ছি।”
আমি এখন কি করবো?আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।উনি কি দজ্জাল টাইপ শাশুড়ি হবেন না-কি আবার।
আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম।দেখি আমার শাশুড়ি মা খাটে বসে আছেন।সারা ঘরে চোখ বুলালাম উনি রুমে নেই।
আমি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে গুটিগুটি পায়ে শাশুড়ী মায়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমি মায়ের কাছে যেতেই উনি আস্তে আস্তে সুন্দর করে শাড়ি পড়াতে লাগলেন।
হঠাৎ উনার কথায় আমি অবাক হলাম।
-” নিঝুম ভাবছো আমি অনেক খারাপ শাশুড়ি হবো।যে দিনরাত তোমায় টর্চার করবে?”
শাশুড়ি মায়ের কথায় আমি ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম।
-” অস্থির হওয়ো নাহ।মনের কথাটাই বলো।”
উনার এই কথাটা আমাকে ভরসা দিলো।তাই আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-” আসলে আমি তো আহান এর হবু বউ ছিলাম।সেখানে আপনার ছেলেকে বিয়ে করে নিলাম।তাই সবাই হয়তো আমার উপর রেগে আছে।আপনিও হয়তো আমাকে মেনে নিবেন নাহ।”
-” সবাই না জানলেও আমি জানি যে তুমি ইচ্ছে করে নিভৃতকে বিয়ে করোনি।নিভৃত তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে।তাই নিজেকে দোশারোপ দেওয়া বন্ধ করো।আমি জানি আমার ছেলে কেমন?”
উনার কথায় আমার চোখ ভরে উঠলো।মায়েরা এতো ভালো কেন হয়?সব মায়েরাই বুজি এতো ভালো।সন্তানের কষ্টটা মুখ ফুটে বলতেও হয় নাহ।কি সুন্দর অনায়েসে বুজে যায়।
আমিও আম্মুকে মিস করছি, বাবাকে, সোহাকে কাল থেকে ওদের সাথে কথা হয়না।
আমাকে কাঁদতে দেখে আমার শাশুড়ি মা বলে উঠেন,
-” একি কাঁদছো কেন?কেঁদো নাহ আমি জানি তুমি তোমার পরিবারকে মিস করছো।আমি নিভৃতকে বলে দেবো যাতে তোমাকে তাদের সাথে দেখা করিয়ে আনে।আর আসার সময় তাদেরকে সাথে করে এখানে নিয়ে আসেন।”
আমি অস্রু-সজল নয়নে তাকালাম উনার দিকে।তারপর কাপা কন্ঠে বললাম,
-” আ.আন্টি আমি কি আপ..আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি।”
উনি সাফ বললেন,
-” নাহ পারবে নাহ।”
উনার মানা করা দেওয়াতে অনেক কষ্ট পেলাম।চোখের পানি থামছেই না।আজ নিজের মা হলে কখনো মানা করতো নাহ।
হঠাৎ শাশুড়ি মায়ের কথায় গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকালাম,
-” আগে আমাকে মা বলে ডাক তাহলে জড়িয়ে ধরতে দেবো।”
জোরে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে শাশুড়ি মাকে ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরলাম।
নিমিষেই যেন আমার যতো টেন্সন, খারাপ লাগা,অসস্থি দূর হয়ে গেলো।হৃদয়ে টা মায়ের মমতাময়ী আলিগ্ঙন পেয়ে থেকে থেকে নেচে উঠতে লাগলো।
♣️
মা আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন তারপর আমাকে নিয়ে নিচে নামতে লাগলেন।সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছেন।
আমি আড়চোখে নিভৃতের দিক তাকালাম।দেখি উনি আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছেন।
আরে ভাই এইভাবে তাকানোর কি হলো আমি কি এলিয়েন যে এইভাবে তাকিয়ে থাকা লাগে।
পাশ থেকে দেখলাম আমিনা রায়হান মানে দাদু উনাকে খোঁচা মারলেন।খোঁচা খেয়ে উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে নাস্তা করতে লাগলেন।
উনার আর দাদুর এইসব কান্ড দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে তাও কি পরিস্থিতে হাসলাম।
মা আমাকে নিয়ে নিভৃতের পাশে বসিয়ে দিলেন।
আমার কেমন জানি অসস্থি হচ্ছে।আমি কারো সাথে চোখ মেলাতে পারছি নাহ।কালকের ঘটনার পর থেকে নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে আমার।আমাকে এইরকম করতে দেখে নিভৃত খেতে খেতেই বললেন,
-” Don’t feel uncomfortable.. Take it easy.Everything is alright. তুমি নাস্তা করো এমনিতেও কাল থেকে বেশি কিছু খাওনি তুমি।”
