#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৯
#অদ্রিতা_জান্নাত
অরূপ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ শ্রেয়া যে ওকে এভাবে বলবে ও ভাবতেই পারে নি ৷ অরূপ শ্রেয়াকে কিছু বলতে গেলে শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,
“থাক! অনেক হয়েছে ৷ আর আপনার মানবিকতা দেখাতে হবে না ৷ অনেক দেখেছি আমি ৷ বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে ৷ নাহলে লোক ডেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো ৷ চলে যান প্লিজ!”
অরূপ আর এক মূহুর্তও দাঁড়িয়ে না থেকে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল ৷ শ্রেয়া ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো ৷ নিজের মুখ চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,
“কি করলাম আমি এটা? অরূপকে কেন বের করে দিলাম? ওনাকে ছাড়া থাকবো কি করে আমি? অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার ৷ কেন বোঝেন না আপনি আমাকে ৷ কেন আমাকে সব সময় দোষারোপ করেন ৷ কেন বুঝতে চান না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি ৷ এতো অবহেলা সইবো কি করে আমি!”
___________________
খারাপ হোক বা ভালো সময় সময়ের গতিতে চলতে থাকে ৷ এই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কেটে গেছে প্রায় এক মাস ৷ এই এক মাসে অরূপের সাথে আমার একবারও কথা হয় নি ৷ একবারও দেখা হয় নি তার সাথে ৷ প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার কাছে বিষের মতো লেগেছে ৷ প্রত্যেকটা মূহুর্ত ছটফট করেছি তাকে একটু দেখার জন্য ৷ ভেবেছিলাম বিয়ে যখন হয়েছে তো একটু হলেও অনুভূতি থাকবে আমার জন্য তার মনে ৷ কিন্তু আমি এইবারও ভুল প্রমানিত হলাম ৷ তাই মনকে শক্ত করে নিয়েছি কখনোই যাবো না তার সামনে ৷ ওই বাড়ির সবাই আমাকে বলেছে ওই বাড়িতে আবার ফিরে যেতে ৷ কিন্তু আমি যাই নি ৷ অরূপের সাথে আমার কখনো কথা না হলেও ওনার বাড়ির সবার সাথেই কথা হয় আমার ৷ এই এক মাসে মায়া আপুর কোনো খোঁজও পাই নি আমি ৷ আপুকে খুঁজতে আমি সেই গোডাউনে গিয়েছিলাম কিন্তু পাই নি তাকে ৷ মোবাইলও এক মাস ধরে বন্ধ ৷ হয়তো কেউ কিছু বুঝতে পেরেছিল তাই আপুকে সরিয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু কে? সেটাই ধরতে পারছি না ৷
বিছানায় বসে এসব ভাবছিলাম আমি ৷ তখনি আম্মু রুমে এসে আমার পাশে বসে বললো,,,,,,,,,
“তোর সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছে ৷”
ভ্রু কুচকে আমি বললাম,,,,,,, “কে?”
আম্মু ইশারা করে দরজার দিকে দেখালো ৷ দরজার দিকে তাকাতেই নয়না আন্টিকে দেখতে পেলাম ৷ আমি হালকা হেসে ছুটে গেলাম তার কাছে ৷ সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,,,,
“ভুলে গেছিস আমাদের তাই না?”
তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,,,,,,
“কতদিন পর দেখছি তোমায় ৷ তুমিও তো ভুলে গেছো আমায় ৷ প্রতিদিন এই বাড়ি আসলে সমস্যা কি?”
“তুই আমার বাড়ির বউ শ্রেয়া ৷ তুই কেন থাকবি এখানে? অরূপের জন্য কেন তুই আমাদের কষ্ট দিচ্ছিস?”
আমি মাকে ছেড়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,
“তোমাদের কষ্ট দিতে চাই নি আমি ৷ তবে আমার কিছু করার নেই ৷ আমি ওই বাড়ি ফিরে যেতে পারবো না কখনোই ৷”
“আমার জন্যও না?”
