ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ১৫+১৬

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_১৫
#M_Sonali

অফিসের জন্য রেডি হয়ে চাঁদনীকে নিয়ে বাসা থেকে বাইরে বের হতেই শ্রাবণী দেখল, গেটের সামনে শ্রাবণ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি ফুটে উঠলো শ্রাবণীর মুখে। কিন্তু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল চাঁদনী। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওদের কাছে এগিয়ে এসে শ্রাবণ বলল,

— চাঁদনী কে অফিসে নিয়ে যাচ্ছো বুঝি? তোমাকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না আমি এই রাস্তা দিয়ে’ই যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম চাঁদনীকে এখান থেকে পিক করে নেই। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি তুমি তোমার কাজে যাও।

শ্রাবণের কথা শুনে মিষ্টি একটা হাসি দিল শ্রাবণী। তারপর বলল,

— ধন্যবাদ শ্রাবণ অনেকটাই উপকার করলে তুমি। নইলে আমার অনেক দেরি হয়ে যেত। আসলে একটা জায়গায় যেতে হবে খুব জরুরি দরকারে। আচ্ছা তুমি ওকে সাথে করে নিয়ে যাও। আমি তাহলে আসছি।

কথাটা বলেই চাঁদনীর কোন কথার অপেক্ষা না করে সেখান থেকে দ্রুত কেটে পরলো শ্রাবণী। চাঁদনী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে চুপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে শ্রাবণ বললো,

— অফিসে যাওয়ার ইচ্ছা নেই নাকি মিস চাঁদনী?

ওর কথার উত্তরে ভ্রু কুঁচকে রাগি ভাবে ওর দিকে তাকাল চাঁদনী। শ্রাবণ মুচকি হেসে দিয়ে বললো,

— না মানে আসলে, তুমি যেভাবে এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো, সামনে এগোচ্ছ না! তাই ভাবলাম হয়তো অফিসে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আচ্ছা চলো এমনিতেই অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে। আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি।

কথাটা বলেই গাড়ির দিকে হাঁটা দিল শ্রাবণ।

কিন্তু গাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়ে দেখল চাঁদনী এখনো আসেনি। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল সে একই জায়গায় আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার রাগি চোখে ওর দিকে তাকাল শ্রাবণ। ও আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তুরতুর করে এসে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে গাড়িতে উঠতে নিল। তখন’ই ওকে থামিয়ে দিয়ে শ্রাবন বলে উঠল,

— এটা কি করছো তুমি?

— দেখতে পাচ্ছেন না আমি গাড়িতে উঠছি! আপনি’ই তো বললেন আপনার সাথে অফিস যাওয়ার জন্য।

— হ্যাঁ সেটা আমি ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তোমার কি আমাকে দেখে কোন ড্রাইভার মনে হচ্ছে? যে তুমি সামনে বসা বাদ দিয়ে পেছনে বসছো! তুমি যদি পেছনে থাকো তাহলে আমি সামনে বসে গাড়ি চালালে লোকে দেখলে আমাকে তোমার ড্রাইভার ভাববে। আমাকে কি তোমার ড্রাইভার বলে মনে হচ্ছে?

বেশ রাগী ভাবে কথাগুলো বলল শ্রাবণ। ওর কথা শুনে এবার কিছুক্ষণ চুপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো চাঁদনী। তারপর তরতর করে এসে সামনের সিটে বসে পড়ল। শ্রাবণও আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে গম্ভীর গলায় বলল,

— সিট বেল্ট টা লাগিয়ে নাও। নইলে আবার কোথাও এক্সিডেন্ট হলে পরে আমাকে দোষ দিবে। যে আমি তোমাকে এক্সিডেন্ট করিয়েছি।

কথাটি বলেই গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার জন্য তৈরি হলো শ্রাবণ। চাঁদনীও আর দেরি না করে দ্রুত সিটবেল্ট লাগানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কোনোভাবেই লাগাতে পারছে না। এর আগে কখনো লাগায় নি বলে ওর মাথাতেই আসছে না এটা কিভাবে লাগাতে হয়। ওকে এমন ছটফট করতে দেখে গাড়ি স্টার্ট না করে শ্রাবণ ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় তাচ্ছিল্য করে বলল,