সবার সামনে উনার এমন লাগামছাড়া কথায় আমি আরো অসস্থিতে পড়লাম।হালকা চোখ উঠিয়ে সবাইকে দেখেনিলাম কেউ আমার দিকে তাকিয়ে নেই।শুশুড় বাবা আর দাদা নাস্তা করছেন একমনে।আমার কাকি শাশুড়ি আর কাকা শুশুড় এর দিকে চোখ যেতেই দেখালাম তারা ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আমার দিক তাকিয়ে নাস্তা করছেন।এখানে যে আমার উপস্থিতি তাদের বিন্দুমাত্র সয্য হচ্ছেনা তা বেশ বুজতে পারছি।
হঠাৎ হাতে টান পড়ায় পাশে তাকালাম দেখি দাদু আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন।
-” কিরে ছেরি খাচ্ছিস না কেন?এতো শুকনো কেন তুই?কালকে তো না খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলি। এখন ভালো করে পেটভরে খা।আমার নাতিকে আদর করার জন্যেও তো শক্তি থাকা লাগবে। কি বলিস?”
দাদু কথা আমি হা করে উনার দিকে তাকালাম। এই বুড়ি বলে কি লজ্জাসরমের মাথা খেয়ে ফেলেছে না-কি।
এতগুলো মানুষের সামনে কি বলে এসব।
আমি লজ্জায় কাচোমাচো হয়ে কোনরকম নাস্তা করে নিলাম।
নাস্তা করে আমি রুমে চলে গেলাম। এখানে সবার সাথে চোখ মেলাতে পারছিলাম নাহ আমি।
আচ্ছা সবাইকেই দেখতে পেলাম কিন্তু আহান কোথায় ওকে তো কাল থেকে একটা দিনও দেখতে পেলাম নাহ।যেখানে এটা ওর বাড়ি সেখানে ওকে আমি দেখছিই না কাল থেকে।
আমার ভাবনায় মাজেই নিভৃত বললো,
-” আহানের কথা চিন্তা করে লাভ নেই।ওর যখন বাড়িতে আসার এসে পড়বে।”
আমি অবাক হলাম।এই লোকটা আমার মনে কথা বুজে যায় কিভাবে?
-” বেহুদা টেন্সন করে লাভ নেই।তুমি রেস্ট নেও এমনিতেও তুমি অনেক সিক।”
উনার এইসব আদিক্ষেতা আমার সয্য হচ্ছে নাহ।
একে তো নিজে আমাকে কষ্ট দিয়ে আবার নিজেই আমার সাথে আহ্লাদিপনা করছে।বিরক্তির এর লিমিট থাকে।আমি চিৎকার করে বললাম,
-” কেন এমন করছেন?আপনার এই থার্ট ক্লাস আদিক্ষেতা আপনার কাছেই রাখেন।আমি আপনার সাথে কখনো থাকবো নাহ।আমি শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাবো।”
আমার কথা শুনে যেন উনার রাগ সাত আসমানে উঠে গেলো।উনার কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
উনি তেড়ে এসে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।
-” Don’t you dare to thik about that again.আমার থেকে পালাতে তুমি কখনোই পারবে নাহ।আর পালিয়ে কার কাছে যাবে?আহান এর কাছে?ওকে দেন দরকার পড়লে আমি আহানকেও মেরে ফেলবো।”
উনার এই কথায় ভয়ে আমি আৎকে উঠলাম।সাথে প্রচুর ঘৃনাও লাগছে।এতো খারাপ মানুষ কিভাবে হয়?শেষে কিনা নিজের স্বার্থের জন্যে নিজের ভাইকেও ছাড়বে নাহ।
এই লোকটা কি নাহ আমার স্বামি?ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃনা আসছে।
উনি আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরলেন।এতে ব্যাথায় আমি ককিয়ে উঠলাম।চোখ দিয়ে অনাবরত পানি পড়তে লাগলো।
উনি বললেন,
-” এতো ঘৃনা না এতো ঘৃনা আমার প্রতি। যেদিন সত্যিটা জানতে পারবে নাহ।সেদিন আফছোস করবে?”
বলেই আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলেন।
তার যেতে যেতে বললেন,
-” আমি এখন কাজে বাহিরে যাচ্ছি।তোমার জামা কাপড় আর আমার জামা কাপড় ও ঘুছিয়ে রেখো।আমরা এখানে থাকবো নাহ।”
কথাটা বলেই ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে চলে গেলেন নিভৃত।
আর আমি ভয়ে সিটিয়ে গেলাম।এখানে থাকবে না মানে?কোথায় নিয়ে যাবেন আমাকে?অন্যকোথাও নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলবেন?না-কি দিন রাত টর্চার করবেন।
নাহ আর ভাবতে পারছি নাহ।এতো কষ্টময় কেন জীবনটা।কেন এতো যন্ত্রনা?
আমি কাঁদলাম কতোক্ষন প্রচুর কাদঁলাম।হাতের দিক নজর যেতে দেখলাম উনার হাতের পাচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।ভ্রু-ক্ষেপ করলাম না।এই ব্যাথার চেয়ে আমার মনের ব্যাথাটা আরো গভীর।
চোখ মুছে উঠে জামাকাপড় গুছাতে লাগলাম।
গুছানো শেষে সুয়ে রইলাম আর যে কিছু করার নেই আমার।একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৪
অফিসরুমে বসে কপালের সাথে বন্ধুক ঘসছে নিভৃত।প্রচন্ড রেগে আছে সে।কারন একটু আগেই নিঝুমের বলা কথাগুলো ওর হৃদয়ে আঘাত করেছে।
তারপর এখানে এসে এইসব উল্টাপাল্টা কথা শুনে রাগ যেন আর নিয়ন্ত্রন করতে পারছে ও।
নিভৃত অত্যন্ত ঠান্ডাকন্ঠে বললো,