“মাফ করে দিও ৷ কিন্তু আমার নিজেরও একটা আত্মসম্মান আছে ৷ অরূপ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে আর আমি চুপচাপ সব মেনে নিব? পারবো না আমি ৷ আমাকে ওই বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হলে অরূপ নিজেই আসতেন ৷ তোমাদের কাউকে বলতে হতো না ৷ সে তো চায়-ই না আমি ওই বাড়িতে আবার ফিরে যাই ৷ তো কেন যাবো আমি?”
“ঠিক বলেছিস অরূপ তোকে চায় না ৷ তোকে মানবেও না ৷ তুই কেন শুধু শুধু আমার ছেলের জন্য তোর নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিবি? তুই তোর জীবনটাকে নিজের মতো গুছিয়ে নে ৷”
“ভুল বুঝো না মা ৷ আমার সত্যি কিছু করার নেই ৷”
“মা কখনো মেয়েকে ভুল বুঝতে পারে? তুই যেটা করেছিস ঠিক করেছিস ৷ অরূপের একটা শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন ৷ তোকে জোর করবো না আমি ৷ অরূপ না মানলেও তোকে আমি আমার নিজের মেয়ে মানি ৷ তাই কোনো দরকার পরলে আমার কাছে চলে আসবি ৷”
“হুম আচ্ছা ৷ তুমি এদিকে এসো তো আর কত দাঁড়িয়ে থাকবে? বসো এখানে ৷”
তারপর নয়না মা আর আমি বসে বিভিন্ন গল্প জুড়ে দিলাম ৷
____________________
কালো রঙের হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরে একটা বিল্ডিংয়ের ভিতরের লিফ্টে উঠলো একজন ৷ তার মুখটা কালো রঙের মাস্ক দিয়ে ঢাকা ৷ সেই মাস্কের আড়ালে তাকে চেনা যাচ্ছে না ৷ লিফ্ট থামতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল ৷ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে খুব সাবধানে বিল্ডিংয়ের ছাদের দিকে চলে গেলো ৷ বেশ কয়েকটা কালো পোশাক পরা ছেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ছাদের একদম মাঝখানে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে মায়া ৷ কম পাওয়ারের ঘুমের ইনজ্যাকশানের কারণে ঘুমে বারবার নেতিয়ে পরছে ও ৷ একটুপর সেই হুডিওয়ালা লোকটি ছাদের মধ্যে প্রবেশ করলো ৷ সে সোজা গিয়ে বসলো মায়ার সামনে রাখা চেয়ারে ৷
মায়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে ধরলো সে ৷ মায়া আবছা আবছা চোখে লোকটিকে দেখার চেষ্টা করেও বুঝতে পারলো না ৷ তবুও কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,,,
“ক…কে আপনি? ক…কেন অ…আটকে রেখে…ছেন আমা…কে? ছ…ছেড়ে দিন প্লি…জ!”
লোকটা নিজের হাত দিয়ে নিজের মাথায় স্লাইড করতে করতে গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,,,,,,,,,
“ভুলে গেলে আমাকে এতো তাড়াতাড়ি? কিন্তু এতো সহজে তো আমার থেকে ছাড়া পাওয়া সম্ভব না সুইটহার্ট ৷”
“কেন এ…রকম করছেন? আ…আমি চিনি না আ…আপনাকে ৷ ক…কে আপনি…”
বলতে বলতেই মায়ার চোখ লেগে এলো ৷ লোকটি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“ওকে নিয়ে যাও এখান থেকে ৷ কেউ যেনো খুঁজে না পায় কোনো ভাবে ৷ সাবধানে যাবে ৷ কেউ ওকে দেখে ফেললে তোমাদের কি অবস্থা করবো সেটা আর বললাম না ৷ আর ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয় ৷ বেশি কিছু বললে অজ্ঞান করে রেখে দিবা ৷ গট ইট?”
