#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৮
দরজা বন্ধ করে আদিত্যের দিকে এগিয়ে আসছে তৃষ্না।
ভ্রু কুচকে তৃষ্নার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আদিত্য,
— কি ব্যপার, দরজা লাগালে কেনো? আর এভাবেই বা এগিয়ে আসছো কেনো।
তৃষ্নার মতি গতি ভালো না দেখে উঠে দাড়ায় আদিত্য।
— কি ব্যপার তৃষ্না এমন করছো কেনো?
— তো কি করবো আমি? তুমি আমায় ভালোবাসবে না, কাছে টানবে না। তো আমি কি করবো? আজ তুমি আমায় কাছে টানবে ভালোবাসবে আর নিজের করা নিবে আদিত্য।
আদিত্য একটা তাচ্ছল্য হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— ভালোবাসবো? আর তোমায়?
তৃষ্না এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
— কয়েক দিন হলো আমরা এখানে আছি। আমরা দুজন মিলে এখানে সময় কাটাতে এসেছি আর তুমি একবারের জন্য, তাকিয়েছো আমার দিকে ভালো করে?
বলতে বলতে আদিত্যকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছে তৃষ্না।
— আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি বলেই এখানে একসাথে সময় কাটাতে এসেছি। তাহলে কেনো এতো অবহেলা করছো আমায়?
— কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ব্লেকমেইল আশা করি সেটা তুমি ভালো করেই বুঝতে পারছো। দুরে থাকো আমার থেকে।
তৃষ্নাকে ধক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আদিত্য।
বড় বড় দুইটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠে তৃষ্না,
— আমায় এতো অবহেলা করার কোনো প্রয়োজন নেই আদিত্য। আমি জানি তোমার মন অন্য একটা মেয়ের জন্য কাদে।
— শুনো এই আদিত্যের জীবনে একটাই মেয়ে ছিলো আর একটাই থাকবে। যতটুকে এসেছো ততোটুকুতেই থাকো আমাদের মাঝে আসার চেস্টা ভুলেও করো না।
— আমি তোমায় ছোট বেলা থেকে ভালোবেসেছি আমার তোমাকেই লাগবে। সেটা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে। ভয় দেখাচ্ছো আমাকে?
— না ভয় পাচ্ছি নিজেই নিজের ধর্যকে।
— ওকে ফাইন, কিন্তু তুমি যাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসো সে তোমায় কতটা ভালোবাসে আদিত্য?
— মানে?
— তুমি কি জানো শুভ্রতা অন্য একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেছে? সে যদি তোমায় ভালোই বাসতো তাহলে কি পারতো অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যেতে?
,
,
,
রাঙা গুধুলির আলোয় সুন্দর্যতায় মেতে উঠেছে প্রকৃতি। হালকা বাতাস বইছে।
শরির একটু ভালোর দিকে আজ। ছাদে একটু হাটাহাটি করছে শুভ্রতা। ছাদটা গুছানো। চার পাসটা গোলাপের চারা দিয়ে ঘেরা। প্রকৃতির সুন্দর্য, মাধুর্যতা যেনো মন কিছুটা হালকা হচ্ছে শুভ্রতার। মাথা জুরে একটাই চিন্তা। বাড়িতে কি হয়েছে এই দুই দিন। বিয়েরই বা কি হলো? আমি কি আবারও বাবার সম্মান নিজ হাতে জবাই দিয়ে দিলাম? আচ্ছা আমি যদি এখন বাসায় যাই তাহলে বাবা কি করবে আমায়? কেনো এমন হয় আমার সাথে? ভাবেছিলাম সব কিছু শেষ করে আবার নতুন করে শুরু করবো সব। তাতেও বাধা। অদ্ভুদ একটা ভাগ্য নিয়ে জম্মেছি বোধ হয়। আচ্ছা আমার কপালে কি কখনোই সুখ সইবে না?
তার পাসে এসে দাড়ায় রিদ।
— শরির কেমন লাগছে আপনার?
— মোটামুটি ভালো। বাড়িটা বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন আপনি।
— আমি সাজাই নি। চাচিই এইসব দেখে মাঝে মাঝে। আর আমি মাঝে মাঝে ওই গোলাপ গাছ গুলোর কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন অতিতকে অনুভব করি।
— আপনার অতিতও কি খুব ভয়ঙ্কর ছিলো?
— ভিষন।
— জদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?
— হুম।
— কাওকে খুব বেশি ভালোবেসে ছিলেন?
— হুম আমার স্ত্রীকে।
— আপনি ম্যারিড? কোথায় আপনার স্ত্রী?
— ঘুমোচ্ছে চিরতরে। যেই ঘুম আর ভাঙার মতো নয়।
— ওহ্ সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
— বিয়েটা হয়েছিলো আজ থেকে তিন বছর আগে। সাজানো গুছানো একটা সংসার ছিলো আমাদের। ও ঘুরতে বেশ পছন্দ করতো। মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম ওকে নিয়ে। দু বছর আগে ওই দিনটায়ও ঘুরতে বের হলাম, কিন্তু জানতাম না ওই দিনটাই ছিলো আমাদের একসাথে থাকা শেষ দিন টা।
একটা এক্সিডেন্ট এ আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায় সে। তার পর থেকে এভাবেই থাকি। যখন একা ছিলাম তখন সে জীবনে এসেছিলো। আর যখন তাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন বুনেছিলাম তখন আবার একা করে চলে গেলো সে। দ্বিতীয় বার নিজেকে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিলো তবুও মানিয়ে নিয়েছি। ওই যে ফুলগাছ গুলো দেখছেন, তার খুব পছন্দের ফুন ছিলো গোলাফ। সে থাকতেও এমন গোলাফ গাছে ভরা ছিলো বাড়ির চার পাস। ওই গাছ গুলোর কাছে গেলেই যেনো আমি তাকে নিজের পাসে অনুভব করতে পারি।
— এভাবে একাই থেকে জাবেন, সারা জীবন?