-” আহান পালালো কিভাবে?”

লোকগুলো নিভৃতের এরকম ঠান্ডা গলার স্বর শুনে যেন ভয়ে কেপে উঠলো।তারা কোন জবাব দিচ্ছে নাহ।তা দেখে নিভৃত আরো রেগে গেলো।জোড়ে চিৎকার করে বললো,

-“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি ইউ ইডিয়ট্স।”

ওদের মধ্যে একটা লোক কাপতে কাপতে নিভৃতের সামনে এসে দাড়ালো।ভয়ে ভয়ে বললো,

-” বস ও কিভাবে পালালো জানি নাহ।তবে এখান থেকে যে কেউ ওকে সাহায্য করেছে তা বেশ বুজতে পারছি। আহান ভাইয়ের একলা পালানোর কোন চান্সই আমরা রাখি নি।”

নিভৃত দাঁতেদাঁত চেপে বললো,

-“Find him quuckly.আমি কোন না শুনতে চাই নাহ।আর যে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ওকে তো আমি নিজেই খুজে নিবো।”

বলেই নিভৃত চলে যেতে নিতেই সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেললো।ওদের অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে নিভৃত হঠাৎ এসে ওদের দলের মাজে একটা লোককে স্যুট করে দিলো।
ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে সবাই এখন বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারি নি।নিভৃত মরা লাশটার দিকে তাকালো।তারপর বাকা হেসে বললো,

-” আমি নিভৃত রায়হান। আমার সাথে চালাকি করা এতো সহজ নয়।নিহাত আমি নিঝুমের জন্যে দুইদিন ব্যস্ত ছিলাম।তাই এই সুযোগে তুই আহানকে পালাতে সাহায্য করতে পেরেছিস নাহলে আমি থাকলে কোনদিন পারতি নাহ।ইডিয়ট একটা।রিডিকিউলাস!এইটাকে নিয়ে আমার পালিতো কুকুরকে দিয়ে আয় আজ পেট ভরে ভোজন করুক তারা।”

নিভৃত চলে যেতে নিতেই আবারো ফিরে আসলো তারপর সবার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

-” ভুলে যেও নাহ আমি কে?আমার সাথে বেইমান ফলাফল তোমাদের সামনে।সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও।আমার সামনে ভুলেও যদি কোন প্রমান আসে আমি এক সেকেন্ডও সময় নেবো নাহ।সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।”

নিভৃতের এমন ঠান্ডা ধমকিতে কেপে উঠলো সবাই।
একটা লোক ফিসফিসিয়ে বললো,

-” কি ড্যাঞ্জারাস এই লোক।বস যতোক্ষন সামনে থাকে আমার তো নিশ্বাসটাও ফেলতে ভয় করে।এই লোক ও যে কারো প্রেমে পড়তে পারে আমার ধারনার বাহিরে।”