সবাই তার কথায় মাথা নাড়ালো ৷ লোকটি একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো ৷
___________________
বিকালবেলা ছাদের দোলনায় বসে আছি আমি ৷ নয়না মা কিছুক্ষন আগেই চলে গেছেন ৷ আমি বসে বসে মায়া আপুর কথা ভাবছি ৷ যেই একটা ক্লু পেয়েছিলাম সেটাও হাত ছাড়া হয়ে গেল ৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনের স্ক্রিনে তুহিনের নাম দেখে আরো বিরক্ত লাগলো ৷ এই একমাসে ওনার সাথেও একবারও কথা হয় নি ৷ ফোন কেটে দিলে একটা ম্যাসেজ আসলো ৷ ম্যাসেজটা এরকম,,,,,,”শ্রেয়া প্লিজ ফোনটা আজ অন্তত তুলো ৷ মায়ার ব্যাপারে কথা আছে আমার ৷ শ্রেয়া প্লিজ ৷”
আমি আর কিছু না বলে কল ব্যাক করে বললাম,,,,,,,,,
“হুম বলুন ৷”
“শ্রেয়া দেখা করতে পারবে আমার সাথে? একটু ৷”
“আপনি আবার শুরু করেছেন?”
“দেখো ফোনে এতো কথা বলা সম্ভব না ৷ তাই দেখা করতে চেয়েছি ৷ কথাটা কিন্তু মায়াকে নিয়ে ৷”
“যা বলার এখন বলুন ৷ দেখা করা সম্ভব না আমার পক্ষে ৷”
ওপাশ একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলাম আমি ৷ কিছুক্ষন চুপ থেকে তুহিন বলে উঠলেন,,,,,,,,,
“মায়াকে দেখেছি আজ আমি ৷”
“কিইই?”
“হুম একটা গাড়িতে দেখেছি আমি ওকে ৷”
“গাড়িটার পিছু নিয়েছিলেন?”
“হুম ৷ কিন্তু কিছুটা পথ যেতেই অনেকগুলা গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে ফেলি আমি ৷ তাই আর ধরতে পারি নি ৷ কিন্তু গাড়ির নাম্বারটা আগেই লিখে রেখেছিলাম ৷”
“তো এখন কি করা যাবে?”
“গাড়ির নাম্বারটা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে ৷ যে দেখবে সেই-ই যেন আমাদের ইনফর্ম করে সেটা বলে দিতে হবে ৷ তাহলে মায়াকে খোঁজা সহজ হবে ৷”
“কিন্তু তাতে তো ওরা টের পেয়ে যাবে যারা আপুকে আটকে রেখেছে ৷”
“হুম আমি জানি সেটা ৷ একটু রিস্ক নিতেই হবে আমাদের ৷ শেষ রাস্তাটা অন্তত কাজে লাগাতে হবে ৷”
“ওকে আপনি তাহলে আপনার মতো করে খোঁজার ব্যবস্থা করুন ৷ ওই গাড়ির নাম্বারটা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিন ৷ আমি আব্বুর সঙ্গে কথা বলে কয়েকটা লোকের ব্যবস্থা করছি ৷ তাহলে খোঁজাটা সুবিধা হবে ৷”
“হুম আচ্ছা তাহলে রাখি এখন ৷”
“থ্যাঙ্কিউ!”
“কেন?”
