#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫
শরীফ আমার কোলে মাথা দিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।আর আমার ইচ্ছে করছে বজ্জাত বেটার চুলগুলো টেনে ছিড়তে।কোন দুঃখে যে আজ ক্রিকেট খেলতে গেলাম,ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার।
❤ফ্ল্যাশব্যাক❤
আমরা সবাই তাকিয়ে দেখি শরীফ মাথায় হাত দিয়ে অর বেস্ট ফ্রেন্ড হৃদয় ভাইয়ার উপর ডলে পড়েছে,আর হৃদয় ভাইয়া রুমাল দিয়ে শরীফের কপালে ধরে রেখেছে।মনে হচ্ছে কেটে গেছে তাই রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য এই পদ্ধতি,আমার সেটা দেখার পর এক মুহূর্তের জন্য পৃথিবীটা থমকে গেছিল।আমি কিছু না ভেবেই হাতের ব্যাটটা ফেলে দিয়ে শরীফের কাছে দৌড়ে যাই।আর উত্তেজিত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে থাকি,,,
“কী হয়েছে তোমার?এই কথা বলো তুমি,বলো আমাকে কী হয়েছে তোমার?চোখ কেন খুলছো না তুমি?তুমি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?”
“সাদিয়া তুমি শান্ত হও,শরীফের মাথায় বলটা খুব জোড়েই লেগেছে তাই জ্ঞান হারিয়েছে।” (হৃদয়)
“দেখি কতটা কেটে গেছে?”
আমি উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলে শরীফের কপাল থেকে রুমালটা নামাতে গেলেই হৃদয় ভাইয়া বাঁধা দেয়,,,
“আরে ধরো না,শরীফকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।তুমিও এসো আমার সাথে।লেখিকা-সাদিয়া সিদ্দিক মিম”
কথাটা বলে আমাকে কোন সুযোগ না দিয়েই উনি শরীফকে পাঁজা কোলে করে গাড়িতে উঠায়।আমিও তার পিছুপিছু গেলে তাবাসসুম বলে উঠে,,,
“তুই কী উনাকে চিনিস?”
“আরে এটাই ত অর হাসবেন্ড,আর এখন এসব কথা বাদ দে আর চল হসপিটালে।মনে হচ্ছে অনেকটা কেটে গেছে তাই ত ওমন জ্ঞান হারাল।” (পান্না)
আমি এবার কেঁদেই দিলাম আর কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলাম,,,
“প্লিজ তাড়াতাড়ি চল,যত দেরি হবে ততই ক্ষতি।”
“হুম চল আমরাও আসছি।” (পান্না)
“তরা যা,আমার বাড়িতে যেতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।আমার মা এমনিতেই বকাবকি করে পড়াশোনার করার জন্য।ত এখন যেতে দেরি হলে আবার অশান্তি হবে,তুই প্লিজ কিছু মনে করিস না।আর চিন্তা করিস না ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।আমি ফোন দিলে ধরে জানাস।” (তামান্না)
আমরা সবাই মাথা নেড়ে সায় জানালে তামান্না চলে যায়।আর আমরা সবাই মিলে গাড়িতে উঠলাম,হৃদয় ভাইয়া ড্রাইভ করছে,উনার পাশে তাবাসসুম,আর পিছনে জানালার পাশের সিটে শরীফের মাথাটা সিটে এলিয়ে দিয়েছে।আমি শরীফের পাশে বসে অর মাথাটা আমার কাঁধে টেনে নিলাম,একহাতে অর মাথা আগলে ধরেছি আরেক হাতে অর হাত আকড়ে রেখেছি।যাতে পড়ে না যায়,আর আমার পাশে পান্না বসেছে।আমি শরীফের মাথার রুমালে হাত দিলে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠল,,,
“রুমালটা সরিও না,ওটা চেপে ধরে রাখো যাতে রক্ত না পড়ে।”
আমিও উনার কথায় সায় জানিয়ে রুমালটা ধরে রাখলাম।অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে,মনে মনে আল্লাহর কাছে বলছি,,,শরীফের কিছু যাতে না হয়,ও যাতে সুস্থ হয়ে উঠে আর একটু পরপর শরীফের দিকে তাকাচ্ছি।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে,চুলগুলো উসকো খুসকো,মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো কেমন বড় হয়ে গেছে।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্না খোঁচা দিয়ে বলে উঠল,,,
“এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে তোর তাকানোতে উনি ভালো হয়ে উঠবে।”
বলেই পান্না ফিক করে হেঁসে উঠল,পান্নার দিকে চোখ কটমট করে তাবাসসুম তাকাতেই পান্না চুপ হয়ে গেলো।আমি ওদের কথা পাত্তা না দিয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
“আর কতক্ষণ লাগবে ভাইয়া?”