— সামান্য সিটবেল্ট লাগাতে পারো না। আবার এমন ভাব করো যেন পুরো বাংলাদেশ উদ্ধার করে ফেলেছ।

কথাটা বলে নিজেই সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো।ওর কথা শুনে যেন শরীর জ্বলে উঠলো চাঁদনীর। মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে ওকে উল্টাপাল্টা গালি দিতে লাগলো। সেটা শ্রাবণের বুঝতে একটুও বাকি রইল না। কিন্তু মুখে কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল সে।

————————

বিকেল ৫ টা বেজে ৪৫ মিনিট,

সকালে অফিসে আসার পর থেকে শ্রাবণের সাথে একটা কথাও বলেনি চাঁদনী। সারাক্ষণ মুখ গোমরা করে রেখেছিল সে। রাগে যেন সারা শরীর জ্বলছিল তার। শ্রাবণকে একদমই সহ্য হচ্ছিলো না। ইচ্ছে করছিল ওকে ধরে সবগুলো চুল একটা একটা করে টেনে ছিড়তে। সেইসাথে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি মেরে একদম অবস্থা খারাপ করে দিতে। অফিসের বস হয়েছে তো কি হয়েছে চাঁদনী কি ওকে ভয় পায় নাকি।

মনের মাঝে এমন হাজারটা চিন্তা আসলেও মুখে কোন কিছুই প্রকাশ করল না চাঁদনী। চুপচাপ কাজ করতে লাগলো। কিন্তু ও সারাটা দিন বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করেছে যে শ্রাবণ কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। আর বারবারই এক রহস্যময় হাসি হাসছে। এটার কারণে আরো বেশি যেন রাগ হচ্ছে চাঁদনীর। কিন্তু কিছু বলতেও পারছেনা। কারন কিছু বলতে গেলে শ্রাবণ উল্টা ওকেই দোষ দেবে। এটাও খুব ভালো করেই জানে ও।

ছয়টা বাজতেই আর দেরি না করে অফিস থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো চাঁদনী। তখনই শ্রাবণ এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

— কোথায় যাচ্ছো?

— কোথায় যাচ্ছি দেখতে পারছেন না? আমার তো অফিস টাইম শেষ তাই বাসায় যাচ্ছি। রাস্তা ছাড়ুন স্যার!

— কিন্তু তুমি তো বাসায় যেতে পারবেনা চাঁদনী!

কথাটি বলেই একটি রহস্যময় হাসি দিল শ্রাবণ। ওর কথা শুনে এবার যেন আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলোনা চাঁদনী। দাঁত কিড়মিড় করে শ্রাবণের একদম কাছে এগিয়ে এসে বলল,

— আপনার সমস্যাটা কি? সেই সকাল থেকে দেখছি আপনি আমার পিছনে পড়ে আছেন। সারাটা দিন আড় চোখে তাকিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছেন। এখন আবার কী সমস্যা? আমার অফিসের টাইম শেষ, তাহলে আমি বাসায় যেতে পারবো না কেন? কি সমস্যা আপনার তাড়াতাড়ি বলুন!

— কুল চাঁদনী কুল। ভুলে যেও না তোমার বস। তাই আমার সাথে এভাবে কথা বলার অধিকার তোমার নেই। নিজের সীমানায় থেকে কথা বলো। আর শোনো তোমাকে আমি এখন যেতে দিচ্ছি না। তার কারণ শ্রাবণী আমার কাছে ফোন করেছিল। আর সে বলেছে, কোন একটা কারণে এখন তোমাকে হিতে আসতে পারবে না। তাই আমায় তোমায় নিয়ে রেখে আসতে বলেছে। তুমি দাঁড়াও আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।

— তার কোন দরকার নেই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার রাস্তা আমি নিজেই যেতে পারবো। আপনাকে কোন হেল্প করতে হবে না। আর তাছাড়া এখন রাস্তাঘাটে চলে চলে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই কোন অসুবিধা হবে না। ধন্যবাদ আপনাকে।

কথাটা বলেই বাইরে বের হওয়ার জন্য সামনের দিকে হাঁটা দিল চাঁদনি। ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে এবার যেন মুহূর্তেই অসম্ভব রেগে গেল শ্রাবণ। চাঁদনীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করে অসম্ভব রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলে উঠল,