“আমাকে হেল্প করার জন্য ৷”
তুহিন মনে মনে হাসলো তারপর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিয়ে শ্রেয়ার কথা অনুযায়ী কাজ করতে লাগলো ৷ এদিকে শ্রেয়া ছাদ থেকে নেমে সোজা ওর বাবার কাছে চলে গেল ৷ সবকিছু খুলে বললো তাকে ৷ কিন্তু ওর বাবার শ্রেয়ার কথাগুলো বিশ্বাস হলো না ৷ তবুও মেয়ের কথায় লোকজন ব্যবস্থা করে মায়াকে খোঁজার জন্য পাঠিয়ে দিলেন ৷
সন্ধ্যা হয়ে গেছে ৷ সূর্য প্রায় ডুবে গেছে ৷ শুধু সূর্যাস্তের পরে লাল রক্তিম আকাশটা রয়ে গেছে ৷ সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে শ্রেয়া ৷ হঠাৎ কারো ডাকের শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো ও ৷ নিচে তাকিয়ে দেখে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে ৷ চাঁপা স্বরে ও বললো,,,,,,,,,,
“আপনি এখানে কি করছেন? তাও বাড়ির বাহিরে এভাবে ৷ বাড়ির ভিতরে আসেন ৷”
তুহিন নিচ থেকে হালকা চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,
“মায়ার খোঁজ পেয়েছি শ্রেয়া তাড়াতাড়ি বাইরে এসো ৷”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম তুহিনের দিকে ৷ কিছুক্ষনের মাঝেই এতো সহজে খোঁজ পেয়ে গেল? আব্বু জানলে আপুকে খুঁজতে যেতে দিবে না কখনোই তাও একা একা ৷ না জানিয়েই যেতে হবে আমাকে ৷ কিন্তু আশেপাশে তো অন্ধকার হয়ে আসছে ৷ না আর দেরি করা চলবে না ৷ এমনিতেই মায়া আপু নিখোঁজ এক মাস হয়ে গেছে ৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে ওকে ৷ তাই আমিও কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম তুহিনের সাথে ৷ কাউকে বলে আসিনি তবে ফোন করলে বলে দিব ৷
একটা পুরাতন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তুহিন ৷ বাড়িটা বেশ পুরাতন ৷ বাড়ির আশেপাশে শেওলা পরে আছে ৷ দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে এর কোনো যত্ন নেয়া হয় নি ৷ রাত হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বাড়িটা একটু হলেও দেখতে পারছি আমি ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই একটা কালো রঙের গাড়ি দেখতে পেলাম ৷ তুহিন বললো এটা নাকি সেই-ই গাড়িটাই ৷ এই গাড়িটা কোথায় দেখেছে এটা নাকি ওকে একজন জানিয়েছে ৷ কথাটা কি আদো সত্যি নাকি মিথ্যা জানা নেই আমার ৷
বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা ৷ অাশেপাশে হালকা করে চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ হঠাৎ একটা গুলির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলাম আমি ৷ তুহিন আমাকে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে আসলেন ৷ গুলির শব্দটা বাড়ির ভিতর থেকে পেয়েছি আমি ৷ কারো পায়ের আওয়াজও পেয়েছি ৷ মনে হচ্ছে কেউ দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে ৷ কিছুক্ষন পর ওই বাড়ি থেকে দুইজনের মতো কেউ সেখান থেকে বের হলো ৷ তাদের দেখে বেশ চেনা চেনা লাগছিল আমার ৷ কিন্তু তাদের মুখটা ভালো করে দেখতে পারি নি আমি ৷
তাদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ধরে ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠলো ৷ স্পষ্ট মায়া আপুকে দেখতে পেলাম আমি ৷ কিন্তু তার পাশের লোকটাকে দেখতে পেলাম না ৷ আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই তুহিন আমার হাত চেপে ধরে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো ৷ লোকটি আপুকে গাড়িতে বসিয়ে কিছু একটা মনে হতেই বাড়ির দিকে পিছন ফিরে তাকালো ৷ লাইটের হালকা আলোয় তার চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো আমার কাছে ৷ তাকে দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম আমি ৷ সে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ৷
#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১০
#অদ্রিতা_জান্নাত
“তুহিন তাড়াতাড়ি চলুন ওই গাড়িটাকে ফলো করতে হবে আমাদের ৷”
“কিন্তু শ্রেয়া…”
“কোনো কিন্তু না তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ ৷”
“আচ্ছা চলো ৷”
আমি আর তুহিন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তুহিন ওই গাড়িটার পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন ৷ অনেকক্ষন পর ওই গাড়িটা থামলে তুহিনও কিছুটা দূরে গাড়ি থামালেন ৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ওই গাড়িটার কাছে চলে গেলাম ৷ গাড়ির ভিতরে চেক করেও কাউকে পেলাম না ৷ সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম ৷ এটা তো অরূপের বাড়ি ৷ তাহলে গাড়িটা অরূপের বাড়ির সামনে কেন? অরূপ যদি মায়া আপুকে কিডন্যাপ করে থাকেন তাহলে তো উনি আপুকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন ৷ নিজের বাড়ি কেন নিয়ে আসবেন? কিছু বুঝতে পারছি না উফ!