“এইত এসে পড়েছি।”
বলেই গাড়িটা থামিয়ে ভাইয়া দৌড়ে ভিতরে গিয়ে কয়েকজনকে ডেকে এনে শরীফকে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে গেলো,আমরাও দৌড়ে তাদের পিছন পিছন যাচ্ছি।শরীফকে একটা কেবিনে নিল,আমি তাদের পিছন পিছন যেতে চাইলে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠল,,,
“রিসিপশনে কিছু কাজ আছে তোমরা প্লিজ সেটা করো আমি এদিকটা দেখছি।”
“আপনি খুব আজব একটা লোক,অর হাসবেন্ডের এই অবস্থা অর মনের অবস্থা এখন ঠিক কেমন আপনি কী বুঝতে পারছেন?লেখিকাঃসাদিয়া সিদ্দিক মিম কোথায় আপনি যাবেন তা না করে ওকে বলছেন।”(পান্না)
” আরে আমি সেটা বুঝতে পারছি বলেই ত বললাম যেতে,নয়ত সাদিয়া এখানে বসে কান্নাকাটি করবে আর ডাক্তারদের কাজ করতে সমস্যা হবে।”(হৃদয়)
“হে উনি ঠিকই বলেছে চল এখন।” (তাবাসসুম)
আমি যেতে চাইলাম না ওদের সাথে,কিন্তু অরা আমাকে জোড় করেই নিয়ে এলো।কিছুক্ষণ পর আমরা সকল কাজ সেরে কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠে,,,
“সাদিয়া তুমি এবার শরীফের কাছে যাও,শরীফের জ্ঞান ফিরেছে।”
কথাটা শুনে যেন দেহে প্রান ফিরে এল,আমি দৌড়ে কেবিনে ডুকে যাই।পান্নারা ডুকতে গেলে হৃদয় ভাইয়া আটকে দিয়ে বলে উঠে,,,
“আপনারা কী কাবাবে হাড্ডি হতে যেতে চাইছেন?ওদের এখন একটু একা থাকতে দেয়া উচিত।”
“কাবাবে হাড্ডি হব না এলাচি হব সেটা কী আপনি বলবেন নাকি,তখন থেকে দেখে যাচ্ছি সবকিছুতে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।আমার ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না,সত্যি করে বলুন ত আপনি ঠিক কী করতে চাইছেন।”
সন্দেহ করে পান্না বলল,পান্নার কথা শুনে হৃদয় কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো,কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল,,,
” আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন,আপনার পাশেও ত একজন রয়েছে সে ত এত কিছু বলছে না।এক নাম্বার বাঁচাল মেয়ে আপনি।”
“কীহ,আমি বাঁচাল?তুই বাঁচাল,তোর বউ বাচাঁল,তোর চোদ্দ গুষ্ঠী বাঁচাল।”(রেগে পান্না বলে উঠল)
“এই মেয়ে তুমি আমাকে তুই তুকারি করে কেন বলছো?আরেকবার তুই করে বলে দেখো পাবনা মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসব।আর একদম গোষ্ঠী নিয়ে কথা বলবে না বলে দিলাম,আরেকবার গোষ্ঠী তুলে কথা বললে মুখ একদম সেলাই করে দিব।”
তাবাসসুম এসব দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠল,,,
“বইন চুপ কর,হসপিটালে এত চিল্লাপাল্লা করিস না।তবে কাবাবের হাড্ডি,এলাচি সব কয়টাকে উস্টা মাইরা বের করব।প্লিজ চুপ কর,আর আপনিও চুপ করুন প্লিজ।”
তাবাসসুমের কথা শুনে দুইজন দুইজনকে ভেংচি কেটে দুইদিকে চলে গেলো।
________________________________________
আমি চোখের পানি মুছে নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে কাঁপা কাঁপা পায়ে কেবিনে ঢুকছি,শরীফ আধশোয়া হয়ে বসে আছে।মাথায় ব্যান্ডেজ করা,শরীফের দৃষ্টি আমার উপরেই।লেখিকা-সাদিয়া সিদ্দিক মিম আমি শরীফের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই,ঐ চোখের দিকে তাকালেই আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারব না।আমি শরীফের একটু কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালে শরীফ বলে উঠল,,,
“এখানে আসো।”
আমিও ভালো মেয়ের মত শরীফের পাশে গিয়ে দাঁড়াই,তখন শরীফ আমার হাত ধরে টেনে শরীফের পাশে বসায়।আমি দূরে গিয়ে বসতে চাইলে শরীফ গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,,
“একদম দূরে যাবে না,এখানেই বসো।”
আমি দূরে গেলাম না,অর পাশেই বসলাম।তারপর অর হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নরম গলায় বলে উঠলাম,,,
“এখন কেমন আছেন?”