লোকগুলো আর কথা না বাড়িয়ে লাশটাকে সড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

এদিকে নিভৃত বাড়িতে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে ডুকতেই সর্বপ্রথম নজর পড়লো বিছানার দিকে।যেখানে নিঝুম একদম গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।একদম বিড়ালছানার মতো করে শুয়ে আছে নিঝুম।নিভৃত মায়াভরা দৃষ্টিতে নিঝুমের দিক তাকালো।তারপর আস্তে আস্তে নিঝুমের কাছে গিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো।
নিঝুমের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখের কাজল লেপ্টে আছে যার স্পষ্ট প্রমান যে ও প্রচুর কেঁদেছে।নাক, গাল, ঠোঁট লাল টকটকে হয়ে আছে।শাড়িটাও ঠিক নেই শাড়ির একপাশ সরে যাওয়াতে নিঝুমের উন্মুক্ত ফর্সা কোমড়টা দেখা যাচ্ছে।নিভৃত চোখ সরিয়ে নিলো। নিজেকে সংযতো করলো।নিঝুমের অসম্মতিতে ওকে বিয়ে করেছে কিন্তু যতোদিন না নিঝুম তাকে মন থেকে মানতে পারবে ততোদিন ও নিঝুমকে স্পর্শ করবে নাহ।
নিভৃত নিঝুমের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।হালকা কেপে উঠলো নিঝুম।
কপালে ভালোবাসার পরশ নাকিই ভালোবাসার শুদ্ধতম বহিঃপ্রকাশ।
নিভৃত পাশ ফিরে উঠতে নিলেই ওর নজর যায় নিঝুমের হাতের উপর।নিঝুমের হাতে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।যেটা ও সকালেই নিঝুমের সাথে করেছিলো।খারাপ লাগছে নিভৃতের নিজের কাছে।নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে বারবার ও নিঝুমকে আঘাত করে ফেলে।যেটা ও সজ্ঞানে কখনো চায় নাহ।নিঝুমের ব্যাথা জায়গায় ঠোঁট ছুইয়ে দিলো নিভৃত তারপর ড্রয়ার থেকে মলম বের করে নিঝুমের হাতে লাগাতে শুরু করলো।
♣️
হঠাৎ হাতের মাজে কারো হাতের স্পর্শ ক্রমাগত অনুভব করতে পেরে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি।
ঘুমে আমি চোখটা ঠিকভাবে খুলতে পারছি নাহ।নিজের সর্বশক্তি দিয়ে অবশেষে চোখ খুললাম।মুহূর্তেই আমার কপাল কুচকে গেলো।
স্বয়ং নিভৃত আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন।
তাও এমনভাবে যেন মলমটাও আমাকে ব্যাথাদিতে পারে।
আসলে এইলোকটা চাইছেটা কি?আমি যে কতোক্ষন ধরে জেগে আছি উনার কি কোন দিকদিশা নেই।আমি হাত টান দিয়ে ছাড়াতে চাইলাম।উনার এই ব্যবহার আমি নিতে পারছি নাহ।নিজেই ব্যাথা দেয় আবার নিজেই আমাকে সেই ব্যাথা জায়গায় মলম লাগিয়ে দেয়।
আমি এতোবার হাত ছুটাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়ছেই নাহ।মনে এই মুহূর্তে আমার হাতে মলম লাগানো ছাড়া উনার পৃথিবীতে আর কোন কাজ গুরুত্বপূর্ণ নাহ।শত চেষ্টা করেও হাত ছুটাতে না পেরে চুপচাপ বসে রইলাম আমি। অবশেষে উনি মলম লাগানো শেষ হতেই আমাকে ছাড়লেন।তারপর ভ্রু-কুচকে বললেন,

-” দুপুরে লাঞ্চ করেছো?”

আমি মাথা নাড়ালাম।সকালে কাপড় গুছিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়ালেই ছিলো নাহ।হয়তো” আমাকে ডেকে গেছে খাওয়ার জন্যে।ইসস! কি মরা ঘুমটাই না দিয়েছিলাম।আমার ভাবনার মাজে উনি আমার হাত চেপে ধরলেন।আমি তাকালাম উনার দিক।উনি বলে উঠেন,

-” যাও ফ্রেস হয়ে এসো আমি খাবার আনছি।একটু পরেই আমাদের বেরুতে হবে।”

এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো কথাটা ভেবেই ভয়ে এক ঢোক গিল্লাম আমি।আমার কেন যেন প্রচুর ভয় লাগছে।
উনি আমাকে ঝাকিয়ে আবার বলেন,