— তোমাকে এক কথা একবার বললে কানে যায় না? নাকি কানের মধ্যে তুলে গুঁজে রেখেছো তুমি? বললাম না তুমি একা কোথাও যাবে না আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাব। আর একটা কথা বলবা তো এমন একটা থাপ্পর দেবো যে তিনদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে। কোনো ভাবেই জ্ঞান ফিরতে পারবে না। এখানে চুপচাপ দাঁড়াও আমি এখনই আসছি।

কথাটা বলে নিজের ডেস্কের কাছে চলে গেল শ্রাবণ। চাঁদনী ওর এমন ধমক খাওয়ার জন্য যেন মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ভয়ে এক প্রকার কেঁদে ফেলতে নিল ও। চোখ থেকে টপটপ করে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। অসম্ভব ভয় পেয়ে গেছে ও শ্রাবণের ধমকে। কিন্তু শ্রাবণ ফিরে আসার আগেই দ্রুত নিজের চোখদুটো মুছে নিল চাঁদনী। তারপর শ্রাবণ আসলে ওর পিছু পিছু গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। চোখ মুছলেও শ্রাবণের বুঝতে বাকি রইল না যে, চাঁদনী রান্না করেছে। তাই গাড়িতে উঠে বসে ওর সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— আই এম সরি চাঁদনী। তোমাকে এক কথা একবার বললে বুঝনা। তাইতো তোমার সাথে এমন বিহেভ করতে হলো। সরি তোমার সাথে এমনটা করতে চাই নি আমি। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই চাঁদ,,,।

ওর কথার কোন উত্তর দিল না চাঁদনী। সেভাবে জানালার বাইরে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইল। শ্রাবণ ও আর ওর সাথে বেশি কথা বলল না। সোজা ওকে নিয়ে বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো। বাসার সামনে গাড়ি থামতেই চাঁদনী আর অপেক্ষা না করে দ্রুত সিট বেল্ট টা খুলে দৌড়ে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল। শ্রাবণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি ছেড়ে সেখান থেকে সরে আসলো।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_১৬
#M_Sonali

চারিপাশে গভীর জঙ্গলে ঘেরা। কোন দিকে কোন জনমানবের চিহ্ন টুকুও নেই। গাছ-পালা গুলোকে দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন সবগুলোই মৃত্য। এখানে কোন প্রাণীর চিহ্নটুকুও নেই। কোন পশু পাখির একটুকু শব্দও শোনা যাচ্ছে না কোথাও থেকে। গাছপালাগুলো যেন একদম জমে আছে যার যার জায়গায়। একটা পাতাও নড়ছে না। এমন গভীর জঙ্গল হয়তো পৃথিবীতে আর কোন জায়গায় নেই। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা। সূর্য বা চাঁদের চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে। কখনো যদি চাঁদ ওঠে সেটার আলো হয়তো এখানে পড়বে না। এমন একটি জঙ্গলের একদম মাঝখানে একটা বিশাল বড় রাজ প্রাসাদের মতো প্রাসাদ। প্রাসাদের মাঝখানের একটি বড় রুমের মধ্যে বিছানার ওপর বধু সেজে বসে আছে চাঁদনী। পুরো রুম টাই কালো রংয়ের গোলাপফুল দিয়ে সাজানো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা কোন বাসর ঘর। আর চাঁদনীর সাজগোজ দেখে বোঝা যাচ্ছে ও বধু সেজে বসে আছে। একদম বেনারসি পড়ে নতুন বউয়ের মত দুই হাত ঘোমটা টেনে চুপ করে খাটের উপর বসে আছে সে। তবে তার মনের মধ্যে নানা রকমের ভয় এবং আতঙ্ক গ্রাস করে রেখেছে। সেটা তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ কোথা থেকে কিভাবে এখানে আসলো আর কে-ই বা তাকে নিয়ে এসেছে, কোনো কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না তার। তবে ও বুঝতে পারছে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। তবে ও কার অপেক্ষায় বসে আছে আর কে’ই বা ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে এটা যেন নিজেও জানেনা সে।