পাশ থেকে তুহিন বলে উঠলো,,,,,,,,
“বাড়িটার ভিতরে চলো!”
বাড়ির ভিতরে আজ অামাকে সবকিছু জানতে যেতেই হবে ৷ মায়া আপু আর অরূপ এক সাথে ওই বাড়ি কি করছিল? হ্যাঁ ওই বাড়িটা থেকে অরূপই আপুকে বের করেছিল ৷ ওনাকে চিনতে ভুল হয় নি আমার ৷ মনে সাহস নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম ৷ সদর দরজা খোলা দেখে অবাক হলাম ৷ ভিতরে যেতেই অরূপ আর মায়া আপুর সামনে পরলাম ৷ বাড়ির সবাইও আছে এখানে ৷ অরূপ আমাকে দেখে তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,,,,,,,,
“জানতাম তুমি আজ আসবে এখানে ৷”
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,
“মানে?”
“মানেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো ৷ মায়াকে এতোদিন আটকে রেখে কি লাভ হলো? সেই-ই তো ওকে খুঁজে বের করলাম আমি ৷ আফসুস তোমার সব প্ল্যান শেষ হয়ে গেল ৷”
“আমি বুঝতে পারছি না কিছু ৷ আপনি কি বলছেন ৷”
“বুঝতে পারছো না? নাকি না বোঝার ভান করছো? আর কত সাধু সেজে থাকবে? মায়াকে এতোদিন আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেও শান্তি পাও নি?”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অরূপের দিকে ৷ মায়া আপুর দিকে তাকিয়ে ওকে ধরে বলে উঠলাম,,,,,,,,,
“আপু? তুই তো জানিস আমি তোকে আটকিয়ে রাখি নি ৷ তাহলে কেন বলছিস না কিছু? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো?”
“লোভে!”
হাত ছেড়ে দিয়ে হালকা পিছিয়ে দাঁড়ালাম আমি ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,
“ল…লোভে? আপু এ…সব কি বলছিস? আ…আমি কেন এরকম ক…করবো?”
“সেটা তো তুই জানিস ৷ এতো দিন আমাকে আটকে রেখে এখন নাটক করছিস?”
“তুই কি বলছিস এসব? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো? আমি…”
অরূপ আমার কথার মাঝেই বলে উঠলো,,,,,,,
“তোমাকে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না ৷ বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে ৷”
“বিশ্বাস করুন আমি আপুকে সরাই নি ৷ ওকে আটকে রাখি নি ৷ এই তুই মিথ্যা কেন বলছিস? তুই কেন সত্যিটা বলছিস না সবাইকে? মায়া আপু বল না প্লিজ৷”
মায়া আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,
“বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই ৷”
সঙ্গে সঙ্গে মায়ার গালে একটা থাপ্পর পরলো ৷ সবাই অবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে ৷ শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,
“হ্যাঁ আমার চরিত্রে দোষ আছে ৷ আর তোর চরিত্রে কোনো খুঁত নেই তাই না? তুই তো অনেক চরিত্রবান ৷ একটা মেয়ের ব্যাপারে এসব বলার আগে নিজের চরিত্রটা যাচাই করে দেখ ৷”
অরূপ শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে ওকে সামনে ঘুরিয়ে ওর গালে থাপ্পর দিতে গেলেই তুহিন অরূপের হাত ধরে ফেললো ৷ অরূপ এক টানে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে শ্রেয়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,,,,
“দেখো এই মেয়ের কত গুন ৷ একটা ছেলে দিয়ে হয় না ৷ আরো একটাকে ধরে এনেছে ৷”
তুহিন চেঁচিয়ে উঠলো ৷ অরূপ হাত উঁচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,
“গলা নামিয়ে ৷”
তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,
“যদি মান সম্মান বা লজ্জা বলতে কিছু থাকে তাহলে চলে যাও এখান থেকে ৷”
তৎক্ষনাৎ শ্রেয়া দৌঁড়ে এসে অরূপের কলার চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“কার মান সম্মান বা লজ্জা নেই সেটা ঠিক একদিন জানবেন আপনি ৷”
বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অরূপকে ৷ এতে অরূপ কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ শ্রেয়া মায়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,
“স্বার্থপর তুই ৷ তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ আজ ৷ না তুই আমার বোন কখনো ছিলি না তুই আছিস ৷ তোর কাজের ফল পাবি তুই ৷ আর নিজেকেও নির্দোষ প্রমান করবো আমি ৷”
বলেই শ্রেয়া কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ সবাইকে এক নজর দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“আজ আমার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে এখানে ৷ একদিন আপনার চরিত্র নিয়েও কথা উঠবে অরূপ ৷ আপনার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডের চরিত্র আগে যাচাই করে দেখুন ৷ এই সব কিছুর পিছনে কার হাত আছে আর সে কেন করেছে সেটা আমি এই দুই মাসের মধ্যেই খুঁজে বের করবো ৷ ইট’স মাই প্রমিজ ৷ কে কতটা ভালো তা প্রমান করে দিব ৷ আর আজকের দিনটাও মনে থাকবে আমার ৷ নিজের ভুল কখনো বুঝতে পারলে এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে ফিরে আসার চেষ্টাও করবেন না ৷ আর কখনোই আমি মেনে নিবো না আপনাকে ৷ আপনার জন্য আমার মনে যতটুকু ঘৃনা ছিল আজ তা দ্বি গুন হয়ে গেল ৷ আর যতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল সবটা শেষ হয়ে গেল আজ ৷ আমার জীবনের সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যাক্তিটি হচ্ছেন আপনি ৷”
কেউ কিছু বললো না সবাই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ৷ শ্রেয়া নিজের চোখ মুছে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওর পিছু পিছু তুহিনও ছুটে চলে গেল ৷
এদিকে অরূপের মা অরূপের সামনে এসে ঠাস করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো ৷ অরূপ গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকালো ওর মায়ের দিকে ৷ ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“তোকে আমি মানুষ করতে পারলাম না ৷ ছিহ তুই আমার ছেলে? তোকে আমি এই মানুষ করেছি ৷ এই দিনটাও দেখতে হলো আমার? গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলি না আমাকে ৷ তাহলে আরো শান্তি পেতাম ৷”
বলেই সে রাগে সেখান থেকে চলে গেলো ৷ অরূপের বাবা গম্ভীর সুরে বলতে লাগলো,,,,,,
“তোর সাথে আমার সম্পর্কও শেষ আজ ৷ পারলে বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ নাহলে মায়াকে নিয়ে বাড়ির এক কোনায় পরে থাক ৷ আমাদের সাথে কোনো কথা বলতে আসলে আমরাই বেরিয়ে যাবো এই বাড়ি থেকে ৷”
ওনার কথার মাঝেই আশা বলে উঠলো,,,,,,
“তুই খুব ভুল করলি রে ভাইয়া ৷ সত্যি মিথ্যা যাচাই করে নেয়ার দরকার ছিল আগে তোর ৷ এভাবে ভাবিকে না বললেও পারতি ৷ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই৷”
বলেই আশা ওর বাবাকে নিয়ে চলে গেলো ৷ অরূপ রাগে টেবিলে একটা লাত্থি মেরে হনহনিয়ে উপরে চলে গেল ৷ মায়া ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷ ও নিজেই জানে না ওকে কে আটকে রেখেছিল ৷ কিন্তু শ্রেয়ার দোষ না দিলে অরূপ ভুল বুঝতো মায়াকে ৷ তাই ও এরকমটা বললো ৷ আপাততো এসব নিয়ে না ভেবে ও রেস্ট নিতে একটা রুমে চলে গেল ৷