-” কি হলো যাও!তাড়াতাড়ি বের হবে সময় নেই।”

আমি ভয়ে ভয়ে উঠা দাড়ালাম।ওয়াসরুমে গিয়ে নিজেকে ফ্রেস করে নিলাম।তারপর ওয়াসরুম থেকে বের হয়েই দেখলাম উনি খাবারের ট্রে নিয়ে বসে আছেন।আমাকে দেখে ইশারায় উনার কাছে যেতে বললেন।।
আমি উনার কাছে গিয়ে বসলাম। তারপর দুজনেই খাবার খেয়ে নিলাম।খাওয়া শেষে উনি আমাকে তৈরি হতে বললেন।
আমি শাড়ি কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।আজ আর শাড়ি পড়তে সমস্যা হয়নি।আজ একটা সুতি কাপড়ের শাড়ি পড়েছি।শাড়িটা চমৎকার আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।বাসান্তি আর কমলা রঙ মিক্স করা।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি রুমে নেই।তোয়ালেটা ব্যালকনিতে রোদ দিতে গিয়ে দেখলাম উনি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছেন।আমার আসার শব্দ হয়তো উনি পেয়েছেন তাই পিছে ফিরে আমার দিকে তাকালেন।উনার চোখের চাহনীটা জানি কেমন দেখাচ্ছে।অন্যরকম,একেবারে অদ্ভুত।পড়ন্ত বিকেল সূর্যটা রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে।এই রক্তিম সূর্যের সেই লাল আভা ব্যালকনিতে এসে পড়ছে।
আর সেই লাল আভায় নিভৃতকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে।
উনার চুল্পগুলো মৃদু বাতাসে হালকা উরছে,উনার চোখের চাহনীটা ঠিক কি বুজাচ্ছে আমি জানি নাহ!তবে উনার চোখ যে আমার মাজেই কিছু একটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে তা ঠিক বুজতে পারছি।
চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।
আল্লাহ্ তায়ালা ঠিকি বলেছেন,স্বামি স্ত্রীর মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলে সেখানে একে অপরের প্রতি এমনি মায়া এসে পড়ে।আর সেই মায়া থেকে সৃষ্টি হয় ভালোবাসা।
কিন্তু আমি তো উনাকে ভালোবাসতে চাই নাহ।
তাই মায়াও বাড়াতে চাই নাহ।
আমি দ্রুত পায়ে রুমে আসসলাম।শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হিজাব বাধলাম,হাতে দুটো বালা যেটা আমার শাশুড়ি মাই পরিয়ে দিয়েছেন এটা নাকি এই বাড়ির প্রত্যেক বড় বউরা পায়।
মুখে হালকা ক্রিম লাগালাম,ঠোঁটে লিপ্সটিক আর চোখে কাজল দিলাম।।আমার সাজার মাজেই উনি রুমে আসলেন।আমার দিকে অবাক চোখে কতোক্ষন তাকিয়্র থাকলেন,তারপর হঠাৎ ওই উনার চোখে মুখে রাগের আভা দৃষ্যমান হতে লাগলো।
আর এতো হুটহাট রেগে গেলেন কেন উনি?আমি তো কিছুই করলাম নাহ।
আমার ভাবনার মাজেই উনি আমার কাছে আসলেন।তারপর আমার দু-বাহু চেপে ধরে ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দিলেন।।
নিজেও আমার উপর এসে আমার দু-হাত তার একহাত দিয়ে চেপে ধরলেন।
অন্যহাত দিয়ে আমার ঠোঁটে দেওয়া লিপ্সটিক মুছে দিলেন।
আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার চোখের কাজল মুছে দিলেন।আমি চোখে ব্যাথা পেয়ে চোখ বুজে নিলাম।চোখের কার্নিশ বেয়ে অস্রু গড়িয়ে পড়লো।
উনি বলে উঠেন,

-” ফারদার কখনো যেন তোমায় সাজতে না দেখি।শুধু রুমের ভীতরে আমার সামনে সাজবে আর কারো সামনে নাহ।”

নিভৃত উঠে গেলেন।আমি তখনো সুয়ে আছি আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদঁছি।

-” উঠো মুখে পানি দিয়ে আসো।আমাদের লেট হচ্ছে।”

আমি নিভৃতের কথায় উঠা দাড়ালাম।নিজেকে ফ্রেস করে নিয়ে উনার সাথে নিচে নামলাম।
আমাদের এইভাবে ব্যাগপত্রসহ নিচে নামতে দেখে সবাই মনে হয় ভীষন অবাক হলেন।আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
আমরা নিচে নামতেই মা নিভৃতকে বললেন,

-” বাবা তুই কোথায় যাচ্ছিস?সবে মাত্র কালকে নতুন বিয়ে করে এসেছিস আর আজকেই চলে যাচ্ছিস কেন?”