হঠাৎ খট করে দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠল চাঁদনী। ভয় যেন সেখানে জড়োসড়ো হয়ে গেল সে। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেল তার। সারা শরীর ভীষণ ভার আসলো। বুকের মাঝে দুরুদুরু শব্দ হতে লাগলো। মনে হচ্ছে এখনই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার সাথে। সে বুঝতেও পারছে না এসব কি হচ্ছে তার সাথে। সে তো নিজের রুমে ছিল তাহলে এখানে এরকম বেশে এলই বা কিভাবে? আবার এমন বধূর বেশে বসেই বা আছে কেনো? তার তো বিয়ে হয়নি। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দরজা ঠেলে কেউ একজন ওর কাছে চলে এসে ওর পাশে বসলো। তার মুখ দেখতে পাচ্ছেনা চাঁদনী। ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা বলে এখনো তার মুখটা দেখা হয়নি। হঠাৎ নিজের ডান হাতের ওপর অসম্ভব ঠান্ডা হাতের স্পর্শ অনুভব করল চাঁদনী। সাথে সাথে ভয়ে কেঁপে উঠল সে। যেনো মনে হচ্ছে কোনো মৃত ব্যাক্তি স্পর্শ করেছে তাকে। সে দ্রুত চেষ্টা করতে লাগলো সেই হাতের মধ্যে কে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু পারল না। বরং কেউ একজন বেশ গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

— কি হয়েছে চাঁদ! এভাবে আমার হাতের মধ্যে থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেওয়ার জন্য ছটফট করছে কেন? তুমি কি ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার স্বামী। আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে। এখন তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবে না।

লোকটির কথা শুনে যেন আরো বেশী ভয় পেয়ে গেল চাঁদনী। কাঁপা কাঁপা গলায় ঘোমটার নিচ থেকে বলে উঠলো,

— কে আপনি, আর এসব কি বলছেন? আমার তো এখনো বিয়ে হয়নি। তাহলে আপনি আমার স্বামী হবেন কিভাবে? প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন, আমি আমার বাসায় যাব। আমার ভীষণ ভয় করছে এখানে।

ওর কথার উত্তরে আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠল লোকটা। উনার হাসির আওয়াজ এতটাই ভয়ানক যে চাঁদনী এবার ভয়ে সেখানে জমে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেল। বুকের মধ্যে হার্ট বিট এত জোরে চলতে লাগল যে যখন তখন সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন অট্টহাসি হাসার পর লোকটি এবার হাসি অবস্থাতেই গম্ভির সুরে তাচ্ছিল্য করে বলে উঠল,

— তুমি কি ভেবেছো এত সহজে আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে? সেটা কখনোই সম্ভব নয়। তুমি সারা জীবনের মতো আমার হাতে বাঁধা পড়ে গেছো চাঁদ। এখন চাইলেও আর আমার কাছে থেকে মুক্তি নেই তোমার। তোমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে। সেটা তুমি চাও বা না চাও। কারন এটাই তোমার ভবিতব্য।

কথাগুলো বলে আবার অট্টহাসিতে ফেটে পরলো লোকটা। চাঁদনী এবার নিজেকে যতটা সম্ভব শক্ত করল, মনে সাহস যুগিয়ে ঘোমটাটা একটানে ফেলে দিয়ে লোকটার দিকে তাকাল। কিন্তু লোকটা তখন অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই কখন থেকে হেসে চলেছে। তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। তবে পিছন থেকে দেখে যেমনটা বোঝা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে লোকটা অনেক বেশি হ্যান্ডসাম এবং অনেক সুদর্শন। তার হাত দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অসম্ভব ফর্সা। মাথার চুলগুলো গোল্ডেন রঙের। কেন জানে না লোকটাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে চাঁদনীর। কিন্তু এমন হাসি দেখে অসম্ভব ভয়ও করছে তার।

চাঁদনী মনে মনে নিজেকে যতটা সম্ভব শক্ত করে নিয়ে এবার একপা একপা করে বিছানা থেকে নিচে নেমে আসলো। তারপর লোকটার কাছে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে তার কাধের উপর হাত রাখল। সাথে সাথে লোকটি ওর দিকে ঘুরে তাকালো। লোকটার চেহারা না দেখে জাস্ট মুখের মধ্যে কার সরু ও লম্বা দুটি দাঁত দেখে যেন কেঁপে উঠল চাঁদনী। চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো সে। সারা শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। উপরে ফ্যান চললেও এত বেশি ঘেমে গেছে যে ভাবনার বাইরে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগল সে। সে বুঝতে পারলো এতক্ষণ যা দেখছিল সবকিছুই তাহলে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু স্বপ্ন এতটা বাস্তবীয় হয় কিভাবে? ওর রুমটা পুরো অন্ধকার। লাইট নিভিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল ও।

হঠাৎ পাশ থেকে কেউ একজন নরম কন্ঠে বলে উঠল,

— স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো চাঁদ পাখি?