শরীফ কোন উওর দিল না,এক ধ্যানে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে,আমি হাতটা সরালে শরীফ আমার দিকে তাকায় তখন আমি আবারও বলে উঠলাম,,,
“জিজ্ঞেস করছি কেমন আছেন?”
শরীফ এবার রেগে বলে উঠল,,,
“বল দিয়ে আঘাত করে এখন বলো কেমন আছি?তোমার নামে আমি কেস করব।”
আমি হালকা ভয়ে পেয়ে অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে বলে উঠলাম,,
“I am so sorry,,,আমি আপনাকে দেখি নি,আর আমি ইচ্ছে করে মারি নি।”
“Sorry দিয়ে কাজ হবে না,তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।”
শাস্তি পাওয়ার কথাটা শুনে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,তারপর নিজেকে সামলে শরীফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,,,
“কককী শাস্তি?”
“আমি একটু ঘুমাব,,,”
শরীফকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি এক লাফে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে উঠলাম,,,
“বেশ ত ঘুমান না,আমরা কেউ আপনাকে বিরক্ত করব না।আর কাউকে বিরক্ত করতেও দিব না,আমি বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছি।আপনি ঘুমান,এখন আমি আসি।”
কথাটা বলে এক পা বাড়াতে নিলেই শরীফ ধমকে বলে উঠল,,,
“একটা থাপ্পড় লাগাব,আমার পুরো কথা না শুনেই ধেইধেই করে উনি বাইরে যাচ্ছে,চুপচাপ এখানে বসো।”
আমি বাচ্চা ফেস করে শরীফের দিকে তাকালাম যাতে কোন শাস্তি না দেয় কিন্তু আমার কপাল কী এত ভালো,আবারও ধমকে বলে উঠল,,,
“বসতে বলেছি আমি?”
আমি কেপেঁ উঠলাম,তারপর গুটিগুটি পায়ে শরীফের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলাম সেটা দেখে শরীফ টেনে এনে অর পাশে বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল,ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে আমার বুঝতে পাক্কা দুই মিনিট লেগেছে।বুঝতে পারার সাথেসাথে শরীফকে সরাতে চাইলাম,,,
“কী করছেন আপনি?ছাড়ুন আমাকে।”
শরীফ ছাড়ল না,শরীফ আরো আকড়ে ধরে আমার পেটে মুখ গুজে নেয় আমি পুরো ফ্রিজড হয়ে আছি।
“একটা কথা বলবে ত পুলিশের হাতে তুলে দিব,মার্ডার কেসে।আমি ঘুমাব আর আমি যতক্ষণ ঘুমাব ততক্ষণ তুমি এখানে থেকে আমাকে পাহারা দিবে।এটাই তোমার শাস্তি,এই শাস্তি মেনে নিলে ভালো নয়ত পুলিশের হাতে তুলে দিব।আর হে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোমাকে এখানেই পাই নয়ত জেলের আসামী বানাব।”
তারপর আমি আর কিছু বললাম না,গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে আছি।আর ক্রিকেট খেলার গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।
❤ফ্ল্যাসব্যাক এন্ড❤
#চলবে…
(বিদ্রঃ অনেকেই বলেছে শরীফের মাথায় বল পড়েছে,তাদের সন্দহই ঠিক হয়েছে🥰।)