পাশ থেকে কাকি ফোঁস করে বললেন,

-” নিশ্চয়ই এখন নিভৃতকে নিয়ে আলাদা থাকার প্লান করেছে।শশুড় শাশুড়ির সাথে থাকলে রঙলিলা করবে কিভাবে?”

উনি আমার হাত ধরেছিলেন।আমি কাকির কথায় উনার হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম।এই কথাগুলো আমাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে।
উনি আমার আর তার হাতের দিকে তাকালেন তারপর কাকিমনিকে কড়া গলায় বললেন,

-” আজ এইসব ওকে বলেছো।আমি যেন আর কখনো ওকে এইসব বলতে না শুনি।যদি ওকে এইসব কথা আবার বল তো আমি ভুলে যাবো তুমি আমার কাকিমা।”

কাকিমা অবাক হয়ে তাকালেন আমাদের দিক।বললেন,

-” নিভৃত শেষে কি-না এই মেয়ের জন্যে তুই…”

কাকিমাকে থামিয়ে উনি বলে উঠেন,

-” এই মেয়ে কি কাকিমা?ওর একটা নাম আছে নিঝুম।
আর এখন ও আমার বিবাহিত স্ত্রী।আর এখন যে ও মিসেম.নিভৃত রায়হান তা ভুলে যাবে নাহ।ওর একটা সম্মান আছে।ও এখন এই বাড়ির বড় বউ।”

-” বড় বউ?তা বড় বউদের যে পরিবারের প্রতি দ্বায়িত থাকে না পালন না করে কোথায় যাচ্ছে সে।”

কাকির কথায় আমার দিকে তাকালেন নিভৃত।তারপর শান্ত গলায় বলে উঠেন,

-” এই বাড়ি ছেড়ে নিঝুম যাচ্ছে নাহ।আমিই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।আর দ্বায়িত পালন সেটা সময় আসলেই করবে।”

উনার কথায় কাকিমা আর কিছু বলার সাহস পেলেন নাহ।

নিভৃত মার দিকে তাকালেন। মা করুন চোখে নিভৃতের দিকে তাকালেন।

-” মা আমি একটা দরকারি কাজেই যাচ্ছি।অনেক ইম্পোর্টেন্ট।আমি জলদি এসে পড়বো।তুমি একদম মন খারাপ করবে নাহ।আমি তোমাকে প্রতিদিন কল করবো ওকে।”

মা অস্রুসজল নয়নে নিভৃতের কথায় মাথা নাড়ালেন।নিভৃত মার মাথায় চুমু খেলেন।ছেলে আর মায়ের ভালোবাসা দেখে আমার ভীষন ভালো লাগছে।
এটলিস্ট খোরুস টা নিজের মাকে তো ভীষন ভালোবাসে।
উনাদের দেখে আমার ও আমার আম্মু কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।আজ দু’দিন আমি আম্মুর সাথে কথা বলিনা।বাবা’র কি অবস্থা হয়েছে কি জানে?সোহাকে উনি কি করেছেন।টেন্সনে আমার কিচ্ছু ভালোলাগছে নাহ।

হঠাৎ নিবৃতের বাবা মানে আরমান রায়হান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠেন,

-“সাবিহা তোমার ছেলের বউকে বলো আমার সাথে আমার রুমে এক্ষুনি আসতে।”

বাবার এই কথায় আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।ভয়ে থরথর করে কাপতে লাগলাম।বাবা আমাকে উনার সাথে একলা কেন যেতে বলছেন?
আমি ভয়ে ভয়ে নিভৃতের দিক তাকালাম।উনি চোখের ইশারায় আমাকে যেতে বললেন।
সবার দিকে তাকালাম সবারই চোখে মুখে হালকা ভয়ের ছাপ।
উনাদের চোখে মুখে ভয় দেখে আমার অন্তর আত্মা যেন লাফ দিয়ে সাত আসমানে উঠে গেলো।
যতো দোয়া দুরূদ আছে মনে মনে পড়তে পড়তে বাবার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম




চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here