কথাটি শুনতেই যেন কেঁপে উঠল চাঁদনী। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো এটা নিশ্চয়ই সেই ভ্যাম্পায়ার টা, যে ওকে দুবার মৃত্যুর হাত থেকে বাচিয়েঁছে। নিজেকে সংযত করে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠল,

— হ্যাঁ, কিন্তু আপনি এখানে এলেন কিভাবে? এখানে কি করছেন আপনি?

— যদি বলি তোমাকে পাহারা দিচ্ছিলাম তাহলে কি বিশ্বাস করবে আমায়?

লোকটির এমন প্রশ্নে অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল চাঁদনী। কি বলবে বুঝতে পারল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর বলে উঠলো,

— কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? আর আপনি এখানে এসে আমাকে পাহারা’ই বা দিচ্ছেন কেন? আজ তো আমার কোনো বিপদ হয়নি! যে পাহাড়া দিতে হবে।

চাঁদনীর কথায় মুচকি হাসল লোকটি। তারপর মৃদু স্বরে বলে উঠল,

— স্বপ্নের কথাটা আমি আন্দাজে বলেছি তোমায়। আর সত্যি কথা বলতে গেলে তোমাকে পাহারা দিতে নয় তোমাকে দেখার জন্য মনটা খুব উশখুশ করছিল তাই চলে এসেছি। এতক্ষণ তোমাকেই দেখছিলাম।

লোকটির কথায় এবার ভ্রু কুঁচকালো চাঁদনী। লোকটার দিকে ঘুরে বসে পড়ল। কিন্তু অন্ধকারের মাঝে তাকে একটুও দেখা যাচ্ছে না। শুধু বিশেষ কোনো কারণে তার ঐ গাঢ় নীল রঙের চোখ দুটো দৃশ্যমান। চাঁদনী বেশ গম্ভির গলায় বললো,

— তাই যদি হয়, তাহলে আপনি আমাকে দেখছেন কিভাবে? এই রুমটাতো পুরোই অন্ধকারে ঘেরা। নিজের হাত নিজেই দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে আপনি কি ভা,,,

এতোটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে লোকটা আচমকাই ওর কোলের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তারপর ওর গাল টেনে দিয়ে বলল,

— কারণ আমার কাছে স্পেশাল একটা পাওয়ার আছে। যার দ্বারা আমি অন্ধকারের মাঝেও সবকিছু একদম স্পষ্ট দেখতে পারি আর তোমাকেও একদম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তোমাকেও একদম পরিষ্কার দেখছি। বুঝলে চাঁদপাখি!

হঠাৎ লোকটার এমন কান্ডে অনেক বেশি অস্বস্তিতে পড়ে গেল চাঁদনী। কি করবে বা কি বলবে কিছুই যেন মাথায় আসছে না তার। লোকটা যে এভাবে ওর কোলের মাঝে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়বে সেটা কল্পনাও করেনি ও। বেশ ইতস্ততা বোধ নিয়ে বিরক্তমাখা গলায় বলে উঠল,

— একি আপনি কি করছেন এটা? এভাবে আমার কোলের মাঝে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেন কেন? উঠুন, উঠুন বলছি আমার কোল থেকে। আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।

— কিন্তু আমার তো ভীষণ ভালো লাগছে চাঁদ পাখি। একটুও অস্বস্তি হচ্ছে না। আজকে সারাটা দিন যে তুমি আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো সেটা কি তুমি জানো? তারই প্রতিশোধ নিচ্ছি এখন আমি তোমার উপর। আমি এখান থেকে উঠছি না এভাবেই তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো। তুমি যা করার করতে পারো। আমার কোন সমস্যা নেই।