______________________
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি ৷ অরূপের বলা কথা গুলো মাথায় বাজছে বারবার ৷ ওনার জন্য আজকের পর থেকে আমার মনের সব অনুভূতি গুলো শেষ হয়ে গেল ৷ নিমিষের মধ্যেই আমার ভালোবাসাটা ঘৃনায় পরিণত হয়ে গেল ৷ আচ্ছা এরকম হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? মায়া আপু কেন এরকম করলো? নিজের সবটুকু দিয়েই তো তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি তবুও সেই দোষী হতে হলো আমাকেই? আসলেই কারো ভালো করতে নেই ৷ কারো ভালো চাইতেও নেই ৷ হঠাৎ তুহিন আমার হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,,,,,,,,
“শ্রেয়া প্লিজ নিজেকে সামলাও ৷ তোমার লড়াই বাকি আছে এখনো ৷ সব সত্যিটা সামনে আনতে হবে তোমায় ৷ সবার প্রশ্নের সব জবাব দিতে হবে ৷ কিন্তু তার জন্য তোমাকে শক্ত হতে হবে ৷ এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না শ্রেয়া ৷”
নিজের চোখ মুছে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস টেনে নিলাম ভিতরে ৷ তারপর চোখ খুলে হালকা হেসে বললাম,,,,,,,,
“হুম ঠিক বলেছেন ৷ আমি কেন অন্যের জন্য শুধু শুধু কষ্ট পাবো ৷ যার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই ৷ কষ্ট পাওয়ার দিন শেষ ৷ কষ্ট দেয়ার দিন শুরু ৷ অরূপকে আমি আমার মূল্য বুঝাবো ৷ মায়া আপু নাহ… মায়া ৷ ওর সঙ্গে বোনের পরিচয় মরে গেছে আজ ৷ মায়ার সত্যিটা সামনে আনবো আমি ৷ মায়ার মায়াজাল থেকে সবাইকে বের করবো আমি ৷ সবার সব সঠিক জবাবও দিব ৷ কিন্তু…”
“কিন্তু কি?”
“আপনার সাহায্য লাগবে আমার তুহিন ৷”
তুহিন মুচকি হেসে বললেন,,,,,,,,,
“আমি সবসময় তৈরি আছি তোমার জন্য ৷”
আমিও হাসলাম হালকা ৷ তারপর বললাম,,,,,,,,,
“বাড়িতে যাই আগে ৷ এসব বিষয় নিয়ে কাল কথা বলবো আপনার সাথে ৷”
“আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি গাড়িটা নিয়ে আসছি৷”
আমি মাথা নাড়াতেই তুহিন চলে গেলেন ৷ গাড়ি নিয়ে আসলে আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তারপর উনি আমাকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেলেন ৷ বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম আমি ৷ রুমে এসে অরূপের সব জিনিস বের করলাম প্রত্যেকটা ড্রয়ার থেকে ৷ অাগে কিছু কিছু জিনিস অরূপ গিফ্ট দিয়েছিলেন আমাকে ৷ আবার কিছু কিছু জিনিস নিজে চেয়েও নিয়েছিলাম ৷ অরূপের দেয়া একটা কাচের শোপিস হাতে নিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলাম ৷ সেটা ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো ৷ ওনার সব ছবি গুলো কুচিকুচি করে ছিড়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম ৷ আর যা যা আছে সব কিছু একই ভাবে নষ্ট করে ফেললাম ৷ নিজের মনের থেকে যেভাবে মুছে ফেলবো ওনাকে ঠিক সেভাবেই নিজের জীবন থেকেও মুছে ফেলবো ৷ কোনো কিছুর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না আর ৷ অাজ থেকে অরূপ নামক বিষাক্ত চ্যাপ্টার ক্লোজ!”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
(গত পর্বে যারা অরূপ আর আকাশ বলে চিল্লিয়েছেন তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ৷ অন্তত নিজের মতামতটা প্রকাশ করার জন্য ৷ আবার অনেকেই বলেছেন এক্সাট্রা পর্ব দিতে আবার আজকের পর্বটাও হয়তো ছোট হয়ে গিয়েছে তার জন্য সরি ৷ লেখার সময় পাই নি আজ তবুও কোনো রকমে লিখেছি ৷ এক্সট্রা পর্ব দেয়া আজও সম্ভব না আমার পক্ষে)
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
(কে হতে পারে? দেখি কয়জন বলতে পারে😪)