— দ্বিতীয় বার কাওকে মন গ্রহন করবে না। আসলে প্রথম কেওর শুন্যতা দ্বিতীয় জন পূরণ করতে পারবে না। আর প্রথম জনের মতো কাওকে পাওয়াও সম্ভব না।
একটা সময় সবাই ছিলো আমার, বাবা, ভাই। আর মা সেই ছোট বেলায়ই মারা গেছে। বাবা আর দুই ভাই মিলে খুব সুন্দর ছিল জীবনটা। কিন্তু,,,,,,,
— থেমে গেলেন কেনো?
একটা দির্ঘশ্বাস ছারে রিদ,
— চা খাবেন?
— উহু, ইচ্ছে করছে না।
— থাকেন তাহলে আমি চাচিকে পাঠাচ্ছি। খুব মজার মানুষ সে। সময় কাটবে ভালো।
— আচ্ছা, আর শুনুন,,,,
— হুম,,
— থ্যাংক ইউ।
— হটাৎ?
— আমাকে নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
,
,
,
অফিস শেষে বাসায় এসে ক্লান্ত শরির সোফায় এলিয়ে দেয় সাগর। বিয়ের জন্য কিছুদিন ছুটি পেলেও ছুটি কেন্সেল করে দেয় সে। ঠান্ডা পানি ভর্তি একটা গ্লাস এগিয়ে দেয় বৃষ্টি।
এতটা পথ যার্নিতে গলা শুকিয়ে এসেছে তার। গপগপ করে খেয়ে নেয় পানি।
সাগরের এমন ক্লান্ততা দেখে বৃষ্টি বলে উঠে,
— আপনি দেখছি খুব ক্লান্ত। আপনি বসুন আমি এক গ্লাস সরবত নিয়ে আসছি।
— এই শুন, এতো আল্গা পিরিত দেখাতে হবে না, যথেষ্ঠতে সীমাবদ্ধ থাক।
ফ্রেস হতে চলে যায় সাগর। গাল ফুলিয়ে গ্লাস হাতে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। সালা হনুমান একটা, ভালোর জন্য বলছি, আলগা পিরিত মনে হচ্ছে তার কাছে। বড় ভাই দেখে কিছু বলতে পারছি না।
খাবার টেবিলে বসে বৃষ্টি সাগর ও তার মা। কেতে খেতে তার মা বলে উঠে,
— সাগর, ফুলির মা দুই তিন দিন কাজে আসছে না একটু খোজ নিয়ে দেখবি কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?
— কেনো মা সব কাজ তো ঠিকটাক মতোই হচ্ছে।
— এই কয়দিন তো বৃষ্টিই সব করছে। কষ্ট হচ্ছে না তার?
— কাজ তো হচ্ছে না কি? আর আমিই আপাকে আসতে বারণ করেছি। এখন থেকে বাড়ির সব কাজ কর্ম বৃষ্টিই করবো।
— কি বলছিস এইসব। বৃষ্টিকে আমাদের আগে থেকে চেনা হলেও এখন সে এই বাড়ির নতুন বৌ। আর তাকে এতো খাটানো ঠিন না।
— কি করতে হবে কি করতে হবে না সেটা বুঝার বয়স আমার হয়েছে মা।
এই বলেই সাগর উঠে চলে গেলো সাগর।
বৃষ্টি চুপ চাপ ভাবে খাচ্ছে। সাগরের মা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— চিন্তা করিস না মা, দু একদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। জানিস তো এখন সে রেগে আছে।
— তুমি শুধু শুধু ভাইয়াকে এতো কিছু বললে, আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি থাকতে বাড়িতে অন্য কাওকে রেখে এক্সট্রা খরচ করার কি দরকার।
— তুই এখনো সাগরকে ভাইয়া বলিস?
— গাল টেনে হেসে বৃষ্টি বলে উঠে, মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে ফুফি।
রাতে সাগর বিছনায় বসে লেপটপে কাজ করছে। একটা বালিশ নিয়ে সোফায় সুয়ে পরে বৃষ্টি।
সাগর ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
— এই যে ম্যাডাম, ঘুমিয়ে যে যাচ্ছেন। আমার কাপর চোপর গুলো ধুয়েছেন কি?
কিছু না বলে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। মনে মনে সাগরের গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলছে বৃষ্টি। এই রাতের বেলায় একটু শরিরকে শান্তি দিবো তা না, এখন কি না ওর কাপর ধুতে হবে। ভালো না ই বাসিস একটু শান্তিতে থাকতে কি দিবি না? সব দোষ আপু তোর, তোর জন্য আমি এসে পরেছি এই বন্ধি কারাদারে। যেখানে নেই কোনো নিজের ইচ্ছেতে কিছু করার অধিকার। যে আমি এক কাপ চা বানিয়ে খেতাম না, সেই আমিই আজ পারি কিংবা না পারি, সলসারের সব কাজে ক্লান্তি হিন ভাবে খাটতে হয়।
গভির রাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে যায় সাগরের। হালকা হালকা ঠান্ডা পরছে। খেয়াল করে শীতে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে বৃষ্টি। পিচ্চিটার ঘুমন্ত চেহারাটায় কেমন একটা মায়া মিশে আছে। বৃষ্টির যে শীত লাগছে তা ভালোই বুঝতে পারছে সাগর। যা হোক নিজের বৌ তো।
বৃষ্টির গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে দিয়ে আবার বিছায় এসে ঘুমিয়ে পরে সে।
To becontinue………..