লোকটার এমন কথায় অবাক হয়ে গেল চাঁদনী। মনে মনে বললো, এই ব্যাটায় বলে কি, ওকে আবার কখন সারা দিন জ্বালিয়ে মারলো চাঁদনী। কোনো কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না তার। বেশ রাগী গলায় লোকটার মাথার চুলে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,

— আপনাকে আমি সারাদিন জ্বালিয়ে মেরেছি মানে? এসব কি বলছেন আপনি আবোল তাবোল। আর এভাবে একটি মেয়ের ঘরে এসে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকা কোন ধরণের অসভ্যতা শুনি? প্লিজ উঠুন আমার কোল থেকে। ঐ রুম থেকে আপু যদি জানতে পারে তাহলে কি ভাববেন উনি বলুন তো।

— তুমি তো দেখছি ভীষণ বোরিং। কোথায় আমি ভাবলাম তোমার সাথে একটু সারারাত দুষ্টু মিষ্টি গল্প করে সময় কাটাবো। তা না তুমি আমার মজাটাই মাটি করে দিচ্ছো। আরে এত ভয় পাচ্ছ কেন, আমিতো অন্য কেউ নই তাই না! আমাকে তোমার ভালো লাগে না? নাকি তুমি আমায় ভয় পাও এখনো?

লোকটার কথায় এবার বেশ বিরক্ত হলো চাঁদনী। লোকটিকে ঠেলে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিচে। তারপর রাগী গলায় বলল,

— দেখুন হতে পারে আপনি দুবার আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে এভাবে মাঝরাতের সময় আমার রুমে এসে আমার সাথে অসভ্যতামি করার কোন মানেই হয়না। আমি এসব একদম পছন্দ করি না। আপনার যদি গল্প করার থাকে তাহলে দিনের বেলা সামনাসামনি এসে গল্প করবেন, এখন আসতে পারেন।

কথাটা বলেই গিয়ে লাইটের সুইচ অন করল চাঁদনী। তারপর পিছন দিকে ঘুরে একদম অবাক হয়ে গেলো সে। পুরো রুমের মাঝে ও ছাড়া আর কেউই নেই। তাহলে এতক্ষণ ও কথা বলছিল কার সাথে? আর ওর কোলেই বা শুয়ে ছিল কে? সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে চলে যেতে লাগল ওর। ও নিজের মাথাটা একটু চুলকে নিয়ে পুরোটা রুম এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল। খাটের নিচ দিয়ে পর্দার আড়ালে সব জায়গায় খুঁজে দেখল। কিন্তু রুমের মাঝে শুধু ও ছাড়া আর কেউ নেই। এবার ভিষন রাগ হতে লাগলো চাঁদনীর। ও বুঝতে পারছে এতক্ষণ সত্যিই এখানে কেউ ছিল কিন্তু এখন মজা করে সে পালিয়ে গেছে।রেগে গিয়ে মনে মনে ভাবল এরপর আর একবার এভাবে আসলে সে যেই হয়ে থাকুক তার খবর আছে। এভাবে মাঝরাতে একটি মেয়েকে ডিস্টার্ব করার কোন মানেই হয় না। রাগে যেন শরীর জ্বলে যাচ্ছে চাঁদনীর।

এদিকে রুমের ছাদের সাথে উল্টা হয়ে বাদুড়ের মতো ঝুলে থেকে এসব কান্ড কারখানা দেখছে লোকটি। আর মুচকি মুচকি হাসছে। চাঁদনীকে এত রেগে যেতে দেখে যেন ভীষন ভাবে মজা পাচ্ছে লোকটি। মনটা চাইছে এখনি ওর সামনে নেমে ওর গাল দুটো টিপে দিয়ে ওকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে। কিন্তু ও তো এখন আসল রূপে চাঁদনীর সামনে যেতে পারবেনা। তাই মনের ইচ্ছা টা মনেই চাপা দিয়ে চুপ করে ছাদের সাথে ঝুলে থাকে ওকে দেখতে লাগলো। চাঁদনী বেশ বিরক্ত হয়ে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে কিছু না পেয়ে। লাইট অফ করে দিয়ে আবার বিছানায় এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ইসলামীক মাহফিলে যাবো তাই এর চাইতে বেশি দিতে পারলাম না। কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই। ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here